কোরআনে মিসরের শাসকগণের উপাধি
মিসরের প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে এ তথ্যই বেরিয়ে আসে যে , সে অঞ্চলে মুসা (আঃ) ই একমাত্র নবী হয়ে আসেননি। মুসার (আঃ) সময়ের বহু আগে ইউসুফ (আঃ) মিসরে বসবাস করে গেছেন।
মুসা (আঃ) এবং ইউসুফ (আঃ) এ দুজনের ঘটনাবলী পড়তে গিয়ে আমরা কিছূ সাদৃশ্যের বা তুলনার মুখোমুখি হই। কোরআনে ইউসুফ (আঃ) এর সময়কার মিসরের শাসকদের সম্বোধন করতে গিয়ে মালিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
মালিক (বাদশাহ) বলল : ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো , আমি তাকে আমার একান্ত সহচর করে রাখব । তারপর সে যখন তার সাথে কথা বলল তখন সে বলল : নিশ্চয়ই আজ আপনি আমাদের কাছে অতিশয় মর্যাদাবান ও বিশ্বস্ত (কোরআন , ১২ : ৫৪)
কিন্তু মুসার ( আঃ ) সময়ে শাসকদের ডাকা হতো“
ফেরাউন”
।
আর আমি তো মূসাকে নয়টি প্রকাশ্য মু’
জিযা দিয়েছিলাম , আপনি বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করুন ; যখন সে তাদের কাছে এসেছিল তখন ফেরআউন তাকে বলেছিল :“
হে মূসা ! আমি তো মনে করি , অবশ্যই তুমি যাদুগ্রস্থ । (কোরআন , ১৭ : ১০১)
আজ যে সমস্ত ঐতিহাসিক রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে তাতে শাসকগণের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণের কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। পূর্বে প্রাচীন মিসরে রাজপ্রাসাদকে“
ফেরাউন”
বলা হতো আর এখান থেকেই এসেছে এই শব্দটি। প্রাচীন রাজবংশের শাসকগণ তাদের উপাধি হিসেবে এই নামটি ব্যবহার করেননি। মিসরের ইতিহাসে“
নূতন রাজ্য”
যুগের পূর্ব পর্যন্ত রাজাদের উপাধি হিসেবে এ নামটি শুরু হয়নি। এই সময়কালটি ১৮তম রাজবংশের সঙ্গে শুরু হয় আর বিংশতম রাজবংশ থেকে রাজাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে এই“
ফেরাউন”
শব্দটি টাইটেল হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
এখানে আরেকবার কোরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণের আরেকটি উদাহরণ পাওয়া যায় : ইউসুফ (আঃ) প্রাচীন রাজত্বে বর্তমান ছিলেন যে যুগে রাজাদের“
ফেরাউন
”
নয় বরং
“
মালিক
”
বলে সম্বোধন
করা হতো। উল্টো যেহেতু মুসা (
আঃ )
নূতন রাজ্যের যুগে বর্তমান ছিলেন ,
তাই তখনকার শাসকদের
“
ফেরাউন
”
নামে ডাকা হতো।
সন্দেহ নেই যে এমন পৃথক করে বলার জন্য একজনকে মিসরের ইতিহাস জানতে হবে। কিন্তু চতুর্থ শতকের মাঝেই মিসরের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায় মানুষ ; কারণ মানুষ আর মিসরের ভাষা (হাইআরোগ্লিফিক) বুঝতে পারেনি ; দীর্ঘদিন পর মিসরের ইতিহাস পুণরায় উনিশ শতকে উদ্ধার করা হয়। সুতরাং কোরআন নাযিল হওয়ার সময় মিসরের ইতিহাস সম্পর্কে কোন পুংখানুপুংখ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব ছিল না। অগণিত সাক্ষ্যপ্রমাণের মাঝে এটিও প্রমাণ করে যে কোরআন আল্লাহর বাণী।
উপসংহার
কোরআন আল্লাহরই বাণী
এই অবধি আমরা যা দেখেছি , তাতে একটি সত্যই স্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসে : কোরআন সেই গ্রন্থ যাতে বর্ণিত প্রতিটি তথ্যই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যাবলী আর ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কটি বিষয় সম্পর্কে কোরআনের উল ্লেখ - যার মানে , যে সময়ে যা কিছু মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না - সেসবই কোরআনের আয়াতগুলোয় সেই সময়ে ঘোষিত হয়েছিল। সেই সময়ের জ্ঞান আর টেকনোলজির মাত্রা বা অবস্থা দিয়ে এসব তথ্যসমূহ জানতে পারা ছিল অসম্ভব। এটাই স্পষ্ট সাক্ষ্য দান করছে যে কোরআন কোন মানুষের কথাবলী নয় । যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আর যিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সব কিছু পরিবেষ্টন করে আছেন সেই মহাশক্তিশালী আল্লাহরই কথামালা এই কোরআন।
কোরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে ,“
কোরআন যদি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো তরফ থেকে আসতো ,
তবে তাতে তারা অসংখ্য অসামঞ্জস্য খুঁজে পেত।
”
(
কোরআন ,
৪ :
৮২ )
কোরআনে অসামঞ্জস্য তো নয়ই ,
বরং এ স্বর্গীয় বইটির প্রতিটি তথ্য দিনে দিনে উত্তোরোত্তর অলৌকিকত্ব প্রকাশ করছে।
এখন মানুষের কর্তব্য আল্লাহর নাযিল করা এই বইখানি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে তার অনুসরণ করা আর এটিকেই এক মাত্র গাইড বা পরিচালিকা হিসেবে গ্রহন করে নেয়া। আল্লাহ আমাদের আহ্বান করে বলেছেন :
এটি একটি কিতাব , যা আমি নাযিল করেছি , অতীব বরকতময়। অতএব এর অনুসরণ কর এবং সতর্ক হও , যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। (কোরআন , ৬ : ১৫৫)
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করছেন :
বলুন : সত্য তোমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে ; অতএব যার ইচ্ছা হয় ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা হয় কুফরী করক। (কোরআন , ১৮ : ২৯)
না কখনও এরূপ করবেন না , এ কোরআন তো উপদেশবাণী। অতএব যার ইচ্ছাহয়
,
সে তা গ্রহন করুক। (
কোরআন ,
৮০ :
১১ -
১২ )
বিবর্তনের ভ্রান্ত ধারণা
ভূমিকা
আল্লাহর গ্রন্থ কোরআন যা কিনা আমাদের পথপরিচালিকা ও সাবধান বাণী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে , সেটিরই কিছু অলৌকিক দিক আমরা আলোচনা করেছি। এই সমস্ত অলৌকিক বিষয়গুলো দিয়ে আল্লাহ আমাদের নিদর্শন প্রেরণ করেছেন যে এটি সত্যের গ্রন্থ এবং তিনি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা এই বইটির ব্যাপারে বিবেচনা করে বা ভেবে দেখে । ভূ-পৃষ্ঠে সৃষ্টির নিখুত ডিজাইন সম্বন্ধে মানুষ স্বীকৃতি দান করবে আর এগুলো স্মরণের মাধ্যমে তারঁ শক্তির গুণগান করবে-এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কোরআনে নির্দেশ করেছেন আল্লাহ তাআলা। কিন্তু আজ এমন কিছু ভাবাদর্শ বিদ্যমান যেগুলো মানুষের মন থেকে সৃষ্টির সত্যের বিষয়টিকে ভুলিয়ে দিতে চায় এবং ভিত্তিহীন কিছূ ধারণা দ্বারা এ বিষয়টিকে দূরে ঠেলে দিতে চায়।
এগুলোর মাঝে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো বস্তুবাদ । বস্তুবাদ যেটিকে নিজের জন্য তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে ধরে নেয় সেটিই হল ডারউইনবাদ। প্রাণ অজৈব বস্তু
থেকে যুগপৎ সংঘটনের মাধ্যমে উষ্মেষিত হয়েছে বলে যুক্তি প্রদানকারী এই থিওরিটি নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে তখনই ,
যখন স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে একমাত্র আল্লাহ তা
’
আলাই এই বিশ্বচরাচর সৃষ্টি করেছেন।
তিনি আল্লাহ যিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন আর ক্ষুদ্রতম ও পুংখানুপুংখ ডিজাইন তৈরী করেছেন । বিবর্তনের যে থিওরীটি পোষণ করে যে জীব জগৎ আল্লাহর সৃষ্টি নয় বরং যুগপৎ সংঘটনের ফলাফল সেই থিওরীটি সত্য হতেই পারে না।
আশ্চর্য নয় যে , যখন আমরা বিবর্তন মতবাদটির দিকে দৃষ্টিপাত করি , তখন দেখতে পাই যে এটা বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো দ্বারাই বাতিল হয়ে যায় । প্রতিটি জীবের ডিজাইন অত্যন্ত জটিল আর চিত্তাকর্ষক । উদাহরণস্বরূপ , জড় জগতে অনুসন্ধান করে আমরা দেখতে পাই যে কি এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপর পরমাণুগুলো অবস্থান করে আছে এবং জীব জগতে আমরা লক্ষ্য করি যে , কেমন জটিল ডিজাইনের মাধ্যমে পরমাণুগুলো একএিত হয় আর কেমন অসাধারণ সেই পদ্ধতিসমূহ ; আর আমিষ , এনজাইম আর কোষসমূহের গঠন যেগুলো এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়ে থাকে ।
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জীবে বিদ্যমান এই বিস্ময়কর ডিজাইন ডারউইনবাদকে অসিদ্ধ প্রমাণ করেছে ।
আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের অন্যান্য গবেষণাগুলোয় সবিস্তরে আলোচনা করেছি এবং এভাবেই তা করে যাওয়া অব্যাহত রাখব। অবশ্য আমাদের ধারণা , বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় এনে এখানেও এর উপর একটি ছোট সারাংশ তৈ রী করলে তা কাজে আসবে।