আল হাসানাইন (আ.)

শহীদ কারবালা

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

ফররুখ আহমদ

উতারো সামান,দেখ সম্মুখে কারবালা মাঠ ঘোড় সোয়ার।

জ্বলে ধুধু বালু দোযখের মত,নাই সবজার চিহ্ন আর।

আকাশে বাতাসে কার হাহাকার? পান্থপাদপ লোহু সফেন,

আজ কারবালা ময়দানে মোরা দাঁড়ায়েছি এসে হায় হোসেন!

খুনের দরিয়া দেখেছি স্বপ্নে,কারবালা মাঠে দেখেছি খাব,

আহাজারি ওঠে দুনিয়া জাহান,ভাসে আসমানে কোটি বিলাপ;

হবে সয়লাব দুনিয়া জাহান-শান্ত মক্কা মুয়াজ্জমা;

জুলুমের তেগ হানবে জালিম পাবে না এখানে উদার ক্ষমা।

দিনান্ত ঝড়ে জুলুমাত-ম্লান শামিয়ানা টানে কোন বে-দীন?

কুফার দাওয়াত হয়েছে ব্যর্থ,দাড়াও এখানে সংগীহীন

দেখ এজিদের খঞ্জর ধার,শোন অগণন আর্তশ্বাস

দেখ সম্মুখে লানতের মত কারবালা মাঠ বিশ্বত্রাস।

উতারো সামান,দাড়াও সেনানী নির্ভীক-সিনা বাঘের মত।

আজ এজিদের কঠিন জুলুমে হয়েছে এ প্রাণ ওষ্ঠাগত,

কওমি ঝান্ডা ঢাকা পড়ে গেছে স্বৈরাচারের কালো ছায়ায়,

পাপের নিশানি রাজার নিশান জেগে ওঠে আজ নভঃনীলায়,

মুমিনের দিল জ্বলেছে বে-দিল জালিম পাপীর অত্যাচারে

নিহত শান্তি নিষ্কলংক শান্তিপ্রিয়ের রক্তধারে,

হেরার রশ্মি কেঁপে কেঁপে ওঠে ফারানের রবি অস্ত যায়!

কাঁদে মুখ ঢেকে মানবতা আজ পশু শক্তির রাজসভায়!

ওই শোন দূরে উষর মরুতে শত্রু সেনার পদধ্বনি,

নেজা তলোয়ার ঝলসিয়া ওঠে দূর মরুতটে উঠছে রণি

ফোরাতের তীরে ঘাঁটি পেতে করে এজিদ সৈন্য কুচকাওয়াজ

ইতারো সামান,মওতের মত এল কারবালা সামনে আজ।

ভীরু কাপুরুষ জীবন আকড়ি অন্তিম ক্ষণ করে স্মরণ;

বীর মুজাহিদ নির্ভীক বুকে করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন!

হোক দুশমন অগণন তবু হে সেনানী! আজ দাও হুকুম

মৃত্যু সাগরে ঝাপ দিয়ে মোরা ভাঙবো ক্লান্ত প্রাণের ঘুম!

হবে কারবালা মরু ময়দান শহীদ সেনার শয্যা শেষ

হে সিপাহ-সালার! জঙ্গী ইমাম আজ আমাদের দাও আদেশ!

বাজে রণ-বাজা,মাতে দুশমন কাপে শংকিত পৃথ্বীতল

দাও সাড়া দাও মুজাহিদ সেনা! সত্য পথের সাধকদল,

ফেরে চলো আজ দুশমন ব্যুহ বেহেশ্ত অথবা ফোরাত-তীরে

আসে অগণন শত্রু বাহিনী দিগন্ত-ধনু দুনিয়া ঘিরে!

হে ইমাম ! দেখ বিস্মিত রবি তোমার শৌর্য দেখছে আজ

তোমার দীপ্ত পৌরুষে স্লান শত্রু সেনার জরীন তাজ!

ভীরু বুজদিল পারেনা সইতে তোমার যুদ্ধ আমন্ত্রণ

তীর ছুড়ে ছুড়ে বহুদূর হতে শত্রু বাহিনী দেখায় রণ।

তৃষায় তোমার ছাতিফেটে যায়,কাদে তৃষাতুর শিশু ডেরায়,

নারীর কান্না শুনছো ইমাম ? ফোরাত এখনো রুদ্ধ হায়!

কারবালা মাঠ হল দিনান্তে মুজাহেদীনের শেষ কবর

ফোরাতের তীর রুদ্ধ এখনো ফোরাত জয়ের নাই খবর!

সূর্য এখনো নামেনি অস্তে তবু রাত্রির মরণ ছাপ,

নেভে তকদীরে আফতাব,নেভে মুজাহেদীনের প্রাণ প্রতাপ,

খিমার দুয়ারে আহাজারি ওঠে,কাদে শিশু-নারী মরুতৃষায়

ভরে হাহাকারে সাত আসমান অজানা রাতের ঘন ব্যথায়!

হে বীর! এখন চলেছ একাকী সকল সংগী হারায়ে,হায়

আহত সিংহ,ক্ষত তনুতটে ঝ’র্ছে রক্ত শত ধারায়।

এ কোন ক্লান্তি ঘিরেছে তোমাকে হে দিলীর শের,সংগীহীন।

ফোরাতের তীরে নিভে যায় রবি শেষ হয়ে আসে রক্ত দিন!

শত্রুর তীর বুকে এসে বিধে নাই ভ্রুক্ষেপ অসাবধানী!

দুধের বাচ্চা ম’রে গেছে চেয়ে পিয়াসের মুখে কাতরা পানি।

এক বছরের হাসিন শিশুকে তীর হানিয়াছে ভীরুর দল,

ভোলে এ শ্রান্তি ক্লান্ত সিংহ! জাগাও তোমার সুপ্তবল!

ঝাঞ্জারা সিনা তবুও সিংহ জয় করে নিল ফোরাত তীর,

আজলা ভরিয়া মুখে তুলে নিল ফোরাত নদীর শীতল নীর।

লাগেলো আবার তীরের আঘাত পানি ফেলে দিয়ে দাড়ালো বীর

হাহাকার করে উঠলো সভয়ে ফোরাত নদীর মুক্ত তীর।

বাজে রণ বাজা এজিদের দলে তলোয়ার তীর নেজার ছায়,

জাগে শংকার কাপন আকাশে,লাগে মৃত্যুর রং ধূলায়,

সে রণভূমিতে ক্লান্ত সিংহ চলে একা বীর মরণাহত;

ক্ষত তনু তার তীরের আঘাতে লুটালো বিশাল শিলার মত।

জীবন দিয়ে যে রাখলো বাচায়ে দীনি ইজ্জত বীর জাতির

দিন শেষে হায় কাটলো শত্রু সীমার সে মৃত বাঘের শির।

তীব্র ব্যাথায় ঢেকে ফেলে মুখ দিনের সূর্য অস্তা চলে,

ডাবে ইসলাম-রবি এজিদের আঘাতে অতল তিমির তলে,

কলিজা কাপায়ে কারবালা মাঠে ওঠে ক্রন্দন লোহ সফেন

ওঠে আসমান জমিনে মাতম;কাদে মানবতা :হায় হোসেন।।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)