মার্কিন নও-মুসলিম 'আলেক্সান্ডার রাসেলওয়েব'
'আলেক্সান্ডার রাসেলওয়েব' আমেরিকার নিউইয়র্কের অধিবাসী। যৌবনে তার সত্য-পিপাসু মনে জাগত সৃষ্টিশীল নানা প্রশ্ন। যেমন, মানুষের আত্মার রহস্য, অদৃশ্য জগত ও স্রস্টা বা আল্লাহর অস্তিত্বের মত নানা প্রশ্ন। এসব বিষয় নিয়ে তিনি অনেক ভাবতেন। কিন্তু নিজ ধর্মের ভুবনে এইসব প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব খুঁজে পাননি।
রাসেলওয়েব এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "আমার বয়স যখন বিশ বছর তখন নিজের ও পারিপার্শ্বিক জগত সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন জাগতো আমার মনে। যেমন, আত্মা ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের স্বরূপ কী? আমি খ্রিস্ট ধর্মের বিশ্বাসগুলোর অর্থ বা তাৎপর্য বুঝতে পারছিলাম না। আমি আমার প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক জবাব পাইনি এ ধর্মের কারো কাছেই। প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে তারা উল্টো আমাকে এই বলে অপবাদ দিতেন যে, এইসব রহস্যময় বিষয় বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। "
মার্কিন নও-মুসলিম 'আলেক্সান্ডার রাসেলওয়েব' ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা সফরের সময় আত্মার রহস্য ও অদৃশ্য জগত বিষয়ক একটি বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। একজন মুসলমানের লেখা এই বইটি রাসেলওয়েবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন:
"আত্মার রহস্য ও অদৃশ্য জগত বিষয়ক এ বইয়ে আত্মাকে অবস্তুগত বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে হাতে-পাওয়া এই বইয়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর আত্মা ধ্বংস হয় না, বরং অন্য এক জগতে স্থানান্তরিত হয়। মানুষের জীবনে শারীরিক নানা পরিবর্তন ঘটা সত্ত্বেও সে নিজেকে জীবনের সব পর্যায়েই ' আমি ' বলে দাবি করে এবং মানুষও তাকে সেই একই ব্যক্তি হিসেবে চেনে। তাই এটা স্পষ্ট দেহ বা শরীর ছাড়াও মানুষের মধ্যে আত্মা নামে কিছু একটা আছে। আর এই আত্মাই হল তার আসল ব্যক্তিত্ব।"
মার্কিন নও-মুসলিম 'আলেক্সান্ডার রাসেলওয়েব' এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, "এ বইয়ের আরো একটি আকর্ষণীয় বক্তব্য হল, আল্লাহ মানুষের অস্তিত্বকে পরিপূর্ণ করার শেষ পর্যায়ে মানুষের আত্মাকে নিজের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। আর এটি আল্লাহর সঙ্গে মানুষের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও মানুষের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি তুলে ধরছে। (কুরআনের ভাষায়) মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে নিজের 'আত্মা থেকে' ফুঁকে দিয়ে মানুষকে পূর্ণতা দান করেছেন। আর এই মানব সৃষ্টি উপলক্ষে নিজেই নিজেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ স্রস্টা বলে উল্লেখ করেছেন। তাই মানুষ হচ্ছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।" রাসেলওয়েব আরো বলছিলেন:
"অন্য কথায় আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির তুলনায় মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি এটা প্রমাণ করে যে মানুষের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা অন্য জীব বা সৃষ্টির মধ্যে নেই। মানুষের এই যে আত্মা যা বস্তু থেকে পৃথক, এই আত্মাই তার প্রকৃত ব্যক্তিত্ব গঠন করে। মানুষের সঙ্গে অন্যান্য জীবের সবচেয়ে বড় পার্থক্যের দিক হল এটাই। -এইসব বক্তব্য ছিল ওই বইটিতে উল্লেখিত কিছু বাস্তবতার অংশ। আর এইসব বক্তব্য ছিল আমার জন্য খুবই অভিনব ও গ্রহণযোগ্য। তাই এই বইয়ের লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের ও তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বইটির প্রকাশণা কেন্দ্র ও ছাপার কেন্দ্র থেকে লেখকের ঠিকানা সংগ্রহ করি। ফলে লেখকের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ও শিক্ষামূলক পত্রালাপ শুরু হয়।"
মার্কিন নও-মুসলিম আলেক্সান্ডার রাসেল ওয়েব চিঠির মাধ্যমে ওই মুসলমান লেখকের কাছে ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন উত্থাপন করতেন। আর ওই লেখকও কয়েকটি বই-পুস্তক পাঠিয়ে সেইসব প্রশ্নের লিখিত ও সম্পূরক জবাব দিতেন।
রাসেলের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, মানুষ কিভাবে সৌভাগ্যবান হতে পারে এবং বেহেশতে যেতে পারে? মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ও আত্মা সম্পর্কিত ওই বইয়ের লেখক এই প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন:
"আমরা যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়াই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি এবং তাঁকে ভালবাসতে পারি। সৎকর্ম করা ছাড়া কেউই মুক্তি ও সৌভাগ্যের নাগাল পাবে না। আমাদের সাফল্য ও সৌভাগ্য বা মুক্তি নির্ভর করছে আমাদের কাজের ওপর। আমরা ভালো কাজ করলে আল্লাহও আমাদের দয়া করবেন। তা না হলে আমাদের গোনাহ বা পাপগুলো ক্ষমা করার ক্ষমতা কারোই নেই। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনর একটি আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষ তার ভাল বা মন্দ কাজের ফল দেখতে পাবে। সুরা নজমের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: কেউই অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না এবং মানুষ তা-ই অর্জন করবে বা পাবে যা সে করবে।"
মার্কিন নও-মুসলিম আলেক্সান্ডার রাসেল ওয়েব আরো বলেছেন,
"আমার অবস্থা ছিল তৃষ্ণার্ত সেই মাছের মত যে সাগর বা পানি থেকে দূরে স্থলভাগে আটকা পড়েছিল এবং তাই আবে-হায়াতের সন্ধান করছিল। তাই প্রাণভরে পানিতে অবগাহনের জন্য নিয়মিত চিঠি লিখে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করতাম। আমার আরেকটি প্রশ্ন ছিল এটা যে, এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ফলে কি মানুষের মর্যাদা কমে যায় বলে কি আপনি মনে করেন না ? উত্তরে সেই মুসলিম লেখক লিখেছেন: "মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অনেক বিষয়ে মানুষকে দিয়েছেন স্বাধীনতা। আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে দেখতে চান। তাই এক আল্লাহর ইবাদত মানুষের জন্য সম্মানজনক এবং এই ইবাদত মানুষকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন নানা পদক্ষেপ ও অন্যদের কাছে নতজানু হওয়া থেকে রক্ষা করে। একই সঙ্গে এক আল্লাহর ইবাদত মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে আত্মবিশ্বাস। আর এই চেতনা মানুষকে করে পছন্দকারী, মুক্ত-স্বাধীন, সচেতন ও অনুসন্ধানী। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাঁরই ইবাদত করে। আল্লাহর ইবাদত এমন একটি সড়ক যা মানুষের জন্য উন্নতি ও সাফল্যের পথ খুলে দেয়। এভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর দাসত্ব মানুষকে দেয় উচ্চ মর্যাদা। একজন ঈমানদার বা বিশ্বাসী মানুষ এতটা মর্যাদাসম্পন্ন যে ফেরেশতারা তাকে সিজদা করে।"
মার্কিন নও-মুসলিম রাসেল ওয়েবকে এটাও মুগ্ধ করেছে যে, ইসলাম কেবলই আধ্যাত্মিকতা ও ইবাদতে বিশ্বাসী নয়। ইসলাম মানুষের দৈনন্দিন তৎপরতার মধ্যে সামাজিক কাজ-কর্ম ও আয়-উপার্জনের কাজকে নিষিদ্ধ করেনি। ইসলাম পার্থিব ও আধ্যাত্মিক ততপরতার মধ্যে কোনো বিশেষ এক দিকে পাল্লাকে ভারী করতে বলেনি, বরং ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলেছে। আসলে ইসলাম সবক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করতে বলে। মুসলমানের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, পড়াশুনা, বিয়ে, চাকরি বা বাণিজ্য সবই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয় তাহলে এই-সবই ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হবে। এভাবে মুসলমানদের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক ততপরতার মধ্যে রয়েছে দ্বিমুখী ও পরিপূরক সম্পর্ক। আর এইসব কিছুই ওয়েব রাসেল জানতে পারেন আত্মা ও পারলৌকিক জীবন সম্পর্কিত বইয়ের লেখকের কাছে প্রশ্ন করার মাধ্যমে। এই লেখকের কাছে নানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে শেষ পর্যন্ত আলেক্সান্ডার রাসেল ওয়েব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
মুসলমান হওয়ার পর রাসেল ওয়েব নিজের জন্য মুহাম্মাদ নামটি বেছে নেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণার পর মুসলমান হন বলে রাসেল ওয়েবের পরিচিত অমুসলিমরা এ ব্যাপারে তার কোনো সমালোচনার সুযোগ পাননি। রাসেল ওয়েব জানান, তিনি ইসলামের মধ্যে যেসব বাস্তবতা পেয়েছেন তা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অন্য কোনো দর্শনে, ধর্মে বা মতবাদের মধ্যে পাননি। এইসব মতাদর্শের মধ্যে মানুষের জন্য ভাল ও উপযুক্ত কর্মসূচি নেই বলে এই মার্কিন নও-মুসলিম মনে করেন। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম বা মতাদর্শগুলো জীবনের কোনো একটি বা কয়েকটি দিকে সাফল্য অর্জন করলেও সেগুলো মানুষকে তার উচ্চ মর্যাদা দেখিয়ে দিতে পারেনি এবং পারেনি মানুষকে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে উন্নীত করতে। মানুষের গড় মতবাদ বলেই এইসব মতবাদ মানুষের জীবনের সব দিকে পথ দেখাতে পারেনি বলে রাসেল ওয়েব মনে করেন। অথচ ইসলাম মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার মত উচ্চতম মর্যাদায় উন্নীত করে এবং এই পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পথগুলোও দেখিয়ে দিয়েছে। ইসলাম মানুষের পার্থিব জীবনের সব সংকট বা সন্দেহজনক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে সক্ষম এবং এই ধর্ম মানুষের জন্য শান্তি ও সৌভাগ্য উপহার দেয় বলে ওয়েব মনে করেন।
মার্কিন নও-মুসলিম মুহাম্মাদ রাসেল ওয়েব বলেছেন, "ইসলাম ধর্ম গ্রহণর পর আমার আত্মা মুক্ত হয়েছে এবং জীবনকে এখন অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়। মুসলমান হওয়ার পর এখন মৃত্যু পরবর্তী জগত সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা বদলে গেছে। তিনি এখন আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের কাছে মানুষকে উন্নতির পানে এগিয়ে নেয়ার জন্য উপযুক্ত ইসলামের উজ্জ্বল শিক্ষাগুলো প্রচারের চেষ্টা করছেন।” (সংগৃহীত)
রাসেলওয়েব এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "আমার বয়স যখন বিশ বছর তখন নিজের ও পারিপার্শ্বিক জগত সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন জাগতো আমার মনে। যেমন, আত্মা ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের স্বরূপ কী? আমি খ্রিস্ট ধর্মের বিশ্বাসগুলোর অর্থ বা তাৎপর্য বুঝতে পারছিলাম না। আমি আমার প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক জবাব পাইনি এ ধর্মের কারো কাছেই। প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে তারা উল্টো আমাকে এই বলে অপবাদ দিতেন যে, এইসব রহস্যময় বিষয় বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। "
মার্কিন নও-মুসলিম 'আলেক্সান্ডার রাসেলওয়েব' ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা সফরের সময় আত্মার রহস্য ও অদৃশ্য জগত বিষয়ক একটি বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। একজন মুসলমানের লেখা এই বইটি রাসেলওয়েবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন:
"আত্মার রহস্য ও অদৃশ্য জগত বিষয়ক এ বইয়ে আত্মাকে অবস্তুগত বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে হাতে-পাওয়া এই বইয়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর আত্মা ধ্বংস হয় না, বরং অন্য এক জগতে স্থানান্তরিত হয়। মানুষের জীবনে শারীরিক নানা পরিবর্তন ঘটা সত্ত্বেও সে নিজেকে জীবনের সব পর্যায়েই ' আমি ' বলে দাবি করে এবং মানুষও তাকে সেই একই ব্যক্তি হিসেবে চেনে। তাই এটা স্পষ্ট দেহ বা শরীর ছাড়াও মানুষের মধ্যে আত্মা নামে কিছু একটা আছে। আর এই আত্মাই হল তার আসল ব্যক্তিত্ব।"
মার্কিন নও-মুসলিম 'আলেক্সান্ডার রাসেলওয়েব' এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, "এ বইয়ের আরো একটি আকর্ষণীয় বক্তব্য হল, আল্লাহ মানুষের অস্তিত্বকে পরিপূর্ণ করার শেষ পর্যায়ে মানুষের আত্মাকে নিজের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন। আর এটি আল্লাহর সঙ্গে মানুষের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও মানুষের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি তুলে ধরছে। (কুরআনের ভাষায়) মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে নিজের 'আত্মা থেকে' ফুঁকে দিয়ে মানুষকে পূর্ণতা দান করেছেন। আর এই মানব সৃষ্টি উপলক্ষে নিজেই নিজেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ স্রস্টা বলে উল্লেখ করেছেন। তাই মানুষ হচ্ছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।" রাসেলওয়েব আরো বলছিলেন:
"অন্য কথায় আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির তুলনায় মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি এটা প্রমাণ করে যে মানুষের মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা অন্য জীব বা সৃষ্টির মধ্যে নেই। মানুষের এই যে আত্মা যা বস্তু থেকে পৃথক, এই আত্মাই তার প্রকৃত ব্যক্তিত্ব গঠন করে। মানুষের সঙ্গে অন্যান্য জীবের সবচেয়ে বড় পার্থক্যের দিক হল এটাই। -এইসব বক্তব্য ছিল ওই বইটিতে উল্লেখিত কিছু বাস্তবতার অংশ। আর এইসব বক্তব্য ছিল আমার জন্য খুবই অভিনব ও গ্রহণযোগ্য। তাই এই বইয়ের লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের ও তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বইটির প্রকাশণা কেন্দ্র ও ছাপার কেন্দ্র থেকে লেখকের ঠিকানা সংগ্রহ করি। ফলে লেখকের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ও শিক্ষামূলক পত্রালাপ শুরু হয়।"
মার্কিন নও-মুসলিম আলেক্সান্ডার রাসেল ওয়েব চিঠির মাধ্যমে ওই মুসলমান লেখকের কাছে ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন উত্থাপন করতেন। আর ওই লেখকও কয়েকটি বই-পুস্তক পাঠিয়ে সেইসব প্রশ্নের লিখিত ও সম্পূরক জবাব দিতেন।
রাসেলের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, মানুষ কিভাবে সৌভাগ্যবান হতে পারে এবং বেহেশতে যেতে পারে? মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ও আত্মা সম্পর্কিত ওই বইয়ের লেখক এই প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন:
"আমরা যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা ছাড়াই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি এবং তাঁকে ভালবাসতে পারি। সৎকর্ম করা ছাড়া কেউই মুক্তি ও সৌভাগ্যের নাগাল পাবে না। আমাদের সাফল্য ও সৌভাগ্য বা মুক্তি নির্ভর করছে আমাদের কাজের ওপর। আমরা ভালো কাজ করলে আল্লাহও আমাদের দয়া করবেন। তা না হলে আমাদের গোনাহ বা পাপগুলো ক্ষমা করার ক্ষমতা কারোই নেই। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনর একটি আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষ তার ভাল বা মন্দ কাজের ফল দেখতে পাবে। সুরা নজমের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: কেউই অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না এবং মানুষ তা-ই অর্জন করবে বা পাবে যা সে করবে।"
মার্কিন নও-মুসলিম আলেক্সান্ডার রাসেল ওয়েব আরো বলেছেন,
"আমার অবস্থা ছিল তৃষ্ণার্ত সেই মাছের মত যে সাগর বা পানি থেকে দূরে স্থলভাগে আটকা পড়েছিল এবং তাই আবে-হায়াতের সন্ধান করছিল। তাই প্রাণভরে পানিতে অবগাহনের জন্য নিয়মিত চিঠি লিখে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করতাম। আমার আরেকটি প্রশ্ন ছিল এটা যে, এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ফলে কি মানুষের মর্যাদা কমে যায় বলে কি আপনি মনে করেন না ? উত্তরে সেই মুসলিম লেখক লিখেছেন: "মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অনেক বিষয়ে মানুষকে দিয়েছেন স্বাধীনতা। আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে দেখতে চান। তাই এক আল্লাহর ইবাদত মানুষের জন্য সম্মানজনক এবং এই ইবাদত মানুষকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন নানা পদক্ষেপ ও অন্যদের কাছে নতজানু হওয়া থেকে রক্ষা করে। একই সঙ্গে এক আল্লাহর ইবাদত মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে আত্মবিশ্বাস। আর এই চেতনা মানুষকে করে পছন্দকারী, মুক্ত-স্বাধীন, সচেতন ও অনুসন্ধানী। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাঁরই ইবাদত করে। আল্লাহর ইবাদত এমন একটি সড়ক যা মানুষের জন্য উন্নতি ও সাফল্যের পথ খুলে দেয়। এভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর দাসত্ব মানুষকে দেয় উচ্চ মর্যাদা। একজন ঈমানদার বা বিশ্বাসী মানুষ এতটা মর্যাদাসম্পন্ন যে ফেরেশতারা তাকে সিজদা করে।"
মার্কিন নও-মুসলিম রাসেল ওয়েবকে এটাও মুগ্ধ করেছে যে, ইসলাম কেবলই আধ্যাত্মিকতা ও ইবাদতে বিশ্বাসী নয়। ইসলাম মানুষের দৈনন্দিন তৎপরতার মধ্যে সামাজিক কাজ-কর্ম ও আয়-উপার্জনের কাজকে নিষিদ্ধ করেনি। ইসলাম পার্থিব ও আধ্যাত্মিক ততপরতার মধ্যে কোনো বিশেষ এক দিকে পাল্লাকে ভারী করতে বলেনি, বরং ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলেছে। আসলে ইসলাম সবক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করতে বলে। মুসলমানের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম, পড়াশুনা, বিয়ে, চাকরি বা বাণিজ্য সবই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয় তাহলে এই-সবই ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হবে। এভাবে মুসলমানদের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক ততপরতার মধ্যে রয়েছে দ্বিমুখী ও পরিপূরক সম্পর্ক। আর এইসব কিছুই ওয়েব রাসেল জানতে পারেন আত্মা ও পারলৌকিক জীবন সম্পর্কিত বইয়ের লেখকের কাছে প্রশ্ন করার মাধ্যমে। এই লেখকের কাছে নানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে শেষ পর্যন্ত আলেক্সান্ডার রাসেল ওয়েব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
মুসলমান হওয়ার পর রাসেল ওয়েব নিজের জন্য মুহাম্মাদ নামটি বেছে নেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে ব্যাপক গবেষণার পর মুসলমান হন বলে রাসেল ওয়েবের পরিচিত অমুসলিমরা এ ব্যাপারে তার কোনো সমালোচনার সুযোগ পাননি। রাসেল ওয়েব জানান, তিনি ইসলামের মধ্যে যেসব বাস্তবতা পেয়েছেন তা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অন্য কোনো দর্শনে, ধর্মে বা মতবাদের মধ্যে পাননি। এইসব মতাদর্শের মধ্যে মানুষের জন্য ভাল ও উপযুক্ত কর্মসূচি নেই বলে এই মার্কিন নও-মুসলিম মনে করেন। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম বা মতাদর্শগুলো জীবনের কোনো একটি বা কয়েকটি দিকে সাফল্য অর্জন করলেও সেগুলো মানুষকে তার উচ্চ মর্যাদা দেখিয়ে দিতে পারেনি এবং পারেনি মানুষকে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে উন্নীত করতে। মানুষের গড় মতবাদ বলেই এইসব মতবাদ মানুষের জীবনের সব দিকে পথ দেখাতে পারেনি বলে রাসেল ওয়েব মনে করেন। অথচ ইসলাম মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার মত উচ্চতম মর্যাদায় উন্নীত করে এবং এই পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পথগুলোও দেখিয়ে দিয়েছে। ইসলাম মানুষের পার্থিব জীবনের সব সংকট বা সন্দেহজনক সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে সক্ষম এবং এই ধর্ম মানুষের জন্য শান্তি ও সৌভাগ্য উপহার দেয় বলে ওয়েব মনে করেন।
মার্কিন নও-মুসলিম মুহাম্মাদ রাসেল ওয়েব বলেছেন, "ইসলাম ধর্ম গ্রহণর পর আমার আত্মা মুক্ত হয়েছে এবং জীবনকে এখন অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়। মুসলমান হওয়ার পর এখন মৃত্যু পরবর্তী জগত সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা বদলে গেছে। তিনি এখন আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের কাছে মানুষকে উন্নতির পানে এগিয়ে নেয়ার জন্য উপযুক্ত ইসলামের উজ্জ্বল শিক্ষাগুলো প্রচারের চেষ্টা করছেন।” (সংগৃহীত)