তাওহীদ
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি সর্বজ্ঞ,পরাক্রমশালী এবং বিশ্বের অস্তিত্বদানকারী,রক্ষক ও পরিচালক । তিনি এক এবং অদ্বিতীয় তার কোন শরিক নেই। তিনি কারও থেকে জন্ম গ্রহণ করেননি তিমনি কাউকে জন্মও দান করেননি। সৃষ্টিকর্তাবিহীন বিশ্বের ধারণা হল একটি অযৌক্তিক ধারণা এবং এর স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা নেই ।
অংশীবাদী বিশ্বাস কিরূপে মানুষের মাঝে পত্তন এবং বিস্তার লাভ করেছিল,সে ব্যাপারে সমাজ বিজ্ঞানীরা একাধিক মতবাদ ব্যক্ত করেছেন । কিন্তু ঐগুলোর কোনটির স্বপক্ষেই সুস্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য কোন যুক্তি নেই ।
সম্ভবতঃ অংশীবাদ এবং একাধিক খোদার বিশ্বাসের প্রথম কারণ ছিল বিশ্ব-ব্রমাণ্ডের বৈচিত্র্যময় ঘটনাবলীর পর্যবেক্ষণ । এ বৈচিত্র্যের পর্যবেক্ষণে মানুষের মধ্যে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে,প্রত্যেক প্রকারের ঘটনা,সংশ্লিষ্ট খোদার তত্ত্বাবধানে সস্পন্ন হয়ে থাকে । যেমন : কেউ কেউ ধারণা করেছেন যে,শুভ ঘটনাগুলো হল কল্যাণকামী প্রভুর কর্ম এবং মন্দ ঘটনাগুলো হল অকল্যাণকামী প্রভুর কর্ম। আর এ ভাবেই বিশ্বের জন্যে দু‘ খোদার বিশ্বাস প্রবর্তিত হয়েছিল।
অপরদিকে সূর্যা লোক,চন্দ্র ও তারকাসমূহ যে,পার্থিব ঘটনাবলীর উপর প্রভাব ফেলে,তার আলোকে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে,বিশ্বের বিষয়বস্তর উপর ঐগুলোর এক প্রকার প্রভুত্ব বিদ্যমান।
অথবা স্পৃশ্য ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য খোদার প্রতি ঝুকে পড়ার কারণে কল্পিত প্রভুদের মূর্তি তৈরী এবং তাদের উপাসনায় নিয়োজিত হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। কালক্রমে স্বয়ং মূর্তিসমূহ স্বল্পবুদ্ধির জনসমষ্টির মাঝে মূখ্য রূপ পরিগ্রহ করেছে এবং সকল জাতি এমনকি প্রতিটি গোত্র নিজ নিজ কল্পনার ভিত্তিতে মূর্তি-পূজার জন্যে একাধিক ধর্মের প্রবর্তন করেছে -যাতে একদিকে যেমনি প্রভুভক্তির ফিতরাতগত প্রবণতাকে ভিন্নরূপে উপস্থাপন করা যেতে পারে,তেমনি অপরদিকে,নিজেদের পাশবিক লোভ-লালসাকে পবিত্রতার রঙে রঞ্জিত করা যেতে পারে এবং তদনুরূপ এগুলোকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির কলেবরে রূপ দেয়া যেতে পারে। আজোবধি উচ্ছৃংখল নৃত্য,মদ্যপ ও কামুক উৎসবসমূহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান রূপে মূর্তিপজারীদের মধ্যে প্রচলিত আছে।
এ ছাড়া,স্বেচ্ছারী,শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার,প্রতিহিংসাপরায়ণ পাষণ্ডদের অভিলাষও সরলমনা জনসমষ্টির বিশ্বাস ও চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে প্রবঞ্চনার কারণ হয়েছিল। এভাবে স্বীয় রাজত্ব ও ক্ষমতার সম্প্রসারণের জন্যে তারা অংশীবাদী ধ্যান-ধারণার প্রচার ও প্রসারে প্রয়াসী হয়েছিল এবং নিজেদের জন্যে এক প্রকার প্রভুত্বে বিশ্বাসী ছিল। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা দূর্বত্তদের উপাসনাকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করেছে । মিশর,ভারত,চীন,পারস্য ইত্যাদি দেশে এর সুস্পষ্ট নিদর্শন পরিলক্ষিত হয় ।
যাহোক অংশীবাদী ধর্মসমূহ,বিভিন্ন কারণ ও নির্বাহকের প্রভাবে,মানব সমাজে প্রথিত ও প্রচলিত হয়েছিল এবং ঐশীধর্ম ও একত্ববাদের ছায়ায় মানুষের প্রকৃত বিকাশ ও উৎকর্ষ লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল। যার ফলে নবীগণের (আ.) প্রচেষ্টার এক বৃহত্তর অংশ জুড়ে স্থান পেয়েছিল অংশীবাদ ও অংশীবাদীদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম। পবিত্র কোরানে পুনঃপৌনিকভাবে তাদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ।
অতএব অংশীবাদী বিশ্বাসের মূলভিত্তি,বিশ্বব্র¤মাণ্ডের কোন কোন ঘটনার জন্যে মহান প্রভু ভিন্ন অপর কোন অস্তিত্বের প্রতি প্রভুত্বের ধারণা থেকে রূপ লাভ করেছিল। তবে অংশীবাদীদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বসৃষ্টি কর্তার একত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তারা সৃজনক্ষমতার একত্বকে স্বীকার করেছিলেন;কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরে,দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রভুদের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন । তাদের ধারণানুসারে জগতের পরিচালনা ও রক্ষার ব্যাপারটি প্রত্যক্ষভাবে (এ দ্বিতীয় শ্রেণীর) প্রভুদের ইচ্ছাধীন। তারা সৃষ্টিকর্তা প্রভুকে বর্ণিত খোদাদের প্রভুরূপে নামকরণ করেছে। অর্থাৎ তিনি হলেন প্রভুদের প্রভু (رب الارباب )
কারো কারো মতে এ পরিচালক প্রভুরা হলেন ফেরেস্তাগণ । আরব অংশীবাদীরা এ ফেরেস্তুাগণকে আল্লাহর কন্যা বলে মনে করত । আবার কারো কারো মতে জ্বিন-পরীরা,কারো কারো মতে নক্ষত্র সমষ্টির আত্মারা অথবা প্রয়াত মানুষের আত্মারা কিংবা এক বিশেষ ধরনের অজ্ঞাত অস্তিত্ব হল এ পরিচালক প্রভুসকল।
দশম পাঠে আমরা ইঙ্গিত করেছিলাম যে,প্রকৃত সৃজনত্ব ও প্রতিপালনত্ব পরস্পর থেকে বিভাজনযোগ্য ও পৃথকীকরণযোগ্য নয় এবং আল্লাহর সৃজনত্বে বিশ্বাস (আল্লাহ ব্যতীত) অন্য কারো প্রতিপালনত্বের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়। যারা এ ধরনের স্ববিরোধিতাপূর্ণ বিশ্বাস পোষণ করতেন তারা প্রকৃতপক্ষে বর্ণিত অবস্থাদ্বয়ের বৈপরীত্যের প্রতি লক্ষ্য রাখেননি এবং তাদের বিশ্বাসের বাতুলতা প্রমাণ করার জন্যে এ বৈপরীত্যের সুস্পষ্ট কারণই যথেষ্ট ।
খোদার একত্বকে প্রমাণ করার জন্যে একাধিক যুক্তির অবতারণা হয়েছে;যেগুলো কালামশাস্ত্রও দর্শনশাস্ত্রের বিভিন্ন পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে। তবে আমরা এখানে এমন একটি যুক্তি উপস্থাপন করব,যাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিপালনত্বের একত্ববাদকে প্রতিপাদন করার পাশাপাশি,অংশীবাদী বিশ্বাসেরও অপনোদন হয়।
আল্লাহর একত্বের প্রমাণ
ধরা যাক বিশ্বের জন্যে দুই বা ততোধিক সৃষ্টিকর্তা বিদ্যমান। তাহলে তা নিম্নলিখিত অবস্থাসমূহের ব্যতিক্রম হবে না : হয় বিশ্বের প্রতিটি বিষয়ই তাদের ফলশ্রুতি বা সৃষ্ট বলে পরিগণিত হবে অথবা প্রতিটি শ্রেণীই কোন এক প্রভুর সৃষ্ট বলে পরিগণিত হবে কিংবা সবকিছুই এক প্রভুর সৃষ্ট;তবে অন্যান্য খোদারা বিশ্বের পরিচালক ও তত্তাবধায়ক রূপে পরিগণিত হবে ।
কিন্তু ‘সকল সৃষ্টরই একাধিক সৃষ্টিকর্তা বিদ্যমান’এ ধারণাটি অসম্ভব। কারণ,দুই বা ততোধিক সৃষ্টিকর্তা (অস্তিত্বদাতা কারণ) কোন অস্তিত্বশীলকে সৃষ্টি করার অর্থ হল,তাদের প্রত্যেকেই একটি করে ‘অস্তিত্ব’ঐ অস্তিত্বশীলকে দান করা। যার ফলশ্রুতি হল,একটি অস্তিত্বশীলের জন্যে একাধিক অস্তিত্বের ধারণা। অথচ প্রত্যেক অস্তিত্বশীলই কেবলমাত্র একটি অস্তিত্বেরই অধিকারী। নতুবা তা একক অস্তিত্বশীল হতে পারে না ।
অপরদিকে প্রতিটি সৃষ্ট বিষয়ের অথবা ঐ শ্রেণীর সৃষ্ট বিষয়ের জন্যে একজন করে সৃষ্টিকর্তা থাকার অপরিহার্য অর্থ হল : প্রত্যেক সৃষ্ট বিষয়ই স্বতন্ত্র সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল এবং কেবলমাত্র চূড়ান্ত নির্ভরশীলতা,যা স্বীয় সৃষ্টিকর্তায় পৌঁছে,তা ব্যতীত অপর কোন সৃষ্ট বিষয়ের তার কোন প্রয়োজন নেই। আর এ ধরনের নির্ভরশীলতা শুধুমাত্র স্বীয় সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট বিষয়সমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
অন্যকথায় : বিশ্বের একাধিক সৃষ্টিকর্তা থাকার অপরিহার্য অর্থ হল একাধিক ও পরস্পর বিরোধী বিন্যাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকা। অথচ সৃষ্টির আদি থেকেই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড একক বিন্যাস ব্যবস্থায় ও নিয়মানুবর্তিতায় পরিচালিত হচ্ছে। সমসাময়িক সৃষ্টিসমূহ পরস্পর সস্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল এবং তারা পরস্পরের উপর প্রভাব ফেলে। অনুরূপ পূর্ববর্তী সৃষ্টিসমূহের সাথে উত্তরবর্তী সৃষ্টিসমূহের যেমন সস্পর্ক বিদ্যমান,তেমনি বিদ্যমান সৃষ্টিসমূহের সাথেও ভাবি সৃষ্টিসমূহের সস্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। আবার সকল পূর্ববর্তী সৃষ্টিসমূহই উত্তরবর্তী সৃষ্টিসমূহের আবির্ভাবের জন্যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
অতএব এ ধরনের কোন বিশ্ব,যা পরস্পর সস্পর্কযুক্ত ও সুসন্নিবেশিত এবং যা একক বিন্যাসব্যবস্থার অধীন পরিচালিত,তা কখনোই একাধিক অস্তিত্বদাতা কারণের ফলশ্রুতি হতে পারে না ।
অনুরূপ যদি ধারণা করা হয় যে,সকল প্রকার সৃষ্টির জন্যে একই সৃষ্টিকর্তা বিদ্যমান,কিন্তু তাদের তত্তাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব অন্যান্যদের উপর ন্যস্ত,তবে তা-ও সঠিক হতে পারে না। কারণ সকল সৃষ্ট বিষয়ই,তার অস্তিত্বের জন্যে সার্বিকভাবে অস্তিত্বদাতা কারণের উপর নির্ভরশীল-অপর কোন স্বাধীন অস্তিত্বেরই,তার উপর কোন অধিকার বা প্রভাব নেই। তবে কেবলমাত্র ঐ সকল প্রভাবই বিদ্যমান যা কোন এক কারণের কার্যসমূহের (معلومات ) মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। তদুপরি সকল কিছুই অস্তিত্বদাতা কর্তার প্রভাব বলয়ে এবং আধিপত্যের আওতায় অবস্থান করে এবং তারই সুনির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট অনুমতিক্রমে সকল কর্ম সম্পাদিত হয়। আর এ অবস্থায় বর্ণিত তত্তাবধায়কদের কেউই প্রকৃত রাব্ব (رب ) হতে পারে না। কারণ রাব্বের (رب ) স্বরূপ হল স্বীয় আধিপত্যের আওতায় স্বাধীনভাবে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যদি মনে করা হয় যে,এ ধরনের প্রভাব ও আধিপত্য স্বাধীন নয়;বরং সকলেই সৃষ্টিকর্তার প্রতিপালনের অধীন এবং যে ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক অর্পিত হয় সে ক্ষমতার আলোকে কার্যসম্পাদন করে থাকে। তবে এ ধরনের কোন প্রভুত্ব ও তত্তাবধানের ধারণা,প্রভুত্বের একত্ববাদের সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না। অনুরূপ যে সৃজনকর্ম আল্লাহর অনুমতিক্রমে সম্পাদিত হয় বলে মনে করা হয়,তা-ও সৃজনক্ষমতার একত্বের সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না। পবিত্র কোরান ও রেওয়ায়েতসমূহে এ ধরনের অনুচরিত ও পরাধীন সৃষ্টি ও তত্তাবধানের কথা আল্লাহর কোন কোন বান্দাগণের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন : হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে :
-আর যখন তুমি কাদামাটি দ্বারা আমার অনুমতিক্রমে পাখীসদৃশ্য আকৃতি গঠন করতে এবং তাতে ফুৎকার দিতে,ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখী হয়ে যেত। (সূরা মায়িদাহ্ -১১০) অনুরূপ আরও বলা হয় : -শপথ তাদের যারা সকল কর্ম নির্বাহ করে। (সূরা নাযিয়াত-৫)
উপসংহারে বলা যায়,বিশ্বের জন্যে একাধিক খোদার ধারণা,বস্তগত কারণ ও সহায়ক কারণসমূহকে খোদার সাথে তুলনা করা থেকে রূপ লাভ করেছে এবং একক কার্যের জন্যে তাদের (কারণের) বহুত্বে কোন সমস্যা নেই। অপরদিকে অস্তিত্বদাতা কারণকে এ ধরনের কারণের সাদৃশ্য বলে কল্পনাই করা যায় না এবং কোন একক কার্যের জন্যই একাধিক অস্তিত্বদাতা কারণ বা প্রভু কিংবা স্বাধীন তত্তাবধায়কের ধরণা করা যায় না ।
অতএব এ ধরনের ভুল ধারণার অপসারণের জন্যে,একদিকে অস্তিত্বদাতা কারণের অর্থ ও এ ধরনের কারণত্বের বিশেষত্ব সম্পর্কে সূক্ষ্ণদৃষ্টি দিতে হবে যাতে অবগত হওয়া যায় যে,কোন একক কার্যের জন্যে এক ধরনের কারণত্বের বহুত্ব অসম্ভব। অপরদিকে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সুশৃংখল বিন্যাসব্যবস্থা সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে যাতে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,এ ধরনের সুশৃংখল বিন্যাসব্যবস্থা এশাধিক সৃষ্টিকর্তা অথবা এশাধিক স্বাধীন রাব্বের তত্তাবধানে হতে পারে না।
প্রসংগক্রমে স্পষ্ট হয়েছে যে,মহান আল্লাহর কোন কোন বান্দার জন্যে সৃজন ক্ষমতা ও প্রতিপালনত্ব যদি স্বাধীন বা অনির্ভরশীল অর্থে না হয় তবে সুনির্ধারিত বিলায়াত একত্ববাদের সাথে কোন অসঙ্গতি সৃষ্টি করে না । যেমন : মহানবী (সঃ) ও পবিত্র ইমামগণের (আঃ) বিধিগত বিলয়াত(الولایة التشریعة ) মহান আল্লাহর বিধিগত বিলায়াতের সাথে কোন বিরোধ বা অসঙ্গতি সৃষ্টি করেনা। কারণ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই তা অনুমোদিত হয়েছে।
তাওহীদের অর্থ কী ?
ভূমিকা :
তাওহীদ (توحید )শব্দটি (وحد) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। তাওহীদ (توحید ) শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল‘ অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করা’বা একত্ববাদ। দর্শন,কালাম,আখ্লাক ও ইরফান বিশেষজ্ঞগণের ভাষায়“ তাওহীদ” শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে এ অর্থগুলোতে খোদার একত্ববাদকে বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো ‘তাওহীদের প্রকারভেদ’ অথবা ‘তাওহীদের স্তরসমূহ শিরোনামে স্মরণ করা হয়ে থাকে। তবে এগুলোর সবকটি সম্পর্কে আলোচনা করা এ প্রবন্ধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অতএব এখানে আমরা অপেক্ষাকৃত প্রসিদ্ধতর ও সাযুজ্যতর পরিভাষাগুলোর আলোচনা করেই তুষ্ট থাকব।
১। বহুত্বের অস্বীকৃতি :
তাওহীদের সর্বপথম প্রসিদ্ধ পরিভাষাটি হল,খোদার একত্বে বিশ্বাস ও বহুত্বের অস্বীকৃতি। “তাওহীদ” প্রকাশ্য অংশীবাদের বিরুদ্ধে বা বিপরীতে অবস্থান নিয়ে থাকে। দুই বা ততোধিক স্বাধীন খোদার প্রতি বিশ্বাস এরূপে যে,তাদের একের প্রতি অপরের কোন নির্ভরশীলতা নেই এ অংশীবাদী বিশ্বাসকেও তাওহীদ অস্বীকার করে।
২। যৌগিকতার অস্বীকৃতি :
তাওহীদের দ্বিতীয় পরিভাষাটি হল একত্বের বিশ্বাসার্থে সত্তার অবিভাজ্যতা বা প্রভুসত্তা,কার্যকরী ও সামর্থ্যগতভাবে অংশের সমষ্টি না হওয়া।
এ অর্থকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে না-বোধক গুণ বা সিফাতুসসালবিয়াহ্ (যৌগিকতার অস্বীকৃতি) রূপে বর্ণনা করা হয়ে থাকে । কারণ আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি যৌগের ধারণা সম্পর্কে এবং প্রাসংগিকভাবে তার অস্বীকৃতির সাথে,অবিভাজ্যতার তাৎপর্য অপেক্ষা অধিকতর পরিচিত ।
৩। প্রভুসত্তার সাথে অতিরিক্ত গুণাবলী সংযোজনের অস্বীকৃতি :
তাওহীদের তৃতীয় পরিভাষাটি প্রভুসত্তার সাথে তার গুণসমূহের একাত্বতা এবং সত্তার সাথে অতিরিক্ত বা অর্জিত গুণাবলী সংযোজনের অস্বীকৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে-যাকে গুণগত একত্ব বলা হয়। তবে রেওয়ায়েতের ভাষায় একে ‘গুণাবলীর পরিবর্জন’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাওহীদের এ পরিভাষাটি,যারা (যেমন : আশায়েরী সম্প্রদায়) খোদার গুণাবলীকে তার সত্তাবহির্ভূত অতিরিক্ত বিষয় বলে মনে করেন এবং যারা ‘অষ্টপ্রাচীনত্বের’ প্রবক্তা,তাদের বিপরীতে অবস্থান নেয়।
গুণগত একত্ববাদের স্বপক্ষে যুক্তি হল : যদি আল্লাহর প্রতিটি গুণই স্বতন্ত্র দৃষ্টান্তের (مصداق ) অধিকারী হয়,তবে তা নিম্নলিখিত কয়েকটি অবস্থার ব্যতিক্রম নয় :
হয় ঐ গুণগুলোর দৃষ্টান্ত প্রভুসত্তার অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হবে,যার অপরিহার্য অর্থ হবে,প্রভুসত্তা হল এশাধিক অংশের সমষ্টি এবং ইতিপূর্বে আমরা প্রমাণ করেছি যে,এ ধরণের কোন কিছু অসম্ভব অথবা ঐ গুণগুলোর দৃষ্টান্ত সত্তাবহির্ভূত বলে বিবেচিত হয় এবং এ অবস্থায়,হয় ‘অনিবার্যঅস্তিত্ব’ ও ‘সৃষ্টিকর্তার উপর অনির্ভরশীল’ বলে পরিগণিত হবে অথবা ‘সম্ভাব্য অস্তিত্ব’ ও ‘সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল’ বলে পরিগণিত হবে।
কিন্ত গুণগুলোর অনিবার্য অস্তিত্ব হওয়ার অর্থ হবে,সত্তার একাধিকত্ব ও সুস্পষ্ট অংশীবাদ এবং কোন মুসলমানই এর দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। অপরদিকে গুণগুলোর ‘সম্ভাব্য অস্তিত্ব’ হওয়ার অপরিহার্য অর্থ হল ‘প্রভুসত্তা’ ঐ গুণগুলোর ঘাটতিতে থাকার ফলে ঐগুলোকে সৃষ্টি করতঃ সংশ্লিষ্ট গুণসমূহে গুণান্বিত হয়েছেন । যেমন : যদিও মহান আল্লাহ জীবনহীন তথাপি জীবন নামক এক অস্তিত্বকে সৃষ্টি করেন এবং তার মাধ্যমেই জীবন লাভ করেন। অনুরূপ জ্ঞান,ক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও একই ধারণা রূপ পরিগ্রহ করে । অথচ ‘অস্তিত্বদাতা কারণ’ সত্তাগতভাবে সৃষ্ট বিষয়ের পূর্ণতাসমূহের ঘাটতিতে থাকবে,এটা অসম্ভব।
সর্বাপেক্ষা লজ্জাজনক ব্যাপার হল এটা যে,স্বীয় সৃষ্ট বিষয়সমূহের ছায়ায় জীবন,জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী হওয়া এবং অন্যান্য উৎকর্ষ গুণে গুণান্বিত হওয়া।
উপরোক্ত ধারণাগুলোর বর্জনের মাধ্যমে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,প্রভুর গুণসমূহ প্রভুসত্তা ভিন্ন,পরস্পর স্বতন্ত্র অন্য কোন দৃষ্টান্তের (مصداق ) অধিকারী নয়। বরং তাদের সকলেই এমন এক ভাবার্থ যে,(শুধুমাত্র) বুদ্ধিবৃত্তিই,প্রভুর একক,অবিভাজ্য,পবিত্র সত্তা থেকে পৃথক রূপে উপস্থাপন করে থাকে (কিন্তু বাস্তব জগতে তাদেরকে আলাদা করে ভাবা অসম্ভব)।
৪। ক্রিয়াগত একত্ববাদ :
তাওহীদের চতুর্থ পরিভাষাটি,দার্শনিক ও কালামশাস্ত্রবিদগণের নিকট ক্রিয়াগত একত্ববাদ বলে পরিচিত। আর এর অর্থ হল : মহান আল্লাহ স্বীয় কর্ম সম্পাদনের জন্যে কারো উপর ও কোনকিছুর উপরই নির্ভরশীল নন এবং তিনি কোন ভাবেই কোন অস্তিত্বের সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন।
এ বিষয়টি ‘অস্তিত্বদাতা কারণের’ বিশেষত্বের আলোকে প্রমাণ করা যায়,যা সকল কার্যের (معلول )প্রতিষ্ঠাতা। কেননা এ ধরনের কারণের (অস্তিত্বদাতা কারণ) কার্যগুলো সমস্ত অস্তিত্বের জন্যে উক্ত কারণের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দর্শনের ভাষায়,এ কার্যগুলো খোদার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সস্পর্কযুক্ত’ এবং ঐ গুলোর কোন প্রকার স্বনির্ভরতা নেই ।
অন্যকথায় : যে কেউ যা কিছুরই অধিকারী হোক না কেন,তা তারই নিকট থেকে এবং তারই ক্ষমতার অধীন। তারই রাজত্বের পরিমণ্ডলে,তারই সুনির্ধারিত ও প্রকৃত মালিকানাধীন। অন্য সবার ক্ষমতা ও মালিকানা তার ক্ষমতা ও মালিকানার উলম্বে ও নিম্নস্তরে অবস্থান করে এবং তারা খোদার ক্ষমতার পথে কোন প্রকার ক্লেশ সৃষ্টি করে না। যেমন : বান্দা উপার্জিত সস্পদের উপর যে বৈধ মালিকানা লাভ করে তা প্রভুর বৈধ মালিকানার উলম্বে অবস্থান করে।
العبد و ما فی یده کان لمولاه
‘বান্দা ও যা কিছু তার নিকট আছে,সকলই প্রভুর জন্যে’।
অতএব মহান আল্লাহ এমন কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবেন,যারা তাদের সমগ্র অস্তিত্বের জন্যে তার উপর নির্ভর করে,তা কীরূপে সম্ভব ?
৫। স্বাধীন প্রভাব :
তাওহীদের পঞ্চম পরিভাষাটি হল ‘স্বাধীন প্রভাব’ অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্ট বিষয়াদি স্বীয় কর্মের ক্ষেত্রেও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। সৃষ্ট বিষয়াদির পরস্পরের মধ্যে যে প্রভাব ও কর্মতৎপরতা বিদ্যমান,তা আল্লাহরই অনুমতিক্রমে,আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও ক্ষমতায় সস্পন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র যিনি অনির্ভরশীল ও স্বাধীনভাবে সর্বত্র ও সর্বাবস্থায় এবং সকল কিছুর উপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম,তিনি হলেন পবিত্র সত্তার অধিকারী মহান আল্লাহ। সকল কর্মতৎপরতা ও প্রভাব তার কর্মতৎপরতা ও প্রভাবের উল্লম্বে অবস্থান করে এবং তারই প্রভাবের প্রতিফলনে স্বীয় কর্মসম্পাদন করে।
আর এর ভিত্তিতেই পবিত্র কোরান প্রাকৃতিক নির্বাহকসমূহ এবং অপ্রাকৃতিক নির্বাহকসমূহের (যেমন : ফেরেস্তা,জ্বীন ও মানুষ) সকল কীর্তিকে খোদার প্রতি আরোপ করে থাকে । যেমন : বৃষ্টিবর্ষণ,বৃক্ষের উদ্গমন ও ফলদান ইত্যাদি খোদায়ী কীর্তি বলে আখ্যায়িত হয়। এ জন্যে সুপারিশ করা হয় যে,মানুষ যেন এ খোদায়ী কীর্তিকে খোদার উল্লম্বে নিকটবর্তী যে নির্বাহকসমূহ বিদ্যমান সেগুলোতে উপলব্ধি ও স্বীকার করে এবং সর্বদা এ সম্পর্কে চিন্তা করে।
অনুধাবনের জন্যে দৈনন্দিন জীবন থেকে একটি উদাহরণ উল্লেখ করব : যদি কোন কার্যালয়ের প্রধান কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে কোন কর্ম সম্পাদনের জন্যে আদেশ প্রদান করে,তবে কর্মটি আদিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক সম্পাদিত হলেও উচ্চ পর্যায়ে এর দায়-দায়িত্ব ঐ কার্যালয়ের প্রধানের উপরই বর্তায়। এমনকি জ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।
সুনির্ধারিত কর্তৃত্বের (فاعلیت التکوینی ) ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রম বিদ্যমান। ‘সকল নির্বাহকের অস্তিত্বই মহান আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল’,এ দৃষ্টিকোণ থেকে তা মস্তিষ্কগত কল্পিত বিষয়ের মতই,যা কল্পনাকারীর উপর নির্ভরশীল।
و لله المثل الاعلی
ফলে যে কোন কর্ম,যে কোন কর্তার মাধ্যমেই সস্পন্ন হোক না কেন,উচ্চতর পর্যায়ে তা মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে,তারই সুনির্ধারিত ইচ্ছায় (الارادة التکوینیة ) সম্পাদিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
و لا حول و لا قوت الا بالله العلی العظیم
দু‘ টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত :
ক্রিয়াগত একত্ববাদের মোদ্দাকথা হল,‘মানুষ মহান আল্লাহ ব্যতীত কাউকে এবং কোন কিছুকেই উপাসনার জন্যে যোগ্য বলে মনে করবে না’। কারণ ইতিপূর্বে যেমনটি আমরা ইঙ্গিত করেছিলাম যে,বান্দার নিকট তার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা ব্যতীত কেউই উপাসনার যোগ্য হতে পারেনা। অন্যকথায় : প্রভুত্ব হল সৃজন ও পালন কর্তৃত্বের অবিয়োজ্য ভাষ্য ।
অপরদিকে তাওহীদের শেষোক্ত অর্থটি (স্বাধীন প্রভাব) থেকে প্রাপ্ত উপসংহারটি হল : মহান আল্লাহর উপর মানুষের পূর্ণ আস্থা থাকা,সকল কর্মের জন্যেই তার উপর নির্ভর করা ও একমাত্র তারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা,একমাত্র তারই নিকট আশা করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় না করা;এমন কি প্রত্যাশা ও চাহিদাসমূহ পূরণের স্বাভাবিক ক্ষেত্রসমূহ প্রস্তুত না থাকলেও নিরাশ না হওয়া। কারণ মহান আল্লাহ স্বাভাবিক পথ ভিন্ন অন্য কোন পথেও তার বান্দার চাহিদা ও প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম।
আর (উপরোক্ত অর্থদ্বয়ের অনুসারী) এমন কোন মানুষই প্রভুর বিশেষ অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত এবং অভূতপূর্ব মানসিক ও আত্মিক তুষ্টিতে পরিপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়ে থাকেন।
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
জেনে রাখ ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ইউনুস -৬২)
উপরোক্ত সিদ্ধান্তদ্বয় নিম্নলিখিত আয়াতশরীফে সন্নিহিত রয়েছে -যে আয়াতটি প্রত্যেক মুসলমান প্রত্যহ কমপক্ষে দশবার আবৃতি করে থাকে।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
(প্রভু হে! ) আমরা আপনারই উপাসনা করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।(সূরা ফাতিহা- ৫ )
একটি ভুল ধারণার অপনোদন :
এখানে সম্ভবতঃ একটি ভুল ধারণার অবকাশ থাকতে পারে। যথা : যদি পরিপূর্ণ তাওহীদের দাবি এটা হয়ে থাকে যে,মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে না। তবে আল্লাহর মনোনীত বান্দা ও ওলীগণেরتوسل করা বা শরণাপন্ন হওয়াও সঠিক হতে পারে না।
প্রতিউত্তরে বলতে হয় : আল্লাহর ওলীগণের শরণাপন্ন হওয়া যদি এ অর্থে হয় যে,তারা স্বাধীনভাবে ও আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীতই শরণার্থীর কোন কর্ম সম্পাদন করবেন,তবে এ ধরনের তাওয়াসসুল তাওহীদের সাযুজ্য হতে পারে না। কিন্তু যদি এ অর্থে হয় যে,মহান আল্লাহ ওলীগণকে স্বীয় অনুগ্রহের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং মানুষকেও তাদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্যে আদেশ দিয়েছেন,তবে এ ধরনের তাওয়াসসুল একত্ববাদের সাথে কোন বিরোধ তো সৃষ্টি করেই না,বরং উপাসনা ও আজ্ঞাবহতার ক্ষেত্রে একত্ববাদের মর্যাদায় পরিগণিত হবে। কারণ তারই (আল্লাহর) আদেশে সস্পন্ন হয়ে থাকে।
কিন্তু কেন মহান আল্লাহ এ ধরনের মাধ্যমসমূহকে স্থান দিয়েছেন এবং কেনই বা মানব সম্প্রদায়কে তাদের শরণাপন্ন হতে বলেছেন ? এর উত্তরে বলা যায় যে,এ ঐশ্বরিক বিষয়টির পশ্চাতে একাধিক উদ্দেশ্য লুক্বায়িত। এগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে : আল্লাহর উপযুক্ত বান্দাগণের উচ্চ মর্যাদার পরিচয় প্রদান,উপাসনা ও আনুগত্যের পথে অন্যদেরকে উৎসাহ প্রদান -যা তাদের এ সম্মানিত স্থানে পৌঁছার কারণ মানুষকে তাদের ইবাদত ও আনুগত্যের জন্যে অহংকার করা থেকে বিরত রাখা এবং যারা নিজেদেরকে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী ও পূর্ণতম মানব হিসেবে মনে করেন তাদেরকে সে ভ্রান্তি থেকে মুক্তি প্রদান। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে,সর্বশেষে বর্ণিত ব্যাপারটি যারা আহলে বাইতগণের (আ.) বিলায়াতকে অস্বীকার করে এবং যারা তাদের শরণাপন্ন হওয়া থেকে বঞ্চিত,তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে ।