মিরেকলস অব দ্য কোরআন

মিরেকলস অব দ্য কোরআন 20%

মিরেকলস অব দ্য কোরআন লেখক:
: ডাঃ উম্মে কাউসার হক
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

মিরেকলস অব দ্য কোরআন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 14 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 25560 / ডাউনলোড: 4355
সাইজ সাইজ সাইজ
মিরেকলস অব দ্য কোরআন

মিরেকলস অব দ্য কোরআন

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

1

2

3

4

5

বৈজ্ঞানিকভাবে ডারউইনবাদের পতন

প্রাচীন গ্রীস থেকেই একটি মতবাদ হিসেবে চলে আসলেও বিবর্তন থিওরিটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটে যখন প্রজাতির উৎস নামক বইখানা প্রকাশিত হয়ে থিওরিটিকে বিজ্ঞান জগতে সর্বশেষ টপিকে নিয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন প্রাণী প্রজাতিকে পৃথক পৃথকভাবে সৃষ্টি করেছেন-এটি ডারউইন তার এ বইখানায় অস্বীকার করেন । ডারউইনের মতানুসারে সমস্ত জীবেরই একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল এবং এরা কালের যাত্রায় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যমে বিচিত্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে ।

ডারউইনের থিওরিটি কোন দৃঢ় বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ছিল না ; তিনি নিজেও মেনে নিয়েছেন যে এটা ছিল নিছকই এক অনুমান অধিকন্তু , ডারউইন তার থিওরীর প্রতিকূলতা নামক বইখানার দীর্ঘ অধ্যায়সমূহে স্বীকার করেছেন যে , থিওরিটি বহু সমালোচনামূলক প্রশ্নের উত্তর প্রদানে ব্যর্থ হ চ্ছিল ।

ডারউইন নব নব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পানে তার সমস্ত আশা নিয়োগ করলেন , যেগুলো তার থিওরির প্রতিকূলতাগুলোর সমাধান নিয়ে আসবে বলে তার প্রত্যাশা ছিল । কিন্তু তার আশার বিপরীতে বৈজ্ঞানিত তথ্যগুলো এই সমস্যাগুলোর পরিধি আরো বাড়িয়ে দিল।

বিজ্ঞানের মোকাবেলায় ডারউইনবাদের এই পরাজয়টিকে তিনটি মূল আলোচ্য বিষয়ে পূণর্নিরীক্ষণ করা যায় :

১) ভূ-পৃষ্ঠে প্রাণের ঊন্মেষ কিভাবে হল-এর ব্যাখ্যা মতবাদটি কোনভাবেই প্রদান করতে পারে না।

২ ) থিওরিটি কর্তৃক প্র স্তাবিত বিবর্তন প্রক্রিয়াগুলোর বিবর্তন ঘটানোর কোন প্রকার ক্ষমতা আদৌ আছে কি নেই - তা প্রমাণ করার জন্য কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই ।

৩) জীবাশ্ম রেকর্ডসমূহ বিবর্তন থিওরির প্রস্তাবনাসমূহের সম্পূর্ণ উল্টো তথ্য বা প্রমাণ সরবরাহ করে ।

এই পরিচ্ছেদে আমরা এই তিনটি মূল বিষয় সাধারণ পরিধিতে পর্যবেক্ষণ করব :

অনতিক্রম্য প্রথম ধাপ : প্রাণের ঊন্মেষ

বিবর্তন মতবাদ শুধুমাত্র তর্কের খাতিরে এটাই শুদ্ধ বলে ধরে নেয় যে , ৩ ৮ বিলিয়ন বছর আগে আদি পৃথিবীতে আবির্ভূত একটি মাত্র জীবকোষ হতেই সমস্ত জীবিত প্রজাতির বিকাশ ঘটেছে । কিভাবে একটি মাত্র কোষ হতে মিলিয়ন মিলিয়ন জটিল প্রজাতির উদ্ভব হলো , আর বিবর্তন বলে যদি কিছু ঘটেই থাকে তবে ফসিল রেকর্ডে কেনইবা এর সামান্য কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না - এ ধরণের কোন প্রশ্নের উত্তর প্রদানে মতবাদটি অক্ষম। যাইহোক , সর্বাগ্রে , উক্ত বিবর্তন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি অনুসন্ধান করতে হবে : কিভাবে এই আদি কোষের উৎপত্তি হলো ?

যেহেতু বিবর্তনবাদ সৃষ্টি কৌশলকে অস্বীকার করে আর অতি প্রাকৃতিক কোন প্রকার মধ্যস্থতাকে মেনে নেয় না , সেহেতু তা এতেই অটল থাকে যে , আদিকোষ কোন ডিজাইন , পরিকল্পনা বা কোন ব্যবস্থাপনা ছাড়াই প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী এক আকস্মিক যোগাযোগের মাধ্যমে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই মতবাদ অনুযায়ী , যুগপৎ ঘটনাসমূহের ফলস্বরূপই নিশ্চিতভাবে জড় বস্তুগুলোই একটি জীবকোষের জন্ম দিয়েছে । যাহোক , এটা এমনকি জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে অনাক্রম্য নিয়মাবলীর সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ একটি দাবী ।

প্রাণী থেকে প্রাণীর উৎপত্তি

ডারউইন তার বইখানায় প্রাণের উদ্ভবের ব্যাপারটি কখনও উল্লেখ করেননি । জীবিত সত্তাগুলোর গঠন কাঠামো অত্যন্ত সরল-এ অনুমানের উপরই তার সময়কার বিজ্ঞানের আদি ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল । মধ্যযুগ থেকে স্বতঃস্ফুর্ত উৎপাদনের নামে একটি থিওরী দাবী করে আসছিল যে , জড় বস্তুগুলো একত্রে মিলিত হয়েই জীবের উদ্ভব ঘটায় , আর এটি তখন বিস্তৃতভাবে গ্রহনযোগ্য ছিল । সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হতো যে , ফেলে রাখা অতিরিক্ত খাবার থেকে পোকামাকড় আর গম থেকে ইদুঁর জন্ম নেয় । এই মতবাদটি প্রমাণের জন্য মজার মজার গবেষণা চালানো হতো । একটি ময়লা কাপড়ের টুকরায় কিছু গম ফেলে রাখা হতো আর কিছুক্ষন পরেই তা থেকে ইদুঁর জন্ম নেবে বলে বিশ্বাস করা হতো । অনুরূপভাবে মাংস থেকে কীটের উৎপত্তিকে স্বতঃস্ফুর্ত উৎপাদনের একটি প্রমাণ বলে ধারণা করা হতো । অবশ্য মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে এটা বোঝা গেলো যে , কীটগুলো মাংসে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে হাজির হয় না , বরং খালি চোখে দেখা যায় না-এমন কিছু লার্ভার আকারে মাছিগুলো কীটগুলোকে বহন করে নিয়ে আসে ।

এমনকি যে সময়ে ডারউইন তার প্রজাতির উৎপত্তি বইখানা লিখেন তখনও ব্যাকটেরিয়া জড়বস্তু থেকে জন্ম নেয় এমন একটি বিশ্বাস বিজ্ঞান জগতে বহুল প্রচলিত ছিল ।

অবশ্য ডারউইনের বই প্রকাশনার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় লুই পাস্তুরদীর্ঘ পর্যবেক্ষন ও গবেষণা শেষে তার ফলাফল ঘোষণা করেন যা ডারউইনের মতবাদের ভিত্তি স্থাপনকারী এই স্বতঃস্ফুর্ত উৎপাদনকে মিথ্যা প্রমাণ করে । ১৮৬৪ সনে , সর্বোনে দেয়া এক বিজয়ী লেকচারে লুই পাস্তুর বলেন , এই সরল গবেষণাটি হতে প্রাপ্ত গুরুতর আঘাত থেকে স্বতঃস্ফুর্ত উৎপাদনের মতবাদটি আর কখনও পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে না ।

বিবর্তন মতবাদটির সমর্থকগণ পাস্তুরের এই তথ্যগুলোকে দীর্ঘ সময় ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। অবশ্য বিজ্ঞানের জয়যাত্রা যখন জীবকোষের অতি জটিল গঠনের জট খোলে দিল , তার সাথে সাথে যুগপৎ ঘটনায় প্রাণের অস্তিত্ত্বে আসার কাল্পনিক ধারণা সম্পূর্ণ অচলাবস্থার সম্মুখীন হলো ।

বিংশ শতাব্দীতে সিদ্ধান্তহীন প্রচেষ্টা

খ্যাতনামা রুশ জীববিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ওপারিন প্রথম সেই বিবর্তনবাদী , যিনি বিংশ শতাব্দীতে প্রাণের উৎপত্তি বিষয়টিকে নিয়ে আবার নূতন করে কাজ শুরু করেন । ১৯৩০ সনে তিনি বিভিন্ন থিসিস নিয়ে এগিয়ে আসলেন আর প্রমাণ করতে চেষ্টা করলেন যে , জীবকোষ যুগপৎ ঘটনায় উৎপন্ন হতে পারে। অবশ্য এবারও এই অনুসন্ধানগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো আর ওপারিনকে নিম্নোক্ত স্বীকারোক্তিখানি করতে হলো : যাইহোক , দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়তোবা কোষের উৎপত্তি বিষয়ক সমস্যাটি জীবসমূহের বিবর্তনের পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের বেলায় সবচেয়ে অস্পষ্ট একটি পয়েন্ট হিসেবে রয়ে গিয়েছে । ২৫

ওপারিনের বিবর্তনবাদী অনুসারীগণ প্রাণের উৎপত্তি বিষয়ক সমস্যাটির সমাধানকল্পে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে লাগলেন। এই পরীক্ষাগুলোর মাঝে সবচেয়ে সুপরিচিত পরীক্ষাটি সম্পন্ন করেন ১৯৫৩ সনে আমেরিকান রাসায়নবিদ ষ্ট্যানলী মিলার। তিনি গবেষনার একটি সেট তৈরী করলেন ; তার যুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর আদি পরিবেশে কিছু গ্যাস বিদ্যমান ছিল যেগুলোকে তিনি তার সেটটিতে একসংগে মেশালেন ও মিশ্রণটিতে শক্তি সরবরাহ করলেন। অবশেষে সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরণের জৈব অণু (এমাইনো এসিড) উৎপন্ন করলেন যেগুলো প্রোটিনের গঠন কাঠামোতে বিদ্যমান থাকে ।

সে সময় এ পরীক্ষাটিকে বিবর্তনের স্বপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উপস্থাপন করা হয়েছিল । কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই এ গবেষণাটি অগ্রহনযোগ্য বলে প্রকাশিত হলো ; কেননা গবেষণায় যে পরিবেশ ব্যবহৃত হয়েছিল তা পৃথিবীর প্রকৃত অবস্থা হতে ছিল অনেক অনেক ভিন্ন ।২৬

দীর্ঘ নীরবতার পর মিলার স্বীকার করে নিলেন যে , তিনি যে পরিবেশের মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন তা বাস্তবে নেই ।২৭

বিংশ শতাব্দী জুড়ে প্রাণের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দানে বিবর্তনবাদীদের পেশকৃত সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো । সান্ডিয়াগো স্ক্রিপস ইনস্টিটিউট থেকে ভূ -রসায়নবিদ , জেফরী বাদা , ১৯৯৮ সনে আর্থ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক অনুচ্ছেদে এ সত্যটি মেনে নিয়ে বলেন :

আজ এই বিংশ শতাব্দী ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালেও সবচেয়ে বড় যে অমীমাংসিত সমস্যাটির মুখোমুখি আমরা হচ্ছি , যেমনটি হয়েছিলাম এ শতকে প্রবেশের সময় ; সমস্যাটি হল : ভূ - পৃষ্ঠে প্রাণের সঞ্চার হলো কিভাবে ? ২৮

জীবদেহের জটিল গঠন

প্রাণের উৎপত্তি প্রসংগে বিবর্তন মতবাদ এমন একটি বড় ধরণের অচলাবস্থায় সমাপ্ত হওয়ার একটি প্রাথমিক কারণ যে সমস্ত জীবগুলো অত্যন্ত সরল গঠনের বলে বিবেচনা করা হয়েছিল , সেগুলোরও অবিশ্বাস্য ধরণের জটিল গঠন রয়েছে। মানবপ্রযুক্তি দ্বারা তৈরী সমস্ত পণ্যের চেয়ে একটি জীবকোষ অধিকতর জটিল । আজ এই সময়ে এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ল্যাবরেটরীগুলোতেও অজৈ ব বস্তুগুলোকে একত্রিত করে একখানি জীবকোষ তৈরী করা যায় না ।

একখানি কোষ তৈরীতে প্রয়োজনীয় শর্তাদির পরিমাণ এত বিপুল যে এটাকে যুগপৎ ঘটনায় সংঘটিত হওয়ার ব্যাখ্যা দেয়াই ভার । কোষের গঠন কাঠামোতে ব্লক হিসেবে ব্যবহৃত হয় যে প্রোটিনগুলো , তাদের প্রতিটি গড়ে ৫০০ এমাইনো এসিড নিয়ে গঠিত ; যুগপৎভাবে সংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় সে প্রোটিনগুলোর তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা ১০৯৫০ ভাগেরও এক ভাগ। গাণিতিকভাবে ১০৫০ ভাগের চেয়ে কম কিংবা ক্ষুদ্রতর যে কোন সম্ভাবনা বাস্তবে অসম্ভব।

কোষের কেন্দ্রে অবস্থিতডি . এন একটি অবিশ্বাস্য ডাটা ব্যাংক , যা বংশগতির সমস্ত তথ্যাবলী বহন করে থাকে । গণনা করে দেখা গেছে যে , ডি এন তে যে তথ্যাদি সংকলিত রয়েছে তা যদি লিপিবদ্ধ করা যেতো তাহলে তা ৯০০ ভলিউম এনসাইক্লোপেডিয়ার এক বিশালাকায় লাইব্রেরী তৈরী করতো , যেখানে প্রতি ভলিউম এনসাইক্লোপেডিয়া রয়েছে ৫০০ পৃষ্ঠা ।

এই পয়েন্টটিতে একটি উভয় সংকট তৈরী হয় : ডি.এন.এ. কেবলমাত্র বিশেষ ধরণের কিছু প্রোটিনের (এনজাইম) সহায়তায় বিভাজিত হয় । আবার এ এনজাইমগুলো সংশ্লেষনের মাধ্যমে তৈ রী হওয়ার যাবতীয় তথ্যাবলী ডি.এন.এ. এর গায়ে সংকলিত থাকে । আর এই তথ্যাবলী থেকেই সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াগুলো বুঝে নেয়া যায় । দেখা যাচ্ছে যে , উভয়েই পরস্পর পরস্পরের উপর নিভর্রশীল । আর তাই কোষ বিভাজনের সময় তাদের উভয়কে একই সঙ্গে বর্তমান থাকতে হবে। এ কারণেই প্রাণ নিজে নিজেই উৎপত্তি লাভ করবে-এরূপ কাল্পনিক সম্ভাবনাটি বাতিল হয়ে যায়। ক্যালিফোর্নিয়ায় সান্ডিয়াগো ইউানভার্সিটির সুনামধন্য বিবর্তনবাদী , অধ্যাপক রেসলি অরগেল , সায়েন্টিফিক এমেরিকান ম্যাগাজিনের ১৯৯৪ সনের সেপ্টেম্বরের প্রকাশনায় একটি আর্টিকেলে এ সত্যটি স্বীকার করে বলেন :

এটা একেবারেই অসম্ভব যে গঠনগতভাবে জটিল প্রোটিন ও এমাইনো এসিড উভয়েই একই সময়ে একই জায়গা হতে উৎপন্ন হবে । তদুপরি এদের একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব অসম্ভব বলেই মনে হয় । আর তাই , প্রথম দৃষ্টিতে একজন এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন যে , প্রকৃতপক্ষে প্রাণ কখনও রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরী হতে পারতো না ।২৯

বলতে দ্বিধা নেই যে , যদি প্রকৃতিগত কারণে প্রাণের উৎপত্তির সম্ভাবনা না থাকে , তবে তখন এটাই মেনে নিতে হবে যে , এক অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক উপায়েই প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। এ সত্যটুকু সুস্পষ্টভাবে সেই বিবর্তন মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে যার প্রকৃত উদ্দেশ্য সৃষ্টি কর্ম কে অস্বীকার করা।

জীবনের অবিশ্বাস্য রকমের জটিল গঠন বিবর্তন থিওরীকে নস্যাৎ করার মত একটি বিষয়। জীব কোষের কেন্দ্রে অবস্থিত ডি.এন.এ এটিরই একটি উদাহরণ। ডি.এন.এ এক প্রকার ডাটা ব্যাংক যা চারটি ভিন্ন ভিন্ন অনু সজ্জিত হয়ে তৈরী হয়। জীবসত্ত্বার দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলোর কোড বহন করে এই ডাটা ব্যাংক। গণনা করে দেখা গেছে যে ,যদি মানুষের ডি.এন.এ লিখার ব্যবস্থা করা হয় তবে তা হবে ৯০০ ভলিউম এনসাইক্লোপেডিয়ার সমান। প্রশ্নাতীতভাবেই এই অসাধারণ তথ্যটি নিশ্চিৎভাবে হঠাৎ যুগপত সংঘটনের ধারণাটি ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে।

কাল্পনিক বিবর্তন প্রক্রিয়াসমূহ

দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ডারউইনের মতবাদকে বাতিল করে দেয় তা হলো - বিবর্তনের প্রক্রিয়াবলী হিসেবে যে দুটি ধারণার অবতারনা করা হয়েছিল সেগুলোর বাস্তবে বিবর্তন ঘটানোর কোন ক্ষমতা নেই বলে বুঝা গিয়েছে ।

ডারউইন প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে তার উত্থাপিত বিবর্তনবাদের ভিত্তি হিসাবে দাঁড় করান। তিনি এই পদ্ধতির উপর যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তা তার বইটির নামকরণেই স্পষ্ট হয়ে উঠে : প্রজাতির উৎপত্তি , প্রাকৃতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে

প্রাকৃতিক নির্বাচন বিবেচনা করে যে , যে সমস্ত জীব অধিকতর শক্তিশালী ও যেগুলো তাদের আবাস ভূমির স্বাভাবিক অবস্থায় অধিকতর উপযোগী বা যোগ্যতর বলে বিবেচিত হয় তারাই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকবে। উদাহরণস্বরূপ , কোন এক হরিণের পাল যখন অন্য কোন হিংস্র জন্তুর কবলে পতিত হয় , তখন যে হরিণগুলো অধিকতর দ্রুত বেগে দৌড়ে যেতে পারে তারাই কেবল টিকে থাকবে । অবশ্য প্রশ্নাতীতভাবেই , এই পদ্ধতি কোন হরিণের মাঝে বিবর্তন ঘটায় না আর একে বিকশিত করে অন্য কোন প্রজাতি , যেমন , ঘোড়ায় রূপান্তরিত -করে না ।

অতএব বিবর্তন ঘটানোর কোন ক্ষমতাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের নেই । ডারউইন নিজেও এ সত্যটি অবগত ছিলেন আর তাকে তার প্রজাতির উৎস নামক বইটিতে নিম্ন লিখিত উক্তিখানি করতে হয়েছিল : প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুকূল বৈষম্য কিংবা বৈচিত্র্য না ঘটা পর্যন্ত প্রাকৃতিক নির্বাচন কিছুই করতে পারে না । ৩০

ল্যামার্কের প্রভাব

তাহলে কিভাবে এই অনকূল পরিবর্তনগুলো ঘটবে ? ডারউইন তার যুগের বিজ্ঞানের আদি ধারণার দৃষ্টিকোণ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর প্রদানের চেষ্টা করেন । ডারউইনের পূর্ব যুগে বিদ্যমান ফ্রান্সের জীববিজ্ঞানী ল্যামার্কের মতানুসারে , জীব তাদের জীবদ্দশায় তাদের অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরণ করেছিল আর সেগুলো প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে একত্রীভূত হয়ে নূতন প্রজাতির প্রাণীর উদ্ভব ঘটিয়েছিল । যেমন , ল্যামার্কের মতে , জিরাফগুলো এক ধরণের কৃষ্ণকায় হরিণ থেকে বিকশিত হয়েছিল । যখন হরিণগুলো উঁচু বৃক্ষের পাতা খাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করত , তখন তাদের ঘাড় একটু একটু করে প্রসারিত হয়ে এক প্রজন্ম হতে অন্য প্রজন্মে লম্বা হয়েছে ।

ডারউইন নিজেও একই ধরণের উদাহরণ দিয়েছেন ; দৃষ্টান্ত স্বরূপ তিনি তার প্রজাতির উৎস বইটিতে বলেছেন যে খাবারের খোঁজে পানিতে নামতে গিয়ে কিছু ভালুক কালের পরিক্রমায় নিজেরাই তিমিতে রূপান্তরিত হয়েছিল ।৩১

যাই হোক , বিংশ শতাব্দীতে ম্যান্ডেল উত্তরাধীকার সূত্রাবলী আবিষ্কার করলেন আর বংশানুগতি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান কর্তৃক সে সূত্রগুলোর যথার্থতা যাচাই করা হলো । বংশানুগতির বা উত্তরাধীকার সূত্রগুলো সে সময়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে আর অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরিত হয়-এ ধরণের উপাখ্যানটি নাকচ করে দেয়। এভাবেই প্রাকৃতিক নির্বাচন , বিবর্তন প্রক্রিয়া হিসেবে সমর্থন পেতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় ।

নব্য -ডারউইনবাদ এবং মিউটেশন

ডারউইন ভক্তরা ১৯৩০ সালের শেষ দিকে একটি সমাধানে পৌছার লক্ষ্যে আধুনিক সংশ্লেষন থিওরী কিংবা আরো সাধারণভাবে যেটি নব্য -ডারউইনবাদ নামে পরিচিত , সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যান। নব্য -ডারউইনবাদে মিউটেশন প্রক্রিয়াটি যোগ করা হয় ; আর মিউটেশন হলো - বাহ্যিক কিছু কারণ যেমন , বিকিরণের (Radiation ) কিংবা সংযোজন ভ্রান্তির (Replication error ) কারণে জীবদেহের জীনে সংঘটিত বিকৃতি ; উপরোক্ত ফ্যাক্টরগুলোর জন্য প্রাকৃতিক মিউটেশনের সঙ্গে অনুকল পরিবর্তনের কারণ হিসেবে জীনে এ বিকৃতি ঘটে থাকে ।

বর্তমানে এই পৃথিবীতে বিবর্তনের মডেল হিসেবে আমরা যেটিকে দেখতে পাই তাই হলো নব্য -ডারউইনবাদ । থিওরিটি এটাই বলে যাচ্ছে যে , পৃথিবীতে মিলিয়ন মিলিয়ন জীব এসেছে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে , যদ্দারা জীবগুলোর জটিল অঙ্গাদি যেমন: কান , চোখ , ফুসফুস আর পাখাসমূহে মিউটেশন কিংবা জিনগত বিশৃংখলা সংঘটিত হয় । তথাপি একটি নির্জলা বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে যা এ থিওরিটিকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে :

মিউটেশন কখনো জীবদেহের বিকাশ বা উন্নয়ন ঘটায় না বরং তার ক্ষতিসাধন করে ।

এর কারণটি অত্যন্ত সাধারণ : ডি.এন.এ. এর রয়েছে একটি অতি জটিল গঠন আর এলোপাতাড়ি যে কোন পরিবর্তন এ কাঠামোটির ক্ষতি সাধন করে । আমেরিকার জিনতত্ত্ববিদ বি.জি. রাঙ্গানাথান বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেন :

মিউটেশন হলো ক্ষুদ্র , এলোপাতাড়ি আর ক্ষতিকর প্রক্রিয়া। এগুলো কদাচিৎ ঘটে আর ঘটলেও ভাল লক্ষণ যে , এরা কার্যকরী হবে না। মিউটেশনের ৪টি বৈশিষ্ট্য এটাই সূচিত করে যে , প্রক্রিয়াটি কখনো বিবর্তনজনিত বিকাশ ঘটায় না। অত্যন্ত জটিল জীবদেহে এলোপাতাড়ি পরিবর্তনগুলো হয় ব্যর্থ নচেৎ ক্ষতিকর বলে পরিলক্ষিত হয়। একটি ঘড়িতে এলোপাতাড়ি পরিবর্তন একে কোন উন্নতর ঘড়িতে রূপান্তরিত -করতে পারে না। খুব সম্ভবত এতে ঘড়িটির ক্ষতি হবে অথবা বড়জোর তা ব্যর্থ হবে। ভূমিকম্প কখনও নগরীর সমৃদ্ধি ঘটায় না বরং এর ধ্বংসই ডেকে আনে।৩২

এটা কোন আশ্চর্যের কথা নয় যে , মিউটেশনের কোন উদাহরণই কার্যকরী হয় না , তার মানে , মিউটেশন প্রক্রিয়া জীনের গায়ে বিদ্যমান সংকেতলিপির কোন প্রকার উন্নয়ন ঘটায়-এমন কোন দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয় না। সব ধরণের মিউটেশনই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। মিউটেশনগুলো-যাদের বিবর্তন প্রক্রিয়া বলে উপস্থাপন করা হয়েছে , তারা প্রকৃতপক্ষে জীবদেহে জীনের কতকগুলো সংঘটনমাত্র , যেগুলো বরং দেহের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় বলেই দেখা গিয়েছে। আর সাথে সাথে তা জীবগুলোকে অচল ও পঙ্গু করে দেয়। (মানব দেহে মিউটেশনের ক্ষতিকর প্রভাবের সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ-ক্যান্সার ) এতে কোন সন্দেহ নেই যে , কোন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া কখনো কোন ক্রমবিকাশ পদ্ধতি হতে পারে না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক নির্বাচনও নিজে নিজে কিছু করতে পারে না যা ডারউইন নিজেও মেনে নিয়েছেন। এই তথ্যগুলো আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে প্রকৃতিতে কোন বিবর্তন প্রক্রিয়া বিদ্যমান নেই। যেহেতু বিবর্তনের কোন পদ্ধতিরই অস্তিত্ব নেই সেহেতু বিবর্তন নামের কাল্পনিক কোন প্রক্রিয়াও সংঘটিত হয়নি।

ফসিল বা জীবাশ্ম রেকর্ডঃ মধ্যবর্তী কোন আকৃতির অস্তিত্ব নেই

বিবর্তন মতবাদ কর্তৃক প্রস্থাবিত - কোন দৃশ্যকল্প সংঘটিত হয়নি - এ সত্যটির সবচেয়ে পরিষ্কার সাক্ষ্য বহন করছে ফসিল রেকর্ড

বিবর্তন মতবাদ অনুসারে প্রতিটি জীব তার পূর্বসুরী থেকে জন্ম নিয়েছে। পূর্বে বিদ্যমান কোন প্রজাতি সময়ের ধারাবাহিকতায় অন্য কোন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে আর এভাবে বাকী প্রজাতিগুলোও অস্তিত্বে এসেছে। এ মতবাদ অনুসারে , এই রূপান্তর প্রক্রিয়া মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে ধীর গতিতে সম্পন্ন হয়েছে।

এই যদি ব্যাপার হতো তখন অবশ্যই অসংখ্য মধ্যবর্তী প্রজাতির অস্তিত্ব থাকত আর এরা দীর্ঘ পরিবর্তন কাল জুড়ে বর্তমান থাকতো ।

উদাহরণস্বরূপ , অতীতে কিছু অর্ধমাছ / অর্ধসরীসৃপ এর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকত তাদের পূর্ব থেকে বিদ্যমান মাছের বৈশিষ্টের সঙ্গে সরীসৃপের কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হতো। কিংবা কতক সরীসৃপ পাখি জাতীয় প্রাণী থাকতো যাদের পূর্বে রয়ে যাওয়া সরীসৃপের বৈশিষ্টের সংগে পাখির বৈশিষ্ট্য যোগ হতো। যেহেতু এরা একরূপ হতে অন্য রূপে উত্তরণের সময় জন্ম নিত সেহেতু তাদের অক্ষম , ত্রুটিপূর্ণ , পঙ্গু জীব হিসেবেই বিদ্যমান থাকার কথা । বিবর্তনবাদীরা এমন সব কাল্পনিক জীবের কথা বলে থাকেন যা অতীতে তাদের রূপ পরিবর্তনকালীন সময়ে দুয়ের মধ্যবর্তী আকারে (intermediate forms ) বিদ্যমান ছিল বলে তাদের বিশ্বাস ।

সত্যিই যদি এ ধরণের প্রাণীর অস্তিত্ব থাকত , তারা সংখ্যা ও বৈচিত্র্যে হতো মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন অবধি। আরো গুরুত্বপূর্ণ যে , অদ্ভুত এই প্রাণীগুলোর দেহাবশেষ ফসিল রেকর্ডে বিদ্যমান থাকার কথা। প্রজাতির উৎপত্তি বইটিতে ডারউইন বলেছেন :

আমার থিওরীটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে একই গ্রুপের সমস্ত প্রজাতির মাঝে ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপনকারী মধ্যবর্তী গঠনের এ ধরণের প্রাণীর সংখ্যা নিশ্চিত ভাবেই হবে অসংখ্য ।

ফলস্বরূপ তাদের অতীতে বিদ্যমান থাকার প্রমাণ কেবলমাত্র তাদের ফসিলসমূহে থেকে পাওয়া যেতে পারে । ৩৩

ডারউইনের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো

যদিও বিবর্তনবাদীরা ঊনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে শুরু করে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ফসিল খুঁজে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন , তথাপি এখনও পর্যন্ত কোথাও কোন অন্তর্বর্তীকালীন গঠনের প্রাণী খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাটি খুঁড়ে তুলে আনা সমস্ত ফসিলগুলো বিবর্তনবাদীদের প্রত্যাশার বিপরীত তথ্য প্রদর্শন করে এটাই প্রমাণ করছে যে , পৃথিবীতে প্রাণ এসেছে আকস্মিকভাবে আর পরিপূর্ণ আকার নিয়ে।

প্রখ্যাত ব্রিটিশ জীবাশ্মবিদ , ডিরেক ভি. এগার নিজে একজন বিবর্তনবাদী হয়েও তিনি এ সত্যটি মেনে নিয়েছেন এভাবে :

যে তথ্যটি বের হয়ে আসে তাহলো যে , ফসিলগুলো বর্গ বা প্রজাতি - এ দুয়ের যে কোন পর্যায়েই থাকুকনা কেন , যেকোন একটি স্তরে আমরা যদি এদের পুংখানুপুংখভাবে পরীক্ষা করে দেখি , তাহলে বারংবার আমরা খুঁজে পাই কোন ক্রমান্বয় বিবর্তন নয় , বরং এক গ্রুপের পরিবর্তে অন্য আরেকটি গ্রুপের যেন আকস্মিক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । ৩৪

ফসিল রেকর্ড থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে , সমস্ত জীব প্রজাতিই কোন দুইটি প্রজাতির অন্তর্বর্তীকালীন কোন গঠন নিয়ে নয় বরং পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এটি ডারউইনের অনুমানের ঠিক উল্টো। এটি এ বিষয়টিরও একটি অত্যন্ত জ্বলন্ত প্রমাণ যে , সমস্ত জীবকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সমস্ত জীব যে পূর্ববর্তী কোন প্রজন্ম হতে বিকশিত হয়ে নয় বরং আকস্মিকভাবে এবং সম্পূর্ণ অখণ্ড রূপে আবির্ভূত হয়েছে-তার একমাত্র ব্যাখ্যা এটিই হতে পারে যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে । সুপরিচিত বিবর্তনবাদী ও জীববিদ ডগলাস ফুতুইমা ও এ সত্যটি স্বীকার করে নিয়েছেন :

সৃষ্টি আর বিবর্তন - এ দুয়ের মাঝে প্রাণের উৎপত্তির ব্যাখ্যাগুলো ফুরিয়ে যায়। প্রাণীসমূহ পৃথিবীতে এসেছে হয় পূর্ণাঙ্গরূপে নচেৎ আসেনি। যদি তারা পূর্ণাঙ্গরূপে না আসে তবে তারা অবশ্যই পূর্বে বিদ্যমান কোন প্রজাতি হতে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় উদ্ভ ূত হয়েছে । যদি তারা পূর্ণাঙ্গ রূপেই এসে থাকে তবে বাস্তবিকভাবে অবশ্যই তারা কোন সর্বশক্তিমান মহাকৌশলী কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে।৩৫

ফসিলগুলো থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে , ভূ-পৃষ্ঠে প্রাণসত্ত্বার আবির্ভাব ঘটেছে নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গরূপে। তাতে বুঝা যাচ্ছে যে , প্রজাতির উৎপত্তি হয়েছে সৃষ্টি কৌশলের মধ্য দিয়ে , বিবর্তনের মাধ্যমে নয় ; আর এটা ডারউইনের অনুমানের ঠিক বিপরীত ।

কোরআনের ঐতিহাসিক অলৌকিকতা

কোরআনে হামান শব্দ

প্রাচীন মিসর সম্পর্কে কোরআনের কিছু তথ্য বহু ঐতিহাসিক বিষয় উন্মোচিত করে যেগুলো কিনা সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অনুদঘাটিত ছিল। এই বিষয়গুলো আমাদের আরো নির্দেশ করছে যে এ কোরআন এক নিশ্চিৎ মহাবিজ্ঞের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।

কোরআনে ফেরাউনের পাশাপাশি হামান নামক একটি চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে। ফেরাউনের একজন কাছের মানুষ হিসেবে এ নামটি কোরআন শরীফের ছয়টি ভিন্ন অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশ্চর্যের বিষয় যে , তৌরাতের যে অংশে মূসার জীবনী রয়েছে , তাতে এ নামটি কখনো উল্লেখ করা হয়নি। তবে ওল্ড টেষ্টামেন্টের সর্বশেষ অধ্যায়ে ব্যাবিলনের এক রাজার সাহায্যকারী হিসেবে এ নামটি পাওয়া যায় , যে রাজা কিনা মূসার সময়ের ১১০০ বছর পরে ইসরাঈলীদের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়েছিল।

কিছু অমুসলিম , যারা দাবী করে যে , রাসুলুল্লাহ (দঃ) তৌরাত এবং বাইবেল থেকে নকল করে কোরআন শরীফ সাজিয়েছেন , তারা জোর গলায় বলে যে , এ প্রক্রিয়ার সময় নবী (দঃ) কিছু কিছু বিষয়ে ত্রুটি সহকারে কোরআনে এনেছেন।

কিন্তু ২০০ বছর আগে যখন মিসরীয় প্রাচীন সংকেত লিপি হাইআরোগ্লিফিক (hieroglyphic ) উদঘাটন করে বুঝা গেল আর প্রাচীন লিপিগুলোয় হামান শব্দটির উল্লেখ রয়েছে জানা গেল-তখন এই দাবির অসারতা প্রমাণিত হলো।

এই আবিস্কারের আগে প্রাচীন মিসরীয় লিখা আর অভিলিখন (শিলার গায়ে লিখা) বুঝা যেতো না। হাইআরোগ্লিফিক বা সংকেত লিখনে লিখা প্রাচীন মিসরীয় ভাষা যুগ যুগ টিকে ছিল। তবে , দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দিতে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার আর অন্যান্য সংস্কৃতির প্রসারের ফলে মিসরীয়রা প্রাচীন বিশ্বাস আর হাইআরোগ্লিফিক বা সংকেত লিপি ভুলে যায়। সংকেত লিখনের সর্বশেষ জানা উদাহরণটি ৩৯৪ সনের একটি অভিলিখন ছিল। এরপর এ ভাষাটি স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছিল , আর কেউ তা লিখতে বা বুঝতে পারতো না। ২০০ বছর আগে পর্যন্ত এ অবস্থাটি বিদ্যমান ছিল ...।

১৭৯৯ সনে “Rosetta Stone” নামের একটি ট্যাবলেট বা লিপিফলক আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন মিসরীয় সংকেতলিপি বা হাইআরোগ্লিফিক এর রহস্যের সন্ধান পাওয়া গেল ; ফলকটি ছিল খ্রীষ্টের জন্মের ১৯৬ বছর আগের। এই অভিলিখন খানির গুরুত্ব এমনি ছিল যে , এটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে লিখা ছিল ; উপায়গুলো ছিল হাইআরোগ্লিফিক , ডেমোটিক ( প্রাচীন মিসরীয় হাইআরেটিক লিখনের সহজরূপ ) আর গ্রীক । গ্রীক লিখনটির সাহায্য নিয়ে প্রাচীন মিসরীয় সংকেত লিখনগুলোর অর্থ বের করা হলো ।

Jean-Francoise Chamollion নামের একজন ফরাসী লোকের সহায়তায় লিপিখানির অনুবাদ সম্পূর্ণ করা হয়েছিল। এভাবে এই ভুলে যাওয়া ভাষা এবং এর সঙ্গে জড়িত কিছু ঘটনার প্রকাশ ঘটল। এমন করে প্রাচীন মিসরের সভ্যতা , ধর্ম আর সমাজ জীবনের বিশাল এক জ্ঞানের খোঁজ পাওয়া গেল।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে মিসরের ভাষা হাইআরোগ্লিফিক অনুবাদ করে উদঘাটন করার আগে পর্যন্ত হামান নামটি-জানা ছিল না। হাইআরোগ্লিফিক অনুবাদ করে বুঝা গেল যে হামান ফেরাউনের একজন নিকট সহযোগী ছিল এবং সে ছিল পাথর চূর্ণকারীদের প্রধান। ( উপরে প্রাচীন মিসরীয় নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে ) এখানে সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি হলো যে কোরআনে হামান ফেরাউনের আদেশে নির্মাণকার্য পরিচালনা করতো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে এটিই দাঁড়ায় যে এই যে তথ্যটি যা সম্পর্কে কারো পক্ষে কিছু জানা সম্ভব ছিল না , তাই কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছিল।

হাইআরোগ্লিফিক এর সংকেতগুলোর গূঢ়ার্থ বুঝতোরায় গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া গেল : বাস্তবিকই হামান শব্দটি মিসরীয় সংকেতলিপিতে লিখা ছিল। ভিয়েনার Hof Museum এ নামটির উল্লেখ রয়েছে। ২২

সমগ্র অভিলিখনগুলোর সংগ্রহের উপর নিভর্র করে তৈ রী অভিধানPeople in the New Kingdom এ হামানকে পাথর চূর্ণকারীদের নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। ২৩

শিলালিপিটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্যের উন্মোচন করে দিল। কোরআন বিরোধীদের মিথ্যা দাবীর বিপরীতে দেখা গেল এই সেই ব্যক্তি হামান , যে কিনা মূসার (আঃ) সময়কালে ফেরাউনের একজন অতি কাছের মানুষ হিসেবে মিসরে বসবাস করে আসছিল। কোরআনে যেমন বলা হয়েছে ঠিক তেমনি , হামান নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল।

অধিকন্তু কোরআনের একটি আয়াতে একটি ঘটনায় যেমন উল্লেখ আছে যে ফেরাউন হামানকে একটি টাওয়ার নির্মাণের কথা বলছে , সেটি প্রত্নতত্ত্ববিদদের প্রাপ্ত তথ্যাবলীগুলোর সঙ্গে একদম মিলে যায় :

ফেরাউন বলল : হে সভাসদবৃন্দ ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য আছে বলে আমি মনে করি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও , তারপর আমার জন্য একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর , যাতে আমি মূসার মা বুদের প্রতি উঁকি মেরে দেখতে পারি। তবে আমারতো ধারণা যে , সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (কোরআন , ২৮ : ৩৮)

পরিশেষে , হামানের অস্তিত্ত্বের বিষয়টি কোরআন বিরোধীদের বানোয়াট জাল দাবিকেই শুধু গুরুত্বহীন বলে প্রমাণ করেনি , বরং আবারো একবার প্রমাণ করে দিল যে , কোরআন এসেছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর তরফ থেকে। একরকম অলৌকিকভাবেই কোরআন সেই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছে যা নবীর ( দঃ ) সময়ে ঘটেনি কিংবা জানা ছিল না।

কোরআনে মিসরের শাসকগণের উপাধি

মিসরের প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে এ তথ্যই বেরিয়ে আসে যে , সে অঞ্চলে মুসা (আঃ) ই একমাত্র নবী হয়ে আসেননি। মুসার (আঃ) সময়ের বহু আগে ইউসুফ (আঃ) মিসরে বসবাস করে গেছেন।

মুসা (আঃ) এবং ইউসুফ (আঃ) এ দুজনের ঘটনাবলী পড়তে গিয়ে আমরা কিছূ সাদৃশ্যের বা তুলনার মুখোমুখি হই। কোরআনে ইউসুফ (আঃ) এর সময়কার মিসরের শাসকদের সম্বোধন করতে গিয়ে মালিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

মালিক (বাদশাহ) বলল : ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো , আমি তাকে আমার একান্ত সহচর করে রাখব । তারপর সে যখন তার সাথে কথা বলল তখন সে বলল : নিশ্চয়ই আজ আপনি আমাদের কাছে অতিশয় মর্যাদাবান ও বিশ্বস্ত (কোরআন , ১২ : ৫৪)

কিন্তু মুসার ( আঃ ) সময়ে শাসকদের ডাকা হতো ফেরাউন

আর আমি তো মূসাকে নয়টি প্রকাশ্য মু জিযা দিয়েছিলাম , আপনি বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করুন ; যখন সে তাদের কাছে এসেছিল তখন ফেরআউন তাকে বলেছিল : হে মূসা ! আমি তো মনে করি , অবশ্যই তুমি যাদুগ্রস্থ । (কোরআন , ১৭ : ১০১)

আজ যে সমস্ত ঐতিহাসিক রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে তাতে শাসকগণের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণের কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। পূর্বে প্রাচীন মিসরে রাজপ্রাসাদকে ফেরাউন বলা হতো আর এখান থেকেই এসেছে এই শব্দটি। প্রাচীন রাজবংশের শাসকগণ তাদের উপাধি হিসেবে এই নামটি ব্যবহার করেননি। মিসরের ইতিহাসে নূতন রাজ্য যুগের পূর্ব পর্যন্ত রাজাদের উপাধি হিসেবে এ নামটি শুরু হয়নি। এই সময়কালটি ১৮তম রাজবংশের সঙ্গে শুরু হয় আর বিংশতম রাজবংশ থেকে রাজাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে এই ফেরাউন শব্দটি টাইটেল হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

এখানে আরেকবার কোরআনের অলৌকিকত্ব প্রমাণের আরেকটি উদাহরণ পাওয়া যায় : ইউসুফ (আঃ) প্রাচীন রাজত্বে বর্তমান ছিলেন যে যুগে রাজাদের ফেরাউন নয় বরং মালিক বলে সম্বোধন করা হতো। উল্টো যেহেতু মুসা ( আঃ ) নূতন রাজ্যের যুগে বর্তমান ছিলেন , তাই তখনকার শাসকদের ফেরাউন নামে ডাকা হতো।

সন্দেহ নেই যে এমন পৃথক করে বলার জন্য একজনকে মিসরের ইতিহাস জানতে হবে। কিন্তু চতুর্থ শতকের মাঝেই মিসরের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায় মানুষ ; কারণ মানুষ আর মিসরের ভাষা (হাইআরোগ্লিফিক) বুঝতে পারেনি ; দীর্ঘদিন পর মিসরের ইতিহাস পুণরায় উনিশ শতকে উদ্ধার করা হয়। সুতরাং কোরআন নাযিল হওয়ার সময় মিসরের ইতিহাস সম্পর্কে কোন পুংখানুপুংখ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব ছিল না। অগণিত সাক্ষ্যপ্রমাণের মাঝে এটিও প্রমাণ করে যে কোরআন আল্লাহর বাণী।

উপসংহার

কোরআন আল্লাহরই বাণী

এই অবধি আমরা যা দেখেছি , তাতে একটি সত্যই স্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসে : কোরআন সেই গ্রন্থ যাতে বর্ণিত প্রতিটি তথ্যই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যাবলী আর ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কটি বিষয় সম্পর্কে কোরআনের উল ্লেখ - যার মানে , যে সময়ে যা কিছু মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না - সেসবই কোরআনের আয়াতগুলোয় সেই সময়ে ঘোষিত হয়েছিল। সেই সময়ের জ্ঞান আর টেকনোলজির মাত্রা বা অবস্থা দিয়ে এসব তথ্যসমূহ জানতে পারা ছিল অসম্ভব। এটাই স্পষ্ট সাক্ষ্য দান করছে যে কোরআন কোন মানুষের কথাবলী নয় । যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আর যিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সব কিছু পরিবেষ্টন করে আছেন সেই মহাশক্তিশালী আল্লাহরই কথামালা এই কোরআন।

কোরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে , কোরআন যদি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো তরফ থেকে আসতো , তবে তাতে তারা অসংখ্য অসামঞ্জস্য খুঁজে পেত। ( কোরআন , ৪ : ৮২ ) কোরআনে অসামঞ্জস্য তো নয়ই , বরং এ স্বর্গীয় বইটির প্রতিটি তথ্য দিনে দিনে উত্তোরোত্তর অলৌকিকত্ব প্রকাশ করছে।

এখন মানুষের কর্তব্য আল্লাহর নাযিল করা এই বইখানি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে তার অনুসরণ করা আর এটিকেই এক মাত্র গাইড বা পরিচালিকা হিসেবে গ্রহন করে নেয়া। আল্লাহ আমাদের আহ্বান করে বলেছেন :

এটি একটি কিতাব , যা আমি নাযিল করেছি , অতীব বরকতময়। অতএব এর অনুসরণ কর এবং সতর্ক হও , যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও। (কোরআন , ৬ : ১৫৫)

অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করছেন :

বলুন : সত্য তোমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে ; অতএব যার ইচ্ছা হয় ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা হয় কুফরী করক। (কোরআন , ১৮ : ২৯)

না কখনও এরূপ করবেন না , এ কোরআন তো উপদেশবাণী। অতএব যার ইচ্ছাহয় , সে তা গ্রহন করুক। ( কোরআন , ৮০ : ১১ - ১২ )

বিবর্তনের ভ্রান্ত ধারণা

ভূমিকা

আল্লাহর গ্রন্থ কোরআন যা কিনা আমাদের পথপরিচালিকা ও সাবধান বাণী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে , সেটিরই কিছু অলৌকিক দিক আমরা আলোচনা করেছি। এই সমস্ত অলৌকিক বিষয়গুলো দিয়ে আল্লাহ আমাদের নিদর্শন প্রেরণ করেছেন যে এটি সত্যের গ্রন্থ এবং তিনি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা এই বইটির ব্যাপারে বিবেচনা করে বা ভেবে দেখে । ভূ-পৃষ্ঠে সৃষ্টির নিখুত ডিজাইন সম্বন্ধে মানুষ স্বীকৃতি দান করবে আর এগুলো স্মরণের মাধ্যমে তারঁ শক্তির গুণগান করবে-এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কোরআনে নির্দেশ করেছেন আল্লাহ তাআলা। কিন্তু আজ এমন কিছু ভাবাদর্শ বিদ্যমান যেগুলো মানুষের মন থেকে সৃষ্টির সত্যের বিষয়টিকে ভুলিয়ে দিতে চায় এবং ভিত্তিহীন কিছূ ধারণা দ্বারা এ বিষয়টিকে দূরে ঠেলে দিতে চায়।

এগুলোর মাঝে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো বস্তুবাদ । বস্তুবাদ যেটিকে নিজের জন্য তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে ধরে নেয় সেটিই হল ডারউইনবাদ। প্রাণ অজৈব বস্তু থেকে যুগপৎ সংঘটনের মাধ্যমে উষ্মেষিত হয়েছে বলে যুক্তি প্রদানকারী এই থিওরিটি নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে তখনই , যখন স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে একমাত্র আল্লাহ তা আলাই এই বিশ্বচরাচর সৃষ্টি করেছেন।

তিনি আল্লাহ যিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন আর ক্ষুদ্রতম ও পুংখানুপুংখ ডিজাইন তৈরী করেছেন । বিবর্তনের যে থিওরীটি পোষণ করে যে জীব জগৎ আল্লাহর সৃষ্টি নয় বরং যুগপৎ সংঘটনের ফলাফল সেই থিওরীটি সত্য হতেই পারে না।

আশ্চর্য নয় যে , যখন আমরা বিবর্তন মতবাদটির দিকে দৃষ্টিপাত করি , তখন দেখতে পাই যে এটা বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো দ্বারাই বাতিল হয়ে যায় । প্রতিটি জীবের ডিজাইন অত্যন্ত জটিল আর চিত্তাকর্ষক । উদাহরণস্বরূপ , জড় জগতে অনুসন্ধান করে আমরা দেখতে পাই যে কি এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপর পরমাণুগুলো অবস্থান করে আছে এবং জীব জগতে আমরা লক্ষ্য করি যে , কেমন জটিল ডিজাইনের মাধ্যমে পরমাণুগুলো একএিত হয় আর কেমন অসাধারণ সেই পদ্ধতিসমূহ ; আর আমিষ , এনজাইম আর কোষসমূহের গঠন যেগুলো এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমেই উৎপন্ন হয়ে থাকে ।

বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জীবে বিদ্যমান এই বিস্ময়কর ডিজাইন ডারউইনবাদকে অসিদ্ধ প্রমাণ করেছে ।

আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের অন্যান্য গবেষণাগুলোয় সবিস্তরে আলোচনা করেছি এবং এভাবেই তা করে যাওয়া অব্যাহত রাখব। অবশ্য আমাদের ধারণা , বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় এনে এখানেও এর উপর একটি ছোট সারাংশ তৈ রী করলে তা কাজে আসবে।


8

9

10