দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা0%

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা লেখক:
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ: নবুয়্যত

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ বাকের সাদর (রহঃ)
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 11529
ডাউনলোড: 2540

পাঠকের মতামত:

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11529 / ডাউনলোড: 2540
সাইজ সাইজ সাইজ
দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক:
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বাংলা

দার্শনিক যুক্তির সম্মুখে বস্তুবাদের অবস্থানঃ

যান্ত্রিক বস্তুবাদ এ যুক্তির মোকাবিলায় কোন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হয় না। কেননা আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে,যান্ত্রিক বস্তুবাদ প্রাণ,অনুভূতি ও চিন্তাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে যে,এ বিষয়গুলো বস্তুদেহসমূহের বিচ্ছিন্নতা ও একীভূতি থেকে অর্জিত হয়েছে-কোন প্রাচুর্য থেকে নয়। অতএব,এ বিচ্ছিন্নতা ও একীভূতির মাধ্যমেই যান্ত্রিক শক্তি অনুসারে অংশসমূহের গতি নামক নূতন কিছু অর্জিত হয়েছে।

কিন্তু নব্য বস্তুবাদ বস্তুর প্রকরণগত ও অবস্থাগত বিবর্তন ও বিকাশের মাধ্যমে বস্তু বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে -এ বিশ্বাস হেতু উক্ত যুক্তির সম্মুখে সমস্যায় পতিত হয়। তবে এ প্রতিষ্ঠান গুণগত বা অবস্থাগত বিবর্তনকে এমন এক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে যা পূর্বোল্লিখিত দ্বিতীয় বিষয়টির (অর্থাৎ নিম্ন পর্যায়ের বস্তু উচ্চ পর্যায়ের বস্তুর অস্তিত্বগত কারণ হতে পারে না) সাথে সমন্বয়  রক্ষা করে এবং একমাত্র পদার্থকেই এ অবস্থাগত বা গুণগত বিবর্তনের জন্য যথেষ্ট মনে করে। অর্থাৎ পদার্থই এ অবস্থাগত ও গুণগত বিবর্তন ও বিকাশের উৎস। আর এটি বিত্তহীন ব্যক্তির আপন সম্পদের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পূর্বোল্লিখিত এ উদাহরণের মতো;দ্বিতীয় বিষয়টির সাথে বৈপরীত্য প্রদর্শন করে না।

বরং এ ব্যাখ্যাটি এরূপ যে,প্রতিটি বিকশিত ও বিবর্তিত রূপ এবং এর ধারণকৃত উপাদানসমূহ পদার্থের মধ্যে সৃষ্টির আদি থেকেই বিদ্যমান। যেমন ডিমের মধ্যে মুরগী এবং পানির মধ্যে গ্যাস সৃষ্টির আদিতেই উপস্থিত ছিল। কিন্তু কিরূপে পদার্থ সমসাময়িককালে ডিম,আবার মুরগী;কিংবা গ্যাস আবার পানিও হতে পারে? দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ এর জবাব নিম্নরূপে প্রদান করে :

এটা হলো পারস্পরিক বৈপরীত্য যা প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। প্রতিটি পদার্থই স্বয়ং তার বিপরীত উপাদানের অধিকারী এবং এ দু পরস্পর বিপরীত উপাদানের মধ্যে এক প্রকার নিরবচ্ছিন্ন দ্বন্দ্ব বিরাজমান। এ দ্বন্দ্বের ফলেই পদার্থের বিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন যখন ডিমের খোলস ভেঙ্গে যায় তখন একটি মুরগীর বাচ্চা তা থেকে বের হয়ে আসে। আর এভাবেই পদার্থ সর্বদা পূর্ণতা লাভ করতে থাকে। কারণ পারস্পরিক বৈপরীত্যের দ্বন্দ্বের ফলে যে বৈপরিত্য (نقيض ) অর্জিত হয়েছে তা পরবর্তী দু বৈপরীত্যের একটি হিসাবে কাজ করে।

অতএব,আমরা বলতে পারি নব্য বস্তুবাদ এ পদ্ধতির দ্বারা বুঝাতে চায় যে,প্রতিটি পদার্থ স্বয়ং তার বিপরীতেরও ধারণকারী। সুতরাং নিম্নলিখিত যে কোন একটি অর্থ উদ্দিষ্ট হতে পারে :

১. তবে কি ডিম এবং মুরগীর বাচ্চা পরস্পর বিরোধী বস্তু এবং ডিমই কি মুরগীকে অর্জন করে ও প্রাণ নামক বিশেষ গুণকে এর মধ্যে অস্তিত্বে আনে? অর্থাৎ মৃত বস্তু জীবন ও অস্তিত্ব সৃষ্টি করে এবং প্রাণ ও জীবন দান করে। তাহলে তো তা দরিদ্র ও বিত্তহীন ব্যক্তির সম্পদহীন অবস্থায় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করার মতোই যা  উল্লিখিত ভূমিকার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে।

২. অথবা এর অর্থ হলো ডিম বাচ্চাকে অস্তিত্বে আনে না,বরং তার অপ্রকাশিত অস্তিত্বকে প্রকাশ করে। কারণ প্রতিটি বস্তুরই নিভৃতে তার বিপরীত বস্তুও বিদ্যমান। অর্থাৎ ডিম যে অবস্থায় ডিম সে অবস্থায় বাচ্চাও বটে। যেন সে ছবির মতো-এক দিক থেকে একরকম আবার অন্য দিক থেকে বিভিন্ন রকম।

তাহলে এটা পরিষ্কার যে,ডিম যে অবস্থায় ডিম আবার সে অবস্থায়ই যদি বাচ্চাও হয়,তবে পূর্ণতার জন্য কোন কার্য সম্পাদিত হয়নি (অর্থাৎ পূর্ণতা অর্জিত হয়নি)। কারণ যা এখন বিদ্যমান তা প্রথম থেকেই অস্তিত্ববান ছিল। যেমন কোন ব্যক্তি তার পকেট থেকে টাকা বের করল এবং তাতে অতিরিক্ত কোন টাকা সংযোজিত হয়নি। কারণ এ টাকা পূর্ব থেকেই তার পকেটে ছিল। যদি তাই হয়,তবে পূর্ণতার গতি (حركت تكاملي ) যা নতুন বস্তু সৃষ্টি করে,তার অর্থ কি?

অতএব,এর যথোপযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আমাদেরকে বলতে হবে যে,ডিম,বাচ্চা বা মুরগী ছিল না,বরং সেটার জন্য যোগ্য ছিল-যা বাচ্চায় পরিণত হয়েছে। আর এভাবে ব্যাখ্যা করেই আমরা ডিমকে প্রস্তরখণ্ড থেকে পৃথক করতে পারি। কারণ প্রস্তরখণ্ড কখনই মুরগী হতে পারবে না। অপরদিকে মুরগীর ডিমের এ সম্ভাবনা আছে যে,উপযুক্ত পরিস্থিতি ও শর্ত সাপেক্ষে তা মুরগীর বাচ্চায় পরিবর্তিত হতে পারবে। সর্বোপরি কথা হলো সৃষ্টি ও সংগঠনের জন্য শুধু সম্ভাবনাই যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ যদি কখনও ডিম বাচ্চায় পরিণত হয়,তবে শুধু সম্ভাবনার ভিত্তিতে এ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা যাবে না।

অপরদিকে বস্তুর এ রূপান্তর যদি অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ফল হয়,তবে উক্ত রূপান্তরকেও অবশ্যই এ অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ভিত্তেতে ব্যাখ্যা করা উচিত। মুরগীর ডিমের অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য অবশ্য পানির অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য থেকে ভিন্ন। অর্থাৎ ডিমের অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ফল হলো মুরগী,আর পানির অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ফল হলো গ্যাস। এ কল্পনার উপর ভিত্তি করে সহজেই বস্তুর শেষ রূপান্তর থেকে বস্তুর গাঠনিক একক (অর্থাৎ ইলেকট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন) পর্যন্ত আলোচনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

প্রোটন একটি অসমস (ضد ),ইলেকট্রন অপর একটি অসমস ( ضد )। তাহলে নিউট্রন কি? প্রতিটি বস্তুই কি এ অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ভিত্তিতে একটি বিশেষ রূপ পরিগ্রহ করে? অর্থাৎ প্রোটন বস্তুর অভ্যন্তরে বিদ্যমান এবং পরবর্তীতে গতি ও পারস্পরিক সংস্পর্শের ফলে কি মুরগী ও ডিমের মতো  প্রকাশিত রূপ লাভ করে?

যদি তাই হয়,তবে বস্তুর রূপান্তরকে কিরূপে ব্যাখ্যা করতে পারি? কারণ অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের যুক্তি অনুসারে আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে,বস্তসমূহ অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের ক্ষেত্রে পরস্পর পৃথক। অর্থাৎ বস্তুসমূহের অভ্যন্তরীণ মৌলিক সত্তা পরস্পর ভিন্ন। কিন্তু অধুনা বিজ্ঞান বস্তুর মৌলিক সত্তাগত অভিন্নতায় বিশ্বাসী। আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় বস্তুসমূহের অভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহ বা মৌলিক সত্তাসমূহ অভিন্ন এবং তারা যে বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে তা তাদের এ অভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহের (যারা সর্বদা এক ও অভিন্ন) ভিত্তিতে হতে পারে না।

তবে  প্রোটন নিউট্রনে বা নিউট্রন প্রোটনে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ বস্তুর বাহ্যিক রূপ (পরমাণু ও মৌলিক সত্তাগত অভিন্নতা বিবেচনা না করলে) পরিবতির্ত হতে পারে। কিন্তু বস্তুর অভ্যন্তরীণ মৌলিক সত্তা সর্বদা একই থাকে যদিও তাদের রূপসমূহ বিভিন্ন। অতএব,কিরূপে এ ধারণা করা যায় যে,অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য ও বস্তুর অভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহের পার্থক্যের কারণে বস্তুসমূহ বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে?

মুরগী ও এর ডিমের উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করে উপস্থাপন করা যায়। বিভিন্ন ডিম বিভিন্ন বাচ্চায় পরিণত হয়। তাহলে বস্তুসমূহের বিভিন্ন রূপের কারণ হলো তাদের অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য -এ ধারণার উপর ভিত্তি করে বলতে হয় যে,এ ডিমগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ গঠনেও পরস্পর বিভিন্ন ধরনের। অতএব,মুরগীর ডিম এবং অন্য কোন পাখির ডিম দু টি ভিন্ন বাচ্চা অর্থাৎ মুরগী এবং অন্য পাখিতে পরিণত হয়। কিন্তু যদি উভয়েই একই প্রকারের অর্থাৎ মুরগীর ডিম হয়,তবে বলা যাবে না যে,ডিম দু টির অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের কারণেই দু টি ভিন্ন রূপে পরিণত হয়েছে।

অতএব,দেখা যায় যে, বস্তুরূপের বৈসাদৃশ্য,অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্যের কারণ -নব্য বস্তুবাদের এ ব্যাখ্যা এবং অধুনা বিজ্ঞানের বস্তুর অভ্যন্তরীণ মৌলিক সত্তার অভিন্নতায় যে বিশ্বাস তা দু টি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়।

৩. অথবা এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভবত বুঝানো হয়েছে যে,স্বয়ং মুরগীর ডিম দু টি অসমস বা দুটি স্বাধীন বিপরীত সত্তার ধারক যেখানে প্রতিটিই একটি বিশেষ অস্তিত্বের অধিকারী।

তাদের একটি হলো : জীবন একক (نطفه ) যার কারণ স্বয়ং মুরগীর ডিমের অভ্যন্তরে রূপ লাভ করে এবং অপরটি হলো : যা মুরগীর ডিমের অন্যান্য উপাদানে সমন্বিত। এ দু টি অসমস ডিমের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়,যার ফলে তাদের একটি অপরটি অপেক্ষা অধিকতর প্রকাশ লাভ করে অর্থাৎ জীবন একক (نطفه ) জয়ী হয় এবং ডিম মুরগীর বাচ্চা আকারে প্রকাশিত হয়। অসমসদের (اضداد ) মধ্যকার এ দ্বন্দ্ব সর্বদা মানুষের জীবনে বিদ্যমান ছিল এবং দার্শনিক চিন্তায় তো বটেই,এমনকি মানুষের দৈনন্দিন চিন্তায়ও তা  আদিকাল থেকে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু কেন ডিমের অভ্যন্তরস্থ জীবন একক ও ডিমের প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে বিদ্যমান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে পারস্পরিক বৈপরীত্য (تناقض ) নামকরণ করব? কেন বীজ,মাটি ও বাতাসের মধ্যকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে পারস্পরিক বৈপরীত্য বলব? এবং কেনইবা মাতৃগর্ভে ভ্রুণ এবং তা যে সকল খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে তাদের মধ্যকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে পারস্পরিক বৈপরীত্য নামকরণ করব? প্রকৃতপক্ষে এগুলো নিছক নামকরণ ছাড়া আর কিছুই না এবং এটাই বলা শ্রেয় যে,তাদের (অসমসদ্বয়) একটি অপরটিতে বিগলিত হয় বা অপরটির সাথে একীভূত হয়।

ধরা যাক,একে আমরা পারস্পরিক বৈপরীত্য নামকরণ করব। অতএব,যদবধি আমরা বলব যে,দু টি অসমসের মধ্যে বিশেষ দ্বন্দ্বই বিকশিত নূতন বস্তুর আবির্ভাবের কারণ যা পূর্বের  অসমসদ্বয়ের উপাদনাসমূহের সমষ্টি অপেক্ষা বেশি,তদবধি এটা দ্বারা আমাদের সমস্যা দূরীভূত হয় না। কারণ এ বেশি অংশ কোথা থেকে এসেছে? দু টি অসমসের (যাদের প্রতিটিই তৃতীয় কোন বিষয়ের ঘাটতিযুক্ত) পারস্পরিক দ্বন্দ্বের ফলেই কি এ বেশি অংশটুকু উদ্ভাবিত হয়েছে? এ ব্যাখ্যা পূর্বোল্লিখিত বিষয়ত্রয়ের দ্বিতীয়টির (নিম্ন পর্যায়ের বস্তু উচ্চ পর্যায়ের বস্তুর কারণ হতে পারে না) ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

অসমস এবং দু টি অসমসের মধ্যকার সংঘর্ষই প্রকৃত বিকাশ ও বিবর্তনের কারণ-এ ধরনের কোন উদাহরণ কি আমরা প্রকৃতিতে পেতে পারি? কিরূপে এক অসমস পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মাধ্যমে নিজের বিপরীতের বিকাশ ও বিবর্তনে সাহায্য করতে পারে যেখানে অসমতা বা দ্বন্দ্বের অর্থ হলো প্রতিরোধ বা কোন কিছু গ্রহণে আপত্তি এবং প্রতিটি প্রতিরোধই আপন শক্তির বিপরীতকে পরাজিত করতে বদ্ধপরিকর। অর্থাৎ বিপরীতের বিকাশ ও পূর্ণতার বিরোধী?

আমরা সকলেই জানি যে,সাঁতারু যখন সমুদ্রতরঙ্গের সম্মুখীন হয় তখন সমুদ্রতরঙ্গ তাকে সম্মুখে এগুতে বাধাগ্রস্ত করে এবং সাঁতারুকে গতিশীল করার পরিবর্তে তার অগ্রসর হওয়ার শক্তিকে হরণ করে। যদি অসমসদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ (যে কোন অর্থেই হোক না কেন) ডিমের  বিকাশ এবং এর মুরগীতে বিবর্তিত হওয়ার মূলে বিদ্যমান থাকে,তবে যে বিকাশ অসমসমূহের  দ্বন্দ্বের ফলে পানিকে গ্যাসে পরিণত করে বা গ্যাস পানিতে পরিণত হয়,তা কোথায়?

প্রকৃতি আমাদেরকে ঐ সকল অসমসের সাথে পরিচয় করায় যাদের মধ্যকার সংঘর্ষ,এমনকি সম্পৃক্তি,বিবর্তন ও বিকাশের কারণ তো নয়ই,বরং বিনাশ ও ধ্বংসের কারণ হয়। ধনাত্মক প্রোটন পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং ঋণাত্মক ইলেকট্রন উক্ত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করে। যদি এ দু টি বিপরীতধর্মী সত্তা পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়,তবে পরমাণু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এবং ফলশ্রুতিতে উক্ত পদার্থ প্রকাশিত অবস্থা থেকে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে।

মোটকথা পদার্থ (এর বহির্ভূত) কোন বাহ্যিক সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া প্রকৃত বিকাশ ও পূর্ণতা লাভ করতে এবং উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে না। বিশেষ করে,পদার্থ কখনই স্বয়ং পূর্ণতা প্রাপ্তির মাধ্যমে জীবন,অনুভূতি ও অনুধাবনের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে না যদি না মহান আল্লাহ পদার্থকে এ সকল বিশেষত্ব অর্জনে সাহায্য করে। বিকাশ ও বিবর্তনের কার্যক্রমে পদার্থের ভূমিকা শুধুমাত্র জীবন,অনুভূতি ও উপলব্ধির বিশেষত্বকে গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ততা অর্জন ব্যতীত আর কিছুই নয়। যেমন কোন শিশু তার শিক্ষকের কাছে জ্ঞান নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

অতএব,বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ অতীব বরকতময়।

মহান আল্লাহর গুণসমূহ

এখন যেহেতু প্রজ্ঞা ও কৌশল অনুযায়ী সৃষ্টিকারী,প্রতিপালনকারী এবং জগতের শৃঙ্খলা বিধানকারী হিসাবে মহান আল্লাহর প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি স্বভাবতঃই তাঁর সৃষ্টি ও সৃষ্টের মাধ্যমে তাঁর গুণাবলীর সাথেও আমরা পরিচিত হব এবং এ সৃষ্টসমূহের সাহায্যে তাঁর গুণাবলীকে পর্যালোচনা করব। যেমনি করে আমরা একজন প্রকৌশলীকে তাঁর তৈরিকৃত ইমারতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে কিংবা একজন লেখককে তাঁর লিখিত বইয়ের বিষয়বস্তু অনুসারে অথবা একজন শিক্ষককে তাঁর শিক্ষার্থীদের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সঠিকভাবে চিনতে পারি।

এরূপে আমরা মহান স্রষ্টার কতিপয় গুণ,যেমন তাঁর জ্ঞান,প্রজ্ঞা,জীবন,ক্ষমতা,দর্শন ও শ্রবণ সম্পর্কে অবগত হতে পারব। কারণ এ সৃষ্টিজগৎ সুনিপুণতা ও সূক্ষ্ম কার্যে পরিপূর্ণ (যার জন্য গভীর মনোযোগের প্রয়োজন),যা আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাক্ষ্য প্রদান করে এবং এ সুনিপুণ বিন্যাস ব্যবস্থার গভীরে এমন সব শক্তির অস্তিত্ব রয়েছে যারা তাঁর ক্ষমতা ও আধিপত্যকে প্রদর্শন করে। এছাড়া বিচিত্র রূপ,বর্ণ ও বিভিন্ন প্রকারের জ্ঞান ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপলব্ধিও বিদ্যমান যা মহান আল্লাহর জীবন ও উপলব্ধিকে বর্ণনা করে। জগতের এ বিন্যাস ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে এক বিশেষ সমন্বয় ও সুসংগতি প্রতিষ্ঠিত যা সৃষ্টিকর্তার একত্বের প্রমাণ বহন করে। আর সে সাথে প্রমাণ করে তাঁর জ্ঞানের একত্বকেও যা থেকে এ মহাজগৎ সৃষ্ট ও সিদ্ধি লাভ করেছে।

ন্যায়পরায়ণতা (عدل )ও দৃঢ়তা (استقامت ) :

আমরা প্রত্যেকেই (ফেতরাতগত ও তাৎক্ষণিকভাবে) আমাদের জীবন ব্যবস্থায় এক শ্রেণির সাধারণ মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এ মূল্যবোধ গুরুত্বারোপ করে যে,ন্যায়পরায়ণতা সত্য ও কল্যাণকর;জুলুম বা অত্যাচার মিথ্যা ও অকল্যাণকর। ন্যায়পরায়ণ পৃথিবীতে সম্মান ও পরকালে পুরস্কারের উপযুক্ত। আর অত্যাচারী ও সীমা লঙ্ঘনকারী পৃথিবীতে নিন্দিত ও আখেরাতে শাস্তির যোগ্য। এ মূল্যবোধসমূহ স্বভাবজাত ও ফেতরাতগতভাবেই মানুষের আচরণের ব্যাখ্যা প্রদানের মূল,তবে যখন অজ্ঞতা ও সুবিধাবাদীতার মতো কোন প্রতিকূলতা না থাকে। অতএব,যদি কোন মানুষ সত্য ও মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে অথবা বিশ্বস্ততা ও বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকে এবং যখন ব্যক্তিগত কোন বাধা ও কোন বিশেষ উদ্দেশ্য তাকে এ মূল্যবোধসমূহ থেকে বিচ্যুতিতে বাধ্য না করে,তবে সে সত্যকে মিথ্যা এবং বিশ্বস্ততাকে বিশ্বাসঘাতকতার উপর প্রাধান্য দেয়। অর্থাৎ যে এমন কারো উপর নির্ভরশীল নয়,যে তাকে এ সকল মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হতে বাধ্য করতে পারে অথবা কোন বিশেষ উদ্দেশ্য যাকে বিশ্বাসঘাতকতা ও অত্যাচারের পথে পরিচালিত না করতে পারে,সে ব্যক্তির সাথে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির মতো আচরণ করাই যুক্তিযুক্ত। অর্থাৎ ঠিক সেরকম আচরণ যা মহান আল্লাহর জন্যই সঠিক এবং তিনিও ঐ ধরনের ব্যক্তির সাথে এরূপ আচরণই করে থাকেন। এ সমস্ত মূল্যবোধ মহান আল্লাহরই আওতাধীন এবং আমরা যা ফেতরাতগত জ্ঞানের দ্বারা অনুধাবন করতে পারি। কারণ মহান আল্লাহই আমাদেরকে এ জ্ঞান দান করেছেন এবং ঐ অবস্থায় মহান প্রভু তাঁর মহাপরাক্রম ও জগতের সর্বত্রব্যাপী বিরাজমান শক্তি ও আধিপত্য এবং সকল পূর্ণতাব্যঞ্জক গুণের অধিকারী হওয়ার কারণে কোন  কিছু থেকে লাভবান হওয়ার মুখাপেক্ষী নন। এখানেই আমরা বিশ্বাস স্থাপন করব যে,মহান আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ এবং তিনি কাউকেই অত্যাচার করার অনুমতি প্রদান করেন না।

মহান আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা প্রতিদানের প্রমাণবহ :

ইতোপূর্বে আমরা জেনেছি যে,যে সকল মূল্যবোধে আমরা বিশ্বাসী সে সকল মূল্যবোধ আমাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা,দৃঢ়তা,বিশ্বস্ততা,সততা,প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ও অন্যান্য সৎ গুণের দিকে আকৃষ্ট করে এবং ঐগুলোর বিরোধী কোন বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে। এ মূল্যবোধসমূহ শুধু আমাদেরকে কিছু  গুণের প্রতি আকৃষ্ট বা কিছু গুণের প্রতি বিকর্ষিতই করে না,বরং এগুলোর বিনিময়ে যথোপোযুক্ত প্রতিদানও যাঞ্ছা করে থাকে। ফেতরাতগত জ্ঞান নিরপেক্ষভাবেই অনুধাবন করে যে,অত্যাচারী ও বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি পাওয়া উচিত এবং ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বাসী,যে ন্যায়,বিশ্বাস ও সততার পথে নিজেকে উৎসর্গ করে তার পুরস্কৃত হওয়া উচিত। অবশ্য আমাদের প্রত্যেকেরই অস্তিত্বের গভীরে এমন একটি অবস্থা বিরাজমান যা অত্যাচারী সীমা লঙ্ঘনকারীকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করে;আর ন্যায়পরায়ণ ও সৎ কর্মপরায়ণকে উৎসাহ ও স্বীকৃতি দান করে। এরূপ প্রতিক্রিয়ার অনুপস্থিতির কারণ,হয় কোন ব্যক্তির সঠিক অবস্থান গ্রহণে অক্ষমতা অথবা তার ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকার বহিঃপ্রকাশ।

যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিশ্বাস করব যে,মহান আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ এবং যথাযথ প্রতিদান প্রদানে মহাপরাক্রমশালী;কোন কিছুই ঐ সকল মূল্যবোধের জন্য প্রতিশ্রুত প্রতিদান প্রদানে তাঁকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না এবং তিনি সৎ কর্মপরায়ণ ও দুষ্কর্ম পরায়ণের প্রত্যেককেই তাদের সঠিক প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে অতীব শক্তিধর,ততক্ষণ পর্যন্ত স্বভাবতঃই আমরা বিশ্বাস করব যে,মহান আল্লাহ পুণ্যবানকে তাঁর পুণ্য অনুসারে পুরস্কৃত করেন;আর অত্যাচারিতের প্রাপ্য অত্যাচারীর নিকট থেকে আদায় করেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে,এ প্রতিদানগুলোর অধিকাংশই মহান আল্লাহর আওতাধীন হওয়া সত্ত্বেও এ পৃথিবীতে কার্যকর হয় না।

অতএব,আমাদের পূর্বোল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষাপটে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,প্রতিদানের জন্য এক আসন্ন দিবসের অস্তিত্ব রয়েছে-যেদিন কোন এক অখ্যাত ব্যক্তি,যে নিজেকে এক মহান উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন,কিন্তু তাঁর এ ত্যাগের ফল পার্থিব জীবনে আহরণ করতে পারেননি এবং যে অত্যাচারী তার শাস্তি প্রাপ্তি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল,শত অত্যাচারিতের রক্তের উপর দিয়ে আপন পথ রচনা করেছিল,হরণকৃত সম্পদের বিনিময়ে সুখের নীড় গড়েছিল-তাদের প্রত্যেকেই ন্যায়-নীতির পরাকাষ্ঠে যথাযথ প্রতিদান লাভ করবে। আর এ আসন্ন দিবসটিই হলো কিয়ামত বা পরকাল। সেদিন এ মূল্যবোধসমূহের প্রতিটিই মূর্তরূপে প্রতীয়মান হবে এবং এমন একটি দিবস ব্যতীত প্রাগুক্ত মূল্যবোধসমূহই অর্থহীন।

প্রেরিত

(রাসূল)

v নবুওয়াতের সাধারণ আলোচনা

v বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত