দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা0%

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা লেখক:
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ: নবুয়্যত

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ বাকের সাদর (রহঃ)
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 11535
ডাউনলোড: 2542

পাঠকের মতামত:

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11535 / ডাউনলোড: 2542
সাইজ সাইজ সাইজ
দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক:
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বাংলা

নবুওয়াতের সাধারণ আলোচনা

এ মহাবিশ্বে বিরাজমান সকল কিছুই মহান আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মের অধীন। কোন অবস্থায়ই কোন কিছুই এ নিয়মের গণ্ডি থেকে মুক্ত হতে পারে না। এ নিয়মের অধীনেই সৃষ্ট বিষয়সমূহ পরিচালিত এবং বিকাশ ও পূর্ণতাপ্রাপ্তির জন্য প্রস্তুত হয়। অতএব,শষ্যবীজ এক বিশেষ নিয়মের অধীন যা উপযুক্ত শর্ত সাপেক্ষে বৃক্ষে পরিণত হয়;জীবন এককও এক বিশেষ নিয়মের অধীন যা তাকে মনুষ্যত্বের পর্যায়ে উন্নীত করে। নক্ষত্র থেকে প্রোটন পর্যন্ত এবং নক্ষত্রের চারিদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহসমূহ থেকে প্রোটনকে কেন্দ্র করে ভ্রমণকারী ইলেকট্রনসমূহ পর্যন্ত সবকিছুই এ নিয়মের অধীনে পরিচালিত হয় এবং নিজ নিজ বিশেষ সম্ভাবনাসমূহের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিকশিত ও পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়।

মহান প্রভু কর্তৃক প্রণীত এ কর্মসূচী সর্বজনীন। বিজ্ঞানসম্মতভাবে তা এ মহাবিশ্বের সকল পর্যায়ে এবং সকল বিষয়ে বিস্তৃত।

বিদ্যমান এ বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো মানুষের ঐচ্ছিক স্বাধীনতা। মানুষ এক স্বাধীন (ঐচ্ছিকভাবে) ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন অস্তিত্ব অর্থাৎ তার উদ্দেশ্য আছে এবং তার সমস্ত কর্ম ঐ  উদ্দেশ্যের পথেই সম্পন্ন করে। সে মাটি খনন করে যাতে পানি পেতে পারে,খাদ্যসমূহ রান্না করে যাতে সুস্বাদ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয় এবং প্রাকৃতিক বিষয়সমূহকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাতে প্রকৃতির নিয়ম সম্পর্কে অবগত হতে পারে। ঐ সকল প্রাকৃতিক বিষয়েরও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিদ্যমান এবং তারা সকলেই একই রেখায় নিজ নিজ লক্ষ্য  ও উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসরমান। তবে তাদের ক্রিয়াকলাপ কেবল জীবন ও জীবন ধারণ নয়,বরং এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে শারীরবৃত্তিক (Physiological)। যেমন ফুসফুস,পাকস্থলী ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শারীরিক কাজকর্মের জন্য এক বিশেষ উদ্দেশ্যের পেছনে ধাবিত হয়। কিন্তু এ উদ্দেশ্য নিজ বিশেষ সহজাত ও শারীরিক ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে নয়,বরং তা জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান সৃষ্টিকর্তারই ইচ্ছায় হয়ে থাকে। যেহেতু মানুষ এক উদ্দেশ্যসম্পন্ন অস্তিত্ব সেহেতু তার সকল কর্মতৎপরতার পেছনে যে উদ্দেশ্য লুক্কায়িত থাকে তা ঐ কর্মসমূহের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে মানুষ তার কর্মক্ষেত্রে এমন নয় যে,সর্বদা সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সংগতি বজায় রেখে কাজ করে (যেমন এক বিন্দু পানি মহাকর্ষ নিয়মের ফলে নীচে পতিত হয়)। কারণ যদি তা-ই হতো তবে মানুষের অন্তরে এমন কোন উদ্দেশ্য বিরাজ করত না যার দিকে সে ধাবিত হতে পারে। এখন মানুষ হলো উদ্দেশ্যসম্পন্ন অস্তিত্ব যে স্বাধীন এবং সে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আধিপত্য বিস্তার করে। অতএব,মানুষের কর্মক্ষেত্র ও উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক হলো একটি নিয়ম যা তার ইচ্ছাকে প্রতীয়মান করে। কারণ উদ্দেশ্য নিজেই অবচেতনভাবে বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে না। সুতরাং প্রত্যেক মানুষই আপন উদ্দেশ্যকে তার নিজস্ব কল্যাণচিন্তা,প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদা অনুসারে বিধিবদ্ধ ও সীমাবদ্ধ করে। আবার স্থান-কাল ও পরিবেশ যা মানুষের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট তা তার এ চাওয়া-পাওয়া,লক্ষ্য ও অভ্যাসসমূহের সীমা নির্ধারণ করে। কিন্তু এ সকল পারিপার্শ্বিক নিয়ামক ও প্রভাবক যেগুলো মানুষকে তার লক্ষ্যপানে ধাবিত করে সেগুলো আসলে বায়ুপ্রবাহের মতো নয় যা বৃক্ষ পত্রকে আন্দোলিত করে,বরং স্বীয় লক্ষ্যপানে ধাবিত হওয়া প্রকৃত প্রস্তাবে নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের কল্যাণচিন্তা থেকেই উৎসারিত। কারণ বায়ুপ্রবাহ এবং পত্ররাজির আন্দোলনে স্বকীয় উদ্দেশ্য নামক কোন বিষয়ের ভূমিকা নেই।

অতএব,উল্লিখিত নিয়ামকসমূহ অর্থাৎ স্থান-কাল-পরিবেশ বাধ্যগতভাবেই মানুষকে তার কল্যাণচিন্তার উপলব্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন নির্দিষ্ট কাজে প্ররোচিত করে। তবে প্রতিটি কল্যাণচিন্তাই মানুষকে প্ররোচিত করে না,বরং তার সহজাত কল্যাণচিন্তাই এ স্থানে ভূমিকা রাখে। কল্যাণচিন্তা(مصالح ) দু প্রকারের। কোন কোন কল্যাণচিন্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন এক উদ্দেশ্যের অধিকারী ব্যক্তিকে দ্রুত সময়ে ফল দান করে। আবার কোন কোন কল্যাণচিন্তা দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে একটা সমাজকে বা জনগোষ্ঠীকে সুফল দিয়ে থাকে এবং প্রায়শঃই ব্যক্তিগত কল্যাণচিন্তার সাথে সামাজিক কল্যাণচিন্তার বিরোধ পরিলক্ষিত হয়। অতএব,আমরা দেখতে পাই যে,মানুষ প্রায়ই কল্যাণচিন্তা ও ইতিবাচক মূল্যবোধের কারণে কর্মে লিপ্ত হয় না,বরং যতটুকু থেকে সে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে পারবে,ঠিক ততটুকু কার্য সম্পাদনেই উদ্যোগী হয়। অপরদিকে সমাজের কল্যাণচিন্তা অনুসারে মানব উন্নয়নের জন্য নিয়ামকসমূহের ভূমিকা মানুষের জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য শর্ত এবং তার সফলতাও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর ভিত্তিতে সমাজকল্যাণে মানুষের প্রাসঙ্গিক আচরণ ও প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে তার জীবন পদ্ধতি ও জীবন যাপন যা অপরিহার্য করে তা,আর তার ব্যক্তিগত প্রবণতা,সহজাত প্রবৃত্তি ও ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য প্রচেষ্টা-এ দুয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ সৃষ্টি হয়।

অতএব,একান্ত  বাধ্যগতভাবেই এ বিরোধের অবসান এবং যে সকল নিয়ামক ও কারণ মানুষকে সমাজের কল্যাণার্থে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে তা পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান থাকার জন্য মানুষকে একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করতে হয়। (আর তা হলো নবুওয়াত)।

নবুওয়াত মানব জীবনের জন্য একটি ঐশী বিষয় যা প্রাগুক্ত বিরোধের সমাধান দেয়। অর্থাৎ সামাজিক কল্যাণকে বৃহত্তর পরিধিতে ব্যক্ত করে যা ব্যক্তিগত স্বার্থ ও কল্যাণের সীমাকে অতিক্রম করে যায়। আর তা এ আহ্বানের মাধ্যমে রূপ লাভ করে যে,মৃত্যুর পরও মানব জীবন অব্যাহত থাকবে এবং মানুষকে প্রতিদান লাভের জন্য সত্য ও ন্যায়বিচারের ময়দানে উপস্থিত হতে হবে। মানুষই হলো সে সৃষ্টি যে আপন কর্মের ফল দেখতে পাবে। পবিত্র কোরআনের আয়াত এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য :

فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْراً يَرَهُ وَ مَنْ يَعْمَلْ مِثْقاَلَ ذَرَّةٍ شَرّاً يَرَهُ

তখন কোন ব্যক্তি এক অণু পরিমাণও পুণ্যকর্ম করিয়া থাকিলে সে উহা দেখিবে এবং কোন ব্যক্তি এক অনু পরিমাণও মন্দ কর্ম করিয়া থাকিলে সে উহা দেখিবে। (সূরা যিলযাল : ৭ ও ৮)

সুতরাং এক দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সামাজিক কল্যাণ ব্যক্তিকল্যাণে রূপান্তরিত হয়।

অতএব,যা এ বিরোধের অবসান ঘটায় তা হলো এক নির্দিষ্ট মতবাদ এবং এর ভিত্তিতে প্রদত্ত বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি। আর  উক্ত মতবাদ হলো পুনরুত্থান দিবস বা কিয়ামত সম্পর্কিত মতবাদ যার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সুফলদায়ক হয়। এ মতবাদের ভিত্তিতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ঐশী পদ্ধতিতে হয়ে থাকে এবং ঐশ্বরিক সাহায্য ব্যতীত তা অসম্ভব। কারণ এ কার্যক্রম পরকাল বা অদৃশ্যের উপর নির্ভরশীল যা ঐশী বাণী (وحي ) অর্থাৎ নবুওয়াত ব্যতীত অর্জিত হতে পারে না।

মোদ্দাকথা,নবুওয়াত ও পুনরুত্থান দিবস এ দুই পরস্পর জড়িত বিষয়ই মানব জীবনে উল্লিখিত বিরোধের সমাধান দিয়ে থাকে এবং মানুষের ঐচ্ছিক স্বাধীনতাভিত্তিক আচরণের বিকাশ সাধন ও প্রকৃত মানবকল্যাণের দিকে তাকে উন্নীতকরণের জন্য মৌলিক শর্তসমূহের আয়োজন করে।