মুক্তির পথে

মুক্তির পথে0%

মুক্তির পথে লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

মুক্তির পথে

লেখক: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 16481
ডাউনলোড: 3471

মুক্তির পথে
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16481 / ডাউনলোড: 3471
সাইজ সাইজ সাইজ
মুক্তির পথে

মুক্তির পথে

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন।

18

আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী

আল্লাহর জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত। অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যত তার কাছে অর্থহীন। আল্লাহর জ্ঞান তার জাত-সত্তার সাথে সম্পৃক্ত তবে বহিরাগত কিছু নয়। তিনি জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞানী হননি। যেমনি তাঁর জাত-সত্তার কোন সূচনা লগ্ন নেই ,তেমনি তাঁর জ্ঞানের আদিকালও নিরূপন করা যায় না। কেননা ,তিনি তো কোন বস্তুসর্বস্ব বা শারীরিক সত্তা নন। যখন জ্ঞানের কোন পরিভাষাও সৃষ্টি হয়নি তখনও তিনি ছিলেন সর্বজ্ঞানী। তিনি আদি-অন্ত সকল কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। সকল কিছুর জ্ঞান তার করায়ত্বে ,জ্ঞানের সকল দিক তাঁর সামনেই উপস্থিত। তার জ্ঞান অনন্ত ,নির্ভূল ,কখনো তার জ্ঞান ভুলের শিকার হয় না। পূর্ব থেকেই সঠিক তথ্য তাঁর কাছে বিদ্যমান।

তবে আল্লাহর জ্ঞান মানব-স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না তাঁর জ্ঞান ও উপলদ্ধি ক্ষমতা। কাল ও সময় তারই সৃষ্টি ,তাই তাঁর জ্ঞান কোন কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর জ্ঞানে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বস্তু ,প্রাণী ,ঘটনা ও বিষয়ে কোন পার্থক্য নেই। আমাদের কর্ম-ক্রিয়ার সুক্ষ্মাতিসূক্ষ ব্যাপারও তাঁর গোচরীভূত। তাই বলে তার এ জ্ঞান মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার স্বাধীনতাকে সীমিত করে না। আমরা আমাদের কর্ম-ক্ষমতায় সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুতরাং সর্ববিষয়ে আল্লাহর জ্ঞানের কারণে মানুষের ভাল-মন্দ বিবেচনা ও নির্বাচনের স্বাধীনতা কোন ক্রমে খর্ব হয়ে যায় নি।

প্রশ্ন হতে পারে , যদি আল্লাহ্ পূর্ব থেকেই সমস্ত ব্যাপারে অবগত থাকেন তাহলে মানুষের মন্দ কাজের ব্যাপারেও নিশ্চয়ই তার জ্ঞান আছে । এমতাবস্থায় একজন অসৎ ব্যক্তি কোন অন্যায় ও অনৈতিক কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় ,স্বাধীনভাবে সে কাজটি আঞ্জাম দিতে পারে না। কেননা ,আল্লাহ যা জানেন তা তো কোনক্রমে ভুল হতে পারে না। আল্লাহ যদি পূর্ব থেকেই কোন হত্যাকারীর ব্যাপারে তার অন্যায় হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে সম্যক অবগত থাকেন আর যদি সেই অন্যায় কার্যটি সম্পাদন করা না হয় তা হলে তো আল্লাহর জ্ঞান ভুল প্রমাণিত হয়ে যাবে। তাই ,আল্লাহর জ্ঞান সঠিক প্রমাণ করার জন্যে অবশ্যই উক্ত হত্যাকারীকে এ হত্যাকান্ড ঘটাতে হবে। অতএব এ অন্যায় কাজটি সেই হত্যাকারী লোকটি বাধ্য হয়েই করলো না ? কেননা এক্ষেত্রে সে কাজটি করা ছাড়া হত্যাকারী ব্যক্তিটির অন্য কোন উপায় ছিল না। সুতরাং মানুষ যা কিছু করে তা আল্লাহ্-ই করিয়ে থাকেন। মানুষ স্বাধীনভাবে কোন কাজ আঞ্জাম দিতে সক্ষম নয়’’

নিন্মলিখিত উপায়ে অত্যন্ত সহজভাবে আমরা উক্ত প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারি :

প্রথমত : আল্লাহ কোনক্রমে অন্যায় কাজ করতে পারেন না। কেননা ,অন্যায় ও অসৎ কাজ সেই করেন যিনি এসব কাজের মাধ্যমে হয়ত নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চান নতুবা যিনি একজন ত্রুটিপূর্ণ সত্তা ,তার দোষ-ত্রুটি ঢাকার জন্যে অন্যের উপর যুলুম-অত্যাচারের মত নিকৃষ্ট পথের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কিন্তু একজন অপরিহার্য ,অমুখাপেক্ষী ও সুবিচারক সত্তার জন্যে এ ধরণের কল্পধারণা সম্পূর্ণ অশোভনীয়।

দ্বিতীয়ত : আল্লাহর জ্ঞান ,মানুষের কাজ-কর্মের স্বাধীনতাকে সীমিত করে না। মানুষ তার স্বীয় বিবেক-বুদ্ধি ও বিবেচনা ক্ষমতা দিয়ে ভাল অথবা মন্দ কাজের নির্বাচন করে থাকে। এক্ষেত্রে আল্লাহ্ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি শুধু ভাল বা মন্দ কাজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। কে কখন কি ভাবে একটা ভাল অথবা মন্দ কাজ আঞ্জাম দিবে এ ব্যাপারে তার অনন্ত জ্ঞান রয়েছে। আর এ সমস্ত কাজগুলো যে মানুষ তার স্বীয় স্বাধীনতা বলে সম্পাদন করবে -এ বিষয়েও তিনি সম্যক জ্ঞানের অধিকারী। কেননা ,আল্লাহ অসীম জ্ঞানের অধিকারী ,তার জ্ঞানের পরিধি নিরূপন করা অসম্ভব।

উদাহরণ স্বরূপ যদি কোন শিক্ষক তার ক্লশের কোন ছাত্রের ব্যাপারে বলেন যে , ঐ ছাত্রটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করবে । তাহলে শিক্ষক কি ঐ ছাত্রের লেখাপড়া ও তার প্রথম স্থান অধিকারের ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করলেন ? কক্ষনো না। আল্লাহর জ্ঞানের ক্ষেত্রেও এই একই বক্তব্য প্রযোজ্য। তিনি জানেন ,তাই বলে মানুষের কাজ-কর্মের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেন না মোটেও। আর যদি আল্লাহ-ই মানুষকে দিয়ে মন্দ ও অন্যায় কাজ করাবেন ,সমাজে অবিচারের প্রসার ঘটাবেন তাহলে তিনি কোরআন পাকে কি করে মানবজাতিকে সৎ ও হেদায়েরেত পথে আহ্বান জানাতে পারেন ? যে নিজেই অন্যায় কার্য করেন সে কিছুতেই অপর লোকদের ন্যায় পথে আহ্বান জানাতে পারেন না।

অপরদিকে ,পরকালে বিশ্বাসীদের জন্যে এ ধরণের অমুলক প্রশ্ন অত্যন্ত বিষ্ময়কর। কেননা ,আমরা আমাদের বিবেক প্রসূত দলীলপ্রমাণের সাহায্যে এ কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য যে ,মানুষকে তার ভাল-মন্দ কাজের হিসেব দিতে হবে পরকালে। আর যদি ইহজগতে কোন মানুষের অসৎ কাজের জন্যে আল্লাহ্ দায়ী হয়ে থাকেন তা হলে তিনি কিভাবে সে ব্যক্তির অন্যায় কাজের শাস্তি দিবেন ? কেননা ,মন্দ কাজটি তো ঐ ব্যক্তি করেনি বরং আল্লাহ্-ই করিয়েছেন। তারপরও যদি বান্দাকেই শাস্তি ভোগ করতে হয় তাহলে বলতে হয় এক্ষেত্রে আল্লাহ্ মানুষের উপর অবিচার করেছেন (নাঊযুবিল্লাহ্)। সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ বিবেক এধরনের আবিচার আল্লাহর উপর কখনো আরোপ করতে পারে না।

পবিত্র কোরআনের পরিভাষায় :

( قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّـهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ)

অর্থাৎ : যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় তারা কখনো সফলকাম হতে পারে না। (ইউনুস ,আঃ নং 69 )

তাই এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস , কোন কিছু থেকে কোন কিছু হয় না ,যা কিছু হয় আল্লাহ্ থেকে হয় । মানুষকে সত্য পথে দিক নির্দেশনার পরিবর্তে ভ্রান্ত পথে ধাবিত করে অনায়াসে। যারা এ ধরণের ভ্রান্ত আক্বিদায় বিশ্বাসী তারা মুসলমান বলে দাবী করলেও হয় তারা পরকালে অবিশ্বাসী নতুবা আল্লাহকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে নিজেদের ঈমানের অপরিপক্কতারই সাক্ষ্য দিতে সচেষ্ট। তারা ঈমানের বেশভূষা পরিধান করলেও প্রকৃত ঈমানের স্বাধ আস্বাদন করতে পারেননি।

সুতরাং যেহেতু মন্দ কাজের জন্য মানুষ স্বয়ং দায়ী তাই ঐ মন্দ কাজের শাস্তিও তাকেই ভোগ করতে হবে। আল্লাহ্ মানুষের হেদায়াতের জন্যে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। মানুষ তার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বীয় স্বাধীনতা ও বিবেক-বিবেচনা প্রয়োগে সম্পূর্ণ সক্ষম।

19

স্বাধীনতা বনাম পরাধীনতা

যারা বিশ্বাস করেন , মানুষের সকল ভাল-মন্দ কাজের মূলে আল্লাহর শক্তিমত্তা কাজ করছে এবং সকল কিছুর স্রষ্টাও তিনি -তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয় পেশ করে থাকেন। আল্লাহ্ বলেন ,

) إ ِنَّ اللَّـهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ(

অর্থাৎ ,নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছুর উপর শক্তিমান। (আল বাকারা ,আ : নং 109 )

তিনি আরো বলেন ,

( هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا)

অর্থাৎ ,তিনি আল্লাহ্ ,যিনি তোমাদের জন্যে যমিনের বুকে সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। (আল বাকারা ,আ : নং 29 )

তারা উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে ব্যাখ্যায় মানুষের সকল মন্দ বা অমঙ্গল কাজগুলোকেও আল্লাহর কাজ বলে চালিয়ে দিতে চান। তারা এ ধরনের আয়াতের অর্থ সমুন্নত রাখতে গিয়ে আল্লাহর ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে পরকালের হিসাব নিকাশকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছেন। কেননা ,যে আল্লাহ্ নিজে মন্দ বা অমঙ্গল কাজ করেন সে আল্লাহ্ কি করে মানুষের মন্দ কাজের বিচার করবেন ? আর যদি মানুষের মন্দ কাজের জন্যে তিনি নিজেই দায়ী হন তাহলে তার মন্দ কাজের জন্যে তিনি মানুষকে কি করে শাস্তি প্রদান করতে পারেন ? আর এভাবেই পরকালের বিচার দিবসে হিসাব নিকাশ অর্থহীন হয়ে পড়বে। আশআরী মতাবলম্বী ব্যক্তিবর্গ এ ধরণের ভিত্তিহীন ও পক্ষপাতিত্ব বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামকে বিবেক ও বুদ্ধিবৃত্তি-বিরোধী একটা মতবাদে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন।

অপরদিকে ,মু তাযিলা অনুসারীগণ বিশ্বাস করেন ,মানুষ সম্পূর্ণ ও নিরংকুশ স্বাধীন। আল্লাহ্ মানুষকে স্বাধীনতা প্রদান করে ছেড়ে দিয়েছেন। মানুষ ভাল-মন্দ যা কিছু ইচ্ছে স্বাধীনভাবে তা আঞ্জাম দিতে সক্ষম। এতে আল্লাহর কোন হস্তক্ষেপ নেই। আল্লাহ্ শুধু বসে তামাশা দেখছেন ,মানুষ কি করছে। আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করে সকল কিছুর দায়িত্ব তার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে আল্লাহর সুবিচার ও প্রজ্ঞার বিষয়টি উপস্থাপন করে থাকেন। মু তাযিলিরা নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয়ের ন্যায় কোরআনের যতস্থানে আল্লাহর ন্যায়বিচার ,অন্যায় কার্য পরিহার ও তার প্রজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোকে তাদের বক্তব্যের সমর্থনে পেশ করে থাকেন।

এক :( إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ )

অর্থাৎ ,নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী ও মহাপ্রজ্ঞাবান। (আত তাওবা ,আয়াত নং 28 )

দুই :( إِنَّ اللَّـهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَلَـٰكِنَّ النَّاسَ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ )

অর্থাৎ ,নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের উপর কোন প্রকার যুলুম-অত্যাচার করেন না বরং মানুষই নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করে থাকে। (ইউনুস ,আয়াত নং 44 )

তারা বলে ,যদি আল্লাহ কোন মন্দ কাজ করেন অথবা মন্দ কাজে মানুষের সাথে অংশ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি সুবিচারকের মহান পদ থেকে অপসারিত হয়ে যাবেন। কিন্তু কোরআন ও বুদ্ধিবৃত্তিক দলীল প্রমাণের মাধ্যমে সুপ্রমাণিত যে আল্লাহ একজন ন্যায় বিচারক ও আদেল। তারা আল্লাহর ন্যায়বিচারের গুণকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে আল্লাহর শক্তিমত্তাকে সীমিত করে ফেলেছেন যা আশআরী চিন্তাভাবনার চেয়েও অত্যন্ত বিপদজনক। এটা নির্ঘাত সত্য যে ,বিশ্বজগতের সকল কিছু আল্লাহ্ তার স্বীয় ক্বুদরতে সৃষ্টি করেছেন। কোন কিছুই তাঁর শক্তিমত্তার বাইরে নয়। সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনি। কিন্তু মানুষের কর্মকান্ড ও অন্যান্য প্রাণীদের কর্ম-ধারা একই রকম নয়। সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই আল্লাহ্ প্রদত্ত নিয়ম-নীতি মোতাবেক কার্য সম্পাদন করে থাকে ,এমন কি মানবজাতিও। আকাশ-বাতাস ,পাহাড় পর্বত ,গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সকল সৃষ্ট বস্তু আল্লাহর নির্দেশের অনুগত। এক্ষেত্রে মানুষও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু মানুষের কর্ম-ধারার সাথে অন্যান্য সৃষ্টির কর্ম-পদ্ধতির পার্থক্য রয়েছে। অনেকে ভুলবশতঃ সবকিছুকে একই পদ্ধতি ও নিয়ম-ধারার মধ্যে সংমিশ্রণ করে অন্যান্য সৃষ্টি বস্তুসমূহের সাথে মানুষের তুলনা করে থাকেন। ফলে আল্ কোরআনে যেখানে বলা হয়েছে , আল্লাহ সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন । অথবা আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান । সেখানে তারা এ সকল আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্পষ্ট বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে গেছেন। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য সকল সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হচেছ , কোন রকম বিবেক-বুদ্ধি ছাড়াই নির্দেশ মেনে চলতে হবে । আর মানবজাতীর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে : সকল কাজ-কর্ম বিবেকের বিশ্লেষণের মাপকাঠিতে সম্পন্ন করতে হবে । সুতরাং এ ক্ষেত্রেও আল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করে চলেছে মানবকুল। তবে যেহেতু সে ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা রাখে এবং সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে থাকে ,তাই তার কর্মের ফলাফলও তাকেই ভোগ করতে হবে।

পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে ,আশআরী ও তার অনুসারীদের ন্যায় মানুষকে তার ক্রিয়া-কর্মে পরাধীন মনে করা যেমনি যথার্থ বলে পরিগণিত হতে পারে না তেমনি মু তাযিলীদের মত আল্লাহর ক্ষমতা ও প্রভাবকে সীমাবদ্ধ করাও অন্যায় ও অমার্জনীয় অপরাধ বলে পরিগণিত।

এক দিকে আশআরীগণ মানুষকে এমনভাবে খাঁচাবদ্ধ করে ফেলেছে যে ,তাদের মতে মানুষ স্বেচ্ছায় কোন কাজই আঞ্জাম দিতে সক্ষম নয়। পক্ষান্তরে মু তাযিলীরা মানুষকে এমনভাবে স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার ক্ষমতা প্রদান করেছে যে তাদের বক্তব্য মতে আল্লাহ্ সকল ক্ষমতা মানুষের উপর অর্পন করে তিনি হাত গুটিয়ে বসে আছেন। এ উভয় মতামত-ই বিভ্রান্তির শিকার।

উপরোক্ত দু টি মতামতের মাঝামাঝি আরেকটি মতামত বিদ্যমান যা সত্যের মাপকাঁঠিতে সঠিক ও যথার্থ বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে বুদ্ধিমান ও চিন্তাবিদদের মাঝে। তা হলো একদিকে আমরা বলতে পারি মানুষের কর্ম ক্ষমতার পেছনে মূল শক্তিমত্তা হিসেবে আল্লাহ্-ই কাজ করেন। কেননা আল্লাহ্-ই তো আমাদেরকে শক্তি-সামর্থ্য ,বিবেক-বুদ্ধি ও বিচার ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে আল্লাহকে মানুষের মন্দ কাজের জন্যে দায়ী করা যাবে না। কেননা মানুষ তার কাজ-কর্ম স্বেচ্ছায় আঞ্জাম দিয়ে থাকে ,কারো চাপের মুখে নয়। তাই তো এ বিবেক ও বিচার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে মানুষ ,সমাজ ,রাষ্ট্র নির্বিশেষে মানবতার জন্যে অসংখ্য খেদমত করে যেতে পারে আবার বিপরীতভাবে অপরিসীম অমঙ্গল অন্যায় ও অকল্যাণ কাজ আঞ্জাম দিয়ে যেতে পারে। তাই পূণ্য ও মন্দ উভয় প্রকার কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে পুরস্কার অথবা শাস্তি তাকেই ভোগ করতে হবে। আর এ ধরনের তৃতীয় একটি মধ্যপন্থী মতবাদের মাধ্যমেই পরকালে বিশ্বাস ,আল্লাহর ন্যায় বিচার ও তার সর্বময় ক্ষমতার গুণাবলী স্ব-স্থানে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

এ সম্পর্কে নবী (সাঃ) বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ইমাম জা ফর বিন মুহাম্মদ আস্ সাদেক বলেছেন ,

‘‘ বাধ্যবাধকতাও নয়,ন িরংকুশ স্বাধীনতাও নয় বরং এ দু টোর মাঝামাঝি একটি অবস্থা-ই হচেছ সঠিক।’’ 26