নাহজুল বালাগার বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক আলোচনা
ইমাম আলী (আ) এর চিন্তাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গ্রন্থ নাহজুল বালাগার বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক আলোচনায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদের নিয়ে যাবো নাহজুল বালাগার সুগন্ধি উদ্যানে। সেখানে বিচিত্র ফুলের ঘ্রাণে ভরে যাবে আপনার হৃদয়মন। মুগ্ধ হয়ে উঠবেন বক্তব্যের গভীরতায় আর ভাষাভঙ্গির ওজস্বিতায়। কারণ এই বক্তব্য,এই চিন্তা-চেতনা এমন একজন মহান নজির বিহীন ও পূত-পবিত্র ব্যক্তিত্বের,যাঁর অন্তর ছিল সবসময় খোদায়ী প্রেম তথা মারেফাতের আলোয় আলোকিত।তাই চৌদ্দটি শতাব্দি পেরিয়ে যাবার পর আজো নাহজুল বালাগার চমৎকৃতি আর অনিন্দ্য সৌন্দর্যে বর্তমান পৃথিবীর মানুষ মুগ্ধ।
মিশরের সাবেক মুফতি শায়খ মোঃ আবদুহ স্বদেশের বাইরে গিয়ে নাহজুল বালাগার সাথে পরিচিত হন। নাহজুল বালাগায় বিষয়গত যে বৈচিত্র্য রয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই গ্রন্থটি পড়ে যেভাবে পরিতৃপ্তি লাভ করেন,তা দেখে তিনি কেবলই বিস্মিত হন। এই বিস্ময় তাঁর ভেতর একটা বোধ ও উপলব্ধি জাগিয়ে দেয়,তাহলো তিনি অত্যন্ত মূল্যবান একটি সম্পদ বা রতÅভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছেন। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ নাহজুল বালাগার একটি সংস্করণ ছাপার উদ্যোগ নেন যাতে বিখ্যাত এই গ্রন্থটির সাথে বিশ্ববাসীর পরিচয় ঘটে। তিনি বলেন-আরবি ভাষী জনগোষ্ঠির মাঝে এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি মনে করেন না যে, কোরআন এবং হাদিসের পর সবচে অভিজাত,অলংকার সমৃদ্ধ,অর্থবহ এবং পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য হলো হযরত আলী (আ) এর বক্তব্য।
কায়রো ইউনিভার্সিটির স্টাডিজ (উলুম) অনুষদের প্রধান আলী আল জানদি কবিতা ও আলী (আ) এর মণীষা নামক গ্রন্থে লিখেছেন,অনেকেই আছেন স্বল্পভাষণে বেশ প্রাজ্ঞ। আবার কেউ কেউ দীর্ঘ বক্তব্য প্রদানে অভ্যস্থ। আলী (আ) উভয় ক্ষেত্রেই ছিলেন ভীষণ পারদর্শী ও অগ্রবর্তী। যেমনটি সর্বপ্রকার ফযিলতের ক্ষেত্রেও সবার উপরে। হাজার বছর আগে আলী (আ) এর কথামালার বাইরেও তাঁর খুতবা বা ভাষণগুলো, চিঠিগুলো, দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি গুলোকে যিনি একত্রিত করে নাহজুল বালাগা নামে সংকলিত করেছেন,সেই মহান সংকলক সাইয়্যেদ রাজি বলেন-আলী (আ) এর ব্যাপারে বিস্ময় হলো পরহেজগারী,জাগৃতি ও সচেতন হবার জন্যে তিনি যেসব বক্তব্য রেখেছেন, মানুষ সেসব শুনে গভীরভাবে চিন্তা করতো যে যিনি এই ধরনের বক্তব্য রাখেন তিনি পার্থিব সম্পদ চিন্তা থেকে দূরে থাকা এবং পরহেজগারীর বাইরে আর কিছুই চেনেন না।
ইমাম আলী (আ) এর বক্তব্য ছিল অবিশ্বাস্যরকম প্রভাব বিস্তারকারী। সমাজে তিনি ছিলেন এক মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। আবার যুদ্ধের ময়দানেও তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর আন্তরিক সাহস ও প্রেরণা সৃষ্টিকারী। অকুতোভয় বীরত্বের সাথে তিনি শত্র”দের ভুপাতিত করতেন। আবার তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ একজন পরহেজগার এবং শ্রেষ্ঠ একজন আবেদ বা প্রার্থনাকারী। নিঃসন্দেহে হযরত আলী (আ) এর বক্তব্যগুলো ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে উৎসারিত। রাসূলে খোদা (সা) সবসময় তাঁর বক্তব্যে ইমাম আলী (আ) এর এই বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির কথা উল্লেখ করতেন। সেইসাথে নবীজী বলতেন জনগণ যেন আলী (আ) এর এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারাকে নিজেদের কাজে লাগিয়ে উপকৃত হয়। নবীজী বলেছেন- انا مدينه العلم و علي بابها অর্থাৎ আমি হলাম জ্ঞানের নগরী আর আলী হলো সেই নগরীর দরোজা।
আমরা বরং আলী (আ) এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে জানতে তাঁর নিজস্ব বক্তব্য শোনার চেষ্টা করি। একদিন আলী (আ) এর একজন সঙ্গী চেয়েছিল কিছু বলতে। পারলোনা,বরং সে তোতলাতে শুরু করলো। হযরত আলী (আ) তখন বললেন-জবান হলো মানুষের একটা অঙ্গ এবং তা তার ধী-শক্তি,স্মরণশক্তির অন্তর্গত। এগুলো যদি কাজ না করে তাহলে বাকশক্তি কোনো কাজই করতে পারে না। তবে স্মৃতিশক্তি যদি খুলে যায় তাহলে বাক-প্রত্যঙ্গও উন্মোচিত হয়। এরপর আলী (আ) বলেন,আমরা হলাম কথার সৈনিকদের কমান্ডার। আমাদের মাঝে কথার বৃক্ষ শেকড় গজায় আর মাথার ওপরে ঝোলে তার শাখা-প্রশাখা,পত্র-পল্লব।
হযরত আলী(আ.) বলেছেন-কারো গোলামি করো না, কেননা আল্লাহ তোমাকে স্বাধীনতা ও আযাদি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
অলি-আউলিয়াগণ আল্লাহর সাথে ব্যাপক সম্পর্কের দৃঢ়তায় এতোদূর অগ্রসর হয়ে যান যে সাধারণ মানুষ তাঁদের অস্তিত্বের ফযিলতের গভীরতায় পৌঁছুতে পারেন না। ইমাম আলী (আ) আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী তেমনি একজন মহান অলি। গত আসরে আমরা এ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি আপনাদের। এ-ও বলেছি যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যগুলোর একটি সংকলন করা হয়েছে নাহজুল বালাগা নামে। এটি একটি স্বচ্ছ-নির্মল ঝর্ণাধারার মতো যার সাহায্যে তাঁকে যেমন ভালোভাবে চেনা যাবে তেমনি আল্লাহকে চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে জানা যাবে। তো চলুন,আমরা বরং সরাসরি আলোচনা শুরু করি। চলবে..
মিশরের সাবেক মুফতি শায়খ মোঃ আবদুহ স্বদেশের বাইরে গিয়ে নাহজুল বালাগার সাথে পরিচিত হন। নাহজুল বালাগায় বিষয়গত যে বৈচিত্র্য রয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই গ্রন্থটি পড়ে যেভাবে পরিতৃপ্তি লাভ করেন,তা দেখে তিনি কেবলই বিস্মিত হন। এই বিস্ময় তাঁর ভেতর একটা বোধ ও উপলব্ধি জাগিয়ে দেয়,তাহলো তিনি অত্যন্ত মূল্যবান একটি সম্পদ বা রতÅভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছেন। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ নাহজুল বালাগার একটি সংস্করণ ছাপার উদ্যোগ নেন যাতে বিখ্যাত এই গ্রন্থটির সাথে বিশ্ববাসীর পরিচয় ঘটে। তিনি বলেন-আরবি ভাষী জনগোষ্ঠির মাঝে এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি মনে করেন না যে, কোরআন এবং হাদিসের পর সবচে অভিজাত,অলংকার সমৃদ্ধ,অর্থবহ এবং পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য হলো হযরত আলী (আ) এর বক্তব্য।
কায়রো ইউনিভার্সিটির স্টাডিজ (উলুম) অনুষদের প্রধান আলী আল জানদি কবিতা ও আলী (আ) এর মণীষা নামক গ্রন্থে লিখেছেন,অনেকেই আছেন স্বল্পভাষণে বেশ প্রাজ্ঞ। আবার কেউ কেউ দীর্ঘ বক্তব্য প্রদানে অভ্যস্থ। আলী (আ) উভয় ক্ষেত্রেই ছিলেন ভীষণ পারদর্শী ও অগ্রবর্তী। যেমনটি সর্বপ্রকার ফযিলতের ক্ষেত্রেও সবার উপরে। হাজার বছর আগে আলী (আ) এর কথামালার বাইরেও তাঁর খুতবা বা ভাষণগুলো, চিঠিগুলো, দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি গুলোকে যিনি একত্রিত করে নাহজুল বালাগা নামে সংকলিত করেছেন,সেই মহান সংকলক সাইয়্যেদ রাজি বলেন-আলী (আ) এর ব্যাপারে বিস্ময় হলো পরহেজগারী,জাগৃতি ও সচেতন হবার জন্যে তিনি যেসব বক্তব্য রেখেছেন, মানুষ সেসব শুনে গভীরভাবে চিন্তা করতো যে যিনি এই ধরনের বক্তব্য রাখেন তিনি পার্থিব সম্পদ চিন্তা থেকে দূরে থাকা এবং পরহেজগারীর বাইরে আর কিছুই চেনেন না।
ইমাম আলী (আ) এর বক্তব্য ছিল অবিশ্বাস্যরকম প্রভাব বিস্তারকারী। সমাজে তিনি ছিলেন এক মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। আবার যুদ্ধের ময়দানেও তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর আন্তরিক সাহস ও প্রেরণা সৃষ্টিকারী। অকুতোভয় বীরত্বের সাথে তিনি শত্র”দের ভুপাতিত করতেন। আবার তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ একজন পরহেজগার এবং শ্রেষ্ঠ একজন আবেদ বা প্রার্থনাকারী। নিঃসন্দেহে হযরত আলী (আ) এর বক্তব্যগুলো ছিল তাঁর অগাধ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে উৎসারিত। রাসূলে খোদা (সা) সবসময় তাঁর বক্তব্যে ইমাম আলী (আ) এর এই বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির কথা উল্লেখ করতেন। সেইসাথে নবীজী বলতেন জনগণ যেন আলী (আ) এর এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারাকে নিজেদের কাজে লাগিয়ে উপকৃত হয়। নবীজী বলেছেন- انا مدينه العلم و علي بابها অর্থাৎ আমি হলাম জ্ঞানের নগরী আর আলী হলো সেই নগরীর দরোজা।
আমরা বরং আলী (আ) এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে জানতে তাঁর নিজস্ব বক্তব্য শোনার চেষ্টা করি। একদিন আলী (আ) এর একজন সঙ্গী চেয়েছিল কিছু বলতে। পারলোনা,বরং সে তোতলাতে শুরু করলো। হযরত আলী (আ) তখন বললেন-জবান হলো মানুষের একটা অঙ্গ এবং তা তার ধী-শক্তি,স্মরণশক্তির অন্তর্গত। এগুলো যদি কাজ না করে তাহলে বাকশক্তি কোনো কাজই করতে পারে না। তবে স্মৃতিশক্তি যদি খুলে যায় তাহলে বাক-প্রত্যঙ্গও উন্মোচিত হয়। এরপর আলী (আ) বলেন,আমরা হলাম কথার সৈনিকদের কমান্ডার। আমাদের মাঝে কথার বৃক্ষ শেকড় গজায় আর মাথার ওপরে ঝোলে তার শাখা-প্রশাখা,পত্র-পল্লব।
হযরত আলী(আ.) বলেছেন-কারো গোলামি করো না, কেননা আল্লাহ তোমাকে স্বাধীনতা ও আযাদি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
অলি-আউলিয়াগণ আল্লাহর সাথে ব্যাপক সম্পর্কের দৃঢ়তায় এতোদূর অগ্রসর হয়ে যান যে সাধারণ মানুষ তাঁদের অস্তিত্বের ফযিলতের গভীরতায় পৌঁছুতে পারেন না। ইমাম আলী (আ) আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী তেমনি একজন মহান অলি। গত আসরে আমরা এ সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি আপনাদের। এ-ও বলেছি যে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যগুলোর একটি সংকলন করা হয়েছে নাহজুল বালাগা নামে। এটি একটি স্বচ্ছ-নির্মল ঝর্ণাধারার মতো যার সাহায্যে তাঁকে যেমন ভালোভাবে চেনা যাবে তেমনি আল্লাহকে চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে জানা যাবে। তো চলুন,আমরা বরং সরাসরি আলোচনা শুরু করি। চলবে..