মিরাজ
বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তাঁর মক্কী জীবনের শেষ দিকে, মতান্তরে হিজরতের তিন বছর আগে রজব মাসের ২৭ তারিখের রাতে তিনি জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে বোরাক নামক বাহনযোগে মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে রফরফ যোগে ঊর্ধ্বালোকে পরিভ্রমণের মাধ্যমে সৃষ্টির অনন্ত রহস্য অবলোকন এবং আল্লাহপাকের পরম সান্নিধ্য অর্জন করেন। এর পর বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরে এসে সব নবী-রাসূলের ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করে মক্কায় ফিরে আসেন। নবীজির (স.) মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের ভ্রমনকে 'ইসরা'এবং বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে উর্ধ্বালোকে ভ্রমনকে 'মিরাজ' বলা হয়। মিরাজ আরবি শব্দ, যার অর্থ অর্থগুলো হচ্ছে সিঁড়ি বা সোপান,ঊর্ধ্বে আরোহণ,ওপরে ওঠা। লাইলাতুল মিরাজ বা শবে মিরাজ বলতে আরোহণের রাত্রি বোঝায়। ইসলামিক পরিভাষায়,এটা সেই রাত্রি যখন হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় মসজিদুল হারাম থেকে জেরুসালেমের বায়তুল মোকাদ্দাসে যান এবং সেখান থেকে সপ্ত আসমান ভ্রমণ করেন ও আল্লাহর সন্নিকটে পৌঁছান।
কোরআন,হাদীস ও ইতিহাসের দৃষ্টিতে মিরাজ
রাত্রির অন্ধকার দিগন্তকে আচ্ছাদন করে রেখেছিল। চারিদিকে তখন বিরাজ করছিল নিস্তব্ধতা। সকল প্রাণী দিবসের ক্লান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়েছিল। তারা যেন প্রকৃতি-দর্শন হতে সীমিত সময়ের জন্য বিরত হয়ে পরবর্তী দিবসের কর্মব্যস্ততার জন্য শক্তি সঞ্চয় করছিল। স্বয়ং মহানবীও প্রকৃতিজগতের এ নিয়ম থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনিও তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের পর খেজুর পাতার বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলেন। হঠাৎ এক পরিচিত কণ্ঠস্বর তাঁর কানে ভেসে আসল। এ কণ্ঠ প্রত্যাদেশ বহনকারী ফেরেশতা জিবরাইলের। তিনি তাঁকে বললেন,“আজ রাতে আপনার সামনে এক দীর্ঘ সফর রয়েছে। আপনি ঊর্ধ্বগামীযান বোরাকে আরোহণ করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ করবেন। এ সফরে আমিও আপনার সহযাত্রী।”
মহানবী (সা.) তাঁর বোন উম্মে হানীর গৃহ হতে এ সফর শুরু করলেন। মহাশূন্যযান বোরাকে চেপে ফিলিস্তিনে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাসের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে মসজিদের নিকটবর্তী বিভিন্ন স্থান,যেমন ঈসা (আ.)-এর জন্মভূমি বেথেলহেম,অন্যান্য নবী-রাসূলের গৃহ ও স্মৃতিচিহ্নসমূহ পরিদর্শন করেন। কোন কোন স্থানে দু’রাকাত নামায পড়েন।
এরপর তাঁর দ্বিতীয় পর্যায়ের সফর শুরু হয়। এখান থেকেই ঊর্ধ্বজগতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তিনি গ্রহ-নক্ষত্র ও বিশ্বজগতের পরিচালনা ব্যবস্থা দেখেন,নবী ও ফেরেশতাদের সঙ্গে কথোপকথন করেন,আল্লাহর রহমত ও আযাবের প্রতিকৃতি (বেহেশত ও দোযখ) লক্ষ্য করেন। বেহেশতবাসী ও দোযখবাসীদের বিভিন্ন স্তর নিকট থেকে দেখেন। সর্বোপরি বিশ্বজগতের ব্যাপকতা,এর গুপ্ত রহস্য এবং মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতা সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত হন। অতঃপর তাঁর গন্তব্যের শেষ স্থান ‘সিদরাতুল মুনতাহা’য় পৌঁছেন এবং মহান আল্লাহর অসীমত্ব ও মহান মর্যাদাকে অনুভব করেন। এখানেই তাঁর ঊর্ধ্ব সফরের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরে একই পথে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে ফিরে আসেন। বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে মক্কায় ফেরার পথে কুরাইশ গোত্রের একটি কাফেলার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তারা তাদের উট হারিয়ে ফেলেছিল এবং রাতের অন্ধকারে খুঁজছিল। তিনি তাদের রক্ষিত পাত্র থেকে কিছু পানি পান করে অবশিষ্ট পানি মাটিতে ছড়িয়ে দেন এবং পাত্রটি পুনরায় ঢেকে রাখেন। সুবহে সাদিকের পূর্বেই তিনি উম্মে হানীর গৃহে ফিরে আসেন। এ রাতের ঘটনাটি তিনি উম্মে হানীকেই প্রথম বলেন। পরবর্তী দিন সকালে কুরাইশদের সমাবেশে তিনি তাঁর এ সফরের ঘটনা বর্ণনা করেন। তাঁর এ আশ্চর্য সফরের ঘটনা-যা ‘মিরাজ’নামে অভিহিত তা তাদের নিকট অসম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়,কিন্তু ঘটনাটি লোকমুখে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কুরাইশদের ক্ষোভের উদ্রেক করে।
কুরাইশগণ তাদের প্রাচীন অভ্যাস অনুযায়ী তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ও বলে,“এখানে অনেকেই আছে যারা বায়তুল মোকাদ্দাস দেখেছে। যদি তুমি সত্য বলে থাক তাহলে এর গঠন কাঠামোর বর্ণনা দাও।” তিনি শুধু বায়তুল মোকাদ্দাসের বৈশিষ্ট্যই বর্ণনা করলেন না,সে সাথে বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে যে সকল ঘটনা ঘটেছে তা বর্ণনা করে বললেন,“আমি ফেরার পথে অমুক স্থানে অমুক গোত্রের কাফেলার সাথে দেখা হয়েছিল যারা তাদের উট হারিয়ে ফেলেছিল এবং আমি তাদের রক্ষিত পাত্র থেকে পানি পান করে পাত্রটি পুনরায় ঢেকে রাখি। অন্য স্থানে একদল লোকের সঙ্গে দেখা হয় যাদের উট ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে গিয়ে সামনের পা ভেঙে ফেলেছিল।” কুরাইশরা খবর পেল একটি কাফেলা মক্কার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছেছে। একটি মেটে রঙের উট তাদের কাফেলার সম্মুখে রয়েছে। তারা রাগান্বিত হয়ে বলল,“তোমার কথার সত্যতা এখনই প্রমাণিত হবে।” কিছুক্ষণের মধ্যেই আবু সুফিয়ানসহ ঐ কাফেলার অগ্রগামী অংশ কাবা ঘরে পৌঁছল। তারা রাসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত ঘটনাকে সত্যায়ন করল।
মিরাজের কোরআনী ভিত্তি
রাসূল (সা.)-এর মিরাজ কোরআনের দু’টি সূরায় স্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন সূরায় এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আমরা এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে এরূপ একটি আয়াতের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা উপস্থাপন করছি। মহান আল্লাহ্ সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে বলেছেন,
)سبحان الّذي أسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام إلى المسجد الأقصا الّذي باركنا حوله لنريه من ءاياتنا إنّه هو السّميع البصير(
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি,যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।”(সূরা ইসরা : ১)
উপরিউক্ত আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বোঝা যায় :
১.মহানবী (সা.) যে মানবীয় ক্ষমতা দ্বারা এ সফর করেন নি,বরং ঐশী শক্তির সাহায্যে স্বল্প সময়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিলেন তা বুঝানোর জন্য আয়াতটি سبحان الّذي (সুবহানাল্লাযি) দ্বারা অর্থাৎ মহান আল্লাহর ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে পবিত্রতা ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয়েছে। শুধু তা-ই নয় মহান আল্লাহ্ এ যাত্রার উদ্গাতা হিসাবে নিজেকে উল্লেখ করে বলেছেন أسرى (আসরা) অর্থাৎ তিনিই এ পরিভ্রমণ করিয়েছেন যাতে কেউ মনে না করে যে,সাধারণভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে তা সম্পন্ন হয়েছে,বরং এ সফরটি মহান সত্তা ও প্রতিপালকের বিশেষ ক্ষমতায় সম্পাদিত হয়েছে।
২. এ সফরটি রাত্রিতে সম্পাদিত হয়েছিল। তাই ليلا (লাইলা) শব্দটির পাশাপাশি أسرى (আসরা) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা আরবগণ রাত্রিকালীন পরিভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে।
৩. যদিও এ সফরের শুরু আবু তালিবের কন্যা উম্মে হানীর গৃহ থেকে হয়েছিল তদুপরি এ যাত্রার শুরুটি মসজিদুল হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত আরবরা যেহেতু সমগ্র মক্কাকে ‘হারাম’ বলে অভিহিত করে থাকে সেহেতু সমগ্র মক্কাই মসজিদে হারামের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়েছে। সুতরাং তিনি মসজিদুল হারাম থেকে পরিভ্রমণ করিয়েছেন কথাটি সঠিক। অবশ্য কোন কোন হাদীসের বর্ণনায় মিরাজ মসজিদে হারাম থেকেই হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ আয়াতটিতে যদিও সফরের শুরু মসজিদে হারাম হতে এবং পরিসমাপ্তি মসজিদে আকসা উল্লেখ করা হয়েছে তদুপরি তা নবী (সা.)-এর ঊর্ধ্বজগতের পরিভ্রমণ সম্পর্কিত বর্ণনার পরিপন্থী নয়। কারণ এ আয়াতে এই পরিসীমার মধ্যে সফরের বর্ণনা থাকলেও সূরা নাজমের আয়াতসমূহে ঊর্ধ্বজগতের ভ্রমণের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
৪. মহানবী (সা.)-এর এ পরিভ্রমণ দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে হয়েছিল। কখনই তা শুধু আত্মিক ছিল না। এ কারণেই এ আয়াতেبعبده (বিআবদিহি) বলা হয়েছে যা দেহ ও আত্মার সমন্বিত রূপের প্রতি ইঙ্গিত করে। মিরাজ যদি শুধু আত্মিক হতো তবে আল্লাহ্ বলতেন بروحه (বিরূউহিহি)।
৫. এ মহাসফরের উদ্দেশ্য ছিল অস্তিত্বজগতের বিশালতা ও এর উল্লেখযোগ্য নিদর্শনসমূহ রাসূলকে দেখানো।
অন্য যে সূরাটি মিরাজের ঘটনাকে স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছে তা হলো সূরা আন্ নাজম। এ সূরার নিম্নোক্ত আয়াতটির শানে নুযূল হলো যখন নবী (সা.) কুরাইশদের বললেন,‘আমি প্রত্যাদেশ বহনকারী ফেরেশতাকে তাঁর প্রকৃত চেহারায় প্রথম ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় দেখেছিলাম’,তখন কুরাইশরা এ কথায় তাঁর সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়। কোরআন তাদের জবাবে বলে,
)أفتما رونه على ما يرى و لقد راه نزلة أخرى عند سدرة المنتهى عندها جنّة المأوى إذ يغشى السّدرة ما يغشى ما زاغ البصر و ما طغى لقد رأى من آيات ربّه الكبرى(
“রাসূল যা দেখেছেন তোমরা কেন সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বিতর্ক কর? তিনি আরেকবার তাঁকে (ফেরেশতা) দেখেছিলেন সিদরাতুল মুনতাহার নিকট যা সৎকর্মশীলদের জন্য নির্ধারিত বেহেশতের সন্নিকটে অবস্থিত। তখন সিদরাতুল মুনতাহাকে যা আচ্ছাদিত করার ছিল পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল। তাঁর দৃষ্টি কোন ভুল করে নি এবং কোনরূপ বিচ্যুতও হয় নি এবং তিনি তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনের কিয়দংশ প্রত্যক্ষ করেন।”
মিরাজ সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
মুফাসসির ও মুহাদ্দিসগণ রাসূল (সা.)-এর মিরাজ ও তাতে তিনি কি দেখেছেন সে সম্পর্কে প্রচুর হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর সবগুলোই অকাট্য ও নির্ভুল নয়। বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তাবারসী এ সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে চার ভাগে ভাগ করেছেন।১:
১. অকাট্য হাদীসসমূহ যাতে মিরাজ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি কিছু বিশেষত্বসহ বর্ণিত হয়েছে।
২. যে সকল রেওয়ায়েত সহীহ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে,তবে অকাট্য নয় এবং বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রজ্ঞার পরিপন্থীও নয়। যেমন ঊর্ধ্বাকাশে পরিভ্রমণ,বেহেশত-দোযখ দর্শন এবং নবিগণের আত্মার সঙ্গে কথোপকথন।
৩. ঐ সকল হাদীস যেগুলোর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণীয় নয়,তবে তা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। যেমন মিরাজের রাত্রিতে বেহেশতবাসী ও দোযখবাসীদের সঙ্গে নবী করীম (সা.)-এর কথোপকথন। একে ব্যাখ্যা করে বলতে হয় তিনি তাদের অভ্যন্তরীণ আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের প্রতিকৃতির সঙ্গে কথা বলেছেন।
৪. এ সম্পর্কে মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারীরা যে সকল জাল হাদীস তৈরি করেছে। যেমন কোন বর্ণনায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে,রাসূল (সা.) আল্লাহর পাশে গিয়ে বসেন এবং তাঁর কলমের খসখস শব্দ শুনতে পান।
মিরাজ কখন সংঘটিত হয়েছিল
যদিও মিরাজের ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক ও অলৌকিক ঘটনা হিসাবে স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল,তদুপরি এ বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। মতানৈক্যের অন্যতম বিষয় ছিল এ ঘটনার সময়কাল নিয়ে। ইসলামের দু’জন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক ও হিশাম এ ঘটনাটি নবুওয়াতের দশম বছরে সংঘটিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন। ঐতিহাসিক বায়হাকীর মতে এ ঘটনাটি নবুওয়াতের দ্বাদশ বর্ষে সংঘটিত হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ এ ঘটনাকে নবুওয়াতের প্রথম দিকের,আবার কেউ কেউ মাঝামাঝি সময়ের বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক ঐতিহাসিক এ মতগুলোকে সমন্বিত করার উদ্দেশ্যে রাসূল (সা.)-এর মিরাজ একাধিকবার সংঘটিত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়,যে মিরাজে প্রাত্যহিক নামাযসমূহ ফরজ করা হয় তা আবু তালিবের মৃত্যুর বছর অর্থাৎ নবুওয়াতের দশম বর্ষে সংঘটিত হয়েছিল। কারণ ইতিহাস ও হাদীস গ্রন্থসমূহ থেকে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে,মিরাজের রাত্রিতে নবীর উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়েছে। তদুপরি ইতিহাস হতে জানা যায় আবু তালিবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নামায ফরজ করা হয় নি। কারণ তাঁর মৃত্যুর সময় কুরাইশ প্রধানগণ তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রের সঙ্গে তাদের মীমাংসা করিয়ে দিতে বলে যাতে করে নবী (সা.) তাঁর দাওয়াতী কর্ম থেকে নিবৃত্ত হন। নবী (সা.) ঐ বৈঠকে কুরাইশ প্রধানদের উদ্দেশে বলেন,“আমি তোমাদের নিকট থেকে একটি জিনিসই শুধু চাই। আর তা হলো :
تقولون لا إله إلّا الله و تخلعون ما تعبدون من دونه
“তোমরা এ সাক্ষ্য দাও যে,আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং তিনি ব্যতীত অন্য কিছুর উপাসনা করা থেকে বিরত হও।”২
তিনি এখানে এ বিষয়ে তাদের মৌখিক স্বীকৃতি আদায়েরই চেষ্টা করেছেন এবং তা-ই যথেষ্ট মনে করেছেন। এটি তখনও নামায ফরজ না হওয়ার পক্ষে দলিল। কারণ শুধু এ ঈমান ব্যক্তির মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয় যদি নামাযের মতো অপরিহার্য কর্ম এর সঙ্গে যুক্ত না হয়ে থাকে। কিন্তু কেন রাসূল (সা.) নিজ নবুওয়াতের স্বীকৃতির বিষয় উপস্থাপন করেন নি? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় নবীর নির্দেশে আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি তাঁর রিসালাতের স্বীকৃতিও বটে। অর্থাৎ আল্লাহর একত্বকে স্বীকার করে নেয়া এ ক্ষেত্রে তাওহীদ ও রিসালাতকে এক সঙ্গে স্বীকার করে নেয়ারই শামিল।
তদুপরি ঐতিহাসিকগণ হিজরতের কিছু পূর্বে যে সকল ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে,যেমন তোফাইল ইবনে আমর দুসীর ইসলাম গ্রহণের ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) শুধু শাহাদাতাইনের শিক্ষাই তাদের দিয়েছেন-নামাজের বিষয়ে কিছু বলেন নি। মিরাজের ঘটনাটি যে হিজরতের কিছু দিন পূর্বে হয়েছিল এটি তার অন্যতম প্রমাণ।
যে সকল ব্যক্তি মিরাজ নবুওয়াতের দশম বর্ষের পূর্বে হয়েছিল বলেছেন তাঁরা সঠিক বলেন নি। কারণ রাসূল (সা.) নবুওয়াতের অষ্টম হতে দশম বর্ষে ‘শেবে আবি তালিব’-এ (আবু তালিবের উপত্যকায়) অবস্থান করছিলেন। তাই মুসলমানদের অবস্থা সে সময় বেশ সঙিন ছিল এবং নামাযের মতো গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। নবুওয়াতের অষ্টম বছরের পূর্বেও কুরাইশদের চাপে মুসলমানদের অবস্থা সংকটজনক ছিল এবং তাদের সংখ্যাও ছিল স্বল্প। যেহেতু তখনও ঈমানের আলো ও এর মৌল শিক্ষা লক্ষণীয় সংখ্যক ব্যক্তির মাঝে প্রস্ফুটিত হয় নি সেহেতু নামাযের বিষয়টি তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করত।
কোন কোন হাদীসে এসেছে যে হযরত আলী (আ.) হিজরতের তিন বছর পূর্ব হতেই রাসূলের সঙ্গে নামায পড়েছেন সেই নামায নির্দিষ্ট শর্তাধীন ও অপরিহার্য নামায ছিল না,বরং শর্তহীন বিশেষ নামায ছিল৩ ; সম্ভবত সেগুলো মুস্তাহাব নামায ছিল।
মিরাজ আত্মিক না কি দৈহিক ছিল?
মহানবী (সা.)-এর মিরাজের ধরন কি ছিল-দৈহিক না আত্মিক তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। যদিও কোরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহ স্পষ্টভাবে রাসূলের মিরাজ দৈহিক ছিল বলে উল্লেখ করেছে৪ তদুপরি সাধারণ লোকদের চিন্তাপ্রসূত যুক্তিসমূহ এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা সৃষ্টি করেছে ও এর ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়ে মিরাজ আত্মিকভাবে হয়েছে বলে মনে করেছে। তাদের মতে শুধু নবীর আত্মাই অন্য জগতে ভ্রমণ করেছে এবং পরিভ্রমণশেষে তাঁর দেহে ফিরে এসেছে। কেউ কেউ আবার আরো বাড়িয়ে বলেছেন,রাসূলের মিরাজ স্বপ্নযোগে হয়েছিল এবং তিনি স্বপ্নে এ পরিভ্রমণ সম্পন্ন করেছিলেন।
শেষোক্ত দৃষ্টিভঙ্গিটি সত্য থেকে এতটা দূরে যে,এটি একটি মত হিসাবে উল্লেখের যোগ্যতা রাখে না। কারণ নবীর মিরাজ দৈহিক ছিল বলেই কুরাইশগণ এ দীর্ঘ পথ এক রাত্রিতে পাড়ি দেয়া সম্ভব নয় ভেবেই নবীর দাবিতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল ও তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল। মিরাজের বিষয়টি দৈহিক হওয়ার কারণেই কুরাইশদের সভাসমূহে মুখে মুখে তা ঘুরছিল। যদি মিরাজ স্বপ্নযোগে হতো তাহলে কুরাইশরা তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে সচেষ্ট হতো না। যদি রাসূল (সা.) বলতেন যে,তিনি ঘুমের মধ্যে এমন স্বপ্ন দেখেছেন তাহলে তা বিতর্কের বিষয় হতো না। কারণ স্বপ্নে অনেক অসম্ভব বিষয়ও সম্ভব হয়ে থাকে এবং এতে বিতর্কের কিছু নেই। এরূপ ক্ষেত্রে বিষয়টিরও তেমন মূল্য থাকে না। তদুপরি আফসোসের বিষয় হলো কোন কোন মুসলিম মনীষী,যেমন মিশরীয় লেখক ফরিদ ওয়াজদী ও অন্যান্যরা এ মতকে গ্রহণ করে তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভিত্তিহীন সকল যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।৫
আত্মিক মিরাজ কী?
যে সকল ব্যক্তি দৈহিক মিরাজ সংঘটিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতাসমূহের জবাব দানে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা মিরাজ সম্পর্কিত আয়াত ও রেওয়ায়েতসমূহকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে মিরাজ আত্মিকভাবে হয়েছিল বলে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন।
আত্মিক মিরাজের অর্থ হলো আল্লাহর সৃষ্টিতে গভীর চিন্তা,তাঁর সৌন্দর্য ও শক্তিমত্তার স্মরণে মগ্ন হওয়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও বস্তুসংশ্লিষ্টতা থেকে মুক্ত হয়ে আত্মিকভাবে বিভিন্ন স্তর অতিক্রমের পর স্রষ্টার বিশেষ নৈকট্য লাভ-যা বর্ণনাতীত।
আত্মিক মিরাজের কথা বললেই আল্লাহর মহত্ত্ব ও তাঁর সৃষ্টিজগতের বিশালতার বিষয়ে চিন্তার মাধ্যমে উপরিউক্ত পর্যায়ে পৌঁছানো বুঝালে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে,এ মর্যাদা শুধু রাসূল (সা.)-এর জন্য নির্দিষ্ট নয়,বরং অধিকাংশ নবী এবং পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী আল্লাহর অনেক ওলীই তা অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা জানি মিরাজকে আল্লাহ্পাক রাসূলের একটি বিশেষত্ব বলে উল্লেখ করেছেন যা অন্যদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তা ছাড়া পূর্বোক্ত আত্মিক নৈকট্যের বিষয়টি নবী (সা.)-এর জন্য প্রতি রাত্রেই অর্জিত হতো৬,অথচ মিরাজের ঘটনাটি একটি বিশেষ রাত্রির সঙ্গে সম্পর্কিত।
যে বিষয়টি এ ব্যক্তিবর্গকে এরূপ চিন্তায় মগ্ন করেছে তা হলো গ্রীক জ্যোতির্বিদ টলেমীর তত্ত্ব যা দু’হাজার বছরের অধিক সময় ধরে প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে প্রতিষ্ঠিত ও বহুল প্রচারিত ছিল এবং এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তাঁর মতে বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত : পার্থিব ও ঊর্ধ্বজগৎ। পার্থিবজগৎ চারটি উপাদানে গঠিত : পানি,মাটি,বায়ু ও অগ্নি। প্রথম যে উপাদানের সমাহার আমাদের চোখে পড়ে তা হলো স্থলভাগ এবং এটি বিশ্বের কেন্দ্র। এর পরবর্তী স্তরে রয়েছে জলভাগ যা স্থলভাগকে ঘিরে রেখেছে এবং তৃতীয় স্তরে জলভাগকে ঘিরে রেখেছে বায়ুর স্তর। পার্থিব জগতের শেষ ও চতুর্থ স্তরে রয়েছে অগ্নির স্তর যা বায়ুজগতকে আবৃত করে রেখেছে। বায়ুজগৎ পার্থিবজগতের সর্বশেষ স্তর। এরপর থেকে ঊর্ধ্বজগতের শুরু। ঊর্ধ্বজগৎ নয়টি স্তরের সমন্বয়ে গঠিত এবং এ স্তরসমূহ পিঁয়াজের ন্যায় পরস্পর অবিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত। কোন বস্তুই এ স্তরসমূহ বিদীর্ণ করতে সক্ষম নয়। কারণ এতে সমগ্র ঊর্ধ্বজগতের উপাদানসমূহ বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে।
মিরাজ যদি দৈহিক হয়ে থাকে তাহলে এর অর্থ নবী (সা.) বিশ্বের কেন্দ্র থেকে সরাসরি ঊর্ধ্ব দিকে পার্থিবজগতের চারটি স্তর অতিক্রম করে ঊর্ধ্বজগতে পৌঁছেছেন এবং ঊর্ধ্বজগতের স্তরসমূহ একের পর এক ছিন্ন করে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। কিন্তু টলেমীর তত্ত্ব অনুসারে তা সম্ভব নয়। কারণ তাহলে সমগ্র ঊর্ধ্বজগতই ধ্বংস হয়ে যেত। এর ভিত্তিতেই তাঁরা মহানবী (সা.)-এর দৈহিক মিরাজকে অস্বীকার করে তা আত্মিক ছিল বলে ধরে নিয়েছেন।
উত্তর
উপরিউক্ত মতটি গ্রহণযোগ্য হতো যদি টলেমীর তত্ত্বটি আজও বিজ্ঞানশাস্ত্রে গ্রহণীয় একটি মতবাদ বলে পরিগণিত হতো। সে ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের এ ভ্রান্ত মতের ওপর নির্ভর করে কোরআনের এ মহাসত্যের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে ভিন্ন ব্যাখ্যার কথা ভাবতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে এ তত্ত্বটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের গ্রন্থে তা একটি তত্ত্ব হিসাবে শুধু লিপিবদ্ধই রয়েছে। বিশেষত বর্তমানে উদ্ভাবিত শক্তিশালী টেলিস্কোপ যন্ত্রসমূহ যখন সূক্ষ্মভাবে গ্রহ-নক্ষত্রসমূহকে পর্যবেক্ষণ করছে,অ্যাপোলো ও লুনার মতো মহাশূন্যযানসমূহ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছে,মঙ্গল,শনি প্রভৃতি গ্রহের তথ্য জানার জন্য ভয়েজারের মতো মহাশূন্যযান সৌরজগতে ঘুরে ফিরছে তখন এরূপ ভ্রান্ত তত্ত্বের পেছনে ছোটা অযৌক্তিক। তাই বর্তমানে টলেমীর কল্পনাপ্রসূত তত্ত্বের কোন মূল্য নেই।
শেখ আহমদ এহসায়ী (‘শাইখীয়া’৭ নামে প্রসিদ্ধ বাতিল ফের্কার নেতা) তাঁর ‘কাতিফিয়া’ নামক গ্রন্থে মিরাজের ভিন্ন এক ব্যাখ্যা উপস্থাপনের মাধ্যমে দৈহিক ও আত্মিক মিরাজে বিশ্বাসী ভিন্ন দু’দলকেই সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন,মহানবী (সা.) বারযাখীরূপে (অর্থাৎ ঘুমন্ত ব্যক্তি যেমন স্বপ্নে সকল কাজ করে থাকে সেরূপে) মিরাজ সম্পন্ন করেছেন। এতে তিনি মনে করেছেন যে,দৈহিক মিরাজের পক্ষাবলম্বনকারীদের যেমন সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন (যেহেতু মিরাজে নবীর দৈহিক উপস্থিতিও প্রমাণিত হয়েছে) তেমনি ঊর্ধ্বজগতে প্রবেশের অসুবিধাসমূহও দূরীভূত করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ বারযাখী দেহের ঊর্ধ্বজগৎ অতিক্রমের ফলে তা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।৮
কুসংস্কারমুক্ত ও সত্যান্বেষী ব্যক্তিগণ নিঃসন্দেহে স্বীকার করবেন এ মতটিও পূর্বোক্ত মতের ন্যায় (আত্মিকভাবে মিরাজ সংঘটিত হওয়া) ভিত্তিহীন ও কোরাআন-হাদীসের পরিপন্থী। কারণ মিরাজ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতটি যে কোন আরবী ভাষাবিদকে দিলে তিনি বলবেন,যেহেতু আয়াতটিতে عبد শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা মানুষের দেহে বিদ্যমান সকল উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত সত্তাকে বুঝায়। কখনই তা ‘হোরকুলায়ী’দেহ নয়। কারণ এমন নামের সত্তার সঙ্গে আরবরা পরিচিত ছিল না,অথচ তাদের বুঝানোর উদ্দেশ্যেই সূরা বনি ইসরাইলে عبد (আবদ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
যে বিষয়টি এ মতের প্রবক্তাকে এরূপ ধারণা পোষণে বাধ্য করেছে তা বিশ্বজগৎ সম্পর্কে প্রাচীন গ্রীক কল্পনাপ্রসূত উপসিদ্ধান্ত (Hypothesis) ব্যতীত অন্য কিছু নয়। বর্তমানে বিশ্বের সকল জ্যোতির্বিদই এ মতকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। তাই এমতাবস্থায় এ মতের অন্ধ অনুসরণ আমাদের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়। পূর্বে যদিও কেউ অজ্ঞতাবশত এ মতকে সমর্থন করে থাকেন বর্তমানে তা করা বুদ্ধিবৃত্তিক হবে না। কোনক্রমেই এমন উপসিদ্ধান্ত-যা বিজ্ঞানও অযৌক্তিক মনে করে তার ভিত্তিতে কোরআনের আয়াতকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা বৈধ নয়।
মিরাজ ও বিজ্ঞান
কেউ কেউ মনে করেছেন,বর্তমানের বিজ্ঞান ও এর তত্ত্বসমূহ রাসূল (সা.)-এর মিরাজের সঙ্গে সংগতিশীল নয়। কারণ :
১. বর্তমানের বিজ্ঞান বলে,ভূপৃষ্ঠ থেকে কোন বস্তুকে ঊর্ধ্বে যেতে হলে পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে অতিক্রম করতে হয়। যদি কোন বলকে ঊর্ধ্বে ছোড়া হয় তাহলে অভিকর্ষ বলের কারণে তা ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। বলকে যত জোরেই নিক্ষেপ করা হোক না কেন এরূপ হয়ে থাকে। যদি বল তার গতিকে ঊর্ধ্বদিকে অব্যাহত রাখতে চায় তবে তাকে অভিকর্ষ বল অতিক্রম করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে বলকে ২৫০০০ মাইল/ঘণ্টা গতিতে ছুঁড়তে হবে।
তাই মহানবী (সা.)-কে মিরাজে ঐ গতিতে যাত্রা করতে হয়েছে ফলে তাঁর দেহে ভরশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত এখানে প্রশ্ন আসে যে,তিনি কিরূপে কোন উপযোগী বাহন ব্যতিরেকে এ গতিতে যাত্রায় সক্ষম হলেন?
২. ভূমি হতে কয়েক কিলোমিটার ওপর হতে শ্বাস গ্রহণের উপযোগী বায়ু নেই। অর্থাৎ এর ঊর্ধ্বে যত ওপরে ওঠা হবে বায়ু ততই সূক্ষ্ম ও পাতলা হয়ে যাবে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস কার্য সম্পাদন সম্ভব নয়। আরো ঊর্ধ্বে একেবারেই বায়ুর অস্তিত্ব নেই। তাই নবীর ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণ অক্সিজেনের অভাবজনিত সমস্যার কারণে সম্ভব নয়।
৩. আকাশের সকল উল্কা ও ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছলে সকল কিছু ধ্বংস করে ফেলত। কিন্তু সেগুলো হয় ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে গোলাকার রূপ ধারণ করে ধরিত্রীর চারিদিকে ঘূর্ণায়মান থাকে নতুবা একটি স্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ স্তরটি ধরিত্রীর রক্ষক আবরণরূপে কাজ করে। রাসূল (সা.) এ স্তর ভেদ করে উল্কাপিণ্ড ও ক্ষতিকর রশ্মিসমূহ থেকে কিভাবে নিজেকে সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছেন?
৪. বায়ুচাপ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষ নির্দিষ্ট বায়ুচাপে জীবন ধারণে সক্ষম যা ঊর্ধ্বলোকে অনুপস্থিত।
৫. মহানবী (সা.)-এর ঊর্ধ্ব যাত্রার গতি নিঃসন্দেহে আলোর গতি অপেক্ষা বেশি ছিল। বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে কোন বস্তুই আলোর গতি৯ অপেক্ষা অধিক গতিসম্পন্ন হতে পারে না। তাই আলোর গতি থেকেও দ্রূতগতিতে যাত্রা করে নবী (সা.) কিরূপে জীবিত থাকতে পারেন?
উত্তর
যদি আমরা প্রাকৃতিক নিয়মকে সমস্যা বলে ধরি তবে এরূপ সমস্যার কোন সীমা নেই। আমরা এ প্রাকৃতিক নিয়মের বাধা দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছি? আমরা কি এ প্রাকৃতিক নিয়মকে অতিক্রমের বিষয়টিকে অসম্ভব বলে বিবেচনা করব এবং বলব যে,এ নিয়মসমূহের লঙ্ঘন সত্তাগতভাবে অসম্ভব। অবশ্যই না। কারণ বর্তমানের নভোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টিকে সম্ভব বলে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৫৭ সালে মহাশূন্যযান স্পুটনিক নিক্ষেপের মাধ্যমে অভিকর্ষ বলকে যে অতিক্রম করা সম্ভব তা প্রমাণিত হয়েছে। কৃত্রিম উপগ্রহ ও নভোযানে চড়ে মহাশূন্য পাড়ি দিয়ে মানুষ প্রমাণ করেছে মহাশূন্য পরিভ্রমণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিজ্ঞানের কল্যাণে দূর করা সম্ভব। মানুষ তার জ্ঞানের দ্বারা অক্সিজেনের শূন্যতা,ক্ষতিকর রশ্মি,বায়ুচাপ ও অন্যান্য সমস্যা দূরীভূত করতে সক্ষম। বর্তমানে নভোবিজ্ঞানের বিস্তৃতির ফলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন খুব শীঘ্রই তাঁরা সৌরজগতের অন্য গ্রহেও অবতরণ ও ভ্রমণ করতে পারবেন।১০
বিজ্ঞানের এ অভিযাত্রা প্রমাণ করেছে ঊর্ধ্ব যাত্রার বিষয়টি অসম্ভাব্যের পর্যায়ে পড়ে না। তবে যদি নবীর মিরাজ এরূপ বৈজ্ঞানিক উপকরণের অনুপস্থিতিতে কিরূপে সম্ভব হয়েছিল সে প্রশ্ন করা হয়,তাহলে উত্তরে আমরা বলব পূর্বে নবিগণের মুজিযা বিষয়ে,বিশেষত আবাবীল পাখির দ্বারা আবরাহার হস্তীবাহিনী ধ্বংসের আলোচনায় ঐশী সাহায্যে অলৌকিক ঘটনা সংঘটনের যে বিবরণ আমরা দিয়েছি তা হতে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে আশা করি। যে কাজগুলো মানুষ তার জ্ঞান দ্বারা উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদি দ্বারা সম্পাদন করে,নবিগণ তাঁদের প্রতিপালকের বিশেষ অনুগ্রহে বাহ্যিক উপকরণের সহযোগিতা ছাড়াই তা সম্পাদনে সক্ষম।
নবী (সা.) তাঁর প্রতিপালকের বিশেষ অনুগ্রহে মিরাজ সম্পন্ন করেছেন। মহান আল্লাহ্ সমগ্র অস্তিত্বজগতের অধিপতি এবং এ বিশ্বজগতের শৃঙ্খলা বিধানকারী। তিনিই এ পৃথিবীকে অভিকর্ষ বল দ্বারা সৃষ্টি করেছেন,বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহের বিন্যাস করেছেন এবং মহাশূন্যে বিভিন্ন রশ্মির বিকিরণ ঘটিয়েছেন। তাই তিনি যখন চান তখনই এগুলোর ক্রিয়াশক্তির বিলোপ সাধনে সক্ষম।
যখন মহানবী (সা.)-এর এ ঐতিহাসিক সফর স্রষ্টার বিশেষ অনুগ্রহের অধীনে সম্পন্ন হবে তখন তাঁর অসীম ক্ষমতার নিকট প্রাকৃতিক সকল নিয়ম আত্মসমর্পণ করবে এটিই স্বাভাবিক। কারণ এ সবই তাঁর ক্ষমতার অধীন। তাই তিনি তাঁর মনোনীত রাসূলকে পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বে নেয়ার উদ্দেশ্যে যদি পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে রহিত ও তাঁকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ক্ষতিকর উপাদানসমূহের ক্ষমতার অবলুপ্তি ঘটান তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। যে আল্লাহ্ অক্সিজেনের স্রষ্টা তিনি অক্সিজেনশূন্য স্তরে তাঁর প্রেরিত ব্যক্তির জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে কি সক্ষম নন? ‘আল্লাহ্ কারণের উদ্গাতা ও বিলোপ সাধনকারী’ কথাটির অর্থ এটিই।
প্রকৃতপক্ষে মিরাজের বিষয়টি প্রাকৃতিক নিয়ম ও মানুষের ক্ষমতার বহির্ভূত একটি বিষয়। আল্লাহর ক্ষমতাকে আমাদের যোগ্যতা ও ক্ষমতার মানদণ্ডে বিচার করা কখনই উচিত হবে না। যদি আমরা কোন মাধ্যম ছাড়া কাজ করতে অক্ষম হই তাহলে এটি মনে করা ভুল হবে যে,অসীম ক্ষমতাবান স্রষ্টাও প্রাকৃতিক মাধ্যমের সাহায্য ব্যতীত তা করতে অক্ষম হবেন।
মৃতকে জীবিত করা,লাঠিকে সাপে পরিণত করা,গভীর সমুদ্রের নিচে মাছের পেটে হযরত ইউনুস (আ.)-কে জীবিত রাখা প্রভৃতি বিষয়ের সত্যতা বিভিন্ন ঐশীগ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে এবং এগুলোর বাস্তবতাকে স্বীকার মিরাজের বাস্তবতাকে স্বীকার হতে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে কম কঠিন নয়।
মোটকথা,সকল প্রাকৃতিক নিয়ম (কারণসমূহ) এবং বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ মহান আল্লাহর ইচ্ছাশক্তি ও ক্ষমতার অধীন। তাঁর ইচ্ছাশক্তি কেবল সত্তাগত অসম্ভব বিষয়ের ওপর (বিষয়টির সত্তাগত অসম্ভাব্যতার কারণে) কার্যকর নয়। কিন্তু সত্তাগতভাবে সম্ভাব্য সকল বিষয়ের ওপর তাঁর ইচ্ছাশক্তি পূর্ণরূপে কার্যকর। সে ক্ষেত্রে মানুষের দ্বারা সেটি সম্ভব কি সম্ভব নয় তা আদৌ বিবেচ্য নয়।
অবশ্য এ বিষয়টিকে তারাই গ্রহণ করতে পারবে যারা আল্লাহকে তাঁর গুণাবলী থেকে যথার্থভাবে চিনতে পেরেছে এবং তাঁকে অসীম ক্ষমতাবান এক অস্তিত্ব হিসাবে মেনে নিয়েছে।
অস্তিত্বজগতের বিভিন্ন পর্যায়ে পরিভ্রমণের উদ্দেশ্য
এক ব্যক্তি ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.)-কে প্রশ্ন করে,“আল্লাহর জন্য কোন স্থান নির্দিষ্ট রয়েছে কি?” তিনি বললেন,“না।? সে বলল,“তবে কোন্ উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর রাসূলকে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করালেন?” তিনি বললেন,“আল্লাহ্ স্থান ও কালের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ্ মিরাজের মাধ্যমে চেয়েছেন ঊর্ধ্বজগতে তাঁর নবীর উপস্থিতির মাধ্যমে ফেরেশতা ও আকাশমণ্ডলীর অধিবাসীদের সম্মানিত করতে এবং তাঁর নবীকে বিশ্বজগতের ব্যাপকতা এবং তাঁর আশ্চর্য সৃষ্টিসমূহ-যা কোন চক্ষু কোন দিন অবলোকন করে নি ও কর্ণও কোন দিন শুনে নি তা দেখাতে যেন তিনি ফিরে এসে বিশ্ববাসীদের সে সম্পর্কে অবহিত করেন।”১১
অবশ্যই সর্বশেষ নবীর জন্য এমন মর্যাদাকর স্থানই নির্দিষ্ট। তিনি যেন বিংশ শতাব্দীর যে সকল ব্যক্তি চন্দ্র ও মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশে যাত্রা করছে তাদের লক্ষ্য করে বলছেন,“আমি কোন মাধ্যম ছাড়াই এরূপ যাত্রা করেছি এবং আমার প্রভু আমাকে বিশ্বজগতের পরিচালনা ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলা অবলোকন করিয়েছেন।”
(চিরভাস্বর মহানবী (সা.) গ্রন্থ থেকে সংকলিত)
তথ্যসূচী ও টিকা :
১. মাজমাউল বায়ান,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৯৫।
২. সীরাতে ইবনে হিশাম,২৭তম খণ্ড,পৃ. ২৭।
৩. এ বিষয়ে গবেষণার জন্য ওযু,নামায ও আযান সম্পর্কিত ‘কাফী’ হাদীস গ্রন্থের আলোচনাটি (৩য় খণ্ড,পৃ. ৪৮২-৪৮৯) দেখতে পারেন।
৪. বিশিষ্ট মুফাসসির ও ফকীহ শেখ তাবারসী তাঁর মাজমাউল বায়ানে (৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৯৫) মিরাজ দৈহিক ছিল বলে শিয়া আলেমদের মধ্যে মতৈক্য রয়েছে বলেছেন।
৫. দায়েরাতুল মা’রেফ,(عرج ধাতু) ৭ম খণ্ড,পৃ. ৩২৯।
৬. রাসূল (সা.) বলেছেন,إنّي لست كأحدكم إنّي أظل عند ربّي فيطعمني و يسقيني “আমি তোমাদের কারো মতো নই;আমি আমার প্রতিপালকের নিকট সর্বক্ষণ অবস্থান করি এবং তিনি আমাকে খাদ্য ও পানীয় দান করেন।”-ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া,৮ম খণ্ড,‘কিতাবুস্ সাওম’ ‘অবিচ্ছিন্ন রোযা নিষিদ্ধ’অধ্যায়,পৃ. ৩৮৮।
৭. ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম অবদান হচ্ছে এই যে,তা উপনিবেশবাদী আমলের সৃষ্ট পথভ্রষ্ট ধর্মীয় ফির্কা ও উপদলসমূহের মূল কর্তন করেছে এবং সকল মাজহাবকে ইসলাম ধর্মের মৌলিক ও খাঁটি পথের অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে,এ সব নব আবির্ভূত উপদলসমূহ আসলে সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক সৃষ্ট অথবা তাদেরই ইচ্ছার ফল। আর ইসলামী বিপ্লবের পূর্বের সরকার এ ধরনের সাম্প্রদায়িক বিভেদের উদ্গাতা ছিল। মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এ জন্য যে,(ঐ সব বিচ্যুত ও নব আবির্ভূত ফির্কাসমূহের) মূল কর্তিত হবার মাধ্যমে এগুলোর শাখা-প্রশাখাও কর্তিত হয়ে গেছে।
৮. শেখ আহমদ ‘কাতিফিয়া’গ্রন্থে-যা ৯২টি প্রবন্ধের সমন্বয়ে ‘জাওয়ামেয়ুল কালাম’নামে ১২৭৩ হিজরীতে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে বলেছেন,দেহ ঊর্ধ্বজগতে যাত্রার সময় প্রত্যেক স্তরের উপাদানকে সেখানেই ত্যাগ করে যায়। যেমন বায়ুকে বায়ুর স্তরে এবং অগ্নিকে অগ্নির স্তরে ত্যাগ করে এবং প্রত্যাবর্তনের সময় পুনরায় ঐ স্তর থেকে তা গ্রহণ করে। সুতরাং মহানবী (সা.) মিরাজের সময় তাঁর দেহের চারটি উপাদানকে তার সমস্তরে পরিত্যাগ করেন এবং এ চারটি উপাদানশূন্য দেহ নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করেছেন এবং এ চার উপাদানহীন দেহ বারযাখী দেহ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ দেহকে ‘হোরকুলিয়ায়ী’বলে অভিহিত করা হয়। শেখ আহমদ ‘শারহে যিয়ারত’গ্রন্থের ২৮-২৯ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট বলেছেন যে,নয় নভোমণ্ডল অতিক্রম করা সম্ভব নয়। এ উক্তি করা সত্ত্বেও তাঁর বিচ্যুতি গোপন রাখার জন্য তাঁর কতিপয় অনুসারী জোর দাবি করেছেন যে,তাঁদের নেতা মহানবী (সা.)-এর মিরাজকে ‘দৈহিক’বলে বিশ্বাস করেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি প্রসিদ্ধ অভিমতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।
৯. আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার।
১০. ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল বুধবার রুশ মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে মহাশূন্য ভ্রমণ করেন। তিনি ভূমি থেকে ৩০২ কিলোমিটার দূর দিয়ে পৃথিবীর চারিদিকে দেড় ঘণ্টা পরিভ্রমণ করেন। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে মার্কিন নভোখেয়াযান অ্যাপোলো-১১ তিনজন নভোচারী নিয়ে চাঁদে যাত্রা করে এবং দু’জন নভোচারী চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণে সক্ষম হন। যদি মানুষ এরূপ কর্মে সক্ষম হয়ে থাকে তবে তাদের সৃষ্টিকর্তা কি সে কর্মে সক্ষম নন?
১১. শিয়াদের সপ্তম ইমামও মিরাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুরূপ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,
إنّ الله لا يوصف بمكان و لا يجري عليه زمان و لكنّه عز و جل أراد أن يشرف به ملائكته سكان سماواته و يكرّمهم بمشاهدته و يريه من عجائب عظمته ما يخبر به بعد هبوطه
-তাফসীরে বুরহান,২য় খণ্ড,পৃ. ৪০০।