কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে
কোরআন মজীদে এমন কতক আয়াত রয়েছে যা থেকে মনে হতে পারে যে , আল্লাহ্ তা‘
আলাই সব কিছু করেন। অদৃষ্টবাদীরা তাদের দাবীর সপক্ষে এসব আয়াতকে দলীল হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। অন্যদিকে কোরআন মজীদে এমন আয়াতের সংখ্যা অনেক যা থেকে মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতার স্বাধীনতা প্রমাণিত হয়। নিরঙ্কুশ এখতিয়ারবাদে বিশ্বাসীরা এসব আয়াতকে তাদের মতের সপক্ষে দলীল হিসেবে ব্যবহার করেন। এ উভয় ধরনের ভূমিকাই একদেশদর্শী । কারণ , উভয় পক্ষই নিজ নিজ মতের সপক্ষে উপস্থাপনযোগ্য আয়াতগুলোকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং অপর মতের সপক্ষে উপস্থাপনযোগ্য আয়াতগুলোকে এড়িয়ে যান। এভাবে তাঁরা পরস্পর বিরোধী দুই প্রান্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছেন। অথচ কোরআন মজীদের তাৎপর্য গ্রহণ ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অন্যতম সর্বসম্মত মূলনীতি হচ্ছে এই যে , একই বিষয়ের বিভিন্ন আয়াতকে পরস্পরের পরিপূরক বা সম্পূরক হিসেবে গণ্য করে অর্থ গ্রহণ বা ব্যাখ্যা করতে হবে।
এখানে আমরা দৃশ্যতঃ অদৃষ্টবাদ নির্দেশক , ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতার স্বাধীনতা নির্দেশক এবং শর্তাধীন সম্ভাবনা জ্ঞাপক আয়াত সমূহ থেকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ কতক আয়াত উদ্ধৃত করবো এবং উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে অর্থাৎ একই বিষয়ের আয়াত সমূহ পরস্পরের পরিপূরক বা সম্পূরক-এ মূলনীতির আলোকে আলোচনা করে উপসংহারে উপনীত হবো।
দৃশ্যতঃ অদৃষ্টবাদ নির্দেশক আয়াত
আল্লাহ্ তা‘
আলা এরশাদ করেন:
(
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ)
(১)“
ধরণীর বুকে এমন কোনো বিচরণশীল নেই যার রিযক্বের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নয় , আর তিনি তার অবস্থানস্থল ও তার (সাময়িক) বিশ্রামস্থল সম্বন্ধে অবগত ; প্রতিটি (বিষয়)ই
এ সুবর্ণনাকারী গ্রন্থে নিহিত রয়েছে।”
(সূরাহ্ হূদ: ৬)
অনেকে এ আয়াতে উল্লিখিতمستودعها
(তার সাময়িক বিশ্রামস্থল-যেখানে বিশ্রামের পর পুনরায় চারণ বা পথচলা শুরু করে) কথাটির অর্থ গ্রহণ করেছেন“
তার শেষ বিশ্রামস্থল”
বা“
যেখানে তার মৃত্যু হবে বা কবর হবে”
। এর ভিত্তিতে তাঁদের যুক্তি হচ্ছে , যেহেতু আল্লাহ্ তা‘
আলা প্রাণীর মৃত্যুস্থল সম্বন্ধে আগেই জানেন এবং তা কিতাবুম্ মুবীনে লিপিবদ্ধ আছে সেহেতু নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘
আলা তা পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন।
প্রায় অনুরূপ অর্থজ্ঞাপক আরেকটি আয়াত:
(
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ)
(২)“
আর তাঁর (আল্লাহ্ তা‘
আলার) নিকট রয়েছে“
গ্বায়ব্”
-এর চাবি সমূহ যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ অবগত নয়। আর তিনি জানেন যা রয়েছে স্থলে ও জলে। আর এমন কোনো পাতাও ঝরে পড়ে না যা তিনি অবগত নন ; আর না মৃত্তিকার অন্ধকারে কোনো শস্যদানা , না কোনো আর্দ্র বস্তু , না কোনো শুষ্ক বস্তু আছে যা সুবর্ণনাকারী গ্রন্থে নিহিত নেই।”
(সূরাহ্ আল্-আন্‘
আম্: ৫৯)
(
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ)
(৩)“
তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে (বর্তমানে ও ভবিষ্যতে) এবং যা আছে তাদের পিছনে (অতীতে)।
”
(সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: ২৫৫)
(
لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يُحْيِي وَيُمِيتُ)
(৪)“
আসমান সমূহ ও ধরণীর রাজত্ব তাঁর (আল্লাহ্ তা‘
আলার) ; তিনি প্রাণদান করেন এবং তিনিই মৃত্যু প্রদান করেন।”
(সূরাহ্ আল্-হাদীদ: ২)
(
اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ)
(৫)“
আল্লাহ্ তাঁর বান্দাহদের মধ্য থেকে যার জন্য চান রিযক্ব্ প্রসারিত করে দেন এবং তাকে পরিমাপ করে দেন।”
(সূরাহ্ আল্-‘
আনকাবুত্: ৬২)
(
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ)
(৬)“
ধরণীর বুকে এবং তোমাদের সত্তার মধ্যে এতদ্ব্যতীত কোনো বিপদ আপতিত হয় না যা আমরা পূর্বেই তা কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখি নি। নিঃসন্দেহে আল্লাহর জন্যে তা সহজ।”
(সূরাহ্ আল্-হাদীদ: ২২)
(
وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ)
(৭)“
আর আল্লাহ্ যখন কোনো জনগোষ্ঠীর অকল্যাণ চান তখন আর তার প্রতিরোধকারী থাকে না।”
(সূরাহ্ আর-রা‘
দ্: ১১)
(
لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ إِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ)
(৮)“
প্রতিটি উম্মাহর জন্যে একটি শেষ সময় (আজাল্) রয়েছে ; যখন তাদের শেষ সময় এসে যাবে তখন তারা না এক দণ্ড পিছিয়ে যেতে পারবে , না এগিয়ে আসতে পারবে।”
(সূরাহ্ ইউনুস: ৪৯)
(
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ)
(৯)“
আর তোমরা ইচ্ছা করছো না (বা করবে না) যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন।”
(সূরাহ্ আদ্-দাহর্: ৩০)
(
يُدْخِلُ مَنْ يَشَاءُ فِي رَحْمَتِه)
(১০)“
তিনি যাকে চান (বা চাইবেন) স্বীয় রহমতে প্রবেশ করান (বা করাবেন)।
”
(সূরাহ্ আদ্-দাহর্: ৩০)
(
فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ رَمَى)
(১১)“
অতএব , (হে মুসলমানগণ!)
তোমরা তাদেরকে হত্যা করো নি , বরং আল্লাহ্ই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর (হে রাসূল!) আপনি যখন নিক্ষেপ করলেন তখন আপনি নিক্ষেপ করেন নি , বরং আল্লাহ্ই নিক্ষেপ করেছেন।”
(সূরাহ্ আল্-আনফাল্: ১৭)
(
وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ)
(১২)“
আর আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোনো পথপ্রদর্শক নেই।”
(সূরাহ্ আয্-যুমার্: ২৩)
(
خَتَمَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ)
(১৩)“
আল্লাহ্ তাদের অন্তর সমূহের ওপর ও তাদের শ্রবণশক্তির (অনুধাবন ক্ষমতার) ওপর মোহর করে দিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টিশক্তির ওপর পর্দা রয়েছে।”
(সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: ৭)
(
قُلْنَا يَانَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ)
(১৪)“
বললাম: হে অগ্নি! ইবরাহীমের ওপর শীতল হয়ে যাও।”
(সূরাহ্ আল্-আম্বিয়া’
: ৬৯)
বলা হয় , এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে , আগুনের কোনো দহনক্ষমতা নেই , বরং আল্লাহ্ যখন চান তখন আগুন দহন করতে পারে এবং আল্লাহ্ না চাইলে তখন আগুনের পক্ষে দহন করা সম্ভব হয় না। অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
(
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ)
(১৫)“
(হে রাসূল!)
বলুন , হে আল্লাহ্-(সকল) রাজ্যের অধিপতি! আপনি যাকে চান রাজ্য দান করেন ও যার কাছ থেকে চান রাজ্য ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন ও যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন।”
(সূরাহ্ আালে‘
ইমরান্: ২৬)
(
فِي أَيِّ صُورَةٍ مَا شَاءَ رَكَّبَكَ)
(১৬)“
তিনি তোমাকে যেমন আকৃতিতে ইচ্ছা সৃষ্টি করেছেন।”
(সূরাহ্ আল্-ইনফিতার্: ৮)
(
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ)
(১৭)“
তিনিই (আল্লাহ্) যিনি যেভাবে চান তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভে আকৃতি প্রদান করেন।”
(সূরাহ্ আালে‘
ইমরান্: ৬)
(
يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ)
(১৮)“
তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র দান করেন।”
(সূরাহ্ আশ্-শূরা: ৪২)
আমরা দৃশ্যতঃ অদৃষ্টবাদ নির্দেশক উপরোল্লিখিত আয়াত সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে মানুষের এখতিয়ার নির্দেশক কতক আয়াত উল্লেখ করবো। কারণ , এসব আয়াতের উল্লেখ থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে , উপরোল্লিখিত আয়াত সমূহ দৃশ্যতঃ অদৃষ্টবাদ নির্দেশক মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তা নয়। অতঃপর বিষয়টিকে অধিকতর সুস্পষ্ট করার লক্ষ্যে পরে তা নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করবো।
মানুষের এখতিয়ার নির্দেশকারী আয়াত
মানুষকে যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কোরআন মজীদের শত শত আয়াত থেকে তা প্রমাণিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ এখানে তা থেকে কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করা হলো:
(
أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى)
(১)“
নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের মধ্যকার কোনো কর্মসম্পাদনকারীর কর্মকে বিনষ্ট করি না , তা সে পুরুষই হোক , অথবা হোক নারী।”
(সূরাহ্ আালে‘
ইমরান্: ১৯৫)
এখানে আল্লাহ্ তা‘
আলা সুস্পষ্টতঃই মানুষকে কর্মসম্পাদনকারী বলে গণ্য করেছেন ; তিনি বলেননি ,“
আমি যার মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করি”
বা“
যাকে দিয়ে কর্ম সম্পাদন করাই”
।
(
وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى)
(২)“
আর এই যে , মানুষ যে জন্য চেষ্টা করে তার জন্য তদ্ব্যতীত কিছু নেই।”
(সূরাহ্ আন্-নাজম্: ৩৯)
এখানে সুস্পষ্ট যে , মানুষ চেষ্টা-সাধনার ক্ষমতা রাখে।
(
مِنْكُمْ مَنْ يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنْكُمْ مَنْ يُرِيدُ الْآخِرَةَ)
(৩)“
তোমাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে দুনিয়ার ইচ্ছা করে (দুনিয়ার সুখ-সম্পদ পেতে চায়) এবং তোমাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে আখেরাতের ইচ্ছা করে (আখেরাতের সুখ-সম্পদ পেতে চায়)।
”
(সূরাহ্ আালে‘
ইমরান্: ১৫২)
)
و
َمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا(
(৪)“
যে ব্যক্তি আখেরাতের ইচ্ছা করলো (আখেরাতের সাফল্য কামনা করলো) এবং সে জন্য ঠিক সেভাবে চেষ্টা-সাধনা করলো যেরূপ চেষ্টা-সাধনা করা প্রয়োজন , আর সে যদি ঈমানদার হয়ে থাকে , তাহলে তাদের (এ ধরনের লোকদের) চেষ্টা-সাধনার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো হবে (এর উপযুক্ত প্রতিদান প্রদান করা হবে)।
”
(সূরাহ্ ইসরা’
/ বানী ইসরাঈল্: ১৯)
এখানে ইচ্ছাশক্তি ও চেষ্টা-সাধনা উভয়ই মানুষের ওপর আরোপ করা হয়েছে।
)
إ
ِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ(
(৫)“
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ কোনো জনগোষ্ঠীর অবস্থাকে পরিবর্তিত করে দেন না যতক্ষণ না তারা (নিজেরাই) তাদের নিজেদের ভিতরের অবস্থার পরিবর্তন সাধন করে।”
(সূরাহ্ আর্-রা‘
দ্: ১১)
অর্থাৎ কোনো জনগোষ্ঠীর অবস্থার পরিবর্তনের জন্য স্বয়ং সে জনগোষ্ঠীকে এ পরিবর্তনের জন্য ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে এবং তাকে এজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
)
ل
ِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ(
(৬)“
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চায় সে এগিয়ে যাবে অথবা (যে চায়) সে পিছিয়ে যাবে। প্রতিটি ব্যক্তিই সে যা অর্জন করেছে সে জন্য দায়ী।”
(সূরাহ্ আল্-মুদ্দাছছির্: ৩৭-৩৮)
অর্থাৎ ভালো কাজ বা মন্দ কাজ করা ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছাধীন বিষয় এবং এ কারণে তার কর্মের সুফল ও কুফলের জন্য সে নিজেই দায়ী।
)
و
َلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ(
(৭)“
আর সে জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনয়ন করতো ও তাক্বওয়া অবলম্বন করতো তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকত সমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা (ঈমান ও তাক্বওয়ার পথকে) প্রত্যাখ্যান করলো। অতএব , তারা যা অর্জন করলো সে কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।”
(সূরাহ্ আল্-আ‘
রাফ্: ৯৬)
অর্থাৎ ঈমান আনয়ন ও তাক্বওয়া অবলম্বন করা অথবা কুফরীর পথ অবলম্বন করা উভয়ই ব্যক্তির ইচ্ছাধীন ব্যাপার।
)
إ
ِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا(
(৮)“
অবশ্যই আমি তাকে পথপ্রদর্শন করেছি ; (অতএব ,) হয় সে কৃতজ্ঞতাপ্রকাশকারী হবে , অথবা অকৃতজ্ঞ হবে।”
(সূরাহ্ আদ্-দাহর্: ৩)
এমনকি বালা-মুছ্বীবত্ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্যও মানুষের এখতিয়ারাধীন কর্মকাণ্ডই (নেতিবাচক কর্মকাণ্ড) দায়ী।
)
و
َمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ(
(৯) তোমাদের ওপর যে সব বালা-মুছ্বীবত্ আপতিত হয় তা তোমাদের নিজেদের অর্জনের কারণেই ; অবশ্য তিনি (আল্লাহ্) অনেকগুলোই ক্ষমা করে দেন।”
(সূরাহ্ আশ্-শূরা: ৩০)
)
ظ
َهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ(
(১০)“
মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলভাগে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে-যাতে তিনি (আল্লাহ্) তাদেরকে তাদের কতক কৃতকর্ম (-এর প্রতিক্রিয়া) আস্বাদন করান ; হয়তো তারা (তাদের বিপর্যয়কর কর্মকাণ্ড থেকে) ফিরে আসবে।”
(সূরাহ্ আর্-রূম্: ৪১)
কোরআন মজীদে ছ্বালাত্ , ছ্বাওম্ , জিহাদ্ , যুদ্ধ ইত্যাদির আদেশ সম্বলিত বিপুল সংখ্যক আয়াত রয়েছে এবং আল্লাহ্ তা‘
আলার অপসন্দনীয় কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এসব আদেশ ও নিষেধ মানুষের ইচ্ছাশক্তি , কর্মক্ষমতা ও স্বাধীনতা নির্দেশ করে। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মক্ষমতা না থাকলে এসব আদেশ-নিষেধ অর্থহীন হয়ে যায় । আর আল্লাহ্ তা‘
আলা অর্থহীন কাজ সম্পাদনের ন্যায় ত্রুটি ও দুর্বলতা হতে প্রমুক্ত।