হাদীসে সাকালাইন ও এর সাথে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হাদীসসমূহের পর্যালোচনা
সংকলন : মো. আশিফুর রহমান
ভূমিকা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (ইতরাত),আমার আহলে বাইত;নিশ্চয়ই এ দু’টি কখনই বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউসের নিকট (হাউসে কাউসারের নিকট) আমার কাছে উপস্থিত হয় (কিয়ামত দিবসে)।’ নাসায়ী,আহমাদ,খাসায়িস,পৃ.১১২,হাদীস-৭৮;ইবনে মাগাযিলী,মানাকিব,পৃ. ২৩০,হাদীস ২৮৩;আবু ইয়ালী,মুসনাদ,২য় খণ্ড,পৃ. ২৯৭,হাদীস ১০২১;ইবনে আবি আসিম,কিতাবুস সুন্নাহ,পৃ.৬৩০,হাদীস-১৫৫৫;ইবনে হাম্বাল,মুসনাদ,১৭তম খণ্ড,পৃ. ২১১,হাদীস ১১১৩১;তাবারানী,সুলাইমান,৫ম খণ্ড,পৃ. ১৬৯,হাদীস ৯৮০ ও ৪৯৮১।
মহানবী (সা.) বলেন : ‘নিশ্চয়ই আমি দু’টি মূল্যবান ও ভারী বস্তু তোমাদের মধ্যে রেখে যাচ্ছি,যদি তোমরা সে দু’টিকে আঁকড়ে ধর কখনও বিভ্রান্ত হবে না,(তা হল) আল্লাহর কিতাব ও আমার বংশধর,নিকটাত্মীয় এবং এ দু’টি আমার সঙ্গে হাউজে কাউসারে মিলিত হওয়া পর্যন্ত পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।’*
*(সুন্নি সূত্রসমূহের মধ্যে দ্রষ্টব্য : সুনানে তিরমিযী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৬২২,হাদীস নং ৩৭৮৬ ও পৃ. ৬৬৩,হাদীস নং ৩৭৮৮;হাকিম নিশাবুরী,মুস্তাদরাক,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯ ও ১১০;ইবনে আসিম,কিতাবুস সুন্নাহ,পৃ. ৬২৯,হাদীস ১৫৫৩ এবং পৃ. ৬৩০,হাদীস ১৫৫৮;ইবনে হাম্বাল,মুসনাদ,১৭তম খণ্ড,পৃ. ১৬১,হাদীস ১১১০৪;তাবারানী,সুলাইমান,আল মোজামুল কাবির,৩য় খণ্ড,পৃ. ৬৫-৬৭,হাদীস ২৬৭৮,২৬৮০ ও ২৬৮১ এবং ৫ম খণ্ড,পৃ. ১৬৬,হাদীস ৪৯৭১;ইবনে হামিদ,মুসনাদ,পৃ. ১০৭-১০৮,হাদীস ২৪০;‘কিতাবুল্লাহ ওয়া আহলুল বাইত ফি হাদীসিস সাকালাইন মিন মাসাদিরি আহলিস সুন্নাহ’ গ্রন্থে এই হাদীসটির সূত্রসমূহ মোটামুটিভাবে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
শিয়া সূত্র সমূহের মধ্যে দেখুন : সাদুক,মুহাম্মাদ কামালুদ্দীন ওয়া তামামুন নি’মাত,১ম খণ্ড,পৃ. ২৩৪,২২ তম অধ্যায়,হাদীস ৪৪-৬২;মাহমুদী,মুহাম্মাদ জাওয়াদ,তারতীবুল আমালী,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৫৮,হাদীস ১২১০ এবং পৃ. ১৬০-১৬২,হাদীস ১২১৩-১৩১৫ প্রভৃতি।
যায়দী মাজহাবের গ্রন্থসমূহের মধ্যে দ্রষ্টব্য : ইবনে শাজারী,আল আমালী খাসিসিয়া,১ম খণ্ড,পৃ. ১৫৫;কুফী,মুহাম্মাদ ইবনে সুলাইমান,মানাকিব,পৃ. ১১২,হাদীস ৬১৬ এবং পৃ. ১৩৫,হাদীস ৬৩৩,পৃ. ১৭০,হাদীস ৬৬৩,পৃ. ৩১৩,হাদীস ৭৯৯,পৃ. ৪৩৫-৪৩৬,হাদীস ৯২৮-৯২৯ এবং পৃ. ৪৪৯-৪৫০,হাদীস ৯৪৮-৯৪৯। অন্যান্য যে সকল গ্রন্থে হাদীসে সাকালাইন বিভিন্ন উৎস থেকে বর্ণিত হয়েছে তন্মধ্যে আল বাহরানী,সাইয়েদ হাশেম,আল বুরহান,১ম খণ্ড,পৃ. ৯-১৫;রাজী,শেখ হুসাইন,হাওয়ামেশুত তাহকীকাহ (আল মুরাজায়াতের সঙ্গে সংযুক্ত সূত্র বিষয়ক গবেষণার অংশ),পৃ. ৩২৭,তুশতারী কাজী নুরুল্লাহ্,ইহকাকুল হাক,৯ম খণ্ড,পৃ. ৩০৯-৩৭৭;হিন্দী,মীর হামিদ হুসাইন,আবাকাতুল আনওয়ার,১ম খণ্ড,পৃ. ১৭-৩২৮ এবং ২য় খণ্ড,পৃ. ৩৯০-৩৯২।)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ হাদীসটি ‘হাদীসে সাকালাইন’ বা দু’টি মূল্যবান জিনিসের হাদীস নামে প্রসিদ্ধ। এ হাদীসের অনুসরণ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে গত চৌদ্দ শতাব্দী যাবৎ মুসলমানদের ওপর চরম বিপর্যয় নেমে আসে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।
যদি পবিত্র কুরআনের শিক্ষার সাথে জনগণ কর্তৃক মেনে চলা জনপ্রিয় বিধিবিধান ও মূল্যবোধসমূহের তুলনা করা হয় তাহলে যে কারও কাছেই কুরআনের সাথে বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। নিশ্চিতভাবেই কুরআনের বাণী ও চেতনার সাথে মুসলিম সমাজ কর্তৃক মেনে চলা বিধানের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে;বিগত কয়েক শতাব্দীতে পাশ্চাত্যের প্রভাবে প্রভাবিত হওয়া এবং মুসলিম দেশগুলোর শাসন কর্তৃত্ব অত্যাচারীদের হাতে চলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে ব্যবধান কখনই এতটা ব্যাপক ছিল না।
কারও কাছে মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের বিচ্ছিন্নতা স্পষ্ট হয়ে যাবে যখন তারা ইতিহাসে অধ্যয়ন করবে যে,কীভাবে বনু উমাইয়্যা ও বনু আব্বাসের সময় মহানবীর পরিবারের ইমামগণকে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল! এর ফলে পবিত্র কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যাদাতা এবং এর সংরক্ষকদের-মহানবী (সা.)-এর ভাষ্যমতে যাঁদেরকে সময়ের স্রোত কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না-চরম নযরদারির মধ্যে রাখা হতো,তাঁদেরকে নির্বাসনে পাঠানো হতো,বন্দি করা হতো,বিষ প্রয়োগে ও অন্যান্যভাবে হত্যা করা হতো। আর মানুষকে তাঁদের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করা হতো।
আহলে বাইতকে কোণঠাসা করার মাধ্যমে অত্যাচারী শাসকরা কুরআনকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার এবং নিজেদের অনৈসলামিক শাসন ব্যবস্থাকে জায়েয করার হাতিয়ারে পরিণত করে। যে কুরআন নাযিল হয়েছিল মানুষের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক জীবনকে সমুন্নত এবং পৃথিবীতে ঐশী ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তা থেকে অত্যাচারী শাসকরা ইসলামকে একটি অবর্ণনীয় বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়।
বর্তমানে আমেরিকা লক্ষ-কোটি ডলার দিয়ে প্রকৃত ইসলামের বিরুদ্ধে যেভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এ কাজটিই অত্যাচারী উমাইয়্যা ও আব্বাসী শাসকরা তাদের সময়ে করেছিল। তারা ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যাকারীদের সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল এবং ইসলামের অন্য একটি রূপ প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু তারা যত চেষ্টাই করুক না কেন,আহলে বাইত সম্পর্কিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উক্তিকে মুছে ফেলতে পারেনি এবং কুরআনের সাথে আহলে বাইতের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের হাদীস ও অন্যান্য হাদীস গোপন করতে পারেনি।
বিগত চৌদ্দ শতাব্দী ধরে প্রতিটি যুগে অসংখ্য সুন্নী ও শিয়া হাদীস বিশারদ ও পণ্ডিত কর্তৃক এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীদের সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত প্রতিটি যুগে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী এবং ইসলামের ইতিহাসের অনেক বড় ও নেতৃস্থানীয় পণ্ডিত এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
এটি উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজনীয় যে,হাদীসে সাকালাইন একটি মুতাওয়াতির হাদীস। সুন্নী উৎসসমূহের মধ্যে সিহাহ সিত্তাহসহ অন্যান্য গ্রন্থে এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে শব্দগত কিছু পার্থক্যসহ বিভিন্ন উপলক্ষে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মানুষের জন্য একটি নিশ্চিত প্রমাণ,বিশেষ করে মাজহাব নির্বিশেষে সকল মুসলমানের জন্য। আর প্রত্যেক মুসলমানকে এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এ সম্পর্কে কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হবে না।
তাওয়াতুরের অর্থ
আমরা জানি যে,মহানবী (সা.)-এর হাদীসসমূহ হাদীসের গ্রন্থাদিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা (সনদ) বজায় রেখে। হাদীসশাস্ত্রবিদগণ হাদীসের সনদের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং হাদীসের বিষয়বস্তুর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ করেছেন। তাঁরা হাদীসের বৈশিষ্ট্য,এর বর্ণনাকারীদের শক্তিশালী ও দুর্বল হওয়া এবং অন্যান্য কারণের ওপর নির্ভর করে এ বিষয়ে বিভিন্ন পরিভাষা তৈরি করেছেন। যেমন মুতাওয়াতির,খবরে ওয়াহেদ,সহীহ,হাসান,কাভী,যাইফ ইত্যাদি।
তাওয়াতুর অর্থ হল কোন একটি তথ্যের ক্ষেত্রে উৎসের প্রাচুর্য বা সংখ্যাধিক্য-যা কোন শ্রোতাকে সেই তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করে। দূরবর্তী কোন দেশ বা শহর এবং ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব,যেমন সাইরাস বা নেপোলিয়ান এর অস্তিত্ব সম্পর্কিত কারও জ্ঞানের ক্ষেত্রে বলা যায় যে,এসব জ্ঞান তাওয়াতুর বর্ণনার ওপর ভিত্তিশীল। এভাবেই সমসাময়িক কোন বিষয়ের জ্ঞানও এ পর্যায়ভুক্ত যদি কোন ব্যক্তি তা নাও দেখে থাকে।
একটি মুতাওয়াতির হাদীস হল সেটিই যা অনেকগুলো ধারায় বর্ণিত হয়েছে এবং প্রতি যুগে এসব বর্ণনাকারীর কোনভাবেই একত্র হয়ে কোন হাদীস জাল করার ক্ষেত্রে সম্মত হওয়া সম্ভব নয়। যদিও কতিপয় হাদীসশাস্ত্রবিদ বর্ণনাকারীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করেছেন,যেমন পাঁচ,সাত অথবা দশ,কিন্তু সাধারণভাবে এ ক্ষেত্রে কোন সংখ্যাকে নির্দিষ্ট করা হয়নি এবং বর্ণনাকারীর যে সংখ্যা শ্রোতার কাছে নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তা নির্ভর করে শ্রোতার অভিজ্ঞতার ওপর।
ইসলামী আইনশাস্ত্র কোন হাদীসের মুতাওয়াতির হওয়ার ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত নির্ধারণ করেছে। আল-গাযযালী তাঁর ‘আল-মুসতাসফা মিন ইলম আল-উসূল গ্রন্থে নিম্নলিখিত শর্ত উল্লেখ করেছেন যার কয়েকটি হল :
১. রাবী তাঁর জ্ঞানের (ইলম) ভিত্তিতে হাদীস বর্ণনা করবেন এবং তাঁর ধারণার (যান্ন) ওপর নির্ভর করবেন না।
২. তাঁদের জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অর্জিত হবে হবে।
৩. বর্ণনাকারীদের সংখ্যা এ পরিমাণ হতে হবে যাতে নিশ্চয়তা অর্জিত হয়।
৪. হাদীস বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সকল ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি শর্ত পূরণ করতে হবে এবং প্রতি পর্যায়ে বর্ণনাকারীদের সংখ্যার ক্ষেত্রে তৃতীয় শর্তটি পূরণ করতে হবে।
‘মাআলিম আল-উসূল’ গ্রন্থের প্রণেতা শিয়া পণ্ডিত আশ-শাইখ আল-হাসান ইবনে যাইন আল-দীন তাওয়াতুরের ক্ষেত্রে একই ধরনের শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। দেখা যাচ্ছে যে,এ ক্ষেত্রে বর্ণনাকারীর ন্যায়পরায়ণ হওয়ার শর্ত প্রয়োজন হয় না অথবা তাঁদের বিশ্বস্ত হওয়ারও প্রয়োজন নেই যখন তাওয়াতুরের শর্ত পূরণ হয়ে যায়;বরং আল-গাযযালী সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে,এমন ক্ষেত্রে এমনকি ফাসেক বর্ণনাকারীর নিকট থেকেও জ্ঞান অর্জিত হয়। ‘মাআলিম’ এর প্রণেতা মুতাওয়াতির বর্ণনার জন্য দু’টি শর্ত উল্লেখ করেছেন :
১. শ্রোতার এ ব্যাপারে পূর্বে কোন জ্ঞান থাকবে না। কারণ,এটি সম্ভব নয় যে,যে ব্যক্তি কোন একটি বিষয় জানে সে একই বিষয় আবারও জানবে।
২. শ্রোতা তার বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কোনরূপ সন্দেহ বা আনুগত্য দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে না;তাহলে সেই তথ্য তার ওপর প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হবে।
কিছু সংখ্যক সহীহ বর্ণনা
হাদীসে সাকালাইন একটি মুতাওয়াতির হাদীস যা কেবল সুন্নী উৎসসমূহেই অনেক সূত্রে মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণিত হয়েছে। আমরা যদি এর সাথে তাওয়াতুরভাবে আহলে বাইতের সূত্রের বর্ণনাগুলো যোগ করি তাহলে এর মোট বর্ণনাকারীর সংখ্যা একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হয়ে যাবে।
হাদীসটি বেশ কয়েকটি সহীহ সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ এসব বর্ণনার ধারাবাহিকতায় বর্ণনাকারীরা সকলেই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য (সিকাহ্) বলে গণ্য। এসবের মধ্য থেকে মুসলিম ও হাকিম নিশাবুরী কর্তৃক সংকলিত চারটি সহীহ সূত্র নিচে উল্লেখ করা হল :
(মুসলিম বলেন :) যুহাইর ইবনে হারব এবং সূজা ইবনে মাখলাদ আমার কাছে উলাইয়াহ্ থেকে বর্ণনা করেছেন যে,(যুহাইর বলেন),ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম আমাদের কাছে বর্ণনা করেন আবু হাইয়্যান থেকে,তিনি ইয়াযীদ ইবনে হাইয়্যান থেকে যে,‘হুসাইন ইবনে সাবরাহ্,উমার ইবনে মুসলিম এবং আমি যায়েদ ইবনে আরকামকে দেখতে গিয়েছিলাম। যখন আমরা তাঁর নিকট বসলাম তখন হুসাইন তাঁকে বললেন,‘হে যায়েদ! আপনি তো অনেক কল্যাণ লাভ করেছেন। আপনি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে দেখেছেন,তাঁর কথা শুনেছেন,যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর সাথে থেকে লড়াই করেছেন এবং তাঁর পেছনে নামায পড়েছেন। নিশ্চয়ই,হে যায়েদ! আপনি অনেক কল্যাণ লাভ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে যা শুনেছেন তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন।’
যায়েদ বললেন : ‘হে আমার ভাতিজা! আল্লাহর কসম। আমি বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে গেছি,আমার আয়ুষ্কাল অনেক হয়েছে। তাই কিছু কিছু কথা যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে শুনে মনে রেখেছিলাম,তা ভুলে গেছি। সুতরাং আমি তোমাদের নিকট যা বর্ণনা করি তা সাদরে গ্রহণ কর এবং আমি যা বর্ণনা করি না তার জন্য আমাকে বাধ্য কর না।’ অতঃপর তিনি বললেন : ‘একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা ও মদীনার মাঝখানে অবস্থিত ‘খুম’ নামক জলাশয়ের নিকট আমাদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং উপদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন : হে লোকসকল! আমি তো মানুষই। অচিরেই আমার প্রভুর তরফ থেকে দূত এসে যাবে,আর আমি তাঁর ডাকে (মৃত্যুর আহ্বানে) সাড়া দিব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (মূল্যবান) বস্তু (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি। (এ দু’টির) প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন) যা হেদায়াত ও নূরে পরিপূর্ণ। অতএব,তোমরা আল্লাহর কিতাবকে ধারণ কর এবং মজবুত করে আঁকড়ে ধর। তারপর তিনি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে (আমাদের) উদ্বুদ্ধ করলেন ও উৎসাহ প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন : আর (দ্বিতীয়ত) আমার আহলে বাইত (পরিবার)। আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।...’
[সহীহ মুসলিম,৭ম খণ্ড,ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায় (মাকতাবাত ওয়া মাতবা‘আত-মুহাম্মাদ আলী সুবাইহ ওয়া আউলাদুহু : কায়রো),পৃ. ১২২-১২৩]
একই সূত্রে আহমাদ ইবনে হাম্বাল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটিও সহীহ সূত্রে বর্ণিত এ কারণে যে,বর্ণনাকারীরা সকলেই মুসলিমেরও বর্ণনাকারী। (মুসনাদে আহমাদ,৩২তম খণ্ড,পৃ.৫৬,হাদীস ১৯২৬৬)
আলবানী তাঁর সহীহ সুনানুত তিরমিজীর গবেষণা গ্রন্থের টীকা (৩য় খণ্ড,পৃ.৪৭৬ ও ৫৪৩),সিলসিলাতুল আহাদিসুস সাহিহা (৪র্থ খণ্ড,পৃ.৩৫৬-৩৫৭) ও সাহিহু আল জামেয়ুস সাগীর (১ম খণ্ড,পৃ.৪৮২) গ্রন্থে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। শুয়াইব ‘আরনাউত সুনানুত তিরমিযী’ (৬ষ্ঠ খণ্ড,প্র.২৩৭) ও ‘মুশুকিলুল আসার’ (তাহাভী রচিত) গ্রন্থের শারহে (৫ম খণ্ড,পৃ. ১৮-১৯) এবং কাসতালানী তাঁর ‘আল মাতালিবুল আলীয়া’ গ্রন্থেও (১৬তম খণ্ড,পৃ.১৪২) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(হাকিম বলেন :) বাগদাদে আমাদের কাছে আবুল হুসাইন মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনে তামিম আল-হানযালী বর্ণনা করেন,তিনি আবু কাল্লাবাহ আবদুল মালিক ইবনে মুহাম্মাদ আল রাক্কাশী থেকে,তিনি ইয়াহইয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে;আমার কাছে আরও বর্ণনা করেছেন আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে বালাওয়াইহ এবং আবু বকর আহমাদ ইবনে জাফর আল-বাযযায,তাঁরা উভয়েই আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বাল থেকে,তিনি তাঁর পিতা থেকে,তিনি ইয়াহইয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে;এবং আমাদের কাছে আরও বর্ণনা করেছেন বুখারার ফকীহ আবু নাসর আহমাদ ইবনে সুহাইল থেকে,তিনি সালিহ ইবনে মুহাম্মাদ থেকে যিনি বাগদাদের হাফিয,তিনি খালাফ ইবনে সালিম আল-মাখরামী থেকে,তিনি ইয়াহইয়া ইবনে হাম্মাদ থেকে;এবং ইয়াহইয়া ইবনে হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন আবু উয়াইনাহ থেকে,তিনি সুলাইমান আল-আমাশ থেকে,তিনি হাবিব ইবনে আবি সাবিত থেকে,তিনি আবু আল-তুফাইল থেকে,তিনি যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে,যিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তাঁর বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন গাদীরে খুমে অবতরণ করলেন এবং গাছগুলোর নিচে সমবেত হওয়ার আদেশ দিলেন। সেগুলোর নিচে পরিষ্কার করা হল। তারপর তিনি বললেন : ‘আমি (মৃত্যুর) আহ্বানে সাড়া দিতে যাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে গেলাম,যার একটি অপরটি অপেক্ষা বৃহৎ। মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার ইতরাত (আহলে বাইত)। তাই লক্ষ্য রেখ,আমার পরে এ দুয়ের সাথে তোমরা কেমন আচরণ কর;নিশ্চয়ই হাউসে আমার কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত তারা একে অপর থেকে কখনই বিচ্ছিন্ন হবে না।’ তারপর তিনি বলেন : ‘নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান ও মহিমান্বিত আল্লাহ আমার অভিভাবক (মাওলা) এবং আমি প্রত্যেক মুমিনের অভিভাবক।’ তারপর তিনি আলী (রা.)-এর হাত ধরলেন এবং বললেন : ‘আমি যার অভিভাবক,এ (আলী) তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! যে তাকে ভালবাসে,তুমি তাকে ভালবাস এবং যে তার সাথে শত্রুতা করে তুমি তার শত্রু হও।’
(হাকিম আরও যুক্ত করেন :) ‘এ হাদীসটি শাইখাইন (বুখারী ও মুসলিম) কর্তৃক সহীহ হওয়ার শর্তের ভিত্তিতে সহীহ,যদিও তাঁরা এ হাদীসটি পুরোপুরি বর্ণনা করেননি।’
(হাকিম বলেন :) প্রথম হাদীসটি (উপরোল্লিখিত) নিচের হাদীস দ্বারা সমর্থিত যা বর্ণিত হয়েছে সালামাহ ইবনে কুহাইল থেকে,তিন আবু আল-তুফাইল থেকে। আর এটিও বুখারী ও মুসলিমের দৃষ্টিকোণ থেকে সহীহ। আমাদের কাছে আবু বকর ইবনে ইসহাক এবং দালায ইবনে আহমাদ ইবনে সিজ্জী বর্ণনা করেন,তাঁরা উভয়েই মুহাম্মাদ ইবনে আইউব থেকে,তিনি আল-আযরাক ইবনে আলী থেকে,তিনি হাসান ইবনে ইবরাহীম আল-কিরমানী থেকে,তিনি মুহাম্মাদ ইবনে সালামাহ ইবনে কুহাইল থেকে,তিনি তাঁর পিতা থেকে,তিনি আবু আল-তুফাইল থেকে,তিনি ইবনে ওয়াসিলা থেকে,যিনি যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.)-কে বলতে শুনেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা ও মদীনার মধ্যে পাঁচটি গাছঘেরা ছায়াময় একটি স্থানে অবতরণ করেন। লোকেরা গাছের নিচে পরিষ্কার করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সন্ধ্যার নামায আদায় করেন। নামাযের পর তিনি লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন,উপদেশ দেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা বলতে আদশে করেছেন তা বলেন। তারপর তিনি বলেন : ‘হে লোকসকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান বিষয় (আমরাইন) রেখে যাচ্ছি,যদি তোমরা সে দু’টিকে অনুসরণ কর,তোমরা কখনই বিপথগামী হবে না। এ দু’টি হলো : আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত,আমার ইতরাত।’ তারপর তিনি তিনবার বলেন : ‘তোমরা কি জান যে,মুমিনদের নিজেদের অপেক্ষা আমি তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি?’ জনগণ বলে : ‘হ্যাঁ।’ তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘আমি যার অভিভাবক,আলীও তার অভিভাবক।’
[আল-ইমাম আল-হাফিয আবু আবদুল্লাহ আল-হাকিম আন-নিশাবুরি,আল-মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন (দারুল মারিফাহ লি আল-তিবাহ ওয়া আন-নাশর,বৈরুত),৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯-১১০]
(আল-হাকিম বলেন :) আমাদের কাছে রাইয়ের ফকীহ আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন ইবনে মুসলিম বর্ণনা করেছেন,তিনি ইয়াহইয়া ইবনে আল-মুগীরাহ আল-সাদী থেকে,তিনি জারীর ইবনে আবদুল হামিদ থেকে,তিনি আল-হাসান ইবনে আবদুল্লাহ আন-নাখায়ী থেকে,তিনি মুসলিম ইবনে সুবাইহ থেকে,তিনি যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে,যিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত। নিশ্চয়ই এ দু’টি আমার কাছে হাউসের পাশে ফিরে আসা পর্যন্ত কখনই বিচ্ছিন্ন হবে না।’
(আল-হাকিম বলেন :) ‘এ হাদীসটি শাইখাইনের (বুখারী ও মুসলিমের) সনদ গ্রহণের শর্তে সহীহ,যদিও তাঁরা এটি লিপিবদ্ধ করেননি।’ (আল-হাকিম,প্রাগুক্ত,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪৮)
এগুলো হলো যায়েদ ইবনে আরকাম কর্তৃক চারটি পৃথক সূত্রে বর্ণিত হাদীস। তাঁদের নির্ভরযোগ্যতা হাদীসশাস্ত্রের দু’জন বিখ্যাত ইমাম কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে।
হাদীসে সাকালাইন
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিটি যুগে বিপুল বর্ণনাকারী ও নেতৃস্থানীয় আলেম হাদীসে সাকালাইন বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন তাফসীর,হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে কয়েকটি মাত্র তুলে ধরব। তার মধ্যে সাহাবী বর্ণনাকারীদের বিশদভাবে তুলে ধরা হলো।
সাহাবী বর্ণনাকারী
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্য থেকে ত্রিশেরও অধিক সাহাবী হাদীসে সাকালাইন বর্ণনা করেছেন। তাঁদের নামের পাশাপাশি যেসব লেখক তাঁদের গ্রন্থে হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেছেন তা নিচে দেওয়া হল :
১. হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) (শাহাদাত ৪০ হি./ ৬৬১ খ্রি.)
ক. আবু বকর আহমাদ ইবনে আবদুল খালিক আল-বাযযায
খ. আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে জারীর আত-তাবারী
গ. শামস আল-দীন আল-শাখাভী
ঘ. জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতি
ঙ. নুরুল দীন আশ-শামহুদী
চ. আল-মুত্তাকী আল-হিন্দী
ছ. আহমাদ ইবনে আল ফাযল ইবনে মুহাম্মাদ বা কাসীর আল-মাক্কী
জ. সুলায়মান ইবনে ইবরাহীম আল-কুন্দুজী
২. ইমাম হাসান ইবনে আলী (৩-৫০ হি./ ৬২৪-৬৭০ খ্রি.)
ক. আল-কুন্দুজী
৩. সালমান আল-ফারসি (মৃ. ৩৬ হি./ ৬৫৬ খ্রি.)
ক. আল কুন্দুজী
৪. জুন্দাব ইবনে জুনাদাহ,আবু যার আল-গিফারী (মৃ. ৩২ হি./ ৬৫০ খ্রি.)
ক. মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিযী
খ. ইবনে উকদাহ
গ. ইবনে কাসীর
ঘ. সাখাভী
ঙ. সামহুদী
৫. আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (৩ হিজরি-পূর্ব-৬৮/ ৬১৯-৬৮৭ খ্রি.)
ক. সুলায়মান ইবনে ইবরাহীম আল-কুন্দুজী
৬. সা’দ ইবনে মালিক,আবু সাইদ আল-খুদরী (১০ হিজরি-পূর্ব-৭৪/ ৬১৩-৬৯৩ খ্রি.)
ক. মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক আল-মাদানী
খ. আবদুর রহমান আল-মাসউদী
গ. ইবনে সা’দ আল-যুহরী
ঘ. আহমাদ ইবনে হাম্বাল
ঙ. আবু জাফর আত-তাবারী
চ. আবুল কাসিম আল-তাবারানী
ছ. আবু তাহির আল-যাহাবী
ঞ. ইবনে আবদুল বার
ট. ফাখর আল-দীন রাযী
ঠ. ইবনে কাসীর আল-দিমাশকী
ঢ. জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতি
ণ. শিহাব আল-দীন আল-কাসতালানী
ত. আলী আল-কারী আল-হিন্দী
থ. মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল বাকী আল-যারকানী
দ. সুলায়মান ইবনে ইবরাহীম আল-কুন্দুজী এবং অন্যান্য
৭. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আল-আনসারী (১৬ হিজরি-পূর্ব-৭৮/ ৬০৭-৬৯৭ খ্রি.)
ক. আল-তিরমিযী
খ. আন-নাসায়ী
গ. আল-খাতীব আল-বাগদাদী
ঘ. আবু বকর আল-বাগাভী
ঙ. ইবনে কাসীর দামিশকী
চ. জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতি
ছ. নুরুল দীন আল-সামহুদী
জ. আলী আল-কারী আল-হিন্দী
ঝ. আল-মির্যা হাসান আলী মুহাদ্দিস আল-লাখনাভী
ঞ. আল-শাইখ সুলায়মান আল-কুন্দুজী
ট. আল-সিদ্দীক হাসান খান আল-কনৌওযী
৮. আবু হাইসাম মালিক ইবনে তাইহান (মৃ. ২০ হি./ ৬৪১ খ্রি.)
ক. শামস আল-দীন আশ-শাওকানী
খ. নুরু আল-দীন আশ শামহুদী
গ. সুলায়মান আল-কুন্দুজী
৯. ইবরাহীম আবু রাফে,রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম খাদেম (মৃ. ৪০ হি./ ৬৬১ খ্রি.)
ক. ইবনে উকদাহ
খ. আল শাওকানী
গ. আল শামহুদী
ঘ. আল কুন্দুজী
১০. হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (মৃ. ৩৬ হি./ ৬৫৬ খ্রি.)
ক. শেখ সুলায়মান ইবনে ইবরাহীম আল কুন্দুজী
১১. হুযায়ফাহ ইবনে উসাইদ আল গিফারী
ক. আবু ঈসা আল তিরমিযী
খ. আল হাকিম
গ. আবুল কাসিম তাবারানী
ঘ. আবু নাঈম ইসফাহানী
ঙ. আবুল কাসিম ইবনে আসির
চ. ইবনে কাসির দামিশকী
ছ. শামস আল দীন শাখাভী
১২. খুযায়মা ইবনে সাবিত যু শাহাদাতাইন (মৃ. ৩৭ হি./ ৬৫৭ খ্রি.)
ক. আবুল আব্বাস আল উকদা
খ. শামস আল দীন আল সাখাভী
গ. নূর আল দীন আল সামহুদী
ঘ. আহমাদ ইবনে ফযল ইবনে বা কাসির
ঙ. আল শেখ সুলায়মান আল কুন্দুজী
১৩. যায়েদ ইবনে সাবিত (মৃ. ৪৫ হি./ ৬৬৫ খ্রি.)
ক. মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক
খ. আহমাদ ইবনে হাম্বল
গ. আবু জাফর তাবারী
ঘ. আবুল কাসিম আত তাবারানী
ঙ. আবু আবদুল্লাহ আল গাঞ্জী শাফেয়ী
চ. জালালুদ্দীন সুয়ূতী
ছ. আলী আল কারী আল হিন্দী
জ. সুলায়মান ইবনে ইবরাহীম আল কুন্দুজী
১৪. আবু হুরায়রা,আবদুর রহমান ইবনে সাখর (মৃ. ৫৯ হি./ ৬৭৯ খ্রি.)
ক. আবু বকর আল বাযযায
খ. শামস আল দীন আল সাখাভী
গ. জালালুদ্দীন সুয়ূতী
ঘ. নূরুদ্দীন আল সামহুদী
১৫. আবদুল্লাহ ইবনে হানতাব
ক. আবুল কাসিম তাবারানী
খ. আলী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আসির
গ. জালালুদ্দীন সুয়ূতী
১৬. যুবায়ের ইবনে মুতঈম (মৃ. ৫৯ হি./ ৬৭৯ খ্রি.)
ক. আবু নাঈম ইসফাহানী
খ. শেখ সুলায়মান আল কুন্দুজী
১৭. বাররা ইবনে আযীব (মৃ. ৭১ হি./ ৬৯০ খ্রি.)
ক. আবু নাঈম ইসফাহানী
১৮. আনাস ইবনে মালিক (মৃ. ৯৩ হি./ ৭১২ খ্রি.)
ক. আবু নুয়াইম আল ইসফাহানী
১৯. তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ আত তায়মী (মৃ. ৩৬ হি./ ৬৫৬ খ্রি.)
ক. শেখ সুলায়মান আল কুন্দুজী
২০. আবদুর রহমান ইবনে আউফ (মৃ. ৩২ হি./ ৬৫২ খ্রি.)
ক. আল কুন্দুজী
২১. সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (মৃ. ৫৫ হি./ ৬৭৫ খ্রি.)
ক. আল কুন্দুজী
২২. আমর ইবনুল আস (মৃ. ৫০ হি./ ৬৬৪)
ক. আল মুওয়াফ্ফাক ইবনে আহমাদ আল খারাযমী
২৩. সাহল ইবনে সা’দ আল আনসারী (মৃ. ৯১ হি./ ৭১০ খ্রি.)
খ. শামস আল দীন আস সাখাভী
গ. নূরুদ্দীন আস সামহুদী
ঘ. সুলায়মান কুন্দুজী
২৪. আদী ইবনে হাতেম (মৃ. ৬৮ হি./ ৬৮৭ খ্রি.)
২৫. উকবাহ ইবনে আমীর (মৃ. ৫৮ হি./ ৬৭৮ খ্রি.)
২৬. আবু আইউব আনসারী,খালিদ ইবনে যায়েদ (মৃ. ৫২ হি./ ৬৭২ খ্রি.)
২৭. আবু সুরাইহ আল খুযায়ী,খুওয়াইলিদ ইবনে আমর (মৃ. ৬৮ হি./ ৬৮৭ খ্রি.)
২৮. আবু কুদামাহ,আল আনসারী (শহীদ ৩৭ হি./ খ্রি. ৬৫৭)
২৯. আবু লায়লা আল আনসারী (শহীদ ৩৭ হি./ খ্রি. ৬৫৭ খ্রি.)
৩০. উমায়রাহ আল আসলামী
(২৪-৩০ নং পর্যন্ত সাহাবীদের বর্ণনা নিচের গ্রন্থাবলীতে এসেছে)
ক. ইবনে উকদা
খ. আল সাখাভী
গ. আল সামহুদী
ঘ. আল কুন্দুজী
৩১. আমর ইবনে লায়লা ইবনে দামরাহ
ক. ইবনে হাজার আল আসকালানী
খ. শামস আল দনি আল সাখাভী
গ. নূর আল দীন আল সামহুদী
ঘ. আল কুন্দুজী
৩২. যায়েদ ইবনে আরকাম (মৃ. ৬৮ হি./ ৬৮৭ খ্রি.)
ক. আন নাসাঈ
খ. আল হাকিম
গ. আল তাবারানী
ঘ. আলী আল মুত্তাকী আল হিন্দী
ঙ. আল সামহুদী
৩৩. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (মৃ. ৭৩ হি./ ৬৯২ খ্রি.)
৩৪. ফাতিমা যাহরা (আ.) (শাহাদাত ১১ হি./ ৬৩২ খ্রি.)
ক. শেখ সুলায়মান আল কুন্দুজী
৩৫. উম্মে সালামাহ,হিন্দ বিনতে সুহাইল (মৃ. ৬২ হি./ ৬৮১ খ্রি.)
ক. ইবনে উকদাহ
খ. আবুল হাসান আলী ইবনে উমর আল দারেকুতনী
গ. আস সাখাভী
ঘ. আস সামহুদী
৩৬. উম্মে হানী,ফাখতাব বিনতে আবি তালিব (মৃ. ৪০ হি./ ৬৬১ খ্রি.)
ক. ইবনে উকদাহ
খ. আস সাখাভী
গ. আস সামহুদী
তাবেয়ী বর্ণনাকারী
বিপুল সংখ্যক তাবেয়ী উপরিউক্ত সাহাবীদের একজন অথবা বহুজনের নিকট থেকে শুনে হাদীসে সাকালাইন বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে মাত্র কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো :
৩৭. আবু তুফাইল আমীর ইবনে ওয়াসিলাহ আল লাইসী (মৃ. ১০০ হি./ ৭১৮ খ্রি.)
৩৮. আতিয়াহ ইবনে সা’দ আল আউফি
৪১. হাবিব ইবনে আবি সাবিত
৪২. আলী ইবনে রাবিআ
৪৩. আল কাসিম ইবনে হাসান
৪৪. ইয়াহইয়া ইবনে যুদাহ
৪৫. আল আসবাগ ইবনে নুবাতাহ
৪৬. আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাফি
৪৭. আবদুর রহমান ইবনে আবি সাঈদ আল খুদরী
৪৮. আল হাসান ইবনে হাসান ইবনে আবি তালিব
৪৯. যায়নুল আবেদীন,আলী ইবনুল হুসাইন (আ.)
৫০. ইয়াযীদ ইবনে হাইয়্যান
চলবে…