আল হাসানাইন (আ.)

সর্বশেষ ধর্মীয় ঐক্য -১ম পর্ব

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

মূল আরবী থেকে মো. মুনীর হোসেন খান কর্তৃক অনূদিত

আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ বাকির আল হাকীম ছিলেন সমকালীন বিশ্বের সংগ্রামী আলেম সমাজের অন্যতম পুরোধা। তিনি ছিলেন ইরাকের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি ১৯৩৯ সালে ইরাকের পবিত্র নাজাফ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আয়াতুল্লাহ্ মুহসিন আল হাকীম ছিলেন অতি উচ্চ পর্যায়ের আলেম এবং তাঁর জীবদ্দশায় একক মারজা-ই তাকলীদ। হাকীম পরিবার ইরাকের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ধর্মীয় পরিবার-যাঁদের ইসলামী জ্ঞান সাধনা এবং ইরাকের মুসলমানদের দিকনির্দেশনা দানের ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা ও অবদান রয়েছে। শুধু তাই নয়,আল হাকীম পরিবার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইরাকের জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও পদাচারণা ও যথাযথ অবদান রেখেছে এবং রাখছে।

আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ বাকির আল হাকীম পবিত্র নাজাফেই তাঁর সকল শিক্ষা ও উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি সেখানে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি তাঁর পিতার জীবদ্দশায় তাঁর ধর্মীয়,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সমসাময়িক কালে ইরাকের ইসলামী গণআন্দোলন ও সংগ্রামের পথিকৃৎ ও অগ্রনায়ক শহীদ আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ বাকির আস সাদরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধে আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ বাকির আল হাকীম ১৯৭২ সালে সাদ্দাম সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং বেশ কিছু দিন কারাভোগের পর জনগণের চাপের মুখে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। ১৯৭৭ সালে সাদ্দাম জান্তা কর্তৃক পুনরায় তিনি কারারুদ্ধ ও নির্যাতনের শিকার হন। এরপর জেল থেকে ছাড়া পেলে তিনি আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আস সাদরের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইরাকী জনগণের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সাদ্দাম কর্তৃক গণঅভ্যুত্থান দমন এবং আয়াতুল্লাহ্ শহীদ মুহাম্মদ বাকির আস সাদরের গ্রেফতারের পর তিনি ইরাকে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে সাদ্দাম আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আস সাদরকে কাপুরুষোচিতভাবে শহীদ করে। আয়াতুল্লাহ্ বাকির আল হাকীম ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে বাধ্য হয়ে ইরানে হিজরত করেন। তিনি ‘আল-মজলিসুল্ আ’লা লিস্ সাওরাতিল্ ইসলামিয়াহ্ ফীল ইরাক বা Supreme Assembly of the Islamic Revolution in Iraq (SAIRI) গঠন করে ইরাকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাদ্দাম ও বাথ পাটির বিরুদ্ধে সগ্রাম শুরু করেন।

আয়াতুল্লাহ্ বাকির আল হাকীমের সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ SAIRI ইরাকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে যা আমেরিকাসহ সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করে। সে সাথে আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আত্ তাবাতাবাঈ আল হাকীমও ইরাকের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ধর্মীয় নেতা হিসেবে ইরাকী জনগণের মাঝে স্থান করে নিয়েছেন। এর প্রমাণ দীর্ঘ ২৩ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে দেশে ফিরলে বসরা,কুফা,নাজাফ,কারবালা,নাসিরিয়া ও বাগদাদে তাঁকে প্রদত্ত লাখো জনতার উষ্ণ সম্বর্ধনা এবং তাঁর শাহাদাতের পর তাঁর স্মরণে কারবালা,নাজাফ,বাগদাদ,কাযিমাইন,নাসিরিয়াসহ ইরাকে ব্যাপক গণমাতম,লাখ লাখ জনতার মিছিল ও নাজাফের উদ্দেশে তাঁর জানাযার নামায ও দাফন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে লাখো শোকার্ত নর-নারীর পদব্রজে যাত্রা।

তিনি দেশে ফিরে ইঙ্গ-মার্কিন দখলদার বাহিনীকে সে দেশ থেকে চলে যেতে এবং দেশের ক্ষমতা ও শাসনভার ইরাকীদের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নাজাফে ইমাম আলী মসজিদের জুমআ নামাযের ইমামতি করতেন এবং জুমআ নামাযের খুতবাগুলোতে প্রতিনিয়ত সাদ্দাম ও বাথ পার্টির অপকর্ম এবং ইঙ্গ-মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতেন এবং আপামর ইরাকী জনতার ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করতেন। আল হাকীম ইমাম খোমেইনী (রহ.) ও শহীদ আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আস সাদরের বৈপ্লবিক আদর্শ ও চিন্তাধারার যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার কারণে তিনি বিশ্ব শয়তানী চক্রের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে নাজাফে ইমাম আলী মসজিদে জুমআর নামাজ আদায়ের পর বেরিয়ে আসার পথে মসজিদ চত্বরেই তাঁকে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়।

আল হাকীম পরিবারের আত্মত্যাগ এই প্রথম নয়। ১৯৮৩ সালে সাদ্দাম-জান্তা হাকীম পরিবারের ১২৫ জনকে গ্রেফতার করে। এর পরই তাঁদের মধ্য থেকে ১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁর ভাই সাইয়্যেদ মাহ্দী আল হাকীমকে ১৯৮৮ সালের জানুয়ারীতে সাদ্দামের গুপ্তঘাতক এজেন্টরা হত্যা করে। এতদসত্ত্বেও তিনি সাদ্দাম ও বাথ পার্টিবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যান।

শহীদ আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির আল হাকীম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ইসলামী সংস্থা ও সংগঠনে একজন অগ্রণী সদস্য ছিলেন।

তিনি ইসলামী ঐক্য অর্থাৎ শিয়া-সুন্নী মাজহাবের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার সক্রিয় উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী ঐক্যপ্রয়াসী সংস্থা ‘মাজমায়ে দারুত তাকরীব’-এর চেয়ারম্যান। তেহরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী ঐক্য কনফারেন্সে ‘মুসলিম ঐক্য ও সংহতি’ বিষয়ক তাঁর প্রদত্ত ভাষণ ও বক্তব্যগুলো খুবই তাৎপর্যমণ্ডিত। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসাযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ঐক্য বিষয়ক তাঁর বহু জ্ঞানগর্ভমূলক প্রবন্ধও রয়েছে। তিনি ইসলামী ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। এসব গ্রন্থের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক ইরান ও ইরাকের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়ানো হয়।

নবুওয়াত-রিসালতের ধারা সমাপ্তকারী ধর্মের ঐক্য, 

প্রারম্ভিকা

মানব জাতি ও মানব সমাজের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রা বেশ কিছু মৌলিক পর্যায় ও ধাপ অতিক্রম করেছে। এ ক্ষেত্রে ধর্মের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান আছে যার প্রতি আমরা নিম্নোক্ত শিরোনামসমূহে ইঙ্গিত করব :

১ম শিরোনাম : মানব প্রকৃতি ও স্বভাবগত ঐক্য : এটি হচ্ছে ঐ পর্যায় যেখানে সকল সামাজিক সম্পর্ক (মানব) স্বভাব-প্রকৃতি এবং মহান আল্লাহ প্রদত্ত সহজাত অনুরাগ,আকর্ষণ ও আত্মিক মনোযোগসমূহের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আর এ ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা ছিল এ সব মানবীয় অনুরাগ,প্রবণতা ও আকর্ষণ বোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং সেগুলোকে সঠিক পথে ও খাতে পরিচালনা করা।

২য় শিরোনাম : মানব সমাজের বিবর্তন ও পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন কারণ থেকে উদ্ভূত আদি (প্রাথমিক) মতপার্থক্য ও বিরোধ। এ সব কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিম্নরূপ : লক্ষ্য,চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষাসমূহের মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব,আত্মানুরাগ,আচার-আচরণের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন এবং র্শিক ও পৌত্তলিকতা প্রবর্তনকারী বিষয়সমূহ। আর এটি হচ্ছে এমন এক অবস্থা ও পর্যায় যার সময়কাল ও তারিখ ধরণির বুকে প্রথম মানব সমাজের আবির্ভাব ও উন্মেষের শুভক্ষণ দ্বারা নির্দিষ্ট হয়েছে।

৩য় শিরোনাম : এক-অদ্বিতীয় ইলাহে (উপাস্যে) ধর্মীয় বিশ্বাস,চারিত্রিক গুণাবলী ও মূল্যবোধসমূহ এবং শরীয়তের অনুশাসন দ্বারা মানবীয় আচার-আচরণ মার্জিত ও সুশৃঙ্খল করার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দীনী ঐক্য : আর এটি হচ্ছে এমন এক পর্যায় যার তারিখ ও সময়কাল হযরত নূহ (আ.)-এর মাধ্যমে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মহান আল্লাহ হযরত নূহ (আ.)-এর কাছ থেকে যে ঐশী ধর্ম ও রিসালতের অনুসরণ ও প্রচারের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন সে ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের বক্তব্য থেকেও বিষয়টি (ধর্মীয় ঐক্য) স্পষ্ট হয়ে যায়। এরশাদ হচ্ছে :

شرع لکم من الدّین ما وصیّ به نوحاً و الذین أوحینا إلیک و ما وصّینا به إبراهیم و موسی و عیسی أن أقیموا الدّین و لا تتفرّقوا فیه.....

“তিনি (মহান আল্লাহ) তোমাদের জন্য দীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন যার আদেশ তিনি দিয়েছিলেন নূহকে,যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ আমি দিয়েছিলাম ইবরাহীম,মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে,তোমরা দীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না...।”-সূরা শুরা : ১৩

৪র্থ শিরোনাম : পৌত্তলিকীয় অনৈক্য ও বিভেদ যা ফিরআউনীয় অবস্থা,পরিবেশ ও পরিস্থিতির মাধ্যমে ক্রমবিবর্তিত ও বিকশিত হয়েছে এবং বাস্তব রূপ লাভ করেছে। এ ক্ষেত্রে মানুষ (ফিরআউন বা এর মতো কোন তাগুত) নিজেকে মানব সমাজের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের আদর্শ ইলাহ্ (উপাস্য) হিসেবে উপস্থাপন করেছে,যে মহান আল্লাহর পরিবর্তে পূজিত হবে এবং এমন একটি আদর্শ হবে যার সীমা-পরিসীমা,মূল্যবোধ ও বিধি-বিধানের অবকাঠামোর আওতায় মানব সমাজের কাঠামো ও গঠন প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হবে।

আমরা ফিরআউনীয় সমাজে বিভেদ ও অনৈক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো জেনেছি। স্মর্তব্য যে,এই ফিরআউনীয় সমাজই দ্বিতীয় প্রকার অনৈক্য,বিভেদ ও মতপার্থক্যের পর্যায় নির্দেশক। আর সে সাথে আমরা এ-ও জেনেছি যে,এ ধরনের অনৈক্য,মতপার্থক্য ও বিভেদের সুষ্ঠু প্রতিকার ও সমাধান করার জন্যই কোন একটি ধর্মের প্রবর্তন করা হয়েছে।

৫ম শিরোনাম : ‘ধর্মীয় সামাজিক ঐক্য’ যা এক উপাস্যে বিশ্বাস এবং ঐশ্বরিক শরীয়তের ওপর প্রতিষ্ঠিত;(এ ক্ষেত্রে) প্রাগুক্ত ভিত্তিদ্বয়ের সাথে আরো দু’টি নতুন মৌলিক উপাদান যুক্ত হয়েছে। উপাদানদ্বয় : ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (المؤسسة الدینیّة) এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব (الإمامة الدینیّة)।

ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণাদি থেকে যা বের হয়ে আসে তদনুযায়ী হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর যুগে এ ঐক্যের সূত্রপাত হয়। হযরত ইবরাহীম (আ.) বিভিন্ন তাওহীদবাদী (মহান আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী) প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসমূহের গোড়া পত্তন করেছিলেন এবং মানব সমাজে এগুলোর ভিত্তিসমূহ সুদৃঢ় ও মজবুত করে স্থাপন করেছিলেন। যেমন পবিত্র কাবা শরীফ এবং আরবোপদ্বীপে স্থাপিত বিভিন্ন উপাসনালয় যেগুলোর মধ্য থেকে বর্তমানে কেবল ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ই (জেরুজালেম) টিকে আছে। তিনি মানব সমাজের নেতৃত্ব দানের জন্য ধর্মীয় নেতৃত্বের ভিত্তিসমূহও মজবুত করে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যা হযরত মূসা (আ.)-এর ক্ষেত্রে স্পষ্ট পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। আর হযরত মূসা (আ.) কর্তৃক যে সব সামাজিক বিধি-বিধান প্রবর্তিত হয়েছে সেগুলোও ছিল রাষ্ট্র,সমাজ ও উম্মাহ্ (আদর্শিক জাতি) গঠন সংক্রান্ত উদ্যোগের বাস্তব নমুনা।

৬ষ্ঠ শিরোনাম : ধর্ম এবং এর ব্যাখ্যা,অনুধাবন ও বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য ও অনৈক্য। আর এটি ছিল ইসরাইলী সমাজে একটি অত্যন্ত বাস্তব অবস্থা। বনী ইসরাইল সমাজে যে মতপার্থক্য ও বিবাদের চিত্র ফুটে উঠেছে সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআন অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বিস্তারিত আলোচনা করেছে। আর হযরত ঈসা (আ.)-এর রিসালত এবং এর পক্ষে-বিপক্ষে ও (এর) পরে যা কিছু ঘটেছে সেগুলো ছিল মানব সমাজের এ পর্যায়টিরই একটি বাস্তব চিত্র।

৭ম শিরোনাম : নবুওয়াত ও রিসালতের ধারা সমাপ্তকারী ধর্মীয় ঐক্য যা আকীদা-বিশ্বাস,ইমামত (নেতৃত্ব),রাষ্ট্র,উম্মাহ্ এবং সমাজের ঐক্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আর ঐশী নবুওয়াত ও রিসালতের ধারা সমাপ্তকারী ইসলামী রিসালতই এ ধরনের ঐক্য প্রবর্তন করেছে।

এ সাতটি পর্যায় এগুলোর কতিপয় স্থান ও কালভিত্তিক মাত্রা ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে এমনভাবে প্রবিষ্ট হয়ে আছে ও মিলেমিশে গিয়ে থাকতে পারে যে,পূর্ববর্তী পর্যায় শেষ হতে না হতেই (এ সাত পর্যায়ের মধ্য থেকে) পরবর্তী আরেকটি পর্যায় শুরু হয়ে যেতে পারে অথবা কতিপয় পরবর্তী ক্রমবিবর্তিত উন্নততর পর্যায়সমূহের অবস্থা ও পরিবেশের মধ্যে কোন একটি পূর্ববর্তী পর্যায়ের কিছু থেকে যাওয়া নিদর্শন,প্রভাব এবং অবস্থা ও পরিবেশসমূহ (প্রপঞ্চসমূহ) ঢুকে থাকতে পারে;আর এটি যেমন অনৈক্যের ক্ষেত্রে সম্ভব ঠিক তেমনি ঐক্যের ক্ষেত্রেও সম্ভব।

তবে আমরা যখন মানব সমাজ ও এর ঐতিহাসিক পরিক্রমণ ধারার ক্রমবিবর্তনের দিকে তাকাব এবং পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে এর একটি নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় নির্ধারণ করতে চাইব তখন স্পষ্টভাবে দেখতে পাব যে,মানব সমাজ সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক পথ পরিক্রমায় দু’টি মৌলিক সাম্যাবস্থা ও ভারসাম্যকরণ প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিল। উল্লেখ্য যে,এ প্রক্রিয়াদ্বয় মানব সমাজের ক্রমবিবর্তন,বিকাশ ও পূর্ণতা অর্জন অথবা অবনতি ও পতন এবং এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে উত্তরণে মানব সমাজের পরিক্রমণ ধারা যে সব অবস্থা ও ঘটনা দ্বারা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও সুনির্দিষ্ট হয়েছিল সেগুলোর ওপর নিজস্ব প্রভাব ও ভূমিকা রেখেছে। এতদুভয়ের একটি : ঐশী বাণীর মাধ্যমে মনুষ্য প্রবৃত্তি ও ঐশ্বরিক হেদায়েতের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন এবং অপরটি ঐক্য এবং সকল পর্যায় ও ধরন সমেত অনৈক্য ও বিভেদের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন। আমরা আরো প্রত্যক্ষ করি যে,এ দু’ভারসাম্যকরণ প্রক্রিয়ার প্রতিটির প্রান্তদ্বয় পরস্পর সম্পর্কিত। কারণ দ্বিতীয় ভারসাম্যকরণ প্রক্রিয়া প্রথম ভারসাম্যকরণ প্রক্রিয়ার পৃষ্ঠদেশ ও ভিত্তিস্বরূপ। আবার এ দু’টি প্রক্রিয়া এমন সব পর্যায় অতিক্রম করে এসেছে যেগুলো পরস্পর সন্নিবেশিত,কিন্তু একই সময় উভয় প্রক্রিয়াই ক্রমবিবর্তন,পূর্ণতাপ্রাপ্তি ও পারস্পরিক প্রভাব বিস্তারের গুণ ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। প্রতিটি ক্ষেত্রে কারণটা হলো যে,মহান আল্লাহ মানব জাতির পরিক্রমণ পথে পরীক্ষা ও বালা-মুসিবতে আপতিতকরণ সংক্রান্ত নিয়মকে ধ্রুব নিয়ম-কানুনসমূহ এবং মানব জাতির পূর্ণতাপ্রাপ্তির মৌল ও উপাদানসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাই এখান থেকেই প্রবৃত্তি এবং মতপার্থক্য,বিরোধ ও অনৈক্য অবশ্যই এ পরিক্রমণ ও অগ্রযাত্রাভিমুখে প্রতিষ্ঠিত ও বিদ্যমান দু’টি ধারা হতেই হবে। আর এ দু’টি যতই ক্রমবিবর্তিত ও বিকশিত হবে ঐশ্বরিক হেদায়েত এ দু’টির সুষ্ঠু প্রতিকার ও সমাধানকল্পে ততই হস্তক্ষেপ করবে যা হবে ক্রমবিবর্তন প্রক্রিয়ার পূর্ণ উপযোগী ও সংগতিশীল।

আর এ দু’টির পাশাপাশি রয়েছে ঐশ্বরিক হেদায়েত এবং মনুষ্য সমাজে ঐক্য ও এর উপাদানসমূহ যা মহান আল্লাহ স্বীয় কৃপা দ্বারা মানব জাতিকে প্রদান করার ইচ্ছা করেছেন। পবিত্র কোরআনও এ বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এরশাদ হচ্ছে :

وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ () إِلَّا مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ وَلِذَلِكَ خَلَقَهُمْ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

“আর যদি আপনার প্রভু ইচ্ছা করতেন তাহলে তিনি সমগ্র মানব জাতিকে এক অখণ্ড (অবিভক্ত) জাতিতে পরিণত করতেন। অথচ এখনও তারা দ্বিধাবিভক্ত,পরস্পর থেকে পৃথক এবং মতপার্থক্যের মধ্যে রয়েছে;তবে যাদের ওপর আপনার প্রভু দয়া করেছেন তারা ব্যতীত। আর এ জন্যই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার প্রভুর বাণীও (সিদ্ধান্ত) চূড়ান্ত হয়ে গেছে : অবশ্যই আমি জাহান্নামকে সকল জ্বিন ও মানুষ দিয়ে ভরে ফেলব।”-(সূরা হুদ : ১১৮-১১৯)

সর্বশেষ রিসালত ঐক্যের সমুদয় মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত যেগুলো মানব জাতিকে পৃথিবীর বুকে মানব অস্তিত্বের পূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্যের নিকট পৌঁছে দেয়। আর এই ঐক্যটি হচ্ছে ‘প্রকৃত সামাজিক ঐক্য’-যে ব্যাপারে মহান আল্লাহ সৎকর্মশীল মুমিনদের কাছে অঙ্গীকার করেছেন:

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

“মহান আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে,ঠিক যেমনভাবে তিনি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে (পৃথিবীতে) খলীফা নিযুক্ত ও শাসন কর্তৃত্ব দান করেছিলেন ঠিক তদ্রূপ তিনি তাদেরকে অবশ্যই (পৃথিবীর বুকে) খলীফা নিযুক্ত ও শাসন কর্তৃত্ব দান করবেন,তাদের জন্য যে দীন তিনি মনোনীত করেছেন তা তাদের জন্য শক্তিশালী ও দৃঢ় করে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার পর শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করবেন;(যার ফলে) তারা আমারই ইবাদত-বন্দেগী করবে,আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই আসলে ফাসিক (বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও পথভ্রষ্ট)।”-(সূরা নূর : ৫৫)

আর এ পর্যায়টিই হচ্ছে প্রতীক্ষিত ইমাম মাহ্দী (আ.) এবং প্রতিশ্রুত দিবসের পর্যায়। আর এ ব্যাপারে মহান নবিগণ মানব জাতিকে সুসংবাদ প্রদান করেছেন।

সর্বশেষ আসমানী রিসালতে উল্লিখিত এ রূপটি ব্যাখ্যা করতে হলে আমাদেরকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করতে হবে :

১ম বিষয় : নবুওয়াত-রিসালতের ধারা সমাপ্তকারী দীনের ঐক্যের মৌলিক উপাদানসমূহ বর্ণনা করা;

২য় বিষয় : এ ঐক্য বাস্তবায়নের জন্য পবিত্র কোরআনে যে পথ ও পদ্ধতির নির্দেশ করা হয়েছে তা বর্ণনা করা;

৩য় বিষয় : আসমানী নবুওয়াত-রিসালতের ধারা সমাপ্তকারী ধর্মের ঐক্য (তাত্ত্বিক পর্যায়) থেকে প্রকৃত বাস্তব ঐক্য যে সব বৈশিষ্ট্যের দ্বারা পৃথক ও নির্দিষ্ট হয়ে যায় সেগুলো বর্ণনা করা।

ঐশ্বরিক ঐক্যের ভিত্তিসমূহ

ফেরআউনী সমাজে বিভেদ এবং ধর্ম সংক্রান্ত মতবিরোধ ও অনৈক্যের সমুদয় বৈশিষ্ট্য জানার পর ঐ সকল প্রধান প্রধান উপাদান ও মৌল বিষয় যেগুলোর প্রতি সর্বশেষ আসমানী রিসালত (ইসলাম ধর্ম) মতবিরোধ ও অনৈক্যজনিত সমস্যা সমাধান কল্পে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং যে সব বৈশিষ্ট্যের দ্বারা এ রিসালত পূর্ববর্তী সকল ঐশ্বরিক রিসালত থেকে নির্দিষ্ট,পৃথক ও স্বতন্ত্র হয়েছে সেগুলোও আমাদের আলোচনায় উল্লেখ করা উত্তম।

সর্বশেষ ঐশ্বরিক রিসালত কতগুলো প্রধান মৌল বিষয় ও ভিত্তির ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। যাতে করে মানব সমাজ এক অবিভক্ত সমাজে পুনঃরূপান্তরিত হতে পারে সেজন্য পবিত্র ইসলাম ধর্ম এ সব মৌল বিষয় ও ভিত্তির মাধ্যমে মানব সমাজে বিদ্যমান অনৈক্য ও বিভেদের সুষ্ঠু সমাধান ও প্রতিকার বিধান করার চেষ্টা চালিয়েছে। তাই এ সব ভিত্তি ও মূলনীতিকে নিম্নোক্ত পাঁচটি উপাদান ও মৌলে বিভক্ত করা যায়। যথা :

ক. মহান আল্লাহর একত্ববাদ অর্থাৎ তাওহীদ সংক্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস;

খ. উক্ত আকীদা-বিশ্বাস এবং যে সব মূলনীতির ওপর মানব সমাজ প্রতিষ্ঠিত সেগুলো থেকে উৎসারিত তাওহীদী মূল্যবোধ ও মূলনীতিসমূহ;

গ. এক (অভিন্ন) ঐশ্বরিক শরীয়ত (জীবন বিধান);

ঘ. এক উম্মাহ্ ও জামাআত যা মানব সমাজের অন্তর্নিহিত মূল নির্যাসের নির্দেশক;

ঙ. একক নেতৃত্ব,রাষ্ট্র (প্রশাসন) এবং ব্যবস্থা যা মানব সমাজের জন্য মূল অবকাঠামো নির্মাণ করে।

প্রথম মৌল (উপাদান) : তাওহীদের আকীদা

আমরা আগেই জেনেছি যে,তাওহীদী আকীদা-বিশ্বাস বিভিন্ন যুগ ও মানবীয় পর্যায়সমূহ অতিবাহিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘মানবীয় ঐক্য’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মৌল বিষয় বা উপাদান হিসেবে অতীতেও যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ঠিক তেমনি বর্তমানেও সে একই ভূমিকা অব্যাহতভাবে রেখে যাচ্ছে। তবে সর্বশেষ রিসালত এ তাওহীদী আকীদা-বিশ্বাসের সাথে কি স্পষ্ট বোধগম্যতার ক্ষেত্রে,কি বিস্তৃত পরিসরে,কি আকৃতি-অবয়বের দিক থেকে,কি নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রে,বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড ও মানব সমাজে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ও অবদান রাখার ক্ষেত্রে অথবা এতদুভয়ের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহু নতুন মাত্রা ও দিক যোগ করেছে। আর এভাবেই ইসলাম ধর্ম এ আকীদা-বিশ্বাসকে একটি স্পষ্ট,দৃঢ় এবং মানবীয় সামাজিক জীবনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী আকীদা-বিশ্বাসে পরিণত করেছে যা মতবিরোধ-অনৈক্য ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বহু কারণ ও নিয়ামকের সুষ্ঠু প্রতিকার বিধান ও সমাধান করতে সক্ষম।

আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে এ সত্যটি প্রত্যক্ষ করতে পারি :

প্রথম বিষয় : একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থাধীনে তাওহীদী আকীদা-বিশ্বাসের ব্যাপকতা ও স্পষ্ট বোধগম্যতা। কারণ এ আকীদা-বিশ্বাস সৌন্দর্য প্রকাশক (পূর্ণতাব্যঞ্জক) গুণ এবং অপূর্ণতা প্রত্যাখ্যানকারী গুণসমূহে ভূষিত এবং উত্তম নামসমূহের অধিকারী এক উপাস্যের ধারণা সমন্বিত;ফেরেশতা ও রাসূলদের সাথে যাঁর সম্পর্ক প্রভুত্ব ও দাসত্বের মধ্যকার সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশ্য রূপ পরিগ্রহ করে। তিনিই আসমানী ওহীর মাধ্যমে নবী-রাসূলদের ওপর আসমানী গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। এ ওহীর বিভিন্ন রূপ ও অবয়ব আছে। এ উপাস্যই হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টিজগতের ওপর কর্তৃত্বশীল (বিদ্যমান) ব্যবস্থা এবং বিধি-বিধান প্রণয়নকারী ব্যবস্থার কেন্দ্র। ঠিক যেমনভাবে সকল সৃষ্টি (মানুষ ও বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব) এই উপাস্যের (মহান আল্লাহর) সাথে সংশ্লিষ্ট ও নির্ভরশীল এবং তাঁর ঐশ্বরিক ইচ্ছার বশবর্তী,তাঁর মহিমার কাছে শ্রদ্ধাবনত ও তাঁর প্রশংসাকারী ঠিক তেমনি এ দুই ব্যবস্থাও তাঁর মাধ্যমেই সার্বক্ষণিক ও বিরতিহীনভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগসূত্র রক্ষা করছে।

এ উপাস্যই মানব জাতির মাঝে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তিনি অত্যাচারীদের কাছ থেকে অত্যাচারিতদের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ করেন;আর এজন্য তিনি হিসাব ও প্রতিদান প্রদান করার দিবস এবং পারলৌকিক জগৎ নির্ধারিত করেছেন যেখানে চূড়ান্ত বিচারের মালিক এই এক অদ্বিতীয় উপাস্যই [শেষ বিচার দিবসের অধিপতি (مالک یوم الدّین)]। আর পারলৌকিক জীবনই হচ্ছে মানুষের প্রকৃত জীবন। সে জীবনেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ পূর্ণ স্থিরতা,প্রশান্তি ও ঐশ্বরিক পূর্ণতাসমূহের অধীনে বাস্তবায়িত হবে।

এ তাওহীদী আকীদা-বিশ্বাস ঐশ্বরিক শরীয়ত এবং শারয়ী বিধি-বিধান ও অনুশাসন পালন করার মাধ্যমে দৃঢ় ও পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। আর এর অন্যথা হলে তা দুর্বল ও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে,এমনকি তা শেষ পর্যন্ত র্শিক ও নিফাকে পর্যবসিত হবে।

সমুদয় বিশদ বিবরণ ও দিক সমেত ঐক্য সংক্রান্ত এই স্পষ্ট,পরিষ্কার ও স্বচ্ছ চিত্রের সাথে তুলনীয় কোন নমুনা আমরা পূর্ববর্তী ঐশ্বরিক রিসালতসমূহে খুঁজে পাই না যদিও এর মূল ও ভিত্তিসমূহ এবং এর কতিপয় নিদর্শন পূর্ব হতেই বিদ্যমান ছিল।

সুতরাং এ ভিত্তিমূল থেকেই পবিত্র কোরআন বেশ কিছু আয়াতে ধর্মের ক্ষেত্রে বিভক্তি ও অনৈক্য এবং ধর্মে বিশ্বাসী অনুসারী গোষ্ঠীসমূহের মধ্যকার মতপার্থক্যজনিত বিকৃতির সমূহ বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে (বিশ্বাসীদেরকে) সতর্ক করেছে। কেননা স্বয়ং এ বিষয়টি মানুষের মূল আকীদা-বিশ্বাসকেই নষ্ট করে দিতে পারে। পবিত্র কোরআন জোর গুরুত্ব দিয়ে বুঝিয়েছে যে,ইসলাম কর্তৃক নির্দেশিত সহজ-সরল পথ অবলম্বন ও তাকওয়া-পরহেজগারীই (মানব জাতিকে) কেবল এ ধরনের অনৈক্য,মতভেদ,বিভেদ ও বিভক্তি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।

وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

“আর এটিই হচ্ছে আমার সরল-সঠিক পথ। অতএব,তোমরা সবাই এ পথ অনুসরণ কর এবং অন্য সকল পথ ও মত অনুসরণ করো না। তাহলে এগুলো তোমাদেরকে তাঁর (মহান আল্লাহর) সরল-সঠিক পথ থেকে দ্বিধাবিভক্ত করে বিচ্যুত করে দেবে। আর মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এ পথই অবলম্বন ও অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন;আশা করা যায় যে,তোমরা ভয় করবে (মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে তাকওয়া-পরহেজগারী অবলম্বন করবে)।”-সূরা আনআম : ১৫৩

شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا

“তিনি (মহান আল্লাহ) তোমাদের জন্য দীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন যার আদেশ তিনি দিয়েছিলেন নূহকে যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ আমি দিয়েছিলাম ইবরাহীম,মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে,তোমরা দীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না...।”-সূরা শুরা : ১৩

তাই এ ভিত্তিমূল থেকেই আমরা দেখতে পাই যে,পবিত্র কোরআন মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের রূপরেখা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই আকীদাভিত্তিক ধ্যান-ধারণা ও তাৎপর্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং এ কাঠামো ও রূপরেখার মাঝেই এ ঐক্যের বাস্তব রূপটি চিত্রিত করেছে। কারণ এটিই হচ্ছে প্রকৃত ঐক্য। মানব জাতির অগ্রযাত্রা ও প্রগতি এবং সকল ক্ষেত্র ও পর্যায়ে মানব জাতির পূর্ণতাপ্রাপ্তির জন্য এ ঐক্যের যাবতীয় শক্তি ও ক্ষমতা সংরক্ষণ করা সম্ভব। আর এই সুমহান প্রকৃত (বাস্তব) ঐক্য কেবল মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে,মহান আল্লাহরই জন্য এবং মহান আল্লাহর পথেই সম্ভব (অন্য কোন ক্ষেত্রে,অন্য কিছুর জন্য বা অন্য কোন পথে তা সম্ভব নয়।)

দ্বিতীয় বিষয় : পবিত্র কোরআন আপামর জনগণের মাঝে প্রতিষ্ঠিত সর্বজনীন সাংস্কৃতিক ধারার মূল ভিত্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য ঠিক যেমনভাবে আপামর জনতার কাছে (এ গ্রন্থটি) সহজলভ্য হওয়ার সব ধরনের পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে ঠিক তেমনি বিকৃতি (تحریف),পরিবর্তন (تغییر),সংযোজন (الزّیادة) ও বিয়োজন (نقصان) বা হ্রাস-বৃদ্ধির হাত থেকে এ গ্রন্থটি (আল কোরআন) সংরক্ষণ করার বহু নিশ্চয়তাও প্রদান করা হয়েছে। যেমন

إنّ نحن نزّلنا الذّکر و إنّا له لحافظون

“আমরাই এ যিকর (স্মরণ গ্রন্থ) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর হেফাজতকারী।”

তাই সে কারণেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ গ্রন্থটির মাধ্যমেই কেবল বিকৃতি,বিলুপ্তি ও বিস্মৃতির হাত থেকে সমুদয় বিশদ ব্যাখ্যা,তাৎপর্য এবং পর্যায় ও দিকসমেত মানব জাতির বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব (অন্য কোন উপায়ে এগুলো সংরক্ষণ করা মোটেও সম্ভব নয়।)

পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থগুলোর বিলুপ্ত ও বিকৃত হওয়ার কারণে আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সকল ঐশ্বরিক রিসালত ও ধর্ম যে অত্যন্ত ভয়াবহভাবে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল-এ বিষয়টি যখন আমরা বিবেচনা করব ঠিক তখনই আমরা মতবিরোধ ও বিভক্তির অবসান ঘটিয়ে ঐক্য স্থাপন করার ক্ষেত্রে এর (কোরআন) গুরুত্ব যথাযথ উপলব্ধি করতে পারব।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,পূর্ববর্তী রিসালতসমূহ সংক্রান্ত জ্ঞান ও তথ্যাবলী জনগণের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং কেবল একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর এ সম্প্রদায়টি ছিল যাজক,পুরোহিত ও সন্ন্যাসীদের সম্প্রদায়। এরা সামান্য মূল্যের বিনিময়ে মহান আল্লাহর আয়াতসমূহ বিক্রি করে দিত। আর এ বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে পূর্ববর্তী পর্যায় অর্থাৎ ধর্মে মতবিরোধ ও বিভেদের পর্যায় থেকে জেনেছি।

তৃতীয় বিষয় : পবিত্র কোরআন ও সুন্নায় বিধৃত ও বর্ণিত ইসলাম ধর্ম বোঝা,অনুধাবন,উপস্থাপন এবং একইভাবে এ ধর্মের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের বৈধ ধর্মীয় ও আদর্শিক প্রামাণিক কর্তৃপক্ষকে চিহ্নিত ও শনাক্তকরণ;এ প্রামাণিক ধর্মীয় ও আদর্শিক কর্তৃপক্ষই মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত যাদের থেকে মহান আল্লাহ সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা দূর করেছেন এবং যাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ চান হে আহলে বাইত! তোমাদের থেকে সকল পাপ-পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”

মহানবী (সা.) অগণিত হাদীসে ধর্মের এ বৈধ প্রামাণিক আদর্শিক কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ সব রেওয়ায়েত ও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত মুতাওয়াতির হাদীসে সাকালাইন। এ হাদীসটির মূল ভাষ্য নিম্নরূপ :

إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمُ الثَّقَلَيْنِ، أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الْآخَرِ: كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ، وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي، وَإِنَّهُمَا لَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে যা রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো,তাহলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না;এতদুভয়ের একটি অন্যটির চেয়ে বড়। এ দু’য়ের একটি মহান আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কোরআন) যা আকাশ থেকে ভূ-পৃষ্ঠ পর্যন্ত প্রলম্বিত রজ্জু এবং অন্যটি আমার বংশধর আমার আহলে বাইত;আর এ দু’টি আমার কাছে হাউযে কাওসারে পৌঁছা পর্যন্ত কখনও একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। অতএব,সাবধান থেকো (আচরণ করার ক্ষেত্রে) এতদুভয়ের সাথে,তোমরা আমার কেমন স্থলাভিষিক্ত হও।”

ঠিক এমনি অগণিত ধর্মীয় সমস্যা ও বিষয়াদির ক্ষেত্রে খলীফা ও মুসলমানগণ আহলে বাইতের শরণাপন্ন হতেন।

চতুর্থ বিষয় : ইসলাম ধর্মে ইবাদতের নিদর্শনাদি সংক্রান্ত বিধি-বিধান খুব স্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে প্রণয়ন (করা) হয়েছে। প্রাত্যহিক নামায,রমযান মাসের রোযা,ইবরাহীমী হজ্বের পুনরুজ্জীবন,তাওহীদের সার্বিক স্বরূপের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ,মহান আল্লাহর পথে ব্যয় (যাকাত ও খুম্স্) ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ঐশী বিধি-বিধান ও দায়িত্ব-কর্তব্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে পবিত্র ইসলাম ধর্ম অন্য সকল ঐশ্বরিক ও আসমানী ধর্ম থেকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে,পূর্ববর্তী ঐশ্বরিক রিসালাতসমূহে এ সব ইবাদত-বন্দেগীর শিকড় বা মূল প্রোথিত থাকা সত্ত্বেও এগুলো অত্যন্ত নিখুঁত,নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমাসমেত ইসলাম ধর্মের স্তম্ভসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হয়েছে। আর এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক,আধ্যাত্মিক ও তাওহীদী ভূমিকাও রয়েছে।

পঞ্চম বিষয় : মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মে ঈমান ও আকীদা কর্তৃক একটি ব্যবহারিক সামাজিক মাত্রা যোগ হয়েছে। যার ফলে মানুষ আচার-আচরণগত দিক থেকে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে এবং তার সার্বিক আচার-আচরণ ও কর্মতৎপরতার ক্ষেত্রে তার ঈমান প্রতিফলিত হবে।

ইসলামী রিসালতে এই ‘বিশ্বাসভিত্তিক বিবর্তন’ স্বচ্ছ ও বিস্তারিত পরিসর পর্যন্ত পরিব্যপ্ত। আমরা তাওহীদী আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এ বিবর্তনের কতিপয় নিদর্শন যেমন প্রত্যক্ষ করেছি ঠিক তদ্রূপ এ রিসালতের অবশিষ্ট ঐশী আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও আমরা একই বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি। আর এগুলোর অন্তর্ভুক্ত মহানবী (সা.)-এর রিসালত;আমরা মহানবীর ব্যক্তিত্ব,মহান আল্লাহর সাথে তাঁর সম্পর্কের প্রকৃতি,যে রিসালত তিনি বহন করে নিয়ে এসেছেন তা এবং যাদেরকে তিনি এ রিসালতের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সাথে তাঁর সম্পর্কের ধরন,এ রিসালতের প্রতি তাঁর দায়িত্ব-কর্তব্যসমূহ,তাঁর গুণাবলী এবং অন্যান্য বিষয়াদির ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি ও বিস্তারিত বিবরণ পেয়ে থাকি। এখানে উল্লেখ্য যে,এ সব লক্ষণীয় উপাদান ও বৈশিষ্ট্য আমরা পূর্ববর্তী ঐশ্বরিক ধর্ম ও রিসালতসমূহে পাই না।

তদ্রূপ এ রিসালতে ‘ইমামত’ এবং এতদসংশ্লিষ্ট ‘দায়িত্ব’সমূহ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বিধৃত এবং ব্যবহারিক প্রয়োগসিদ্ধতা লাভ করেছে। মহানবী (সা.) রিসালত (ঐশ্বরিক বাণী) প্রচার করার পাশাপাশি অপর একটি দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতেন। আর সেটি ছিল সমাজের আমূল সংস্কার কার্যক্রমের নেতৃত্বের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে তিনি সকল ধরনের মূর্তি ও তাগুত (যা কিছু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অন্তরায়) অভিন্নভাবে অর্থাৎ কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই ধ্বংস করেছেন। পৌত্তলিকতা,খোদাদ্রোহিতা ও সীমালঙ্ঘনের বিশ্বাসগত দিক ছাড়াও এমন সব উপমা ও পরিভাষা উপস্থাপিত হয়েছে যেগুলো সামাজিক দিক থেকে সমন্বিত।

সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানব সমাজে তা প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিও ইসলামী রিসালতে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে। আর এভাবে এ সব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের স্থায়িত্বের জন্য ইসলামী রিসালতের সাথে ওহীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং তা (রিসালত) পূর্ণ ও পরিসমাপ্ত হওয়ার পর ইমামত (নেতৃত্ব) একটি স্থায়ী সার্বক্ষণিক ও বাস্তব প্রয়োজনীয়তায় পর্যবসিত হয়েছে।

আর এতদ্বারাও অন্য আরেকটি প্রেক্ষাপট থেকে পারলৌকিক জীবন সংক্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস এবং সৎ মানব সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষের ওপর এর কার্যকরী প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে,পূর্ববর্তী রিসালতসমূহে ‘সর্বশেষ দিবস’-এর বিষয়টি সমুদয় ফলাফল ও প্রভাবসহ এত বিস্তৃত পরিসরে আলোচিত হয়নি।

(চলবে………)

তথ্যসূত্র:

১. সহীহ্ আত তিরমিযী,৫ম খণ্ড,হাদীস নং ৩৭৮৮,পৃ. ৬২৩। এ হাদীসটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক ও দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এ হাদীসে সাকালাইন-ই দালালত (নির্দেশিকতা),সনদ ও রাবীদের বিশ্বস্ততার দিক থেকে সর্বোত্তম,এমনকি এ হাদীসটি মুতাওয়াতির।

২. ধর্মের এ আদর্শগত প্রামাণিক কর্তৃপক্ষ সংক্রান্ত যে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তা জানার জন্য আমাদের গ্রন্থ উলূমুল কোরআন অধ্যয়ন করুন।

(জ্যোতি বর্ষ ২ সংখ্যা ২)

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)