দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা0%

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা লেখক:
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ: নবুয়্যত

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ বাকের সাদর (রহঃ)
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 11531
ডাউনলোড: 2540

পাঠকের মতামত:

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11531 / ডাউনলোড: 2540
সাইজ সাইজ সাইজ
দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক:
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বাংলা

অপর কার্যকর  নির্বাহীসমূহের ভূমিকা :

উপরিউক্ত আলোচনার অর্থ এটা নয় যে,আমরা অন্যান্য নির্বাহী ও কার্যকর কারণসমূহকে অগ্রাহ্য করে রিসালাতকে শুধু ওহী ও ঐশী সাহায্যের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করব এবং এ নির্বাহী ও কার্যকর নিয়ামকসমূহ,যেমন স্থান-কাল-পাত্রের ইতিবাচক প্রভাবকে অস্বীকার করব,বরং প্রকৃতপক্ষে এদের প্রভাব বিশ্বের নিয়ম-ব্যবস্থায় এবং সাধারণ সমাজের নিয়মে বিদ্যমান যদিও এ প্রভাব শুধু ঘটনাক্রম এবং যথাস্থানে রিসালাত প্রকাশিত হওয়ার জন্য সাহায্য করে অথবা বিরত রাখে। অতএব,রিসালাত এর বিষয়বস্তুর মতোই প্রকৃতপক্ষে ঐশী। অর্থাৎ তা বস্তুগত শর্তাবলীর ঊর্ধ্বে। কিন্তু তা ঘটনা প্রবাহের পরিবর্তন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনার পরির্বতনের পথে স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে অবতীর্ণ হয়েছে।

অতএব,কথিত আছে যে,যখন আরবের লোকরা নিজেদের  তৈরিকৃত প্রতিমাসমূহকে অথবা তার মতো বৃহত্তর কোন প্রস্তর খণ্ডকে পূজা করত এবং ক্রোধ ও রাগের সময় তারা সেগুলোকে ভেঙ্গে ফেলত অথবা মিষ্টি বস্তুর তৈরি খোদাকে ক্ষুধার সময় খেয়ে ফেলত তখন এ নূতন রিসালাতের প্রতি তারা আকৃষ্ট হয়েছিল।

অথবা কথিত আছে যে,হতভাগ্য আরব সমাজ যা অত্যাচার,বিচ্যুতি,সুদ ও মুনাফাখোরে পরিপূর্ণ ছিল,এ নব আন্দোলনের বানে তা দূরীভূত হয়েছিল এবং ন্যায়পরায়ণতায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ও একটি সুদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অথবা বলা হয়ে থাকে যে,গোত্রীয় প্রভাব এ রিসালাত প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল-হোক তা স্থানীয় প্রভাব,যেমন কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং বিরোধীদের মোকাবিলায় নবী (সা.)-এর বংশীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি অথবা হোক তা গোত্রীয় প্রভাব,যেমন দক্ষিণ আরবের মোকাবিলায় উত্তর আরবের গোত্র প্রভাব।

অথবা বলা হয়ে থাকে যে,তদানিন্তন সময়ের পৃথিবীর অবস্থা এ রিসালাতের বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিল। তখন রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ বিরাজমান ছিল। ফলে পারস্য ও রোমান সাম্রাজের প্রভাব আরব উপদ্বীপে এ রিসালাতের প্রাতিষ্ঠায় কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।

এ ধরনের বক্তব্য বুদ্ধিবৃত্তিক এবং কখনো কখনো গ্রহণযোগ্যও বটে। তবে এটা শুধু ঘটনাসমূহকে ব্যাখ্যা করতে পারে,কিন্তু স্বয়ং রিসালাতকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

রিসালাত

ইসলামের রিসালাতের বৈশিষ্ট্য

ফাতুয়াতুল ওয়াযিহাত

যে রিসালাত জগতের জন্য রহমতস্বরূপ মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে তা হলো ইসলাম।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামে সর্বাগ্রে প্রভুর সাথে মানুষের সম্পর্ক  ও  তার পুনরুত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

অতএব,প্রথমত একক ও সত্যপ্রভুর সাথে মানুষের সম্পর্ক (যিনি মানুষকে সহজাত প্রকৃতি দান করেছেন) এবং প্রভুর একত্বের উপর কঠোর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ ইসলামের সকল কিছু তাওহীদের বাণীلااله الا الله ( আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রভু নাই) এ মূল নীতিবাক্যের উপর নির্ভর করে গঠিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত পুনরুত্থানের সাথে মানুষের সম্পর্ক। কারণ এর মাধ্যমে পরাক্রমশালী একক প্রভু পার্থিব অসামঞ্জস্যগুলোকে১০ দূর করেন এবং তাঁর ন্যায়বিচার বাস্তব রূপ লাভ করে।

ইসলামের রিসালাতের বৈশিষ্ট্যঃ

ইসলামের রিসালাত এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণেই অন্যান্য ঐশী রিসালাত হতে স্বতন্ত্র। কারণ তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক ঐকান্তিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে আছে এ সকল বৈশিষ্ট্যের কারণেই।

নিম্নে এ সকল বৈশিষ্ট্যের কয়েকটি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :

১. এ রিসালাত কোরআনের অকাট্য ভাষ্যসম্বলিত,পবিত্র ও অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান এবং কোন প্রকার ত্রুটি,ভ্রম এতে প্রবেশ করতে পারেনি। অপরদিকে অন্যান্য ঐশী গ্রন্থ ক্রটি-বিচ্যুতিতে পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল এবং আপন সত্য বিষয়বস্তু থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। মহান আল্লাহ বলেন :

اِناَّ نَحْنُ نَزَّلنْاَ الْذِّكْرَ وَ اِناَّ لَهُ لَحاَفِظُونَ .

 “ নিশ্চয় আমরাই এ কোরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং আমরাই উহার রক্ষাকারী। (সূরা হিজর : ৯)

যেহেতু ইসলামের রিসালাত তার বিশ্বাসগত ও বিধানগত বিষয়বস্তু থেকে বিস্মৃত হয়নি সেহেতু তা প্রশিক্ষণ ও (আধ্যাত্মিক) পরিচর্যার ক্ষেত্রে আপন ভূমিকাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে। কারণ যে রিসালাত আপন বিষয়বস্তু থেকে ত্রুটি-বিচ্যুতির মাধ্যমে দূরে সরে যায় তা খোদার সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা হারায়। কারণ এ সম্পর্ক শুধু নামকরণের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নয়,বরং প্রকৃতপক্ষে রিসালাতের মূল বিষয়বস্তুর প্রতিফলন এবং চিন্তা পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে তার রূপদানের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। এ দিক থেকে ইসলামের রিসালাতের সঠিকতা ও নির্ভুলতা কোরআনের বিষয়বস্তুর নির্ভুলতার সাথে সম্পর্কযুক্ত যাতে করে আপন উদ্দেশ্য ও মতবাদকে  প্রতিপাদন করতে পারে।

২. কোরআনের রুহ (অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত) অবিকৃত থাকায় তা কোরআনের ঐশ্বরিকতা প্রমাণের জন্য উত্তম হাতিয়ার। কারণ কোরআন এবং তা হতে উদ্বৃত বিধানসমূহ ও রিসালাতের বিষয়বস্তু হলো পূর্বোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুসারে মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাত ও নবুওয়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত আরোহ যুক্তি। যদবধি কোরআন থাকবে তদোবধি এ দলিলও থাকবে,যা অন্যান্য নবুওয়াত ও রিসালাতের ব্যতিক্রম,যার প্রমাণ স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে কোন নির্দিষ্ট ঘটনা ও বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ছিল এবং যা ঐ নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই প্রযোজ্য ছিল। যেমন অন্ধকে আলো দান এবং কুষ্ঠ রোগীকে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তিদান। কারণ এ ঘটনাগুলো শুধু সমসাময়িক কালের মানুষই উপলব্ধি ও অবলোকন করেছিল এবং সময় ও কালের ধারায় তা বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল,এমনকি স্বয়ং ঐ ঘটনাগুলোও হারিয়ে গিয়েছিল। আর এ কারণেই মানুষ এ সকল ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে এবং তার তাৎপর্যের গভীরে প্রবেশ করতে অপারগ। যে সকল নবুওয়াত ও রিসালাতের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করা অসম্ভব মহান আল্লাহ সে সকল রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও ঐগুলোর সত্যতা প্রমাণের জন্য কোন দায়িত্ব মানুষের উপর অর্পণ করেননি। কারণ :

لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْساً اِلاّ مَا آتاَهاَ

মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন নাই,একমাত্র তাহা ব্যতীত  যাহা তাহার নিকট পৌঁছিয়াছে।

কিন্তু এখন আমরা পূর্বের নবী-রাসূলগণের প্রতি এবং তাঁদের মু জেযার প্রতি কোরআনের তথ্য ও সংবাদ অনুসারে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।

৩. ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে,কালের প্রবাহে ইসলামের রিসালাতের মৌলিক যুক্তির তো কোন প্রকার ঘাটতি হয়ইনি,বরং তা মানব সভ্যতার বিবর্তন ও বিকাশের ধারায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে এ মৌলিক যুক্তিকে এক নবসংযোগ প্রদান করেছে। শুধু তা-ই নয়,কোরআন স্বয়ং এ সমস্ত বিষয়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং এ যুক্তিসমূহকে ও পার্থিব বিভিন্ন ঘটনাকে প্রজ্ঞাবান প্রভুর সাথে সম্পর্কিত করেছে এবং মানুষকে এ রহস্য সম্পর্কে অবগত করেছে। এমনকি মানুষ এমন অনেক বিষয় সম্পর্কে আজ জানতে পেরেছে যা শত শত বছর পূর্বেই এ কোরআনে অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের একজন উম্মী ব্যক্তি কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। আর তাই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আজনিয়ারী(اجنيري ) নামক আরবী ভাষার এক অধ্যাপক বলেছিলেন:

প্রকৃতপক্ষে ফুল-ফলের পরাগায়ণে বাতাসের ভূমিকা সম্পর্কে উটের মালিকেরা (আরবরা) ইউরোপে এর আবিষ্কারের বহু পূর্বেই জানতে পেরেছিল। ১১

৪. এ রিসালাত জীবনের প্রতিটি স্তরের সাথে সমন্বিত। আর এর ভিত্তিতে জীবনের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে-একীভূত করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একসূত্রে-সম্পর্ক স্থাপন করেছে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের মধ্যে।

৫. প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে আনয়নকৃত এ রিসালাতই একমাত্র ঐশী রিসালাত যা মানব জীবনে প্রয়োগ ক্ষেত্রে এক বিরাট সফলতা লাভ করেছে। সর্বোপরি,এ রিসালাত মানব জীবনের বিকাশের মাধ্যমে মানুষকে সত্যের পথে আহবান করেছে।

৬. এ রিসালাত তার প্রায়োগিক পর্যায়ে এসে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। কারণ এর ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়েছে এক সমাজ যারা গ্রহণ করেছে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা। এ রিসালাত এক ঐশী রিসালাত যা পৃথিবীর জন্য প্রেরিত হয়েছে এবং যা সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষের এক ঐতিহাসিক সম্পর্ক সৃষ্টি  হয়েছে অদৃশ্য অজড় জগতের সাথে যা অলৌকিক ও ধারণাতীত।

আর এ ক্ষেত্রেই আমরা ভুল করি। আমরা শুধু বাহ্যিক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই ইতিহাসকে বুঝতে চেষ্টা করি অথবা শুধু বস্তুগত দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা ইতিহাসকে বিচার করি। যার ফলে এ

বস্তুগত বোধ মানুষের সাথে ঐশী বিষয়কে সম্পর্কিত করতে পারে না। অনুরূপ পারে না এ রিসালাতকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে। যেমন এ রিসালাত ঐশী হওয়ার সত্যতা অনুধাবন করতে বা এর ইতিহাস বুঝতে অপারগতা প্রকাশ করে।

৭. এ রিসালাত তার কার্যকারিতাকে শুধু এক বিশেষ সমাজের জন্য সীমাবদ্ধ করেনি,বরং অন্যান্য সমাজেও তার বিস্তৃতি রয়েছে। এর প্রভাব পরিব্যপ্ত করেছে সাড়া বিশ্বজগতকে-সকল যুগকে। এমনকি ইউরোপীয় মনীষীরাও এর প্রভাবের অধীন। যার ফলে অধুনা ইউরোপীয় মনীষিগণ স্বীকার করেছেন যে,ইসলাম তার যাত্রাপথে ঘুমন্ত ইউরোপকে জগ্রত করেছে এবং এক নব দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে।

৮. প্রকৃতপক্ষে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) যিনি এ রিসালাতের বাহক,পূর্ববর্তী সকল নবীর মতোই ঐশী সম্পর্কের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যে পদ্ধতিতে তিনি তাঁর রিসালাত বা ধর্মবাণী প্রচার করেছেন সে দিক থেকে এটা স্বতন্ত্র। এটা এ কারণে যে,তাঁর আনয়নকৃত রিসালাতই হচ্ছে সর্বশেষ রিসালাত। আর এ কারণেই তিনি ঘোষণা করেছেন যে,তিনিই সর্বশেষ নবী। নবুওয়াতের পরিসমাপ্তির পশ্চাতে দু টি তাৎপর্য রয়েছে। প্রথমত না-বোধক তাৎপর্য-যার মাধ্যমে অন্য কোন নবীর আবির্ভাবের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা হয়। দ্বিতীয়ত হ্যাঁ-বোধক তাৎপর্য-যার মাধ্যমে  কিয়ামত পর্যন্ত এ নবুওয়াতের স্থায়িত্বের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়।

নবুওয়াতের সমাপ্তির না-বোধক তাৎপর্যের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে,ইসলামের প্রবর্তনের চৌদ্দ শত বছর অতিক্রান্ত হলেও এর তাৎপর্য বাস্তবের সাথে সঠিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যতদিন সময়ের গতি অব্যাহত থাকবে ইসলামের এ বৈশিষ্ট্যও অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ অন্য কোন নবুওয়াতের আবির্ভাব না ঘটলেও মানব সভ্যতায় মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের মৌলিক ভূমিকার কোন অপনোদন ঘটবে না। কারণ শেষ নবুওয়াত পূর্ববর্তী নবুওয়াতসমূহের প্রতিনিধিত্ব করেছে অর্থাৎ পূর্ববর্তী রিসালাতসমূহের সকল মূল্যবোধকে ধারণ করেছে এবং ক্ষণস্থায়ী ও অস্থায়ী মূল্যবোধসমূহকে দূরে রেখেছে। এভাবে এ রিসালাত তার গতিশীলতায় সকল প্রকার বিবর্তন ও বিকাশের ক্ষেত্রে অতন্দ্র প্রহরী।

وَاَنْزَلْناَ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقاً لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتاَبِ وَمُهَيْمِناً عَلَيْهِ

 “ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছি সত্যগ্রন্থ, যাহা পূর্ববর্তী  গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং ঐগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা ময়েদাহ্ : ৪৮)

৯. প্রভুর যে প্রজ্ঞার কারণে ইসলামের রিসালাতের সাথে সাথে নবুওয়াতের ধারার সমাপ্তি ঘটে সে প্রজ্ঞাই নবুওয়াতের ধারার সমাপ্তিতে উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সৃষ্টিকর্তা কতৃর্ক কাউকে নির্বাচনেরও দাবি করে। আর এ প্রতিনিধিগণই হলেন বারো জন ইমাম,যাঁদের সংখ্যা প্রত্যক্ষ প্রমাণসহকারে সঠিক হাদীসসমূহে নবী (সা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর সত্যতা ও সঠিক হওয়ার ব্যাপারে মুসলমানগণ ঐকমত্য পোষণ করেন।

এ ইমামগণের প্রথম হলেন আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে  আবি তালিব (আ.)। তারপর ইমাম হাসান (আ.),তারপর ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তারপর তাঁর (হুসাইন) সন্তানগণের মধ্য থেকে নয়জন ইমাম। তাঁদের নাম যথাক্রমে আলী ইবনিল হুসাইন আস্ সাজ্জাদ (আ.),মুহাম্মদ ইবনে আলী আল বাকির (আ.),জাফর ইবনে মুহাম্মদ আস্ সাদিক (আ.),মূসা ইবনে জাফর আল কাযেম (আ.),আলী ইবনে মূসা আর-রেযা (আ.),মুহাম্মদ ইবনে আলী আল জাওয়াদ (আ.),আলী ইবনে মুহাম্মদ আল হাদী (আ.),হাসান ইবনে আলী আল আসকারী (আ.) এবং সর্বশেষে মুহাম্মদ ইবনিল হাসান আল মাহ্দী (আ.)।

১০. সর্বশেষ ইমামের অনুপস্থিতিতে (গাইবাত) ইসলাম ফকীহ্গণের হাতে মানুষের দায়িত্ব অর্পণ করেছে এবং ইজতিহাদের (অর্থাৎ কিতাব ও সুন্নাহ্ থেকে শরীয়তের আদেশ-নিষেধ উদ্ধৃত করার জন্য গভীর অনুসন্ধান করা) দ্বারকে খুলে দিয়েছে।

ফাতুয়াতুল ওয়াযিহাত

ফাতুয়াতুল ওয়াযিহাত সেই ইসলামী বিধানের একটি গবেষণামূলক বক্তব্য যে ইসলামী বিধান সর্বশেষ নবীর (সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক তাঁর এবং তাঁর পবিত্র বংশধরগণের উপর) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল।

যখন এ পুস্তিকার শেষ চরণগুলো লিখছিলাম তখন এক নিদারুণ বেদনা ও শ্বাসরুদ্ধকর কষ্ট আমাদের হৃদয়ের নিভৃতে অবস্থান করছিল। কারণ এমন একটি সময়ে অবস্থান করছিলাম যখন ইসলামের বীর সন্তান,অমর শহীদ ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর শাহাদাতের স্মরণ হৃদয়ে বিরাজমান যিনি এমনই এক সময়ে আল্লাহ,রাসূল ও তাঁর রিসালাতের পথে দৃঢ় ও অনড় থাকার জন্য স্বীয় অমূল্য শোণিত উৎসর্গ করেছিলেন। এ রিসালাতকে অটুট রাখার জন্যই নিজেকে এবং স্বীয় অতুলনীয় নির্ভীক সঙ্গীদেরকে মৃত্যুর সম্মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন। সর্বকালে ও সর্বস্থলে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে  রক্ষা ও বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত জনতাকে সাহায্য করার জন্য এবং অত্যাচারীর হস্ত গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য তাঁর কিছু সন্তান ও সাহাবীকেও জালিমের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল। আপামর মুসলিম জনতার অস্তিত্বে বিদ্যমান যে প্রত্যয় ও অনুভূতিকে স্বৈরাচারীরা নিস্তব্ধ ও স্থবির করে দিতে চেয়েছিল শহীদের পিতা ইমাম হুসাইন (আ.) আপন শোণিতপ্রবাহ দিয়ে তাকে গতিশীল করেছিলেন;আর সে সাথে এ শোকাবহ ঘটনাপ্রবাহে তাঁর দৃঢ়তা ও রুধীর ধারায় মুসলিম জনতার অন্তরাত্মায় সংযোজন করেছিলেন এক মহান অনুভূতি।

সুতরাং,হে আমার মহান নেতা! হে আবা আবদাল্লাহ্! এ পুস্তিকার সকল ছওয়াব তোমাকেই উৎসর্গ করলাম। তোমার পবিত্র রক্তের লোহিত ধারায় বেঁচে থাকুক এ সকল দৃঢ় চিন্তা ও চেতনা। তোমার প্রতিবাদধ্বনি ও শহীদের রক্তধারায় এবং তোমার ও তোমার পবিত্র সন্তানগণের রক্তের বিনিময়েই ইতিহাসের পাতা সিক্ত করে নির্ভেজাল রিসালাতের সুগন্ধ আমাদের নিকট পৌঁছেছিল।