ইয়াযীদের দরবারে হযরত যয়নবের (আ.) বক্তব্য
ইমাম আলী ইবনে আবী তালিবের (আ.) কন্যা যয়নব , ইয়াযীদের সভায় দণ্ডায়মান হয়ে বলেন :
“ বিশ্বের প্রতিপালকের জন্যে সমস্ত প্রশংসা ও স্তুতি এবং রাসূল ও তাঁর বংশধরের উপর আল্লাহর করুণা অবতীর্ণ হোক ! পরম পবিত্র আল্লাহ্ তায়ালা কতটা সত্য কথা বলেছেন ! তিনি বলেন :‘
গোনাহ্গার ও মন্দ লোকদের পরিণতি এই হবে যে ,আমাদের নিদর্শনগুলিকে মিথ্যা মনে করবে এবং সেইগুলিকে উপহাসের বস্তু হিসেবে গ্রহণ করবে। ’ ইয়াযীদ ! তুমি কি ধারণা করেছো ? তুমি কি ধারণা করছ যে , তুমি এখন আমাদের জন্য পৃথিবী ও আকাশকে সংকীর্ণ করে দিয়েছো এবং আমাদেরকে এই অবস্থায় উপনীত করেছো যে , বন্দিদের মত আমাদেরকে এদিক সেদিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । ভেবেছো এই কাজটি আমাদেরকে আল্লাহর নিকট হীন ও অযোগ্য করে দিবে এবং তোমাকে সম্মানিত ও মহত্বে পৌঁছাবে ; আর আল্লাহর নিকট তোমার উচ্চমর্যাদার কারণে এই বাহ্যিক বিজয় ঘটেছে ? এই কারণে তুমি চরম আনন্দিত এবং নিজের অতীতে ফিরে গেছ , পৃথিবীকে নিজের জন্যে প্রস্তুত , সুসজ্জিত ও সুস্বাদু দেখে তুমি খুশী ও আনন্দে বাগ বাগ হয়েছো ? আমাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা যখন তোমার করতলগত হয়েছে এইরূপ করছ ? শান্ত হও , শান্ত হও ! মহান আল্লাহর বাণী কি ভুলে গেছ ( ?) তিনি বলেছেন :‘
যারা কুফরী করে তারা যেন এইরূপ ধারণা না করে যে , পৃথিবীর যে সব সুযোগ সুবিধা আমরা তাদেরকে দান করি সেগুলি তাদের জন্যে কল্যাণকর। আমরা এই সুযোগ সুবিধাগুলি তাদেরকে এই উদ্দেশ্যে দান করি যে , সেইগুলি যেন তাদের পাপসমূহকে বৃদ্ধি করে এবং আগামীতে তাদের জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি ।”
হে আমাদের নানার মুক্তকৃত লোকদের সন্তান ! এইটি কি ন্যায়বিচার যে , তুমি নিজ নারী ও দাসীদেরকে পর্দায় রাখছ আর রাসূলুল্লাহর কন্যাগণকে বন্দী হিসেবে ইসলামী দেশের চতুর্দিকে ঘোরাচ্ছ ? তাঁদের পর্দা কেড়ে মুখমণ্ডলসমূহকে প্রকাশ করছ ? শত্রুদের দ্বারা তাঁদেরকে শহর হতে শহরে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতে বাধ্য করছ ? তাঁদেরকে শহরের লোকজনদের নিকট বিনোদনের উপাদান বানাচ্ছ , যাতে পরিচিত অপরিচিত এবং উত্তম অধম সবাই তাঁদের মুখমণ্ডলগুলিকে লক্ষ্য করে। আর এই অবস্থায় তাঁদের সাথে তাঁদের কোনো অভিভাবক নেই এবং তাঁদের পুরুষগণের পক্ষ হতে তত্ত্বাবধায়ন হচ্ছে না ?!
না , হে আল্লাহ্ , কি বলব ! নিরাপত্তার ব্যাপারে কি করে তাদের প্রতি আশা করা যায় ( ?) যারা সায়্যিদুশ্ শুহাদা হযরত হামযা ’ র মত পবিত্রতম ব্যক্তিত্বের কলিজা চিবিয়েছে এবং ওহুদের শহীদগণের রক্তের দ্বারা যাদের রক্ত মাংসের বৃদ্ধি ঘটেছে ? আমাদের আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতার ক্ষেত্রে নরম আচরণ করবে বলে তাদের উপর কি করে আশা করা যায় যারা আমাদেরকে অস্বীকার করে , শত্রুতা , ঈর্ষা ও বিদ্বেষের দৃষ্টিতে আমাদেরকে দেখে এবং তাদের মধ্যে গুনাহর কোন অনুভূতিই নেই , এই কাজটিকে বড় কোন অন্যায় বলে মনে করে না ? বরং বলছে :‘
লোকেরা যেন আনন্দ করে , খুশীতে থাকে , উল্লাস করে ! আর বলে , এ কর্মের জন্যে হে ইয়াযীদ! তোমাকে ধন্যবাদ। ’ এই অবস্থায় , বেহেশ্তের যুবকদের সর্দার হযরত আবু আব্দিল্লাহর দাঁতগুলিকে তুমি তোমার লাঠি দ্বারা আঘাত করছ ! কেনই বা তুমি এইরূপ কাজ করবে না ?! মুহাম্মদের (সা.) নাতি ও আলে আব্দিল মুত্তালিবের আকাশের তারকাগণের রক্তপাতের মাধ্যমে তুমি যে , তোমার হিংসা বিদ্বেষপূর্ণ নোংরা বস্তুগত চেহারার পর্দা উন্মুক্ত করেছো এবং তোমার মূলে ফিরে গেছ , তোমার পিতৃপুরুষদের স্মরণ করছ ও তাদেরকে আহ্বান করাকে কল্যাণকর ধারণা করছ , অথচ খুব শীঘ্রই তুমি তাদের প্রবেশের স্থানে প্রবেশ করবে ! সেইখানে তুমি চাইবে যে , যদি তুমি খোঁড়া , অক্ষম ও বোবা হতে এবং এই সব না বলতে ও এইরূপ কর্ম না করতে !
হে আল্লাহ্ ! আমাদের প্রতিশোধ গ্রহণ কর ! যে ব্যক্তি আমাদের প্রতি অত্যাচার করেছে তার নিকট হতে প্রতিশোধ নাও ! যে ব্যক্তি আমাদের রক্তপাত করেছে ও আমাদের অভিভাবকগণকে হত্যা করেছে তুমি তাদের উপর তোমার ক্রোধ ও অভিসম্পাত প্রেরণ কর !
ইয়াযীদ ! আল্লাহর শপথ ! তুমি তোমার নিজের চামড়া ব্যতীত অন্য কিছু চিরনি এবং তোমার নিজেরই মাংস ব্যতিত অন্য কিছুই কাটনি ! আল্লাহর রাসূলের সন্তান সন্ততির রক্তপাত ,তাঁর ইতরাত (বংশধর) ও তাঁর শরীরের অংশসমূহের সম্মান বিনষ্ট করার ফলে যেসব অপরাধ তোমার কাঁধে চেপেছে সেসব সহকারে তুমি নিঃসন্দেহে তাঁর (রাসূল) নিকট প্রবেশ করবে ! আল্লাহ্ তাঁদের বিক্ষিপ্ত অংশসমূহকে সংযোজন করবেন , তাঁদের বিচ্ছিন্ন অংশগুলিকে সংযুক্ত করবেন এবং তাঁদের প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন ! আর তোমরা এইরূপ ধারণা করো না যে , যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছেন তাঁরা মারা গেছেন , বরং তাঁরা জীবিত আছেন এবং তাঁদের প্রতিপালকের নিকট হতে রিয্ক গ্রহণ করেন।
তোমার জন্যে এই যথেষ্ট যে , মহান আল্লাহ্ তোমার নিকট হিসাব গ্রহণ করবেন , মুহাম্মদ (সা.) তোমার সাথে দুশমনি করবেন এবং জিব্রাঈল (আ.) আমাদের পৃষ্ঠপোষক হবেন। যে ব্যক্তি তোমার জন্যে এইরূপ অপরাধকে সুসজ্জিত করেছে এবং মুসলমানদের উপর তোমাকে কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের অধিকারী করেছে সে অচিরেই বুঝবে যে , অত্যাচারীর জন্যে জাহান্নামের মন্দ স্থান নির্ধারিত রয়েছে এবং তুমিও বুঝবে যে , তোমাদের ও আমাদের মাঝে কারা মন্দ স্থানে রয়েছে এবং কারা দুর্বলতর শক্তির অধিকারী।
ইয়াযীদ ! বর্তমান কঠিন অবস্থা ও সমস্যাদি আমাকে এমন স্থানে উপনীত করেছে , যার ফলে তোমার সাথে কথা বলছি ! তবে তুমি জেনে রেখ ! আমি তোমাকে এতটা নগণ্য ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করি যে , তোমাকে ভর্ৎসনা করাটাও তোমার সত্তার চেয়ে বড় মনে করি এবং তোমার জন্যে তিরস্কার করাটাও বেশী মনে করি (অর্থাৎ তুমি ভর্ৎসনা ও তিরস্কারের অযোগ্য) ! কিন্তু কি করি ! ? চক্ষুগুলি অশ্রুতে পূর্ণ এবং অন্তরসমূহ অগ্নিদগ্ধ ! জেনে রেখ ! বিস্ময়কর ! সবই বিস্ময়কর !! শয়তানের দলের মুক্তিপ্রাপ্ত লোকদের হাতে হিযবুল্লাহর মহানুভব ব্যক্তিগণ নিহত হচ্ছেন ! এই হাতগুলি হতে আমাদের রক্ত ঝরছে , এই মুখগুলি আমাদের মাংসকে চোষণ করছে এবং আমাদের পবিত্র ব্যক্তিগণের দেহসমূহকে নেকড়েরা ছিন্নভিন্ন করছে , হায়েনারা মাটির উপর টানাটানি করছে !
ইয়াযীদ ! তুমি যদি আমাদেরকে তোমার জন্য গনিমত মনে করে থাক তবে এইটি জেনে রেখ যে , খুব শীঘ্রই আমাদেরকে তোমার ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখবে ! পূর্বে প্রেরিত আমলগুলি ছাড়া সেইখানে আর অন্য কিছু পাবে না ! তোমার প্রতিপালক অত্যাচারী লোকদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেন না ! আমি আল্লাহর নিকট অভিযোগ করছি এবং তাঁর উপর আমার ভরসা আছে।
ইয়াযীদ ! তুমি তোমার প্রতারণাকে কাজে লাগাও , তোমার চেষ্টাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাও এবং তোমার প্রচেষ্টাকে বিস্তৃত কর ! আল্লাহর শপথ ! তুমি আমাদের স্মরণকে বিলুপ্ত করতে পারবে না এবং আমাদের ঐশী প্রেরণাকে নস্যাৎ করতে পারবে না। এই অপরাধের লজ্জা ও অপমান তোমার থেকে কখনই মুছে যাবে না। দুর্বল (যুক্তি)ও মিথ্যা(ভাষ্য) ব্যতীত তোমার কি মত আছে ? মুষ্টিমেয় কয়েকটি দিন এবং বিক্ষিপ্ত জনতা ছাড়া তোমার আর কি আছে ? যে দিন আহ্বানকারী আহ্বান করবেন :‘
জেনে রাখ ! জালিমের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক !’
বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে সমস্ত প্রশংসা , যিনি আমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৌভাগ্য ও মাগফিরাতসহ গন্তব্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছিয়েছেন এবং আমাদের উত্তরসুরিগণকে শাহাদত ও রহমত দ্বারা নৈকট্য দান করেছেন। মহান আল্লাহর নিকট কামনা করব , তিনি যেন তাঁদেরকে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেন এবং তাঁদের শাহাদতকে তাঁর নিয়ামত বৃদ্ধির উপকরণ বানিয়ে দেন ! আমাদেরকে তাঁদের উত্তম প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারণ করেন ! তিনি হচ্ছেন করুণাময় ও দয়ালু। তিনিই আমাদের জন্যে যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম ভরসাস্থল ।”
দামেশকের জামে মসজিদে হযরত ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এর ভাষণ
ইয়াযীদ দামেশকের জামে মসজিদে স্বীয় খতীবকে আদেশ প্রদান করে যে , সে যেন মিম্বরে আরোহণ করে মুয়াবিযা ও ইয়াযীদের প্রশংসা করে এবং ইমাম আলী ও ইমাম হুসাইনের (আ.) সমালোচনা করে। খতীব মিম্বরে আরোহণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতির পর যথাসাধ্য আলী ও হুসাইনের (আ.) নিন্দা এবং মুয়াবিয়া ও ইয়াযীদের প্রশংসা করে।
এ অবস্থায় হুসাইনের পুত্র আলী (আ.) তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন :“
হে বক্তা , তোমার অকল্যাণ হোক ! সৃষ্টির সন্তুষ্টিকে স্রষ্টার ক্রোধের সাথে বিনিময় করলে এবং জাহান্নামে তোমার জায়গা বেছে নিলে ?!”
অতঃপর তিনি বলেন :“
ইয়াযীদ ! তুমি আমাকে অনুমতি দাও , আমি এই কাঠের (মিম্বারের দিকে নির্দেশ করে) উপর আরোহণ করে এমন কিছু কথা বলব যে , তা আল্লাহর সন্তুষ্টিরও কারণ হবে এবং উপস্থিত জনগণও ছাওয়াব ও কল্যাণ লাভ করবে ।”
ইয়াযীদ গ্রহণ করল না। উপস্থিত জনতা বলল :“
হে আমীরুল মু’
মিনীন ! তাঁকে আরোহণ করার অনুমতি দিন , আমরা তাঁর নিকট হতে সম্ভবতঃ কিছু শুনতে পাব ।”
ইয়াযীদ তাদেরকে বলল :“
যদি এই ব্যক্তিটি মিম্বরে আরোহণ করেন তবে আমার এবং আবু সুফিয়ানের বংশের মান সম্মান ধুলিস্যাত না করে নামবেন না !”
লোকেরা বলল :“
কোন্ লোক তাঁর ও তাঁর বক্তব্যের পক্ষ নেবে ?”
ইয়াযীদ বলল :“
সে এমন এক পরিবারের সদস্য যারা জ্ঞানকে সর্বোত্তমরূপে আস্বাদন করেছে !”
কিন্তু উপস্থিত লোকেরা এতবেশী পীড়াপীড়ি করতে লাগল যে , শেষে ইয়াযীদ অনুমতি দিতে বাধ্য হল। ইমাম (আ.) মিম্বরে আরোহণ করে আল্লাহর প্রশংসা , স্তুতি ও গুণগান করে বললেন :
“ হে উপস্থিত জনতা ! রাসূলের বংশধর হিসেবে আমাদেরকে ছয়টি বিশেষত্ব দান করা হয়েছে এবং অন্যদের উপর আমাদের সাতটি বিষয়ে প্রাধান্য রয়েছে। আমাদের প্রতি দানকৃত জিনিসগুলি হচ্ছে : জ্ঞান প্রজ্ঞা , ধৈর্য , মহানুভবতা , বাকপটুতা , সাহসিকতা ও মু’
মিনদের অন্তরসমূহে আমাদের প্রতি ভালবাসা। আর অন্যদের চেয়ে আমাদের প্রাধান্যের বিষয়গুলো হচ্ছে :আমরা হচ্ছি আল্লাহর নির্বাচিত নবী মুহাম্মদ মোস্তফার (সা.) বংশভুক্ত , আর সিদ্দীক , আসাদুল্লাহ্ ,ও আসাদুর রাসূল আলী , বিশ্বের নারীদের নেত্রী ফাতিমা বাতুল ,এই বংশের দুই সন্তান জান্নাতের যুবকদের দুই সর্দার , জাফর তাইয়ার সকলেই আমাদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর বলেন: যারা আমাকে চিনেন তারা তো চিনেনই ; আর যারা আমাকে চিনেন না তাদেরকে এখন আমার বংশকৌলীন্য সম্পর্কে অবহিত করব ।
আমি মক্কা ও মিনার সন্তান। আমি জমজম ও সাফার সন্তান। আমি সেই ব্যক্তির সন্তান যিনি চাদরের আঁচলে করে যাকাত নিয়ে চারদিকে ছুটে যেতেন। সর্বোত্তম লুঙ্গি ও চাদর পরিধানকারী লোকের আমি সন্তান। আমি সর্বোত্তম খড়ম পরিধানকারীর সন্তান। আমি সেই সর্বোত্তম ব্যক্তিত্বের সন্তান যিনি তাওয়াফ ও সাঈ ’ করেছেন। আমি তাঁর সন্তান যিনি হজ্জ করেছেন ও লাব্বাইক বলেছেন। আমি তাঁর সন্তান যিনি বোরাকে আরোহণ করে আসমানে ভ্রমণ করেছেন। আমি তাঁর সন্তান যাঁকে নৈশকালে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তিনি কত পবিত্র সত্ত্বা যিনি তাঁকে নৈশকালে ভ্রমণ করিয়েছেন।)
আমি তাঁর সন্তান যাঁকে জিব্রাঈল (আ.)‘
সিদ্রাতুল মুন্তাহায় ’ পৌঁছিয়েছেন। আমি তাঁর সন্তান যিনি নিকটবর্তী হয়েছেন এবং দুই বিঘত পরিমাণ অথবা তদোপেক্ষা নিকটবর্তী হয়েছেন। আমি তাঁর সন্তান যিনি আসমানসমূহের ফেরেশ্তাদের সাথে নামায আদায় করেছেন। আমি তাঁর সন্তান যাঁর নিকটে মহান আল্লাহর যা কিছু ওহী করার ছিল তা ওহী করেছেন। আমি মুহাম্মদ মোস্তফার (সা.) সন্তান , তাঁর সন্তান যিনি মানুষের নাসিকা ধুলায় ধুসরিত করেছেন ফলে তারা‘
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ’ বলতে বাধ্য হয়েছেন। আমি তাঁর সন্তান যিনি দুইবার বাইআত করেছেন। দুই কিবলার দিকে নামায আদায় করেছেন। বদর ও হুনাইনে যুদ্ধ করেছেন। চোখের পলক পড়ার সমান পরিমাণ সময়ও আল্লাহকে অস্বীকার করেন নি। মুসলমানদের অগ্রপথিক। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী , অত্যাচারী ও খারিজীদেরকে হত্যাকারী। মহানুভব ও দাতা , পবিত্রদের নেতা , হেজাজের সিংহ , ইরাকের ব্যাঘ্র , মক্কী , মাদানী , আবতাহী , তাহামী , খাইফী , আকাবী , বদরী , ওহুদী , শাজারী , মুহাজেরী , সিবতাইনের (হাসান ও হুসাইন) পিতা আলী ইবনে আবী তালিবের সন্তান। আমি ফাতিমা যাহরার সন্তান। আমি নারীদের নেত্রীর সন্তান। আমি রাসূলের দেহের অংশের সন্তান ।”
বর্ণনাকারী বলেন :‘
মানুষের কান্না ও চিৎকার ধ্বনি উত্থিত হওয়া পর্যন্ত ইমাম অব্যাহতভাবে আমি , আমি , বলে যাচ্ছিলেন। হট্টগোল সৃষ্টি হওয়ার ভয়ে ইয়াযীদ মুয়াজ্জিনকে আযান দিতে আদেশ দেয় এবং ইমামের বক্তব্যের ছেদ ঘটায়। ইমামও নীরব হয়ে যান। মুয়াজ্জিন‘
আল্লাহু আকবার ’ বলল , ইমাম (আ.) বলেন :“
তিনি মহান , এমন মহান সত্তা যে , কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে না। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে ধারণযোগ্য নন। কোনো বস্তুই তাঁর চেয়ে মহান নয় ।”
মুয়াজ্জিন‘
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ’ বলল ইমাম (আ.) বললেন :“
এই বাণীর প্রতি আমার সমস্ত অস্তিত্ব সাক্ষ্য দিচ্ছে ; আমার লোম , চামড়া , মাংস , রক্ত , মেধা , অস্থি সবই তার প্রতি সাক্ষ্য দিচ্ছে ।”
মুয়াজ্জিন‘
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ (সা.)’
বলল , ইমাম আলী ইবনিল হুসাইন (আ.) মিম্বরের উপর হতে ইয়াযীদের দিকে মুখ করে বলেন :“
ইয়াযীদ ! এই মুহাম্মদ (সা.) আমার নানা , না তোমার নানা ? যদি তোমার নানা বলে দাবি কর তবে নিশ্চয় তুমি মিথ্যা বলছ , আর যদি আমার নানা বলে স্বীকার কর তবে তাঁর ইতরাতকে (বংশধর) কেন হত্যা করলে ?”
বর্ণনাকারী বলেন :‘
মুয়াজ্জিন আযান সমাপ্ত করলে , ইয়াযীদ সামনে যায় এবং যোহরের নামায আদায় করে। ’
খিলাফতের রাজধানীতে শোকানুষ্ঠান পালন
দামেশকের মসজিদে ইমামের (আ.) বক্তব্যের পর , ইয়াযীদ নামায সম্পন্ন করে আদেশ দেয় যে , প্রস্তুতকৃত ঘরটিতে যেন ইমাম আলী ইবনিল হুসাইন (আ.) এবং তাঁর ভগ্নীগণ ও ফুফুদেরকে স্থান দেয়া হয়। তাঁরাও সেইখানে কয়েকদিন যাবৎ শোকানুষ্ঠান পালন করেন এবং হুসাইনের (আ.) জন্যে ক্রন্দন করেন ও শোকগাথাঁ পাঠ করেন।
এই অনুষ্ঠানের পরে , ইয়াযীদ রাসূলের (সা.) সন্তান সন্ততির সাথে আচরণ পরিবর্তন করতে এবং কতকগুলি সীমাবদ্ধতাকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয় ও তাঁদের শহীদগণের জন্যে শোকানুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ।
অতঃপর ইয়াযীদ দামেশক শহরের অবস্থা শোচনীয় দেখে বন্দী কাফেলাকে সম্মানের সাথে মদীনায় পাঠায়।