সুন্নি মাজহাবের সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননা হারাম: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
প্রশ্ন : আমি অনেকের কাছে শুনি যে, হযরত আলী ছাড়া বাকি তিন খলিফাদের নাকি শিয়ারা কাফের বলে? আর এটাও অনেকের কাছে শুনেছি যে, শিয়ারা নাকি আলীকে রাসূলের থেকেও শ্রেষ্ঠ মানে? অনেক শিয়া নাকি এটা বিশ্বাস করে যে, কুরআনের আয়াত ১১ হাজারের বেশি? আর রাসূলের (সা) হাদিস নাকি শিয়ারা মানে না? আমি শিয়াদের মধ্যে রাফেজি ও আলাভী গোত্র সম্পর্কেও জানতে চাই। পরিশেষে আমি জানতে চাই যে, মূলধারার শিয়া মাজহাব এ ব্যাপারে কী বলে? -মো. রকিবুল ইসলাম মাহীন, ঢাকা- বাংলাদেশ।
উত্তর:
‘সুন্নি মাযহাবের সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননা হারাম’
প্রথম তিন খলিফাকে মূল ধারার শিয়ারা তথা ১২ ইমামে বিশ্বাসী বা ‘ইসনা আশারা’ শিয়ারা কাফির মনে করেন না বরং তাদের অবমাননাকে হারাম মনে করেন। বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের স্বার্থে হযরত আলী (আ) এই তিন সাহাবির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি বলেও তারা বলে থাকেন। তাদের সম্পর্কে বা সুন্নিদের কাছে সম্মানিত সাহাবিদের ব্যাপারে অশোভন উক্তি করা বা গালি দেয়াকে (শিয়া মুসলমানদের জন্য) নিষিদ্ধ করে গেছেন মূল ধারার শিয়া নেতৃবৃন্দ ও আলেম। মূল ধারার শিয়া নেতারা সুন্নি মুসলমানদেরকে মুসলমান বলেই মনে করেন। এ সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া উল্লেখযোগ্য।
২০১০ সালে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এক ফতোয়ায় মহানবী (স.)’র স্ত্রী হযরত আয়েশাসহ সুন্নি মাজহাবের সকল সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অবমাননাকে হারাম ঘোষণা করেন। এ ঐতিহাসিক ফতোয়া বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া জাগায়। বিশেষ করে কুয়েতের দৈনিক ‘আল আম্বিয়া',বার্তা সংস্থা মুহিত,লেবাননের দৈনিক আস সাফির,লন্ডনে থেকে প্রকাশিত আল হায়াত এবং মিশরের বেতার ও টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ফতোয়াটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়।
কুরআন অবিকৃত
শিয়া মুসলমানরা মনে করেন কুরআন অবিকৃত রয়েছে এবং বর্তমানে প্রচলিত কুরআন ও আদি কুরআনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে কোরানের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ আছে এবং এ বিষয়টি ইসলামের নানা মাজহাব সৃষ্টি ও মুসলমানদের মধ্যে মতভেদের অন্যতম বড় কারণ।
আপনি কিছু প্রশ্ন বা অভিযোগের ব্যাপারে শিয়াদের মূল ধারার বক্তব্য জানতে চেয়েছেন। শিয়াদেরকেই সামগ্রীকভাবে রাফেজি বলে থাকেন বিভিন্ন মাজহাব বা ধারার মুসলমানরা। কারণ, শিয়া মুসলমানরা মনে করেন একমাত্র হযরত আলীই (তাঁর ওপর সালাম) ছিলেন বিশ্বনবী (স.)’র ঘোষিত ও মহান আল্লাহর মনোনীত প্রথম ইমাম বা খলিফা। তারা আবুবকর, ওমর এবং ওসমানকে ন্যায়সঙ্গত খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন বলেই এই শব্দটি তথা রাফেজি (অর্থাৎ ‘অস্বীকারকারী’) ব্যবহার করা হয় তাদের সম্পর্কে।
আলাভীদের ব্যাপারে মূল ধারার শিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি
‘অ্যালাভাইট’ বা ‘আলাভী’ বলতে এক সময় হযরত আলী (আ.)’র বংশধর ও তাঁর সমর্থকদেরকে বোঝাত। এখনও প্রাচীন বইয়ে ব্যবহৃত এই শব্দকে সেই অর্থেই ব্যবহার করা যায়। তবে আলাভী বলতে একটি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ও ছিল প্রাচীন যুগে এবং বর্তমান যুগেও এ সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এরা আলী (আ)-কে আল্লাহর সমতুল্য বলে মনে করে। মূল ধারার শিয়ারা তাদেরকে কাফির বলে মনে করেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর এইসব বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই মূল ধারার শিয়ায় পরিণত হয়েছেন।
শিয়াদের দৃষ্টিতে বিশ্বনবী ও হাদিস
শিয়ারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে মনে করেন। বিশ্বনবীর নাম শুনা মাত্র তারা উচ্চস্বরে দরুদ পড়াকে অনেকটা ওয়াজিবের মতই পালন করে থাকেন। তাদের মত এত বেশি দরুদ পাঠ অন্যরা করে না।
হাদিস প্রসঙ্গে কথা হল, শিয়ারা মনে করেন সুন্নি ভাইরা যেসব হাদিস মেনে চলেন তার মধ্যে অনেক হাদিসই অনির্ভরযোগ্য বা জাল তবে সব হাদিস নয়।
আসলে সুন্নিদের মধ্যে পথভ্রষ্ট ও অনাচারী বা বেদাআতী মুসলমানদের দোষ-ত্রুটিকে যেমন সমস্ত সুন্নি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য বলা যায় না, তেমনি শিয়াদের কোনো বিচ্যূত বা পথভ্রষ্ট ধারাকে সব শিয়াদের চিন্তাধারা বলে প্রচার করার বা মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিয়া মুসলমানদের নামে নানা অপপ্রচার যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ইসলাম ধর্মের শত্রুদের বড় ষড়যন্ত্র। তারা এ ধরনের বিষয়গুলোকে অপব্যবহার করে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য জিইয়ে রাখতে চায়। (রেডিও তেহরান)