আল হাসানাইন (আ.)

হযরত আলীর (আ.) মর্যাদা ও গুনাবলী

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

নবীপাক (সা.) সকল সাহাবীদের মধ্যে হযরত আলীর মর্যাদা ও গুনাবলী সর্বাধিক বর্ণনা করেছেন । “আর রিয়াদ আন নাদেরা”-র লেখক বলেছেন,  হযরত ওমর বিন খাত্তাব থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেনঃ

ما اکتسب مکتسب مثل علی، یهدی صاحبه الی الهدی.

অর্থাৎঃ আলীর ন্যায় কেউ এত বেশী মর্যাদা অর্জন করতে পারে নি । তার পদাংক অনুসরনকারীরা হেদায়েতের পথে পরিচালিত ।(আর রিয়াদুন নাদেবরা, খণ্ড-২ পৃঃ-২১৪)

এ ধরণের বর্ণনা্ বিভিন্ন গ্রন্থে সামান্য শব্দ ও বাক্যের তারতম্যসহ উল্লেখিত হয়েছে ।(মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ-১০৭; আল ইসতিয়াব, খণ্ড-২, পৃঃ-৪৬৬; আস সাওয়ায়েক আল মুহরিক্বা, পৃঃ-৭২,৭৬; আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, পৃঃ-৯৩; তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-২২১; নূর আল আবসার,পৃঃ-৭৩)

নবী (সা.) এর নিকট থেকে বহুল বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, “আদম সৃষ্টির পূর্বে আমি এবং আলী একত্রে আল্লাহর নিকট এক খণ্ড নূর হিসেবে অবস্থান করতাম । অতঃপর যখন আল্লাহ হযরত আদমকে সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি সেই নূরকে দু’খণ্ডে বিভক্ত করলেন । এক খণ্ড আমি এবং অপরটি আলী ।(আর রিয়াদুন নাদেবরা, খণ্ড-২ পৃঃ-১৬৪; মিযানুল এতেদাল, যাহাবী, খণ্ড-১ পৃঃ-২৩৫; তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৫৮)

আল্লামা সুয়ূতি তার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে সূরা বাকারার নিম্নোক্ত আয়াতঃ

فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

অর্থাৎঃ অতঃপর আদম তার প্রতিপালকের নিকট থেকে কতগুলো শব্দ (কালেমাত) শিখলেন, ফলে সেগুলোর মাধ্যমে তিনি তওবা করেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা গ্রহনকারী ও অনুগ্রাহী । (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং-৩৭)

এর ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ

و اخرج ابن النجار عن ابن عباس قال: سألت رسول الله (ص) عن الکلمات التی تلقاها آدم من ربه فتاب علیه، قال: سأل بحق محمد و علی و فاطمة و الحسن و الحسین الا تبت علی فتاب علیه

অর্থাৎঃ ইবনে নাজ্জার ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে ঐ শব্দাবলী (কালেমাত) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, যা হযরত আদম আল্লাহর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন যার ফলে তার তওবা কবুল হয়েছিল । নবী (সা.) প্রতিত্তোরে বলেনঃ আদম (আ.), মুহাম্মদ, আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইনের উছিলা ধরে আল্লাহর কাছে তওবা করেন, যার ফলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করে নেন । (কানযুল উম্মাল, খণ্ড-১, পৃঃ-২৩৪)

বিভিন্ন প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমি ও আলী একই বৃক্ষের দু’টি শাখা ।

‘মুসতাদরাক আস সহিহাইন’ গ্রন্থে নিম্নলিখিতভাবে এ ধরনেরই একটি হাদীস লিপিবদ্ধ আছেঃ জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেছেন, হে আলী, বিশ্বের অন্যান্য মানুষ পৃথক পৃথক বৃক্ষ থেকে সৃষ্টি হয়েছে আর আমি এবং তুমি একই বৃক্ষ থেকে সৃষ্টি । (মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-২, পৃঃ২৪১ ; কানযুল উম্মাল, খণ্ড-৬, পৃঃ-১৫৪; যাখায়েরুল উকবা, পৃঃ-১৬)

সিহাহ সিত্তার হাদীস গ্রন্থ ছাড়াও অন্যান্য অনেক হাদীস গ্রন্থসমূহ নবী (সা.) এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আলীকে নিজের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন । সহি তিরমিযিতে উৎকৃষ্ট সনদসহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেনঃ একদা নবী (সা.) সাহাবীদেরকে পরস্পরের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন । ইত্তোবসরে আলী এসে উপস্থিত হলে নবী (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে (উভয় জগতে) আমার ভাই ।(সহি আত তিরমিযি, খণ্ড-২, পৃঃ-২৯৯;

এ ধরণের হাদীস নিম্ন লিখিত গ্রন্থাবলীতেও দৃষ্টি গোচর হয় ।

মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৪,১১১,১২৬; সুনানে ইবনে মাজা, পৃঃ-১২; তারিখে তাবারী, খণ্ড-২, পৃঃ-৫৬,৬৩;কানযুল উম্মাল, খণ্ড-৬, পৃঃ-৩৯৪; আর রিয়াদুন নাদেবরা, খণ্ড-২ পৃঃ-১৫৫,১৬৭,২২৬,৪০০; তাবাক্বাত আল কোবরা,খণ্ড-৮, পৃঃ-১৪, ১১৪; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ-১৫৯,২৩০; উসদুল গাবা, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩১৭;তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-১২, পৃঃ-২৬৮; আস সাওয়ায়েক আল মুহরিক্বা, পৃঃ-৭৪-৭৫)

সহি আল বুখারীতে ‘সুলহ’ অধ্যায়ে (کیف یکتب) ‘কাইফা ইয়াকতুব’ শীর্ষক পাঠে (বাব) বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,

انت منی و انا منک

অর্থাৎঃ (হে আলী) তুমি আমা হতে আর আমি তোমা হতে ।(এ ধরনের উক্তি আরো বহু হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে । তন্মোধ্যে কয়েকটি উদ্ধৃতি নিম্নে উল্লেখ করা হল ।

সুনানে বায়হাক্বী, খণ্ড-৮, পৃঃ-৫; খাসায়েসে নাসাঈ,পৃঃ-৫১; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ-৯৮; মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ-১২০; তারিখে বাগদাদ, খণ্ড-৪, পৃঃ-১৪০; সহি আত তিরমিযি, খণ্ড-২, পৃঃ-২৯৭,২৯৯)

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)