কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)- ৪র্থ পর্ব
আশুরার ঘটনাবলী, শহীদানের শাহাদতের দৃশ্যপট ইমাম পরিবারের তাবু লুটপাট
ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ ইমাম হোসাইনের (আ.) বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের উস্কানী দেয় । তাদেরকে সত্যের পথ থেকে ফিরিয়ে নেয়। তার সেনাবাহিনী এ ডাকে সাড়া দেয়। ওমর বিন সা’দকে পরকালীন জীবন, তুচ্ছ পার্থিব স্বার্থের বিনিময়ে খরিদ করে তাকে সেনা অধিনায়ক নিযুক্ত করে। ওমর এ প্রস্তাব গ্রহণ করে চার হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ইমাম হোসাইন (আ.) এর সাথে যুদ্ধের জন্য কুফা থেকে যাত্রা করে। ইবনে যিয়াদ একের পর এক সেনাদল পাঠাতে থাকে। ছয়ই মুহাররম রাত পর্যন্ত ইবনে সা’দের সেনাবাহিনীর সংখ্যা দাড়ায় বিশ হাজার। এ বাহিনী হযরত হোসাইন (আ.)এর গতিরোধ করে ইমাম বাহিনীর পানি বন্ধ করে দেয়।
কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ.) এর প্রথম ভাষণ
(কারবালার ময়দানে তৃষ্ণার্ত ইমাম বাহিনী এক দিকে-অপর দিকে ওমর বিন সা’দের বিশাল বাহিনী। এ অবস্থায় শত্রু সৈন্যদের উদ্দেশ্যে ইমাম তার তরবারীর উপর ভর দিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রথম যে ভাষণ প্রদান করেন তা নিম্নরূপ।)
أُنْشُدُكُمُ اللّه هلْ تعْرفُوننى ؟ قالُوا: أللّهُمّ نعمْ، أنْت ابْنُ رسُول اللّه وسبْطه.
খোদার কসম দিয়ে বলছি, তোমরা আমাকে চেন? তারা বললঃ হ্যাঁ, আপনি আওলাদে রাসূল এবং তারই নাতি। খোদার শপথ করে বলছি, তোমারা কি জানো আমার নানা ছিলেন রাসূলে খোদা (সা.)। তারা জবাব দেয়, হ্যাঁ খোদার কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি। তোমরা কি জানো আমার পিতা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। তারা বলল জ্বি, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ। আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি তোমরা কি জানো আমার মা জননী ফাতেমা যাহরা (আ.) ছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর কন্যা । সবাই বলল- খোদার কসম করেই বলছি তাই ঠিক। আল্লাহর শপথ করে বলছি তোমরা কি জানো আমার নানী ছিলেন খাদিজা বিনতে খোওয়াইলিদ (রা.) যিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম মহিলা। তারা জবাবে বলল-হ্যাঁ খোদার শপথ তাই ঠিক। ইমাম হোসাইন (আ.) বললেন আল্লাহর শপথ করে বলো-তোমরা কি জানো সাইয়্যেদুশ শোহাদা হামজা (রা.) ছিলেন আমার পিতার চাচা ? তারা বললঃ হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ। হযরত বললেন-আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি তোমরা কি জান জাফর তাইয়ার (রা.) ছিলেন আমার চাচা? তারা বললঃ জ্বি হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমরা জানি। ইমাম বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি-তোমরা কি জানো রাসূল (সা.) এর তরবারী মোবারক আমার হাতে রয়েছে তারা জবাবে বলল-হ্যাঁ আমরা জানি। হযরত (আ.) আবারো আল্লাহর শপথ করে বললেন-তোমরা কি জান আমার মাথার এ পাগড়ীটি মহানবী (সা.) এর পাগড়ী? তারা বলল, জ্বি হ্যাঁ, আমরা তা জানি। ইমাম (আ.)আবার আল্লাহর শপথ নিয়ে বললেন-তোমাদের কি জানা আছে আলী (আ.) প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং জ্ঞান ও ধৈর্যের ক্ষেত্রে অনন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন-তিনি ছিলেন নারী-পুরুষ সকলের মওলা(অভিভাবক)। তারা বললঃ জ্বি হ্যাঁ আমার জানি। ইমাম বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন, আল্লাহর শপথ-
قال فبم تسْتحلُّون دمى
তাহলে আমার রক্ত কি করে তোমরা হালাল মনে করছ? অথচ আমার পিতা হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন। কিয়ামত দিবসে লিওয়াউল হামদ (হামদের পতাকা) তার হাতেই থাকবে। তারা জবাব দিল-তুমি যা কিছু বলেছ আমরা সবই জানি কিন্তু-
ونحْنُ غيْرُ تارك يك حتّى تذُوق الْموْت عطْشانا!!!
“পিপাসায় প্রাণ ওষ্ঠগত হওয়া পর্যন্ত আমরা তোমাকে ছাড়বনা।”
হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর ভাষণ সমাপ্ত হচ্ছিল।তার কন্যাগণ ও বোন হযরত জয়নাব (আ.) ভাষণ শুনছিলেন আর বুকে হাত মেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন। তাদের কান্না ছির হৃদয় বিদারক। ইমাম (আ.) তার ভাই আব্বাস এবং ছেলে আলীকে তাদের কাছে পাঠিয়ে বললেন-মহিলাদেরকে সান্তনা দাও কেননা আমার জীবনের শপথ করে বলছি- এরপর ইবনে যিয়াদই কাদবে।
বর্ণনাকারী বলেন, ওমর বিন সা’দের নামে লেখা আব্দুল্লাহ বিন যিয়াদের পত্র পৌছে গেল । ঐ পত্রে তাকে উস্কানি দিয়ে বলা হয় দ্রুত যেন যুদ্ধ শুরু করা হয়। এ কাজে বিলম্ব না হয়। এ পত্র পাওয়া মাত্রই অশ্বারোহী সেনাদল ইমাম হোসাইন (আ.) এর তাবুর দিকে অগ্রসর হয়।
আব্বাস (রা.) নিরাপদঃ
শিমার তাবুর কাছে এসে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে این بنو اختی কোথায় আমার ভাগ্নেরা? কোথায় আমার ভাগ্নে আবদুল্লাহ, জাফর, আব্বাস ও উসমান ? হোসাইন (আ.) বললেনঃ শিমার ফাসেক হলেও তোমরা তার কথার জবাব দাও যেহেতু সে তোমাদের মামা। আব্বাস ও তার ভাই জবাব দিলেন-কি বলতে চাও? শিমার বললঃ হে আমার ভাগ্নেরা তোমরা নিরাপদ। তোমাদের ভাই হোসাইনের সাথে নিজেদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিওনা । আমীরুল মো’মেনীন ইয়াজিদের আনুগত্য কর ।
আব্বাস (আ.) বললেন-তোমর ধ্বংস হোক, আল্লাহর দুশমন। আমাদের জন্য কি মন্দ ও লজ্জাকর নিরাপত্তার কথা বলছ?
أتأْمُرْنا أنْ نتْرُك أخانا وسيّدنا الْحُسيْن بْن فاطمة وندْخُل فى طاعة اللُّعن أ أوْلاد اللُّعن أ.
আমাদেরকে ফাতেমা (আ.) এর সন্তান হোসাইন (আ.) এর সহযোগিতা ছেড়ে অভিশপ্তের সন্তান অভিশপ্তের আনুগত্য করতে বলছ?
এ জবাব শুনে শিমার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে তার সেনাবাহিনীর কাছে পিরে যায়।
ইবনে যিয়াদের বাহিনীর পক্ষ হতে অতি দ্রুত যুদ্ধ শুরুর তোড়জোড় এবং ইমামের ভাষণে তাদের মধ্যে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া না হওয়ায়-হযরত আব্বাস (রা.) কে ইমাম (আ.) বললেন-যদি পারো আজকে তাদেরকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখ। আজ রাতে নামাযের মধ্যেই কাটাবো। আল্লাহই ভাল জানেন আমি নামায পড়া ও কুরআন তিলাওয়াতকে কতই না ভাণবাসি । আব্বাস (রা.) এসে তাদেরকে যুদ্ধ না করার অনুরোধ জানালো । ওমর বিন সা’দ চুপ তাকল। মনে হচ্ছিল সে যুদ্ধ বিলম্বিত করতে আগ্রহী ছিল না।
আমর বিন হাজ্জাজ যুবাইদী বলল, খোদার কসম আমাদের প্রতিপক্ষ যদি তুর্কী বা দায়লমী হতো আর তারা এ দরখাস্ত করলে আমরা অবশ্যই গ্রহণ করতাম । অথচ এরা হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর আওলাদ । কি করে তদের প্রস্তাব নাকচ করতে পারি? অবশেষে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়ে যুদ্ধ বিলম্বিত হয়।
ইমাম হোসাইন (আ.)মাটিতে বসে পড়েন হটাৎ তার ঘুম এসে যায়। কিছুক্ষণ পরই ঘুম থেকে জেগে উঠেন । হযরত যয়নব (রা.) কে লক্ষ করে বলেন-প্রিয় বোনটি আমার! নানা রাসূলে খোদা (সা.), পিতা আলী (আ.), মা ফাতেমা (সা.আ.) ও ভাই হাসান (আ.) কে স্বপ্নে দেখেছি। আমাকে বলেছেনঃ ‘হে হোসাইন! অতিশীঘ্রই আমাদের সাতে মিলিত হবে।’ কোন কোন বর্ণনা মতে তারা বলেছিল-‘হে হোসাইন। (আ.) আগামীকালই আমাদের সাথে মিলিত হবে।” যয়নব (আ.) এ কথা শুনে মাথায় হাত চাপড়াতে চাপড়াতে চিৎকার দিয়ে কেদে উঠলেন। হোসাইন (আ.) বললেন, চিৎকার দিওনা, এমন কাজ করো না যাতে জনগণ আমার দুর্নাম করে ।
রাত এসে গেল। জীবনের সর্বশেষ রাত্রিতে হোসাইন (আ.) তার সাথী-সঙ্গীদের সমবেত করে মহান আল্লাহর প্রশংসার পর বললেনঃ
আমি আমার সাথী-সঙ্গীদের চেয়ে কোন সাথীকে অধিক নেককার এবং আমার আহলে বাইতের (আ.) চেয়ে কোন পরিবারকে অধিক উত্তম মনে করি না। মহান আল্লাহ তোমাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। এখন রাত, অন্ধকার সবকিছু ছেয়ে ফেলেছে। তোমরা এ রাতের অন্ধকারকে পথিকের উটের মতো মূল্য দাও। তোমরা সবাই আমার আহলে বাইতের এক একজনকে নিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে যাও । আমাকে শত্রু সেনাদের সামনে থাকতে দাও, কেননা তারা একমাত্র আমাকেই চায় ।
নাসেখুত তাওয়ারিখ গ্রন্থে ইমাম হোসাইন (আ.) এর বক্তব্যের বর্ণনা নিম্নরূপ।
ইমাম হোসাইন (আ.) তার বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন-“আমি তোমাদের নিকট হতে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) তুলে নিলাম । তোমার নিজের পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাও।” এরপর আহলে বাইত (আ.) এর উদ্দেশ্যে বলেন-“তোমাদেরকেও যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। এ বিশাল বাহিনীর মোকাবিলায় যুদ্ধ করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। কেনন্ প্রতিপক্ষ সংখ্যা ও সাজসরঞ্জামের দিক থেকে তোমাদের তুলনায় অনেক বেশী। তদের এ সেনাপরিচালনাও আমাকে হত্যা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা আমাকে এ সেনাবাহিনীর সামনে আবস্থান নিতে দাও। আল্লাহই সর্বাবস্থায় আমায় সাহায্য করবেন। তার রহমতের দৃষ্টি আমার উপর থেকে উঠিয়ে নেবেন না । যেমন আমার পূত পবিত্র পূর্ব পুরুষগণ থেকে তার দৃষ্টি তুলে নেননি। এ ভাষণের পর ইমাম বাহিনীর অনেকেই চলে যান। তবে তার আত্মীয়-স্বজনরা তার সাথেই থেকে যান। এক মনীষী এ প্রসঙ্গে কবিতার ভাষায় বলেন-
মুরুজুজ্জাহাব গ্রন্থের মতেঃ এ ভাষণের পর হোসাইন (আ.) এর বাহিনীর ১১শ লোকের মধ্যে তার পরিবারের ৭২ জন ছাড়া সবাই রাতের অন্ধকারে ইমামকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। হোসাইন (আ.) এর ভাই, সন্তান ও আবদুল্লাহ জাফরের সন্তানরা বলে উঠে-
ولم نفْعلُ ذلك لنبْقى بعْدك! لا أرانا اللّهُ ذلك أبدا
কেন আপনাকে ছেড়ে চলে যাব এটা কি আমাদের বেচে থাকার জন্য? মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কখনও এমন দিন যেন না দেন।
এ বক্তব্য প্রথমে উপস্থাপন করেন আব্বাস বিন আলী (আ.)এরপর আহলে বাইতের (আ.) সবাই তার কথায় সমর্থন দেন।
এপর হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) মুসলিম বিন আকিলের সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলেন-মুসলিমের শাহাদত তোমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে। আমি তোমাদের চলে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।
অন্য বর্ণনা মতে ইমামের ভাষণ শুনার পর আহলে বাইত সমস্বরে বলতে লাগল-
হে আওলাদে রাসূল, মানুষ আমাদের কি বলবে? আর আমরা জনগণকে জবাবই বা কি দেব? আমরা কি বলব আমাদের নেতা আমাদের বুযুর্গ এবং মহানবীর সন্তান (আ.)কে একা ফেরে এসেছি? তার সাহায্যার্থে দুশমনের দিকে একটি তীরও নিক্ষেপ করিনি।বর্শা কাজে লাগাইনি, তরবারী চালাইনি? খোদার কসম আপনাকে ছেড়ে যাব না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আপনার প্রতিরক্ষা করব, প্রয়োজনে আল্লাহর রাস্তায় আপনার সাথে শাহাদতের শরবত পান করব। আপনার শাহাদতের পর আমাদের বেছে থাকাকে আল্লাহ অকল্যাণজনক করুক।
এরপর মুসলিম বিন আজুসা দাঁড়ায়ে বললঃ হে আল্লাহর নবীর আওরাদ! দুশমনের এ বিশাল বেষ্টনীর মধ্যে আপনাকে ফেলে রেখে আমরা চলে যাব? খোদার কসম এ কাজ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ আপনার পর আমাদের জীবন নছীব না করুন।আমরা যুদ্ধ করব আপনার দুশমননের বুকে বর্শা ভেঙ্গে যাওয়া পর্যন্ত তরবারী চালাবো তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বো ।যদি কোন অস্ত্র না থাকে পাথর নিয়ে তাদের প্রতিহত করব। প্রয়োজনে জীবন বিলিয়ে দেব।তবুও আপনাকে ছেড়ে যাব না।
সাইদ বিন আব্দুল্লাহ হানাফী বললোঃ হে মহানবীর আওলাদ (আ.)! খোদার শপথ করে বলছি আপনাকে একা রেখে আমরা যাব না। আমরা আল্লাহর দরবারে প্রমাণ করব আপনার সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.) এর অসিয়ত রক্ষা করেছি। আপনার পথে যদি নিহত হই এরপর জীবিত হই এরপর জীবন্ত দগ্ধ হই আর তা যদি সত্তরবারও হয় আপনাকে ছেড়ে যাব না। আপনার মৃত্যুর আগেই নিজের মৃত্যুকে দেখতে চাই। আপনার পথে জীবন না বিলিয়ে কিভাবে থাকতে পারি? অথচ মৃত্যু তো জীবনে একবারই আসে। এ মৃত্যুর পরই চিরন্তন সম্মান ও সৌভাগ্য লাভ করবো।
এরপর যুহাইর বিন কেইন দাড়িয়ে বলল খোদার শপথ। হে মহানবীর আওলাদ (আ.) আপনি আপনার পরিবার পরিজনকে আল্লাহ জীবন্ত রাখার পরিবর্তে প্রয়োজনে হাজারবার নিহত হওয়া আবার জীবন্ত হওয়াকে আমি অধিক পছন্দ করি। ইমাম (আ.) এর সহযোগী একদল সমস্বরে বলে উঠে-
আমাদের জীবন আপনার জন্য উৎসর্গিত। আমার আমাদের জীবনের সবকিছুর বিনিময়ে আপনার প্রতিরক্ষা করব, এ পথে জীবন দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করব।
ঐ রাতেই মুহাম্মদ বিন বশির হাজরামীর কাছে এ সংবাদ পৌছে যে, তার ছেলে সেই সীমান্তে বন্দী হয়েছে। মুহাম্মদ বিন বশির বললেন-তার ব্যাপার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছি। আমার জীবনের শপথ আমার ছেলে বন্দী থাকুক এবং তারপরও আমি জীবিত থাকি এটা আমি মোটেই পচন্দ করি না। ইমাম হোসাইন (আ.) তার কথা শুনছিলেন। বললেন-“আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। আমি তোমার উপর থেকে আমার বাইয়াত তুলে নিচ্ছি। তুমি তোমার সন্তানের মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নাও।” জবাবে মুহাম্মদ বললঃ আপনাকে ছেড়ে গেলে হিংস্রপ্রাণী আমাকে জীবিত অবস্থায় টুকরা টুকরা করে খেয়ে ফেলুক। ইমাম (আ.) বললেন- এ ইয়ামেনী জামাগুলো তোমার ছেলেকে দাও যাতে তার ভাইয়ের মুক্তির জন্য কাজে লাগাতে পারে। এরপর এক হাজার দিনার মূল্যের পাঁচটি জামা তাকে দান করলেন।
বর্ণনাকারী বলেছেন-
ঐ রাতটি ইমাম (আ.) ও তার সঙ্গীদের মুনাজাত ও আহাজারীতে কাটে। একদল রুকু অপর দল সিজদা বা অন্যান্য ইবাদতে গোটা রাত কাটিয়ে দেয়। ঐ রাতে ওমর বিন সাদের বাহিনীর বত্রিশ জন ইমাম হোসাইন (আ.) এর সৈন্যদলে যোগ দেয়। অধিক নামায আদায় ও পূর্ণতার বিভিন্ন গুণে হযরত হোসাইন (আ.) এর চরিত্রই ছিল অনন্য । ইবনে আবদুল বার রচিত ইকদুল ফরিদ গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের বর্ণনামতে, আলী বিন হোসাইন (আ.)কে জিজ্ঞেস করা হয় “আপনার পিতার সন্তান এত কম কেন? তিনি বলেন-একটি সন্তানও বিস্ময়কর ব্যাপার। কেননা রাত দিনে তিনি হাজার রাকাআত নামায আদায় করতেন। এতে করে তার স্ত্রীর সাথে সময় কাটানোর ফুরসত ছিল না।
আশুরার দিন ভোরে ইমাম হোসাইন (আ.) তাবিুর ভিতরের অংশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দিলেন। আতর গোলাব ছিটালেন । বর্ণিত হয়েছে যে, বারির বিন খোজাইর হামাদানী এবং আবদুর রহমান বিন আবদে রাব্বিহী ইমাম হোসাইন (আ.) তাবু থেকে বের হবার পর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য তাবুর পশ্চাতে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বারির আব্দুর রহমানের সাথে হাসি ঠাট্টা শুরু করে।আব্দুর রহমান বলল,হে বারির তুমি হাসছো অথচ এখন হাসার বা হাস্যকর কথা বলার সময় নয়।
বারির বললঃ আমার সম্প্রদায়ের সবাই জানে আমি যৌবনে ও বার্ধক্যে কখনও অনর্থক কথা বলা পছন্দ করিনি। তবে শহীদ হতে যাচ্ছি এ আনন্দে আজকে এ হাস্যকর কথা বলছি। খোদার শপথ এ বাহিনীর মোকাবিলায় তরবারী চালানো এবং কিছুসময় তাদের সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই বাকী নেই। এরপরই তো বেহেশতী হুরের সান্নিধ্য পাব।
আশুরার দিন ভোরে
ওমর বিন সাদের অশ্বারোহী বাহিনী অগ্রসর হল। ইমাম হোসাইন (আ.) বারির বিন খুজাইরকে তাদের কাছে পাঠালেন। বারির তাদেরকে উপদেশ দিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু তারা বিন্দু মাত্র কর্ণপাত করেনি। এসব নছিহত তাদের মনে কোন প্রভাব ফেলেনি। এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) তার উটে মতান্তরে অশ্বে আরোহণ করে ওমর বিন সাদের বাহিনীর সামনে দাঁড়ালেন। তাদেরকে গভীর মনযোগ দিয়ে তার কথা শোনার আহবান জানালেন। তারা নিরবে শুনতে লাগলো। ইমাম হোসাইন (আ.) অত্যন্ত উচ্চাঙ্গের শব্দ ও বাক্য প্রয়োগ করে মহান আল্লাহর প্রমংসা এবং মুহাম্মদ (সা.) ফেরেশতাকুল ও সকল নবীদের উপর দরুদ পড়ার পর বললেন-
হে জনগোষ্ঠী! তোমাদের এজন্য ধ্বংস হোক যে, তোমরা জটিল পরিস্থিতিতে আমার সাহায্য চেয়েছো। আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছি।কিন্তু যে তরবারী আমার সাহায্যে পরিচালনার শপথ তোমরা নিয়েছিলে আজ আমাকে হত্যার জন্য সে তরবারী হাতে নিয়েছো। তোমরা যে আগুন আমাকে জ্বালানোর জন্য প্রজ্বলিত করছো আমি চেয়েছিলাম এ আগুন দিয়ে আমার ও তোমাদের দুশমনদেরকে জ্বালিয়ে দেবো। আজ তোমরা সবাই নিজের বন্ধুকে হত্যা আর দুশমনদের সাহায্যে ছুটে এসেছ। অথচ তারা তোমাদের মাঝে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেনি। তাদের সহযোগীতার ফলে তোমাদের আনন্দ বা অনুগ্রহ পাওয়ার কোন আশা নেই। তোমাদের জন্য আফসোস। কেন তোমরা ফেতনার আগুন জ্বালানোর জন্য পঙ্গপালের মত ঝাপিয়ে পড়েছ। পতঙ্গের মত পাগল হয়ে নিজেদেরকে আগুন নিক্ষেপ করছে।
হে সত্য বিরোধীরা, হে অমুসলিমের দল, হে কুরআনকে প্রত্যাখ্যানকারীরা, হে কথা বিকৃতিকারী, হে অপরাধীর দল, ওহে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত গোষ্ঠী, হে মহানবী (সা.) এর শরীয়ত ও সুন্নতকে স্তব্ধকারী আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত দল, এ অপবিত্র জনগোষ্ঠীকে সহযোগীতা করে আমাদের সহযোগীতা থেকে হাত গুটিয়েছো? হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ তোমাদের চরিত্রে প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র পূর্ব থেকেই ছিল। তোমাদের মূল ও শাখা-প্রশাখা এ প্রতারণায় সমানভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে। এ কুচিন্তা তোমাদের মাঝে বলিষ্ঠভাবে স্থান পেয়েছে। তোমরা সবচেয়ে নাপাক ফল যা নিজের দর্শককে কষ্ট দেয়। স্বল্প আহার যা ডাকাতরাই গিলে খেতে পারে।
ألا وإنّ الدّعيّ ابْن الّدعي قدْ ركز بيْن اثْنتيْن: بيْن السّلّة والذّلة وهيْهات منّا الذّلّةُ ي أبى اللّهُ لنا ذلك ورسُولُهُ والْمُؤْمنُون
জেনে রাখ,জারজের ছেরে জারজ (ইবনে যিয়াদ) আমাকে দু’বস্তুর এখতিয়ার দিয়েছে। নাঙ্গা তরবারী হাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবো না হয় অপমানের পোষাক-পরিধান করে ইয়াজিদের বাইয়াত মেনে নেবো। তবে অপমান আমাদের থেকে বহু দূরে। আল্লাহ তার রাসূল মুমিনগণ এবং পবিত্র ঘরে লালিত সন্তানরা ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও বীরত্বের প্রতীকগণ কখনও অপমানকে মেনে নেবে না। তারা ইজ্জতের উপর আঘাত হেনে এ ধরনের লোকদের আনুগত্য করার চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করে। জেনে রাখ যদিও আমার সঙ্গী কম তবুও আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব। ভাষণশেষে ফরওয়া বিন মুসাইক মুরাদীর কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্বৃত করলেন লাইন ক’টি ছিল-
আমরা যদি বিজয়ী হই আর দুশমন বিজিত হয় তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। কেননা আমরা সবসময় বিজয়ী ছিলাম। যদি পরাভূত বা নিহত হই আমাদের নিজেদের কারণে হব না এবং ভয়ভীতির পথে নিহত হব ন। বরং আমাদের মৃত্যুর সময় এসে গেছে এবং যুগের আবর্তনে বিজয়ের পালা অন্যের ভাগে পড়েছে। যদি মৃত্যুদূত এই জনগোষ্ঠীর দরজা থেকে সরে যায় তবে অন্য গোষ্ঠীকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে।
আমাদের সম্প্রদায়ের বুজর্গগণ তোমাদের হাতে ঐরুপ মৃত্যুবরণ করেছে যেরূপ যুগ যুগ ধরে মানুষ মৃত্যুর হাতে বলি হয়েচে। রাজা-বাদশাহরা যদি এ জগতে চিরস্থায়ী হতো আমরাও চিরস্থায়ী হতাম। যদি মহান ব্যক্তিগণ এ দুনিয়ায় বেচে থাকতেন আমরাও বেচে থাকতাম।
যারা আমাদের ভৎসনা করছে তাদেরকে বলে দাও নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো, অযথা ভৎসনা করো না। কেননা আমরা যে মৃত্যুর সম্মুখিন হয়েছি ভৎসনাকারীরাও একই মৃত্যুর সম্মুখিন হবে।
এ কবিতার চরণগুলো আবৃত্তির পর বললেন-আল্লাহর কসম আমার মৃত্যুর পর তোমরা বেশীদিন বাচতে পারবে না। তোমাদের জীবন কোন সওয়ারীতে আরোহণ এবং নেমে পড়ার অধিক সময় স্থায়ী হবে না। সময় যাতাকলের মত তোমার মাথার উপর চক্কর দিচ্ছে। আর তোমরা যাতাকলের মধ্যেপড়া গমের মত পিষে যাচ্ছ। আমার পিতা আলী (আ.) রাসূলে খোদা (সা.) থেকে যা শুনেছেন তাই তোমাদের সামনে ব্যক্ত করেছি।
فاجمعوا امرکم و شرکائکم ثم لا یکون امرکم علیکم غمّة ثم اقضوا الی و لا تنظرون ان توکلت علی الله ربی و ربکم.
এখন তোমরা তোমাদের মতামত ঠিক করো, বন্ধুদের সাথে মিলিত হও, পরামর্শ করো যাতে তোমাদের কাছে বিষয়টি অস্পষ্ট না থাকে। এরপর আমাকে হত্যার জন্য পদক্ষেপ নিও আমাকে সময় দিও না, আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছি যিনি আমার ও তোমাদের পালনকর্তা । সৃষ্টির সকল কাজের ক্ষমতা তারই হাতে।আর আমার পরওয়ারদিগার সর্বদা সঠিকভাবে অনড় অটল রয়েছেন।
এ ভাষণের পর ইমাম শত্রুপক্ষকে ভৎসনা করে বললেন-হে খোদা, তোমার রহমতের বারি এদের জন্য বন্ধ করে দাও। বছরের পর বছর এমন দুর্ভিক্ষ দাও, হযরত ইউসুফ (আ.) এর সময়কার মত দুর্ভিক্ষ দাও। সাকাফী গোলামকে তাদের উপর আধিপত্য দাও যাতে মৃত্যুর তিক্ত স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করাতে পারে।কেননা এরা আমার সাথে মিথ্যা বলেছে, প্রতারণা করেছে।
গোলঅম সাকাফী বলতে সম্ভবতঃ হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে বুঝিয়েছেন। তিনি ছিলেন সাকাফী গোত্রের লোক। আল্লামা মাজলিসী ও মুহাদ্দেস কোমীর মতে সাকাফী গোলাম বলতে মোখতার বিন আবি উবাইদা সাকাফীকে বুঝানো হয়েছে।–অনুবাদক।
তুমিই আমার পরওয়ারদিগার আমি তোমারই উপর তাওয়াক্কুল করেছি তোমারই দিকে মনোনিবেশ করেছি সবাই তোমারই দিকে ফিরে যাবে।
এরপর ঘোড়ার পিঠ থেকে নামলেন এবং রাসূলে খোদার মোরতাজা নামক ঘোড়াটি চাইলেন এবং নিজের সাথীদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন।
হযরত ইমাম বাকের (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হোসাইন (আ.)এর সাথীদের মধ্যে ৪৫জন ছিলেন অশ্বারোহী আর একশো জন ছিলেন পদাতিক। অন্যান্য বর্ণনাতেও এ সংখ্যার সমর্থন পাওয়া যায়।
ওমর সাদের মাধ্যমেই যুদ্ধ শুরু
বর্ণিত হয়েছে ওমর বিন সাদ সামনে অগ্রসর হয়ে হোসাইন (আ.) এর সঙ্গীদের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করল এবং বলল হে জনতা আমীরের কাছে সাক্ষী দিও আমিই প্রথম তীর নিক্ষেপ করেছি।এরপরই বৃষ্টির মত তীর ছুড়তে শুরু করে। হোসাইন (আ.) তার সাথীদের বললেনঃ
قُومُوا رحمكُمُ اللّهُ إلى الْموْت، إلى الْموْت الّذى لا بُدّ منْهُ، فإنّ هذه السّهامُ رسُلُ الْقوْم إليْكُم
আল্লাহ তোমাদের উপর রহমত করুন। ওঠো, মৃত্যুর জন্য, কেননা মৃত্যু থেকে বাচার উপায় নেই। এ তীরসমূহ এমন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিক্ষেপতি হচ্ছে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চায়।এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) এর সাথীরা দুটি অভিযান চালায় এবং দীর্ঘসময় পর্যন্ত যুদ্ধ চালায়। হোসাইন বাহিনীর অনেকেই শাহাদত বরণ করেন। এ সময় ইমাম হোসাইন (আ.) নিজের চেহারায় হাত বুলিয়ে বললেন-
ইহিুদী সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত তখনই গুরুতর হয়েছে যখন তারা আল্লাহর সন্তান আছে বলে ঘোষণা দিয়েছে এবং বলেছে-ওজাইর আল্লাহর পুত্র। আর নাসারাদের উপর তখনই গজব তীব্রতর হয়েছে যখন তারা আল্লাহকে তিন খোদার একজন হিসেবে স্থির করেছে।
অগ্নিপূজকদের উপর খোদায়ী অভিসম্পাত তখনই তীব্রতর হয়েছে যখন থেকে তারা আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে সূর্য ও চন্দ্রের পূজা শুরু করে।
আল্লাহর গজব ঐ জনগোষ্ঠীর উপর যারা সম্মিলিতভাবে মহানবী (সা.) এর নাতিকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। খোদার শপথ আমি এ জনগোষ্ঠির কথা শুননো না, ইয়াজিদের নামে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করব না, এতে যদি রক্তমাখা বদন নিয়েও আল্লাহর সাক্ষাৎ হয়।
আবু তাহের মুহাম্মদ বিন হোসাইন (আ.) তাবারসী তার বিরচিত মাআলেমুদ্দিন গ্রন্থে হযরত ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি আমার পিতার মুখে শুনেছি-“ইমাম হোসাইন (আ.) যখন ওমর বিন সাদের মুখোমুখি হন এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা তার সাহায্যার্থে আকাশ থেকে একদল ফেরেশতা পাঠালেন এবং তারা হযরতের (আ.) মাথার উপর উড়তে থাকে। ইমাম হোসাইন (আ.) স্বাধীনভাবে দুটির যে কোন একটি গ্রহণ করার সুযোগ পেলেন। হয় ফেরেশতাগণ তার সাহায্য করবে, এতে দুশমনরা ধ্বংস হবে । অথবা শহীদ হবেন এবং আল্লাহর দিদারে চলে যাবেন। ইমাম হোসাইন (আ.) আল্লাহর দিদারের পথ বেছে নেন।
এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন-
أما منْ مُغيثٍ يُغيثُنا لوجْه اللّه، أما منْ ذابٍّ يذُبُّ عنْ حرم رسُول اللّه
তোমাদের কেউ আছ কি যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাকে সাহায্য করবে? কেউ আছ কি দুশমনদেরকে রাসূলে খোদা (সা.) এর হেরেম থেকে দূরে সরাবে?
ইমাম হোসাইন (আ.) এর দিকে হোর ইবনে ইয়াজিদের আগমন
এ সময় হোর বিন ইয়াজিদ রিয়াহী ওমর বিন সাদকে লক্ষ্য করে বললেন-
اتقاتل هذا الرجل ؟
“হোসাইনের সাথে যুদ্ধ করতে চাও?” ওমর জবাব দেয়-
إيْ واللّه قتالاً أيْسرُهُ أنْ تطير الرُّؤُوسُ وتطيح الاْيْدي
হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ এমন যুদ্ধ করব যাতে সহজেই শরীর থেকে মাথাগুলো বিচ্ছিন্ন করা যায় আর হাতগুলো ধড় থেকে পৃথক করা যায়।
এ কথাগুলো শোনার পর হোর তার সাথীদের কাতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ সময় তার শরীর কাপছিল। মুহাজির বিন আউস বলল-হে হোর, তোমার আচরণ সন্দেহজনক। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কুফার মধ্যে সবচেয়ে বড় বীর কে? তোমাকে বাদ দিয়ে আমি অন্য কারো নাম নেব না, কেন কাপছো? হোর বলল, আল্লাহর কসম আমি নিজেকে বেহেশত ও দোজখের মাঝামাঝি দেখছি । তবে খোদার শপথ বেহেশত থেকে অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেব না। এতে যদি আামর শরীর টুকরা টুকরা হয় বা জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা হয়। এরপর হাক মেরে অশ্বের উপর সওয়ার হয়ে হোসাইন (আ.) এর দিকে অগ্রসর হন। দু’হাত মাথায় রেখে বলতে শুরু করেন-
أللّهُمّ إنّى تُبْتُ إليْك فتُبْ عليّ، فقدْ أرْعبْتُ قُلُوب أوْليائك و أوْلاد بنْت نبيّك
হে আল্লাহ! তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি আমার তওবা কবুল কর; আমি তো তোমার বন্ধুদের এবং তোমার নবী নন্দিনীর সন্তানদের ভয় দেখিয়েছি।
ইমাম হোসাইন (আ.) কে লক্ষ্য করে আরজ করলেন-“আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গীত। আমি তো সেই ব্যক্তি যে আপনার সাথে কঠোর ব্যবহার করেছে আপনাকে মদিনা যেতে দেয়নি। আমি ভাবতেই পারিনি এরা পরিস্থিতি এ পর্যায়ে নিয়ে আসবে। আমি তওবা করেছি, আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি। আমার তওবা কি গৃহীত হবে? ইমাম হোসাইন (আ.) বললেন “এসো, আল্লাহ তোমার তওব কবুল করবেন। নেমে এসো।”
হোর বলল, “নেমে আসার চেয়ে আপনার পথে আরোহণ অবস্থায় যুদ্ধ করা অনেক উত্তম বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত তো অশ্ব থেকে পড়ে যেতেই হবে। আমি যেহেতু প্রথম ব্যক্তি যে আপনার পথ রুদ্ধ করেছিলাম অনুমতি দিন আমিই প্রথম ব্যক্তি হতে চাই, যে আপনার পথে প্রথম শহীদ হবো। এমন ব্যক্তি হতে চাই কেয়ামত দিবসে আপনার নানা মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে করমর্দন (মুসাহাফা) করব।
লিখকের মতে, হোরের উদ্দেশ্য ছিল প্রথম অবস্থায় শাহাদত বরণ করা। কেননা এর পূর্বেও একটি দল নিহত হয়। বর্ণিত হয়েছে একদল লোকের শাহাদতের পরই ইমাম হোসাইন (আ.) তাকে যুদ্ধের অনুমতি দিলেন। হোর বীরের মত দুশমনের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। বেশ কিছুসংখ্যক বীরকে ধরাশায়ী করে নিজে শাহাদতের শরবত পান করেন। তার দেহ ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে আনা হল-ইমাম তার মুখমণ্ডল থেকে ধুলাবালি সরাচ্ছিলেন আর বলছিলেন-
أنْت الْحُرُّ - كما سمّتْك أُمُّك حُرّا- فى الدُّنْيا والاّْخرة
তুমি সত্যই হোর বা মুক্ত যেমন তোমার মা তোমার নাম রেখেছে হোর (মুক্ত) তুমি দুনিয়া ও আখেরাতেও মুক্ত।
বর্ণিত হয়েছে-এরপর বারির বিন খোজাইরের মত যাহেদ ও আবেদ ব্যক্তিত্ব ময়দানে অবতীর্ণ হলেন, ইয়াজিদ বিন মা’কাল তার সাথে যুদ্ধের জন্য ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ল। তারা দু’জন মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আগে আল্লাহর কাছে সত্যের পথ নির্ণয়ের জেদ ধরে কামনা করল-যে বাতিল সে যেন প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর বারির তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। কিছুক্ষণ পর তিনিও শাহাদত বরণ করেন।
তারপর ওহাব বিন জেনাহ কালবী ময়দানে সমর নৈপুণ্য প্রদর্শন করে কারবালায় অবস্থানরত মা ও স্ত্রী ও পরিবারের কাছে ফিরে আসলেন। মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মা জননী আামর উপর আপনি সন্তুষ্ট আছেন?
জবাবে মা বললেন-আমি তোমার উপর রাজী ও খুশী নই যতক্ষণ না তুমি হোসাইন (আ.) এর সাহায্যার্থে প্রাণ না দেবে।
তার স্ত্রী বলল-আমাকে বিপদে ফেলো না। আমার অন্তরে কষ্ট দিও না। তার মা বললেন প্রিয় ছেলেটি আামার-তার কথায় কান দিও না। নবী নন্দিনীর সন্তানদের পথে ফিরে যাও, যুদ্ধ করো। এতেই কিয়ামত দিবসে তার নানার শাফায়াতের সৌভাগ্য লাভ করবে। ওহাব ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করতে করতে দু’হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তার স্ত্রী তাবুর একটি স্তম্ভ হাতে নিয়ে তার সামনে এসে বলল-আমার মাতা-পিতা তোমার জন্য উৎসর্গিত। পবিত্র আহলে বাইত ও রাসূলে খোদা(সা.) এর সম্মানিত আওলাদগণের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করুন। ওহাব এসে তাকে নারীদের তাবুতে ফিরিয়ে নিতে চাইলেন। তার স্ত্রী স্বামীর দামান ধরে বলল-আমি মরে যেতে পারি তবুও ফিরে যাব না। ইমাম হোসাইন (আ.) বললেন-আমার আহলে বাইতের সাহায্যের জন্য আল্লাহ তোমাদের উত্তম পুরুস্কার দান করুন। (ওহাবের স্ত্রীকে বললেন) তুমি নারীদের তাবুতে ফিরে যাও, সে ফিরে যায় আর ওহাব দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শাহদত বরণ করে।
এরপর মুসলিম বিন আওসাজা ময়দানে এসে দুশমনের মোকাবিলায় প্রচণ্ড যুদ্ধ চালিয়ে অনেক দুশমনকে ঘায়েল করে ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন। মুমূর্ষ অবস্থায় দেখে ইমাম হোসাইন (আ.) বললেন-হে মুসলিম, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। এরপর কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করেন।
فمنْهُمْ منْ قضى نحْبهُ ومنْهُمُ منْ ينْتظرُ وما بدّلُوا تبْديلاً
তাদের কেউ শাহাদত বরণ করেন আর কেউ অপেক্ষায় আছেন আল্লাহ তার নেয়ামত কখনও পরিবর্তন করেন না।
হাবিব তার কাছে এসে বলল- তোমার মৃত্যু আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু তোমাকে ধন্যবাদ যে বেহেশতে চলে যাচ্ছ। মুসলিম খুব ক্ষীণ কন্ঠে বলল আল্লাহ তোমাকে সন্তুষ্ট রাখুন। সুসংবাদ দিন। হাবিব বলল-“যদি অন্য কোন অসুবিধা না হয় তাহলে আমার বিশ্বাস তোমার পরপরই আমি নিহত হব। আমাকে কিছু অসিয়ত করলে খুশী হব।” মুসলিম ইমাম হোসাইন (আ.) এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল আমার অসিয়ত হল এই মহান ব্যক্তির সাহায্যে এবং তারই পথে আমৃত্যু লড়াই করবে। হাবিব বলল তোমার অসিয়ত অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। এরপরেই মুসলিম শাহাদত বরণ করেন।
এবার আমর বনি কারতা আনসারী সামনে আসলেন । ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে যুদ্ধের অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র দুশমনের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন। ইমাম হোসাইনের (আ.) সমর্থনে যুদ্ধ করে ইবনে যিয়াদের বহু সৈন্য নিধন করলেন। কথার সত্যতা আর ভীরু কাপুরুষ বাহিনীর জিহাদের অবিচলতা প্রদর্শন করলেন সামনে। ইমাম হোসাইন (আ.) এর দিকে যে তীরটি এসেছে তার হাত দ্বারা সেগুলো ফিরাতে থাকে। তরবারীর যে আঘাতই এসেছে নিজে বুক পেতে নিয়েছেন। তার শরীরে যতক্ষণ পর্যন্ত শক্তি ছিল হোসাইন (আ.) এর পবিত্র বদনে কোন আঘাত আসতে দেননি। শেষ পর্যন্ত সারা শরীর আহত হয়ে ভূমিতে লুটে পড়েন।
ইমাম হোসাইন (আ.) কে লক্ষ্য করে বললেন-হে রাসূলের আওলাদ আমি কি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছি? ইমাম বললেন-হ্যাঁ তুমি আমাদের পূর্বেই বেহেশতে পৌছে যাবে। আমার সালাম রাসূলে খোদা (সা.)-কে পৌছাবে। আর বলবে ইমাম হোসাইন (আ.) একটু পরেই আপনার সান্নিধ্যে আসছে। আমর পুনরায় যুদ্ধ শুরু করে নিহত হন।
এবার কালো দাস ময়দানে
এরপরই কালো দাস আবুজর ইমাম হোসাইন (আ.)এর সামনে এসে দাড়ালে ইমাম বললেন- “আমি তোমাকে অনুমতি দিচ্ছি তুমি এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাও, নিজের জীবন রক্ষা করো কেননা তুমি আমাদের সাথে শান্তি ও কল্যাণের জন্যই এসেছ। নিজেকে হত্যার মুখে ঠেলে দিও না। আবুজর দৃঢ়চিত্তে বলল-হে মহানবীর আওলাদ আমি আনন্দ ও ভাল অবস্থায় আপনার সাথে থাকবো আর বিপদকালে আপনাকে ছেড়ে চলে যাব?
واللّه إنّ ريحى لمُنتْنٌ وإنّ حسبى للئيمٌ ولوْنى لاسْودُ
খোদার শপথ আমার গন্ধ অনেক খারাপ আমার বংশ নিম্নমানের আর আমার রং কালো, আপনি দয়া করে আমাকে একটু সুযোগ দিন। চিরশান্তিময় বেহেশতে পৌছে দিন যাতে আমি সুবাসিত হতে পারি, আমার বংশও উন্নত হয় এবং রঙও শুভ্র হয়। খোদার শপথ আপনাকে ছেড়ে যাব না। আমার কালো রক্তকে আপনার পবিত্র খুনের সাথে মিশিয়ে ফেলব। এপরপর যুদ্ধ করে শাহাদাতের শরবত পান করেন।
আমার বিন খালেদ সাইয়্যেদী ইমাম হোসাইন (আ.)এর সামনে এসে বলল-হে আবু আব্দুল্লাহ আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই আপনার সাথীদের সাথে মিলিত হব, আমি বেচে থাকব আর আপনাকে আহলে বাইত (আ.)-এর সামনে নিহত অবস্থায় দেখব এটা আমি মোটেও পছন্দ করব না। ইমাম হোসাইন (আ.) বললেন-যাও (জেহাদের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়) কিছু সময় পর আমিও পৌছে যাব। আমর দুশমনের উপর প্রচণ্ড হামলা চালিয়ে শাহাদাত বরণ করেন।
হানজালা বিন সা’দ শামী ইমাম হোসাইন (আ.) এর সামনে দাড়ালেন। ইমাম (আ.) এর দিকে নিক্ষেপিত তীর, বর্শা এবং তরবারীর আঘাত তার মুখে ও বুক পেতে নিলেন, যাতে ইমাম (আ.) এর গায়ে না লাগে। এরপর ইবনে যিয়াদের সেনাবাহিনীকে আল্লাহার আযাবের ভয় দেখিয়ে, ফেরআউনের কওমকে একজন মুমিন যেভাবে ভয় দেখিয়েছেন, সে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলেন-
يا قوْم إنّى أخافُ عليْكُمْ مثْل يوْم الاْحْزاب مثْل د أب قوْم نُوحٍ وعادٍ وثمُود والّذين منْ بعْدهمْ، وما اللّهُ يُريدُ ظُلْما للْعباد. ويا قوْم إنّى أخافُ عليْكُمْ مثْل يوْم التّناد، يوْم تولُّون مُدْبرين ما لكُمْ من اللّه منْ عاصمٍ
মুমিন ব্যক্তিটি বলল, হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরূপ দুর্দিনের আশংকা করি। যেমন ঘটেছিল নূহ, আদ, সামুদ এবং তাদের পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রে । আল্লাহ তো বান্দাদের প্রতি কোন জুলুম করতে চান না।
হে আমার কওম, আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি কিয়ামত দিবসের যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পালাতে চাইবে, আল্লাহ শাস্তি হতে তোমাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না।(সূরা গাফের, আয়াত নং-৩০-৩৩)
يا قوْم لا تقْتُلُ حُسيْنا فيسْحتُكُمُ اللّهُ بعذابٍ وقدْ خاب من افْترى
হে সম্প্রদায়! ইমাম হোসাইন (আ.)-কে হত্যা করো না। কেননা আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব অবতীর্ণ করে তোমাদের ধ্বংস করে দেবে। যে কেউ মহান আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবে সে অবশ্যই ধ্বংসপ্রাপ্ত ।
এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) এর প্রতি মুখ করে বললেন-আমার পরওয়ারদিগারের কাছে কি আমি যেতে পারব না। আমার ভাইদের সাথে মিলিত হতে পারব না? ইমাম বললেন, হ্যাঁ, যাও ঐ দিকে যাও দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছু থেকে উত্তম; যাও এমন বাদশাহীর দিকে যা চিরন্তন-অক্ষয়। হানজালা শত্রুদের সাথে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত হলেন। বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করার পর শাহাদত বরণ করেছেন।
জোহরের নামাযের সময় ইমাম হোসাইন (আ.) যুহাইর বিন কাইন ও সাঈদ বিন আব্দুল্লাহর মাধ্যমে-যারা সারিবদ্ধ হয়নি তার সামনে সারিবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইমাম হোসাইন (আ.) তার সাথীদের নিয়ে সালাতুল খাওফ (ভয়ের নামায) পড়ছিলেন । এ সময় ইমাম হোসাইন (আ.) এর দিকে শত্রুপক্ষ একটি তীর নিক্ষেপ করল। সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ অগ্রসর হয়ে ইমাম (আ.) এর সামনে দাঁড়ালেন। দুশমনের পক্ষ থেকে আগত সকল তীর তিনি বুক পেতে নিলেন। তীরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। আর বলছিলেন-হে খোদা! এ সম্প্রদায়ের উপর অভিশাপ দাও যেমন আভসম্পাত করেছে আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের উপর। আমার সালাম মহানবীর দরবারে পৌছে দাও, আমার ক্ষতবিক্ষত বদনের যখম সম্পর্কে তাকে অবহিত করো। কেননা তোমার নবী (সা.) এর আওলাদগণের সাহায্যে আমার উদ্দেশ্যই ছিল তোমার পূর্ণ প্রতিদান লাভ করা। এসব মনের আকুতি ব্যক্ত করতে করতে তিনি শহীদ হলেন। তার শাহাদতের পর তার শরীরে তরবারী ও বর্শার অসংখ্য আঘাত ছাড়াও ত্রিশটি তীর বিদ্ধ অবস্থায় পরিলক্ষিত হয়।
তারপরই খান্দানী ও অধিক নামায আদায়কারী ব্যক্তিত্ব সুদেয় বিন আমর বিন আবি মোতা’ অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন। তীব্র লড়াইয়ের চরম ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখান। তিনি চতুর্মুখী আক্রমণে ধরাশায়ী হয়ে পড়েন। নড়াচড়ার ক্ষমতাও রহিত হয়। হটাৎ শুনতে পেলেন ইবনে যিয়াদের বাহিনী বলছে বংশধরকে-হোসাইন নিহত হয়েছেন। এ কথা কানে আসামাত্র অজ্ঞান অবস্থায় নিজের জুতার ভেতর থেকে একটি ছোরা বের করে তুমুল লড়াই করার পর শাহাদাত বরণ করেন।
বর্ণনাকারী বলেন-ইমাম হোসাইন (আ.) এর সঙ্গী-সাথীরা তার সাহায্যে প্রাণ দেয়ার কাজে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। যেমন কবি বলেন-
ইমাম হোসাইন (আ.) এর সাথীরা এমন বীর পুরুষ তাদেরকে যখন বিপদ উত্তরণের জন্য আহ্বান করা হয় অথচ দুশমনের দল তীর বর্শা বা তরবারী নিয়ে সম্মিলিত আক্রমণ চালায়-তখন তারা বীরত্বের বর্ম পরিধান করে নিজেদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে কুন্ঠিত হয় না।#আল হাসানাইন