মুক্তির পথে

মুক্তির পথে0%

মুক্তির পথে লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

মুক্তির পথে

লেখক: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 16480
ডাউনলোড: 3471

মুক্তির পথে
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16480 / ডাউনলোড: 3471
সাইজ সাইজ সাইজ
মুক্তির পথে

মুক্তির পথে

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন।

কার্যকারণ

নিঃসন্দেহে বিশ্বজগতের প্রতিটি বস্তুই অপর কোন সত্তার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। অন্য কথায় প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টির পেছনে নিশ্চয়ই কোন কার্যকারণ রয়েছে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ ,আমরা যদি আমাদের বাড়ির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তাহলে প্রত্যক্ষ করবো সুপরিকল্পিত সুন্দর একটি গৃহ। তখন যদি বলি এত সুন্দর একটি গৃহ নির্মাণের পেছনে কেউ কাজ করেনি ,এমনিতেই আপন সত্তার বলে নির্মিত হয়েছে তা হলে আমাদের বিবেক-বুদ্ধির ব্যাপারে কেউ সন্দেহ করলে কি অমুলক কিছু হবে ? আমাদের গৃহের যে কোন আসবাপত্রের কথাই ধরুন। গৃহাভ্যন্তরে সজ্জিত সুন্দর একখানা দেয়াল ঘড়ি ,আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরী সোফা ইত্যাদির ব্যাপারে যদি কেউ বলে এত সব সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র স্বীয় সত্তা বলে ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত হয়েছে তাহলে আপনি তাকে নির্বোধ ,বোকা ও বুদ্ধিহীন বললে কি কোন অন্যায় করবেন ? সব বুদ্ধিমান ব্যক্তিই স্বীকার করবেন যে এ সব প্রতিটি বস্তুর জন্যে নিশ্চয়ই একজন প্রস্তুতকারক রয়েছেন। কেননা কোন কিছুই স্বীয় সত্তায় সৃষ্টি হয়নি। এ সৃষ্টিজগতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে নিঃসন্দেহে স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য হবো যে ,এতসব সুন্দর ,মনোরম ,নিখুত ও শৈল্পিক সৃষ্টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি হয়ে যায় নি বরং এ সকল সৃষ্টির পেছনে নিশ্চয়ই কোন কার্যকারণ রয়েছে। এ জগতের পরমাণু থেকে বৃহৎ সৃষ্টি পর্যন্ত প্রতিটি সৃষ্টিই নিখুত এবং চমকপ্রদ। যদি কোথাও আমরা একটা সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর ছবি প্রত্যক্ষ করি তা হলে আমাদের বিবেক ,জ্ঞান ও অবচেতন মন নিঃসন্দেহে একজন ছবি অংকনকারীর কথা ব্যক্ত করতে বাধ্য হবে। আর সে ছবি ও চিত্র যদি আপনার নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় ও মনোহরিণী আকার ধারণ করে তা হলে নিশ্চয়ই আপনি বলবেন এর স্রষ্টাও একজন সূরুচিসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ শিল্পী না হয়ে পারেন না। আপনি যখন একটা সুন্দর গ্রন্থ অবলোকন করেন তখন কি এ পুস্তকের কোন গ্রন্থকার নেই কথাটি ব্যক্ত করেন ? নিশ্চয়ই না। কেননা কোন অস্তিত্বশীল সত্তার জন্যে প্রস্তুতকারকের অস্তিত্বহীনতার ধারণা পাগলের প্রলাপ মাত্র।

এ বিশ্বজগতে প্রতিটি সৃষ্টিই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। বিস্তীর্ণ মহাকাশ সুপ্রশস্ত ভূ-পৃষ্ঠ ,সুবিশাল নদ-নদী ,পাহাড়-পর্বত ,বিশাল গ্রহরাজী ও নক্ষত্র মন্ডলী ,বিষ্ময়কর জীব-জন্তু ,মনোরম বৃক্ষরাজী-বনভূমী ও সুন্দর তরুলতা সব কিছুই একটা নির্দিষ্ট কার্যকারণের মাধ্যমে সত্তাশীল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শহীদ ডঃ জাভেদ বাহোনারের বক্তব্য প্রানিধান যোগ্য। তিনি বলেছেন ,কার্যকারণ সন্বন্ধীয় বিধি-বিধান আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে ,প্রত্যেক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পিছনে একটা কারণ থাকে এবং কারণ ছাড়া কোন ঘটনাই ঘটতে পারে না। ...এবং বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার বিশাল অংশ এই দার্শনিক নীতির উপর ভিত্তিশীল। অধিকন্তু কারণ অনুসন্ধান মানুষের সহজাত প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য। সে কারণে কোন চিত্রকর্ম ,ভবন অথবা কারো পদচিহ্ন দেখেন কিংবা কোন আওয়াজ শুনতে পেলেই মানুষ তার বোধগম্যতার স্তর যাই হোক না কেন ,ঐ সব ঘটনা সংঘঠনকারী কারণ বা মাধ্যমের অনুসন্ধান করে ,যেন প্রতিটি ঘটনা সংঘটনের কারণ অনুসন্ধান তার পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্য লিপি। এ জন্যেই মানুষ এই বিশ্ব জগতে সৃষ্টি ও এর সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে বিষ্ময়ে বিমুগ্ধ হয়ে যায়।2

আল্লাহ্ পাক আল্ কোরআনে বলছেন :

( سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ)

অর্থাৎ : আমি (আল্লাহ্) অচিরেই তাদেরকে প্রান্ত স্থানসমূহে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাবো যেন তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে সেটা সুনিশ্চিত সত্য। (সূরা ফুসসিলাত ,আঃ 53 )

শৃঙ্খলীয় প্রমাণ

সৃষ্টিজগতের সকল ক্ষেত্রে একটি সুষম বিন্যাস ,শৃঙ্খলা ,সমন্বয় ,সামঞ্জস্যতা এবং ভারসাম্য বিদ্যমান। দিন-রাতের পালাবদল ,সপ্তাহ মাস ,ও বৎসরের সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্থ ব্যবস্থা ,ঋতুসমুহের সঠিক নিয়ম ও পরিচালনা ,সবকিছুই একটি নিশ্চিত ব্যপারে বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করে যে ,এ বিশ্বজগত শৃঙ্খলাবব্ধ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্রিয়াশীল।

সিসিল বাইক হাইম্যান (Cecil Boyce Hamann ) নামক একজন বিজ্ঞানী তারকারাজীর ব্যপারে তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন এভাবে : যদি আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তাহলে তারকারজীর শৃঙ্খলার বিস্ময়কর কার্যাদি পরিদর্শনে অবাক কণ্ঠে চিৎকার ধ্বনি বেরিয়ে আসবে । দিবা -রাত্রি ,ঋতুর পালাবদল ,শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে অস্তিত্বমান আসমানের রশ্মিগুলোসহ সবকিছু এক নির্দিষ্ট পথে ঘূর্ণায়মান। এরা এতই সুশৃঙ্খলাবদ্ধভাবে তাদের নিজ নিজ কক্ষে আবর্তিত হচ্ছে যে কয়েক শতাব্দি পূর্বে বর্তমান সময়ের সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা সম্ভব।

এর পরও কি কেউ বলতে পারে যে ,গ্রহ-নক্ষত্র কোন একটি দূর্ঘটনার ফলাফল ,আর তারা নিজ কক্ষপথ ভুলে দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে ? যদি নক্ষত্ররাজীর কক্ষপথ অনির্দিষ্ট এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা বহির্ভূত হতো তা হলে কিভাবে মানুষ মহাসমুদ্র ,শুস্কমরুভূমি ও নাম-নিশান বিহীন পথঘাটগুলোতে তারকার ঘূর্ণাবর্তের মাধ্যমে দিক নির্ণয় করতে সক্ষম হতো ? যারা মহাপরাক্রমশালী বিধাতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন তারাও এ ব্যপারে একমত যে ,মহাকাশের রশ্মিসমূহের আবর্তন এক নির্দিষ্ট শক্তির অনুসরণ করে চলছে । তাই নক্ষত্রমণ্ডলী কখনও দূর্ঘটনাক্রমে আপন কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে শ ূন্যাকাশে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘূর্ণন করতে পারে না। এতসব শৃঙ্খলা ও বিন্যাস ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগ্রত হয় ,কে এ সব কিছুর পরিচালক ,নির্মাতা ও শৃঙ্খলাদানকারী ? আমরা যদি কোন স্কুলের ব্যাপারে শুনি যে ,ঐ স্কুলের ছেলে-মেয়েরা একটি নির্দিষ্ট রংয়ের পোশাক পরিধান করে স্কুলে আগমন করে এবং সঠিক নিয়ম-নীতি মেনে চলে আর সকলে খুব সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ ,তারা সবাই শিক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে থাকে তা হলে এটা বুঝতে মোটেই কষ্ট হবে না যে ঐ স্কুলে নিশ্চয়ই একজন নীতিবান ও বিজ্ঞ শিক্ষক ও পরিচালক রয়েছেন।

বিশ্বব্যবস্থার সকল দিকগুলো বিবেচনা করলে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবো যে ,এ বিশ্বের সকল কিছু শৃঙ্খলাধীন সুনিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি প্রত্যক্ষ করবে না কেউ। সবাই আপন দায়িত্ব পালনে ক্রটিহীন। স্বভাবতঃ-ই মনে প্রশ্ন জাগ্রত হয় ,এতসব কিছুর একজন ব্যবস্থাপক ছাড়াই কি পরিচালিত হচ্ছে ?

সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্রহ হচ্ছে সূর্য। সূর্যের আয়তন পৃথিবীর চেয়ে 3 ,30 ,000 গুণ বড়। সৌরজগত হচ্ছে ছায়া পথের একটি অংশ। এতে অন্তঃত এক বিলিয়ন সূর্য আছে যার অধিকাংশই আমাদের সূর্যের ওজনের চেয়ে অনেক বেশী। জ্যোর্তিষবিদগণ বলেন ,আমাদের ছায়াপথের ন্যায় একলক্ষ ছায়াপথ বিশ্বজগতে বিদ্যমান।

আবার ভূ-মণ্ডল বিশ্বজগতের এমন একটি গ্রহ যেখানে সর্বত্র ভারসাম্য বিরাজমান এবং এর নিজের চতূর্দিকে প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়নমান। যার ফলে দিবা-রাত্রির উদ্ভব হয়েছে। তারপরও সূর্যের চতূদির্কে বাৎসরিক অবস্থান পরিবর্তন অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থান পরিবর্তনের কারণেই ভারসাম্য ও ভূমণ্ডলের কেন্দ্রীয় অবস্থান সর্বদা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ধরনের সুবৃহৎ ও সুশৃঙ্খল সৃষ্টি ব্যবস্থা কি কোন মহাক্ষমতাবান প্রস্তুতকারকের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে না ? হ্যাঁ তিনিই সর্বশক্তিমান মহাপরিচালক। তার সার্বভৌমতা ও শাসন ক্ষমতার পরিধির কোন সীমারেখা অংকন করা সম্ভব নয়। ইসলাম ধর্মে তিনিই আল্লাহ নামে অভিহিত।

মানব-প্রকৃতি ও সত্যান্বেষী স্বভাব

এ বিশ্বের সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের বিভিন্ন পথ রয়েছ। দার্শনিকগণ তাদের দর্শনের প্রমাণ করে থাকেন। আরেফ ও আধ্যাত্মি ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজ নিজ প্রমাণাদিও আমাদের সমক্ষে উপস্থাপিত করেছেন। কিন্তু এ সকল পথের মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সরল পথ-যা অতিক্রম করলে সহজে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব ,তা হলো আমাদের সহজাত প্রবৃত্তির প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ। আমাদের প্রকৃতগত স্বভাব এমন একটি বিষয় যা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আরাবীতে এই স্বভাবজাত শব্দটি ফিত্রাত (فطرة ) নামে পরিচিত এবং এর ইংরাজী প্রতিশব্দ হচ্ছেNature যা সর্বকালে ,সর্বস্থানে ও সব মানুষের মাঝে সমানভাবে বিরাজমান। মা তার সন্তানকে ভালবাসেন। নবজাত শিশুকে শিখিয়ে দিতে হয় না যে ,এটি তোমার মা। তাই মায়ের প্রতি সন্তানের আকর্ষণ মানবীয় স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম। তদ্রূপ স্রষ্টা অন্বেষণের মনোভাব প্রতিটি মানুষের একটি প্রকৃতিগত ব্যাপার। প্রতিটি মানুষের অন্তঃকরন খোদা অন্বেষী। মানুষ কৌতুহলী মনোভাব নিয়ে ছুটে চলে এ পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তার সন্ধানে। এ কাজটি কাউকে শিখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয় না। মানুষ স্বতঃষ্ফুর্তভাবে নিজেকে যে কোন এক মহাশক্তির অধীনে অবনত রাখতে ইচ্ছুক। আর স্বভাবতঃই এ ধরনেরই এক খোদা অন্বেষণী ঝংকার মনের একান্ত নিবিড়ে প্রতিটি স্বচ্ছ হৃদয়ের মানুষের অন্তকরণ থেকে বেজে উঠে।

সত্যান্বেষী আকাঙ্খা মানুষের সহজাত প্রকৃতিরই অন্তর্ভূক্ত। সাধারণভাবে কোন মানব হৃদয়ই এ অনুভূতি শূন্য নয়। প্রতিটি মানব মনই সর্বদা সকল বিষয়ের মূল উৎস উদঘাটন করতে বদ্ধপরিকর। জ্ঞান অন্বেষনের ব্যাপারে সে স্বভাবতঃই কৌতুহলী। প্রয়োজনে জ্ঞান পিপাসা মিটানোর জন্যে মানুষ যে কোন কষ্ট স্বীকার করে নিতেও কুন্ঠাবোধ করে না। আর এ কারনেই মানুষ তার আত্মপরিচিতির ব্যাপারে স্বীয় বিবেক প্রসূত যে সকল প্রশ্ন থাকে তাহলো ,আমরা কোথা থেকে এসেছি ? কি আমাদের দায়িত্ব ? মানুষের মৌলিক ও স্বভাবজাত প্রসূত জিজ্ঞাসা। কেননা উপরোক্ত প্রশ্নগুলো তার স্বভাবজাত কৌতুহলী মনোভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। মনীষীগণ বলেন : বর্ণ ,গোত্র ,ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে যদি তার স্বীয় অবস্থার উপর ছেড়ে দেয়া হয় আর যদি বিশেষ কোন মতবাদের শিক্ষা-দীক্ষা না পায় এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অভিপ্রায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে তাহলে সে আভ্যন্তরীন তাড়না থেকেই নিঃসন্দেহে কোন মহাশক্তিশালী সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন অনুভব করবে। এ ধরনের ব্যক্তি তার বিবেকের গভীরে এমন এক ধরনের সুপ্ত আওয়াজ অনুভব করে ,যা তাকে এ বিশ্বজগতের সূচনাকারী মহান স্রষ্টার প্রতি অণুরাগী করে তোলে। ইসলামে এ ধরনের মহাশক্তির নাম হচ্ছে আল্লাহ্ । মনোবিজ্ঞানীরা বিশ ্বাস করেন যে ,প্রধানতঃ আল্লাহর উপাসনা স্বাধীনভাবে মানুষের সহজাত প্রকৃতি থেকেই উদ্ভব হয়েছে। এটা মানব প্রকৃতিরই দাবী। তাই ,মানব সভ্যতার ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমরা দেখতে পাই মানুষ সর্বদা কোন না কোন শক্তির প্রতি নিজেকে সমর্পন করেছে এবং তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে পূজা-অর্চনা করেছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে লক্ষ্য করা যায় ,আল্লাহর উপাসনা-ইবাদত সর্বকালে ,সর্বস্থানে বিভিন্ন রূপে মানুষের মাঝে বিরাজমান ছিল। আর মানুষের মাঝে এ একই ধরনের অনুভূতি ও মনোভাব যা তাকে সর্বদা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী করে রাখে তা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে এ বিষয়টা মানুষের স্বভাবপ্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত। এ জন্যে অন্য কোন দার্শনিক প্রমানের প্রয়োজন হয় না মোটেও। প্রশ্ন হতে পারে খোদা অন্বেষণ মানব প্রকৃতির অংশ হলে পৃথিবীতে নাস্তিকতার অবস্থান বিদ্যমান কেন ? হ্যাঁ ,খোদা অন্বেষী মনোভাব মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। যদিও তা সবার মধ্যে সমপরিমাণ বিরাজমান নয়। কেননা ,যারা বিভিন্ন রকমের শিক্ষা ,প্রচার ও পরিবেশের শিকার তারা এ শিক্ষা ,অপপ্রচার ও দূষিত পরিবেশের মাঝে বৃদ্ধিলাভ করেছে। তাই তাদের ফিত্রাত সে সব শিক্ষা ও প্রচারের মোটা কালো আবরণে ঢেকে গেছে। তাদের অন্তরচক্ষু থাকলেও বুদ্ধিবৃত্তির সাথে এমন একটি বাল্বের তুলনা করা যায় যা একটি মোটা কালো কাপড় দিয়ে পেচিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর সুইচ অন্ থাকার পরও সে বাল্ব আলো বিতরণ করতে পারছে না। কিন্তু যখনই এই অপপ্রচার ও অপসংস্কৃতির কালো পর্দা তাদের মন ও হৃদয় থেকে সরিয়ে নেয়া হবে তখনই তা একটি শক্তিশালী বাল্বের ন্যায় আলো বিকিরণ করতে সক্ষম হবে। তাদের বিবেকই তখন ব্যক্ত করবে -নিশ্চয়ই এ বিশ্ব জগতের কোন সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি সর্বশক্তিমান ,সর্বজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।

অস্তিত্ব বিভক্তির প্রমাণ

বুদ্ধিভিত্তিক দৃষ্টিকোন থেকে আমরা অস্তিত্বসমূহকে তিন ভাগে বিভক্ত করতে পারি। কেননা আমরা যখনই অস্তিত্বের প্রকারভেদ নিয়ে চিন্তা করি তখন সেটা হয় তার জাত সত্তার সাথে সম্পৃক্ত হবে নতুবা অসম্পৃক্ত।

সুতরাং : যদি কোন অস্তিত্বের ধারণা করে তাকে তার জাতসত্তার সাথে সংযোগ করানো না যায় তাহলে এ ধরণের কোন সত্তা কখনো সত্তাশীল হতে পারে না। দর্শনের পরিভাষায় এটাকেই বলা হয় :

1. অসম্ভাব্য অস্তিত্ব (মুমতানেউল উজুদ) অপরদিকে যে অস্তিত্বকে তার জাতসত্তার সাথে সম্পৃক্ত করা যায় সেটা আবার দু ভাগে বিভক্ত।

যে অস্তিত্ব কখনো তার জাতসত্তা থেকে পৃথক হয়ে অনস্তিত্বে পরিণত হয়ে যেতে পারে সে সত্তার নাম দর্শনের পরিভাষায় বলা হয় :

2. নির্ভরশীল সম্ভাব্য সত্তা (মুমকিনুল উজুদ) এবং যে সত্তা কখনো তার জাত থেকে পৃথক হতে পারে না দর্শনের ভাষায় বলা হয় :

3. স্বাধীন অবশ্যম্ভাবী সত্তা (ওয়াজিবুল উজুদ) অতএব সত্তাশীল সকল অস্তিত্বকে দু ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

(1) নির্ভরশীল সম্ভাব্য সত্তা

(2) স্বাধীন অবশ্যম্ভাবী সত্তা

বস্তজগতের সকল সত্তাই বস্তুগত নির্ভরশীল সম্ভাব্য সত্তা। নিম্নে বস্তুগত নির্ভরশীল সম্ভাব্য সত্তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা গেল :

(ক) পরিবর্তন ,পরিবর্ধন ,সংযোগ ,বিয়োগ ইত্যাদি।

(খ) অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্ব আসা আবার অস্তিত্ব থেকে অনস্তিত্বে ফিরে যাওয়া।

(গ) এ ধরনের অস্তিত্বের জন্যে অস্তিত্বশীলতা ও অস্তিত্বহীনতা উভয়ই সমান। একটি অপরটির উপর কোন প্রকার প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বরং এ দু টির সম্ভাবনা সর্বদা সমানভাবে বিরাজমান।

(ঘ) অস্তিত্ব কিংবা অনস্তিত্ব ,অবশ্যই কোন নির্দিষ্ট কার্যকারণের উপর নির্ভরশীল। কোন কারণ ছাড়া এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে না। আর স্বাধীন অবশ্যাম্ভাবী সত্তার বৈশিষ্ট্যাবলী যেমন : আদি অন্তহীনতা ,সর্বদা বিরাজমান ,সকল কারণের মূল কারণ ,আদিসত্তা ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক জগতের সবকিছুই কোন এক সময় সৃষ্টি হয় পরিশেষ আবার তা ধ্বংস হয়ে যায় অর্থাৎ সকল বস্তুগত সত্তা-ই কোন এক সময়ে অস্তিত্ব লাভ করেছে আবার একটা নির্দিষ্ট সময়ে তা অনস্তিত্বে প্রত্যাবর্তীত হয়ে যায়। মোট কথা সর্বদা পরিবর্তন ও রূপান্তরের আবরণে আবৃত থাকে বস্তুগত সত্তা। তাই এ সকল অস্তিত্ব হচ্ছে সম্ভাব্য নির্ভরশীল মুখাপেক্ষী সত্তা। সবটুকুই কোন নির্দিষ্ট কার্যকারণের উপর নির্ভরশীল ,স্ব-প্রচেষ্টায় বস্তুসত্তা অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না কখনো।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে তাহলে সৃষ্টিজগতের মূল কারণ কে ? এর উত্তরে যদি বলা হয় এ সকল সৃষ্টির পেছনে কোন কার্যকারণ ছিল না তা হলে উত্তরদাতা দর্শনশাস্ত্রের সে সুপ্রমাণিত নীতিরই বিরুদ্ধাচারণ করলেন ,যেখানে বলা হয়েছে সব ফলাফলের পেছনে একটি নির্দিষ্ট কার্যকারণ বিদ্যমান। আবার যদি বলা হয় বস্তুনিচয়ের সৃষ্টির কারণ তারা নিজেরাই অর্থাৎ প্রকৃতি নিজেই তার সৃষ্টিকারক ,তাহলে নিদারুণ সত্যেরই অবমাননা করা হবে। কেননা ,বস্তু নিজের সৃষ্টির পূর্বে স্রষ্টার রূপ ধারণ করতে পারে না কিছুতেই। এ ধরনের উত্তর আমাদের নিরেট বুদ্ধিবৃত্তির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না মোটেও । কি করে অনস্তিত্ব ,অস্তিত্বের প্রবর্তক হতে পারে ? আবার যদি বলা হয় সৃষ্টি বস্তুর স্রষ্টা অপর কোন বস্তুগত সত্তা তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় ,তার সৃষ্টিকর্তা কে ? কেননা সকল বস্তুগত সত্তাই অন্য কোন সত্তার বলে সৃষ্টি হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে যদি অপর কোন সম্ভাব্য নির্ভরশীল বস্তুগতসত্তার দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হয় তাহলে এ ধরনের প্রশ্ন অবিরাম চলতেই থাকেব। আর কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ অসমাপ্ত চেইনটির এরূপ অবস্থান মেনে নিতে পারেন না। কারণ ,যদি কোথাও গিয়ে এর প্রশ্ন শেষ না হয় তা হলে বস্তুজগতের অস্তিত্ব ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

অতএব ,নিঃসংকোচে আমাদের এমন এক সত্তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যিনি সকল সৃষ্টির পূবেই অস্তিত্বমান ,যার মাধ্যমে কার্যকারণের অসমাপ্ত চেইনের হবে পূর্ণতা লাভ। যিনি সর্বপ্রথম ,আদিসত্তা ,শাশ্বত। তিনি হলেন অপরিহার্য সত্তা । তিনি আপন থেকেই অস্তিত্বমান ও আবির্ভূত যার কোন সূচনা নেই ,সূচনা তারই সৃষ্টি।

9

বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার পরিচয়

বিজ্ঞান ঈমানের অগ্রদুত।

মানুষের জ্ঞান স্বল্প ও সীমিত।

আল্লাহর অস্তিত্ব বিজ্ঞানের পথধারার ঊর্দ্ধে।

বিশ্ব-প্রকৃতির সূচনাকাল বিদ্যমান।

প্রাকৃতিক বিশ্বে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত।

উদ্ভিদ জগতে শৃঙ্খলা।

এটোমের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা।

অতি ক্ষুদ্রতম অণু কোষের ভিতর শৃঙ্খলা।

মৌলিক পদার্থের ছকে যথার্থ হিসেব ও শৃঙ্খলা।

নভোপুঞ্জ এবং পৃথিবীর কল্পনাতীত বিশালতা।

কয়েকটি আকর্ষণীয় দৃষ্টান্ত।

দুর্ঘটনা নাকি কোন মহাশক্তির পরিচালনা ?