ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর দৃষ্টিতে মধ্যপন্থা ও অপচয়!
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তার পবিত্র হাতে এক মুষ্টি বালি তুলে নিলেন এবং তা শক্তভাবে মুঠোয় পুরে রাখলেন এবং তার থেকে একটুও বালি পড়ল না। ইমাম বললেন: একেই বলা হয় তাকতির বা কৃপণতা।
পবিত্র কোরআনের সূরা ইসরার ২৯ এবং ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে: "وَ لَا تجَْعَلْ یَدَکَ مَغْلُولَةً إِلىَ عُنُقِکَ وَ لَا تَبْسُطْهَا کلَُّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا محَّْسُورًا * إِنَّ رَبَّکَ یَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن یَشَاءُ وَ یَقْدِرُ إِنَّهُ کاَنَ بِعِبَادِهِ خَبِیرَا بَصِیرًا
তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে একবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না এবং তা সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত করে একবারে মুক্তহস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি নিন্দিত, নি:স্ব হয়ে বসে থাকবে। নিশ্চয়ই তোমার রব যার জন্য চান জীবনোপকরণ বাড়িয়ে দেন এবং তিনি তা সঙ্কুচিত করে দেন। তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত সর্বদ্রষ্টা।
মহান আল্লাহ এখানে উপমা তুলে ধরেছেন যে, তোমরা এত বেশী কৃপণতা করনা যাতে তোমার হাত থেকে কেউ কিছুই না পায়, আবার এত বেশী উদার হয়ো না যাতে তুমি নিজেই নি:স্ব হয়ে যাও।
সত্যিকারের মুসলিম, তৃতীয় পন্থাকেই বেছে নেয়
ইসলামে দানশীলতা এবং বদান্যতার গুরুত্ব খুবই বেশী। তবে এই মহান নৈতিক কাজের ক্ষেত্রেও নির্দষ্ট বিধান রয়েছে। একদিকে যেমন কৃপণদের মতো হওয়া যাবে না। যেভাবে তারা গোটা বিশ্বকে নিজের মনে করে এবং নিজের জিনিস থেকে সে এক চিলতে পরিমানও কাউকে দিতে নারাজ। অন্যদিকে আবার ঐ দানশীল লোকের মতোও হওয়া যাবে না যে তার সকল কিছুই দান করে দেয় এবং নিজের ও পরিবার পরিজনের জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখে না।
সুতরাং একজন সত্যিকারের মুসলমানকে কৃপণতা ও অপচয়ের পথ পরিহার করে মধ্যপন্থা তথা মৃতব্যয়ীতার পথ অবলম্বন করতে হবে। দানশীলতার পাশাপাশি তাকে তার নিজের ও পরিবার পরিজনের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনের সূরা ফুরকানের ৬৭ নং আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا
আর যখন তারা দান করে, তখন অপব্যয়ও করে না এবং কৃপণতাও করে না। বরং তাদের ব্যয় করা পন্থা মধ্যপন্থী হয়ে থাকে।
অপচয়, অর্থলিপ্সা ও সংযম সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদিক(আ.)-এর দৃষ্টিভঙ্গি
ইমাম জাফর সাদিক(আ.) وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا এই আয়াতটি তিলাওয়াত করার পর আমাদেরকে বাস্তবে তার অর্থকে বুঝিয়ে দিলেন। ইমাম সাদিক(আ.) এক মুষ্টি বালি নিলেন এবং তা শক্ত করে মুঠোর মধ্যে ধরে রাখলেন। আর তার থেকে কিছুই পড়ল না। অত:পর বললেন: এর নাম হচ্ছে তাকতির বা কৃপণতা। ইমাম(আ.) তারপর এক মুষ্টি কঙ্কর নিলেন এবং এমনভাবে ধরলেন যে তার হাত থেকে বস পড়ে গেল। তখন ইমাম সাদিক(আ.) বললেন: এর নাম হচ্ছে অপচয়। এরপর ইমাম আরও এক মুষ্টি বালি নিলেন এবং কিছু ফেরে দিয়ে বাকিটা ভালবাবে হাতের মধ্যে রাখলেন। তারপর বললেন: এর নাম হচ্ছে মধ্যপন্থা। (সূত্র:শাবিস্তান বার্তা সংস্থা)