শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস (পর্ব-৩):নবুওয়াত
- প্রকাশিত হয়েছে
-
- লেখক:
- মূল :আল্লামা মুহাম্মাদ রেজা আল-মুজাফফর ভাষান্তরে : মোঃ মাঈন উদ্দিন তালুকদার
নবুওয়াত সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,নবুওয়াত হলো একটি ঐশী দায়িত্ব এবং আল্লাহর মিশন। তিনি একাজে তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন যাঁদেরকে তিনি তার যোগ্য ও পরিপূর্ণ মানবতার মধ্য থেকে নির্বাচন করেছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে অন্যান্য মানুষের নিকট প্রেরণ করেছেন যাতে মানুষের ইহ ও পরকালীন লাভ ও কল্যাণ সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারেন,যাতে চারিত্রিক কলুষতা,শয়তানী কর্মকাণ্ড ও ক্ষতিকর আচরণ থেকে মানুষকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন। মহান আল্লাহ তার নির্বাচিত বান্দাদেরকে প্রেরণ করেছেন যাতে তারা মানুষকে জ্ঞান দিতে পারেন এবং কল্যাণ ও সফলতার পথ দেখাতে পারে,মানুষকে সে স্থানে পৌছে দিতে পারেন যার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এভাবে দুনিয়া এবং আখেরাতের সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ স্থানে তাদেরকে অধিষ্ঠিত করাতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি যে,দয়া-নীতির (কায়েদাতুললুতফ যার অর্থ পরে বর্ণনা করা হবে) দাবী হলো যে,দয়াময় সৃষ্টিকর্তা তার বান্দাদের হেদায়াতের জন্য,পূর্ণগঠনের জন্য এবং তার ও তার সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য রাসুল প্রেরণ করবেন।
অনুরূপ আমরা বিশ্বাস করি যে,মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে নবীর মনোনয়ন,নির্ধারণ ও নির্বাচনের অধিকার দেননি। কেবলমাত্র মহান আল্লাহই নবী হিসেবে কাউকে মনোনয়ন ও নির্বাচন করতে পারেন। কারণ-আল্লাহই ভাল জানেন যে কোথায় তার বাণী রাখবেন। সুতরাং পথ প্রদর্শক,সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে মহান আল্লাহ যাঁদেরকে পাঠিয়েছেন তাদের সাথে বিতর্ক করার অধিকার কারো নাই। সেরূপ কারো অধিকার নেই যে বিধান,সুন্নত ও শরীয়ত হিসেবে তারা যা এনেছেন ঐ ব্যাপারে সে সন্দেহ করবে।
নবুওয়াত হলো মহান আল্লাহর ঐশ্বরিক দান (লুত্ফ্) :
মানুষ হলো এক অপূর্ব সৃষ্টি। তার অস্তিত্ব,প্রকৃতি,আত্মা ও বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে রয়েছে এক জটিল সমন্বয়। এমনকি মানব জাতির প্রত্যেক সদস্যের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই বিদ্যমান জটিল প্রকৃতির সমন্বয়। একদিকে রয়েছে অনাচারের প্রবণতা আর অপরদিকে রয়েছে কল্যাণ ও উত্তমের কারণসমূহ। একদিকে আত্মপ্রীতি,কামনা-বাসনার মত আবেগ ও প্রবণতা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে সে তার কামনার বশবর্তী হয়ে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়। সম্পদ সংগ্রহ করতে চায় এবং অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করতে চায় এবং অপরিনামদর্শী হয়ে পার্থিব রূপ জৌলুসের দিকে ধাবিত হতে চায়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন -
“নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছ্”। (সুরা আসর -২)
“নিশ্চয়ই মানুষ ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করছে,কারণ সে নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করছে।’’ (সুরা আলাক -৬-৭)
তিনি আরও বলেন-
“নিশ্চয়ই নফসে আম্মারা (লোভাতুর মন) মানুষকে অসৎ কাজের দিকে পরিচালিত করে।” (সুরা ইউসুফ - ৫৪)
এছাড়া এমন আরো অনেক আয়াত আছে যাতে দেখা যায় যে,মানুষের আত্মা হলো কামনা বাসনা ও আবেগ অনুভূতিতে পূর্ণ।
অপরদিকে মহান আল্লাহ মানুষকে বুদ্ধিবৃত্তি (আকল) দিয়েছেন যাতে সে স্বীয় কল্যাণ ও উন্নতির পথকে সনাক্ত করতে পারে। তিনি তাকে বিবেকও দিয়েছেন যা তাকে অন্যায় ও অপছন্দনীয় পথে যেতে বাধা প্রদান করে।
মানুষের অভ্যন্তরে তার কামনা ও বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে বিরাজমান রয়েছে অবিরত সংঘর্ষ। যখন তার বুদ্ধিবৃত্তি তার কামনার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন সে সুউচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয় এবং মানবতার সমুন্নত উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণতা লাভ করে। কিন্তু যখন তার কামনা তার বুদ্ধিবৃত্তিকে পরাস্ত করে তখন সে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নিকৃষ্ঠতম মানবে পরিণত হয় সে যাকে পশুর সাথে তুলনা করা যায়।
বিবাদরত (আকল এবং কামনা) এ দুয়ের মধ্যে কামনা ও তার সৈন্যরা অপেক্ষাকৃত বেশী শক্তিশালী। আর এ কারণেই অধিকাংশ মানুষ ধ্বংসের পথে পতিত হয় এবং মুক্তির পথ থেকে দূরে সরে যায়,তাদের কামনাকে অনুসরণ করে ও বাসনার ডাকে সাড়া দেয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“হে নবী ! তুমি যতই চেষ্টা কর না কেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই ঈমান আনবে না।” (সুরা ইউসুফ- ১০৩)
তাছাড়া সে পৃথিবীর সকল সত্য সম্পর্কে এবং তার নিজের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে উদাসীন ও অজ্ঞ। এমনকি সে নিজের সম্পর্কেও অজ্ঞ। কিসে তার লাভ,কিসে তার ক্ষতি,কিসে তার কল্যাণ,কিসে অকল্যাণ কেমন করে সে তা জানবে? আর নিজের কল্যাণের বা সামগ্রিকভাবে মানবতার কল্যাণের যাবতীয় বিষয় কিভাবে সে জানতে পারবে? যখনই সে নতুন কোন আবিস্কার নিয়ে অগ্রসর হয় তখনই সে অজ্ঞতাকে দেখতে পায় আর উপলব্ধি করে যে সে আসলে কিছুই জানেনা। আর এ কারণে একান্তভাবেই মানুষের জন্য এমন কারো প্রয়োজন যে তাকে কল্যাণ ও সুখের পথ দেখাবে তখন যখন তার কামনা তাকে প্রতারিত করে,সুকর্মকে কুকর্মের দ্বারা আচ্ছাদিত করে কিংবা কু-কর্মকে সুকর্ম হিসেবে উপস্থাপন করে যার ফলে তার বুদ্ধিবৃত্তি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পতিত হয় ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সঠিক পথ খুঁজে নিতে পারে না কিংবা প্রকৃত ভাল ও মন্দের পার্থক্য করতে পারে না। বুদ্ধিবৃত্তি ও কামনার এ যুদ্ধে সচেতনভাবে হোক বা অবচেতনভাবে হোক আমরা সকলেই বশীভূত কেবলমাত্র তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ রক্ষা করেন। একজন সুশিক্ষিত ও সভ্য ব্যক্তির পক্ষেও যেখানে ভাল মন্দের পার্থক্য করা কঠিন সেখানে কি করে তা একজন অজ্ঞ ও অশিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হবে?
সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ভাল-মন্দ সম্পর্কে আলোচনা করলেও কিসে তাদের কল্যাণ বা অকল্যাণ তা তারা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। তাই মহান আল্লাহ মানুষের উপর করুণা প্রদর্শন করে নবী প্রেরণ করেন। যেমন- পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে যিনি তাদের জন্য আয়াত বর্ণনা করবেন,তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দিবেন।” (সুরা জুমআহ-২)
আর তিনি (নবী) তাদেরকে ভাল ও মন্দ সম্পর্কে সতর্ক করবেন এবং কল্যাণ ও সুখের সুসংবাদ দিবেন।
এধরনের দয়া করা মহান আল্লাহর কর্তব্য। কারণ তার বান্দাদের উপর এ দয়া করা তার নিরঙ্কুশ পূর্ণতারই বহিঃপ্রকাশ। আর তিনি তার বান্দাদের প্রতি দয়ালু ও উদার হস্ত। যখন কেউ তার দয়া ও উদারতা লাভের যোগ্য হয় তখন তিনি অবশ্যই সেখানে তা দান করেন। কারণ,রহমতের ব্যাপারে আল্লাহর কোন কৃপণতা নেই। আর এখানে কর্তব্য অর্থ এ নয় যে,কেউ তাকে হুকুম করেন বা বাধ্য করেন যার ফলে তিনি তা তামিল করেন। বরং এখানে আবশ্যকতা বা কর্তব্যের অর্থ হলো,আমাদের কথায় আমরা যাকে বলি আবশ্যকীয় অস্তিত্ব (বা ওয়াজীবুল ওজুদ)। অর্থাৎ তিনি আবশ্যকীয়রূপে বিদ্যমান। তার অস্তিত্ব তিনিই এবং তার অস্তিত্ব থেকে তাকে পৃথক করা যায় না।
নবীগণের মোজেযা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,মহান আল্লাহ যখন কাউকে তার সৃষ্টির জন্য পথ প্রদর্শক ও সংবাদ বাহক রূপে প্রেরণ করেন তখন তিনি তাকে সুষ্পষ্ঠরূপে মানুষের নিকট পরিচয় করিয়ে দেন। আর এর একমাত্র উপায় হলো তার রেসালাতের স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা যাতে করে মহান আল্লাহর দয়া ও করুণা মানুষের জন্য পরিপূর্ণরূপে সম্পাদিত হয়। আর সে দলিল এমন হতে হবে যে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কারো পক্ষে তা সম্ভব নয় এবং তা বাস্তবায়িত হবে হেদায়াতকারী রাসূলের হাতে যা হবে তার পরিচায়ক ও তার স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। আর এ দলিল বা প্রমাণ হলো তা-ই যাকে আমরা মোজেযা (অপরকে অপারগ করা) বা মোজেযা নামকরণ করে থাকি। কারণ তা আনয়ন করতে মানুষ অক্ষম ও অপারগ।
একজন নবীও যখন নিজেকে নবী হিসেবে পরিচয় দেন তখন তার দলিল রূপে মোজেযার পন্থা অবলম্বন করা ব্যতীত কোন উপায় থাকে না। আর এ মোজেযা এমন হয় যে সমসাময়িককালের জ্ঞানী ও গুণীরাও যেখানে তা প্রদর্শন করতে অক্ষম সেখানে অন্যান্য সাধারণ মানুষের কথাতো বলাই বাহুল্য। তাছাড়া এ মোজেযা নবুওয়াতের দাবীর সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে যা তার দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ উপস্থাপিত হবে। যখন তা আনয়ন করতে নবী ব্যতীত অন্য কেউ অপারগ হবে তখন সে জানতে পারবে যে,এটি মানুষের ক্ষমতার উর্ধে এবং অলৌকিক বিষয়। আর এভাবে তারা জানতে পারে যে,এ মোজেযা আনয়নকারী হলেন একজন অতিমানব যার সাথে সমগ্র জগতের পরিচালকের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। অনুরূপভাবে যখন এমন কোন নবী যিনি মোজেযা প্রদর্শন করেছেন এবং মানুষকে তার নবুওয়াত ও রেসালাতের প্রতি আহবান জানান,তখন সহজেই মানুষের নিকট তার কথার সত্যতা গ্রহণযোগ্য হয় এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তার আদেশ পালন করা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। আরও আবশ্যক তিনি যাতে বিশ্বাস করেন তাতে বিশ্বাস করা এবং তিনি যাতে অবিশ্বাস করেন তাতে অবিশ্বাস করা।
অতএব আমরা দেখতে পাই যে,প্রত্যেক নবীর মোজেযা তার সমসাময়িককালের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক,কলা ও প্রযুক্তিগত বিষয়ের উপর প্রদর্শিত হয়ে থাকে। আর এজন্য আমরা দেখতে পাই যে,হযরত মুসার (আ.) মোজেযা হলো লাঠি যা যাদুকরদের সমস্ত মিথ্যাচারকে বিনাশ করেছিল। কারণ হযরত মুসার (আ.) সমসাময়িককালে যাদুবিদ্যা ছিল জনপ্রিয় কলা। তার এ লাঠি সমস্ত মিথ্যাকে অসার করে দিলে সকলের জানা হয়ে গেল যে এটি তাদের ক্ষমতা বর্হিভূত এবং তাদের কলা-কৌশলের উর্ধে। আর কোন মানুষের পক্ষে এমনটি প্রদর্শন করা অসম্ভব। সুতরাং তাদের সকল বিজ্ঞান ও কলা এর সম্মুখে মূল্যহীন ও অকার্যকর।
অনুরূপ হযরত ঈসার (আ.) মোজেযা ছিল জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য প্রদান করা আর মৃতকে জীবিত করা। কারণ তিনি এমন এক সময় এসেছিলেন যখন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা সমাজে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগনিত হত। কিন্তু তাদের কোন জ্ঞানই ঈসার (আ.) প্রদর্শিত বিষয়ের মত নয়।
আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর রয়েছে চিরন্তন মোজেযা। আর তা হলো অভূতপূর্ব সাহিত্যমান সম্পন্ন ও চূড়ান্ত বাগ্মীতা সম্বলিত পবিত্র কোরআন (যাকে আরবী পরিভাষায় বলে ফাসাহাত ও বালাগাত)। কারণ তদানীন্তনকালে সাহিত্য ও বাগ্মীতা এর চূড়ান্ত শীর্ষে আরোহণ করেছিল। তখন সাহিত্যিকরা ছিল সমাজের অগ্রগণ্য ব্যক্তি,তাদের সুন্দর বাচনভঙ্গি ও শ্রুতিমধুরতার কারণে। সুতরাং কোরআন বজ্রপাতের মত এসে তাদেরকে তুচ্ছ জ্ঞাপন করল ও বিস্মিত করল এবং বুঝিয়ে দিল যে,তারা এমন কিছু করতে অক্ষম। তারা এর সম্মুখে পরাস্ত ও অবনত হলো। আর তাদের অপরাগতার প্রমাণ মেলে তখনই যখন পবিত্র কোরআন তাদেরকে এর দশটি সুরার মত সূরা আনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আহবান করল এবং তারা অক্ষমতা প্রকাশ করল। অতঃপর বলা হলো মাত্র একটি সূরা আনতে। তাতেও তারা অপারগ হলো। আমরা জানি যে,তারা একটি সূরা আনয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে তারা বাকযুদ্ধের পরিবর্তে তরবারির যুদ্ধের আশ্রয় নিয়েছিল।
অতএব আমরা দেখতে পাই যে,কোরআন হলো একটি মোজেযা যা হযরত মোহাম্মদ (সা.) তার নবুওয়াতের দাবীর সপক্ষে আনয়ন করেছেন। সুতরাং আমরা জানি যে,তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল(সা.),আর এ সত্য (পবিত্র কোরআন) তিনি নিয়ে এসেছেন।
নবীগণের পবিত্রতা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,নবীগণ হলেন সব দিক থেকে পবিত্র। তাদের মত ইমামগণও (আ.) পবিত্র। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ নবীগণের (আ.) পবিত্রতায় বিশ্বাস করে না,ইমামগণের (আ.) পবিত্রতা তো দূরের কথা।
এসমাত বা পবিত্রতা হলো যে কোন প্রকার গুনাহ (হোক সে ছোট বা বড়) বা ভুল ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা যদিও তাদের দ্বারা এগুলো সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয় না। কিন্তু তাদের এগুলো থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক। এমনকি শিষ্টাচারগতভাবে যেগুলো দৃষ্টিকটু ও অপছন্দনীয় তা থেকেও মুক্ত থাকা আবশ্যক। যেমন- মানুষের সাথে অশিষ্ট আচরণ,রাস্তায় দাড়িয়ে খাওয়া,উচ্চস্বরে হাসা,কিংবা এমন কিছু করা যা মানুষের নিকট অসুন্দর ও অপছন্দনীয়।
নবীগণের পবিত্র হওয়ার আবশ্যকীয়তার দলিল : যদি নবী কর্তৃক পাপ ও ভুল-ত্রুটি ইত্যাদি এ জাতীয় কাজগুলো সংগঠিত হয়,তাহলে তা পালন করা (পাপ হোক বা ভুল-ত্রুটি) হয় আমাদের জন্য আবশ্যক হবে,না হয় আবশ্যক হবে না। যদি তাদেরকে অনুসরণ করা আবশ্যক হয়,তবে পাপ কাজ করা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বৈধ হবে,এমনকি তা করা আমাদের জন্য ওয়াজীব হবে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ও দ্বীনের সুষ্পষ্ট দলিলের উপস্থিতিতে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আবার যদি তাদের অনুসরণ করা আমাদের জন্য আবশ্যক না হয় তবে নবুওয়াতই অস্বীকৃত হয়। কারণ একান্ত বাধ্যগতভাবেই নবীকে অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং কথায় ও কাজে তিনি যা করবেন তাতে যদি পাপ ও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাকে অনুসরণ করা আমাদের জন্য অসম্ভব। ফলে তার নবুওয়াতের উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে। এমনকি অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই হয়ে যাবেন নবী যার কথা বা কাজের সে সমুন্নত মূল্য থাকবে না যা আমরা সর্বদা আশাকরি। ফলে তার কোন কথা ও কাজ এবং আদেশই অনুসরণীয় হবে না এবং বিশ্বাসযোগ্য থাকবে না।
আর এ দলিল ইমামগণের পবিত্রতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ আমরা মনে করি যে,ইমামগণও (আ.) মহান আল্লাহ কর্তৃক মানুষের হেদায়াতের জন্য নবী (সা.) এর প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী হিসেবে নিয়োগকৃত হবেন। (ইমামত অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে)
নবীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,যেমনি করে তার পবিত্র হওয়া আবশ্যক তেমনি আবশ্যক সকল মানবীয় বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ থাকা। যেমন- বীরত্ব,রাজনীতি,প্রশাসন,ধৈর্য,বুদ্ধিবৃত্তি,প্রত্যুৎপন্নমতিতা ইত্যাদি। অর্থাৎ কেউই এ সকল বৈশিষ্ট্যে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। কারণ যদি তা না হয় তবে সকল সৃষ্টির উপর তার সার্বজনীন প্রাধান্য থাকতে পারে না এবং সামগ্রিকভাবে জগতকে পরিচালনা করার মত সামর্থ্য তার থাকবে না।
অনুরূপ তাকে হতে হবে জন্মগতভাবে পবিত্র বংশদ্ভূত,সৎ,সত্যবাদী। এমনকি নবুওয়াতের ঘোষণার পূর্বেও তাকে সমস্ত প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকতে হবে যাতে মানুষ তাকে চূড়ান্তভাবে বিশ্বাস করতে পারে,তার নিকট আশ্রয় পেতে পারে এবং সংগত কারণেই তিনি এ মহান ঐশী মর্যাদার (পবিত্রতা) উপযুক্ত।
পূর্ববর্তী নবীগণ ও তাদের ঐশী গ্রন্থ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
সামগ্রিকভাবে আমরা বিশ্বাস করি যে,সমস্ত নবী ও রাসুল হলেন সত্য। তেমনি তাদের এসমাত বা পবিত্রতায়ও আমরা বিশ্বাস করি। আর তাদের নবুওয়াতকে অস্বীকার করা,তাদের কুৎসা করা,বিদ্রূপ করা হলো কুফরি ও নাস্তিকতা। আর এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদকেই (সা.) অস্বীকার করা হয়। কারণ তিনিই তার পূর্ববর্তী নবীদের ব্যাপারে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন এবং সত্যায়িত করেছিলেন।
হযরত আদম (আ.),নূহ (আ.),ইব্রাহিম (আ.),দাউদ (আ.),সোলায়মান (আ.) এবং অন্যান্য যাঁদের নাম পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ যাঁদের নাম এবং শরীয়ত প্রসিদ্ধ,বিশেষকরে তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। আর যদি কেউ তাদের একজনকে অস্বীকার করে তবে সে যেন সকলকে অস্বীকার করল। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় নবীর (সা.) নবুওয়াতকে অস্বীকার করল।
অনুরূপভাবে তাদের গ্রন্থসমূহ এবং তাদের উপর যা নাযিল হয়েছে তার উপর ঈমান আনাও আবশ্যক। কিন্তু বর্তমানে যে ইঞ্জিল ও তৌরাত মানুষের নিকট আছে তা যেরূপ নাযিল হয়েছিল সেরূপ আর নেই। বর্তমানে এতদ্ভয়ের মধ্যে বিকৃতি ও পরিবর্তন,সংযোজন ও বিয়োজনের প্রমাণ মিলে যা হযরত মুসা (আ.) ও ঈসার (আ.) পর সংগঠিত হয়েছে। এক ধরনের লোভী ও স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিদের দ্বারা এ বিকৃতি সাধিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যা আছে তার অধিকাংশই হযরত মূসা (আ.) ও ঈসার (আ.) পর তাদের অনুসারীদের দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,ইসলামই হলো মহান আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম। এটি সত্য ঐশী বিধান,সর্বশেষ শরীয়ত,পূর্ববর্তী সকল শরীয়তের রহিতকারী শরীয়ত,পরিপূর্ণ ও বিস্তৃত বিধান যাতে সন্নিবেশিত আছে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সমস্ত কল্যাণ ও সফলতার উপায়। এ বিধান সমস্ত সময় ও কালের জন্য অবশিষ্ট থাকার উপযুক্ত এবং কখনো পরিবর্তন হবে না। মানুষের ব্যক্তিগত,সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল চাহিদার জবাবের সমাহার ঘটেছে এ বিধানে। এটি হলো সর্বশেষ শরীয়ত,এরপর আর কোন শরীয়ত আসবে না। জুলুম ও ফেসাদে মুহ্যমান মানবতাকে এ শরীয়ত পরিশুদ্ধ করে। আর তাই এমন একদিন অবশ্যই আসবে যেদিন ইসলাম ধর্ম আরো শক্তিশালী হবে এবং এর ন্যায়-নীতি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
যখন এ বিশ্বে সমগ্র মানুষ পরিপূর্ণরূপে ইসলামের বিধান মেনে চলবে,তখন মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। জন কল্যাণ,মান-সম্মান,ঐশ্বর্য,মানবীয় মূল্যবোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানুষ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যের শীর্ষে আরোহন করবে। অপরদিকে জুলুম-অত্যাচার,দারিদ্র ইত্যাদি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ দ্বারা পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় গ্রহণ করবে। বর্তমানে আমরা কিছু মুসলমান নামধারী মানুষের মাঝে যে লজ্জাকর পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি তার কারণ হলো,প্রথম থেকেই তাদের আচার ব্যবহার প্রকৃতার্থে ইসলামী বিধান মোতাবেক ছিল না। আর এ অবস্থা চলতে চলতে পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়ে আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মুসলমানদের লজ্জাকর পশ্চাৎপদতার কারণ ইসলামকে গ্রহণ করা নয়। বরং এর কারণ হলো ইসলামের শিক্ষাকে অমান্য করা,ইসলামী নিয়ম-নীতিকে অগ্রাহ্য করা,তাদের শাসকবর্গ কর্তৃক অন্যায় এবং শত্রুতাকে দরিদ্র ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। আর এগুলোর কারণে তাদের উন্নতি ও অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তাদেরকে করেছে দুর্বল,তাদের মনুষ্যত্বকে করেছে ধ্বংস। পরিশেষে তারা পতিত হয়েছে দুঃখ দূর্দশায়। আল্লাহ তাদেরকে তাদের পাপ দ্বারা ধ্বংস করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“এটা এ কারণে যে,আল্লাহ কোন জাতির উপর তার কর্তৃক বর্ষিত নেয়ামত পরিবর্তন করেন না,যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের মধ্যে যা কিছু আছে তার পরিবর্তন করে।” (সুরা আনফাল -৫৩)
আর আল্লাহর সৃষ্টির জন্য এটাই তার বিধান। কোরআন আরও বলে-
“অন্যায়কারীরা কখনোই সফল হবে না।” (সুরা ইউনুস -১৭)
অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে-
“নিশ্চয়ই তোমার প্রভু কোন জাতিকে তাদের অন্যায়ের জন্য ধ্বংস করেন না যারা নিজেদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা করে।” (সূরা হুদ - ১১৭)
পুনরায় বর্ণিত হয়েছে-
“আর এরকমই হলো শহরের জালিম নাগরিকদের জন্য তোমার প্রভুর শাস্তি। তোমার প্রভুর শাস্তি সত্যিই কঠোর।”(সূরা হুদ - ১০২)
আমরা এমন এক দ্বীন থেকে কি করে আশা করতে পারি যে,ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাওয়া তার অনুসারীদেরকে রক্ষা করবে যেখানে এর শিক্ষা শুধুমাত্র কাগজে কলমে শোভা পাচ্ছে এবং বিন্দুমাত্র এর শিক্ষার অনুশীলন নেই?
ইসলামের ভিত্তিমূল হলো- বিশ্বাস,সততা,সত্যবাদিতা,শিষ্টতা,শালীনতা ও ত্যাগ। একজন মুসলমান তার ভাইয়ের জন্য তা-ই আশা করে যা সে নিজের জন্য করে। কিন্ত মুসলমানরা সুদীর্ঘ কাল পূর্বেই এগুলোকে পশ্চাতে ফেলে এসেছে।
সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে ততই তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন দল ও উপদলে। পার্থিব বিষয় আশয়ের জন্য করছে তারা প্রতিযোগিতা। অনর্থক কোন বিষয়বস্তুর জন্য আপন খেয়ালে পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণ করছে কিংবা কাফের বলে আখ্যায়িত করছে। তারা ভুলে যাচ্ছে ইসলামকে এবং তাদের নিজেদের ও সমাজের কল্যাণকে। যে বিষয়গুলোর উপর তারা পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় সেগুলোর উদাহরণ হলো নিম্নরূপ- কোরআন কি সৃষ্টি না সৃষ্টি নয়;বেহেশত ও দোযখ কি তৈরী করা হয়েছে না ভবিষ্যতে হবে ইত্যাদি। আর এগুলোর উপর ভিত্তি করেই তারা পরস্পরকে কাফের বলছে।
তাদের এ মতবিরোধের ধরন দেখে অনুধাবন করা যায় যে তারা প্রকৃত প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কালের প্রবাহে তাদের এ বিচ্যুতি উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অজ্ঞতা ও বিপথগামিতা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু তারা অকার্যকর তুচ্ছ কুসংস্কার ও কল্পিত বিষয়বস্তু নিয়ে বসে আছে। পারস্পরিক সংঘাত,সংঘর্ষ ও আত্মম্ভরিতা তাদেরকে দিন দিন হতাশার অতল গহীনে নিমজ্জিত করছে। অপরদিকে ইসলামের চিরশত্রু পাশ্চাত্য উত্তর উত্তর শক্তিশালী হচ্ছে এবং মুসলমানরা যখন ঘুমে,অর্ধঘুমে তখন তারা ইসলামী দেশগুলোকে নিজেদের উপনিবেশ বানিয়ে চলেছে। এ দূর্ভাগ্যের শেষ কোথায় তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন।
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ঐ শহরের অধিবাসদেরকে তাদের পাপের জন্য ধ্বংস করেন না যারা নিজেদেরকে সংশোধন করে।”(সুরা হুদ- ১১৭)
আজ অথবা কাল যেদিনই হোক না কেন সুখ সমৃদ্ধির জন্য মুসলমাদেরকে তাদের নিজেদের কর্মকান্ডের পর্যালোচনা করতেই হবে এবং তা ব্যতীত কোন গত্যন্তর নেই। তাদেরকে এবং তাদের বংশধরদেরকে সঠিক ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে ও পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং এভাবে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করতে হবে। আর এ রূপেই তারা নিজেদেরকে এ ভয়ংকর দুঃখ দুর্দশা থেকে পবিত্রাণ করাতে পারবে। আর এরকমটি করলে ন্যায়-নীতিতে বিশ্ব সেরূপ পরিপূর্ণ হতে বাধ্য যেরূপ অন্যায় ও অত্যাচারে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। মহান আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) প্রতিশ্রুতি এমনটিই। কারণ এ দ্বীনই (ইসলাম) হলো সর্বশেষ ধর্ম যার অনুসরণ ব্যতীত পৃথিবীতে কল্যাণ ও শান্তি ফিরে আসবে না। এটা সত্য যে,ইসলামকে কুসংস্কার,বিকৃতি ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করার জন্য একজন ইমামের আবশ্যকতা রয়েছে। তিনি মানবতাকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে পূর্ণ কলুষতা,অব্যাহত অন্যায় অত্যাচার যা মানুষের আত্মা ও চারিত্রিক মূল্যবোধের জন্য অনাকাঙ্ষিঅবত তা থেকে রক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ সে ইমামের আবির্ভাব ত্বরান্বিত ও সহজ করুন।
ইসলামের মহানবী (সা.) সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,ইসলামের বাণী বাহক হলেন মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সা.) যিনি সর্বশেষ নবী,প্রেরিত পুরুষদের সর্দার এবং নিঃশর্তভাবে তাদের শ্রেষ্টতম। তেমনি তিনি সকল মানুষের শীর্ষে। তার (সা.) শ্রেষ্টত্বের সাথে কাউকে তুলনা করা যায় না। বদান্যতার দিক থেকে কেউ তাকে ছুতে পারে না। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে কেউই তার নিকটবর্তী নয়। সৃষ্টিকুলে তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনিই হলেন সৃষ্টির সেরা। সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কেউই তার সমকক্ষ নয়।
পবিত্র কোরআন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,পবিত্র কোরআন হলো আল্লাহর বানী যা তিনি মহানবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) উপর নাযিল করেছেন। এতে সবকিছু বর্ণিত হয়েছে। এটি হলো একটি চিরন্তন মোজেযা। মানুষের পক্ষে এরূপ সাহিত্যমান ও বাগ্মীতাসম্পন্ন কিছু রচনা করা অসম্ভব। এতে রয়েছে উচ্চতর জ্ঞান ও সত্য। কখনোই এতে পরিবর্তন,পরিবর্ধন ও বিকৃতি সাধিত হবে না। আমরা বিশ্বাস করি যে,যে কোরআন এখন আমাদের নিকট আছে এবং যা আমরা এখন পাঠ করি তা সেই কোরআন যা মহানবীর (সা.) উপর নাযিল হয়েছিল। যদি কেউ এর ব্যতিক্রম দাবী করে তবে সে হয় দুষ্ট প্রকৃতির লোক অথবা কুচক্রী কিংবা পথভ্রষ্ট। আর এ ধরনের লোকেরা হেদায়াতপ্রাপ্ত নয়। মহান আল্লাহ বলেন-
“অগ্র ও পশ্চাৎ (কোন দিক থেকেই) মিথ্যা এতে প্রবেশ করতে পারবে না।”(সুরা হামীম সেজদাহ -৪২)
কোরআনের অলৌকিকত্বের (মোজেযা) স্বপক্ষে একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলো এই যে,সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে,বিজ্ঞান ও কলা ততই অগ্রসরমান হচ্ছে,তথাপি কোরআন সমুন্নত চিন্তা-চেতনায় চির ভাস্বর ও মধুময়। এমন কোন বৈজ্ঞানিক মতবাদ এতে নেই যা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সুনিশ্চিত দার্শনিক কোন সত্যের সাথেই কোরআন সাংঘর্ষিক নয়। অপরদিকে অনেক সনামধন্য বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক রয়েছেন যারা চিন্তা ও জ্ঞানের দিক থেকে চরম উৎকর্ষে পৌঁছেছেন অথচ তাদের গ্রন্থেও অন্ততঃপক্ষে কিঞ্চিত স্ববিরোধিতা কিংবা ন্যূনতম ভুল হলেও পাওয়া যায়। অধিকন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রগতি ও আধুনিক তথ্যের ফলে এমনকি সক্রেটিস,প্লেটো এবং এ্যারিষ্টটলের মত প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিকদের যাদেরকে পরবর্তীরা বিজ্ঞানের জনক ও শিক্ষক হিসেবে স্বীকার করেছেন তাদের গ্রন্থেও কিছু ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
আমরা আরও বিশ্বাস করি যে,কথায় ও কাজে কোরআনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। সুতরাং কোরআনের কোন শব্দকে কিংবা শব্দাংশকে (অক্ষরকে) অপবিত্র করা অবৈধ। অনুরূপ অবৈধ হলো অপবিত্র অবস্থায় এর কোন শব্দ বা অক্ষর স্পর্শ করা। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“পবিত্রতা ব্যতীত কেউই একে স্পর্শ করতে পারে না।”(সুরা ওয়াকিয়া - ৭৯)
আর এ আদেশ বড় ধরনের অপবিত্রতা যেমন- জানাবাত,হায়েজ,নেফাস ইত্যাদির ক্ষেত্রেও যেমন প্রযোজ্য তেমনি ছোট ধরনের অপবিত্রতা যেমন- ঘুম ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসবের জন্য ফিকাহ শাস্ত্রে বর্ণিত ব্যাখ্যা মোতাবেক গোসল বা অজু করলে কোরআন স্পর্শ করা বৈধ হবে।
অনুরূপভাবে কোরআনকে অগ্নিদগ্ধ করা বৈধ নয়। সেরূপ বৈধ নয় অপমান করা তা যে কোন ভাবেই হোক না কেন। অর্থাৎ সাধারনের মধ্যে যেটা অপমান বলে পরিগনিত হয় তা করা যাবে না। যেমন- নিক্ষেপ করা,অপরিস্কার করা,পা দিয়ে ঠেলে দেয়া কিংবা অসম্মান জনক জায়গায় রাখা। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে উপরোল্লিখিত যে কোন একটি কাজ অথবা এ ধরনের কোন কাজ করে তবে সে ইসলাম ও এর পবিত্রতাকে অস্বীকারকারীদের মধ্যে পরিগণিত হবে। সে দ্বীনে অবিশ্বাসী। প্রকারান্তরে সে বিশ্বাধিপতি আল্লাহকে অস্বীকার করেছে।
ইসলাম ও তৎপূর্ববর্তী ঐশী ধর্মসমূহকে প্রতিপাদন করার উপায়ঃ
যদি কেউ ইসলামের সত্যতা সম্পর্কে আমাদের নিকট প্রশ্ন তোলে তাহলে আমরা এক চিরন্তন মোজেযাকে প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা প্রতিপাদন করতে পারি। আর তা হলো পবিত্র কোরআন যার সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে তা আমাদের প্রাথমিক প্রশ্ন বা দ্বিধাকে দূরীভূত করে আমাদের অন্তরকে তুষ্ট করারও উপায়। মুক্ত চিন্তার অধিকারী কিছু মানুষ যারা তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে চায়,তাদের মনে কখনো কখনো কিছু প্রশ্নের উদয় হয়। এ পন্থা অবলম্বন করে আমরা তাদেরকেও তুষ্ট করতে পারি।
পূর্ববর্তী শরীয়তসমূহ যেমন- ইহুদী,খ্রীষ্টান,ইত্যাদিতে সন্দেহ করলে তাদের সত্যতা প্রমাণ করতে আমাদের নিজেদেরকে ও প্রশ্নকারীকে তুষ্ট করার কোন পন্থা নেই যদি না সর্বাগ্রে কোরআনের সত্যতা প্রমাণ করি ও ইসলামের প্রতি আমাদের বিশ্বাস থেকে তা নিষ্কাশন করি। কারণ কোরআনের মত এমন কোন মোজেযা ঐগুলোর জন্য আজ আর আমাদের হাতে অবশিষ্ট নেই। পূর্ববর্তী নবীগণের (আ.) মোজেযা ও অলৌকিক ঘটনা তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়। বর্ণনার ধরনে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আবার পূর্ববর্তী নবীদের গ্রন্থ বলে পরিগণিত যে সমস্ত গ্রন্থ আমাদের নিকট আছে যেমন- তৌরাত,ইঞ্জিল তা কোনভাবেই চিরন্তন মোজেযা নয়। যা দ্বারা কাঙ্ষিেরতরূপে ঐ ধর্মগুলোর সত্যতা প্রমাণের জন্য এমন কোন তুষ্টকারী দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যায় যেটি ইসলামের সত্যতাকে স্বীকার করলে করা যায়।
স্পষ্টতঃই আমাদের জন্য (যেহেতু আমরা মুসলমান) পূর্ববর্তী ধর্মের নবীদেরকে স্বীকার করা যুক্তিসঙ্গত। কারণ আমরা যখন ইসলাম ধর্মকে স্বীকার করে নিব তখন ইসলামে যা কিছু আছে কিংবা যা কিছুকে সত্যায়িত করে তার সবগুলোকে মেনে নেয়া আমাদের জন্য আবশ্যক। আর ইসলামের একটি শিক্ষা হলো পূর্ববর্তী নবীগণের নবুওয়াতকে স্বীকার করে নেয়া যা ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
অতএব,মুসলমানগণ ইসলামের শিক্ষাকে বক্ষে ধারণ করার পর ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মের ও তৎপূর্ববর্তী ধর্মগুলোর সত্যতা প্রমাণের মুখাপেক্ষী নয়। কারণ ইসলামের সত্যতা স্বীকার করার মানেই হলো পূর্ববর্তী ধর্মসমূহের সত্যতা স্বীকার করা। ইসলামে বিশ্বাস করার মানেই হলো পূর্ববর্তী রাসুলগণে বিশ্বাস স্থাপন করা। সুতরাং মুসলমানদের জন্য ঐ ধর্মগুলো সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং ঐগুলোর বাহকের মোজেযা সম্পর্কে অনুসন্ধানের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ ইসলামে বিশ্বাস করার কারণেই পূর্ববর্তী ধর্ম ও নবীগণের উপর বিশ্বাস করা তার জন্য আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে।
হ্যাঁ,যদি কেউ ইসলামের সত্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করেও তুষ্ট না হতে পারে (তার জ্ঞান ও পরিচিতির সীমাবদ্ধতার কারণে) তবে তাকে খ্রীষ্টান ধর্মের সত্যতা অনুসন্ধান করতে হবে। কারণ ইসলামের পূর্বে সর্বশেষ ধর্ম হলো এটিই। অতঃপর তাতে অনুসন্ধান করল কিন্তু তাতেও বিশ্বাস আনতে পারল না। তবে তাকে এর অব্যবহতি পূর্বের ধর্ম নিয়ে গবেষণা চালাতে হবে। আর এ ধর্মটি হলো ইহুদী ধর্ম। তাতেও যদি ফল না হয় তবে তাকে কোন ধর্ম সম্পর্কে ইয়াকীন বা বিশ্বাস অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত একে একে সব ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
বিপরীতক্রমে,যে ইহুদী বা খ্রীষ্টানবাদে বিশ্বাসী তার ব্যাপার এর বিপরীত। সুতরাং একজন ইহুদীকে নিজের ধর্মের ব্যাপারে বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে খ্রীষ্টবাদ বা ইসলামের সত্যতা অনুসন্ধানের কোন অর্থ থাকতে পারে না। বরং (কোন ধর্মের প্রতি বদ্ধমূল ধারণার পূর্বে) বুদ্ধিবৃত্তির দাবী হলো গবেষণা ও অনুসন্ধান চালানো। অনুরূপ,খ্রীষ্টানদেরও কেবলমাত্র খ্রীষ্টবাদ নিয়ে তুষ্ট থাকা উচিৎ নয়। বরং তার জন্য আবশ্যক হলো ইসলাম ধর্ম ও এর সত্যতা সম্পর্কে গবেষণা ও অনুসন্ধান করা। গবেষণা ও অনুসন্ধান ব্যতীত কোন ধর্মে তুষ্ট থাকার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। কারণ ইহুদী ধর্ম এবং তদানুরূপ খ্রীষ্টান ধর্মের কোনটিই তাদের পরবর্তী এমন কোন ধর্মের আবির্ভাবকে অস্বীকার করে না যা এদের স্থলাভিষিক্ত ও এতদ্ভয়ের রহিতকারী হবে। মূসা (আ.) ও ঈসা (আ.) দু’জনের কেউই বলেননি যে,তাদের পরে কোন নবী আসবে না।
অতএব,কিরূপে ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা তাদের বিশ্বাসের উপর নিশ্চিত থাকতে পারে এবং তাদের দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকতে পারে যদিও তারা তাদের পরবর্তী শরীয়তের উপর অনুসন্ধান চালায়নি? যেমন- ইহুদীরা খ্রীষ্টান ধর্মের উপর;অনুরূপ,খ্রীষ্টানরা ও ইহুদীরা ইসলামের উপর। কিন্তু ফিতরাতগত (স্বভাবগত) বুদ্ধিবৃত্তির চাহিদা হলো পরবর্তী দাবীর সত্যতার উপর অনুসন্ধান চালানো। কারণ যদি তখন এর সত্যতা প্রমাণিত হয়,তবে স্বীয় দ্বীন ত্যাগ করে শেষোক্ত দ্বীনে বিশ্বাস আনয়ন করবে এবং যদি এর সত্যতা প্রমাণিত না হয় তা’হলে বুদ্ধিবৃত্তির বিধান মোতাবেক তাদের পূর্ববর্তী ধর্মে বহাল থাকাই সঠিক।
তবে মুসলমান (যা ইতিপূর্বে বলেছিলাম) যেহেতু ইসলামে বিশ্বাস করে,সেহেতু তার জন্য অন্য কোন ধর্মে অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই,হোক সে এর পূর্ববর্তী ধর্ম কিংবা এর পরবর্তী কোন ধর্ম। পূর্ববর্তী ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করার প্রয়োজন না থাকার কারণ ইসলাম ঐগুলোকে সত্যায়িত করছে। সুতরাং ঐগুলো সম্পর্কে দলিল অনুসন্ধানের প্রয়োজন কী? ঐগুলো সম্পর্কে ইসলামের মতামত হলো- ইসলাম ঐগুলোকে রদ করেছে। সুতরাং ঐ ধর্মের বিধি বা কিতাব মোতাবেক মুসলমানদেরকে আমল করতে হবে না। অপরদিকে ইসলাম পরবর্তী কোন ধর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধানের প্রয়োজন না থাকার কারণ হিসেবে হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর বাণী তুলে ধরা যায়।
তিনি বলেন-
“আমার পর কোন নবী আসবে না।”
আর প্রত্যেক মুসলমানরেই বিশ্বাস যে তিনি হলেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“তিনি {হযরত মোহাম্মদ (সা.)} নিজের মনগড়া কোন কথা বলেন না যদি না তা তার উপর অবতীর্ণ ওহী হয়।“ (সুরা নাজম-৩-৪)
সুতরাং ইসলাম পরবর্তী কোন ধর্ম (যদি কেউ দাবী করে থাকে) সম্পর্কে কেনইবা আমরা দলিল অনুসন্ধান করব? কারণ তা তো কিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েই আছে।
তবে এখন মুসলমানদের জন্য এ প্রশ্ন এসে দাড়ায় যে কোন পন্থায় সঠিকভাবে হযরত মোহাম্মদের (সা.) উপর অবতীর্ণ শরীয়তের হুকুম আহকুম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে? কারণ নবীর (সা.) রিসালাতের সময়কাল থেকে অনেক যুগ ও বর্ষের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আর ইতিমধ্যেই নানা মাযহাব,ফেরকা ও মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে কোনটি সঠিক? কারণ মুসলমানদের দায়িত্ব হলো সমস্ত হুকুম যেরূপে নাযিল হয়েছে সেরূপ আমল করা। কিন্ত কি করে একজন মুসলমান নিশ্চিত হবে যে,এ হুকুমগুলো ঠিক যে রকম নাযিল হয়েছে সেরকমই। কারণ,মুসলমানরা একাধিক দল ও মতে বিভক্ত,তাদের নামায একরকম নয়। তাদের এবাদত ও তাদের আচরণ বিভিন্ন্। তাহলে তার কী করা উচিৎ? কোন পদ্ধতিতে সে নামায পড়বে? কোন পদ্ধতি সে অবলম্বন করবে তার এবাদত ও লেনদেনের ক্ষেত্রে। যেমন- বিবাহ,তালাক,উত্তরাধিকার,ক্রয়-বিক্রয়,ফৌজদারী,বিধি,শাস্তি প্রদান,রক্তদান,ইত্যাদি।
একজন মুসলমানের জন্য এটা সঠিক নয় যে সে তার পূর্ব পুরুষদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবে কিংবা তার বন্ধু-বান্ধবকে অনুসরণ করবে। বরং তার ও তার নিজের মধ্যে যা কিছু আছে কিংবা তার ও তার মহান আল্লাহর মধ্যে যা কিছু আছে সে ব্যাপারে তাকে নিশ্চিত হতে হবে। এখানে পক্ষপাতিত্ব,কপটতা ও কুসংস্কারের কোন সুযোগ নেই বা কোন অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। সে যাতে ভাল বিশ্বাস রাখে তার জন্য তা যৌক্তিকভাবে গ্রহণ করা আবশ্যক,যাতে সে তার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা এবং তার প্রভুর প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। আর তখন আল্লাহ তাকে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে শাস্তি দিবেন না যখন সে নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবে।
পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“মানুষ কি মনে করে কোন উদ্দেশ্য ব্যতীতই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”(সুরা কিয়ামাহ- ৩৬)
মহান আল্লাহ আরও বলেন-
“প্রকৃতপক্ষে,মানুষ নিজেই তার নিজের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট প্রমাণ।”(সুরা কিয়ামাহ-১৪)
“নিশ্চয়ই এ কোরআন হলো স্মারক,যে কেউ ইচ্ছা করলে তার প্রভুর পথ বেছে নিতে পারে।”(সুরা মুজাম্মিল -১৯)
সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি একজন মুসলমান তার নিজেকে করতে পারে তা হলো- সে “আহলে বাইতের”পথ নির্বাচন করবে না অন্য কারো পথ? যদি আহলে বাইতের পথ বেছে নেয়,তবে তা কি দ্বাদশ ইমামীয়াদের পথটি সঠিক,না-কি এ ধরনের অন্য কোন ফেরকা? আর যদি আহলে বাইতের পথ ভিন্ন অন্য কোন পথ,যেমন- আহলে সুন্নতের পথ,বেছে নেয় তবে তাকে চার মাযহারের কোন একটিকে অনুসরণ করতে হবে,না কি অন্য কোন একটিকে? এ প্রশ্নগুলো সমস্ত মুক্ত চিন্তার অধিকারী মানুষের মধ্যেই জাগতে পারে,যতক্ষণ পর্যন্ত না সঠিক কোন পথ খুঁজে পায়।
অতএব,আমাদের জন্য ইমামতের আলোচনা করা সমীচীন। যা দ্বাদশ ইমামীয়ারা বিশ্বাস করে।