ইফতার ও সেহরীর সময়সীমা
ইফতারের সময়সীমা
মহান আল্লাহপাক মানবজাতিকে বোধশক্তি দিয়ে তৈরি করেছেন। প্রথম পর্যায়ে ইয়াকিন (বিশ্বাস)। দ্বিতীয় পর্যায়ে আকল, তৃতীয় পর্যায়ে চিন্তা-ভাবনা। চতুর্থ পর্যায়ে ইলম (জ্ঞান)। এই পর্যায়গুলির ধারণা কমবেশী পরিলক্ষিত হয় সমাজে মানবের কর্মকান্ডে। এই পর্যায়গুলির সাথে যাকে ইচ্ছা করলেন খাস (বিশেষ) করে আওলিয়া, আম্বিয়া (রাঃ), বন্ধু তৈরি করলেন এবং কাউকে মোমিন (বিশ্বাসী) তৈরি করলেন। আর আল্লাহপাক যাকে ইচ্ছা করেন নিজ রহমতের সাথে খাস করে নেন। আর এই সকল খাস (বিশিষ্ট) ব্যক্তিই তাঁর রহমতের (করুনা) মধ্যে দাখিল (ভর্তি) আছেন। এমনকি খাস এবং আম (বিশেষ এবং সাধারণ) প্রত্যেক বস্তু তার রহমত ও ইলম্ এর মধ্যে আচ্ছাদিত রয়েছে। পাক কালাম মজিদে সর্বপ্রথম লেখা আছে, “হে আল্লাহ ইবলিসের প্রলোভন থেকে আমাকে রক্ষা করুন।” (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৯৭-৯৮)। এই মূল্যবান আয়াতটি ইবলিস ভুলিয়ে দিচ্ছে যে কারণে আমরা আল্লাহ পাকের সাহায্য হতে বঞ্চিত হচ্ছি। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই বান আয়াতটার ব্যবহার দ্বারা ইবলিসের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া এবং ইবাদতে একান্ত ভাবে কামিয়াব হওয়া।
প্রকাশ থাকে যে, উপরের কথাগুলি বলার উদ্দেশ্য পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য, গুরুত্ব যেন বাকী ১১ মাসের জন্য সিয়ামের ধারাবাহিকতা সমাজ জীবনে ধরে রাখার প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে অর্জিত হয়। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, পাক কোরআন মজিদ মোতাবেক চলা। কারণ রাসূল (সাঃ) মহান আল্লাহপাকের নির্দেশ ছাড়া কিছু বলেননি বা করেননি। আমাদের চিন্তা করতে হবে কোরআন মজিদে কোন জায়গায় লেখা নেই সূর্য্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে ইফতার করতে হবে। খুব আগের কথা মুরূব্বিরা দেহের লোম যখন চোখে দেখতে পেতেন না অর্থাৎ পশ্চিম আকাশের লাল বর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতো তখন ইফতার করতেন। এর সাথে কিন্তু কোরআন মজিদে মিল ১৪ আছে। এখন তা হচ্ছে না, বিষয়টি ভেবে দেখার বিষয় নয় কি? আযানের পরে নামায তারপর ১৫ মিনিট পরে অন্ধকার হবে তারপর ইফতারেরও সঠিক সময় হবে রাতের অন্ধকারে। এবার দেখুন রাতের অন্ধকার যেমন কোরআন মজিদে উদ্বৃত আছে, তাই আমার অনুরোধ আর রোযা নষ্ট হতে দিবেন না। কারণ রোযার প্রতিদান মহান আল্লাহ নিজ হাতে দেন। কোরআন মজিদের ২য় পারায়, সুরা আল বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতের মধ্যে লেখা আছে “সুম্মা আতিম্মুস সিয়ামা এলাল লাইল”। এর অর্থ হলো রোযাকে পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। দিবা-রাত কাকে বলে তার পরিচয় পাবেন ৯২ নং সুরার ‘আল লাইলে ইজা ইয়াগসা’ এর অর্থ হলো রাতের শপথ যখন তা আঁধারে ঢেকে যায়, ২নং আয়াতে ‘আন্নাহারে ইজা তাজাল্লা’ অর্থাৎ দিনের শপথ যখন তা আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। সুরা বণি ইসরাইলের ১২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, এবং আমি দিন ও রাত্রিকে করিয়াছি দুই নিদর্শন, এবং রাত্রির নিদর্শনকে করিয়াছি অন্ধকার এবং দিনের নিদর্শনকে করিয়াছি আলোময় যেন তোমরা দিবাভাগে তোমাদের প্রভুর পক্ষ হইতে অনুগ্রহ অন্বেষণ করিতে পার। মহান আল্লাহ আমাদের বোধশক্তি বৃদ্ধি করুন। (সূত্র: পাক্ষিক ফজর, পৃষ্ঠা: ৪; ১৫ সেপ্টেম্বার ২০০৭; জনাব এস,এ,এম,এম মঈনুল ইসলাম ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর (ইউ,এম,ও)।
কালাম পাকের বর্ণনা এবং হাদীস শরীফের বর্ণনা মোতাবেক খুব গভীরভাবে হিসাব করলে দেখা যায় সূর্যাস্তের যে সময়টা পঞ্জিকায় দেখানো আছে সারা বছরই উক্ত সময়ের ১৫ মিনিট পর প্রকৃত মাগরিবের সময় হয়। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই মাগরিবের সময় হয় না পূর্ব আকাশে ধোয়া রাশির যে কথা বলা আছে তা সূর্যাস্তের ১৫ মিনিট পর দেখা যায়। পশ্চিম দিকে সূর্য পূর্ণাঙ্গভাবে অস্তমিত হবার কথা। ১৫ মিনিট পর স্পষ্ট দেখা যায়, বোঝা যায়। হাদীস শরীফে তারকারাজির পূর্ব মুহূর্তে ইফতারির কথা বলা আছে। ঐ সময়টা হয় ১৫ মিনিট পর। প্রকৃত মাগরিবের সময় হয় যখন তখনই ইফতারির সময় হয়। এ বিষয়ে বছরের ১১ মাস কেহ মাথা ঘামায় না। প্রয়োজনও বোধ করে না। বেশি গোলমালও হয় না। বছরের ১১ মাস বি,টি,ইউ রেডিও বিভিন্ন মসজিদ ঠিক সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের আযান দেয় না। সূর্যাস্তের বেশ পরেই মাগরিবের আযান দেয়। এতে বেশি হেরফের হয় না। কিন্তু মহাসমস্যা দেখা যায় রমযান মাসে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মোস্তাহাবের দোহাই দিয়ে মাগরিবের প্রকৃত সময়ে ১৫ মিনিট আগে ইফতার খাওয়া শুরু করে। আর ইফতারি খায় ১৫/২০ মিনিট ধরে। তাড়াতাড়ি মানে ইফতারি খেতে ২/১ মিনিট সময় ব্যয় করা। নিয়ত করে রোযা ভঙ্গ করে সামান্য কিছুমুখে দিয়ে নামাযে দাড়িয়ে যাওয়া। নামায অন্তে ভক্ষণ করা। যদি এই সকল দিক সঠিকভাবে হিসাব করা যায় তবে দেখা যায় এই ভুলের কারণে বাংলাদেশের ও যাহারা এই নিয়মের অনুসরণ করছে তাদের সকলের রোযা নষ্ট হয়ে যায়। তাড়াতাড়ির হক আদায় হচ্ছে না এবং সময়ের আগে ইফতার করা হচ্ছে। কালাম পাকে সুরা বাকারায় পরিস্কার লেখা আছে রাতের বেলায় ইফতার খেতে হবে। এই রাত সূর্যাস্তের সাথে সাথে হয় না। এ বিষয়ে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর প্রতি সবিনয় অনুরোধ, ভালোভাবে হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং পর্যালোচনা করে এখন থেকে আগামী রমজানের ইফতারির সঠিক সময় ঘোষণা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি বিষয়টি পর্যালোচনা না করে পূর্বের মতই ভুল সময়ে ইফতারির সময় ঘোষণা দেয়া হয় তবে সকলের রোযা নষ্টের জন্য হাশরের মাঠে জনগনসহ সরকারকেও দায়ী করা হবে। (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১শে আগষ্ট ২০০৬, ঢাকা: বৃহস্পতিবার ১৬ ভাদ্র ১৪১৩; প্রচারে: সরকার শামছুল আরেফিন, প্রাক্তন হি.র.ক.ইআরডি, বাসা- ৬/১৪৬, রূপনগর টিনসেড, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬)।
গত ৩১ আগষ্ট দৈনিক ইনকিলাবের চিঠিপত্র কলামে সরকার শামছুল আরেফিনের ‘সূর্যাস্ত এবং মাগরিবের সময় প্রসঙ্গে’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম যাই হোক লেখাটি মূলত ইফতার সম্পকির্ত । লেখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং লেখকের সময়োচিত পরামর্শ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৯৮২ সালে প্রকাশিত মুয়াত্তাগ্রন্থ ও ১৯৯১ সালে প্রকাশিত বুখারী শরীফের রোযার অধ্যায়। মা’আরেফুল কোরআন ও তাহফিমূল কোরআন-এর ইফতার সম্পকির্ত সুরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করি। এগুলোতে ইফতারের তেমন সুনির্দিষ্ট কোন সময়ের উল্লেখ বর্ণিত হয়নি। শুধু ইমাম মালিক (রহ.)এর ‘মুয়াত্তা’ গ্রন্থের ইফতার অধ্যায়ে তিনটি রেওয়ায়ত বর্ণিত হয়েছে। রেওয়ায়ত ৬৯২ ও ৬৯৩-এর বর্ণনা নিম্নরূপঃ
সাহল ইবনে সা’দ সাঈদী (রা) হইতে বর্ণিত - রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলিয়াছেনঃ সর্বদা লোক মঙ্গলের উপর থাকিবে যতদিন ইফতার সত্বর করিবে। (সূত্র: মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র), ১ম খণ্ড, রেওয়ায়ত: ৬৯২ ও ৬৯৩, পৃষ্ঠা: ২৩৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
হুমায়দ ইব্ন আব্দুর রহমান (র) হইতে বর্ণিত - উমর ইব্ন খাত্তাব (রা) এবং উসমান ইব্ন আফ্ফান (রা) উভয়ে মাগরিবের নামায পড়িতেন, এমন সময় তখন তাঁহারা রত্রির অন্ধকার দেখিতে পাইতেন। (আর ইহা হইত) ইফতার করার পূর্বে। অতঃপর তাঁহারা (উভয়ে) ইফতার করিতেন। আর ইহা হইত রমযান মাসে। (সূত্র: মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র), ১ম খণ্ড, রেওয়ায়ত: ৬৯৪ পৃষ্ঠা: ২৩৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
হাদিসের ব্যাখ্যা নিস্প্রয়োজন। কোরআনে কি বলা হয়েছে। সুরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সুম্মা আতিমুস্ সিয়ামা ইলাল লাইল’ অর্থাৎ নিশাগম পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর। আরবীতে ‘সাম’ ও ‘আসল’ শব্দের অর্থ সন্ধ্যা। আয়াতে এর কোনটিই ব্যবহৃত হয়নি। অথচ রমযান মাসে যখন আমরা ইফতার করি তখন কিছুতেই রাত বা নিশাগম শুরু হয় না, সন্ধ্যা হয় মাত্র। সূর্যাস্তের ১৫-২০ মিনিট পরেই কেবল রাত বা নিশাগম শুরু হয়। কোরআনের আয়াতের সঙ্গে মুয়াত্তা গ্রন্থের ৬৯৪ রেওয়ায়তের যথেষ্ট মিল রয়েছে, যা অন্য দুটির সঙ্গে নেই। আর খলীফা উমর (রা) এবং উসমান (রা) নিশ্চয়ই রাসূল (সা) এর ইফতারের সময় অনুসরণ করেছেন। তাহলে আমরা কি প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা) বা খলীফাদের অনুসরণ করছি? নিশ্চই না। আরেকটি বিষয় উপলব্ধি করা দরকার যে, আযান দেয়ার অর্থ নামাযের জন্য আহবান। নামায পড়া, ইফতার করা নয়। ১১টি মাস মাগরিবের আযান দিলে নামায পড়া হয় কিন্তু রমযান মাসে তড়িঘড়ি করে শুরু হয় ইফতার। কী বিপদ! আশ্চর্যের বিষয় হলো, অন্য মাসে মাগরিবের আযান দেয়া হয় সূর্যাস্তের ৮/১০ মিনিট পরে, রমযান মাসে মাত্র২/৩ মনিটি পরে। প্রায় ১৪ ঘন্টার বেশি রোযা রেখে সামান্য ১৫/২০ মিনিটের জন্য তাড়াহুড়া করে সম্পূর্ণ রোযাটিকে নষ্ট করার কোন অর্থ থাকতে পারে না। খলিফাদের ইফতার করার মধ্যে তাড়াহুড়া করার চিহ্ন আমরা দেখতে পাই না। সুরা বণী ইসরাইলের ১১ নং আয়াতে মানুষকে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আর মানুষ (যেভাবে নিজের জন্যে না বুঝে) অকল্যাণ কামনা করে, (তেমনি সে) তার (নিজের) জন্যে (বুঝে সুঝে) কিছু কল্যাণও (কামনা করে আসলে) মানুষ (কাংখিত বস্তুর জন্যে এমনিই) তাড়াহুড়ো করে। (সুত্র: আল কোরআন, সূরা বণী ইসরাইল, আয়াত: ১১, শুরা নং: ১৭)।
কিন্তু তাইই (তাড়াহুড়া) করা হচ্ছে। আর শয়তানের কৌশল তো বড়ই জটিল ও কুটিল। এ ব্যপারে সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ইসলামী চিন্তাবিদদের অনুরোধ করছি, আপনারা ভেবে দেখুন এবং এ বিষয়ে যথাযথ সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও ইবাদতসমূহ সঠিক পন্থায় পালন করার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করুন। (সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব, মঙ্গলবার. ২৬ সেপ্টেম্বার ২০০৬, প্রচারে: মোঃ আশরাফ আলী, ৬৬২/২ পঃ কাজীপাড়া, ঢাকা-১২১৬)।
এখন যদি আমরা কোরআনিক ব্যাখ্যার সাথে সাথে হাদিসের সহায়তা গ্রহণ করি তাহলে তা থেকেওে প্রমাণিত হয় যে আমাদেরকে রোযা রাত্রি পর্যন্ত পূর্ণকরতে হবে। যেমন: পবিত্র হাদিস গ্রহণন্থ ‘মুয়াত্তায়ে মালেক’ এর হাদিসে বলা হয়েছে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) ও হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) মাগরিবের নামায পড়তেন এমন সময় রাত্রির অন্ধকার দেখতে পেতেন আর ইহা ইফতার করার পূর্বে। অতঃপর তারা উভয়ে ইফতার করতেন। আর ইহা রমজান মাসে। (এ শিক্ষা উনারা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর কাছ থেকে শিখে ছিলেন)। (সূত্র: মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র), ১ম খণ্ড, রেওয়ায়ত: ৬৯৪ পৃষ্ঠা: ২৩৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
আহলে কিতাবদের ইফতারের সময় হল আসমানের তারকাসমূহ যখন স্পষ্ট হয়ে উঠে তখন। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২৪২, হাদীস: ১৮১৮ এর ১৫নং টিকা, আধুনিক প্রকাশনী)।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যখন দেখবে যে এদিক (পূর্বদিক) থেকে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে রোযাদারের ইফতারের সময় হয়ে গিয়েছে। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২৪২, হাদীস: ১৮১৬, ১৮১৭, আধুনিক প্রকাশনী)।
যেহেতু এখানে প্রমান রয়েছে যে, হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত ওসমান (রাঃ) উভয়েই মাগরিবের নামাজ শেষ করে যখন রাত্রের অন্ধকার দেখতে পেতেন তখন ইফতার করতেন। এবং আহলে কিতাবদের ইফতারের সময়ও যখন আসমানের তারকা স্পষ্ট দেখা যায় আর রাতের অন্ধকার যখন ঘনিয়ে আসে তখন আর এখন যারা খলিফাদের অনুসরণ ছাড়া, রাতের অন্ধকার ও তারকাসমূহ দেখাতো দূরের কথা মাগরিবের আযানের সাথে সাথে আকাশ সম্পূর্ন পরিষ্কার থাকা অবস্থায় ইফতার করেন তারা কি ঠিক করছেন? নাকি খলিফারাই অনতিবিলম্বে ইফতার না করে ঠিক করতেন? কারন দুটি পক্ষ কখনও এক হতে পারে না। যদি সেইসব অনতিবিলম্বকারীদের কথামত আগে করাটাই সঠিক তাহলে কি কোরআন ভুল বলছে? (নাউযুবিল্লাহ) যে, ‘তোমরা লাইল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর’ (অর্থাৎ অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত) ও খোলাফায়ে রাসেদীনের দুই মহান নেতারা হয়ত কোরআনের সেই অন্ধকারকে অনুসরণ করেই দেরি করে ইফতার করে কি কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন? আর যদি কোরআন ও খলিফা হযরত উমর ও উসমানের সময় ঠিক থাকে তাহলে যারা সময়ের পূর্বেই ইফতার করছেন, সেই ক্ষেত্রে মানতে হবে তাহারা ভুল ও বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। আর বিবেকবান ব্যাক্তিকেতো অবশ্যই খোদার হুকুম ও কোরআনকে অনুসরন করা উচিত। কোরআনে উল্লেখিত সুস্পষ্ট আয়াতসমূহের বিরোধীতা ঈমান হীনতারই নামান্তর, কুফরী বৈ অন্য কিছুই নয়।
কিন্তু এখানে আবার ‘সাহল ইবনে সা’দ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যতদিন লোকেরা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর অনতিবিলম্বে ইফতার করবে ততদিন পর্যন্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে না। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২৪২, হাদীস: ১৮১৮, আধুনিক প্রকাশনী)।
আসেম ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) তার পিতা উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে সময় এদিক (পূর্বদিক) থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে বলে মনে হবে আর এদিক (পশ্চিম দিক) থেকে দিনের আলো তিরোহিত বা অদৃশ্য হবে এবং সূর্য অস্ত যাবে তখন রোযাদারের ইফতারের সময় হয়ে যায়। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২৪১, হাদীস: ১৮১৫, আধুনিক প্রকাশনী)।
আবার আবদুল্লাহ ইবনে আওফ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এক সময় আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সফর সঙ্গী ছিলাম। তিনি রোযা অবস্থায় ছিলেন। সূর্য ডুবলে তিনি এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন তুমি সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলল, হে আল্লার রসূল, সন্ধ্যা হতে দিন। তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ] বললেন, তুমি গিয়ে আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে লোক বলল, হে আল্লার রসূল, এখনো তো দিন অবশিষ্ট আছে? তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ] আবার বললেন, যাওনা আমাদের জন্য ছাতুগুলে আন। হাদীসের বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা বলেন, সে গিয়ে ছাতু গুলে আনল। পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যে সময় তোমরা দেখবে রাতের অন্ধকার এদিক (পূর্বদিক) থেকে ঘনিয়ে আসছে তখন জানবে, রোযাদারের ইফতারের সময় হয়ে গিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) (এ দিক থেকে বলার সময়) তার আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইশারা করে দেখালেন। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৪২, হাদীস: ১৮১৭, আধুনিক প্রকাশনী)।
আল কোরআনে সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের বিশ্বাসীগন আপনারা দেখুন উপরে যে হাদীসটি সহীহ আল বুখারীর মত কিতাবে উল্লেখ রয়েছে সেখানে রাসূল (সাঃ) -কে একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকেও খাট করা হয়েছে। কারন সে রাসূল (সাঃ) -কে বার বার বলছে ইয়া রাসূলুল্লাহ সময়ত এখনো হয়নি, সন্ধ্যা হতে দিন’ তারমানে সে এতটুকু নিশ্চিত যে ‘দিন এখনো অবশিষ্ট আছে’। এখানে যেহেতু ‘দিন’ উল্লেখ রয়েছে তাহলে কি রাসূল (সাঃ) দিন থাকতেই রোযাকে খুলে ফেলেছেন? কারন হাদীসটি মনোযোগ সহকারে পড়লে বুঝা যায় যে সেই ব্যক্তিটি এতই নিশ্চিত ভাবে বলছে যেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর মত একজন নবীর হয়তো ভুল হচ্ছে? (নাউযুবিল্লাহ) এতবার বলা সত্ত্বেও যখন রাসূল মানেননি বললেন ‘যাওনা’ (অর্থাৎ জোরজবরদস্তি পাঠানো হচ্ছে তাইনা?) তখন সে গিয়ে ছাতু গুলিয়ে আনল। আর এ কথা সত্য ও প্রমানিত যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, আহলে হাদীস ও ওয়াহাবী ফেরকা সমূহের আলেম ওলেমাগন এমনকি সাধারণ অনুসরণকারীগনের মধ্যে হয়তো অধিকাংশই বিশ্বাস করেন যে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দ্বারাও ভুল হয়েছে। কিন্তু শুধু মাত্র শিয়া মাযহাবের অনুসরণকারী বাদে। কারন তারা কখনো স্বপ্নেও ভাববেন না যে রাসূলের দ্বারা কোন ভুল হয়েছিলো।
সহীহ আল বুখারীর আরেকটি হাদীসের ব্যাখ্যাটি দেখুন: ‘কোরআন হাদীসের বিধান হল ইফতারের ব্যাপারে জলদি করা ও সেহরীর ব্যাপারে বিলম্বকরা। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২৪২, হাদীস: ১৮১৮ এর নিচের ১৫নং টিকা, আধুনিক প্রকাশনী)।
বাহ! কি সুন্দর ব্যাখ্যা। হাদীস কে গড়মিল করতে করতে এখন আবার কোরআনের মত পবিত্র কিতাবকে নিয়েও? হাদীসের ব্যাপারেতো বহু হাদীসই আমরা লক্ষ্য করেছি যে কোরআনের সাথে মিল খায় না। কিন্তু ‘কোরআন’ এই শব্দটি আবার কোথা থেকে আসল ভাই? কোরআনের কোন জায়গায় উল্লেখ আছে যে ইফতারের ব্যাপারে জলদি করা আর সেহরীর ব্যাপারে দেরি করা? (ব্যাখ্যাটি তাদের কাছ থেকে একটু বুঝে নিন তো)। কারণ সহীহ আল বুখারী হচ্ছে সিয়াহ সিত্তার প্রথম স্তরের কিতাব এবং সিয়াহ্ সিত্তার কোন হাদীসই নাকি ভুল নয় সবই নির্ভূল। তাহলে এখানেতো দুইটি দিক ভাগ হয়ে গিয়েছে যেমন আল্লাহ কোরআনে বলছেন রাত পর্যন্ত, আর ইমাম ইসমাঈল বুখারী তার সিয়াহ সিত্তাহ কিতাব সহীহ আল বুখারী শরীফে বলছেন জলদি করতে, কোনটি মানবো সহীহ আল বুখারী নাকি আসমানি কিতাব আল কোরআন?* কোরআনে উল্লেখ আছে “আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণ রেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ কর। (সূরা বাকারা: ১৮৭) আয়াতে আছে “এলাল লাইল” অর্থাৎ রাত পর্যন্ত। এলাল মাগরিব পর্যন্ত নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোকেরা মাগরিবের আযানের সাথে সাথে ইফতার করে ফেলে, তার আগে সর্বপ্রথম মোয়াজ্জিন ইফতার করে আযান দেয়। আবার কেউ মাইকে আযান দেওয়ার পূর্ব মূহুর্তে টক টক শব্দ শুনা মাত্র মুখে পানি দেয় (প্রমানিত)। রাত্রি শুরু হয় মাগরিবের সময়ের ১৫-২০ মিনিট পরে। এখন যদি উপরের বিবৃতির উপর ফতোয়া (ধর্মীয় বিধান অনুসারে) জারি করা হয় তাহলে সবাই বলবে আল্লাহর নির্ধারিত সময় অনুযায়ী একটু দেরীতে রোযা খুললে রোযা মাকরূহ (ঘৃণীত) হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে রোযা খুললে তা ভেঙ্গে যাবে। আর সারা দিনের রোযা বেকার হয়ে যাবে। রোযাকে সম্পূর্ণ ভাবে পরিপূর্ণ করতে হলে প্রত্যেক রোযাদারকে কোরআন ও আল্লাহর কথামত ‘রাত হতে রাত’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ অন্ধকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ উক্ত আয়াতে খোদা (লাইল) বলেছেন অর্থাৎ ‘রাত’। এবং মাগরিবের আযানের সময়টিকে আমরা সন্ধ্যা বলি কোরআনে সন্ধ্যাকে (আসীল) বলা হয়েছে। তাই মাগরিবের আযানের সাথে রোযাকে পূর্ণ করার বা ইফতার করার কথা উল্লেখ নেই। আর যে সময় মাগরিবের আযান দেওয়া হয় সে সময় আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে। সেই সময়টিকে আমরা রাত অর্থাৎ (লাইল) হিসেবে ধরে নিতে পারি না। সুতরাং এই ব্যাপারে সবাইকে চিন্তা করা উচিত।
আল্লাহ কোরআনে বলছেন: ‘আমি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ পয়দা করিয়াছি। তাহাদের অন্তর আছে কিন্তু তাহারা তাহা দ্বারা বুঝিতে চায় না, তাহাদের চোখ আছে, কিন্তু তাহারা উহা দ্বারা দেখে না এবং তাহাদের কান আছে, তাহারা শুনিতে চায় না উহা দ্বারা। উহারা জানোয়ার বরং পশুর চেয়েও অধম, উহারাই বেখেয়াল থাকে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯, শুরা নং: ৭)।
এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে এমন লোক আছে যাহারা সত্য পথ দেখাইয়া দেয় এবং তাহারাই সত্যের সহিত বিচার করে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮১)।
কিন্তু অধিকাংশই এতকিছু জানা সত্ত্বেও বলে থাকেন ‘তাহলে এত মানুষকি ভুলের মধ্যে রয়েছে তাহারা কি ভুল সময় পালন করছেন? কিন্তু আল্লাহ বলছেন: “এবং যদি তুমি দুনিয়ায় অধিকাংশ লোকের কথা মান্য কর তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহর পথ হইতে বিপথে লইয়া যাইবে, তাহারা শুধু খামখেয়ালের অনুসরণ করে এবং অনুমান করিতেছে মাত্র। (সুরা আনআম, আয়াত: ১১৬)।
উপরোক্ত কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং হাদীসসমূহের ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আমাদেরকে লাইল অর্থাৎ রাতে (বর্তমান সুন্নত আল জামাতে মসজিদ সমূহের আযানের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর) ইফতার করতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং অন্যান্য খোলাফায়ে রাসেদীনগণ ও তাদের জীবদ্দশায় রাতে ইফতার করেছেন (যার দলিল উপরে উল্লেখ করা হয়েছে)। ইনশাআল্লাহ আমরাও কোরআনের নির্দেশিত সময় ইফতার করব।
সেহরীর সময়সীমা
“হাত্তা ইয়াতাবাইয়্যানা লাকুমুল খাইতুল আবইয়াদ্বু মিনাল খাইত্বিল আস্ওয়াদি মিনাল্ ফাজ্বরি” অর্থাৎ আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণ রেখা হইতে ঊষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। (সূত্র: আল কোরআন, সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭, শুরা নং: ২)।
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও সেহরীতে বরকত লাভ হয়। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২৩০, হাদীস: ১৭৮৭, আধুনিক প্রকাশনী)।
সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেনঃ আমি বাড়ীতে পরিবার পরিজনদের মধ্যে সেহরী খেতাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ফজরের নামায পড়ার জন্য তাড়াহুড়া করে খেতাম। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২২৯, হাদীস: ১৭৮৪, আধুনিক প্রকাশনী)।
সেহরী খাওয়াতে বরকত ও কল্যাণ লাভ হয়। তবে সেহরী খাওয়া ওয়াজিব নয়। কেননা, নবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদের ক্রমাগতভাবে রোযা রাখা সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সেহরীর উল্লেখ নাই। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী, ২য় খণ্ড, কিতাবুস সাওম, পৃষ্ঠা: ২২৯, অনুচ্ছেদ, আধুনিক প্রকাশনী)।
পবিত্র কোরআনে ‘‘হাত্তা (যতক্ষন), ইয়াতাবাইয়্যানা (স্পষ্ট হয়ে যায়), লাকুমুল (তোমাদের জন্যে) খাইতুল্ (রেখা), আবইয়াদ্বু (সাদা অর্থাৎ সুবেহ সাদেক)’’ আয়াতে রাতের অন্ধকারকে কালো রেখা এবং ভোরের আলো ফোটাকে সাদা রেখার সাথে তুলনা করে রোযার শুরু এবং খানা -পিনা হারাম হওয়ার সঠিক সময়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু এ সময়সীমার মধ্যে বেশ-কম হওয়ার সম্ভাবনা যাতে না থাকে সেজন্য ‘হাত্তা ইয়াতাবাইয়্যানা’ শব্দটিও যোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, সন্দেহপ্রবণ লোকদের ন্যায় সুব্হে-সাদেক দেখা দেয়ার আগেই খানা-পিনা হারাম মনে করো না অথবা এমন অসাবধানতাও অবলম্বন করো না যে, সুবহে-সাদেকের আলো ফুটে উঠার পরও খানা-পিনা করতে থাকবে। বরং খানা-পিনা এবং রোযার মধ্যে সুবহে-সাদেকের উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খানা-পিনা বন্ধ করা জরূরী মনে করা যেমন জায়েজ নয়, তেমনি সুবহে-সাদেক উদয় হওয়ার ব্যাপারে একীন হয়ে যাওয়ার পর খানা -পিনা করাও হারাম এবং রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ তা এক মিনিটের জন্যে হলেও। সুবহে-সাদেক উদয় সম্পর্কে একীন হওয়া পর্যন্তই সেহরীর শেষ সময়। (সুত্র: পবিত্র আল কোরআনুল করীম, পৃষ্ঠা: ৯৫, মূলঃ তফসীর মাআরেফুল কোরআন, হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী (রহঃ), অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, সউদী আরবের মহামান্য শাসক খাদেমুল-হারামাইনিশ শরীফাইন বাদশাহ ফাহ্দ ইবনে আবদুল আজীজের নির্দ্দেশে ও পৃষ্ঠপোষকতায় পবিত্র কোরআনের এ তরজমা ও সংক্ষিপ্ত তফসীর মুদ্রিত হলো)।
আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে নিম্নে বর্ণিত কয়েকটি আসার (সাহাবাগণের উক্তি) জটিলতার অবতারণা করেছে। যেমন হযরত আলী (আঃ) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি ফজরের নামায সমাপ্ত করার পর বলতেন, এখন শুভ্ররেখা ও কৃষ্ণ রেখার পার্থক্য সূচিত হয়েছে। এই বর্ণনাটি করেছেন ইবনে মুনজির। তিনি বিশুদ্ধ সূত্রে হজরত আবু বকরের উক্তি হিসেবে আরো বর্ণনা করেছেন, যদি পানাহারের আগ্রহ অনুভব না হতো তবে আমি সাহরী করতাম ফজরের নামাযের পর। ইবনে মুনজির, ইবনে আবী শাইবা হজরত আবুবকর থেকে আরো একটি বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, তিনি (হজরত আবুবকর) ফজর সুস্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত গৃহের দরোজা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণিত আসারগুলোর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, সুবহে সাদেক হওয়ার পরও পানাহার করা যায়। এ জটিলতা নিরসনের উপায় কী? আমি বলি, অদৃশ্যের সংবাদ আল্লাহ্পাকই ভালো জানেন। তবে আমার মতে, এসকল আসার দ্বারা বোঝা যায় মিনাল ফাজরি কথাটির মিন অব্যয়টির অর্থ, হজরত আবুবকর ও হজরত আলীর নিকট সববীয়া বা কারণ সঙ্গত। আর খাইত অর্থ প্রকৃত রেখা। অথচ হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে মিন অব্যয়টির অর্থ বর্ণনামূলক বা বয়ানিয়া। আর ‘খাইতিল আবইয়াদ’ অর্থ সুবহে সাদেক। এই সমাধানটির ঐকমত্যাগত। (সুত্র: তাফসীরে মাযহারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮৩, কাযী ছানাউল্লাহ্ পানিপথী (রহ), সেরহিন্দ প্রকাশন, ৮৯-যোগীনগর রোড, উয়ারী, ঢাকা-১২০৩)।
সূত্র:কোরআন ও হাদীসের আলোকে মাহে রমজান (সংকলন ও সম্পাদনায়: মোঃ সাব্বির আলম) গ্রন্থ থেকে সংকলিত