রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ0%

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 20611
ডাউনলোড: 3229

পাঠকের মতামত:

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 15 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 20611 / ডাউনলোড: 3229
সাইজ সাইজ সাইজ
রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ

নূর হোসেন মজিদী

রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) আহলে বাইত ও বিবিগণ

নূর হোসেন মজিদী

Rasulullahr (Sallallahu `alaihi wa aalih) Ahl-e-Bayt O Bibigan- Household and Wives of the Holy Prophet (S.A.W.A) by Nur Hosain Majidi written in Bengali Language. May ২০১৫

এই বইটি আল হাসানাইন (আ.) ওয়েব সাইট কর্তৃক আপলোড করা হয়েছে ।

http://alhassanain.org/bengali

ভূমিকা

বিসমিল্লাহির্ রাহমনির রাহীম

“ আহলে বাইত ” কোরআন মজীদের একটি বিশেষ পরিভাষা , তাই এর তাৎপর্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা আমাদের সকলের জন্যই অপরিহার্য। এ ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা বিতর্কের কোনোই অবকাশ নেই।

অবশ্য প্রকৃত বিচারে এ পরিভাষার তাৎপর্যে কোনোরূপ অস্পষ্টতা নেই এবং হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর যুগ থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ কাল যাবত এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে উল্লেখ করার মতো কোনো মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না এবং পরবর্তীকালে ভিন্নমতের উদ্ভব হলেও তা ছিলো একান্তই বিরল ব্যতিক্রম। কিন্তু বিগত বিংশ শতাব্দী থেকে এ বিষয়ে কোনো কোনো মহল কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে ভিন্নমত প্রচার করতে দেখা যায়।

আভিধানিক অর্থেاهل بيت (আহলে বাইত) মানে গৃহবাসী ’ অর্থাৎ কোনো গৃহে বসবাসকারীগণ তথা কোনো গৃহকর্তার পরিবারের সদস্যবর্গ। এতে মূলতঃ কোনো ব্যক্তির স্ত্রী ও নাবালেগ সন্তান-সন্ততিকে অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয়। যে সাবালেগ পুত্রকন্যা বিয়েশাদী করে নিজস্ব ঘরসংসার ও পরিবারের অধিকারী হয়েছে তারা তাদের পিতার আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং সাবালেগ পুত্র তার নিজ পরিবারের তথা তার নিজস্ব আহলে বাইত-এর কর্তা , আর সাবালেগ বিবাহিতা কন্যা স্বীয় স্বামীর পরিবারের তথা স্বামীর আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু কোরআন মজীদে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর আহলে বাইত বলতে এর আভিধানিক অর্থ বুঝানো হয় নি , বরং কোরআন মজীদে ব্যবহৃত আরো অনেক পরিভাষার ন্যায় এটি একটি পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর যুগ থেকে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত মত অনুযায়ী আহলে বাইত বলতে হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহি আলাইহা) এবং হযরত আলী , হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন ( আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। অবশ্য এর সম্প্রসারিত তাৎপর্য অনুযায়ী হযরত ইমাম হোসেন ( আঃ)-এর বংশে আগত আল্লাহর খাছ বান্দাহ্গণ তথা নয় জন ইমামও এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বিশেষ অর্থে উপরোক্ত চার জন বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব যে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর আহলে বাইত এটা বিতর্কাতীত বিষয়।

[বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে সাধারণতঃ এ চার পবিত্র ব্যক্তিত্বের নামোল্লেখের পর ছাহাবী বিবেচনায় রাযীয়াল্লাহু তা আলা আনহু/ আনহা/ আনহুম্ এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের মহান ইমামগণের নামের পরে (রাহমাতুল্লাহি আলাইহ্) বলা হয়। কিন্তু কোরআন মজীদে আহলে বাইতের যে পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে এবং আমরা নামাযে যেভাবে আলে মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর প্রতি দরূদ প্রেরণের জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে আবেদন করে থাকি সে প্রেক্ষিতে আল্লাহর দ্বীনে তাঁদের বিশেষ মর্যাদা ও অবস্থানের কারণে আমরা তাঁদের নামোল্লেখের পরে তাঁদের প্রতি সালাম প্রেরণকে সঙ্গত , বরং যরূরী বলে মনে করি।]

কিন্তু বিগত বিংশ শতাব্দীতে কোনো কোনো মুফাসসির ও আলেমের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ দাবী করেছেন যে , হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর বিবিগণও আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত , আবার কেউ কেউ এমনও দাবী করেছেন যে , কেবল তাঁরাই আহলে বাইত , যদিও এ উভয় ধরনের দাবীর কোনোটির পক্ষেই কোনো অকাট্য দলীল নেই। এমনকি বিগত শতাব্দীর শেষ দিকে এসে নব-উদ্ভূত কোনো কোনো চৈন্তিক ধারা থেকে এমন দাবীও করতে দেখা গেছে যে , হযরত যায়দ্ , আম্মার্ , সালমান্ , আবূ যার্ (রাযীয়াল্লাহু তা ’ আলা আনহুম্) প্রমুখ কতক ছাহাবীও আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো এই যে , উক্ত মহান ছাহাবীগণের আল্লাহর দ্বীনের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য হওয়ার বিষয়টি অনস্বীকার্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত বলে যে দাবী করা হয়েছে তার সপক্ষে কোনো ধরনের অকাট্য দলীল বর্তমান নেই।

আহলে বাইত-এর এ সব নতুন সংজ্ঞা অবশ্য সাধারণভাবে মুসলিম জনগণের মধ্যে গ্রহণীয় হয় নি। কিন্তু ইসলামের সঠিক জ্ঞান বিহীন কিছু লোক এগুলো দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং তা অন্যদের মধ্যে ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছে যে , সম্প্রতি (২০১২) একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ডি.ফিল্.-শিক্ষার্থীকে অভিসন্দর্ভ লেখার জন্য আহলে বাইতের নারী সদস্যগণের শিক্ষাচর্চা , সমাজসেবা ও আদর্শ পরিবার গঠন ’ শীর্ষক বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দিয়ে সে জন্য যে বিষয়পরিকল্পনা দেয়া হয় তাতে আহলে বাইত-এর সর্বসম্মত চারজন সদস্যের পাশাপাশি হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর বিবিগণকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এ পরিস্থিতিতে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর বিবিগণ তাঁর আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত কিনা এ বিষয়ে বিভ্রান্তির নিরসন অপরিহার্য।

এ বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসন এ কারণেও অপরিহার্য যে , সকল মুসলমানই নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠ করে থাকে যা ব্যতিরেকে নামায সম্পূর্ণ ও ছহীহ্ হয় না এবং এ দরূদের অপরিহার্য অংশ হচ্ছে আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ ” বা (পাঠভেদে) আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ” । আর এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই যে , কোরআন মজীদের আয়াতে উল্লিখিত আহলে বাইত ” ও দরূদে উল্লিখিত আলে মুহাম্মাদ ” (ছ্বাঃ)-এর তাৎপর্য অভিন্ন। এমতাবস্থায় আহলে বাইত ” বা আলে মুহাম্মাদ ” (ছ্বাঃ) কারা সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অপরিহার্য। কারণ , যেহেতু আমলকে নিয়্যত্ অনুযায়ী বিবেচনা করা হয় সেহেতু সঠিক ব্যক্তিদের আহলে বাইত ” বা আলে মুহাম্মাদ ” (ছ্বাঃ) গণ্য না করে দরূদ প্রেরণ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না , বিশেষ করে নামায ছহীহ্ ও সম্পূর্ণ হবে না। তাই আমাদের এ আলোচনার অবতারণা।

এ আলোচনার ধারাবাহিকতায় এ বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে , আক্বাএদী , ফিক্ব্হী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বিশেষে দ্বীনী বিষয়াদিতে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিরাজমান মতপার্থক্যেরও অন্যতম উৎস হচ্ছে ইসলামে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর আহলে বাইতের প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে অনবহিতি ও তার বাস্তবায়ন না হওয়া। এ প্রসঙ্গে উল্লিখিত মতভেদ নিরসনের পন্থার ওপরেও আলোকপাত করা হয়েছে।

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তা হচ্ছে , অতীতে যারাই আহলে বাইতের ( আঃ) , বিশেষ করে এ ধারার ইমামগণের বিশেষ মর্যাদা স্বীকার করেছেন এবং তাঁদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধেই উমাইয়াহ্ ও আব্বাসী স্বৈরশাসকদের তাবেদার কিছু লোক শিয়া ” , রাফেযী ” ইত্যাদি বলে অপবাদ দিয়েছে। এ অপবাদ থেকে এমনকি সুন্নী মায্হাব্গুলোর কয়েক জন ইমামও রেহাই পান নি। এ ধরনের আত্মবিক্রিত লোকদের এ কর্মধারা তখন থেকে আজ তক্ অব্যাহত রয়েছে। এখনো যে কেউ আহলে বাইতের ( আঃ) , বিশেষ করে এ ধারার ইমামগণের বিশেষ মর্যাদা স্বীকার করলে এবং তাঁদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলে তার ওপরই কতক লোক শিয়া ’ লক্বব্ লাগিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করে। এরা কারো অকাট্য দলীল ভিত্তিক বক্তব্যের যথার্থতা অকাট্য দলীল দ্বারা খণ্ডন করতে না পেরে বক্তার বিরুদ্ধে শিয়া ’ হবার শ্লোগান তুলে জনগণের দৃষ্টিকে সত্য বক্তব্য থেকে ফিরিয়ে নিতে চায়। ইতিমধ্যে অত্র গ্রন্থকারের বিরুদ্ধেও কিছু লোক এ ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আমি ইতিপূর্বে যেমন বিভিন্ন সময় সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছি তেমনি এখানেও উল্লেখ করছি , আমি কোনো মায্হাবের অনুসরণ করা অপরিহার্য মনে করি না। আমি আক্বাএদ্ ও তার শাখা-প্রশাখা এবং ফরয ও হারামের ব্যাপারে সমস্ত মুসলমানের জন্য সমভাবে অনুসরণীয় চার অকাট্য দলীল অনুসরণকে সঠিক বলে মনে করি-যে সম্পর্কে অত্র গ্রন্থের মূল পাঠের শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে। এ চার অকাট্য দলীল ভিত্তিক কোনো কোনো উপসংহার যদি বিতর্কিত হিসেবে পরিগণিত আক্বাএদের কোনো শাখা বা কোনো ফরয বা হারামের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ মায্হাবের মতের সাথে মিলে যায় তো কেবল ঐ মিলের কারণেই তা পরিত্যাগ করতে হবে-এ নীতির প্রবক্তাদের এরূপ মতের সপক্ষে কোনো অকাট্য দলীল নেই। অন্যদিকে এ ধরনের মিলের মানে এ-ও নয় যে , ঐ মায্হাবের সব কিছুর সাথেই একমত হতে হবে।

বস্তুতঃ কোনো মায্হাব্ মানে কেবল চার অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত আক্বাএদ্ ও তার কতক শাখা-প্রশাখা এবং ফরয ও হারামের আহকাম নয় , বরং একটি মায্হাব্ হচ্ছে ঐ মায্হাবের আক্বাএদের সকল শাখা-প্রশাখা এবং চার দলীল ভিত্তিক নয় ফরয ও হারাম বলে গণ্যকৃত এমন আহকাম , উছূলে ফিক্বাহ্ ও উছূলে হাদীছ সহ ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের ও হাদীছ শাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার। আমি আবারো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করছি যে , এ সব ক্ষেত্রে আমি কোনো মায্হাবের আক্বাএদের একান্ত শাখা-প্রশাখা সমূহ , বা তার গোটা ফিক্বাহ্ শাস্ত্র বা কোনো ধারার হাদীছগ্রন্থ সমূহের অন্ধ অনুসরণের পক্ষপাতী নই। সুতরাং এরপরও যদি কেউ আমার ওপর কোনো বিশেষ মায্হাবের লক্বব লাগাবার অপচেষ্টা করে তো তার সে কথাকে আমি পাগলের প্রলাপ বা ভণ্ড মতলববাযের মতলববাযী আবোলতাবোল ছাড়া আর কিছু বলে মনে করি না।

গ্রন্থটির কাজ গত মে মাসে (২০১৫) সমাপ্ত করার পর ইউনিকোডে রূপান্তরিত করে নোট আকারে ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলাম। পরে এতে আরো কিছু বিষয় অধিকতর সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করি। তা আঞ্জাম দেয়ার ফলে বিশেষভাবে গ্রন্থটির দ্বিতীয় চতুর্থাংশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ঘটে। এ কারণে এটি পুনরায় নতুন করে ফেসবুকে প্রদান করছি।

আমাদের এ আলোচনা আলোচ্য বিষয়ে বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে সক্ষম হলেই এর সার্থকতা। আল্লাহ্ তা আলা এ পুস্তককে এর লেখক এবং এর প্রচারের সাথে জড়িত সকলের ও পাঠক-পাঠিকাদের পরকালীন মুক্তির পাথেয়রূপে গণ্য করুন। আমীন

বিনীত

নূর হোসেন মজিদী