আল হাসানাইন (আ.)

মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ বা দিক-নির্দেশনা

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5
পৃথিবীতে মানুষের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো অব্যাহত কর্মচাঞ্চল্য, এটা মানুষের ব্যক্তিজীবনের অবশ্যম্ভাবী একটি প্রয়োজনীয়তা। ইমাম আলী (আঃ) মানুষের অস্তিত্বের স্বরূপ সম্পর্কে গভীরভাবে দৃষ্টি রাখেন। এক্ষেত্রে তিনি আরেকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে মনে করেন। সেটা হলো মানুষের জীবনটাকে যথার্থ ও সঠিকভাবে যাপন করার জন্যে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলা। যেই শৃঙ্খলা তাকে উন্নতি ও সৌভাগ্যের পথে নিয়ে যায়। হযরত আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার সময়ের একটা অংশ জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর জন্যে ব্যয় করা এবং আরেকটি অংশ ব্যয় করা উচিত মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্যে। ইমাম আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার জীবনের একটা সময় জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্যে ব্যয় করা এবং অপর একটা সময় ব্যয় করা উচিত আত্মিক শান্তি এবং মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করার জন্যে। আর এ প্রশান্তির ব্যাপারটি একমাত্র ইবাদাত-বন্দেগী বা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল অর্জিত হয়।
মানুষের সময়ের তৃতীয় অংশটি তার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি লালনের জন্যে ব্যয় করা উচিত যাতে তার জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদনের শক্তি লাভ করতে পারে। হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেন,মুমিন জীবনের কর্মপরিকল্পনায় তিনটি সময় সুনির্দিষ্ট আছে। একটা হলো তার স্রষ্টার ইবাদাত-বন্দেগির সময়। দ্বিতীয় সময়টা হলো যখন সে তার জীবনযাপন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় আর তৃতীয় সময়টা হলো তার সৎ আনন্দগুলো আস্বাদনের সময়। আজকের আলোচনায় আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর বক্তব্যের তৃতীয় অংশটার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবো-যেখানে তিনি জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ ও সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ দৈনন্দিন জীবন সমস্যায় এতো বেশি জর্জরিত যে,নিজের দিকে তাকাবার সময় খুব কমই মেলে। যার ফলে আমরা লক্ষ্য করবো যে মানুষ তার নিজের সম্পর্কে মানুষ উদাসীনতায় ভোগে।
আমরা লক্ষ্য করবো যে, এই উদাসীনতার পরিণতিতে ব্যক্তির মাঝে অশান্তি-হতাশা-বিষাদগ্রস্ততা-মানসিক অবসাদ এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এগুলো থেকে মুক্তির জন্যে সে ভুল চিত্তবিনোদনের পথ বেছে নিচ্ছে-যা তার চিন্তা-চেতনায় ডেকে আনছে নিরন্তর অবক্ষয়। আলী (আঃ) মানুষের এই চিন্তা-চেতনাগত অবক্ষয় রোধকল্পে আভ্যন্তরীণ বা আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন সুস্থ বিনোদনের জন্যে বই পড়া যেতে পারে যে বই মানুষের মনের খোরাক দেয়,আত্মিক এবং চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করে। তিনি বলেছেন,জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় এবং নতুন অভিনতুন বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নিজেদের অন্তরগুলোকে বিনোদিত করো,কেননা মনও শরীরের মতো ক্লান্ত হয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত হলো,মানুষের জন্যে একঘেঁয়ে কাজ বা একঘেঁয়ে জীবন বিরক্তিকর এবং তা মানুষের শরীরকে অক্ষম করে তোলে। সেজন্যেই মানুষের উচিত হলো স্বাভাবিক ও একঘেঁয়ে জীবনের ছন্দে মাঝে মাঝে কিছুটা পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য আনা। যেমন মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্যে ভ্রমণ করা বা এসবের ওপর পড়ালেখা করা। এগুলো অন্তরকে প্রশান্ত করে,সতেজ করে। খেলাধুলাও চমৎকার একটি বিনোদন-মাধ্যম। ইসলামে খেলাধুলার ব্যাপারে বলা হয়েছে খেলাধুলা শারীরিক শক্তি-সামর্থ বৃদ্ধি করা ছাড়াও মানসিক আনন্দেরও একটি মাধ্যম।
ইসলামে মানুষের সুস্থতা রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই লক্ষ্য করা যাবে ঐশী শিক্ষা মানুষের জন্যে প্রাণদায়ী। যেমন রোযা অসুস্থ ব্যক্তির ওপর হারাম। একইভাবে মাদক যেহেতু মানুষের শরীর মনের জন্যে খুবই ক্ষতিকর এবং জীবন চলার পথকে স্থবির কিংবা একবারে বন্ধই করে দেয় সেজন্যে ইসলাম মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে তিরষ্কৃত এমনকি ভর্ৎসনা করা হয়েছে। মানুষের মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ইমাম আলী (আঃ) ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, বিমর্ষ বা মাতাল ব্যক্তিদের ওপর আস্থা রেখো না। তিনি মুমিনদেরকে সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হবার জন্যে অনুপ্রাণিত করেছেন! আলী (আঃ) নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক শক্তির বাইরেও সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী। নবীজীর যে-কোনো আদেশ পালনের জন্যে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।
মুমিনদের জীবন-বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,উপযুক্ত নয় যে এই তিনটি কাজের বাইরে বিচক্ষণেরা আরো কোনো কাজ করবে। জীবনের শৃঙ্খলা বিধানের জন্যে অর্থনৈতিক কাজকর্ম আঞ্জাম দেওয়া , ধর্মীয় কর্মকাণ্ড তথা আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগি করা এবং পাপহীন চিত্তবিনোদন করা।(রেডিও তেহরান) 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)