আল হাসানাইন (আ.)

কারবালা ও ইমাম হোসাইন (আ.)-৬ষ্ঠ পর্ব

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

কুফা ও সিরিয়ার উদ্দেশ্যে নবী বংশের বন্দীদের যাত্রা

উমর ইবনে সা’দ ইমাম হোসাইন (আ.) এর পবিত্র মাথা খওলা ইবনে ইয়াযীদ আসহাবী এবং হামীদ ইবনে মুসলিম আযদীর মাধ্যমে আশুরার দিন বিকেল বেলা ইবনে যিয়াদের কাছে প্রেরণ করে। এরপর উমর ইবনে সা’দের আদেশে ইমাম হোসাইন (আ.) এর সঙ্গী-সাথী ও বনী হাশিমের নিহত যুবকদের লাশের মাথা কেটে শিমার ইবনে জুল জওশন, কায়স ইবনে আশ্আস্ এবং আমর বিন হাজ্জাজের কাছে কুফায় পাঠানো হয়। ঐ সব কর্তিত মাথা ইবনে যিয়াদের কাছে আনা হয়। উমর ইবনে সা’দ আশুরার দিন এবং পরের দিন (১১ মুহররম) দুপুর পর্যন্ত কারবালায় থেকে গেল। তারপর সে ইমাম পরিবারের বন্দী সদস্যদের নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হল। ইমাম পরিবারের মহিলাদেরকে শত্রু পরিবেষ্টিত অবস্থায় খোলা মাথায় এবং হাওদা বিহীন উঠের উপর বসান হয়েছিল। অথচ এ সব পূণ্যবতী মহিলা ছিলেন মহান নবীর পবিত্র আমানত। আর তাদেরকেই তুর্কী ও রোমের যুদ্ধবন্দীদের মত সবচেয়ে কঠিন দুরবস্থা, শোক ও বেদনার মধ্য দিয়ে বন্দীত্বের শিকল পড়ানো হয়েছিল।

কবি এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ

হাশেমী বংশোদ্ভূত নবীর (সা.) উপর তারা (নবী বংশের হত্যাকারীরা) দরুদ ও সালাম পাঠ করে। আর তারাই তার (সা.) বংশধরদের সাথে যুদ্ধ করে। সত্যিই এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক।

যারা হোসাইনকে (আ.) শহীদ করেছে তারা কি করে কিয়ামত দিবসে তার মাতামহের (সা.) শাফায়াতের প্রত্যাশা করে ?

বর্ণিত আছে যে, ইমাম হোসাইন (আ.)এর সঙ্গী-সাথীদের কর্তিত মাথার সংখ্যা ছিল ৭৮। আর যে সব গোত্র কারবালায় ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তারা ইবনে যিয়াদ ও ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করার জন্য ঐসব কর্তিত মাথা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিল। কায়স ইবনে আশআসের নেতৃত্বে কিন্দা গোত্র ১৩ টি মাথা, শিমার ইবনে জুল জওশনের নেতৃত্বে হাওয়াযিন গোত্র ১২টি মাথা, বনী তামীম গোত্র ১৭ টি মাথা, বনী আসাদ গোত্র ১৬টি মাথা, বনী মুযহাজ গোত্র ৭ টি মাথা এবং আরো অন্যান্য গোত্র ১৩ টি মাথা কুফায় নিয়ে আসে।

শহীদদের দাফন এবং কুফায় বন্দী আগমন

রাবী থেকে বর্ণিতঃ উমর ইবনে সাদ কারবালা থেকে বেরিয়ে গেলেই বনী আসাদ গোত্রের একদল ব্যক্তি কারবালায় এসে শহীদদের জানাযার নামায পড়ে এবং যে স্থানগুলো এখন শহীদদের কবর হিসেবে প্রসিদ্ধ সেখানেই তারা শহীদদের লাশগুলো দাফন করে। ইবনে সা’দ বন্দী নবী পরিবারের সাথে আগমন করে। আর তারা কুফার নিকটবর্তী হওয়া মাত্রই কুফাবাসীরা তাদেরকে দেখার জন্য সেখানে সমবেত হয়। কুফা নগরীর এক মহিলা ছাদ থেকে উচ্চঃস্বরে জিজ্ঞেস করলঃ তোমরা কোন দেশের বন্দী রমণী? নবী পরিবারের বন্দী রমণীগণ তাকে বললেনঃ আমরা নবী পরিবারের বন্দী রমণী। ঐ মহিলা ছাদ থেকে নেমে এসে ঘর থেকে পোশাক পরিচ্ছদ, মাথার চাদর ওড়না এনে তাদেরকে দিল । অসুস্থ, কৃশকায় এবং শোকাভিভূত আলী ইবনুল হোসাইন (আ.) এবং ইমাম হাসান (আ.)এর পুত্র দ্বিতীয় হাসান যিনি পিতৃব্য ইমাম হোসাইন (আ.) কে সাহায্যার্থে কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আহত হয়েছিলেন তিনিও যুদ্ধ বন্দীদের মাঝে ছিলেন। মাসাবিহ গ্রন্থের লেখক বর্ণনা করেছেনঃ ইমাম হাসান (আ.) এর পুত্র দ্বিতীয় হাসান শত্রুপক্ষের ১৭ জনকে হত্যা করেন এবং তার দেহ আঠারো বার জখম হলে তিনি অশ্ব পৃষ্ঠ থেকে পড়ে যান। তার মামা আসমা বিন খারেজাহ তাকে মাটি থেকে তুলে কুফায় নিয়ে চিকিৎসা করেন। সুস্থ হয়ে গেলে দ্বিতীয় হাসান মদীনায় ফিরে আসেন। যায়দ এবং আমরের বন্দীদের মধ্যে ইমাম হাসান মুজতাবার সন্তানগণও ছিলেন। এরপর কুফাবাসীরা কান্না কাটির উদ্যোগ নিলে ইমাম আলী ইবনুল হোসাইন (আ.) তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন।

“তোমরা আমাদের জন্য কাদতে চাও ? তাহলে কে আমাদেরকে হত্যা করেছে ”

হযরত যয়নাবের (আ.) ভাষণ

বশীর বিন হাযীম আল-আসাদী থেকে বর্ণিত খোদার শপথ, আমি আমীরুল মুমেনীন হযরত আলীর (আ.) কন্যা হযরত যয়নাবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা রমণীকে আর দেখিনি। যেন তার কন্ঠ দিয়ে হযরত আলী (আ.) এর বাণীগুলো নিঃসৃত হচ্ছিল।

তিনি উপস্থিত জনতাকে নীরবতা অবলম্বন করতে বললে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ যেন স্তিমিত হয়ে গেল। এমন কি উটের ঘন্টাধ্বনিও আর শোনা গেল না। এরপর হযরত যয়নাব (আ.) নিম্নোক্ত ভাষণ দিলেন,

মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তার পবিত্র বংশধরদের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করার পর তিনি বললেন, “হে কুফাবাসীরা হে প্রতারক ও চক্রান্তকারীরা, তোমরা কি এখন আমাদের জন্য কাদছ ? এখনো আমাদের নয়ন অশ্রু দ্বারা সিক্ত, এখনো আমাদের কান্না থামেনি। তোমরা ঐ রমণীর ন্যায় যে সূতা দিয়ে সুন্দর করে কাপড় বোনার পর আবার সেই কাপড় থেকে সূতাগুলো আলাদা করে ফেলে। তোমরা তোমাদের ঈমানের রজ্জুকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছ। আত্মপ্রশংসা, বিশৃংখলা এবং দাসীদের মত হিংসা দ্বেষ, চাটুকারিতা এবং উপেক্ষা করার মত দোষ ছাড়া আর কোন ভাল গুনই তোমাদের নেই। তেমার পচা আবর্জনার ভেতরে জন্মানো উদ্ভিদের ন্যায়, যা খাওয়ার অযোগ্য।

আর তোমারা সৌন্দর্য বিবর্জিত ও অব্যাবহার্য রূপার মত। তোমরা পরকালের জন্য কত মন্দ পাথেয়ই না সংগ্রহ করেছ যার ফলে তোমরা খোদার রোষানলে আপতিত হয়েছ এবং তোমাদের জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থ্ করা হয়েছে। আমাদেরকে হত্যা করার পর কি তোমরা আমাদের জন্য অশ্রু বিসর্জন করছো এবং নিজেদেরকে ধিক্কার দিচ্ছো ? খোদার শপথ তোমরা বেশী বেশী কাদবে এবং কম হাসবে। নিশ্চয় তোমরাইতো নিজেদেরকে কালের কলংকে কলংকিত ও কলুষিত করেছ যা থেকে তোমরা কখনো পরিত্রাণ পাবেনা। বেহেশতের যুবকদের নেতা নবী দৌহিত্র যিনি ছিলেন যুদ্ধ ও সংকটজনক পরিস্থিতিতে তোমাদের আশ্রয়স্থল, যিনি ছিলেন শত্রুদের মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তোমাদের নেতা যার কাছে তোমরা ধর্ম ও শরীয়তের বিধি বিধানের শিক্ষা নিতে, তাকে হত্যা করার মত জঘন্য অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে সম্ভব ? জেনে রেখো যে, তোমরা কত বড় পাপের বোঝা বহন করছ। খোদা তোমাদেরকে তার দয়া ও করুনা থেকে বঞ্চিত করুক । তোমাদের ধ্বংস হোক। নিঃসন্দেহে তোমাদের শ্রম বিফল হয়েছে এবং তোমাদের হাত পাপ দ্বারা কলুষিত হয়ে গেছে। আর তোমাদের পাপের ব্যবসা তোমাদের জন্য ক্ষতিই ডেকে এনেছে। নিশ্চয়ই তোমরা খোদার রোষানলের দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছ। অপমান লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা তোমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। হে কুফাবাসীরা! তোমাদের জন্য আক্ষেপ। তোমরা জান কি যে, তোমারা মহানবীর (সা.) কত বড় কলিজার টুকরা ছিন্ন ভিন্ন করেছ। তোমারা জান কি যে, তোমারা তার নিস্পাপ পর্দাবৃতা কন্যা ও রমণীদের পর্দা ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে বেআব্রু করেছ ! ! তেমারা জান কি, মহানবীর (সা.) কত বড় রক্ত তোমরা ঝরিয়েছ এবং তার কত বড় বেইজ্জতি তোমরা করেছ। তোমরা জান কি যে, কত বড় জঘন্য অন্যায় করেছ এবং আকাশ ও পৃথিবীর সমান অত্যাচার ও জুলুম করেছ। নিঃসন্দেহে পরকালের শাস্তি সবচেয়ে কঠিন ও অপমানজনক আর কিয়ামত দিবসে তেমাদের কোন সাহায্যকারীই থাকবে না। মহান আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগ যেন তোমাদের কোন কাজে না আসে এবং তোমাদের পাপের বোঝাও যেন না কমে । কারণ তিনি (মহান আল্লাহ) তাড়াহুড়া করে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন না এবং শহীদের রক্ত বৃথা যাওয়ার কোন আশংকা নেই। তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই তোমাদের ধরার অপেক্ষায় আছেন।

বর্ণনাকারী বলেনঃ খোদার শপথ এ বক্তৃতাটি শোনার পর জনগণ অত্যন্ত বিচলিত হয়ে কাদতে লাগল এবং নিজেদের আঙ্গুলগুলো দাত দিয়ে দংশন করতে লাগল । যে বৃদ্ধ লোকটি আমার পাশে দাড়িয়ে ছিল এবং যার দাড়ি চোখের জলে ভিজে গিয়েছিল সে বলতে লাগল, আমার পিতা মাতা আপনাদের চরণতলে উৎসর্গ হোক। আপনাদের মধ্যে যারা বৃদ্ধ তারা বৃদ্ধদের মধ্যে সর্বোত্তম, আপনাদের যুবকরাই সর্বোত্তম যুবক এবং আপনাদের রমণীরাই সর্বশ্রেষ্ঠ নারী এবং আপনাদের বংশই সর্বশ্রেষ্ঠ বংশ যারা কস্মিনকালেও লাঞ্ছিত ও পর্যদস্ত হবে না ।

ফাতেমা বিনতে হোসাইনের ভাষণ

যায়দ বিন মুসা বিন জাফর থেকে বর্ণিতঃ ইমাম হোসাইন তনয়া ফাতেমা সুগরা কারবালা থেকে কুফায় আগমন করার পর এ ভাষণটি দিয়েছিলেনঃ-

বালুকণা ও পাথরের সংখ্যা যেমন অগণিত ও অননুমেয় তদ্রুপ মর্ত্যলোকে যা কিছু আছে সেগুলো সহ আরশ পর্যন্ত যা কিছু আছে সে গুলোর ওজনের পরিমাণ মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি। তার উপর বিশ্বাস স্থাপন ও ভরসা করছি। আর সাক্ষ দিচ্ছি যে মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় । তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদের (সা.) বংশধরদেরকে শরীয়তসিদ্ধ বৈধ কোন কারণ ছাড়াই অসহায় অবস্থায় ফোরাত নদীর তীরে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের মস্তক দেহচ্যুত করা হয়েছে। হে মহা প্রভু আল্লাহ তোমার সম্পর্কে মিথ্যারোপ করা ও মিথ্যা বলা থেকে আমি আশ্রয় প্রর্থনা করছি । হে খোদা, নবীর অসি হিসেবে জনগণকে হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের হাতে বায়াত করার প্রদত্ত আদেশ সংক্রান্ত তোমার মহান নবীর (সা.) বাণী সমূহের বিরোধী কোন উক্তিই আমি করব না । হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের ন্যায্য অধিকার জবর দখল করা হয়েছিল। আর তারই সন্তানকে (হোসাইন) কারবালায় একদল লোকের হাতে বিনা দোষে নিহত হতে হয়েছে। আর এসব লোকেরা ছিল বাহ্যতঃ মুসলমান কিন্তু অন্তরে ঠিকই তারা কুফরী পোষণ করত। ঐ সব লোক ধ্বংস হোক যারা হোসাইনের জীবদ্দশায় এবং তার শাহাদতের সময় তাকে জুলুম ও উৎপীড়নের হাত থেকে হেফাযত করেনি। হে খোদা, তুমিতো হোসাইন (আ.) কে মহৎ গুনাবলী ও জ্ঞানের অধিকারী করে অত্যন্ত প্রশংসিত ও পবিত্র অন্তঃকরণ সহকারে তোমার সান্নিধ্যে নিয়ে গেছো । হে খোদা কোন কুৎসা রটনাকারীরই কুৎসা তাকে কস্মিনকালেও তাকে তোমার ইবাদত ও বন্দেগী করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি । তুমি শৈশবে তাকে ইসলামের দিকে পথ প্রদর্শন করেছ এবং যখন তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছেন তখন তাকে উত্তম গুণাবলী দিয়ে প্রশংসিত করেছ। তিনি আজীবন তোমার পথে এবং তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলিম উম্মাহকে সদুপদেশ দিয়েছেন। তিনি ইহকালের প্রতি নিরাসক্ত এবং পরকালের জন্য উদগ্রীব ছিলেন। আর তিনি তোমার পথে তোমার শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বদা সংগ্রাম ও জিহাদ করেছেন। হে খোদা! তুমি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছ, তাকে তুমি মনোনীত করেছ এবং সঠিক পথে তাকে পরিচালিত করেছ।

হে কুফাবাসীরা! হে ষড়যন্ত্রকারী ও ধোকাবাজরা, সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে দিয়ে তোমাদের পরীক্ষা করেছেন। আর তিনি আমাদেরকে এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশংসিত করেছেন। তিনি তার জ্ঞান ও বিদ্যাকে আমানতস্বরূপ আমাদেরকে প্রদান করেছেন। তাই আমরাই তার জ্ঞান, বিদ্যা ও প্রজ্ঞার আধার। আমরাই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর সঠিক প্রমাণ বা হুজ্জাত। মহান আল্লাহ আমাদের মাঝেই মহানবী (সা.) কে প্রেরণ করে আমাদেরকে সবার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং উচ্চ মর্য়াদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর তোমরা আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছ ও কুফরীর অপবাদ দিয়েছ তোমরা আমাদের রক্ত ঝরানো এবং আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করা বৈধ করেছ। আমরা যেন বিধর্মী অমুসলিম তুর্কী ও কাবুলী যুদ্ধবন্দী। যেমনিভাবে গতকাল তোমরা আমাদের পিতামহের রক্ত ঝরিয়েছ ঠিক তেমনি তোমাদের অন্তরে আমাদের প্রতি তোমাদের পুরানো শত্রুতা থাকার কারণে আজও তোমাদের তলোয়ার থেকে আমাদের (আহলে বাইতের) রক্ত ঝরছে।

তোমরা খোদার সম্পর্কে যে মিথ্যারোপ করেছ এবং যে ষড়যন্ত্রে তোমরা লিপ্ত হয়েছ সে জন্য তেমার খুব স্ফুর্তি ও আনন্দ উল্লাস করছ। তবে জেনে রেখো যে, মহান আল্লাহ সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্রকারী। তাই তোমরা আমাদের রক্ত ঝরাবে এবং আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করতে পেরে আর অধিক আনন্দিত হয়ো না। কারণ এসব বিপদাপদ পূর্ব থেকেই আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ ছিল। আর এটা তার জন্য অত্যন্ত সহজ। যাতে করে তোমরা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে হতাশ ও মনঃক্ষুন্ন না হও এবং লাভ ও মুনাফা অর্জন করতে পেরে অযথা উল্লাসিত না হও। কারণ মহান আল্লাহ চক্রান্তকারী ও উদ্ধতদেরকে পছন্দ করেন না।

হে কুফাবাসীরা, তোমাদের ধ্বংস হোক। তোমরা খোদার অভিশাপ ও শাস্তির অপেক্ষা করতে থাক যা অতি শীঘ্রই একের পর এক তোমাদের উপর অবতীর্ণ হবে এবং নিজেদের কু-কর্মের জন্য তোমরা সাজা প্রাপ্ত হবে। মহান আল্লাহ তোমাদেরকে পারস্পরিক কলহ, বিবাদ, দ্বন্দ-সংঘাতে লিপ্ত করে তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। আর এরপর আমাদের প্রতি যে অন্যায় ও জুলুম করেছ সে জন্য তোমরা কিয়ামত দিবসে চিরস্থায়ী নরকের মহাযন্ত্রনাদায়ক আগুনে দগ্ধ হওয়ার শাস্তি অবশ্যই পাবে। মনে রেখো, অত্যাচারী গোষ্ঠির উপর মহান আল্লাহর অভিশাপ।

হে কুফাবাসীগণ, তোমাদের জন্য আক্ষেপ, তোমরা কি জান, কোন হাতে আমাদেরকে তীর ধনুক ও তরবারী আক্রমণের শিকার করেছ, তোমরা কোন সাহসে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছ? খোদার শপথ তোমাদের অন্তর পাষাণ এবং বিবেক বুদ্ধি বিবর্জিত, তোমাদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে। হে কুফাবাসীরা, শয়তান তোমাদেরকে ধোকা দিয়েছে, তোমাদেরকে সৎ পথ থেকে বিচ্যুত করেছে এবং তোমাদের চোখের উপর অজ্ঞতার আচ্ছাদন টেনে দিয়েছে যার ফলে তোমরা কখনো সুপথ প্রাপ্ত হবে না। হে কুফাবাসীগণ, তোমাদের ধ্বংস হোক। তোমরা জান কি যে তোমাদের কাধে মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধদের রক্ত ঝরানোর পাপ রয়েছে এবং তোমাদের থেকে সে রক্তের প্রতিশোধ অবশ্যই গ্রহণ করা হবে ?

তোমরা মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এর ভ্রাতা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আ.) ও তার বংশধরদের সাথে যে শত্রুতা করেছ সে জন্য তোমাদের মধ্য থেকে কেউ দম্ভোক্তি করে বলেছঃ

“আমারা ভারতে নির্মিত তরবারী ও বর্শা দিয়ে আলী ও তার বংশধরদেরকে হত্যা করেছি। আমরা তার বংশীয়া মহিলাদেরকে বিধর্মী তুর্কী যুদ্ধবন্দীদের মত বন্দী করেছি।” ঐ সব পুণ্যাত্মা যাদেরকে মহান আল্লাহ সব ধরনের পাপ-পংকিলতা থেকে পবিত্র করে দিয়েছেন তাদেরকে হত্যা করে যে ব্যক্তি গর্ব ও আনন্দ উল্লাস করছে তার মুখে (কলংকের) প্রস্তর ও ধুলো নিক্ষিপ্ত-প্রক্ষিপ্ত হোক। হে অপবিত্র ব্যক্তি তুই তোর ক্রোধাগ্নি গলাধঃকরণ কর আর তোর পিতা যেমনিভাবে বসেছিল তদ্রুপ কুকুরের মত তোর আপন জায়গায় বসে পড়। যে ব্যক্তি যেমন কর্ম করবে তেমন প্রতিফলও সে প্রাপ্ত হবে। তোমাদের জন্য আক্ষেপ. মহান আল্লাহ আমাদেরকে যে জন্য সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আমাদের সাথে হিংসা করছ বলে।

আমাদের বংশের মহৎ গুণাবলী যদি কালজয়ী হয় তাহলে কি এতে আমাদের অপরাধ হবে অথচ তোমাদের পাপ ও কুকীর্তিসমূহ ইচ্ছে করলেও তোমরা কখনো গোপন রাখতে পারবে না।

এটা হচ্ছে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে এ অনুগ্রহ দান করেন। কারণ তিনিইতো বিশাল অনুগ্রহের মালিক আর মহান আল্লাহ যাকে (হেদায়তের) আলো দেন না সে কখনোই (হেদায়তের) আলোর সন্ধান পায় না ।

হযরত ফাতেমা সুগরার ভাষণ সমাপ্ত হলে উপস্থিত জনতা উচ্চস্বরে কাদতে কাদতে বললঃ হে পুণ্যাত্মাদের বংশধর। আপনি আমাদের অন্তরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কলিজাকে আপনি শোক দুঃখ আর বেদনা অনলে ভস্মীভূত করেছেন। আপনি থামুন আর বলবেন না। অতঃপর হযরত ফাতেমা সুগরা কথা বলা বন্ধ করলেন ।

হযরত উম্মে কুলসুমের ভাষণ

বর্ণনাকারী বলেনঃ হযরত আলী (আ.) এর কন্যা উম্মে কুলসুম (আ.) উচ্চস্বরে ক্রন্দনরত ও হাওদার উপর উপবিষ্টাবস্থায় ঐ দিন এ ভাষণটি দেনঃ

হে কুফাবাসীগণ, তোমাদের অবস্থা কতই খারাপ। তোমারা কেন হোসাইন (আ.) কে অপদস্ত ও হত্যা করেছ ? কেন তার সম্পদ লুন্ঠন করেছ ? কেন তার স্ত্রী-কন্যাদেরকে বন্দী করেছ ? এতসব করে এখন তার জন্য কাদছো ? তোমাদের জন্য আক্ষেপ, তোমাদের ধ্বংস ও অমঙ্গল হোক। তোমরা কি জান যে তোমরা কত বড় পাপ করেছ ? তেমরা কি জান তোমরা অন্যায় ভাবে কি ধরণের রক্ত ঝরিয়েছ ? তোমরা জান কি কোন ধরনের অন্তঃপুর বাসিনীদেরকে তোমরা পর্দার অন্তরাল থেকে জনসমক্ষে বের করে এনেছ ? তোমরা জান কি তোমরা কোন পরিবারের অলংকারসমূহ বলপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছ এবং কাদের সম্পদ লুন্ঠন করেছ ? আর তোমরা এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ মহানবীর (সা.) পর যার মান মর্যাদার অধিকারী কেউ নেই ? তোমাদের অন্তর থেকে দয়া মায়া তুলে নেয়া হয়েছে । জেনে রেখো যে আল্লাহর দলই সফলকাম এবং শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্থ। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করলেন –

তোমরা আমার ভ্রাতাকে হত্যা করেছ, তোমাদের কাজের জন্য আক্ষেপ,

তোমরা শীঘ্রই এমন নরকে প্রবেশ করবে যার তাপ দগ্ধ করে দেয়,

মহান আল্লাহ, পবিত্র কোরআন এবং মহানবী (সা.) যে রক্ত ঝরানো

হারাম করে দিয়েছেন সে রক্তই তোমরা ঝরিয়েছ।

তোমরা একে অপরকে নরকাগ্নির সুসংবাদ দাও

নিশ্চয় তোমরা নরকাগ্নিতে চিরকাল দগ্ধ হবে

মহানবীর (সা.) পরে আমার যে ভ্রাতা মঙ্গলের উপর ছিলেন তার জন্য আমি আমার সারাটা জীবন ক্রন্দন করব।

আমার গন্ডদেশ দিয়ে সর্বদা প্রবাহিত থাকবে অশ্রু যা কখনো শুকাবে না ।

এ সময় জনগণ উচ্চস্বরে কাদছিল। মহিলারা শোকে তাদের কেশমালা এলোমেলো করেছিল এবং মাথায় ধুলো মাটি মেখেছিল। তারা নিজেদের মুখমণ্ডলে আচড় দিচ্ছিল এবং মুখে থাপ্পর মারছিল। তারা উচ্চস্বরে ফরিয়াদ ও ‘ওয়াওয়াইলা’ বলছিল। পুরুষরা কাদছিল এবং চুল দাড়ি উপড়ে ফেলছিল। ঐদিনের চেয়ে অন্য কোন সময় লোকদের এত অধিক কাদতে দেখা যায়নি।

ইমাম আলী ইবনুল হোসাইন যয়নুল আবেদীনের ভাষণ

হযরত ফাতেমা সুগরার ভাষণ সমাপ্ত হওয়ার পর ইমাম যয়নুল আবেদীন জনগণকে নীরবতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেন । জনতা নীরব হলে তিনি (যয়নুল আবেদীন) দাড়িয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম উচ্চারণ করে তার উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করেন। তারপর তিনি বললেনঃ

হে জনতা, যারা আমাকে চিনে তাদের কাছে নতুন করে আমার পরিচিতি তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। আর যার আমাকে চিনে না তাদের কাছে আমি নিজেই আমার পরিচিতি তুলে ধরছি। আমি আলী ইবনুল হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবু তালিব (আ.)। আমি এমন এক ব্যক্তির সন্তান যার মান সম্ভ্রম পদদলিত করা হয়েছে, যার সম্পদ লুন্ঠন করা হয়েছে এবং যার আহলে বাইত (পরিবার পরিজনকে) বন্দী করা হয়েছে। আমি এমন এক ব্যক্তির সন্তান যাকে ফোরাত নদীর তীরে কোন প্রকার রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণ করা ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে । আমি এমন এক ব্যক্তির সন্তান যাকে অনেক কষ্ট ও যাতনা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে । আর এটাই আমার গৌরববোধের জন্য যথেষ্ট। হে লোকসকল, তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে বলছি তোমরাইতো আমার পিতার কাছে চিঠির পর চিঠি দিয়েছ। তারপর যখন তিনি তোমাদের কাছে আসলেন তখন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করলে !! তোমরা আমার পিতার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলে, তার হাতে বায়াত করেছিলে। আর এগুলো করার পর তোমরাই তাকে হত্যা করলে। তোমরা যে পাথেয় পরকালের জন্য সঞ্চয় করেছ তা ধ্বংস হোক আর তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আকীদা বিশ্বাস কতই না মন্দ। কিয়ামতের দিনে মহানবী (সা.) যখন তোমাদেরকে বলবেন, “তোমারা আমার দৌহিত্রকে হত্যা করেছ এবং আমার মান সম্ভ্রম পদদলিত করেছ। তোমরা আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নও। তখন তোমরা তাকে কি জবাব দিবে ? একথাগুলো বলার পর চারিদিকে জনতার মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গেল। আর তখন লোকেরা একে অন্যকে বলছিল, “তোমার ধ্বংস হয়ে গেছ। তোমরা কি জানতে না”? ইমাম যয়নুল আবেদীন বললেন,

“মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর দয়া করুন যে আমার উপদেশ গ্রহণ করবে এবং মহান আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও তার আহলে বাইত সংক্রান্ত আমার নসিহত সংরক্ষণ করবে। কারণ মহানবী (সা.)ই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” তখন জনগণ সমস্বরে বলে উঠলঃ হে নবী (সা.) এর বংশধর, আমরা সবাই আল্লাহর নির্দেশের গোলাম আপনার অনুগত এবং আপনার সাথে যে ওয়াদা করেছি তা রক্ষা করব। কখনোই আমরা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব না। আপনি যা আদেশ করবেন আমরা তাই করব। যারাই আপনার বিরুদ্ধে লড়বে আমরাও তার বিরুদ্ধে লড়ব। যারা আপনার সাথে সন্ধি করবে আমরাও তাদের সাথে সন্ধি করব। আমরা ইয়াজিদের কাছে ইমাম হোসাইনের রক্তের বদলা চাইব। যারা আপনার উপর জুলুম করেছে তাদের সাথে আমরা সম্পর্কচ্ছেদ করব। উপস্থিত জনতার বক্তব্য শোনার পর ইমাম বললেন, “চক্রান্তকারী গাদ্দারেরা দূর হও আমার সামনে থেকে। চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও দাগাবাজী ছাড়া আর কোন গুণই নেই তোমাদের। আমার পিতার সাথে যে আচরণ করেছ আমার সাথেও সেরূপ আচরণ করতে চাচ্ছ ? মহান আল্লাহর শপথ, এধরনের আচরণ আর তোমাদের দ্বারা করা সম্ভব হবে না। কারণ আমার পিতার আহলে বাইতের ব্যাপারে আমার অন্তরে যে সব ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো আরোগ্য লাভ করেনি এবং আমার পিতামহ (মহানবী), পিতা এবং আমার ভাইদের প্রতি আপতিত বিপদাপদের কথা আমরা এখনো ভুলে যাইনি। ঐ সব বিপদের তিক্ত স্মৃতি এখনো আমার অন্তরে জাগরুক থেকে আমার বক্ষদেশকে ভারী ও শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলেছে। আমি তোমাদের কাছে এতটুকুই প্রত্যাশা করছি যে, তোমরা আমাদেরকে সাহায্যও করো না এবং আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইও করো না। এরপর ইমাম যয়নুল আবেদীন আবৃত্তি করলেন।

“হোসাইন (আ.) যদি নিহত হয় এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। কারণ আলী ইবনে আবু তালিব হোসাইনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়েও নিহত হয়েছেন। হে কুফাবাসীরা হোসাইনের উপর যে সব বিপদ আপতিত হয়েছে তার জন্য তোমরা খুশী হয়ো না। হোসাইন (আ.) এর উপর আপতিত বিপদসমূহ অন্য সব বিপদ অপেক্ষা ভয়ংকর ছিল। ফোরাত নদীর তীরে শহীদ হোসাইনের চরণতলে আমার প্রাণ উৎসর্গ হোক। হোসাইন (আ.) এর হত্যাকারীদের পুরস্কার হচ্ছে নরকাগ্নি।”

ইমাম যয়নুল আবেদীন উপরোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করার পর এ পংক্তিটিও আবৃত্তি করলেন ।

অর্থাৎ তোমরা আমাদের সাথে ধোকাবাজীও করনা বা আমাদের বিরুদ্ধেও যেও না । (আমাদেরকে সাহায্যও করো না আর আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণও করো না) এতে করে আমরা তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকব ।

আহলে বাইতের কুফার শাসনকর্তার প্রাসাদে আগমন

বর্ণিত আছেঃ ইবনে যিয়াদ ‘দারুল ইমারাহ’ বা প্রাসাদে আসন গ্রহণ করল এবং জনতাকে প্রবেশের অনুমতি দিল। ইমাম হোসাইন (আ.) এর পবিত্র মাথা এনে ইবনে যিয়াদের সামনে রাখা হল । ইমামের বন্দী পরিবার পরিজন ও সন্তান সন্ততিদেরকে ইবনে যিয়াদের দরবারে হাজির করা হল । হযরত আলী (আ.) এর কন্যা সভায় প্রবেশ করে এক কোণায় বসে পড়লেন। কেউ তাকে চিনতেও পারলনা। ইবনে যিয়াদ জিজ্ঞেস করল, এ মহিলাটি কে ? তাকে বলা হল, ইনি হযরত আলী (আ.) এর কন্যা যয়নাব (আ.)। ইবনে যিয়াদ হযরত যয়নাব (আ.) কে লক্ষ্য করে বলল, “খোদার সমস্ত প্রশংসা যিনি তোমাদেরকে অপদস্ত করেছেন এবং তোমাদের মিথ্যাবাদিতাকে ফাস করে দিয়েছেন। হযরত যয়ানাব (আ.) বললেন-

“যারা ফাসেক-লম্পট তারাই অপদস্ত হয়; লম্পট লোকেরাই মিথ্যা কথা বলে। আর আমরা ফাসেক-ফাজের বা লম্পট নই। ইবনে যিয়াদ তখন তাকে বলল, “খোদা তোমার ভাইয়ের সাথে যে আচরণ করেছে সে সম্পর্কে তোমার কি অভিমত?” হযরত যয়নাব (সা.আ.) প্রত্যুত্তরে বললেন-

ما رأیت الا جمیلا هول أ قوم کتب الله علیهم القتل فبرزوا الی مضاجعهم

“তাদের সাথে খোদা যে আচরণ করেছেন সেটা ছিল উত্তম আচরণ। কারণ এদের জন্য মহান আল্লাহ শাহাদতের মর্যাদা লিখে রেখেছিলেন। আর তারা তাদের চিরস্থায়ী বাসস্থানের দিকেই চলে গেছেন। আমি পূণ্য ছাড়া তাদের জন্য আর কিছুই প্রত্যক্ষ করছি না। আর অতিশীঘ্রই মহান আল্লাহ তোকে ও এদেরকে হিসাব কিতাবের জন্য একত্রিত করবেন। আর তখন তারা তোর সাথে ঝগড়া বিবাদ করবে। আর তখনই বুঝতে পারবি কারা পরকালে সফলকাম ও মুক্তিপ্রাপ্ত হবে। তোর মা তোর জন্য কাদুক হে মারজানার পুত্র।” একথা শুনে ইবনে যিয়াদ এতই ক্ষুদ্ধ হল যেন সে এক্ষুনি হযরত যয়নাবকে হত্যা করে ফেলবে।

ঐ সভায় উপস্তিত উমর ইবনে হারীস ইবনে যিয়াদকে বলল, “এ হলো একজন সামান্য নারী। মহিলাদেরকে তাদের কথায় ধরতে হয়না। অর্থাৎ তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয় না।”এ কথা শোনার পর ইবনে যিয়াদ যয়নাবকে হত্যা করার অভিপ্রায় ত্যাগ করে। সে হযরত যয়নাবকে লক্ষ্য করে বললঃ হোসাইনকে নিহত করে আল্লাহ আমার প্রাণকে জুড়িয়ে দিয়েছেন। হযরত যয়নাব (আ.) এর প্রত্যুত্তরে বললেন, “আমার জীবনের শপথ। আমাদের বয়ঃজ্যেষ্ঠদেরকে তুই হত্যা করেছিস এবং আমার বংশ ও বংশধরদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করেছিস। আর এতে যদি তোর প্রাণ জুড়িয়ে থাকে তাহলে আসলেই তোর প্রাণ জুড়িয়েছে।” ইবনে যিয়াদ তখন বললঃ “যয়নাব এমনই একজন মহিলা যে কাব্যিক ছন্দে কথা বলে। আর আমার জীবনের শপথ তার পিতাও একজন কবি ছিলেন।” ইবনে যিয়াদের এ উক্তি শুনে হযরত যয়নাব (আ.) বললেন. “হে ইবনে যিয়াদ কবিতা ও কাব্যের সাথে মহিলার কি সম্পর্ক ? এরপর ইবনে যিয়াদ ইমাম যয়নুল আবেদীনকে (আ.) লক্ষ্য করে বলল এ যুবকটি কে ? তাকে বলা হল, ইনি আলী ইবনুল হোসাইন (আ.)। তখন ইবনে যিয়াদ বলল – “আল্লাহ কি তাকে এখনও হত্যা করেনি ?” ইমাম যয়নুল আবেদীন বললেনঃ “আলী ইবনুল হোসাইন নামে আমার এক ভাই ছিল লোকেরা তাকে হত্যা করেছে।” ইবনে যিয়াদ একাথা শুনে বলল “বরং খোদাই তাকে হত্যা করেছে।” ইমাম যয়নুল আবেদীন তখন বললেন –

للّـهُ يتوفّى الْأنفُس حين موْتها والّتي لمْ تمُتْ في منامها

আল্লাহই মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়। আর যে সব মানুষ নিদ্রাকালে মৃত্যুবরণ করেনি তাদের প্রাণও হরন করেন।(সূরা যুমারঃ৪৩)

ইবনে য়িয়াদ একথা শোনার পর বলল, “আমার কথার জবাব দেয়ার সাহস তোমার কি করে হল? অতঃপর পাপিষ্ট ইবনে যিয়াদ ইমাম যয়নুলকে (আ.) বাহিরে নিয়ে হত্যা করার আদেশ দিল। হযরত যয়নাব ইবনে যিয়াদের আদেশ শোনা মাত্রই উত্তেজিত হয়ে বললেন-

“হে ইবনে য়িয়াদ,তুই আমাদের মাঝে কাউকেই জীবিত রাখিসনি। যদি তুই যয়নুলকে হত্যা করতে চাস তাহলে আমাকেও হত্যা করে ফেল।” ইমাম যয়নুল ফুফুকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে ফুফুজান, আমি যতক্ষণ ইবনে যিয়াদের সাথে কথা বলব আপনি চুপ করে থাকুন।” তারপর ইমাম যয়নল আবেদীন (আ.) ইবনে যিয়াদকে লক্ষ্য করে বললেন-

হে ইবনে যিয়াদ তুই আমাকে হত্যার ভয় দেখাচ্ছিস? অথচ তোর কি জানা নেই যে নিহত হওয়া আমাদের কাছে স্বাভাবিক এবং শাহাদতই আমাদের গৌরব। এরপর ইবনে যিয়াদের আদেশক্রমে ইমাম এবং আহলে বাইতকে কুফার জামে মসজিদের পাশে অবস্থিত একটি গৃহে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়। হযরত যয়নাব নির্দেশ দিলেন যে সব মহিলা উম্ম ওয়ালাদ বা দাসী তারা ছাড়া আর কোন মহিলা যেন আমাদের গৃহে প্রবেশ না করে। কারণ যেমনিভাবে আমাদের বন্দীত্বের শিকলে বাধা হয়েছে তেমনি ভাবে মহিলারাও (দাসীরাও) দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ।

ইবনে যিয়াদ ইমাম হোসাইনের (আ.) দেহচ্যুত মাথা মোবারক কুফার রাস্তায় রাস্তায় প্রদর্শন করার আদেশ দেয়। এ ব্যাপারে আমরা ইমাম হোসাইন (আ.) এর শানে একজন আলেমের শোকগাথা উদ্ধৃত করা সমীচীন মনে করছি।

জনসমক্ষে প্রদর্শনীর জন্য মহানবীর দৌহিত্র ও উত্তরাধিকারীর মস্তক বর্শার মাথায় গাথা হয়েছে। আর মুসলমানরা তা দেখছে এবং শুনছে। তাদের মধ্যে কেউই এ গর্হিত কাজে বাধা দিচ্ছে না বা তাদের অন্তর ব্যথিত হচ্ছে না। যে এই বিভৎস দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করছে তার চোখ অন্ধ হয়ে যাক। হে হোসাইন, তোমার মুসিবতের কথা শুনেও যে ব্যক্তি তা প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসেনি তার কর্ণদ্বয় বধির হয়ে যাক। হে হোসাইন তুমি তোমার শাহাদতের দ্বারা ঐসব চোখগুলোকে জাগ্রত করেছ যারা তোমার জীবদ্দশায় নিদ্রামগ্ন ছিল। আর ঐসব চোখগুলোকে নিদ্রামগ্ন করেছ যারা তোমার জীবদ্দশায় তোমার ভয়ে ঘুমাতে পারত না । হে হোসাইন, পৃথিবীর বুকে এমন কোন উদ্যান ছিল না যে তোমার সমাধিস্থল ও চিরস্থায়ী আবাস হওয়ার আকাঙ্খা করেনি।

আবদুল্লাহ ইবনে আফীফের বীরত্ব ও শাহাদাত

বর্ণিত আছেঃ ইবনে যিয়াদ মিম্বরে দাড়িয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা করার পর ভাষণের মধ্যে বলতে লাগলঃ ঐ খোদার শুকরিয়া আদায় করছি যিনি আমীরুল মুমেনীন ইয়াজিদ ও তার অনুসারীদেরকে সাহায্য করেছেন এবং মিথ্যাবাদীর পুত্র মিথ্যাবাদী হোসাইন ইবনে আলীকে হত্যা করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ) যখন সে একথা বলল তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আফীফ আল-আযদী প্রতিবাদ করে বললেন, “হে মারজানার পুত্র তুই, তোর পিতা আর যে তোকে কুফার শাসনকর্তা করেছে সে ও তার পিতাই আসলে প্রকৃত মিথ্যাবাদী। হে খোদার শত্রু, মহান নবীদের বংশধরদেরকে হত্যা করে মুসলমানদের মিম্বরে আরোহণ করে এ ধরনের মিথ্যা উক্তি করছিস?” এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আফীফ আল-আযদী একজন পূণ্যবান, দুনিয়াত্যাগী সাধক পুরুষ ছিলো। উষ্ঠের যুদ্ধে তার বাম চোখ এবং সিফফীনের যুদ্ধে তার ডান চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি কুফার জামে মসজিদে সারা দিনরাত ইবাদত-বন্দেগী ও নামায-রোযায় মগ্ন থাকতেন। ইবনে যিয়াদ আব্দুল্লাহ ইবনে আফীফের এ কথাগুলো শুনে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হল এবং বলতে লাগলঃ “এ কথ কে বলল?” আব্দুল্লাহ ইবনে আফীফ তখন উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, “হে খোদার শত্রু, আমিই এ কথাগুলো বলছি। মহানবীর (সা.) পবিত্র বংশধরদেরকে হত্যা করেছিস যাদেরকে মহান আল্লাহ সব ধরনের পাপ-পংঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে দিয়েছেন? আর এরপরও নিজেকে মুসলমান মনে করছিস?!!! হায় মহানবী (সা.) যাকে অভিশপ্তের পুত্র অভিশপ্ত বলে অভিহিত করেছেন সেই পাপিষ্ঠ অপবিত্র ইবনে যিয়াদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণকারী মুহাজির ও আনসারদের বংশধরেরা আজ কোথায়?” এ কথায় ইবনে যিয়াদের ক্রোধ আরো বেড়ে গেল, তার মাথায় রক্ত চড়ে গেল এবং সে বলতে লাগল, “আব্দুল্লাহকে আামর সামনে ধরে আনো।” শক্তিশালী রক্ষীরা চারদিক থেকে আব্দুল্লাহর দিকে ছুটে গেল। কিন্তু আযদ গোত্রপতিরা যারা সম্পর্কে আব্দুল্লাহর জ্ঞাতি ও সম্পর্কে চাচাত ভাই তারা সবাই আব্দুল্লাহকে রক্ষীদের হাত থেকে রক্ষা করে এবং নিরাপদে মসজিদ থেকে তার গৃহে পৌছে দেয়। ইবনে যিয়াদ এ ঘটনার পর সৈন্যদেরকে আদেশ দেয়, ঐ অন্ধ আযদীর ঘরে গিয়ে ওকে আমার কাছে ধরে নিয়ে এস। খোদা যেমনিভাবে ওর দু’চোখ অন্ধ করে দিয়েছে ঠিক তেমনিভাবে ওর অর্ন্তচক্ষুও যেন অন্ধ করে দেন।” ইবনে যিয়াদের এ আদেশ পেয়ে একদল সৈন্য আব্দুল্লাহর গৃহে হানা দেয়। আর এ খবর শোনামাত্রই আযদ গোত্র আব্দুল্লাহকে রক্ষা করার জন্য ইয়ামানী কবীলাসমূহের সাথে একত্রিত হয়। আযদ ও অন্যান্য গোত্রের একত্রিত হওয়ার সংবাদ পেয়ে ইবনে যিয়াদ “মাযার গোত্রসমূহকে” একত্রিত করে তাদেরকে মুহাম্মদ বিন আশ’আশের নেতৃত্বে আযদ ও ইয়ামানী গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রেরণ করে। এক ভীষণ যুদ্ধ বেধে যায় এবং একদল লোকও যুদ্ধে নিহত হয়। ইবনে যিয়াদের সৈন্যরা এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহর ঘরে পৌছে যায় এবং দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। তখন আব্দুল্লাহও তাকে অভয় দিয়ে বলতে থাকেন, “ভয় পেয়ো না। আমাকে তরবারীটা দাও।” তখন সে তরবারীটা এনে আব্দুল্লাহকে দেয় এবং আব্দুল্লাহও নিম্নোক্ত কবিতা আবুত্তি করতে করতে আত্মরক্ষা করার জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

“আমি পুণ্যাত্মা আফীফ তনয়,

আমার পিতা আফীফ যিনি উম্মু আমেরের সন্তান

আমি তোমাদের মধ্য থেকে কত বর্মধারী, বীর ও সিপাইদের বিরুদ্ধে লড়েছি।”

আব্দুল্লাহর মেয়ে তখন বলছিলঃ “হে পিতা, হায় আমি যদি পুরুষ হতাম তাহলে তোমার পাশাপাশি নবীবংশ হত্যাকারী এসব পাপিষ্ঠ নরাধমদের বিরুদ্ধে লড়তাম।”

ইবনে যিয়াদের সৈন্যরা চারদিক থেকে আব্দুল্লাহর উপর আক্রমণ চালাচ্ছিল। আর আব্দুল্লাহও একাই লড়ে যাচ্ছিলেন। যারাই যে দিক থেকে তার কাছাকাছি পৌছে যেত অমনি তার মেয়ে তাকে জানিয়ে দিত। । অবশেষে শত্রুদের চাপ চারদিক থেকে বেড়ে গেল এবং তারা আব্দুল্লাহকে ঘিরে ফেলল। তখন আব্দুল্লাহর মেয়ে চীৎকার করে বলল, “হায় পিতা, পিতা, কঠিন বিপদের সম্মুখীন অথচ তার কোন সাহায্যকারী নেই।” আব্দুল্লাহ চারদিকে তরবারী ঘুরিয়ে বলতে লাগলেনঃ

“খোদার শপথ, আমি যদি অন্ধ না হতাম তাহলে তোমাদের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যেত।” ইবনে যিয়াদের সৈন্যরা তার সাথে অবিরাম লড়ে যেতে লাগল এবং অবশেষে তাকে বন্দী করে ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেল। ইবনে যিয়াদ আব্দুল্লাহকে দেখামাত্রই বলে উঠল,“ঐ খোদার সমস্ত প্রশংসা যিনি তোমাকে অপদস্থ করেছেন।” আব্দুল্লাহ প্রত্যুত্তরে বললেন-

হে খোদার দুশমন, আল্লাহ কেন আমাকে অপদস্থ করবেন? আমি শপথ করে বলছি, যদি আমি অন্ধ না হতাম তাহলে তোর অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যেত।” ইবনে যিয়াদ তখন তাকে বলল, “হে খোদার দুশমন, উসমান ইবনে আফফানের ব্যাপারে তোর অভিমত কি?” আব্দুল্লাহ, ইবনে যিয়াদকে গালি দিয়ে বললেন, “হে বনি ইলাজের ক্রীতদাস, হে মারজানা তনয়, উসমানকে নিয়ে তোর এত মাথাব্যথা কেন? উসমান যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে মহান আল্লাহ তার ও অন্যান্যদের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সাথে ফয়সালা করে দেবেন। তুই এ ব্যাপারে নিজকে, তোর পিতাকে এবং ইয়াজিদ ও তার পিতাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।” ইবনে যিয়াদ প্রত্যুত্তরে বলল, “তোর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। আব্দুল্লাহ মহান আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, “তোর জন্মেরও আগে আমি খোদার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, “আমাকে শাহাদাতের মর্তবা দান কর এবং সবচে’ নিকৃষ্ট ব্যক্তির হাতে যেন আমার মৃত্যু হয়।” কিন্তু আমার দু’চোখ যখন অন্ধ হয়ে গেল তখন শাহাততের সৌভাগ্য অর্জনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। আর এখন আমি আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌছে যাচ্ছি বলেই মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি।” অতঃপর ইবনে যিয়াদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করলে তাকে হত্যা করা হয় এবং তার মৃতদেহ কুফার কোন এক গলিতে ঝুলিযে রাখা হয়।

বর্ণিত আছেঃ উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ পত্রযোগে ইয়াজিদকে ইমাম হোসাইনের (আ.) শাহাদত ও তার আহলে বাইতকে বন্দী করার ব্যাপারে অবহিত করে। উবায়দুল্লাহ মদীনার শাসনকর্তা আমর বিন সাঈদ বিন আসের কাছে একই ধরনের চিঠি লিখে । চিঠি পৌছানো মাত্রই আমর বিন সাঈদ বিন আস মসজিদে নববীর মিম্বারে দাড়িয়ে ভাষণ দেয় এবং হোসাইন (আ.) এর শাহাদাত সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে এ সংবাদ শোনা মাত্রই হাশিমী বংশীয়দের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায় এবং তারা শোক প্রকাশ করতে থাকে। আকীল ইবনে আবী তালেবের কন্যা যয়নাব বিলাপ করে বলতে থাকেনঃ মহানবী (সা.) যখন তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন,

আমার আহলে বাইতের সাথে আমার মৃত্যুর পর তোমরা কি আচরণ করেছ অথচ তোমরাই ছিলে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত? তাদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যককে বন্দী করেছ আর কিছুসংখ্যককে হত্যা করেছ। তোমাদেরকে না আমি উপদেশ দিয়েছিলাম যে আমার আহলে বাইতের সাথে খারাপ আচরণ করবে না। অথচ এই তার প্রতিদান। তখন তোমরা তাকে (সা.) কি জবাব দেবে? ঐ দিন দিবাগত রাতে মদীনাবাসীরা শুনতে পেল যে, কে যেন অদৃশ্যলোক থেকে বলছে-

“যারা ইমাম হোসাইনকে (আ.) অজ্ঞতাবশত হত্যা করছে তাদেরকে শাস্তি ও দুর্ভাগ্যর সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে । নবী-পয়গম্বর- ফেরেশতা ও শহীদগণসহ সকল আকাশবাসী হোসাইন (আ.) এর হত্যাকারীদেরকে অভিশাপ দিচ্ছে। হযরত সুলাইমান (আ.) হযরত মূসা (আ.) ও তোমাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।”#আল হাসানাইন

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)