বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্0%

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 24401
ডাউনলোড: 4307

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 24401 / ডাউনলোড: 4307
সাইজ সাইজ সাইজ
বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

মৃত্যুপারের জীবন সম্পর্কে মানুষের ঔৎসুক্য চিরন্তন। এ ঔৎসুক্যের পরিপূর্ণ নিবৃত্তি জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের জন্য সম্ভব নয় জেনেও মানুষ কখনোই এ বিষয়ে জানার আগ্রহ পরিত্যাগ করতে পারে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্মে যেমন বিভিন্ন ধারণা দেয়া হয়েছে, তেমনি এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য ও কল্পনা। তাই এ ব্যাপারে সম্ভব সর্বাধিক মাত্রায় সঠিক ধারণার প্রয়োজনীয়তা সব সময়ই অনুভূত হয়ে আসছে।

ইসলামী মতে, সাধারণভাবে মৃত্যুপরবর্তী সময়ের দু’টি পর্যায় রয়েছে : মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময় এবং পুনরুত্থান পরবর্তী সময় অর্থাৎ শেষ বিচার ও তদ্পরবর্তী জান্নাতী বা জাহান্নামী অনন্ত জীবন। পুনরুত্থান, শেষ বিচার এবং বেহেশত বা দোযখ বাস তথা আখেরাতের ওপর ঈমান পোষণ ইসলামের মৌলিক চৈন্তিক ভিত্তি (উছূলে ‘আক্বাএদ্)-এর অন্যতম। এ কারণে এ সম্পর্কে কোরআন মজীদে বিস্তারিত বক্তব্য রয়েছে।

আালামে বারযাখ্ : বিবিধ প্রসঙ্গ

বারযাখী বেহেশতের রিয্ক্ব্ কেমন ?

যেহেতু কোরআন মজীদে আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তিদেরকে রিয্ক্ব্ প্রদানের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে সেহেতু সেখানে যে , সকল নেক বান্দাহকে রিয্ক্ব্ প্রদান করা হয় তাতে সন্দেহের কোনোই কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , সেখানকার রিয্ক্ব্ কী ধরনের ?

শেষ বিচারের পরে যারা বেহেশতে যাবেন তাঁরা সেখানে যে সব রিয্ক্ব্ ভোগ করবেন সে সম্পর্কে তেমন একটা প্রশ্ন জাগে না। কারণ , বিচারবুদ্ধি ( আক্ব্ল্) যেমন সে সম্বন্ধে নির্ভুল ধারণা করতে পারে তেমনি কোরআন মজীদেও সে সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। শেষ বিচারের পরে মানুষ এ পৃথিবীর জীবনের শরীরের ন্যায় শরীরের অধিকারী হবে , তবে সে শরীর হবে অবিনশ্বর , বিশেষ করে বেহেশতীদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য হবে ঠিক যেমনটি হওয়া মানুষের পসন্দনীয় - যাতে বান্দাহ্ তদ্সহ অনন্ত নে ‘ আমত ভোগ করতে পারে। তেমনি সেখানকার নে ‘ আমত সমূহ পৃথিবীর নে ‘ আমত সমূহের ন্যায় হবে , কিন্তু পৃথিবীর নে ‘ আমত সমূহের ন্যায় তাতে কোনো ত্রুটি বা অপূর্ণতা থাকবে না। উদাহরণস্বরূপ , সেখানকার খাদ্য-পানীয় গ্রহণের ফলে পায়খানা-প্রস্রাব হবে না। কারণ , পৃথিবীর জীবনে মানুষের পায়খানা-প্রস্রাব হবার কারণ দু টি। প্রথমতঃ এখানকার খাদ্য-পানীয়ে মানুষের শরীরের গ্রহণোপযোগী উপাদান (স্বাদ ও পুষ্টি) ছাড়াও এতদ্বহির্ভূত উপাদানও থাকে , দ্বিতীয়তঃ মানুষের গ্রহণক্ষমতা (হযমশক্তি) সীমিত হবার কারণে গ্রহণোপযোগী সব উপাদানও সে গ্রহণ করতে পারে না। বেহেশতে এ ধরনের সমস্যা থাকবে না।

বিচারবুদ্ধি বলে , যেহেতু বেহেশতে অক্ষয় শরীরে পুষ্টির প্রয়োজন হওয়ার কথা নয় সেহেতু সেখানকার খাদ্য-পানীয় বহ্যিক দিক থেকে পৃথিবীর খাদ্য-পানীয়ের ন্যায় হাতে নেয়া , কামড় দেয়া ও গিলে ফেলার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও তার পুরোটাই হবে স্বাদ এবং তাই গ্রহণের সাথে সাথেই তা শরীরে আত্মস্থ হয়ে যাবে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে , আালামে বারযাখের রিয্ক্ব্-ও এ ধরনেরই হবে।

অনেকে মনে করেন যে , আালামে বারযাখে যেহেতু মানুষ কোনো শরীরের অধিকারী থাকে না সেহেতু সেখানে রিয্ক্ব্ বলতে আত্মিক প্রশান্তি বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এ ধারণাকে সঠিক বলে গ্রহণ করা যায় না। কারণ , আত্মিক প্রশান্তি হচ্ছে এমন একটি আত্মিক অবস্থা যা যতোক্ষণ থাকবে ততোক্ষণ তা ধারাবাহিকভাবেই থাকবে , কিন্তু অন্য কোনোরূপ নিদর্শন ছাড়াই শুধু রিয্ক্ব্ ” বললে মস্তিষ্কে সর্বপ্রথম যে তাৎপর্য ফুটে ওঠে তা হচ্ছে খাদ্য-পানীয় ; অন্যান্য দানকে সাধারণতঃ নে ‘ আমত বলা হয় এবং সে সব ক্ষেত্রে নে ‘ আমতের উপকরণের নামের সাথে রিয্ক্ব্ ” কথাটি উল্লেখ করা হলে কেবল তখনই রিয্ক্ব্ ” থেকে সে অর্থ গ্রহণ করা যাবে , যেমন : সন্তানকেও রিয্ক্ব্ বলা হয়েছে।

যেহেতু কোরআন মজীদে আালামে বারযাখে কোনো বিশেষ ধরনের রিয্ক্ব্ প্রদানের কথা বলা হয় নি , সুতরাং এ থেকে প্রধানতঃ খাদ্য-পানীয় ধরে নিতে হবে এবং অন্য ধরনের রিয্ক্ব্ থাকলেও খাদ্য-পানীয় অবশ্যই রয়েছে। আর সেখানকার খাদ্য-পানীয় পার্থিব জীবনের খাদ্য-পানীয়ের দোষ-ত্রুটি থেকে অবশ্যই মুক্ত , তবে তার গুণগত মান (বিশেষতঃ স্বাদ) নিঃসন্দেহে শেষ বিচারের পরবর্তী বেহেশতের খাদ্য-পানীয়ের মানের সমান নয় , বরং সেখানকার ও পার্থিব জীবনের খাদ্য-পানীয়ের স্বাদের মাঝামাঝি হওয়াই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন উঠতে পারে , শেষ বিচার পরবর্তী বেহেশতে বস্তুদেহের কারণে খাদ্য-পানীয় স্পর্শ করা যাবে , কিন্তু আালামে বারযাখে তো বস্তুদেহ নেই , তাহলে সেখানে স্পর্শনীয় খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা সম্ভব হবে কী করে ?

এ প্রশ্নের জবাবে বলা যেতে পারে যে , পার্থিব জীবনে আমরা শারীরিক ইন্দ্রিয়নিচয়ের দ্বারা যে সব কাজ করে থাকি আসলে আমাদের নাফ্স্-ই ইন্দ্রয়নিচয়ের দ্বারা তা করিয়ে থাকে। অর্থাৎ দৃশ্যতঃ হাত কোনো কিছু স্পর্শ করলেও প্রকৃত পক্ষে নাফ্স্-ই স্পর্শ করে ; হাত তার স্পর্শ করার মাধ্যম মাত্র। কিন্তু নাফ্স্ শারীরিক ইন্দ্রিয়নিচয়ের সাহায্য ছাড়াই ইন্দ্রিয়নিচয়ের অনুভূতি অর্জন করতে পারে। তাই ঘুমের সময় শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় থাকলেও নাফ্স্ স্বপ্নের মধ্যে ইন্দ্রিয়নিচয়ের অনুভূতি লাভ করে থাকে। সুতরাং আালামে বারযাখে নাফ্স্-এর পক্ষে শেষ বিচার পরবর্তী বেহেশতের রিযক্বের অনুরূপ ত্রুটিমুক্ত রিয্ক্ব্ (যদিও বেহেশতের রিযক্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মানের এবং পাথিব রিযক্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত উন্নত মানের) গ্রহণ করতে পারে এতে সন্দেহের কারণ নেই। তবে এ রিয্ক্ব্ সংখ্যাগত ও পরিমাণগত দিক থেকে কতোটা সীমিত সে সম্পর্কে আমাদের পক্ষে ধারণা করা সম্ভব নয়।

‘ আালামে বারযাখের রিয্ক্ব্ মানে যে , কেবল অব্যাহত আত্মিক প্রশান্তি নয় , বরং এতদ্সহ খাদ্য-পানীয় তার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে এই যে , সেখানে আালে ফির ‘ আউন্-কে সকাল-সন্ধ্যা দোযখের আগুনের ওপর পেশ করা হয়। সেখানকার পুরষ্কার ও শাস্তি কেবল আত্মিক হলে নেককারদের আত্মিক প্রশান্তির মোকাবিলায় আালে ফির ‘ আউনকে কেবল আত্মিক অশান্তিতে রাখা হতো।

‘ আলামে বারযাখে রিয্ক্ব্ গ্রহণের বিষয়টির স্বরূপ নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হবার পিছনে নিহিত মূল কারণ হচ্ছে নাফ্স্-এর স্বরূপ ও ঐ জগতে নাফসের অবস্থানের ধরন সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ও অকাট্য ধারণা না থাকা। জিন সূক্ষ্ম দেহধারী প্রাণী , কিন্তু তারা বস্তুগত রিয্ক্ব্ গ্রহণ করে থাকে। তাদের রিয্ক্ব্ গ্রহণের ধরন সম্পর্কে আমাদের অকাট্য ধারণা নেই। অনেকের মতে , তারা তাদের খাদ্যবস্তু ও পানীয় থেকে শক্তি (এনার্জি/ পুষ্টি) ও স্বাদ গ্রহণ করে থাকে এবং তাদের দ্বারা শক্তি ও স্বাদ গ্রহণ করার পর উক্ত খাদ্যবস্তুর পুষ্টি ও স্বাদ বিহীন বস্তুগত উপাদান বাহ্যিক দিক থেকে হুবহু পড়ে থাকে।

নাফ্স্ সমূহ কি অবস্তুগত সত্তা , নাকি এক ধরনের সূক্ষ্ম উপাদানের সত্তা এ সম্বন্ধে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। অনেকের মতে তা সূক্ষ্ম উপাদানের সত্তা এবং অনেকের মতে তা অবস্তুগত , তবে আালামে বারযাখে তাদেরকে এক ধরনের সূক্ষ্ম দেহের অধিকারী করে রাখা হয়। (এ সম্পর্কে পরে আরো কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।) তাই আালামে বারযাখের অধিবাসী নেককার ব্যক্তিদের নাফ্স্ সমূহকে দেয় খাদ্য-পানীয় যেহেতু শেষ বিচার পরবর্তী খাদ্য-পানীয়ের (যা শুধুই স্বাদ) অনুরূপ সেহেতু তাঁদের পক্ষে তা থেকে ঘ্রাণ ও স্পর্শানুভূতি সহকারে স্বাদ গ্রহণ তথা তার পুরোটাই গ্রহণ করতে পারায় কোনো সমস্যা হবার কারণ নেই।

মৃত ব্যক্তির বস্তুদেহ ও নাফ্স্-এর মধ্যে সম্পর্ক

এটা সন্দেহাতীত যে , আালামে বারযাখ্ বা ক্ববরের জগত মানে মাটির ক্ববরের ভিতরের পরিবেশ নয় , কারণ , সকল মৃতদেহের মাটির ক্ববর হয় না। বরং আালামে বারযাখ্ বা ক্ববরের জগত মানে নাফ্স্-এর জগত - যা একটি অবস্তুগত জগত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে , মৃত ব্যক্তির বস্তুদেহ ও আালামে বারযাখে অবস্থানরত তার নাফ্স্-এর মধ্যে কোনো সম্পর্ক ও যোগসূত্র থাকে কি ?

এ প্রশ্নের নিশ্চিত জবাব দেয়া কঠিন। কারণ , কোরআন মজীদে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয় নি এবং বিচারবুদ্ধিও এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে অক্ষম। তবে এ ব্যাপারে বিচারবুদ্ধির বিশ্লেষণ থেকে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

এ ব্যাপারে ইতিপূর্বেও যেমন আভাস দেয়া হয়েছে যে , যেহেতু আালামে বারযাখ্ কোনো বস্তুগত জগত নয় , বরং একটি ভিন্ন মাত্রার জগত (অবস্তুগত জগত) সেহেতু এ জগত এ পৃথিবী থেকে দূরে হওয়া যেমন যরূরী নয় , তেমনি পৃথিবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাও অপরিহার্য নয়। বরং অবস্তুগত জগত হবার কারণে এ বস্তুগত জগতের কোনো কিছুর সাথে সাংঘর্ষিকতা ছাড়াই তা এ পৃথিবী ও বস্তুজগতের অন্য সব কিছুর সম-অবস্থানে অবস্থান করতে পারে , ঠিক যেভাবে পানি বা কাঁচের মধ্য দিয়ে গমনকালে আলোর তার মধ্যে অবস্থানে কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে আালামে বারযাখ্ হচ্ছে একটি কঠোর নিয়ন্ত্রণাধীন জগত যেখানে কেবল অনুমতির অধিকারী নাফ্স্ সমূহ অনুমোদিত সীমিত তৎপরতা চালাতে পারে। সুতরাং তাদের স্বীয় বস্তুদেহের সাথে সম্পর্ক থাকবেই এটা অকাট্যভাবে বলা চলে না , তেমনি সম্পর্ক নেই তা-ও বলা চলে না।

অবশ্য সাধারণভাবে মানবিক প্রবণতার ভিত্তিতে বলা চলে যে , প্রতিটি নাফসের স্বীয় বস্তুদেহের সাথে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক - যার মানে অবশ্য এ নয় যে , নাফ্স্ ঐ বস্তুদেহের মধ্যে অবস্থান করে। যদিও মুসলমানদের একটি সর্বসম্মত আমল থেকে এমনটি মনে হতে পারে , কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। বরং স্বীয় বস্তুদেহের সাথে আালামে বারযাখে অবস্থানরত নাফ্স্-এর সম্পর্কটা হচ্ছে এক ধরনের আত্মিক ও মানসিক সম্পর্ক বা টান।

আমরা যে বাড়ীটিতে যুগের পর যুগ বসবাস করেছি , কিন্তু এরপর বিক্রি করে দিয়েছি বা কেউ জোর করে দখল করে নিয়েছে , বা তাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে , এমনকি হতে পারে যে , তার ধ্বংস্তূপও সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং কেবল খালি জায়গা পড়ে আছে বা সে জায়গায় কেউ নতুন বাড়ী তৈরী করেছে , সে বাড়ীটি বা তার ধ্বংস্তূপ বা তার জায়গাটির সাথে আমাদের আত্মিক-মানসিক সম্পর্ক বা টানের সাথে একে তুলনা করা যেতে পারে। ধরুন , এ বাড়ীটির বা তার ধ্বংসস্তূপের বা তার জায়গার চারদিকে মযবূত কাঁচের দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে যার ভিতর দিয়ে আমরা বাড়ীটির ভিতরটা বা জায়গাটা দেখতে পাচ্ছি এবং বার বার আমাদের দৃষ্টি তার ভিতরে পতিত হচ্ছে , কিন্তু আমরা তাতে প্রবেশ করতে পারছি না। তেমনি ঐ বাড়ীতে থাকাকালে আমরা যা কিছু ব্যবহার করেছি তা যদি অন্যত্রও নিয়ে যাওয়া হয় এবং আমরা তা চিনতে পারি তাহলে তার প্রতিও আমরা আত্মিক সম্পর্ক বা মনের টান অনুভব করি।

বস্তুতঃ শুধু বস্তুদেহের সাথে নয় , ব্যক্তির সারা জীবনের স্মৃতিবিজড়িত সব কিছুর সাথে এবং স্বজনদের সাথেও নাফসের সম্পর্কটা এ ধরনের বলে মনে করা যেতে পারে। তবে এখানে বাধাটা কাঁচের দেয়ালের ন্যায় বস্তুগত নয় , বরং মাত্রাগত। কারণ , বস্তুজগত ও আালামে বারযাখ্ ভিন্ন মাত্রার জগত।

ওপরে মুসলমানদের যে সর্বসম্মত আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে , আমরা মুসলমানদের ক্ববরে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদেরকে সরাসরি সম্বোধন করে সালাম দেই ; বলি : আস্-সালামু আলাইকুম্ ইয়া আহলাল্ ক্বুবূর্। ” (হে ক্ববরবাসীরা! তোমাদের ওপর সালাম।) - যা থেকে প্রমাণিত হয় যে , তাঁরা তা শুনতে পান। নইলে তাঁদেরকে নামপুরুষে উল্লেখ করে সালাম দিতে হতো ; বলতে হতো : আস্-সালামু আলা আহলিল্ ক্বুবূর্। ” (ক্ববরবাসীদের ওপর সালাম।)

এ থেকে অবশ্যই প্রমাণিত হয় যে , মৃতদের নাফ্স্ আমাদের কথা শুনতে পায় , কিন্তু এ থেকে এটা প্রমাণিত হয় না যে , তাঁদের নাফসগুলো ঐ ক্ববরগুলোর মধ্যেই রয়েছে। বরং আালামে বারযাখ্ অবস্তুগত জগত বিধায় আমরা যেখানেই থাকি না কেন স্থানগত ব্যবধান তাঁদের ও আমাদের মধ্যে কোনো প্রকৃত ব্যবধান নয়। সুতরাং ক্ববরের কাছে না গিয়েও সম্বোধন করে সালাম দিলে তাঁরা শুনতে পান। এ কারণেই আমরা নামাযের মধ্যে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে সম্বোধন করে সালাম দেই যদিও আমরা তাঁর ক্ববর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি।

বস্তুতঃ আমরা যে ক্ববরের কাছে গিয়ে ক্ববরবাসীদেরকে সালাম দেই তার ফলে তাঁদের শ্রবণক্ষমতার ক্ষেত্রে দূর থেকে সালাম দেয়া হতে কোনো পার্থক্য হয় না। বরং ক্ববরের কাছে গেলে তাঁদের সাথে আমাদের আত্মিক বা মানসিক সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশী বৃদ্ধি পায় , তেমনি তাঁদের জীবনেতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষাগ্রহণের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে , তা হচ্ছে , মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষের ডিএনএ-র ভিতরে তার গোটা জীবনের ইতিহাস কোড্ আকারে লিপিবদ্ধ আছে। শুধু তা-ই নয় , কোনো ব্যক্তি যে সব জায়গায় কোনো না কোনো কর্মতৎপরতা চালিয়েছে এবং যে সব জিনিস ব্যবহার করেছে তার সব কিছুতেই ঐ ঘটনার বা তার জীবনেতিহাসের অন্ততঃ অংশবিশেষের ছাপ আছে - এটা বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে আমরা যখন ঐ সব জায়গায় যাই অথবা ঐ সব জিনিস দেখি বা স্পর্শ করি তখন আমরা মানসিক দিক থেকে , এমনকি কতক ক্ষেত্রে অজ্ঞাতসারেও , ঐ সব ব্যক্তির নাফসের অধিকতর কাছাকাছি চলে আসি। এমতাবস্থায় ঐ সব স্থান ও বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাফসের একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আালামে বারযাখ্ ও বস্তুজগতের মধ্যে যোগাযোগ

‘ আলামে বারযাখ্ ও বস্তুজগতের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব কি ? এ প্রশ্নটি হচ্ছে আালামে বারযাখ্ সংক্রান্ত আলোচনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহের অন্যতম।

এখানে যোগাযোগের কয়েকটি ধরন হতে পারে : (১) এক জগতের অধিবাসীদের অন্য জগতে সরাসরি প্রবেশ ও বিচরণ , (২) এক জগতের অধিবাসীদের অন্য জগতের অবস্থা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞানের অধিকারী থাকা , (৩) পরস্পরের প্রতি সালাম ও শুভেচ্ছা প্রেরণ এবং পরস্পরের কাছে আবেদন করা , (৪) পরস্পরের জন্য দো ‘ আ করা , (৫) এক জগতের অধিবাসীদের অন্য জগতের অধিবাসীদের ওপরে কোনো না কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার , (৬) এক জগতের অধিবাসীদের অন্য জগতে হস্তক্ষেপ।

(১) যেহেতু বারযাখ্ ” শব্দের মানে হচ্ছে অন্তরাল এবং আালামে বারযাখ্ মানে এ বস্তুজগতের সাথে অন্তরাল রয়েছে এমন একটি জগত , সেহেতু এর মানে হচ্ছে এ দুই জগতের অধিবাসীদের পরস্পরের জগতে প্রবেশ সম্ভব নয়। তবে কোরআন মজীদের আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে , এ বাধা বিশেষভাবে আালামে বারযাখের অধিবাসীদের জন্য ব্যতিক্রমহীনভাবে প্রযোজ্য ; বস্তুজগতের অধিবাসীদের জন্য তা অনুরূপভাবে ব্যতিক্রমহীনভাবে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , কাফেররা যখন মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন তারা যথাযথ আমল করার জন্য পুনরায় তাদেরকে পার্থিব জীবনে ফেরত পাঠানোর জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে আবেদন জানায়। কিন্তু আল্লাহ্ তা আলা তাদের সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং এর ফলে তাদের পক্ষে আর পার্থিব জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয় না। কারণ , এরশাদ হয়েছে :

) وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ(

“ আর পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তাদের পশ্চাতে রয়েছে এক অন্তরায় (বারযাখ্) । ” (সূরাহ্ আল্-মু ’ মিনূন্ : ১০০)

অবশ্য আল্লাহ্ তা আলা চাইলে কোনো মৃত ব্যক্তিকে এ পৃথিবীর বুকেই পুনর্জীবন দান করতে পারেন , ঠিক যেভাবে তিনি হযরত উযাইর্ ( আঃ)কে পুনর্জীবিত করেছিলেন। কিন্তু এরূপ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আর আালামে বারযাখের অধিবাসী হিসেবে গণ্য হচ্ছে না অর্থাৎ কারো পক্ষে আালামে বারযাখের অধিবাসী থাকা অবস্থায় বস্তুজগতে প্রবেশ ও বিচরণ করা সম্ভব নয় , যদিও আল্লাহ্ তা আলার অনুমতিক্রমে অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি আসা সম্ভব হতে পারে।

কিন্তু বস্তুজগতের অধিবাসীদের (সকলের) সামনে আালামে বারযাখে প্রবেশের পথে এ ধরনের অন্তরাল রয়েছে এমন কথা বলা হয় নি। তাছাড়া সর্বসম্মত মত অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর মি ‘ রাজের সময় পূর্ববর্তী সমস্ত নবী-রাসূল ( আঃ) তাঁর ইমামতীতে নামায আদায় করেছেন। আর যেহেতু আালামে বারযাখের কোনো অধিবাসীর পক্ষেই বস্তুজগতে প্রবেশ অর্থাৎ ফিরে আসা তথা বস্তুগত শরীরী রূপ ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় , সেহেতু এতে সন্দেহ নেই যে , হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) ও হযরত ঈসা ( আঃ) আালামে বারযাখে প্রবেশ করেছিলেন এবং এর ফলেই তাঁদের সকলের পক্ষে রাসূলুল্লাহর (ছ্বাঃ) পিছনে নামায আদায় করা সম্ভব হয়েছিলো। সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , ব্যতিক্রম হিসেবে আল্লাহ্ তা আলার অনুমতিক্রমে বা অনুগ্রহে বস্তুজগতের কোনো কোনো অধিবাসীর পক্ষে আালামে বারযাখে প্রবেশ করা সম্ভব হতে পারে।

(২) আালামে বারযাখের অধিবাসীদের পক্ষে বস্তুজগতের অধিবাসীদের অবস্থা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞানের অধিকারী থাকা সাধারণভাবে সম্ভব বলে মনে হয় না। কারণ , তা বারযাখ্ ” -এর তাৎপর্যের সাথে সাংঘর্ষিক। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে আল্লাহ্ তা আলা কাউকে এ সুযোগ দিলে তা স্বতন্ত্র। তাছাড়া একই কারণে অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের কারো পক্ষে বস্তুজগতের কোনো ব্যাপারে পরোক্ষ জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সম্ভব হতে পারে , যেমন : বস্তুজগতের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে আবেদন ব্যপদেশে কোনো তথ্য অবগত করা হতে পারে। অর্থাৎ বস্তুজগতের অধিবাসী স্বীয় সমস্যার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ্ তা আলার কাছে তা দূরীকরণের জন্য সুপারিশ করার অনুরোধ জানালে সেই সুবাদে বস্তুজগতের কিছু তথ্যও জানানো হয়ে যায়। এছাড়াও আল্লাহ্ তা আলা তাঁর খাছ্ব্ বান্দাহ্দেরকে বস্তুজগতকে (তাতে প্রবেশ না করেও) পুরোপুরি প্রত্যক্ষকরণের সুযোগ দিতে পারেন।

(৩) বস্তুজগতের অধিবাসীরা আালামে বারযাখের অধিবাসীদেরকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাতে পারে এটা আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি। এছাড়া আমরা এ-ও উল্লেখ করেছি যে , বস্তুজগতের অধিবাসীরা তাদের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা আলার কাছে সুপারিশ করার জন্য আালামে বারযাখের অধিবাসীদের কাছে আবেদন করতে পারে। আর তাঁরা এ সব সালাম , শুভেচ্ছা ও আবেদন শুনতে পান , যদিও আবেদনের ক্ষেত্রে যার কাছে আবেদন করা হয়েছে তাঁর আল্লাহ্ তা আলার কাছে সুপারিশ করার জন্য অনুমতি আছে কিনা বা থাকলেও আল্লাহ্ তা আলা সে সুপারিশ রক্ষা করবেন কিনা তা স্বতন্ত্র বিষয়। এর বিপরীতে আালামে বারযাখের অধিবাসীরা বস্তুজগতের অধিবাসীদের কাছে সরাসরি সালাম , শুভেচ্ছা ও আবেদন জানাতে পারে এমন কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই এবং পারলেও বস্তুজগতের অধিবাসীরা তা প্রত্যক্ষভাবে শুনতে পায় না। অবশ্য বিভিন্ন ইসলামী সূত্র অনুযায়ী তারা স্বজনদের প্রতি এ মর্মে আশা পোষণ করে যে , তারা এমন কিছু কাজ করবে যা আালামে বারযাখের অধিবাসীর উপকারে আসবে। তবে বস্তুজগতের অধিবাসীরা পরোক্ষভাবে অর্থাৎ স্বপ্নে আালামে বারযাখের অধিবাসীদের কথা শুনতে পারে (অর্থাৎ তাদের পক্ষে শুনতে পাওয়া সম্ভবও হতে পারে) । কিন্তু এ ধরনের শ্রবণকে আক্ষরিক অর্থে বস্তুজগতের অধিবাসীদের শ্রবণ বলে গণ্য করা চলে না। কারণ , বস্তুজগতের মানুষ অর্থাৎ জীবিত মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তার নাফ্স্ বস্তুজগতে থাকে না , বরং তখন তা আালামে বারযাখেরই একটি অংশে অবস্থান করে। ( আালামে বারযাখের একাধিক তাৎপর্য সম্পর্কে পরে আলোচনা করা হয়েছে।)

(৪) বস্তুজগতের অধিবাসীরা আালামে বারযাখের অধিবাসীদের জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে দো ‘ আ করলে এবং কোরআন তেলাওয়াত্ করে , নফল নামায আদায় করে ও দান-ছ্বাদাক্বাহ্ করে তার ছাওয়াব্ তাদেরকে দান করলে , তেমনি তাদেরকে ছাওয়াব দানের উদ্দেশ্যে ছ্বাদাক্বায়ে জারীয়াহ্ মূলক কোনো কাজ করলে সে ক্ষেত্রে আালামে বারযাখের সংশ্লিষ্ট অধিবাসীরা তার উপযুক্ত হলে (যেমন : কাফের বা ত্বাগূত্ না হলে) তা থেকে তারা কমবেশী উপকৃত হয় - এটি একটি সর্বসম্মত বিষয়। অন্যদিকে বস্তুজগতের অধিবাসীরা আালামে বারযাখের উপযুক্ত অধিবাসীদের কাছে সুপারিশের জন্য আবেদন জানালে তাঁরা আল্লাহ্ তা আলার কাছে সুপারিশ তথা দো ‘ আ করতে পারেন এবং আল্লাহ্ তা আলা তা কবূল করলে তা থেকে বস্তুজগতের অধিবাসীরা উপকৃত হয়।

(৫) বস্তুজগতের ও আালামে বারযাখের অধিবাসীরা কেবল আল্লাহ্ তা আলার কাছে দো ‘ আর মাধ্যমে (ওপরে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সে শর্তে) পরস্পরকে উপকৃত করতে পারে। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে স্বপ্নে পথনির্দেশ প্রদানের মাধ্যমেও আালামে বারযাখের অধিবাসীরা বস্তুজগতের অধিবাসীদেরকে প্রভাবিত করতে পারে। এর বাইরে দুই জগতের অধিবাসীরা সরাসরি পরস্পরকে প্রভাবিত করতে পারে না।

(৬) এক জগতের অধিবাসীদের পক্ষে অন্য জগতে সরাসরি হস্তক্ষেপের কোনোই সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন রয়েছে।

‘ আালামে বারযাখ্ হচ্ছে আমাদের বস্তুজগত থেকে ভিন্ন মাত্রার একটি জগত। এ কারণেই সাধারণভাবে আমাদের পক্ষে ইন্দ্রিয়নিচয়ের দ্বারা এ জগতের অস্তিত্ব অনুভব করা সম্ভব হয় না ; জ্ঞান দ্বারা অনুভব করতে হয়। এভাবে ইন্দ্রিয়নিচয় দ্বারা অনুভব করতে না পারার দৃষ্টান্ত আমাদের বস্তুজগতেরও কতক বিষয়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ , আমরা আলো দেখতে পাই না এবং অন্য কোনো ইন্দ্রিয় দ্বারাও প্রত্যক্ষ করতে পারি না , কিন্তু কোনো বস্তুতে আলো পতিত হলে তা যখন দেখতে পাই তখন আলোর উপস্থিতি সম্পর্কে অকাট্য প্রত্যয়ে উপনীত হই। কিন্তু আমরা রঞ্জন রশ্মি (এক্স্-রে) , এমনকি তার প্রতিক্রিয়াও , ইন্দ্রিয়নিচয়ের দ্বারা প্রত্যক্ষ করতে না পারলেও যন্ত্রের সাহায্যে তার প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে এর অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রত্যয়ের অধিকারী হই।

বস্তুতঃ আমরা কেবল একটি সুনির্দিষ্ট সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মাত্রার দৈর্ঘ্যের আলোকতরঙ্গের প্রতিক্রিয়াই প্রত্যক্ষ করতে পারি ; এর চেয়ে বেশী দৈর্ঘ্যের বা কম দৈর্ঘ্যের আলোকতরঙ্গের প্রতিক্রিয়া সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারি না। অনুরূপভাবে আমরা একটি সুনির্দিষ্ট রেঞ্জের শব্দতরঙ্গ শুনতে পাই ; এর চেয়ে বেশী দৈর্ঘ্যের বা কম দৈর্ঘ্যের শব্দতরঙ্গ শুনতে পাই না। কিন্তু কোনো কোনো ইতর প্রাণী এমন অনেক আলোকতরঙ্গের প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং এমন অনেক শব্দতরঙ্গ শুনতে পায় যা মানুষ প্রত্যক্ষ করতে বা শুনতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ , মৌমাছি যে ধরনের শব্দতরঙ্গের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে মানুষ তা শুনতে পায় না , তবে এ উদ্দেশ্যে তৈরী করা অত্যাধুনিক যন্ত্রে তা ধরা পড়ে।

এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা আলার বিশেষ অনুগ্রহে কারো কারো পক্ষে এ ধরনের আলোকতরঙ্গ প্রত্যক্ষকরণ ও শব্দতরঙ্গ শুনতে পাওয়া সম্ভব হতে পারে। আর এ ক্ষমতা যে আল্লাহ্ তা আলা কেবল তাঁর খাছ্ব্ বান্দাহদেরকে দিয়েছেন তা নয় ; তিনি চাইলে তা যে কাউকে দিতে পারেন। কয়েক বছর আগে [যদ্দূর মনে পড়ে , সংবাদটা ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালের] পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী জনৈকা মহিলার চোখে রঞ্জন রশ্মির মতো ক্ষমতা ছিলো এবং তাঁর দৃষ্টি মানুষের পোশাক ভেদ করে শরীরের ভিতরের , এমনকি পেটের ভিতরের সব কিছু দেখতে পেতো। [মহিলা ছিলেন একটি হাসপাতালের নার্স। বহু বছর আগেকার ঘটনা ; যদ্দূর মনে পড়ে , তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন।]

এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা আলা অনুগ্রহ করলে তাঁর কতক খাছ্ব্ বান্দাহর পক্ষে আালামে বারযাখের অবস্থা পুরোপুরি বা আংশিক প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হতে পারে। বিশেষ করে , আমরা ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করেছি , হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) মি ‘ রাজের সময় আালামে বারযাখে প্রবেশ করে অন্য নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) সহ নামায আদায় করেছিলেন। এছাড়া তিনি বেহেশতবাসীদের ও দোযখবাসীদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন বলে যে বিভিন্ন হাদীছে বলা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বারযাখী বেহেশত-দোযখের অধিবাসীদের অবস্থা ছিলো।

তবে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) কর্তৃক আালামে বারযাখের অবস্থা প্রত্যক্ষকরণ কেবল মি ‘ রাজের ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো বলে মনে করা ঠিক হবে না। কারণ , আল্লাহ্ তা আলা তাঁর ওপর যে কোরআন মজীদ নাযিল করেন তা সর্বপ্রথম একবারে তাঁর হৃদয়ে ইলমে হুযূরী আকারে নাযিল করেন - যাতে তখন পর্যন্ত অতীতের সমস্ত ঘটনাবলী এবং পরে অবশ্য ঘটিতব্য ও দুই বা ততোধিক সম্ভাবনাযুক্ত ঘটনাবলী সব কিছুই শামিল ছিলো , আর তা লেখ্য বা শ্রবণযোগ্য বর্ণনা আকারে নয় , বরং তা হুবহু অভিজ্ঞতার ন্যায় , তবে তাতে কোনো বস্তু ছিলো না - এ যুগের ভিডিও চলচ্চিত্রের ন্যায়। [এ ব্যাপারে কোরআনের পরিচয় ও কোরআনের মু ‘ জিযাহ্ গ্রন্থ দু টিতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।]

এছাড়া বিভিন্ন হাদীছ থেকে জানা যায় যে , নবী করীম (ছ্বাঃ) মি ‘ রাজের ন্যায় সরাসরি আালামে বারযাখে প্রবেশ না করেও সে জগতের অবস্থা প্রত্যক্ষ করতেন এবং অনেক সময় সে জগতের অধিবাসীদের সম্বোধন করে কথা বলতেন।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , অতীত হয়ে যাওয়া ঘটনাবলী প্রত্যক্ষকরণের বিষয়টি আালামে বারযাখের চলমান ঘটনাবলী প্রত্যক্ষকরণের তুলনায় অধিকতর কঠিন। কিন্তু আল্লাহ্ তা আলা নবী করীম (ছ্বাঃ)কে তা প্রত্যক্ষ করান অর্থাৎ এ ব্যপারে ইলমে হুযূরী প্রদান করেন। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্ তা আলা তাঁকে সম্বোধন করে এরশাদ করেন :

) أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ(

“ (হে রাসূল!) আপনি কি দেখেন নি আপনার রব হস্তিমালিকদের সাথে কেমন আচরণ করলেন ? (সূরাহ্ আল্-ফীল্ : ১)

অনেকে অবশ্য এ আয়াতেরاَلَم تَرَ কথাটির অর্থ আপনি কি দেখেন নি ? না করে করেন আপনি কি জানেন না ? কিন্তু এ ধরনের অর্থগ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , কোনো সুস্পষ্ট নিদর্শন না থাকলে কোনো শব্দের প্রথম অর্থ বাদ দিয়ে অন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করা চলে না। এখানে আল্লাহ্ তা আলা যদি আপনি কি জানেন না ? বুঝাতে চাইতেন তাহলে ফাছ্বাহাতের দাবী অনুযায়ী অবশ্যইاَلَم تَعلَم বলতেন ,اَلَم تَرَ বলতেন না।

বিচারবুদ্ধির পক্ষে সহজেই ধারণা করা সম্ভব যে , ইলমে হুযূরী ও আালামে বারযাখের জ্ঞান প্রদানের বিষয়টি কেবল হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না , বরং অন্যান্য নবী-রাসূলকেও ( আঃ) তা দেয়া হয়েছিলো। বিশেষ করে আল্লাহ্ তা আলা হযরত ইবরাহীম্ ( আঃ) সম্বন্ধে এরশাদ করেন :

) وَكَذَلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ وَلِيَكُونَ مِنَ الْمُوقِنِينَ(

“ আর এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আসমান সমূহের ও যমীনের মালাকূত্ প্রদর্শন করি - যাতে সে ইয়াক্বীনের অধিকারীদের অন্যতম হয়। ” (সূরাহ্ আল্-আন্ ‘ আাম্ : ৭৫)

এ থেকে অবশ্য হযরত ইবরাহীম্ ( আঃ)-এর মি ‘ রাজ প্রমাণিত হয়। তবে যেহেতু এতে সফর করানোর কথা বলা হয় নি , বরং শুধু প্রদর্শন ’ -এর কথা বলা হয়েছে সেহেতু ধরে নেয়া যেতে পারে যে , সম্ভবতঃ এ মি ‘ রাজ ছিলো শুধু আত্মিকভাবে , শারীরিকভাবে নয় , তথা তাঁকে আসমান সমূহের ও যমীনের মালাকূত্-এর ইলমে হুযূরী প্রদান করা হয়েছিলো। আয়াতের শব্দপ্রয়োগ থেকে সুস্পষ্ট যে , এতে আালামে বারযাখ্ও শামিল ছিলো। আর যেহেতু আয়াতে এ মি ‘ রাজের উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে ইয়াক্বীনের অধিকারী করা সেহেতু ধরে নেয়া যেতে পারে যে , এ ধরনের ইলমে হুযূরী কম-বেশী সকল নবী-রাসূলকেই ( আঃ) প্রদান করা হয়েছিলো।

শুধু নবী-রাসূলগণকেই ( আঃ) নয় , আল্লাহ্ তা আলা তাঁর অন্য যে কোনো খাছ্ব্ বান্দাহকেই ইলমে হুযূরী ও আালামে বারযাখের অবস্থা প্রত্যক্ষকরণের ক্ষমতা দিতে পারেন এবং দিয়ে থাকতে পারেন। বিশেষ করে হযরত আলী (কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহ্) থেকে উদ্ধৃত হয়েছে যে , তিনি এরশাদ করেন : পর্দা সরে গেলে নতুন কিছুই আমার সামনে প্রকাশ পাবে না। ” অর্থাৎ তিনি আালামে বারযাখের অবস্থা বস্তুজগতের অবস্থার মতোই প্রত্যক্ষ করতেন , সুতরাং তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর সামনে নতুন কিছুই প্রকাশ পাবার মতো ছিলো না।

স্বপ্নলোক মূলতঃ আালামে বারযাখেরই একটি অংশবিশেষ , যদিও মৃত ব্যক্তিদের নাফসের অবস্থানের অংশ আর স্বপ্নলোক অভিন্ন নয়। এটাকে বস্তুজগতের বিভিন্ন সংরক্ষিত এলাকার সাথে তুলনা করা যেতে পারে যেখানে চাইলেই যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না বা এ সব এলাকার মধ্য থেকে যে কেউ চাইলেই বাইরে যেতে বা বাইরে যোগাযোগ করতে পারে না , তবে অনুমতি সাপেক্ষে কারো পক্ষে শর্তাধীনে বাইরে যাওয়া ও বাইরে থেকে কারো প্রবেশ ও শর্তাধীন সীমিত বিচরণ সম্ভবপর। সুতরাং মানুষের নিদ্রিত অবস্থায় তার নাফসকে যখন আালামে বারযাখেরই একটি অংশে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে সেখানে বিচরণ করতে দেয়া হয় তখন সেখানে তাকে মৃত ব্যক্তিদের নাফসের মুখোমুখি করা হতে পারে। এমতাবস্থায় কোনো মৃত ব্যক্তির নাফ্স্ ঘুমন্ত ব্যক্তির নাফসকে পথনির্দেশ দিতে পারে বা তার কাছে কিছু চাইতে পারে। এছাড়াও স্বপ্নে মানুষ জীবিত জগতের অনেক কিছুর অনুরূপ বা প্রতীকী অবস্তুগত রূপের মুখোমুখি হতে পারে। [ আালামে বারযাখের একটি অংশে বস্তুজগতের অধিবাসীদের চিন্তা-পরিকল্পনা , কথা ও কাজের অবস্তুগত অনুরূপ বা রূপক রূপ সঞ্চিত হয়। এ সম্পর্কে পরে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।]

এছাড়া জীবিত লোকেরা যখন মৃতদেরকে ভালো বা মন্দভাবে স্মরণ করে তখন তা মৃতদের নাফসের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া ঘটাবে এবং তাদেরকে আনন্দ বা দুঃখ দেবে এটাই স্বাভাবিক। তেমনি মৃতরা জীবিতদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে এ কথা কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে ; তাদের এ আনন্দপ্রকাশ সংশ্লিষ্ট জীবিতদের ওপর ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া বিস্তার করবে এটাই স্বাভাবিক , ঠিক যেভাবে পার্থিব জগতে দূর থেকে কেউ কাউকে স্মরণ করলে যাকে স্মরণ করা হয় তার ওপর টেলিপ্যাথিক পন্থায় মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। সুতরাং মৃতদের নাফ্স্ যখন জীবিতদের কাছ থেকে দো ‘ আ বা দান-ছ্বাদাক্বাহ্ কামনা করে অথবা তাদের কল্যাণ কামনা করে বা তাদেরকে পথনির্দেশ দিতে চায় তখন তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে , অনেক সময় জীবিত ব্যক্তিদের মনে হঠাৎ করেই এ ধরনের ভাব জেগে ওঠে যে , মৃত ব্যক্তি তার কাছে দো ‘ আ বা দান-ছ্বাদাক্বাহ্ চাচ্ছে বা তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে বা তাকে অমুক পথনির্দেশ দিচ্ছে।

আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে , মৃতদের নাফ্স্ কি জীবিতদের খুব কাছাকাছি আসতে পারে এবং পারলে জীবিতরা কি তা বুঝতে পারে বা তার দ্বারা প্রভাবিত হয় ?

আমরা ইতিপূর্বে যে আলোচনা করেছি তা থেকে সুস্পষ্ট যে , আালামে বারযাখের নাফ্স্ সমূহ বস্তুজগতে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারে না , তবে আল্লাহ্ তা আলার ব্যবস্থাপনাগত বা প্রত্যক্ষ অনুমতিক্রমে আত্মিক ও জ্ঞানগতভাবে অপেক্ষাকৃত কাছে আসতে পারে , অন্যদিকে আল্লাহর খাছ্ব্ বান্দাহ্গণ ছাড়াও যে কোনো সাধারণ মানুষও আল্লাহ্ তা আলার অনুগ্রহে কখনো কখনো জাগ্রত অবস্থায়ই আালামে বারযাখের অধিবাসীদের অবস্থা অংশতঃ প্রত্যক্ষ করতে পারে বা মনস্তাত্বিকভাবে এ জগতের বা এর কোনো অংশের অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি আসতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় জীবিত ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির নাফসকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে না পারলেও অনুভব করতে পারে ; মনে হতে পারে যে , মৃত ব্যক্তি তার আশেপাশেই আছে যদিও সে দেখতে পাচ্ছে না। এ অবস্থা জীবিত ব্যক্তির ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তার করবে এটাই স্বাভাবিক।

জীবিত মানুষের দেহে মৃতের নাফসের প্রবেশ সম্ভব কি ?

বস্তুজগত ও আালামে বারযাখের মধ্যে যোগাযোগ প্রসঙ্গে সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে , কোনো মৃত ব্যক্তির নাফসের পক্ষে কোনো জীবিত ব্যক্তির দেহে প্রবেশ বা তাতে ভর করা সম্ভব কিনা ? কারণ , কারো শরীরে কোনো মৃত ব্যক্তির আত্মা প্রবেশ করা বা তাতে কোনো মৃত ব্যক্তির আত্মা ভর করার দাবী একটি অত্যন্ত পুরনো দাবী। এমনকি , আধুনিক হবার দাবীদার পাশ্চাত্য জগতেও প্লানচেট্ নাম দিয়ে এই একই কাজটি করার দাবী করা হয়।

এ ব্যাপারে নীতিগতভাবে বলতে হয় যে , কারো নাফসের পক্ষেই অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে আালামে বারযাখের কোনো নাফ্স্ জীবিত জগতে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারে না , সুতরাং কারো শরীরে প্রবেশ করার বা ভর করার প্রশ্নই আসে না , বিশেষ করে এ কারণেও যে , একই সময় একটি শরীরে দু টি নাফ্স্ থাকতে পারে না। সেই সাথে এ প্রশ্নও আসে যে , কারো শরীরে যদি কোনো মৃত ব্যক্তির নাফ্স্ প্রবেশ করে তখন তার নিজের নাফ্স্ কোথায় থাকে ? তা কি তার শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ? যদি তা-ই হয় তাহলে মৃত ব্যক্তির নাফ্স্ যদি আর ঐ শরীর থেকে বের না হয় তো তখন অবস্থাটা কী দাঁড়াতে পারে ? সুতরাং কোনো জীবিত ব্যক্তির শরীরে কোনো মৃত ব্যক্তির নাফসের প্রবেশের বিষয়টি পুরোপুরি বাত্বিল্ হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু বিভ্রান্তি দেখা দেয় তখনই যখন দেখা দেয় যে , কোনো ব্যক্তি ধ্যানমগ্ন বা সম্মোহিত অবস্থায় নিজেকে কোনো মৃত ব্যক্তি হিসেবে দাবী করে এমন সব তথ্য প্রদান করে যা ঐ (জীবিত) ব্যক্তির জানার কথা নয়।

প্রকৃত পক্ষে কোনো ব্যক্তি যখন ধ্যানমগ্ন বা সম্মোহিত হয় তখন সে ঘুমন্ত না হলেও জাগ্রত থাকে না। এ ধরনের অবস্থায় তার পক্ষে আালামে বারযাখের কোনো না কোনো অংশে প্রবেশ করা সম্ভবপর হতে পারে এবং অতীতের কতক ঘটনাবলী তার কাছে ইলমে হুযূরী আকারে প্রকাশ পেতে পারে , আর সে ঐ অবস্থায় অন্যদেরকে তা বলে দিতে পারে। আর ঐ অবস্থায় যেহেতু সে আত্মবিস্মৃত থাকে সেহেতু সে যখন কোনো মৃত ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট অতীত ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করে তখন আত্মবিস্মৃতির কারণে অর্থাৎ নিজেকে না দেখা ও ঐ ব্যক্তিকে দেখার কারণে ভুলবশতঃ নিজেকে ঐ ব্যক্তি বলে মনে করতে পারে। জিনে ধরা বা ভর করা বা আছর করার প্রতিক্রিয়াও এ ধরনেরই ; জিনে ধরা ব্যক্তির মধ্যে জিন প্রবেশ করে না , বরং জিন তাকে সম্মোহিত করে এবং এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আত্মবিস্মৃত হয়ে নিজেকে জিন বলে মনে করতে পারে।

[সম্মোহিত বা ধ্যানমগ্ন না হয়েও কোনো ব্যক্তি আত্মবিস্মৃত হয়ে এরূপ মনে করতে পারে এবং তার ভিত্তিতে আচরণ করতে পারে। অত্র গ্রন্থকার কৈশোরে এ ধরনের দু টি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং দু টিই ছিলো যাত্রাভিনয় সংশ্লিষ্ট। উভয় ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট অভিনেতা (ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি) অভিনয়ে নিজেকে এতোই আত্মিনিবেদিত করে ফেলেছিলেন যে , নিজেকে সেই ব্যক্তি মনে করছিলেন যে চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন , ফলে অভিনয়ের সংশ্লিষ্ট অংশটুকু শেষ হওয়ার পরেও মূল চরিত্রের ন্যায় আচরণ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত , উভয় ক্ষেত্রেই অন্যরা সংশ্লিষ্ট অভিনেতাকে মঞ্চ থেকে নিয়ে যায় এবং একটি ক্ষেত্রে অভিনেতা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন।]