ইমাম হাদি (আ.)
ইমামগণ হলেন এমন মহান ব্যক্তিত্ব যাঁরা আল্লাহর মনোনীত। তাঁদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, তাদের মন-মানসিকতা, তাঁদের পবিত্র জীবনাদর্শ ও উন্নত মানবিক সত্ত্বাই তা প্রমাণ করে। নিঃসন্দেহে এ ধরনের উন্নত নীতি-আদর্শবান ব্যক্তিত্বদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং তাদেঁর জীবনাদর্শের অনুসরণ করা সততা ও কল্যাণময় উন্নত জীবন লাভের একমাত্র পথ। এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব ইমাম হাদি (আ.)।
ইমাম হাদি (আ.) ছিলেন একজন গভীর জ্ঞানসম্পন্ন এবং পূর্ণতা ও তাকওয়ার অধিকারী মহান এক ব্যক্তিত্ব। ইমামদের সম্পর্কে ইমাম হাদি (আ.) বলেছেনঃ তাঁরা হলেন রহমতের খনি, জ্ঞানের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার এবং হেদায়েত ও পরহেজগারীর মূল কাঠামো। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইবনে শাহর অশুব ইমাম হাদি (আ.) এর জ্ঞান ও আল্লাহর সাথে তাঁর সম্পর্কের ব্যাপারে বলেছেনঃ হযরত হাদি ছিলেন একজন পরিপূর্ণতম মানুষ।যখনই তিনি চুপচাপ থাকতেন খুবই মর্যাদাবান মনে হতো, আবার যখন কথা বলতেন তাঁর সেই মর্যাদা আরো বেড়ে যেত। তিনি যে নবী পরিবারের সন্তান সেই ঐশ্বর্য তাঁর চেহারায় জ্বলজ্বলে ছিল,কেননা তিনি ছিলেন রেসালাতের বৃক্ষেরই ফল এবং নবীজীর খান্দানেরই মনোনীত।
ইমাম হাদি (আ.) ২১২ হিজরীর মধ্য জ্বিলহাজ্বে অর্থাৎ জ্বিলহাজ্ব মাসের ১৫ তারিখে মদীনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইমাম জাওয়াদ (আ.) এর শাহাদাতের পর তিনি মুসলমানদের নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তেত্রিশ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ইমাম হাদি (আ.) এর জীবনকালে মুতাওয়াক্কিলসহ আব্বাসীয় খলিফাদের বেশ কয়েকজনের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। চিন্তা ও রাজনৈতিক দিক থেকে এই মেয়াদকাল ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছিল। আব্বাসীয় শাসনের যুগ যতোই অতিক্রান্ত হচ্ছিল ততোই তাদের সম্মান ও মর্যাদা হ্রাস পাচ্ছিল। তাদের মর্যাদা হ্রাস পাবার পেছনে কারণ ছিল-সমাজে তাদের দুর্নীতি এবং তাদের শাসক হবার যোগ্যতাহীনতার ব্যাপারে জনতার মুখে মুখে রব ওঠা-যার ফলে মানুষ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল।
অন্যদিকে,নতুন নতুন চিন্তাধারা আর বিকৃত বিশ্বাসের প্রচলনের কারণে মানুষের চিন্তারাজ্যে এবং বোধ ও বিশ্বাসে ভয়াবহ বিকৃতি জেঁকে বসেছিল। ইমাম হাদি (আ.) যদি এই দুঃসময়ে ইসলামের উন্নত নীতি-নৈতিকতার চর্চা ও বিকাশ না ঘটাতেন,তাহলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও নীতিমালাগুলো বিদায়াত আর বিচ্যুতিতে ডুবে যেত। ইমাম হাদি (আ.) শুরুতে মদীনায় বসবাস করতেন। মদীনা ছিল মুসলিম বিশ্বের জন্যে ইসলামী বিধি-বিধান এবং জ্ঞানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আর ইমাম জ্ঞানের এই কেন্দ্রটি পরিচালনা বা এর নেতৃত্বের দায়িত্বে ছিলেন। মুতাওয়াক্কিলের শাসনামলে ইমাম হাদি (আ.) বাধ্য হয়েছিলেন মদীনা ছেড়ে সামেরায় বসবাস করতে। কেননা মুতাওয়াক্কিল জনগণের মাঝে ইমাম হাদি (আ.) এর প্রভাব প্রতিপত্তিকে ভয় করতো। তাই সে চাইতো ইমামকে জনগণের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে। এ কারণেই ইমামকে সে সামেরায় অর্থাৎ মুতাওয়াক্কিলের হুকুমাতের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
ইমাম হাদি (আ.) যেহেতু আব্বাসীয় সেনাদের কড়া নজরদারিতে ছিলেন, সে কারণে জনগণের সাথে তাঁর সম্পর্ক রাখার পদ্ধতিটি ছিল একটু আলাদা। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচন করেছিলেন এবং প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিনিধিদের কাজ ছিল জনগণের কাছে ইমামের বক্তব্য,চিন্তাদর্শ,বিধিবিধান ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পৌঁছানো এবং ইমামকেও জনগণের মূল সমস্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা। অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ইমামের প্রতিনিধিগণ খুব সহজে ইমামের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতেন না। তাঁরা তাই বিভিন্ন রকম বেশে যেমন লেবাস পরিবর্তন করে কিংবা বিক্রেতার বেশে ইমামের কাছে আসতে বাধ্য হতেন।
সামেরা শহরেও ইমাম হাদি (আ.)কে লোকজন স্বাগত জানায় এবং মুতাওয়াক্কিল চেষ্টা করে জনগণের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা কমানোর। একদিন মুতাওয়াক্কিলের নির্দেশে ইমাম হাদি (আ.) কে এমন একটা মজলিসে আনা হলো যেখানে অনেক ধনীলোক এবং রাজদরবারের লোকজন উপস্থিত ছিল। মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদি (আ.) কে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বললো। ইমাম প্রথমে এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু মুতাওয়াক্কিল ব্যাপক পীড়াপীড়ি করে। অবশেষে ইমাম মজলিসের অবস্থা এবং সেখানে উপস্থিত লোকজনের বিষয়টি বিবেচনা করে অত্যাচারী শাসকদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতনতামূলক একটি কবিতা পড়েন। তাঁর পঠিত কবিতাটির অর্থ ছিল এ রকম :উঁচু উঁচু চূড়া নিজের বাসস্থানের জন্যে নির্বাচন করা হলো, সশস্ত্র ব্যক্তিদেরকে সেই বাসস্থান পাহারা দেওয়ার জন্যে মোতায়েন করা হলো এবং নিরাপত্তার সকল সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হলো। তবু কোনো কিছুই মৃত্যু ঠেকাতে পারলো না। নিজের বাসস্থানটিকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর জন্যে কতো দীর্ঘ সময়ই না ব্যয় করা হলো, তবু আজরাইলের ডাকে সাড়া দিয়ে সেইসব অট্টালিকাকে বিদায় বলতে হলো। সুউচ্চ চূড়ায় তাদের সেইসব অট্টালিকা কালের পরিক্রমায় মাটির টিলায় পরিণত হলো।
ইমামের অর্থবহ ও শক্তিশালী বক্তব্য মজলিসে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের হৃদয়ের গভীরে নাড়া দেয় এমনকি স্বয়ং স্বৈরাচারী শাসক মুতাওয়াক্কিলও ইমামের কবিতার বক্তব্যে আন্দোলিত হয়।
হালাল রুটি-রুযির ব্যাপারে ইমাম ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের বাইরে সম্পদের পার্থিব চাকচিক্যের প্রতি মোটেও আকৃষ্ট ছিলেন না তিনি,বরং সমাজের অসহায়-গরীবদের সাহায্যে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ইমাম হাদি (আ.) এর অর্থনৈতিক সাহায্য সমাজ থেকে দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। জনগণ তাঁর কাছ থেকে সাহায্য প্রাপ্তির ব্যাপারে ছিল আশাবাদী এবং বলা যায় তাঁর বাসা ছিল অসহায় দরিদ্রদের একরকম আশ্রয় শিবির। ইমাম ছিলেন ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও ঔদার্যের ক্ষেত্রে অনন্য এক দৃষ্টান্ত।যে লোকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইমামকে সামেরায় যেতে হয়েছিল,ইমাম তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ইমামের একটি বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শেষ করবো আজকের আলোচনা। তিনি বলেছেনঃ 'আল্লাহ সৌন্দর্যপ্রিয়,তিনি মুমিনদের বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না। তিনি তাঁর বান্দাদের মাঝে তাঁর নিয়ামতের প্রভাব বা প্রতিফলন দেখতে ভালোবাসেন। কিন্তু বান্দা কী করে তা প্রকাশ করবে?এ রকম প্রশ্নের জবাবে ইমাম বলেনঃনিজের জামা-কাপড় পরিষ্কার রাখবে,সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং নিজের ঘরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখবে।(রেডিও তেহরান)
ইমাম হাদি (আ.) ছিলেন একজন গভীর জ্ঞানসম্পন্ন এবং পূর্ণতা ও তাকওয়ার অধিকারী মহান এক ব্যক্তিত্ব। ইমামদের সম্পর্কে ইমাম হাদি (আ.) বলেছেনঃ তাঁরা হলেন রহমতের খনি, জ্ঞানের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার এবং হেদায়েত ও পরহেজগারীর মূল কাঠামো। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইবনে শাহর অশুব ইমাম হাদি (আ.) এর জ্ঞান ও আল্লাহর সাথে তাঁর সম্পর্কের ব্যাপারে বলেছেনঃ হযরত হাদি ছিলেন একজন পরিপূর্ণতম মানুষ।যখনই তিনি চুপচাপ থাকতেন খুবই মর্যাদাবান মনে হতো, আবার যখন কথা বলতেন তাঁর সেই মর্যাদা আরো বেড়ে যেত। তিনি যে নবী পরিবারের সন্তান সেই ঐশ্বর্য তাঁর চেহারায় জ্বলজ্বলে ছিল,কেননা তিনি ছিলেন রেসালাতের বৃক্ষেরই ফল এবং নবীজীর খান্দানেরই মনোনীত।
ইমাম হাদি (আ.) ২১২ হিজরীর মধ্য জ্বিলহাজ্বে অর্থাৎ জ্বিলহাজ্ব মাসের ১৫ তারিখে মদীনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইমাম জাওয়াদ (আ.) এর শাহাদাতের পর তিনি মুসলমানদের নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তেত্রিশ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ইমাম হাদি (আ.) এর জীবনকালে মুতাওয়াক্কিলসহ আব্বাসীয় খলিফাদের বেশ কয়েকজনের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। চিন্তা ও রাজনৈতিক দিক থেকে এই মেয়াদকাল ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছিল। আব্বাসীয় শাসনের যুগ যতোই অতিক্রান্ত হচ্ছিল ততোই তাদের সম্মান ও মর্যাদা হ্রাস পাচ্ছিল। তাদের মর্যাদা হ্রাস পাবার পেছনে কারণ ছিল-সমাজে তাদের দুর্নীতি এবং তাদের শাসক হবার যোগ্যতাহীনতার ব্যাপারে জনতার মুখে মুখে রব ওঠা-যার ফলে মানুষ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল।
অন্যদিকে,নতুন নতুন চিন্তাধারা আর বিকৃত বিশ্বাসের প্রচলনের কারণে মানুষের চিন্তারাজ্যে এবং বোধ ও বিশ্বাসে ভয়াবহ বিকৃতি জেঁকে বসেছিল। ইমাম হাদি (আ.) যদি এই দুঃসময়ে ইসলামের উন্নত নীতি-নৈতিকতার চর্চা ও বিকাশ না ঘটাতেন,তাহলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও নীতিমালাগুলো বিদায়াত আর বিচ্যুতিতে ডুবে যেত। ইমাম হাদি (আ.) শুরুতে মদীনায় বসবাস করতেন। মদীনা ছিল মুসলিম বিশ্বের জন্যে ইসলামী বিধি-বিধান এবং জ্ঞানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আর ইমাম জ্ঞানের এই কেন্দ্রটি পরিচালনা বা এর নেতৃত্বের দায়িত্বে ছিলেন। মুতাওয়াক্কিলের শাসনামলে ইমাম হাদি (আ.) বাধ্য হয়েছিলেন মদীনা ছেড়ে সামেরায় বসবাস করতে। কেননা মুতাওয়াক্কিল জনগণের মাঝে ইমাম হাদি (আ.) এর প্রভাব প্রতিপত্তিকে ভয় করতো। তাই সে চাইতো ইমামকে জনগণের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে। এ কারণেই ইমামকে সে সামেরায় অর্থাৎ মুতাওয়াক্কিলের হুকুমাতের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
ইমাম হাদি (আ.) যেহেতু আব্বাসীয় সেনাদের কড়া নজরদারিতে ছিলেন, সে কারণে জনগণের সাথে তাঁর সম্পর্ক রাখার পদ্ধতিটি ছিল একটু আলাদা। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচন করেছিলেন এবং প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিনিধিদের কাজ ছিল জনগণের কাছে ইমামের বক্তব্য,চিন্তাদর্শ,বিধিবিধান ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলো পৌঁছানো এবং ইমামকেও জনগণের মূল সমস্যাদি সম্পর্কে অবহিত করা। অবশ্য রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ইমামের প্রতিনিধিগণ খুব সহজে ইমামের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতেন না। তাঁরা তাই বিভিন্ন রকম বেশে যেমন লেবাস পরিবর্তন করে কিংবা বিক্রেতার বেশে ইমামের কাছে আসতে বাধ্য হতেন।
সামেরা শহরেও ইমাম হাদি (আ.)কে লোকজন স্বাগত জানায় এবং মুতাওয়াক্কিল চেষ্টা করে জনগণের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা কমানোর। একদিন মুতাওয়াক্কিলের নির্দেশে ইমাম হাদি (আ.) কে এমন একটা মজলিসে আনা হলো যেখানে অনেক ধনীলোক এবং রাজদরবারের লোকজন উপস্থিত ছিল। মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদি (আ.) কে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বললো। ইমাম প্রথমে এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু মুতাওয়াক্কিল ব্যাপক পীড়াপীড়ি করে। অবশেষে ইমাম মজলিসের অবস্থা এবং সেখানে উপস্থিত লোকজনের বিষয়টি বিবেচনা করে অত্যাচারী শাসকদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতনতামূলক একটি কবিতা পড়েন। তাঁর পঠিত কবিতাটির অর্থ ছিল এ রকম :উঁচু উঁচু চূড়া নিজের বাসস্থানের জন্যে নির্বাচন করা হলো, সশস্ত্র ব্যক্তিদেরকে সেই বাসস্থান পাহারা দেওয়ার জন্যে মোতায়েন করা হলো এবং নিরাপত্তার সকল সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হলো। তবু কোনো কিছুই মৃত্যু ঠেকাতে পারলো না। নিজের বাসস্থানটিকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর জন্যে কতো দীর্ঘ সময়ই না ব্যয় করা হলো, তবু আজরাইলের ডাকে সাড়া দিয়ে সেইসব অট্টালিকাকে বিদায় বলতে হলো। সুউচ্চ চূড়ায় তাদের সেইসব অট্টালিকা কালের পরিক্রমায় মাটির টিলায় পরিণত হলো।
ইমামের অর্থবহ ও শক্তিশালী বক্তব্য মজলিসে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের হৃদয়ের গভীরে নাড়া দেয় এমনকি স্বয়ং স্বৈরাচারী শাসক মুতাওয়াক্কিলও ইমামের কবিতার বক্তব্যে আন্দোলিত হয়।
হালাল রুটি-রুযির ব্যাপারে ইমাম ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের বাইরে সম্পদের পার্থিব চাকচিক্যের প্রতি মোটেও আকৃষ্ট ছিলেন না তিনি,বরং সমাজের অসহায়-গরীবদের সাহায্যে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ইমাম হাদি (আ.) এর অর্থনৈতিক সাহায্য সমাজ থেকে দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। জনগণ তাঁর কাছ থেকে সাহায্য প্রাপ্তির ব্যাপারে ছিল আশাবাদী এবং বলা যায় তাঁর বাসা ছিল অসহায় দরিদ্রদের একরকম আশ্রয় শিবির। ইমাম ছিলেন ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও ঔদার্যের ক্ষেত্রে অনন্য এক দৃষ্টান্ত।যে লোকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইমামকে সামেরায় যেতে হয়েছিল,ইমাম তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ইমামের একটি বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শেষ করবো আজকের আলোচনা। তিনি বলেছেনঃ 'আল্লাহ সৌন্দর্যপ্রিয়,তিনি মুমিনদের বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না। তিনি তাঁর বান্দাদের মাঝে তাঁর নিয়ামতের প্রভাব বা প্রতিফলন দেখতে ভালোবাসেন। কিন্তু বান্দা কী করে তা প্রকাশ করবে?এ রকম প্রশ্নের জবাবে ইমাম বলেনঃনিজের জামা-কাপড় পরিষ্কার রাখবে,সুগন্ধি ব্যবহার করবে এবং নিজের ঘরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখবে।(রেডিও তেহরান)