অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম

অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম 0%

অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা

অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 19121
ডাউনলোড: 3537

অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 22 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 19121 / ডাউনলোড: 3537
সাইজ সাইজ সাইজ
অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম

অদৃষ্টবাদ ও ইসলাম

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টিনিচয়ের মধ্যে মানুষের রয়েছে এক অনন্য অবস্থান। আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট এটা সুস্পষ্ট ও স্বীকৃত যে, প্রাণী প্রজাতিসমূহের মধ্যে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই শ্রেষ্ঠত্ব যতোটা তার সৃজনশীলতার কারণে, তার চেয়ে অনেক বেশী তার বিচারবুদ্ধি (‘আক্বল্) ও ইচ্ছাশক্তির কারণে। এ দু’টি বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ তার সহজাত প্রকৃতিকে পরাভূত করতে সক্ষম। যে সব বিষয় গোটা মানব জাতির কর্ম ও আচরণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীন কর্মক্ষমতা থাকা-নাথাকা সংক্রান্ত ধারণা। এ ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ মানুষই তাত্ত্বিকভাবে বিশ্বাস করে যে, মানুষের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীন কর্মক্ষমতা বলতে কিছুই নেই, বরং তার জন্ম-মৃত্যু এবং সারা জীবনের কার্যাবলী ও সুখ-দুঃখ পূর্ব থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে বা তার প্রতিটি কাজই আল্লাহ্ তা‘আলা তার দ্বারা করিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের বেশীর ভাগ কাজকর্ম ও কথাবার্তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তারা নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীন কর্মক্ষমতায় বিশ্বাসী। বস্তুতঃ তাদের তাত্ত্বিক বিশ্বাস তাদের কর্ম ও আচরণের ওপর খুব কমই ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে, বরং তা কেবল ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাবই বিস্তার করে থাকে। মানব জাতিকে, বিশেষ করে মুসলমানদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে এ প্রশ্নটির সঠিক সমাধান উদ্ভাবন অপরিহার্য। এ লক্ষ্যেই অত্র গ্রন্থ রচনার প্রয়াস।

 

জাবারীয়্যাহ্ ও মু তাযিলী চিন্তাধারার আবির্ভাব

মুসলমানদের মধ্যকার অরাজনৈতিক দ্বীনী চর্চায় মশগূল ধারার অনুসারীদের মধ্যে পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে অদৃষ্টবাদিতা একটি মতাদর্শরূপে গড়ে ওঠে যা জাবারিয়্যাহ্ মতবাদ নামে পরিচিত। এ ধারার সর্বপ্রথম বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন স্বনামখ্যাত ছূফী সাধক হাসান বাছ্বরী (২১-১১০ হিজরী)। অবশ্য তাঁর সময় অদৃষ্টবাদী চিন্তা-বিশ্বাসের ব্যাপক বিস্তার ঘটে নি। পরবর্তী কালে আবুল হাসান আশ্ আরীর (২৬০-৩২৪ হিজরী) মাধ্যমে অদৃষ্টবাদী চিন্তাধারার ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

হাসান বাছ্বরীর অন্যতম শিষ্য ওয়াছেল্ বিন্ আত্বা (৮০-১৩১ হিজরী) তাঁর সাথে মতপার্থক্য করে তাঁর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান এবং নিজস্ব চিন্তাধারা প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি কোরআন ও হাদীছের যে সব উক্তির বাহ্যিক বা আক্ষরিক তাৎপর্য বিচারবুদ্ধির রায়ের সাথে খাপ খায় না বলে মনে করেন সে সব উক্তিকে ভাবার্থক বা রূপকার্থক বলে ব্যাখ্যা করেন। এর ভিত্তিতেই তিনি মানুষের পরিপূর্ণ স্বাধীন কর্মক্ষমতার প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। এ চিন্তাধারা অনুযায়ী , আল্লাহ্ তা আলা মানুষের কাজকর্মে মোটেই হস্তক্ষেপ করেন না।

ওয়াছেল্ বিন্ আত্বা তাঁর শিক্ষক হাসান বাছ্বরী থেকে ও হাসান বাছ্বরীর অন্যান্য শিষ্য থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় তাঁকে মু তাযিলী (বিচ্ছিন্ন হয়ে এক কোণায় চলে যাওয়া) বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ থেকে তাঁর চিন্তাধারার অনুসারীদেরকেও মু তাযিলী নামে অভিহিত করা হয়।

ওয়াছেল্ বিন্ আত্বা ও হাসান বাছ্বরীর অনুসারীদের মধ্যে একদিকে অদৃষ্টবাদ বনাম নিরঙ্কুশ এখতিয়ারবাদ নিয়ে , অন্যদিকে কোরআন মজীদের অর্থগ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধে ওঠে। কারণ , মু তাযিলীদের মতের বিপরীতে , হাসান বাছ্বরীর অনুসারীরা কোরআন-হাদীছের একটিমাত্র বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করতেন। এমনকি তাঁরা কোরআন মজীদের মুতাশাবেহ্ আয়াতেরও বাহ্যিক ও আক্ষরিক তাৎপর্যের প্রবক্তা ছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ: তাঁরা আল্লাহ্ তা আলার হাত থাকা এবং তাঁর আরশে অধিষ্ঠান সংক্রান্ত আয়াতের আক্ষরিক তাৎপর্য গ্রহণ করতেন।

এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে যে , ওয়াছেল্ বিন্ আত্বা (৮০-১৩১ হিজরী) এবং ইসলামের ইতিহাসের তিনজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনী ইমাম ও মনীষী হযরত ইমাম জাফর ছ্বাদেক ( আঃ) (৮৩-১৪৮ হিজরী) , হযরত ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিজরী) ও হযরত ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিজরী) ছিলেন সমসাময়িক। আলোচ্য বিষয়ে এ তিনজন ইমামের চিন্তাধারা ছিলো ভারসাম্যপূর্ণ। অর্থাৎ তাঁরা না জাবারীয়্যাহ্ ছিলেন , না মু তাযিলী ছিলেন।

পরবর্তী কালে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হানাফী মাযহাবের (ইমাম আবূ হানীফাহর নাম ভাঙ্গিয়ে যার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আবূ ইউসুফ্ ও মুহাম্মাদ্ বিন্ হাসান শায়বানী) ব্যাপক বিস্তার ঘটে। কিন্তু হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ্ঃ)-এর সমপর্যায়ের দ্বীনী ইমামের অনুপস্থিতির কারণে এবং আবুল হাসান আশ্ আরী কর্তৃক মু তাযিলী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা গ্রহণ করে তার প্রচার-প্রসারে সর্বাত্মকভাবে আত্মনিয়োগের ফলে তাঁর ও তাঁর চিন্তাধারা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলে হানাফী মাযহাবের অনুসারীরা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এভাবে এক সময় অ-হানাফী জাবারীয়্যাহ্ আক্বিদাহ্ (অদৃষ্টবাদী চিন্তাধারা) বাহ্যতঃ হানাফী মাযহাবের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। অন্যান্য মাযহাব , বিশেষতঃ হাম্বালী মাযহাবের অনুসারীরাও এ চিন্তাধারার দ্বারা কমবেশী প্রভাবিত হয়ে পড়ে।

যেহেতু জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারার অনুসারীরা আক্বায়েদের ক্ষেত্রে আক্বল্ (বিচারবুদ্ধি) প্রয়োগের বিরোধী ছিলেন এবং এর বিপরীতে মু তাযিলীরা আক্বল্-এর ব্যবহারের ওপর খুবই গুরুত্ব আরোপ করতেন , আর মানুষ স্বভাবতঃই যে কোনো বিষয়ে কমবেশী বিচারবুদ্ধি ( আক্বল্) প্রয়োগ করে এবং কোরআন মজীদেও আক্বলের প্রয়োগের ওপর তাকিদ করা হয়েছে , যারা আক্বল্ কাজে লাগায় না তাদের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে , সেহেতু মু তাযিলী চিন্তাধারার উদ্ভব হওয়ার পর থেকেই এ চিন্তাধারার অনুসারীদের মোকাবিলায় জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারার অনুসারীরা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু আবুল হাসান আশ্ আরী কর্তৃক মু তাযিলী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা গ্রহণের ফলে স্রোতের গতি বিপরীতমুখী হয়ে যায়।

এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে , জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা মূলগতভাবে বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ তথা যুক্তি প্রয়োগের বিরোধী হবার দাবী করলেও বিভিন্ন যুক্তির আশ্রয় নিয়ে তারা মু তাযিলী চিন্তাধারা খণ্ডন ও জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারার যথার্থতা প্রমাণের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক পরিহাস এই যে , তাদের চিন্তাধারার মধ্যকার এবং চিন্তা ও আচরণের মধ্যকার এ স্ববিরোধিতার প্রতি যথাযথভাবে দৃষ্টি প্রদান ও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় নি।

জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারায় নতুন প্রাণ সঞ্চার

জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারায় নতুন প্রাণ সঞ্চারকারী আবুল হাসান আশ্ আরী (২৬০-৩২৪ হিজরী) ছিলেন সমকালীন মু তাযিলী শেখ আবূ আলী জুবাঈ-র (ওফাত ৩০৩ হিজরী) শিষ্য। আবুল হাসান আশ্ আরী কর্তৃক মু তাযিলী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা গ্রহণের ঘটনাটি নিম্নরূপ:

আবুল হাসান একদিন তাঁর শিক্ষক আবূ আলী জুবাঈকে জিজ্ঞেস করলেন: বান্দাহর কল্যাণ সাধন করা আল্লাহর জন্য অপরিহার্য কিনা ? আবূ আলী বললেন: হ্যা। আবুল হাসান বললেন: কাফেরের সন্তান সেই তিনটি শিশু সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী যাদের একজন বালেগ্ব হবার পূর্বেই আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন এবং অপর দু জনকে জীবিত রাখলেন , অতঃপর তাদের একজন মুসলমান ও আল্লাহর হুকুমের অনুগত হলো , আর অপর জন কাফের হলো ও গুনাহ্গার হলো ? কিয়ামতের দিন এ তিন ভাইয়ের অবস্থা ও তাদের সম্পর্কে হুকুম কী হবে ?

জবাবে আবূ আলী বললেন: যে মুসলমান হলো সে বেহেশতে যাবে , আর যে কাফের হলো সে দোযখে যাবে এবং যে বালেগ্ব হবার আগে মারা গেলো সে না বেহেশতে যাবে , না দোযখে যাবে।

তখন আবূল হাসান বললেন: যে বালেগ্ব হওয়ার আগেই মারা গেলো সে যদি বলে: হে আল্লাহ্! আপনি যদি আমাকে জীবিত রাখতেন তাহলে আমি আপনার প্রতি ঈমান আনয়ন করতাম এবং আজ বেহেশতে গিয়ে আপনার বেহেশতী নে আমতের অধিকারী হতাম। তখন আল্লাহ্ তাকে কী জবাব দেবেন ?

আবূ আলী বললেন: সে তো জানে না যে , হয়তো জীবিত থাকলে সে কাফের হতো এবং জাহান্নামে যেতো। আল্লাহ্ তা আলা জানেন যে , এতেই তার কল্যাণ নিহিত যে , সে বালেগ্ব হওয়ার আগেই মারা যাবে।

তখন আবূল হাসান বললেন: আল্লাহ্ তা আলা এ তিন জনের মধ্য থেকে এক জনের ক্ষেত্রে কেন কল্যাণ নিশ্চিত করলেন ? যে কাফের হয়েছে তার ক্ষেত্রে কেন কল্যাণ নিশ্চিত করলেন না ?

আবূ আলী এ কথার কোনো জবাব দিতে পারলেন না। তখন আবূল হাসান তাঁর নিকট থেকে চলে গেলেন এবং বললেন: আল্লাহ্ তা আলার হুকুম (বা কাজ)কে মু তাযিলী চিন্তাধারার সাহায্যে পরিমাপ (বিশ্লেষণ) করা যাবে-তা থেকে তিনি উর্ধে। অতঃপর তিনি মু তাযিলী চিন্তাধারা খণ্ডনে আত্মনিয়োগ করলেন।

ঘটনার পর্যালোচনা

এ ঘটনাটি মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাধিক প্রচারিত ঘটনাবলীর অন্যতম। বিশেষ করে মুসলিম সমাজে শত শত বছর ধরে ব্যাপক জনগণের মধ্যে অদৃষ্টবাদী চিন্তাধারার ভিত্তি হিসেবে এ ঘটনাটি কাজ করে আসছে। এখনো অদৃষ্টবাদিতার পক্ষে যুক্তি হিসেবে এ ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়। তাই এ ঘটনাটি বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ , এ ঘটনাটির মধ্যে যেমন স্ববিরোধিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে ভ্রমাত্মক যুক্তি (مغالطة - fallacy)।

আলোচ্য ঘটনায় আবুল হাসান আশ্ আরী ও শেখ আবূ আলী জুবাঈ উভয়ের মধ্যেই , তাঁদের নিজ নিজ আক্বীদাহ্ প্রশ্নে স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়।

আবুল হাসান আশ্ আরী মু তাযিলী চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা গ্রহণ করেন। জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা আক্বল্ বা বিচারবুদ্ধির সত্য উদ্ঘাটন ক্ষমতায় বিশ্বাসী নয়। অর্থাৎ এ চিন্তাধারার দাবী অনুযায়ী যুক্তিতর্কের দ্বারা সত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আক্বল্ প্রয়োগ করে অর্থাৎ যুক্তিতর্কের আশ্রয় নিয়ে মু তাযিলী চিন্তাধারাকে ভুল প্রতিপন্ন করে জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারাকে গ্রহণ করেন। এভাবে তিনি , মুখে স্বীকার না করলেও কার্যতঃ স্বীকার করে নিলেন যে , আক্বলের প্রয়োগ বা যুক্তিতর্কের সাহায্যে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা সম্ভব। এর উপসংহার দাঁড়ায় এই যে , মু তাযিলী চিন্তাধারা ভুল হলেও জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা সঠিক নয়। কারণ , যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এ মতের সত্যতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালানো হয়েছে , যদিও এ মত অনুযায়ী যুক্তিতর্কের সাহায্যে কোনো কিছুর সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আবুল হাসান আশ্ আরী এ সত্যটির দিকে দৃষ্টি দিতে ব্যর্থ হন এবং তিনি যে মানদণ্ডকে বাতিল করে দিয়েছেন সে মানদণ্ডের দ্বারাই স্বীয় মত প্রমাণের চেষ্টা করেন। এভাবে তিনি চিন্তার ভারসাম্য রাখতে ব্যর্থ হন। ফলে তিনি এক ভুল থেকে আরেক ভুলে স্থানান্তরিত হন।

শেখ আবূ আলী জুবাঈর চিন্তাধারাও স্ববিরোধিতায় আক্রান্ত। আর তার কারণ হচ্ছে যুক্তিতর্ককে সঠিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে না পারা। তিনি এমন একটি বিষয়কে সঠিক ধরে নিয়ে যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণ করেন যা মু তাযিলী চিন্তাধারার মূল ভিত্তির সাথে সাংঘর্ষিক।

মু তাযিলী চিন্তাধারার মূল ভিত্তি হচ্ছে এই যে , আল্লাহ্ তা আলা মানুষের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করেন না ; মানুষ তার কাজকর্মের ব্যাপারে পুরোপুরি স্বাধীন। কিন্তু আবুল হাসান ও আবূ আলীর মধ্যকার কথোপকথনে দেখা যাচ্ছে , আবুল হাসান আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে মানুষের জীবনে হস্তক্ষেপ করার পরিচায়ক একটি বিষয় উপস্থাপন করলে আবূ আলী তা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়ে আবূল হাসানের প্রশ্নের জবাব দেন।

আবুল হাসান আশ্ আরী নাবালেগ্ব্ শিশুর মৃত্যুর জন্য একমাত্র কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আল্লাহ্ তা আলার ইচ্ছাকে। তিনি অন্য কোনো কারণকে বিবেচনায় নেন নি। এটা জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারার সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল , মু তাযিলী চিন্তাধারার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়।

মু তাযিলী চিন্তাধারা অনুযায়ী আবূ আলীর বলা উচিত ছিলো যে , শিশুটির মৃত্যুর জন্য প্রাকৃতিক কারণ (এবং মানবিক কারণও , যেমন: পিতামাতার পক্ষ থেকে যথাযথ যত্ন না নেয়া) দায়ী। কিন্তু তিনি এখানে জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারাকেই মেনে নিয়েছেন। এটা তাঁর চিন্তাধারার স্ববিরোধিতার পরিচায়ক।

চিন্তাধারার স্ববিরোধিতা ছাড়াও উভয়ের উপস্থাপিত বক্তব্যে অনেক দুর্বলতা নিহিত রয়েছে।

প্রথমতঃ কথিত নাবালেগ্ব শিশুর মৃত্যুর জন্য কেবল আল্লাহ্ তা আলার ইচ্ছাকেই দায়ী করা হয়েছে এবং অন্যান্য কারণকে (প্রাকৃতিক ও মানবিক) উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে , আল্লাহ্ তা আলা ইতিবাচকভাবে বা কল্যাণের লক্ষ্যে ব্যতীত বান্দাহর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না। দৃশ্যতঃ আল্লাহ্ তা আলার কোনো হস্তক্ষেপ নেতিবাচক হলেও (যেমন: মৃত্যু ও ধ্বংস) উদ্দেশ্য ও ফলাফলের দিক থেকে তা ইতিবাচক ও কল্যাণকর। আল্লাহ্ তা আলার সমগ্র সৃষ্টিকর্মকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে উপনীত করা এবং ব্যষ্টি ও সমষ্টির কল্যাণের লক্ষ্যে অপরিহার্য না হলে আল্লাহ্ তা আলা কোনো নেতিবাচক হস্তক্ষেপ করেন না। (এ প্রসঙ্গে পরে অধিকতর আলোকপাত করা হয়েছে।)

দ্বিতীয়তঃ কাফেরের যে সন্তান নাবালেগ্ব অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে সে বেহেশতেও যাবে না , দোযখেও যাবে না-এ ধারণা হচ্ছে একটি কল্পিত ধারণা যার পিছনে কোনো অকাট্য ভিত্তি নেই। কোরআন মজীদে জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মাঝখানে আ রাফবাসীদের সাময়িক অবস্থানের কথা আছে যারা শেষ পর্যন্ত বেহেশতে যাবে (সূরাহ্ আল্-আ রাফ: ৪৬-৪৯)। কিন্তু এ আ রাফবাসীদের মধ্যে নাবালেগ্বরা শমিল নয়। এছাড়া নাবালেগ্বদের জন্য বেহেশত ও দোযখের বাইরে তৃতীয় কোনো পারলৌকিক জগতের কথা কোনো অকাট্য সূত্রেই বর্ণিত হয় নি।

তৃতীয়তঃ বেহেশতীদের সামনে চিরন্তন শিশু-কিশোররা ঘুরে বেড়াবে (সূরাহ্ আল্-ওয়াক্বেয়াহ্: ১৭)। নিঃসন্দেহে এ শিশু-কিশোররা সেই সব মানবসন্তান যারা নাবালেগ্ব অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে এবং এ ক্ষেত্রে তাদের কেবল মুসলমান পিতা-মাতার সন্তান হওয়া অপরিহার্য হতে পারে না। কারণ , শিশু-কিশোররা যেহেতু নিষ্পাপ সেহেতু তাদের মধ্যে পার্থক্য করার কথা চিন্তনীয় নয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , এই শিশু-কিশোররা বেহেশতবাসী হিসেবে পরিগণিত হবে কিনা। এর জবাব হচ্ছে , না। কারণ , বেহেশতবাসী হওয়া মানে শুধু বেহেশতের মাঝে অবস্থান করার সুযোগ লাভ নয়। বরং পারিভাষিক অর্থে বেহেশতবাসী বলতে বুঝায় ভালো কাজের পুরস্কার স্বরূপ বেহেশতে অবস্থান (ও তার উপকরণাদি ভোগের সুযোগ লাভ)। এ অর্থে চিরন্তন শিশু-কিশোররা বেহেশতবাসী বলে পরিগণিত হবে না , বরং তারা হবে বেহেশতের উপকরণ। কারণ , বেহেশতবাসীরা তাদেরকে এবং তাদের চলাফেরা ও খেলাধুলা দর্শন করে এবং তাদের কথাবার্তা শ্রবণ করে আনন্দিত হবে। বেহেশতবাসীরা বেহেশতের মাঝে যে সব গায়ক পাখীর গান শুনে আনন্দিত হবে সে সব পাখী নিঃসন্দেহে বেহেশতবাসী বলে পরিগণিত নয় , বরং বেহেশতের উপকরণ রূপে পরিগণিত।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , বেহেশতে যে সব বস্তুগত ভোগোপকরণ থাকবে তাতে দৃশ্যতঃ বিভিন্ন বেহেশতবাসীর মধ্যে কোনো রূপ পার্থক্য হবে না। কারণ , বেহেশতবাসীরা যা চাইবে তা-ই পাবে। কিন্তু বেহেশতে যে সব আত্মিক ও মানসিক নে আমত লাভ হবে তা পার্থিব জীবনে ব্যক্তির আত্মিক-মানসিক গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন হবে এবং তার গুরুত্ব হবে এতোই বেশী যে , বস্তুগত নে আমতকে কিছুতেই তার সাথে তুলনা করা যাবে না। এ সব নে আমতের অধিকারীদের নিকট ঐ সব আত্মিক ও মানসিক নে আমতের তুলনায় বেহেশতের বস্তুগত উপকরণ খুবই নগণ্য বলে মনে হবে। অথচ অনেকে এ ধরনের আত্মিক ও মানসিক নে আমত লাভের ইচ্ছাই পোষণ করবে না। অবশ্য বস্তুগত নে আমত নেক আমলের পুরস্কার হিসেবে প্রাপ্তির মধ্যে একটা আত্মিক-মানসিক আনন্দ রয়েছে যা অভিন্ন বস্তুগত নে আমত স্রেফ দান হিসেবে প্রাপ্তির মধ্যে থাকে না।

বলা বাহুল্য যে , চিরন্তন শিশু-কিশোররা বেহেশতের বস্তুগত নে আমত ভোগ করলেও তা হবে কর্মের প্রতিদানপ্রাপ্তির অনুভূতিজাত নে আমত ও অন্যান্য আত্মিক-মানসিক নে আমত থেকে শূন্য। এমনকি যে সব বস্তুগত নে আমতের মধ্যে আত্মিক-মানসিক দিক জড়িত আছে তা থেকেও শিশু-কিশোরদের পক্ষে পরিপূর্ণ ভোগ সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ বেহেশতবাসী নারী-পুরুষের পবিত্র জুটির কথা বলা যায়। কারণ , একজন যুবকের দৃষ্টিতে একজন যুবতী এবং একজন যুবতীর দৃষ্টিতে একজন যুবক যে ধরনের নে আমত , একটি শিশুর দৃষ্টিতে তা নয়।

অতএব , বেহেশতে থাকা সত্ত্বেও শিশু-কিশোরদেরকে পারিভাষিক অর্থে বেহেশতবাসী বলা যাবে না। কারণ , তাদেরকে বেহেশতবাসী বলতে হলে বেহেশতের গায়ক পাখী ও প্রজাপতিদেরকেও বেহেশতবাসী বলতে হবে।

চতুর্থতঃ ওপরে যেমন উল্লিখিত হয়েছে , বেহেশতের সুখ বেহেশতবাসীর আত্মিক-মানসিক গঠনের ওপর নির্ভরশীল হবে বিধায় বিভিন্ন জনের সুখ-আনন্দ ভোগের মাত্রায় পার্থক্য হতে বাধ্য। কারণ , প্রত্যেকে স্বীয় আত্মিক-মানসিক গঠন অনুযায়ী যা চাইবে তা-ই লাভ করবে। অতএব , শিশু-কিশোরদের মনে বেহেশতবাসীদেরকে দেয় উচ্চতর নে আমত সমূহ লাভের আকাঙ্ক্ষাই জাগ্রত হবে না , ঠিক যেভাবে কয়েক দিন বয়সী ব্যঘ্র শিশুর সামনে মাতৃস্তন ও হরিণ শাবক বা তার গোশত থাকলে সে মাতৃস্তন পান করবে ; হরিণ শাবক বা তার গোশতের প্রতি তার কোনো আগ্রহ সৃষ্টি হবে না। অতএব , নাবালেগ্ব শিশুর পক্ষ থেকে বেহেশতবাসী হতে না পারার জন্য অভিযোগ উত্থাপনের প্রশ্নই ওঠে না।

পঞ্চমতঃ আবুল হাসান আশ্ আরী তাঁর শিক্ষকের সাথে কথোপকথনের উপসংহারে যে মন্তব্য করেছেন তা ভ্রমাত্মক যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি বললেন:تعالی ذوالجلال ان توزن احکامه بالاعتزال - মহাপরাক্রান্তের (আল্লাহ্ তা আলার) হুকুম (বা কাজ) সমূহ মু তাযিলী চিন্তাধারার দ্বারা পরিমাপ (বিশ্লেষণ) করা যাবে-তা থেকে তিনি উর্ধে। তাঁর এ কথার লক্ষ্য যদি শুধু মু তাযিলী চিন্তাধারার ত্রুটিনির্দেশ হতো তাহলে তা অতো গুরুত্ব বহন করতো না। কিন্তু এ কথার লক্ষ্য ছিলো (এবং পরে আশ্ আরী চিন্তাধারার পক্ষ থেকে যা সুস্পষ্ট ভাষায় দাবী করা হয়): আল্লাহ্ তা আলা তাঁর কাজের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করেন বলে মনে করা ঠিক নয় এবং মানুষের বিচারবুদ্ধি তাঁর কাজের কোনো নিয়মনীতি উদ্ঘাটন করতে সক্ষম নয়।

আশ্ আরীদের যুক্তি: আল্লাহ্ নিয়ম মানতে বাধ্য নন

এ প্রসঙ্গে আশ্ আরী চিন্তাধারার অনুসারীদের পক্ষ থেকে আপাতঃদৃষ্টিতে যুক্তিসিদ্ধ একটি বক্তব্য পেশ করা হয়। তা হচ্ছে আল্লাহর অধিকার ও সক্ষমতার দোহাই। বলা হয় , যেহেতু আল্লাহ্ তা আলা কোনো কিছু করতে বাধ্য নন , সেহেতু তাঁর যা ইচ্ছা তা-ই করার অধিকার আছে। অতএব , তিনি সকলকে দোযখে নিক্ষেপ করলেও তাঁকে যালেম বলা যাবে না , কারণ , তা তাঁর অধিকার এবং তিনি সকলকে জান্নাতে পাঠালেও তাঁকে বেহিসাবী বলা যাবে না , কারণ , তা তাঁর অধিকার।

কিন্তু এ ধরনের দাবী শুধু বিচারবুদ্ধির রায়ের সাথেই সাংঘর্ষিক নয় , বরং কোরআন মজীদের সুস্পষ্ট ঘোষণারও বিরোধী।

এতে অবশ্য সন্দেহের অবকাশ নেই যে , আল্লাহ্ তা আলা নিয়মনীতি প্রণয়নে ও অনুসরণে বাধ্য নন। কারণ , এমন কেউ বা কিছু নেই যে বা যা তাঁকে এ কাজে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে: নিয়মহীনতা বা নিয়ম ভঙ্গের পিছনে কী কারণ নিহিত থাকে ? নিঃসন্দেহে কোনো না কোনো দুর্বলতাই নিয়মহীনতা বা নিয়ম অনুসরণ না করার পিছনে দায়ী থাকে। এমতাবস্থায় পরম প্রমুক্ত যে সত্তা তিনি নিয়ম রচনা ও অনুসরণ করবেন না এটা অসম্ভব ব্যাপার। তাঁকে নিয়ম বিহীন খামখেয়ালী আচরণকারী বলে মনে করা মানে তাঁর মহান সত্তা সম্বন্ধে হীন ধারণা পোষণ করা। অবশ্য তাঁকে কেউ নিয়ম রচনা ও অনুসরণে বাধ্য করতে পারে না , কিন্তু তিনি নিজেই স্বেচ্ছায় নিয়ম রচনা ও অনুসরণ করবেন-এটা তাঁর সত্তার প্রমুক্ততারই দাবী। কোরআন মজীদে এর বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন , আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন:( کتب علی نفسه الرحمة ) - তিনি রহমত (প্রদর্শন)কে নিজের জন্য অপরিহার্য করে নিয়েছেন। (সূরাহ্ আল্-আন্ আম্: ১২)

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , সৃষ্টিলোকের প্রতি সর্বজনীন করুণা প্রদর্শন আল্লাহ্ তা আলা কর্তৃক রচিত ও অনুসৃত এক অলঙ্ঘনীয় নিয়ম। অতএব , সকলেই এ করুণা লাভ করে (যদি না সৃষ্টি নিজেরা নিজেদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করে)। তেমনি আল্লাহ্ তা আলা কখনোই তাঁর বান্দাদের ওপর যুলুম করেন না। তিনি এরশাদ করেন:( وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ) - আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাহদের প্রতি যুলুমকারী নন। (সূরাহ্ আালে ইমরান্: ১৮২) একই কথা আরো কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে।

আল্লাহ্ তা আলা কেবল সর্বজনীন দয়া ও করুণাকেই নিজের জন্য অপরিহার্য করে নেন নি , বরং মু মিনদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহকেও নিজের জন্য অপরিহার্য করে নিয়েছেন এবং একে তিনি তাঁর ওপর অবধারিত (حقاً ) বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এরশাদ করেন:

( حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِينَ)

এটা আমার ওপর অবধারিত যে , আমি মু মিনদেরকে নাজাত দেবো। (সূরাহ্ ইউনুস্: ১০৩)

আল্লাহ্ তা আলা আরো এরশাদ করেন:( وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا ) - আর (হে রাসূল!) আপনি কখনো আল্লাহর নিয়মে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাবেন না। (সূরাহ্ আল্-আহযাব্: ৬২)

আরো কয়েকটি আয়াতে এই একই কথা বলা হয়েছে। অতএব , এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই যে , আল্লাহ্ তা আলা কতক স্বরচিত অলঙ্ঘনীয় নিয়ম অনুসরণ করেন।

উক্ত ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণের কারণ এই যে , এ ঘটনার মধ্য দিয়ে জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারা (অদৃষ্টবাদ)-এর নব-উত্থান ঘটে এবং অচিরেই আশ্ আরিয়াহ্ চিন্তাধারা নামে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। শুধু তা-ই নয় , এখনো অদৃষ্টবাদী চিন্তাধারার সপক্ষে যুক্তি স্বরূপ উক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়। তাই এ যুক্তির দুর্বলতা তুলে ধরা অপরিহার্য মনে করেছি।

এবার আমরা বিচারবুদ্ধি ( আক্বল্)-এর দৃষ্টিতে জাবারীয়্যাহ্ ও এখতিয়ারীয়াহ্ উভয় মত সম্পর্কে আলোচনা করবো। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , মানুষ যে স্বাধীন এখতিয়ারের (আংশিক বা পুরোপুরি) অধিকারী এবং আল্লাহ্ তা আলা মানুষের কাজে মোটেই হস্তক্ষেপ করেন না-এ ধারণা শুধু মু তাযিলীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তাই জাবারীয়্যাহ্ চিন্তাধারার বিপরীত মতকে আমরা এখানে মু তাযিলী না বলে ব্যাপকতর অর্থে এখতিয়ারীয়্যাহ্ বলে অভিহিত করছি। অবশ্য এখ্তিয়ারীয়াহ্ চিন্তাধরারও দু টি ধারা রয়েছে ; একটি ধারা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ (مطلق ) মনে করে এবং অপর ধারাটি আল্লাহ্ তা আলার কল্যাণমূলক হস্তক্ষেপ সহ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতায় বিশ্বাসী।