প্রাকৃতিক বিশ্বে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত
এখন আপনাদের সমক্ষে বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বিধি-বিধানের উপর এক অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও হৃদয়স্পর্শী আলোচনার সুত্রপাত করবো ,যা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিন্তাবিদদের মতামতে সমৃদ্ধ।
উদ্ভিদ জগতে শৃঙ্খলা
:
এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্ভিদের বপন বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে নিহিত কারণসমূহে ব্যাপারে একজন উদ্ভিদ ও ভূমিবিদের মতামত পেশ করছি।
Lester John Zimmerman
নামক একজন উদ্ভিদ ও ভূমিবিদ বলেন :
‘
উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজনীয় উপাদান বায়ু ও মাটি থেকে নেয়া হয়ে থাকে। তবে একটা প্রশ্ন এখানে থেকে যায় ,মাটির উৎপত্তি কোত্থকে এবং কেমন করে মৃত্তিকা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান সঞ্চয় করে রাখে ? উর্বর মাটি খনিজ উপাদান থেকে গঠিত এবং সে মাটি যথেষ্ট পরিমাণ কার্বন ধারণ করে রাখতে সক্ষম। যা আদিম বৃক্ষ ও প্রাণীদেহের ধ্বংসাবশেষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। পানি ,বায়ু ,আলো ও রাসায়নিক উপাদানগুলো যদিওবা উদ্ভিদের বৃদ্ধির সহায়ক তথাপি এগুলোর কোনটাই একাজের জন্যে যথেষ্ট নয়। বরং এক অদৃশ্য শক্তি এসব সূক্ষ্ম ও জটিল কাজে কার্যকর ,যা প্রতিটি বীজের অভ্যন্তরে লুকায়িত। সেই শক্তিই একটি উপযোগী পরিবেশে একটি বৃক্ষের বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে থাকে। এ শক্তির সময়োপযগী পরিবেশে একটি বৃক্ষের বৃদ্ধিতে সর্বাত্তক সহযোগীতা করে থাকে। এ শক্তির সময়োপযগী পদক্ষেপ অত্যন্ত সূক্ষ্মতা ও নিপুণতার সাথে সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথমে বিভিন্ন কাজে পারদর্শী উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত ডিম্বানুর সূক্ষ্ম দুটি কোষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো পৃথক পৃথকভাবে বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতার পথে অগ্রসর হতে থাকে। যে বীজ মাটিতে ফেলা হয়ে থাকে পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে হুবহু সে বৃক্ষেরই রূপ ধারণ করে থাকে। গমের বীজ থেকে গম গাছই উৎপন্ন হয়ে থাকে। যদি ওক বীজ বপন করা হয় তাহলে পরিণতিতে ওক বৃক্ষই পাওয়া যাবে। যদি কেউ স্বচ্ছ ধারণা ও নিরপেক্ষ অন্তঃকরণ নিয়ে এ ধরণের ক্রিয়া-কর্ম এবং বীজের বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাহলে নিঃসন্দেহে সে এ বিশ্ব জগতে বিরাজমান সৌন্দর্য ও প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি সাক্ষ্য প্রদান করতে বাধ্য হবে’
।
এটোমের অভ্যন্তরে নিয়ম-শৃঙ্খলা :
জনাব কুরেন বলেন ,নিঃসংকোচে বলা যায় ,বস্তুজগত এক নিয়ম-শৃঙ্খলা ও আইন-কানুনের জগত ,বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জগত নয়। এটা এমন এক জগত যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের অনুসরণ করা হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার পথ এখানে অবরুদ্ধ।
অতঃপর তিনি এটোমের দেহে এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম শৃঙ্খলার ব্যাপারে এরূপ বলেন ,‘‘
প্রতিটি এটোম তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
এক :
প্রোটন (পজেটিভ) ,
দুই :
ইলেকট্রন (নেগেটিভ) ,
তিন :
নিউট্রন (পজেটিভ ও নেগেটিভের সংমিশ্রণ বা নিউট্রাল)
প্রতিটি এটোমের সকল প্রোটন তার কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত। ইলেকট্রন সংখ্যার প্রোটনের সমপর্যায়ে অবস্থিত। তারা সকলে কেন্দ্র বিন্দুর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ এবং বিভিন্ন কক্ষপথে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে থাকে। তাদের সাথে কেন্দ্র বিন্দুর দূরত্ব এতই অধিক যে একজন মানুষ এ ধরণের দূরত্ব অবলোকন করে এটোমের সাথে সৌরজগতের তুলনা দিয়ে বসতে পারে। সৌরজগতের ন্যয় এটোমের আকারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শূন্যাকাশে আবৃত থাকে। উল্লেখ্য যে ,এটোমের একটি উপাদানের সাথে অন্য আরেক উপাদানের পার্থক্য শুধুমাত্র সংখ্যাগত দিক দিয়ে কেন্দ্র বিন্দুতে প্রোটন আর কেন্দ্রবিন্দুর চতুর্দিকে ইলেকট্রন ও নিউট্রনের পার্থক্য এবং অবস্থানের ভিন্নতার সমতুল্য। অতএব ,কোটি কোটি মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ অবশেষে এই তিন প্রকার বৈদ্যুতিক অণু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে একটি বস্তুর তিনটি রূপ। সেই বস্তুটির নাম বৈদ্যুতিক শক্তি বাElectricity
আর এটাও এক অদৃশ্য শক্তির বহিঃপ্রকাশ’’
।
অতি ক্ষুদ্রতম অণু কোষের ভিতর শৃঙ্খলা :
যদি আমরা এক ফোটা পানি পরীক্ষাগারের একটা নির্দিষ্ট কাচের উপর রেখে লক্ষ্য করি তাহলে প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য প্রাণীর নড়াচড়া প্রত্যক্ষ করতে পারবো। এর ভিতর অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যাবে যাকেAmibe
ধীরে ধীরে হজম করে ফেলে। ফলে শুধুমাত্র ঐ ক্ষুদ্র প্রাণীর মলমূত্র অবশিষ্ট রয়ে যায়। যদি আমরা অধিক সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে প্রত্যক্ষ করবো যেAmibe
নিজেকে লম্বা করে দুটি অংশে বিভক্ত করে ফেলেছে। যার ফলে দুটি যুবক ও শিশুAmibe
এর উৎপত্তি ঘটে। এ ক্ষেত্রে আমরা একটি কোষকে দেখতে পাব যে বেঁচে থাকার জন্যে সে সব ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে এসব ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যে বৃহদাকার প্রাণীরা পর্যন্ত বহু সহস্র কোষের প্রয়োজন অনুভব করে থাকে। শুধু তাই নয় ,কোন কোন ক্ষেত্রে তারা বহু সহস্র মিলিয়ন কোষেরও মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এটা দিবালোকের ন্যয় স্পষ্ট যে এ ধরণের ক্ষুদ্র প্রাণীর জন্মদাতা কোন দুর্ঘটনা নয়। বরং সর্বপ্রকার ঘটনা প্রবাহের ঊর্দ্ধের কোন শক্তিই এ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও বিষ্ময়কর প্রাণীর সৃষ্টিকর্তা’
। বিষয়টি বলেছেন ,জীব বিজ্ঞানীCecil Boyce Hamam
। তিনি প্রাণীদেহের অভ্যন্তরে ক্রিমি জাতীয় জীবাণুর বিভিন্ন ভাগে বিভক্ততে বিশেষজ্ঞ এবং তারিশিন নামক এক প্রকার জীবাণু থেকে বিভিন্ন রোগের বিষাক্ত গ্যাস নির্ণায়ক।
মৌলিক পদার্থের ছকে যথার্থ হিসেব ও শৃঙ্খলা :
মৌলিক পদার্থের চক্রাকার ছক এবং ব্যবস্থা ,এমন এক বিধি ব্যবস্থার সুন্দরতম চিত্র যা এ বিশ্বের জন্যে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছকটি এমন পদ্ধতিতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়েছে যে ,বিশেষ ও সমগুণসম্পন্ন উপাদানগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে ঐ ছকের চতুর্দিকে সর্বদা ঘূর্ণয়মান থাকে। এ চক্রাকার ছকে সমস্ত উপাদানগুলো ইলেকট্রোন সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রেখে সন্নিবেশিত করা হয়ছে। ইলেকট্রোন সংখ্যা তার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রোটনের সংখ্যার সমতুল্য। এভাবে হাইড্রোজেনের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি প্রোটন ,দু’
টি হেলয়ুম এবং তিনটি ওয়ালিটিউম ছাড়াও আরো অনেক উপাদান বিদ্যমান। যখন উপাদানসমূহ এটোমের ওজন অনুযায়ী ক্রমানুষারে সন্নিবেশিত থাকে তখন তাদের বিশেষ উপাদানগুলোর পরিবর্তন চক্রাকারে এবং বৈকল্পিকভাবে পূনরাবৃত্তি হতে থাকে। যে সমস্ত উপাদান সমান্তরাল সারীতে অবস্থিত তারা তাদের প্রতিবেশীদের সাথে শুধুমাত্র একটি প্রোটন এবং একটি ইলেকট্রোনের পার্থক্য রাখে। আর যেগুলো দৈর্ঘ্যভাবে সারীতে অবস্থিত তাদের বাইরের কক্ষগুলোতে ইলেকট্রোনের সংখ্যা পরস্পর সমান। ইলেকট্রোনের সংখ্যা সমপরিমাণ হওয়ার কারণে যে সমস্ত উপাদান দৈর্ঘ্যভাবে সারীতে অবস্থিত তারা সমগুণ সম্পন্ন। যেহেতু প্রতিটি লিটুয়্যাম ,সোডিয়াম ,পটাশিয়াম ,রোবিডিয়াম ,কাইযিয়াম ও ফ্রানসিয়ামের বহির্কক্ষে একটি করে ইলেকট্রন বিদ্যমান সেহেতু তারা সমগুণ সম্পন্ন এবং একই পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত। আর যেহেতু ছয়টি উপাদান যথা হেলিয়াম ,নেউন ,আরগুণ ,কারিপটুন ,যানুন ও রাদুন এর চতুরপার্শ্বে কতগুলো অপরিবর্তনশীল মিশ্রণবেষ্টনী দিয়ে রেখেছে তাই তারা অন্যান্য উপাদানের সাথে মিলিত হওয়ার প্রবণতা প্রদর্শন করে না। এ কারণে সেগুলোকে অকেজো গ্যাস বলা হয়ে থাকে । অনুরূপভাবে অন্যান্য সকল উপাদানগুলোও তাদের সমগুণসম্পন্ন উপাদান এবং ইলেকট্রোনের সংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়েছে। আমাদের সাধারণ বিবেকই বলে দিবে যে ,এ ধরণের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং বিষ্ময়কর সন্নিবিষ্টতা কখনো কোন দূর্ঘটনার ফসল হতে পারে না।
নভোপুঞ্জ এবং পৃথিবীর কল্পনাতীত বিশালতা :
কোন সুস্থ মস্তিস্ক ব্যক্তির পক্ষে ভূ-মন্ডলের অস্তিত্ব অস্বীকার করার জো নেই। তেমনি নভোপুঞ্জও কেউ অস্বীকার করতে পারে না। ভূ-মন্ডলের ওজন ও আয়তনের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেশী। পৃথিবীর ওজন আনুমানিক 6600 বর্গ বিলিয়ন টন। যেখানে এক মিলিয়ন টনের প্রকৃত অনুমাপ মানুষের জন্যে এক দুস্কর ব্যাপার সেখানে এক বিলিয়ন অথবা বর্গ বিলিয়ন তো অনেক দুরের কথা। এত বৃহৎ এ ভূ-মন্ডলের ব্যাপারে স্বভাবতঃ-ই প্রশ্ন জাগ্রত হয় ,‘
এ বৃহৎ গ্রহ যার নাম ভূ-মন্ডল ,তা কোত্থকে এসেছে ?’
বিশিষ্ট জ্যোতিষবিদগণ বলেন ,আমাদের ছায়াপথের ন্যায় একলক্ষ ছায়াপথ বিশ্ব-প্রকৃতিতে বিদ্যমান। প্রশ্ন হতে পারে ,এ আকাশপুঞ্জের সর্বমোট ওজন কত হবে ? শুধুমাত্র এ বিষয়ে সামান্য একটু চিন্তা একজন মানুষকে বিষ্মিত করে তুলতে যথেষ্ট। তাই এ বৃহৎপুঞ্জের চির বিদ্যমানতার ধারণা একটি অর্থহীন বিশ্বাসের শিকার। কেননা ,সকল বস্তু পরিবর্তনশীল অর্থাৎ বৃদ্ধি পায় এবং পর্যায়ক্রমে প্রসার লাভ করে। এমনকি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যথেষ্ট মনোযোগের মাধ্যমে প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টি-সূচনা নির্ণয় করে দিতে সক্ষম। সুতরাং সঠিক ও বিবেক সমর্থিত ধারণাটি হচ্ছে যে ,এগুলো সৃষ্ট বস্তু বৈ অন্য কিছু নয়। এ ধরনের বৃহৎ ও সুশৃঙ্খল সৃষ্টি ব্যবস্থা কি কোন প্রস্তুতকারক বা শক্তিশালী স্রষ্টার প্রয়োজন অনুভব করে না ?
কয়েকটি আকর্ষণীয় দৃষ্টান্ত
:
প্রাণীদেহের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্যে ভূ-মন্ডলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে। তন্মোধ্যে নিম্নে কয়েকটি কার্যক্রম উল্লেখ করা হলো :
এক :
ভূমির উপরিপৃষ্ঠে জীবন রক্ষী গ্যাস থেকে যে বায়ুমন্ডল গঠিত হয়ে থাকে তার ঘনত্ব ও বেধ প্রায় আটশত কিলোমিটার। এত অধিক ঘনত্ব থাকার কারনেই তা ভূ-পৃষ্ঠকে ঢাল স্বরূপ ,শূন্যাকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত প্রতিদিন বিশ মিলিয়ন প্রাণহরণকারী প্রস্তর থেকে প্রতিরক্ষা করতে পারে। এসমস্ত পাথর প্রতি সেকেন্ড প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার বেগে ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত হেনে থাকে।
দুই :
বায়ুমন্ডল ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রাকে জীবন ধারণের উপযোগী করে গড়ে তোলে এবং মহাসাগর থেকে বাস্প ও প্রয়োজনীয় পানি শুস্ক এলাকায় স্থানান্তরিত করে থাকে। আর এরূপ কার্য সম্পন্ন না হলে মহাদেশগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত এক একটি বৃহৎ শুস্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যেত।
তিন :
পানির দৃষ্টি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ,দীর্ঘ শীত মৌসুমে মহাসাগর ,সাগর ও নদীগুলোতে জীবন যাত্রা অব্যাহত রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তন্মোধ্যে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষন এবং স্বীয় ওজন বরফে রূপান্তরিত হওয়ার তাপমাত্রার চেয়ে চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে ধারণ অন্যতম। এ কারণেই নদী ও সাগরের তলদেশে পানি জমাট হতে বাধাগ্রস্থ হয়। অন্য আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য হচ্ছে ,পানির ওজন বরফের ওজনের চেয়ে বেশী করে সংরক্ষিত রাখা। সেজন্যে বরফ পানির উপর ভেসে থাকতে সমর্থ হয়। আবার যখন পানি বরফে পরিণত হতে থাকে তখন প্রচুর পরিমাণ তাপ পানির নিম্নভাগ থেকে নিঃসৃত হয়ে বরফ গলানোর কাজে সহায়তা করে থাকে।
চার :
মৃত্তিকা তার স্বগর্ভে এমন সব খনিজ পদার্থ ধারণ করে রাখে যেগুলোকে উদ্ভিদ সংগ্রহণ করে প্রাণী জগতের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যরূপে বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
পাঁচ :
ভূ-মন্ডলের আয়তম যদি চন্দ্রের ন্যয় ক্ষুদ্র অথবা বর্তমান আয়তনের এক চর্তুাংশ হতো তা’
হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পানি ও বায়ু ধারণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতো আর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছতো যেখানে প্রাণীর জীবনাবসান নিশ্চিত হয়ে পড়তো। অপরদিকে যদি পৃথিবী স্বীয় ওজন অপরিবর্তীত রেখে সূর্যের ন্যয় বৃহৎ আকার ধারণ করতো তা’
হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একশত পঞ্চাশ গুণ অধিক বেড়ে যেতো আর বায়ুমন্ডলের উচ্চতা প্রায় দশ কিলোমিটার নিচে নেমে আস্তো। পরিণতিতে পানির বাষ্প হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তো আর বায়ুর চাপ প্রায় 150 বর্গকিলোগ্রামে উপনীত হতো। তদর্থে এক কিলোগ্রাম ওজনের প্রাণী একশত পঞ্চাশ কিলোগ্রামে পরিণত হয়ে যেতো আর তখন মানুষের উচ্চতা কমে কাঠবিড়ালীর ন্যায় ক্ষুদ্রাকৃতিতে পরিণত হতো।
ছয় :
যদি ভূ-মন্ডল থেকে সূর্যের দূরত্ব বর্তমান দূরত্বের দ্বিগুণ হতো তা’
হলে সূর্য থেকে গৃহীত তাপমাত্রা বর্তমান তাপমাত্রার এক চর্তুাংশে অবতরণ করতো আর সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিনরত পৃথিবীর গতিবেগ বর্তমান গতিবেগের অর্ধেকে নেমে আসতো। ফলে বিশ্বের সকল প্রাণী ঠান্ডায় জমাট বেধে যেতো। আর যদি পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব বর্তমান দূরত্বের অর্ধেক হতো তা’
হলে উষ্ণতা চারগুন ,সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিনের গতিবেগ দ্বিগুন ,ঋতুর সময়কাল অর্ধেক (ঋতুর সময়কাল পরিবর্তন সাপেক্ষে) হয়ে যেতো এবং ভূ-পৃষ্ঠে এতবেশী উত্তপ্ত হয়ে উঠতো যে সেখানে জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়তো।
এগুলো ছিল বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত অত্যন্ত সুষ্ঠ ও সূক্ষ্ম আইন-কানুন ,বিধি-বিধান এবং অত্যাশ্চর্য সু-শৃঙ্খলার তাক লাগানো প্রকান্ডতার কয়েকটি দৃষ্টান্ত। এ‘
প্রসঙ্গে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ’
শীর্ষক গ্রন্থে আরো অধিক দৃষ্টান্তের অবতারণা করা হয়েছে। বর্তমান গ্রন্থে উল্লেখিত একটি উদাহরণ-ই একজন বুদ্ধিমান ন্যয়বিচারকের সমক্ষে সৃষ্টি সূচনার পরিচয়ের এক মহাগ্রন্থ উন্মোচন করে দিতে সক্ষম।
তাই জনৈক পারস্য কবি যথার্থই বলেছেন :
“
সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিতে সবুজ পাতা বৃক্ষলতার
প্রতিটি পাতা-ই এক একটি গ্রন্থ আল্লাহকে চেনার।”
দুর্ঘটনা নাকি কোন মহাশক্তির পরিচালনা ?
সৃষ্টিজগতের বিশালতা ও তার বিষ্ময়কর শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান প্রাথমিক নিম্নের দুটি সম্ভাবনার ফলাফল ধরে নেয়া যেতে পারে।
এক :
সব কিছুই কোন একটি সংঘর্ষ এবং পারস্পরিক মিশ্রনের ফল অর্থাৎ দর্শনের পরিভাষায় সৃষ্টির অস্তিত্ব ও তার বিষ্ময়কর নিয়মশৃঙ্খলার জন্যে কোন বস্তুগত কার্যকারণ-ই যথেষ্ট ,অন্য কোন ক্রিয়াশীল কার্যকারণের প্রয়োজন নেই।
দুই :
বিশ্ব সৃষ্টি ও তার সূক্ষ্ম নিপুণতার যথাযথ ও অপরিবর্তনীয় বিধি-বিধান ,সুউচ্চ কোন বিবেক-শক্তি ও প্রজ্ঞার পরিচালনার-ই কারণ আর তিনিই হচ্ছেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্রিয়াশীল সূচনাশক্তি ।
এখন আমাদের বিবেককে উপরোক্ত দু’
টি মতামতের মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্যে আহ্বান জানানো উচিত। এক্ষেত্রে তো আর পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুসন্ধান চলে না। একটি মাত্র উপায়ে অন্বেষণ ও গবেষণা চালানো যেতে পারে ,আর তা হলো সুস্থ বুদ্ধি-বিবেকের প্রয়োগ যা অকলুষিত প্রকৃতি এবং গোড়ামী ও একগুয়েমী বিবর্জিত অন্তর আত্মার সমন্বয়ে গঠিত। এ পর্যায়ে আমরা দু’
জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর মতামত উপস্থাপন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছি।
পদার্থবিদ এ্যাডভিন ফ্যাষ্ট বলেন :
‘
তিনটি মূল উপাদান যথা হাইড্রোজেন ,অক্সিজেন ও কার্বন হচ্ছে প্রতিটি প্রাণীদেহের সর্ব প্রাথমিক সামগ্রী। আর উক্ত তিনটি উপাদানের সাথে সামান্য নাইট্রোজেন গ্যাস ও অন্যান্য উপাদানের মিশ্রন আছে। এটা কি সম্ভব যে প্রনীদেহে তার উপাদানেরও স্বেচ্ছাকৃত মিশ্রণ কোন এক দুর্ঘটনার ফসল ? কেন আমরা দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে ব্যক্ত করছি না যে ,প্রাণীকুলের সৃষ্টিকর্তাই এরকম ইচ্ছা পোষন করেছেন ? কেন আমরা সৃষ্টি অস্তিত্বের আলোচনায় একটি সহজ শব্দ‘
আল্লাহ্’
উচ্চারণ থেকে বিরত রয়েছি ? যদিও এ শব্দটি অত্যন্ত সাধারণ ও সহজ তথাপি এর মর্যাদা ও আড়ম্বরতা গগন চুম্বী।
‘
জন এ্যাডওয়ালক বুহলের
’
নামক একজন রসায়নবিদ বলেন
:‘
যদি সম্ভবনাময়ী হিসেবের ভিত্তিতে প্রকৃতির যে কোন একটি কাজের ফলাফল অর্জনের জন্যে দুর্ঘটনাকে আমরা কারণ হিসেবে ধরে নেই তা’
হলে প্রত্যক্ষ করতে পারবো যে ,এ সময়কাল উক্ত কাজের জন্যে যথেষ্ট নয় ,যদিও ভূ-পৃষ্ঠের বয়স তিন বিলিয়ন বৎসর ধরা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রোটনের আদি উপাদান থেকে তার কণার সৃষ্টি । শুধুমাত্র স্বাধীন ও প্রত্যয়শীল একটি পথ প্রদর্শকের অস্তিত্ব স্বীকারের মাধ্যমেই সুশৃঙ্খল ও সুসামঞ্জস্য ব্যবস্থাপনা থেকে দুর্ঘটনা বা সংঘর্ষের ধারণাকে পৃথক করা যেতে পারে।