হোসেন বধ
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী
দুরাত্মা শিমর পাপী সহসা যাইয়া
বসিলেক বক্ষে চাপি’। নয়ন উন্মীলি’
হেরিলা রাজর্ষিবর নির্ম্মম মূরতি,
শিমর বসেছে বক্ষে শিরচ্ছেদ তরে।
কাতরে কহিলা বীর; ‘‘ওরে রে শিমর!
আজি পূণ্য জুম্মাবার,মধ্যাহ্ণ-নমাজ
পড়িবার অবসর দে রে কিছুক্ষণ।
করিস নমাজ-শেষে মস্তক কর্ত্তন।’’
এতেক শুনিয়া পাপী উঠি’ দাড়াইল।
আনন্দে রাজর্ষিবর ভূমি হ’তে উঠি’
শোণিতে সমাপি’ অজু,পশ্চিমাভিমুখে
সাষ্ঠাঙ্গে বিভুর তরে করিতে প্রণতি
দুরাত্মা শিমর পাপী চক্ষের পলকে
হানিল প্রচণ্ড অসি শিরোধি-শরব্যে।
খণ্ডিত হইল শির-দিব্য জ্যোতিঃরাশি
সহসা বিজলী-তেজে শিখার আকারে
বাহিরিয়া দেহ হ’তে দূর অন্তরীক্ষে
নিমেষে মিলায়ে গেল। পাপাত্মা শিমর
সত্রাসে মূর্ছিত হ’য়ে পড়িল ধরায়।
খণ্ডিত হইল শির। কপিল ধরণী।
সহসা জলদ-জালে লুকাল তপন।
আধার হইল বিশ্ব। বিভু-সিংহাসন
কাপিলেক থরথর। নিদারুণ শোকে
প্রকৃতি ছাড়িল শ্বাস। উড়ি’ রজোরাশি
আধারিল দশ দিশি। গগনম-লে
সহস্র সহস্র উল্কা জ্বলিয়া উঠিল।
বহিল প্রবল বেগে উজানে ফোরাত
বিপ্লাবিয়া বেলাভূমি কল্লোলে সমুদ্র
গর্জিল ভীষণ শ্বাসে বিষম বিষাদে।
যাদঃগণ তটদেশে পড়িল আছাড়ি’।
মড়মড়ি’ তরুবাজি পড়িল ভাঙ্গিয়া।
বৃন্তচ্যুত হ’য়ে আহা! কুসুমনিকর
মহাশোকে ধরা-অঙ্গে পড়িল ‘বিথারি’।
বিহঙ্গ করুণ কণ্ঠে করি’ আর্তধ্বনি
পরিল অম্বরদেশ। যত পশু-যূথ
ছুটিল চীৎকারি’ ঘোর দিক-দিগন্তরে
‘‘হোসেন,হোসেন’’!রবে। প্রস্তর নিচয়
শতধা-বিভক্ত হ’য়ে কারবালা প্রান্তরে
ছুটিতে লাগিল শোকে (প্রতপ্ত খোলায়
লাজপুঞ্জ যথা,হায়! হয় বিস্ফুটিত) !
ব্যাকুল মানবকুল। অস্থির মেদিনী।
আকুল নির্জরবৃন্দ। স্বর্গ বিকম্পিত।
প্রলয়ের শিঙ্গা যেন বিশ্ব বিদারিয়া
সহসা উঠিল বাজি’ নাশিতে এ সৃষ্টি!
হা হোসেন! হা হোসেন! হায়! হায়!
প্রতি অণু-পরমাণু লাগিল ঘোষিতে। [মহাশিক্ষা কাব্য ]