পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
মহান আল্লাহ তাআলা তার ফেরেশতাগণ এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস রাখা ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছাড়াও আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ধর্মসমূহের অনুসারীদের আকীদা বিশ্বাসের মূল ভিত্তি।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর প্রতি ইমান রাখার সাথে সাথে পরকালের প্রতি ইমান রাখার বিষয়টি এসেছে। পবিত্র কোরআনে পুনরুত্থান দিবসকে প্রত্যাবর্তন দিবসকে হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ অর্থৎ ভয় কর সেই দিনটিকে যেদিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তীত হবে।
পবিত্র কোরআনের কিছুকিছু আয়াত, কিয়ামত যে অবশ্যম্ভাবী সে ব্যাপারে মানুষের কর্ণগোচর করেছে। (পবিত্র কোরআনের কিছু কিছু আয়াতে কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী হওয়ার ব্যাপাওে বলা হয়েছে।)
ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ অর্থাৎ অতপর কিয়ামতেরদিন তিনি তোমাদেরকে একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না। সূরা আনআমের ১২ নং আয়াত কিয়ামত অবধারিতভাবে সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছে এবং ঐ দিন সমস্ত মানব জাতির একত্রিত হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ অর্থাৎ নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ভূল ধারণার উত্তর :
সব সময়ই কিছুকিছু লোক থাকে যারা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যপারে বিভিন্ন আপত্তি ও ভূল ধারণার সৃষ্টি করে থাকে। পবিত্র কোরআন স্বল্প বর্ণনা কিন্তু ব্যাপক অর্থ ও যুক্তিভিত্তিক বর্ণনার দ্বারা সকল ভূল ধারণা ও সন্দেহকে অকার্যকর ঘোষণা করে এরশাদ করেছে : মহান আল্লাহ তাআলা যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন তার জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয় যে পুনরায় সকলকে জীবিত করবেন।
قُلِ اللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ অর্থাৎ বলুন আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন অতপর মৃত্যু দেন, অতপর তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন যাতে কোন সন্দেহ নেই। মহান রাব্বুল আলামীন সূরা হাজ্বের পাচ নং আয়াতে বলেছেন: যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে তোমাদের পূর্ববর্তী দিকে তাকাও, তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, অতপর তার থেকে বীর্যে পরিবর্তীত হয়েছো তারপর..... এই ভাবেই পর্যায়ক্রমে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তরকে উল্লেখ করেছেন :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ
অর্থাৎ হে মানব সকল যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও (তবে ভেবে দেখ) নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। মূলত এই আয়াত মহান আল্লাহ পাকের কুদরত দ্বারা মানব জাতির পুনরায় জীবিত হওয়াকে প্রমাণিত করে।
সূরা ইউসুফের ৫৬ নং আয়াতে আরো বলেছেন : هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
অর্থ: তিনিই জীবনও মরণ দান করেন এবং তারই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ ঠিক যেভাবে তিনি জীবন দান করেন এবং তা নিয়ে নেন, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তার জন্য এটা কোন দুরূহ কাজ নয়। তনি একজনকে জীবিত করবেন না সকলকে জীবিত করবেন এতে কিছু যায় আসেনা।
مَا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ إِلَّا كَنَفْسٍ وَاحِدَةٍ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِير অর্থাৎ তোমাদের সৃষ্টি ও পনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন।
কিয়ামতের বৈশিষ্ট্য
১. আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন : আমরা মানুষ সাধারণত ইহজগতে মানবীয় বিধিবিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে থাকে। এসব আইন কানুন মানুষ কর্তৃক রচিত হওয়াই এতে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে, যেমন অন্যের প্রতি যুলুম হওয়ার বা আইনের হাত থেকে পালানোর এবং বিভিন্ন শাস্তির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পারলৌকিক বিধি বিধানের সাথে পার্থিব জীবনের বিধিবিধানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। সেখানে কেউ মিথ্যা বলতে বা কোন কিছু অস্বীকার করতে অথবা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবেনা!
হ্যা,কিয়ামত আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন : “সেদিনের প্রকৃত রাজত্ব দয়াময়ের জন্যই নির্ধারিত”
২. কারো প্রতি যুলুম করা হবে না : সে দিন প্রত্যেকেই নিজনিজ কর্মফল দেখতে পাবে, কারো প্রতিই কোন অবিচার করা হবেনা হবেনা :“ আজ প্রত্যেক মানুষকে সে পরিমাণ প্রতিফলই দেয়া হবে যে পরিমাণ সে (দুনিয়ায়) অর্জন করে এসেছে; আজ কারও প্রতি কোনরকম অবিচার করা হবেনা, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী ”।
৩. ন্যায়বিচার থেকে পালাতে পারবেনা : অনেক সময় মন্দ লোকেরা দুনিয়ার বুকে সম্পদ, প্রতারণা এবং ক্ষমতাবলে জঘন্য অপরাধ এবং শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যায়, কিন্তু পরকালের ন্যায় বিচার থেকে পালানোর কোন উপায় নেই।:“যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকার সাধন করবে না। তার জন্য ব্যতীত যে (সেদিন) বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে।”
৪. ক্ষমাপ্রার্থনায় কোন লাভ হবেনা : পৃথিবী আদালতসমুহে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ থেকে অব্যহতি লাভ করা বা শস্তি কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন ক্ষমা চেয়ে কোন লাভ হবেনা : “ সে দিন যালিমদের ওযর আপত্তি কোনোই উপকারে আসবেনা, তাদের জন্য অভিশাপ, তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।”
৫. ভাল এবং পরহেজগার লোকদের দিন : কিয়ামতের দিন হচ্ছে ভাল এবং পরহেজগার লোকদের দিন। যারা তাদের কথা ও কাজের ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন করেছে তারা লাভবান হবে :“ আল্লাহ বলবেন, ‘এই সেই দিন, যেদিন সত্যভাষীদের সত্যভাষণ কাজে আসবে”।
কিয়ামতেরদিন শুধুমাত্র পরহেজগার ব্যক্তিরাই একে অপরের বন্ধু হবে :“ সে দিন সবাই একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে, অবশ্য যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করেছে তাদের কথা আলাদা”।
পরকালের স্থায়ী আবাসস্থল শুধুমাত্র তাদের জন্যই যারা দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধ মেনে চলেছে এবং পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখছে : “ এবং পরকালের আবাসস্থল যারা আত্মসংযম অবলম্বন করেছে কেবল তাদের জন্য শ্রেয়” “ এবং অবশ্যই পরকালের নিবাস অধিকতর উত্তম এবং সাবধানীদের নিবাস কত উত্তম”।
বেহেশত এবং বেহেশতবাসী
মুমিন এবং সৎকর্মশীলদের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ :
মুমিন এবং পরহেজগার ব্যক্তিদের পুরুস্কার হচ্ছে বেহেশত। পবিত্র কোরআন শরীফে বিভিন্ন শ্রেণীর বেহেশত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিছু কিছু আয়াতে মুমিন এবং সৎকর্মশীলদের বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে বলা হয়েছে : “ যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের (হে রাসূল!) সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য (বেহেশতে) এমন বাগিচাসমূহ রয়েছে যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত”। ইমানদার নর নরীদের স্থান বেহেশতে: “ আল্লাহ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদের সেই উদ্যানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন”। এবং সেটাকে সৎকর্মশীলদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন কোরআনে বলা হয়েছে :“ যা সাবধানীদের (আত্মসংযমীদের) জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে”।
বেহেশতবাসীদের নেয়ামতের ভিন্নতা :
পৃথিবীতে বিশ্বাসীব্যক্তিদের যেমন তাদের ইমানের স্তরের ভিন্নতা রয়েছে তেমনি পরকালেও তাদের প্রতিদানের ভিন্নতা রয়েছে। এই পাঠে বেহেশতের কিছু কিছ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা সবার জন্য নয়, কিছু কিছু বিষয় যেমন বাগ-বাগিচা, পূতপবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী এগুলো সকল বেহেশতবাসীর জন্যই পবিত্র কোরআনে এসেছে :“ এমন এক জান্নাত যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত”,“ তাদের জন্য সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী” ; কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুরুস্কার যা উচ্চস্তরের ইমানদারদের জন্য নির্ধারিত।
একটি আয়াতে এই দুই ধরণের প্রতিদানকে একসাথে নিয়ে আসা হয়েছে : “ ‘আদন’-এর উদ্যানসমূহে পবিত্র (বাসগৃহ রয়েছে); আর আল্লাহর সন্তুষ্টি তো মহত্তম এবং এটাই মহাসাফল্য”, পবিত্র বাসস্থল সমস্ত জান্নাতবাসীদের জন্যই রয়েছে, কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি বেহেশতের সকল নেয়ামতের চেয়ে সর্বোৎকৃষ্ট। এই মহাসাফল্য শুধুমাত্র বিশেষ মুমিন ব্যক্তিদের জন্য।
বেহেশতের বিশালতা :
পবিত্র কোরআন শরীফের একটি আয়াতে বেহেশতের বিস্তৃতি সম্পর্কে এমন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা আমাদের কল্পনার বাইরে। বলা হয়েছে, বেহেশতের বিশালতা আসমান ও জমিনের বিশালতার ন্যায় :“তোমরা সকলে তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে অগ্রগামী হও যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে”। অন্য এক আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন- জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত :“ এবং তোমাদের প্রতিপালকের মার্জনা ও বেহেশতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার বিস্তৃতি আকাশম-লী ও পৃথিবীর সমান যা সাবধানীদের (আত্মসংযমীদের) জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে”। এই দুটি আয়াত পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাব যে, পূববর্তী আয়াতে উল্লিখিত ‘আকাশ’ এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রথম আসমানই নয় যা আমরা দেখতে পাই বরঞ্চ সমস্ত আসমান।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তার দাসত্ব করার এবং তার নেয়ামতসমূহকে ভালভাবে জানার তৌফিক দান করুন
জাহান্নাম এবং জাহান্নামবাসী
কাফেররাই নরকের মূল বাসিন্দা :
পাপিষ্টদের শেষ পরিনতি জাহান্নাম, আর এই লোমহর্ষক নিকৃষ্ট আবাসস্থান মন্দ লোকদের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে। কাফেররাই এর মূল বাসিন্দা। যারা শুধুমাত্র মহান আল্লাহকেই নয় বরঞ্চ পুণরুত্থান দিবসকেও অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের অধিবাসী :“ যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি এবং তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তারাই আমার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ে যায় এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”
ইমানদার ব্যক্তিদের যারা অপ্রত্যাশিতভাবে ভুল ত্রুটিতে জড়িয়ে পড়েছেন তাদেরও মহান রাব্বুল আলামিনের ক্রোধাগ্নির সন্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তারা একদিন নরক থেকে মুক্তি পাবেন; কিন্তু কাফেররা কখোনই নরকের শাস্তি থেকে রেহাই পাবেনা, তারা চিরদিনই নরকের আগুনে দগ্ধ হবে :“ তবে যারা অবিশ্বাস করে ও আমাদের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানেই তারা চিরস্থায়ী হবে; কতই না নিকৃষ্ট তাদের পরিণাম”
জাহান্নামী হবার কারণ :
১. আল্লাহর নিদর্শননমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা : পবিত্র কোরআনের কতিপয় আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর আয়াত তথা নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং কিয়ামতকে অস্বীকার করার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং অস্বীকার করেছে জাহান্নাম হল তাদের উপযুক্ত শাস্তি: “ কিন্তু যারা অবিশ্বাস করেছে এবং আমাদের নিদর্শনাবলি ও পরকালের সাক্ষাৎকারকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে”।
২. ঔদ্ধত্য এবং একগুয়েমি : দোযখবাসী হবার আরেকটি কারণ হল, মহান আল্লাহর সন্মুখে অবাধ্যতা ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন:“ আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং দাম্ভিকতায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারাই জাহান্নামী এবং তারা সেখানে চিরকাল থাকবে” আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্তকারী এবং অহংকারীদের জন্য নরক পথ চেয়ে রয়েছে।
পবিত্র কোরআন শরীফে নরকের অধিবাসীদেরকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শত্রু বলে চিহ্নিত করা হয়েছে: “এটাই (জাহান্নাম) হচ্ছে আল্লাহ তাআলার শত্রুদের প্রতিদান, সেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী ঘর থাকবে”। জ্বি হ্যা, আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকারকারী এবং তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কারীর শাস্তি হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর প্রতি ইমান রাখার সাথে সাথে পরকালের প্রতি ইমান রাখার বিষয়টি এসেছে। পবিত্র কোরআনে পুনরুত্থান দিবসকে প্রত্যাবর্তন দিবসকে হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ অর্থৎ ভয় কর সেই দিনটিকে যেদিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তীত হবে।
পবিত্র কোরআনের কিছুকিছু আয়াত, কিয়ামত যে অবশ্যম্ভাবী সে ব্যাপারে মানুষের কর্ণগোচর করেছে। (পবিত্র কোরআনের কিছু কিছু আয়াতে কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী হওয়ার ব্যাপাওে বলা হয়েছে।)
ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ অর্থাৎ অতপর কিয়ামতেরদিন তিনি তোমাদেরকে একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না। সূরা আনআমের ১২ নং আয়াত কিয়ামত অবধারিতভাবে সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছে এবং ঐ দিন সমস্ত মানব জাতির একত্রিত হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ অর্থাৎ নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ভূল ধারণার উত্তর :
সব সময়ই কিছুকিছু লোক থাকে যারা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যপারে বিভিন্ন আপত্তি ও ভূল ধারণার সৃষ্টি করে থাকে। পবিত্র কোরআন স্বল্প বর্ণনা কিন্তু ব্যাপক অর্থ ও যুক্তিভিত্তিক বর্ণনার দ্বারা সকল ভূল ধারণা ও সন্দেহকে অকার্যকর ঘোষণা করে এরশাদ করেছে : মহান আল্লাহ তাআলা যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন তার জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয় যে পুনরায় সকলকে জীবিত করবেন।
قُلِ اللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ অর্থাৎ বলুন আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন অতপর মৃত্যু দেন, অতপর তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন যাতে কোন সন্দেহ নেই। মহান রাব্বুল আলামীন সূরা হাজ্বের পাচ নং আয়াতে বলেছেন: যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে তোমাদের পূর্ববর্তী দিকে তাকাও, তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, অতপর তার থেকে বীর্যে পরিবর্তীত হয়েছো তারপর..... এই ভাবেই পর্যায়ক্রমে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তরকে উল্লেখ করেছেন :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ
অর্থাৎ হে মানব সকল যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও (তবে ভেবে দেখ) নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। মূলত এই আয়াত মহান আল্লাহ পাকের কুদরত দ্বারা মানব জাতির পুনরায় জীবিত হওয়াকে প্রমাণিত করে।
সূরা ইউসুফের ৫৬ নং আয়াতে আরো বলেছেন : هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
অর্থ: তিনিই জীবনও মরণ দান করেন এবং তারই কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ ঠিক যেভাবে তিনি জীবন দান করেন এবং তা নিয়ে নেন, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তার জন্য এটা কোন দুরূহ কাজ নয়। তনি একজনকে জীবিত করবেন না সকলকে জীবিত করবেন এতে কিছু যায় আসেনা।
مَا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ إِلَّا كَنَفْسٍ وَاحِدَةٍ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِير অর্থাৎ তোমাদের সৃষ্টি ও পনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন।
কিয়ামতের বৈশিষ্ট্য
১. আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন : আমরা মানুষ সাধারণত ইহজগতে মানবীয় বিধিবিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে থাকে। এসব আইন কানুন মানুষ কর্তৃক রচিত হওয়াই এতে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে, যেমন অন্যের প্রতি যুলুম হওয়ার বা আইনের হাত থেকে পালানোর এবং বিভিন্ন শাস্তির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পারলৌকিক বিধি বিধানের সাথে পার্থিব জীবনের বিধিবিধানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। সেখানে কেউ মিথ্যা বলতে বা কোন কিছু অস্বীকার করতে অথবা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবেনা!
হ্যা,কিয়ামত আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন : “সেদিনের প্রকৃত রাজত্ব দয়াময়ের জন্যই নির্ধারিত”
২. কারো প্রতি যুলুম করা হবে না : সে দিন প্রত্যেকেই নিজনিজ কর্মফল দেখতে পাবে, কারো প্রতিই কোন অবিচার করা হবেনা হবেনা :“ আজ প্রত্যেক মানুষকে সে পরিমাণ প্রতিফলই দেয়া হবে যে পরিমাণ সে (দুনিয়ায়) অর্জন করে এসেছে; আজ কারও প্রতি কোনরকম অবিচার করা হবেনা, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী ”।
৩. ন্যায়বিচার থেকে পালাতে পারবেনা : অনেক সময় মন্দ লোকেরা দুনিয়ার বুকে সম্পদ, প্রতারণা এবং ক্ষমতাবলে জঘন্য অপরাধ এবং শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যায়, কিন্তু পরকালের ন্যায় বিচার থেকে পালানোর কোন উপায় নেই।:“যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকার সাধন করবে না। তার জন্য ব্যতীত যে (সেদিন) বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে।”
৪. ক্ষমাপ্রার্থনায় কোন লাভ হবেনা : পৃথিবী আদালতসমুহে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ থেকে অব্যহতি লাভ করা বা শস্তি কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন ক্ষমা চেয়ে কোন লাভ হবেনা : “ সে দিন যালিমদের ওযর আপত্তি কোনোই উপকারে আসবেনা, তাদের জন্য অভিশাপ, তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।”
৫. ভাল এবং পরহেজগার লোকদের দিন : কিয়ামতের দিন হচ্ছে ভাল এবং পরহেজগার লোকদের দিন। যারা তাদের কথা ও কাজের ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন করেছে তারা লাভবান হবে :“ আল্লাহ বলবেন, ‘এই সেই দিন, যেদিন সত্যভাষীদের সত্যভাষণ কাজে আসবে”।
কিয়ামতেরদিন শুধুমাত্র পরহেজগার ব্যক্তিরাই একে অপরের বন্ধু হবে :“ সে দিন সবাই একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে, অবশ্য যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করেছে তাদের কথা আলাদা”।
পরকালের স্থায়ী আবাসস্থল শুধুমাত্র তাদের জন্যই যারা দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধ মেনে চলেছে এবং পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখছে : “ এবং পরকালের আবাসস্থল যারা আত্মসংযম অবলম্বন করেছে কেবল তাদের জন্য শ্রেয়” “ এবং অবশ্যই পরকালের নিবাস অধিকতর উত্তম এবং সাবধানীদের নিবাস কত উত্তম”।
বেহেশত এবং বেহেশতবাসী
মুমিন এবং সৎকর্মশীলদের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ :
মুমিন এবং পরহেজগার ব্যক্তিদের পুরুস্কার হচ্ছে বেহেশত। পবিত্র কোরআন শরীফে বিভিন্ন শ্রেণীর বেহেশত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিছু কিছু আয়াতে মুমিন এবং সৎকর্মশীলদের বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে বলা হয়েছে : “ যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের (হে রাসূল!) সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য (বেহেশতে) এমন বাগিচাসমূহ রয়েছে যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত”। ইমানদার নর নরীদের স্থান বেহেশতে: “ আল্লাহ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদের সেই উদ্যানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন”। এবং সেটাকে সৎকর্মশীলদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন কোরআনে বলা হয়েছে :“ যা সাবধানীদের (আত্মসংযমীদের) জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে”।
বেহেশতবাসীদের নেয়ামতের ভিন্নতা :
পৃথিবীতে বিশ্বাসীব্যক্তিদের যেমন তাদের ইমানের স্তরের ভিন্নতা রয়েছে তেমনি পরকালেও তাদের প্রতিদানের ভিন্নতা রয়েছে। এই পাঠে বেহেশতের কিছু কিছ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা সবার জন্য নয়, কিছু কিছু বিষয় যেমন বাগ-বাগিচা, পূতপবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী এগুলো সকল বেহেশতবাসীর জন্যই পবিত্র কোরআনে এসেছে :“ এমন এক জান্নাত যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত”,“ তাদের জন্য সেখানে থাকবে পবিত্র সহধর্মী ও সহধর্মিনী” ; কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুরুস্কার যা উচ্চস্তরের ইমানদারদের জন্য নির্ধারিত।
একটি আয়াতে এই দুই ধরণের প্রতিদানকে একসাথে নিয়ে আসা হয়েছে : “ ‘আদন’-এর উদ্যানসমূহে পবিত্র (বাসগৃহ রয়েছে); আর আল্লাহর সন্তুষ্টি তো মহত্তম এবং এটাই মহাসাফল্য”, পবিত্র বাসস্থল সমস্ত জান্নাতবাসীদের জন্যই রয়েছে, কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি বেহেশতের সকল নেয়ামতের চেয়ে সর্বোৎকৃষ্ট। এই মহাসাফল্য শুধুমাত্র বিশেষ মুমিন ব্যক্তিদের জন্য।
বেহেশতের বিশালতা :
পবিত্র কোরআন শরীফের একটি আয়াতে বেহেশতের বিস্তৃতি সম্পর্কে এমন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা আমাদের কল্পনার বাইরে। বলা হয়েছে, বেহেশতের বিশালতা আসমান ও জমিনের বিশালতার ন্যায় :“তোমরা সকলে তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে অগ্রগামী হও যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে”। অন্য এক আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন- জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত :“ এবং তোমাদের প্রতিপালকের মার্জনা ও বেহেশতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার বিস্তৃতি আকাশম-লী ও পৃথিবীর সমান যা সাবধানীদের (আত্মসংযমীদের) জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে”। এই দুটি আয়াত পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাব যে, পূববর্তী আয়াতে উল্লিখিত ‘আকাশ’ এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রথম আসমানই নয় যা আমরা দেখতে পাই বরঞ্চ সমস্ত আসমান।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তার দাসত্ব করার এবং তার নেয়ামতসমূহকে ভালভাবে জানার তৌফিক দান করুন
জাহান্নাম এবং জাহান্নামবাসী
কাফেররাই নরকের মূল বাসিন্দা :
পাপিষ্টদের শেষ পরিনতি জাহান্নাম, আর এই লোমহর্ষক নিকৃষ্ট আবাসস্থান মন্দ লোকদের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে। কাফেররাই এর মূল বাসিন্দা। যারা শুধুমাত্র মহান আল্লাহকেই নয় বরঞ্চ পুণরুত্থান দিবসকেও অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের অধিবাসী :“ যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি এবং তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তারাই আমার অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ে যায় এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”
ইমানদার ব্যক্তিদের যারা অপ্রত্যাশিতভাবে ভুল ত্রুটিতে জড়িয়ে পড়েছেন তাদেরও মহান রাব্বুল আলামিনের ক্রোধাগ্নির সন্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তারা একদিন নরক থেকে মুক্তি পাবেন; কিন্তু কাফেররা কখোনই নরকের শাস্তি থেকে রেহাই পাবেনা, তারা চিরদিনই নরকের আগুনে দগ্ধ হবে :“ তবে যারা অবিশ্বাস করে ও আমাদের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানেই তারা চিরস্থায়ী হবে; কতই না নিকৃষ্ট তাদের পরিণাম”
জাহান্নামী হবার কারণ :
১. আল্লাহর নিদর্শননমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা : পবিত্র কোরআনের কতিপয় আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর আয়াত তথা নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং কিয়ামতকে অস্বীকার করার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং অস্বীকার করেছে জাহান্নাম হল তাদের উপযুক্ত শাস্তি: “ কিন্তু যারা অবিশ্বাস করেছে এবং আমাদের নিদর্শনাবলি ও পরকালের সাক্ষাৎকারকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে”।
২. ঔদ্ধত্য এবং একগুয়েমি : দোযখবাসী হবার আরেকটি কারণ হল, মহান আল্লাহর সন্মুখে অবাধ্যতা ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন:“ আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং দাম্ভিকতায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারাই জাহান্নামী এবং তারা সেখানে চিরকাল থাকবে” আল্লাহ তাআলার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্তকারী এবং অহংকারীদের জন্য নরক পথ চেয়ে রয়েছে।
পবিত্র কোরআন শরীফে নরকের অধিবাসীদেরকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শত্রু বলে চিহ্নিত করা হয়েছে: “এটাই (জাহান্নাম) হচ্ছে আল্লাহ তাআলার শত্রুদের প্রতিদান, সেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী ঘর থাকবে”। জ্বি হ্যা, আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকারকারী এবং তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কারীর শাস্তি হচ্ছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।