নবীর আহলে বাইতের ভালবাসা
আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফাখরে রাযী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রখ্যাত দু’জন তাফসীরকারক ও বিজ্ঞ আলেম । তারা তাদের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থদ্বয় ‘আল-কাশশাফ’ ও ‘আল-কাবির’- এ এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন, যখন নাযিল হলো এ আয়াতঃ
قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ
অর্থাৎঃ (হে রাসূল) বলে দাওঃ আমি আমার রেসালতের বিনিময়ে কোন পার্থিব প্রতিদান ও পারিশ্রমিক চাই না । আমি চাই যে, শুধুমাত্র তোমরা আমার নিকটতম লোকদের (আহলে বাইতকে) ভালবাসবে ।১
তখন রাসূল (সা.) বলেনঃ
من مات علی حب آل محمد مات شهیدا
الا من مات علی حب آل محمد مات مغفورا له
الا من مات علی حب آل محمد مات تائبا
الا من مات علی حب آل محمد مات مؤمنا مستکملا للایمان
الا من مات علی حب آل محمد مات بشره ملک الموت بالجنة ثم منکر و نکیر
الا من مات علی حب آل محمد مات یزف الی الجنة کما تزف العروس الی بیت زوجها
الا من مات علی حب آل محمد مات فتح له فی قبربابان الی الجنة
الا من مات علی حب آل محمد مات جعل الله قبره مزار ملائکه الرحمن
الا من مات علی حب آل محمد مات مات علی السنة و الجماعة
الا من مات علی حب آل محمد مات جاء یوم القیامة مکتوبا بین عینه آیس من رحمه الله
الا من مات علی بغض آل محمد مات کافرا
الا من مات علی بغض آل محمد مات لم یشم رائحة الجنّة
অর্থাৎঃ যে ব্যক্তি অন্তরে মুহাম্মদ (সা.) এর আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা পোষণ করে মৃত্যুবরন করলো তার মৃত্যু শহীদের মৃত্যুর সমতুল্য ।
জেনে রেখোঃ যে ব্যাক্তি হৃদয়ের মাঝে আলে মুহাম্মদের (সা.) প্রতি ভালবাসা লালন করে মৃত্যুবরন করলো তার মৃত্যু ক্ষমা প্রাপ্তির মৃত্যু হিসেবে পরিগনিত ।
মনে রেখোঃ যে ব্যক্তি আহলে বাইতের ভালবাসা অন্তরে নিয়ে মৃত্যু বরন করলো তার মৃত্যু “তওবাকারীর মৃত্যু” হিসাবে গন্য ।
স্মরণ রেখোঃ যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মদকে (সা.) ভালবেসে মৃত্যুবরন করলো সে পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে মৃত্যুবরন করলো ।
জেনে রেখোঃ যে ব্যক্তি হৃদয়ে আলে মুহাম্মদের (সা.) ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরন করলো তাকে মৃত্যুদূত তথা আযরাইল (আ.) অতঃপর মুনকির নাকিরও জান্নাতের সুসংবাদ পরিবেশন করবেন ।
স্মরণ রেখোঃ যে ব্যক্তি হৃদয়ে মুহাম্মদ (সা.) এর আহলে বাইতের ভালবাসা লালন করে মৃত্যুবরন করলো তাকে বেহেশ্তে এমনভাবে সজ্জিত করে নিয়ে যাওয়া হবে যেমনিভাবে নববধুকে সাজিয়ে স্বামীগৃহে নিয়ে যাওয়া হয় ।
মনে রেখোঃ যে ব্যক্তি মনের মাঝে আলে মুহাম্মদ (সা.) এর ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরন করলো তার কবরে জান্নাত মুখী দু’টি দরজা খুলে দেয়া হবে ।
জেনে রেখোঃ যে ব্যক্তি রাসূলের (সা.) আহলে বাইতকে ভালবেসে মৃত্যুবরন করলো মহান আল্লাহ তার কবরকে রহমতের ফেরেস্তাদের জিয়ারতগাহে পরিণত করবেন ।
স্মরণ রেখোঃ যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মদ (সা.) কে ভালবেসে মৃত্যুবরন করলো সে রাসূলের সুন্নাতের পথে এবং মুসলমানদের দলভূক্ত হয়ে মৃত্যুবরন করলো ।
মনে রেখোঃ যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.) এর আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা পেষণ করে মারা যায় সে ক্বিয়ামতের দিনে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে তার কপালে লিখা থাকবে ‘আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত’ ।
স্মরন রেখোঃ যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.) এর আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে মৃত্যুবরন করলো তার মৃত্যু কাফেরের মৃত্যুর সমতুল্য ।
জেনে রেখোঃ যে ব্যক্তি রাসূলের (সা.) আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা পোষণ করে মারা যায় সে কখনো বেহেশ্তের সুঘ্রাণ পাবে না ।২
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের চার ইমামের অন্যতম, ইমাম শাফেয়ী আহলে বাইতের শানে নিম্নলিখিতরূপে ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন । তিনি কবিতা আবৃতি করেছেন এভাবেঃ
یَا آلَ بَیتِ رَسولِ الله حُبُّکُمُ فَرضٌ مِنَ الله فی القُرآنِ أنزَلَهُ
یکَفیکُم مِن عظیمِ القَدرِ أنّکُم مَن لَم یُصلِّ عَلَیکُم لَا صَلَاةَ لَهُ
وَ لَمَّا رَأیتُ النَّاسَ قَد ذَهَبَت بِهِم مَذَاهِبُهُم فِی أبحُرِ الغَیِّ وَ الجَهلِ
رَکِبتُ عَلَی اسمِ الله فِی سُفُنِ النَّجَا وَ هُم آل بَیتِ المُصطفَی خَاتَمِ الرُّسُلِ
وَ أمسَکتُ حَبلَ اللهِ وَ هُوَ وَلاءوهُم کَما قَد أُمِرنَا بالتَمسُّکِ بالحَبلِ
অর্থাৎঃ ‘হে আল্লাহর রাসূলের আহলে বাইত, আপনাদের ভালবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ করা হয়েছে, যা কোরআনের উল্লেখ আছে ।
আপনাদের শ্রেষ্ঠ গৌরবের জন্যে এটাই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি নামাজে আপনাদের উপর দরুদ পাঠ করে না তাদের নামাজই হয় না ।
যখন লোকজনদের দেখেছি তারা তাদের পথকে গোমরাহীর সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে, তখন আমি আল্লাহর নামে উঠে পড়লাম আহলে বাইতে মোস্তফার নাজাতের তরীতে ।
আল্লাহর রশ্মি আকড়ে ধরেছি যা হচ্ছে তাদের প্রতি ভালবাসা কেননা এ রশ্মিকে আকড়ে ধরে থাকার দেয়া হয়েছে নির্দেশ ।৩
ইমাম শাফেয়ী রাসূলের সেই হাদীসেরই সমর্থন করেছেন যেখানে মহানবী (সা.) বলেছেন,
اهل بیتی کسفینة نوح فمن رکبها نجی و من تخلف عنها غرق
অর্থাৎঃ “আমার আহলে বাইত নূহের তরী সদৃশ্য । যে ব্যক্তি তাতে আরোহন করবে সে নাজাত পাবে আর যে ঐ তরী থেকে দূরে সরে থাকবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে ।৪
উক্ত হাদীসটি এগারটি সূত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে আর সাতটি সূত্রে শীয়া গ্রন্থাবলীতে বর্ণনা করা হয়েছে ।
তথ্যসূত্রঃ
১. সূরা আশ-শূরা, আয়াত নং-২৩ ।
২. আল কাশশাফ, খণ্ড -৪, পৃঃ-২২০, আল কাবির, খণ্ড-২৭, পৃঃ ১৬৬; তাফসীর আল জামেয়া’লি আহকাম আল-কোরআন, কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃঃ-২২ ।
৩. নুর আল আবসার, শাবলানজী, পৃঃ১০৪; আস সাওয়ায়েক আল মুহরিক্বা, পৃঃ ১৪৬; শারহ আল মাওয়াকেফ লি আয-যারক্বানী, খণ্ড-৭, পৃঃ ৭ ।
৪. আল মুসতাদরাক আ হাকেম, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৫১; আল আওসাত, তাবরানী, আরবাইনঃ নাবহানী, পৃঃ ২১৬ থেকে বর্ণনা করেছেন । যাখায়েরুল উকবা, পৃঃ-১৫০; তারিখে খোলাফা, পৃঃ ৩০৭; নূর আল আবসার, শাবলানজী, পৃঃ ১১৪ ।