পর্বতমালার কাজ
পর্বতমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক কার্যাবলীর প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পবিত্র কোরআনের নিম্নের আয়াত :
আর আমি জমিনের উপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদের নিয়ে জমিন ঝুঁকে না পড়ে ; এবং আমি সেখানে প্রশস্ত প্রশস্ত রাস্তা সৃষ্টি করেছি যেন তারা গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারে। (কোরআন , ২১ : ৩১)
ভূ-পৃষ্ঠের গভীরে নীচে পর্বতমালাসমূহের মূল অংশ রয়েছে। (Earth, Press and Siever, p.৪১৩)
ছকবদ্ধ অবচ্ছেদ পর্বতমালার রয়েছে পেরেকের মতো অংশ যার গভীর মূল মাটিতে প্রোথিত অবস্থায় আছে। ( Anatomy of the Earth, Cailleux, p. ২২০ )
অন্য আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে , পর্বতমালার গভীর মূলের কারণে কিভাবে পর্বতসমূহ পেরেকের মতো আকার ধারণ করে। ( Earth Science, Tarbuck and Lutgens, p.১৫৮)
ভূ-পৃষ্ঠের কম্পন প্রতিরোধে পর্বতমালার যে ভূমিকা রয়েছে সেটি আমরা আয়াতটিতে খেয়াল করেছি। কোরআন যে সময়ে নাযিল হয় , তখন কেউ এ ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত ছিল না। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক ভূ -বিজ্ঞানের প্রাপ্ত তথ্যসমূহের মাধ্যমে কেবলি সেদিন এ বিষয়টি প্রকাশ পেল।
এ সমস্ত তথ্যানুসারে , যে ভারী ভারী বড় প্লেটগুলো পৃথিবীর উপরের শক্ত স্তর সৃষ্টি করে , সেগুলোর নড়াচড়া আর সংঘর্ষের ফলেই উৎপত্তি ঘটে পর্বতমালাসমূহের। দুটি প্লেট যখন পরস্পর ধাক্কা খায় তখন শক্তিশালী প্লেটটি অন্য প্লেটের নীচে গড়িয়ে চলে যায় , তখন উপরের প্লেটটি বেঁকে গিয়ে পর্বত ও উঁচু উচুঁ জায়গার জন্ম দেয়। নিম্নের স্তরটি ভূমির নীচে অগ্রসর হয়ে ভেতরের দিকে এক গভীর প্রসারণের জন্ম দেয়। এর মানে পর্বতের রয়েছে দুটো অংশ , উপরে সবার জন্য দর্শনযোগ্য একটি অংশ যেমন থাকে , তেমনি নীচের দিকে গভীরে এর সমপরিমাণ বিস্তৃতি রয়েছে।
পর্বতসমূহ ভূমির উপরে ও নিম্নদেশে বিস্তৃত হয়ে পেরেকের ন্যায় ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্লেটকে দৃঢ়ভাবে আটকে ধরে রাখে। ভূ-পৃষ্ঠের উপরের অংশ বা ক্রাস্ট অবিরাম গতিশীল প্লেট নিয়ে গঠিত। পর্বতগুলোর দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার বৈশিষ্ট্যটিই ভূ-পৃষ্ঠের উপরের স্তরকে স্থির রেখে কম্পন প্রতিরোধ করে অনেকাংশে। অথচ এই ক্রাস্টের রয়েছে গতিশীল গঠন।
বিজ্ঞানের বইগুলোতে পাহাড়ের গঠন বর্ণিত হয়েছে নিম্নরূপে :
মহাদেশগুলোর যে অঞ্চলসমূহ পুরু , যেথায় সারি সারি পর্বতমালা রয়েছে , সেথায় ভূ - পৃষ্ঠের শক্ত স্তর বা ক্রাস্ট ম্যান্টলের ভেতরে গভীরে ঢুকে যায়।
একটি আয়াতে পর্বতমালার এই ভূমিকাকে“
পেরেকের
”
ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে :
আমি কি জমিনকে করিনি বিছানা সদৃশ ? এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ ? (কোরআন ,৭৮ : ৬৭)
অন্য কথায় পর্বতমালাগুলো ভূ-পৃষ্ঠের উপরে ও নীচে গভীরে বর্ধিত হয়ে প্লেটগুলোকে তাদেরই সন্ধি বা মিলনস্থরেল স্থিরভাবে ধরে রাখে। এভাবে তারা পৃথিবীর উপরের স্তর বা ক্রাস্টকে দৃঢ়ভাবে এঁটে রাখে আর ম্যাগমা স্তরের উপরে কিংবা প্লেটগুলোর মাঝে ক্রাস্ট এর ভেসে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। সংক্ষেপে আমরা পর্বতমালাকে লৌহের পেরেকের সঙ্গে তুলনা করতে পারি যেগুলো কিনা কাঠের বিভিন্ন টুকরাকে একত্রে আটকে রাখে। পর্বতমালার এরূপ সেটে বা এটে ধরার কাজটি বিজ্ঞান সাহিত্যেIsostasy
শব্দ দ্বারা বর্ণিত রয়েছে।Isostasy
বলতে যা বুঝায় তা নিম্নরূপ :
Isostasy
: মাধ্যাকষর্ন জনিত চাপের ফলে ভূ - পৃষ্ঠের নীচে সহজে বক্র হয় এমন পাথর জাতীয় জিনিষ দ্বারা পৃথিবীর ক্রাস্ট বা উপরিস্তরের - সাধারণ ভারসাম্য বজায় থাকে।
পর্বতমালার এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বহু শতাব্দী পূর্বে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছিল যা কিনা আজ আধুনিক ভূবিজ্ঞানে ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা উন্মোচিত হয়েছে
-
এটি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ বিজ্ঞতারই উদাহ
রণ।
আর আমি জমিনের উপর সুদৃশ পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদেরকে নিয়ে জমিন ঝুঁকে না পড়ে ; এবং আমি সেখানে প্রশস্ত প্রশস্ত রাস্তা সৃষ্টি করেছি যেন তারা গন্তব্যস্তলে পৌছতে পারে।(কোরআন , ২১ : ৩১)
পর্বতমালার গতিশীলতা
পর্বতগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেন এরা স্থির , অবিচল। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি তা নয়। আসলে প্রতিনিয়তই পর্বতমালা রয়েছে সচল , গতিশীল। এই ব্যাপারটি কোরআনের একটি আয়াতে উল্লেখিত আছে :
আর তুমি পর্বতসমূহকে দেখে অটল -অচল মনে কর , অথচ এগুলো সেদিন মেঘরাশির ন্যায় চলমান হবে। এ হল আল্লাহর সৃষ্টি নৈ পুণ্য , যিনি সবকিছুকে করেছেন সুষম -সুসংহত। তোমরা যা কিছু করছ , তিনি তা সম্যক অবগত আছেন। (কোরআন , ২৭ : ৮৮)
পৃথিবীর উপরিস্তর (Crust
) , যার উপরে পর্বতসমূহ অবস্থিত , সে স্তরের -(Crust
) নড়াচড়াই পর্বতমালার গতিশীলতার কারণ । নীচে অধিকতর পু রু আরেকটি স্তর রয়েছে যাকে বলা হয় ম্যান্টল ; ম্যান্টলের উপরে ভাসমান রয়েছে এই উপরিস্তরটি(Crust
) । এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ , যখন জার্মান বিজ্ঞানীAlfred Wegner
ইতিহাসে সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেন যে প্রথম যখন পৃথিবীর সৃষ্টি হয় , মহাদেশগুলো একত্রে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু এরপর এরা ভেসে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। আর এভাবেই নড়াচড়ার কারণে একটি আরেকটি থেকে দূরে সরে যায়।
Wegner
এর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর ১৯৮০ এর দশকে ভূ -তত্ত্ববিদগণWegner
এর এই প্রস্তাবটি সঠিক ছিল বলে বুঝতে পারেন। ১৯১৫ সালেWegner
একটি আর্টিকলে নির্দেশ করেন যে , প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে ভূ -পৃষ্ঠের স্থলভাগসমূহ একসঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। আর এই বৃহৎ স্থল ভাগটি পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে ছিলPangaea
নামে।
প্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছর পূর্বেPangaea
দুটি ভাগে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিকে ভেসে চলে যায়। এদের মাঝেGondwana
নামে বৃহৎ একটি মহাদেশ ছিল , যাতে বিদ্যমান ছিল আফ্রিকা , অষ্ট্রেলিয়া , এন্টার্টিকা-আর ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় অংশটি ছিলLaurasia
নামে , যেথায় অবস্থিতছিল ইউরোপ
,
উত্তর আমেরিকা আর ইন্ডিয়া বাদে এশিয়া। এই পৃথকীকরনের পর ১৫০ মিলিয়ন বছর ধরে
Gondwana
আর
Laurasia
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে আলাদা হয়ে যায়।
Pangaea
বিভক্তির পর আবির্ভূত এই মহাদেশগুলো ভূ - পৃষ্ঠের উপরে অবিরাম সরে যাচ্ছে , প্রতি বছরে কয়েক সেন্টিমিটার করে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর স্থল ভাগ আর সমুদ্রের অনুপাতও বদলে গিয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে চালানো গবেষণায় উদঘাটিত ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন আবরণ ক্রাস্ট এর নড়া চড়া বিজ্ঞানীগণ নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করেন :
Crust
আরMantle
এর সর্বোপরিস্থিত স্তরটি -প্রায় ১০০ কিলোমিটার পুরুত্ব নিয়ে বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত হয় যাদেরPlate
বলা হয়ে থাকে। ছয়টি বড় বড় আর কয়েকটি ছোট খাট প্লেট বিদ্যমান রয়েছে এখানে।Plate Tectonices
নামক থিওরী অনুসারে এই প্লেটগুলো তাদের সঙ্গে মহাদেশ আর সমুদ্রের তলভাগ নিয়ে ভূ - পৃষ্ঠে নড়ে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। পরিমাপ করে দেখা গেছে যে , মহাদেশগুলোর এই গতি বছরে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। প্লেটগুলো যেহেতু অবিরত চলমান রয়েছে সেহেতু পৃথিবীর ভূগোলে ধীর গতির পরিবর্তন হবে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ প্রতি বছর আটলান্টিক মহাসাগর একটু একটু করে প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হচ্ছে।
এখানে এটি উল্লেখ করার মতো গুরুতপূর্ণ একটি পয়েন্ট
:
আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা পর্বতমালার নড়াচড়াকে চলমান বা প্রবাহিত হওয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আজ আধুনিক বিজ্ঞানীগণও এই গতির জন্য
“
মহাদেশের প্রবাহ
”
(
continental drift
)
শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
প্রশ্নাতীতভাবেই এটি কোরআনের একটি অলৌকিকত্ব। বিংশ শতাব্দীতে সম্প্রতি সেদিন যা বিজ্ঞান দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে তাই কোরআনে অনেক আগেই ঘোষিত হয়েছিল।
লৌহে অলৌকিকত্ব
পবিত্র কোরআনে লৌহকে ধাতু হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা হাদীদে লৌহ সম্পর্কে আমরা যা অবগত হই তা নিম্নরূপ :-
আর আমি প্রেরণ করেছি লৌহ , যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি এবং মানুষের জন্য আরো বহুবিধ উপকার। (কোরআন , ৫৭ : ২৫)
আয়াতটিতে একমাত্র লৌহের জন্য
“
প্রেরণ করেছি
”
শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। লৌহকে মানুষের উপকারের জন্য দেয়া হয়েছে -
উপমাগতভাবে এ অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু
শব্দটির আক্ষরিক অর্থ যখন আমরা বিবেচনায় আনি ,
যার অর্থ হলো
“
লৌহকে বাস্তবিকই সশরীরে আকাশ থেকে নিম্নে পাঠানো হয়েছে
”
তখন আমরা হৃদয়ংগম বা উপলব্ধি করতে পারি যে ,
আয়াতটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অলৌকিক ব্যাপারের ইংগিত দিচ্ছে।
কেননা আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যায় প্রাপ্ত তথ্যসমূহ উদঘাটন করেছে যে , আমাদের পৃথিবীতে প্রাপ্ত লৌহ মহাশূণ্যের বিশাল বিশাল নক্ষত্রসমূহ থেকে এসেছে।
মহাবিশ্বে বড় বড় নক্ষত্রের কেন্দ্রে ভারী ধাতুগুলো উৎপন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের সৌর জগতের নক্ষত্রগুলোর নিজেদের লৌহ উৎপন্ন করার মতো যথাযোগ্য গঠন নেই। সূর্যের চেয়েও বড় বড় নক্ষত্র যেখানে তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রীতে পৌছে , সেখানেই কেবল লৌহ উৎপন্ন হতে পারে। একটি নক্ষত্রে যখন লৌহের পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে ছাড়িয়ে যায় , তখন নক্ষত্রটি সে পরিমাণ আর ধারণ করে রাখতে পারে না। অবশেষে তা বিস্ফোরিত হয় এমনভাবে যাকে বলা হয় নোভা বা সুপার নোভা। এই বিস্ফোরণের ফলে লৌহ বহনকারী উল্কাগুলো বিশ্বব্রহ্মান্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এবং তারা ততক্ষণ পর্যন্ত শূণ্যে চলাফেরা করে যতক্ষন পর্যন্ত মহাশূণ্যজাত পদার্থগুলোর মাধ্যাকষর্ন জনিত বল দ্বারা আকৃষ্ট না হয় ।
এ সবকিছু এটাই প্রমাণ করে যে ,
লৌহ পৃথিবীতে উৎপন্ন হয়নি বরং তা মহাশূণ্যের বিস্ফোরিত নক্ষত্রগুলো হতে উল্কা দিয়ে বহন করে নিয়ে আসা হয়েছে পৃথিবীতে এবং
“
আমরা প্রেরণ করেছি লৌহ
”
আয়াতটিতে যেমন বলা হয়েছে ঠিক তেমনি ভাবেই লৌহকে পাঠানো হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে ,
সপ্তম শতাব্দীতে কোরআন যখন নাযিল হয় তখনকার সময় এ বিষয়টি বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায়নি।
জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি
পবিত্র মহান তিনি , যিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন উদ্ভিদ , মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে। (কোরআন , ৩৬ : ৩৬)
যদিও জোড়া বা যুগল শব্দটি দ্বারা পুরুষ আর নারীর জোড়াই ধারণা করা হয়ে থাকে ,
“
......
কিন্তু
তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে
”
এ উক্তিটির আবার বিস্তৃত পরিসরের ব্যবহার অথবা ব্যাখ্যা রয়েছে। অধুনা এই আয়াতটির একটি ব্যাখ্যার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীPaul Dirac
১৯৩৩ সালে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি প্রস্তাব করেন যে ,বস্তুসমূহ জোড়ায় জোড়ায় বা যুগল হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।Parite
নামের এই আবিষ্কার এটাই বলে যে , প্রতিটি বস্তুরই (Matter
) রয়েছে এর বিপরীত প্রতিবস্তু (Antimatter
) । অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুই বিপরীত গুণাবলীর প্রতিবস্তুর সঙ্গে জোড়ায় জোড়ায় বা যুগলরূপে বিদ্যমান রয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ ,প্রতিটি বস্তুর পরমাণুর বৈশিষ্ট্যের ঠিক উল্টো বৈশিষ্ট্য বহন করে তারই প্রতিবস্তু । অর্থাৎ বস্তুর উল্টো প্রতিটি প্রতিবস্তুর রয়েছে ধনাত্মক বিদ্যুৎবাহী ইলেকট্রন আর ঋণাত্মক বিদ্যুৎবাহী প্রোটন। এক বৈজ্ঞানিক সূত্রে বিষয়টি নিম্নরূপে বর্ণিত রয়েছে :
“
প্রতিটি কণারই (
Particle
)
বিপরীত বিদ্যুৎবাহী প্রতিকণা (
Anti-particle
)
বিদ্যমান রয়েছে -
আর অনিশ্চিত সম্পর্ক এটাই আমাদের বলে যে
,
জোড়ায় জোড়ায় বা যুগলের সৃষ্টি বা ধ্বংস শূণ্যে সকল সময় সকল স্থানে ঘটে থাকে।
”
সময়ের আপেক্ষিকতা
আজ সময়ের আপেক্ষিকতা একটি প্রমাণিত সত্য। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের বছরগুলোয় এ বিষয়টি বিজ্ঞানী আইনষ্টাইনের আপেক্ষিকতার থিওরী বা তত্ত্ব (Theory of Relativity
) দ্বারা উন্মোচিত বা প্রমাণিত হয়। অথচ তখনও পর্যন্ত মানুষ জানত না যে সময় আসলে একটি আপেক্ষিক বা তুলনামূলক ধারণা আর তা পরিবেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনষ্টাইন এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আপেক্ষিকতার থিওরী দিয়ে প্রমাণ করে দেখান। তিনি প্রমাণ করেন যে , সময় ভর (mass
) আর বেগের (velocity
) উপর নিভর্র শীল। মানব জাতির ইতিহাসে এর আগে আর কেউ এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ বা প্রকাশ করতে পারেননি।
অথচ ভিন্নভাবে পবিত্র কোরআনে এ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে যে , সময় আপেক্ষিক। বিষয়টি সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত যা বলে তা নিম্নরূপ :
আর তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করার জন্য তাগাদা করছে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। নিশ্চয় আপনার রবের কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান। (কোরআন , ২২ : ৪৭)
সময়ের ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে নিভর্র করে যে সময়টি উপলব্ধি করছে তার উপর। কোন একটি নির্দিষ্ট সময় একজনের কাছে স্বল্প সময় হিসেবে অনুভূত হতে পারে যেখানে এটিই আবার আরেকজনের কাছে মনে হতে পারে লম্বা সময়। এখানে কে সঠিক সেটি জানতে হলে ঘড়ি আর কেলেন্ডারের মতো কিছু জিনিষ রাখা দরকার। এগুলো ছাড়া সঠিকভাবে সময় নির্ণয় করা অসম্ভব।
তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় পরিচালনা করেন , অবশেষে তা তারঁ সমীপে এমন একদিনে পৌছাবে , যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনানুযায়ী হাজার বছরের সমান। (কোরআন , ৩২ : ৫)
ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহর সমীপে আরোহণ করে যায় এমন এক দিনে , যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। (কোরআন , ৭০ : ৪)
কিছু কিছু আয়াতে নির্দেশিত রয়েছে যে , মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সময়কে উপলব্ধি করে থাকে আর কখনও কখনও খুব সংক্ষিপ্ত বা অল্প সময়কে অতি লম্বা সময় হিসেবে উপলব্ধি করে থাকে । পরকালে শেষ বিচারের দিন মানুষ যেমন ধরণের কথাবার্তা বলবে তা এটিরই একটি পরিষ্কার উদাহরণ :
আল্লাহ বলবেন : বছরের গণনায় তোমরা পৃথিবীতে কত সময় অবস্থান করেছিলে ? তারা বলবে : আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছিলাম। অতএব আপনি গণনাকারী ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করুন।
আল্লাহ বলবেন ; তোমরা সেখানে অল্প সময়ই অবস্থান করেছিলে যদি তোমরা তা জানতে ? (কোরআন , ২৩ : ১১২)
প্রকৃত সত্য ব্যাপারটি হলো যে ৬১০ সন থেকে নাযিল হতে থাকা কোরআনে সময়ের আপেক্ষিকতা বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে - এটি কোরআন পবিত্র গ্রন্থ হওয়ার পক্ষে আরো একটি প্রমাণ।
বৃষ্টির অনুপাত
বৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে প্রদত্ত তথ্যাবলীর মাঝে একটি হলো যে , পৃথিবীতে বৃষ্টি পরিমিত পরিমাণে পতিত বা বর্ষিত হয়ে থাকে। সূরা যুখরুফে এটি নিম্নরূপে উল্লেখ করা হয়েছে :
আর যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন নির্দিষ্ট পরিমাণে। তারপর আমি সে পানির সাহায্যে মৃত জমিনকে সঞ্জীবিত করি। এরূপেই তোমাদেরকে বের করে আনা হবে। (কোরআন , ৪৩ : ১১)
আধুনিক গবেষণায় বৃষ্টির পরিমিত নির্দিষ্ট পরিমাণ আবারো একবার উদঘাটিত
হয়েছে। আন্দাজ করা হয়েছে যে ,
প্রতি সেকেন্ডে ভূ -পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬
মিলিয়ন টন পানি বাষ্প হয়ে উবে যায়। আর বছরে এ পরিমাণটি দাড়ায়
৫১৩ ট্রিলিয়ন টনে। আর পানি বাষ্প হওয়ার পরিমাণ প্রতি বছরে ভূ পৃষ্ঠে পতিত বৃষ্টিধারার পরিমাণের সমান। এর মানে এই দাড়ায় যে
,
পানি অবিরতই একটি
“
নির্দিষ্ট পরিমাণে
”
একটি সুষম চক্রের মধ্যে প্রবাহমান। পৃথিবীর জীবজগৎ এই পানি চক্রের উপরেই নিভর্র শীল। এমনকি মানুষ দুনিয়ায় সমস্ত টেকনোলজী বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও পানির এই চক্রটি কৃত্রিমভাবে পুণরুৎপাদন করতে সমর্থ হবে না।
এই ভারসাম্যের মাঝে ন্যূনতম পরিবর্তনও পৃথিবীর পরিবেশে মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্ট হবে যার ফলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ত্বের অবসান হতে পারে অর্থাৎ তা পৃথিবীর জীব জগতের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তা কখনও ঘটে না , কোরআনে যেমন করে বলা হয়েছে , ঠিক তেমন করেই বৃষ্টি প্রতি বছরে ঠিক একই নির্দিষ্ট পরিমানে বর্ষিত হতেই থাকে।
প্রতি বছরে যে পরিমাণ পানি বাষ্প হয়ে উবে যায় আর যে পরিমাণ পানি বৃষ্টিধারায় নেমে আসে এ দুটিরই পরিমাণ“
ধ্রুব”
বা”
অপরিবর্তনীয়”
: ৫১৩ ট্রিলিয়ন টন। কোরআনে এই পরিমাণটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে :“
আর যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন নির্দিষ্ট পরিমাণে........”
এই পরিমাণের নিত্যতা বা অপরিবর্তিতা পরিবেশগত ভারসাম্যের অস্তিত্বের জন্য আর এভাবে জীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
বৃষ্টির উৎপত্তি
বৃষ্টি কিভাবে হয় ? এ বিষয়টি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একটি রহস্যময় ব্যাপার ছিল। কেবলি সেদিন যখন আবহাওয়া নির্ণয়ের জন্য রাডার আবিষ্কৃত হলো , তার পর পরই বৃষ্টি উৎপন্ন হওয়ার পর্যায়গুলো জানা গেল।
সে অনুসারে বৃষ্টি উৎপন্ন হয় তিনটি পর্যায়ে। প্রথমতঃ“
বৃষ্টির কাঁচামাল”
বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে উপরে বাতাসে উঠে আসে , এরপর মেঘমালা উৎপন্ন হয় আর অবশেষে বৃষ্টিকণা দেখা দেয়। কোরআনে প্রদত্ত বৃষ্টি উৎপাদনের বর্ণনাটি ঠিক এ পদ্ধতিরই উল্লেখ করেছে। একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ব্যাপারটি এভাবে বর্ণনা করেছেন :
আল্লাহ এমন সত্তা যে , তিনি বায়ু প্রেরণ করেন , অতঃপর বায়ু মেঘরাশিকে সঞ্চালিত করে ; তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আসমানের শূণ্যমন্ডলের মধ্যে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে দেন , এবং কখনও তা খণ্ড বিখণ্ড করে দেন ; অতঃপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা। তিনি যখন তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা পৌছিয়ে দেন , তখন তারা আনন্দ করতে থাকে। (কোরআন , ৩০ : ৪৮)
এবার চলুন আয়াতে বর্ণিত এই পর্যায়গুলো আরো প্রযুক্তিগতভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখি :প্রথম পর্যায়
:
“
তিনি আল্লাহ এমন সত্ত্বা যিনি বায়ু প্রেরণ করেন
”
সমুদ্রের ফেনায় উৎপন্ন বায়ুর অগণিত বুদবুদ বিরামহীনভাবে ফেটে গিয়ে জলীয় কণাসমূহকে আকাশের দিকে উৎক্ষিপ্ত করে। এরপর লবণে পরিপূর্ণ এই কণাগুলো বাতাসে বাহিত হয়ে উর্ধ্বে বায়ুমন্ডলে উঠে যায়। এরোসল নামের এই কণাগুলো পানির ফাঁদ হিসেবে কাজ করে আর নিজেদের চারদিকে পানি বাষ্প জড়ো করে উৎপন্ন করে মেঘকণা।
উপরের ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে যে পানির কণাগুলো বাতাসে মুক্ত হচ্ছে। বৃষ্টি তৈরীর প্রথম পর্যায় এটি। এর পর নূতন তৈরী মেঘে পানি কণাগুলো বাতাসে ঝুলে থাকে আর পরে সেগুলো ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি তৈরী করে। এসবগুলো পর্যায়ই কোরআনে বর্ণিত আছে।
দ্বিতীয় পর্যায় :
“
..........
বায়ু মেঘরাশিকে সঞ্চালিত করে তারপর তিনি মেঘরাশিকে যেমন ইচ্ছা আসমানের শূণ্যমন্ডলের মাঝে ইতস্ততঃ
ছড়িয়ে দেন
”
বাতাসে ভাসমান লবণ স্ফটিক কিংবা ধূলিকণার চারদিকের পানি কণিকা ঘনীভূত হয়ে উৎপন্ন হয় মেঘমালা। কেননা মেঘমালায় বিদ্যমান পানি কণাগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র (.০১ -.০২মিলি মিটার ব্যাস) হওয়ায় মেঘসমূহ বাতাসে ঝুলে থাকে আর আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই মেঘে পরিপূর্ণ হয়ে ঢেকে যায় আকাশ।
তৃতীয় পর্যায় :
“
তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টিধারা
।
”
লবণ স্ফটিক কিংবা ধূলিকণার চতুর্দিকে ঘিরে বিদ্যমান পানিকণাগুলো ঘন ও ভারী হয়ে তৈরি করে বৃষ্টির কণা। এরপর বাতাসের চেয়ে ভারী বৃষ্টিকণাগুলো মেঘ থেকে সরে আসে এবং বৃষ্টিধারা হিসেবে মাটিতে নেমে আসতে শুরু
করে।
আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে , বৃষ্টি উৎপাদনের প্রতিটি ধাপই কোরআনের আয়াতসমূহে বর্ণিত রয়েছে। অধিকন্তু একদম সঠিক অনুক্রমে বা একটার পর আরেকটি পর্ব অত্যন্ত সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠে বিদ্যমান অন্যান্য বিষয় বা বস্তুর ন্যায় এ বিষয়টির সবচেয়ে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন মহান আল্লাহ তাআলা আর এভাবেই মানুষ বৃষ্টির পর্যায়গুলো উদঘাটন করার শত শত বছর পূর্বেই আল্লাহ্ তাআলা সে সম্বন্ধে মানুষকে অবগত করেন। অন্য একটি আয়াতে বৃষ্টির উৎপাদন সম্পর্কে নিম্নের তথ্যটি দেয়া হয়েছে :
তুমি কি দেখ না যে , আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন। তারপর মেঘগুলোকে একত্র করেন এবং পরে তা পুঞ্জীভতূ করেন স্তরে স্তরে ; অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে , সে মেঘের মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টি। আর তিনি আসমানস্থিত পাহাড়সদৃশ মেঘমালা থেকে বর্ষণ করেন শিলা এবং তা দিয়ে তিনি যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার উপর থেকে তিনি ইচ্ছা করেন তা দূরে সরিয়ে দেন। সে মেঘের বিদ্যুতের চমক এমন , যেন মনে হয় দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়। ( সূরা নূর : ৪৩ )
বিজ্ঞানীগণ মেঘমালার প্রকার পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বৃষ্টির মেঘ উৎপত্তির এক বিস্ময়কর ফলাফলের মুখোমুখী হন। সুনির্দিষ্ট সিস্টেম ও পর্যায়সমূহের মধ্য দিয়ে তৈরী হয় ও আকার ধারণ করে বৃষ্টির মেঘমালা। পঞ্জু পুঞ্জ মেঘমালা এক ধরণের মেঘ যা নিম্নের পর্যায়গুলোতে ধাপে ধাপে তৈরী হয়।
১নং পর্যায় : মেঘমালাসমূহ সঞ্চালিত হয়ে থাকে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে মেঘমালা বাহিত হয়ে থাকে।
২নং পর্যায় : সংযোগীকরণ , পুঞ্জীভূতকরণ এর পর বায়ুবাহিত ক্ষদ্র ক্ষুদ্র মেঘমালা একত্রিত হয়ে তৈরি করে বৃহত্তর মেঘ।
৩নং পর্যায় : স্তুপীকৃত হওয়া বা স্তুপে স্তুপে জমা হওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেঘমালা একত্রে সংযুক্ত হলে বৃহদাকার মেঘমালার মাঝেUpdraft
বেড়ে যায়। এইUpdraft
মেঘমালার প্রান্তভাগের চেয়ে কেন্দ্রভাগে বেশী জোরালো। এ প্রক্রিয়াতে মেঘগুলো খাড়াখাড়িভাবে বা লম্বালম্বিভাবে জমা হয়ে বাড়তে থাকে। এভাবেই মেঘমালাসমূহ স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়। মেঘের এই খাড়া বৃদ্ধি মেঘকে বায়ুমন্ডলের শীতলতর স্থানের দিকে টেনে নিয়ে যায় , সেখানেই উৎপন্ন হয় পানিবিন্দু আর শিলা এগুলোই বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় আকাশে। যখন এই শিলা ও পানি বিন্দুগুলি বেশী ভারী হয় , যখন মেঘের এইUpdraft
আর বহন করতে পারে না তখন মেঘ থেকে এরা মাটিতে পতিত হতে থাকে বৃষ্টি , শিলা ইত্যাদিরূপে।
১.পৃথক পৃথক টুকরা মেঘ।
২. মেঘগুলো যখন সংযুক্ত হয় তখন এদের ভিতরে Updraft বৃদ্ধি পায়। বৃহদাকারের মেঘ বাড়তে থাকে আর মেঘমালাসমূহ স্তুপীভূত হয়।
মেঘের Updraft এর ফলে স্তরে স্তরে মেঘমালা লম্বালম্বিভাবে বৃদ্ধি পায়। লম্বালম্বি বৃদ্ধির ফলে মেঘদেহটিকে বায়ুমন্ডলের অধিকতর ঠান্ডা অঞ্চলে টেনে নিয়ে যায় যেখানে বৃষ্টি কণা , শিলাবৃষ্টি তৈ রি হতে থাকে , বৃদ্ধি পেতে থাকে। যখন বৃষ্টিকণা আর শিলাবৃষ্টি অতিরিক্ত ভারী হয়ে যায় তখন মেঘের এই Updraft আর মেঘমালাসমূহকে ধারণ করতে না পারায় মেঘগুলো হতে বৃষ্টি , শিলাবৃষ্টি নীচে পতিত হতে থাকে। ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কোরআনে সূরা নূরের ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছিলেন ,“
.....তারপর মেঘগুলোকে একত্র করেন এবং পরে তা পুঞ্জীভূত করেন স্তরে স্তরে : অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে সে মেঘের মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টি।”
প্লেন , উপগ্রহ. কম্পিউটার এমনতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবহাওয়াবিদগণ কেবলি অতি সম্প্রতি মেঘ উৎপাদন , গঠন আর কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন-এ বিষয়টি আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত। এটি স্পষ্ট যে , আল্লাহ এমন একটি তথ্য দিয়েছেন যা ১৪০০ বছর পূর্বে মানুষের জানা ছিল না।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেঘমালাসমূহ (পুঞ্জীভূত মেঘমালা) বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সংযুক্ত হয় যা নীচের আয়াতটিতে বর্ণিত রয়েছে :“
..... আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন। তারপর মেঘগুলোকে একত্র করেন এবং পরে তা পুঞ্জীভূত করেন স্তরে-স্তরে......... ।”