আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 61320
ডাউনলোড: 7921

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 61320 / ডাউনলোড: 7921
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

৩৪। সালামাহ্ ইবনে ফাযল আবরাশ (রেই শহরের কাজী)

তিনি মাগাযী (যুদ্ধসমূহ) গ্রন্থের একজন রাবী ও বর্ণনাকারী। গ্রন্থটি ইবনে ইসহাক সংকলিত। সালামাহর বংশীয় নাম আবু আবদুল্লাহ্।

মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে ইবনে মুঈনের সূত্রে বলা হয়েছে-সালামাহ্ আবরাশ রেই শহরের অধিবাসী এবং শিয়া। বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁর বর্ণিত হাদীস রয়েছে যা গ্রহণে কোন অসুবিধা নেই।

মিযানে আবু জারআর সূত্রে বলা হয়েছে রেইয়ের অধিবাসীরা সালামাহর ভ্রান্ত আকীদার কারণে তাঁকে পছন্দ করত না।

আমার মতে তাঁর প্রতি আগ্রহ না থাকা ও তাঁকে পছন্দ না করার কারণ নবীর আহলে বাইতের প্রতি তাদের অনিচ্ছা ও ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর নামের পার্শ্বে সাংকেতিকভাবে আবু দাউদ ও তিরমিযী লিখেছেন কারণ তাঁরা তাঁকে বিশ্বস্ত মনে করতেন এবং তাঁদের হাদীসগ্রন্থে তাঁর বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেছেন।

যাহাবী বলেছেন, তিনি একজন নামাযী,খোদাভীরু ব্যক্তি। ১৯১ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি ইবনে মুঈন হতে বর্ণনা করেছেন, আমরা তাঁর নিকট অনেক কিছু শিক্ষা করেছি ও তাঁর হতে লিখেছি। তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে মাগাযী সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ।

যানীজ বলেছেন, সালামাহকে বলতে শুনেছি : আমি ইবনে ইসহাক হতে মাগাযী গ্রন্থটি দু বার শুনেছি ও শিক্ষালাভ করেছি। তার থেকে মাগাযীর সমপরিমাণ হাদীসও শিক্ষা গ্রহণ করেছি।

 

৩৫। সালামাহ্ ইবনে কুহাইল ইবনে হুসাইন ইবনে কাদিহ ইবনে আসাদ হাযরামী

তাঁর পারিবারিক নাম আবু ইয়াহিয়া। আহলে সুন্নাহর কয়েকজন আলেম তন্মধ্যে ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থের ২০৬ পৃষ্ঠায় এবং শাহরেস্তানী তাঁর মিলাল ওয়ান নিহাল গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় তাঁকে শিয়া রাবীদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।

সিহাহ সিত্তাহর এবং অন্যান্য হাদীসবেত্তাগণ তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

বুখারী ও মুসলিমের মতে তিনি আবু জুহাইফা,সুয়াইদ ইবনে গাফলাহ্,শো বা ও আতা ইবনে আবি রিবাহ হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন।

বুখারীতে কেবল জুনদাব ইবনে আবদুল্লাহ্ হতেই তিনি হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। কিন্তু সহীহ মুসলিমে তিনি কুরাইব,জার ইবনে আবদুল্লাহ্,বুকাইর ইবনে আশায,যাইদ ইবনে কা ব,সা দ ইবনে যুবাইর,মুজাহিদ,আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ,আবু সালামাহ্ ইবনে আবদুর রহমান,মুয়াবিয়া ইবনে সুওয়াইদ,হাবিব ইবনে আবদুল্লাহ্ এবং মুসলিম বাতিন হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

বুখারী ও মুসলিমের দৃষ্টিতে সুফিয়ান সাওরী ও শো বা তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বুখারী ও ইসমাঈল ইবনে খালিদ তাঁর থেকে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। মুসলিমে সাঈদ ইবনে মাসরুক,আকিল ইবনে খালিদ,আবদুল মালিক ইবনে সুলাইমান,আলী ইবনে সালিহ এবং ওয়ালিদ ইবনে হারব শুধু তাঁর থেকেই হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তিনি ১২১ হিজরীর ১০ মুহররম (আশুরার দিনে) মৃত্যুবরণ করেন।

৩৬। সুলাইমান ইবনে সারুদ খুযায়ী (কুফার অধিবাসী)

তিনি ইরাকের শিয়াদের নেতা ছিলেন। লোকজন বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সাথে পরামর্শ করত এবং তিনি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ছিলেন। ইরাকের শিয়ারা ইমাম হুসাইন (আ.)-কে পত্র লিখার জন্য তাঁর ঘরেই সমবেত হয়েছিলেন। যেসকল ব্যক্তি ইমাম হুসাইনের খুনের বদলা নেয়ার দাবীতে আন্দোলন করেছিলেন (তাওয়াবীন) তিনি তাঁদের নেতা ছিলেন। তিনি প্রায় চার হাজার ব্যক্তি নিয়ে ৬৫ হিজরীর রবিউস সানী মাসে কুফার নুখাইলাতে ওবায়দুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদের বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করেন। তাঁরা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হলে আল জাজিরাহ্ নামক স্থানে কঠিন যুদ্ধের পর তাঁরা সকলেই শাহাদাত বরণ করেন। সুলাইমান নিজেও আইনুল ওয়ারদাহ্ নামক স্থানে ইয়াযীদ ইবনে হাছিন ইবনে নুমাইর কর্তৃক তীর বিদ্ধ হয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৩ বছর। মুসাইয়্যেব ইবনে নাজবাহ্ ও তাঁর মাথা মারওয়ান ইবনে হাকামের জন্য সিরিয়ায় পাঠানো হয়।

ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত -এর ৬ষ্ঠ খণ্ডে,ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর আল আসাবা র ১ম খণ্ডে এবং যেসকল ব্যক্তি হাদীসবিদদের জীবনী লিখেছেন তাঁরা সকলেই তাঁর নাম তাঁদের গ্রন্থে লিখেছেন। সকলেই ধর্মপরায়ণতা,খোদাভীতি ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে তাঁর প্রশংসা করেছেন। তিনি উন্নত চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের কারণে তাঁর নিজ গোত্রের মধ্যে বিশেষ প্রভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর সহযোদ্ধা হিসেবে সিফ্ফিনের যুদ্ধে ইসলামের অনেক বড় শত্রুদের নিধন করেছেন।

সুলাইমান আহলে বাইতের শত্রুদের বিপথগামী বলে বিশ্বাস করতেন। মুহাদ্দিসগণ তাঁর হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি রাসূল (সা.) হতে সরাসরি এবং জুবাইর ইবনে মুতয়েমের সূত্রে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু ইসহাক সাবিয়ী এবং আদী ইবনে সাবিত তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুলাইমান সারুদ এই দুই হাদীস গ্রন্থ ছাড়াও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.),উবাই ইবনে কা ব ও ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) হতে হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ামুর,আবদুল্লাহ্ ইবনে ইয়াসার ও অন্যান্যরা তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩৭। সুলাইমান ইবনে তারখান তায়িমী (বসরার অধিবাসী)

কাইস ইমামের দাস এবং একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী। ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং সিহাহ সিত্তাহ্ ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ লেখকগণ তাঁর হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আনাস ইবনে মালিক,আবু মাজায,বকর ইবনে আবদুল্লাহ্,ক্বাতাদাহ্ এবং উসমান নাহ্দী হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সংরক্ষিত আছে। মুসলিমে এরা ছাড়াও অন্যদের হতে তিনি হাদীস নকল করেছেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের সূত্র মতে শো বা,সুফিয়ান সাওরী এবং স্বীয় পুত্র মুয়াম্মার তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমের সূত্রে আরো অনেকেই তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তিনি ১৪৩ হিজরীতে পৃথিবী হতে বিদায় নেন।

৩৮। সুলাইমান ইবনে ক্বারাম ইবনে মায়ায (আবু দাউদ দাবয়ী,কুফী)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে ইবনে হিব্বান সূত্রে বলেছেন, তিনি রাফেযী ও আহলে বাইতের ইমামদের বিষয়ে অতিরঞ্জনকারী।

এতদ্সত্ত্বেও আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং মিযানের বর্ণনা মতে ইবনে আদী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, সুলাইমানের বর্ণিত হাদীস উত্তম এবং সুলাইমান ইবনে আরকাম হতে তাঁর হাদীস অধিকতর গ্রহণযোগ্য। মুসলিম,নাসায়ী,তিরমিযী ও আবু দাউদ তাঁদের সহীহতে তাঁর বর্ণিত হাদীস এনেছেন।

যাহাবী ঐ সকল হাদীসগ্রন্থের সাংকেতিক চি হ্ন তাঁর নামের পার্শ্বে (মিযান গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করেছেন।

সহীহ মুসলিমে বিশুদ্ধ সূত্রে আবুল জাওয়াব সুলাইমান ইবনে ক্বারাম হতে এবং তিনি আ মাশ হতে (মারফু হাদীস) বর্ণনা করেছেন।المرء مع من أحبّ মানুষ তার সঙ্গেই থাকবে (পুনরুত্থিত হবে) যাকে সে ভালবাসে।

তেমনি সুনানের গ্রন্থসমূহে তিনি সাবিত হতে এবং সাবিত আনাস হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন :طلب العلم فريضة على كلِّ مسلم  অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর অপরিহার্য (ফরয)। তাছাড়া তিনি আ মাশ,আমর ইবনে মুররাহ্ ও আবদুল্লাহ্ ইবনে হারিস হতে এবং যুহাইর ইবনে আকমার আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর হতে বর্ণনা করেছেন, হাকাম ইবনে আবুল আস রাসূলের অনুকরণ করত ও রাসূলের বাণীকে বিকৃত করে অশ্লীল ভঙ্গিতে কুরাইশদের নিকট বর্ণনা করত। তাই রাসূল (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশধরদের ওপর লা নত করেছেন।

৩৯। সুলাইমান ইবনে মেহরান কাহেলী আ মাশ (কুফার অধিবাসী)

শিয়া আলেমশ্রেণীর অন্যতম সম্মানিত ব্যক্তি ও মুহাদ্দিস। আহলে সুন্নাহর অনেকেই তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। ইমাম ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে এবং শাহরেস্তানী তাঁর মিলাল ওয়ান নিহাল -এ এটি স্বীকার করেছেন।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে জাওযাজানীর দৃষ্টিতে যুবাইদের পরিচয় পর্বে তাঁর উদ্ধৃতি এভাবে এনেছেন- কুফার অধিবাসীদের মধ্যে একদল লোক ছিল যাঁদেরকে কুফার অধিবাসীরা তাঁদের মাজহাবের কারণে পছন্দ করত না। এরা কুফার মুহাদ্দিসদের শিরোমণি বলে পরিচিত ছিলেন। যেমন আবু ইসহাক,মানসুর,যুবাইদ ইয়ামী,আ মাশ এবং তাঁদের সমপর্যায়ের ও নিকটবর্তী কয়েকজন ব্যক্তি। সততা ও সত্যবাদিতার কারণে লোকজন তাঁদের হাদীস গ্রহণ করত।

এর সঙ্গে তিনি আরো কিছু কথা সংযুক্ত করেছেন যা তাঁর মূর্খতার পরিচয় বহন করে। কিন্তু শিয়া মাজহাবের এ মহান ব্যক্তিবর্গের স্কন্ধে যে গুরুদায়িত্ব রয়েছে এবং নবী (সা.)-এর রেসালতের দায়িত্বের বিনিময়স্বরূপ তাঁর পরিবারের প্রতি ভালবাসা ও নবীর নির্দেশ অনুযায়ী দু টি মূল্যবান ও ভারী বস্তুকে আঁকড়ে ধরার কর্তব্যকে পালন করতে গিয়ে তাঁদের কোন ভয়-ভীতিকে গুরুত্ব দেয়া চলে না তাই আহলে বাইতের শত্রু ও তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী তাঁদের প্রশংসা করুক বা না করুক তা তাঁদের সত্যবাদিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আহলে বাইত বিরোধী ব্যক্তিরা তাঁদের সত্যবাদিতার কারণে নয়,বরং যেহেতু এক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতা ছিল সেহেতু বাধ্য হয়ে এই মুহাদ্দিসগণের মুখাপেক্ষী হয়েছে। তারা যদি এদের হাদীসগুলো গ্রহণ না করত তবে মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের সকল প্রভাব ও চি হ্ন মুছে যেত যেমনটি যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে আবান ইবনে তাগলিবের পরিচয় দিতে গিয়ে স্বীকার করেছেন।

আমার ধারণা,মুগীরাহ্ যে বলত, আবু ইসহাক ও আ মাশ কুফার অধিবাসীদের ধ্বংস করবে এর কারণ তাঁরা দু জনই শিয়া ছিলেন। নতুবা আবু ইসহাক ও আ মাশ জ্ঞানের সমুদ্র ও রাসূলের হাদীসের সংরক্ষক ছিলেন। আ মাশের জীবনে আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা ঘটেছে যা তাঁর মর্যাদা ও সম্মানের প্রমাণ। যেমন :

ক) ইবনে খাল্লেকান তাঁর ওয়াফায়াতুল আইয়ান গ্রন্থে আ মাশের জীবনী লিখতে গিয়ে বলেছেন,উমাইয়্যা খলীফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিক আ মাশের নিকট একজন দূত পাঠিয়ে হযরত উসমানের গুণ এবং আলীর খারাপ দিকগুলো সমন্বিত করে একটি গ্রন্থ রচনা করতে বলল। আ মাশ পত্রটি গ্রহণ করে ভেড়ার মুখে দিলে ভেড়া তা চাবিয়ে খেয়ে ফেলে এবং আ মাশ দূতকে বলেন : হিশাম ইবনে আবদুল মালিককে গিয়ে বল এটি তার প্রস্তাবের জবাব। দূত বলল : হিশাম শপথ করেছে তোমার লিখিত জবাব না নিয়ে গেলে আমাকে হত্যা করবে। দূত আ মাশের ভ্রাতা ও বন্ধুদের মাধ্যমে আ মাশকে পত্রের জবাব লিখতে আহবান জানাল। অনেক পীড়াপীড়ির পর আ মাশ লিখলেন : বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম। যদি উসমান পৃথিবীপূর্ণ ফজীলতসম্পন্ন হন তাহলে তা আপনার কোন উপকারে আসবে না আর যদি আলী (আ.) সারা বিশ্বের সব খারাপ বৈশিষ্ট্য ধারণ করেন (নাউজুবিল্লাহ্) আপনার তাতে কোন ক্ষতি হবে না,বরং আপনার উচিত হবে নিজের বিষয়ে চিন্তা করা। ওয়াসসালাম।

খ) ইবনে আবদুল বার বিভিন্ন আলেমদের পরস্পর সাক্ষাতের বিভিন্ন ঘটনা তাঁর জামেয়ু বায়ানিল ইলম ও ফাজলুহু গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর গ্রন্থে আলী ইবনে খাশরাম হতে বর্ণনা করেছেন,

ফযল ইবনে মূসাকে বলতে শুনেছি,আবু হানীফার সঙ্গে আ মাশকে দেখতে গিয়েছিলাম। আবু হানীফা বললেন : যদি আপনার জন্য কষ্ট না হত তবে আমি আপনাকে দেখার জন্য আরো অধিক আসতাম। আ মাশ জবাবে বললেন : আল্লাহর শপথ,আপনি যদি আপনার ঘরেও থাকেন তা আমার জন্য সহ্য করা কঠিন সেক্ষেত্রে আপনার চেহারা দেখা ও সহ্য করা আরো কঠিন। ইবনে খাশরাম বলেন, ফযল বলেছেন : যখন আ মাশের ঘর হতে বেরিয়ে আসলাম,আবু হানীফা আমাকে বললেন : আ মাশ কোন মাসেই রোযা রাখেন না।

ইবনে খাশরাম বলেন,ফযলকে প্রশ্ন করলাম, আবু হানীফার এটি বলার উদ্দেশ্য কি? ফযল বললেন, তাঁর উদ্দেশ্য হলো এটি বুঝানো যে,আ মাশ সেহরীর ক্ষেত্রে হুজাইফা বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। (*১৯)

আমার মতে বরং তিনি কোরআনের এ আয়াত অনুযায়ী আমল করতেন-

( و كلوا و اشربوا حتّى يتبيّن لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر,ثمّ أتِمّوا الصّيام إلى الّليل)

 খাও ও পান কর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের জন্য সাদা রেখা কাল রেখা হতে পৃথক না হয়। অতঃপর তোমাদের রোযাকে রাত্রি পর্যন্ত পূর্ণ কর। (সূরা বাকারা : ১৮৭)

গ) ওয়াজিযাহ্ গ্রন্থের লেখক এবং আল্লামাহ্ মাজলিসী তাঁর বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে হাসান ইবনে সাঈদ নাখয়ী হতে এবং তিনি শারিক ইবনে আবদুল্লাহ্ কাজী হতে বর্ণনা করেছেন, অসুস্থতায় আ মাশ মৃত্যুবরণ করেন,সেই অসুস্থতার সময় তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি যখন সেখানে অবস্থান করছিলাম ইবনে শাবরামাহ্,ইবনে আবি লাইলা এবং আবু হানীফা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ও তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি জবাব দিলেন : দুর্বল হয়ে পড়েছি;নিজের গুনাহ্ ও ভুলের কারণে ভীত ও ক্রন্দনরত আছেন বলে জানালেন। আবু হানীফা তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন : হে আবু মুহাম্মদ! আল্লাহকে ভয় কর,নিজের ভেতর প্রত্যাবর্তন কর,হযরত আলী সম্পর্কে তুমি যে হাদীসগুলো বলেছ তা ফিরিয়ে নাও। আ মাশ বললেন : তুমি আমাকে এরূপ বলছ? তাঁকে সেখান থেকে চলে যেতে বললেন ও তাঁর তীব্র সমালোচনা করলেন।

মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে যাহাবী বলেছেন, তিনি বিশ্বস্ত রাবীগণের শীর্ষস্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত ও নির্ভরযোগ্য। ইবনে খাল্লেকানও তাঁর ওয়াফায়াতুল আ য়ান গ্রন্থে তাঁকে প্রসিদ্ধ আলেম,সত্যবাদী,নির্ভরযোগ্য,পরহেজগার ও ন্যায়পরায়ণ বলে উল্লেখ করেছেন।

সিহাহ সিত্তাহ্ ও অন্যান্য হাদীস লেখকগণ তাঁর বর্ণিত হাদীসের ওপর নির্ভর করেছেন ও প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করেছেন। আপনি এজন্য সাঈদ ইবনে ওয়াহাব,সাঈদ ইবনে যুবাইর,মুসলিম বাতিন,শো বা,মুজাহিদ,আবু ওয়াইল,ইবরাহীম নাখয়ী ও আবু সালিহ যাকরান হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ এবং তাঁর হতে শো বা,সুফিয়ান সাওরী,ইবনে উয়াইনা,আবু মুয়াবিয়া মুহাম্মদ,আবু আওয়ানাহ্,জারির এবং হাফছ ইবনে গিয়াছ যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে দেখতে পারেন।

মাশ ৬১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ ও ১৪৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।

ش

৪০। শারিক ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে সিনান ইবনে আনাস নাখয়ী (কুফার কাজী)

ইবনে কুতাইবা তাঁকে শিয়া রিজাল বলেছেন ও তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁর শিয়া হবার বিষয়টি অকাট্য বলে স্বীকার করেছেন।

মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে আবদুল্লাহ্ ইবনে ইদরিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন যে,শারিক শিয়া।

আবদুল্লাহ্ ইবনে ইদরিস ছাড়াও আবু দাউদ রাহাওয়াইহর উদ্ধৃতি দিয়ে মিযানে বলা হয়েছে তিনি শারিককে বলতে শুনেছেন-عليّ خير البشر فمن أبى فقد كفر আলী সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ,যে তা অস্বীকার করে,সে কাফির।১০৪ আমার মতে রাসূল (সা.)-এর পর আলী (আ.) শ্রেষ্ঠ মানুষ যেমনটি শিয়ারা বিশ্বাস করে। এ কারণেই জাওযাজানী যিনি আমাদের পথ হতে বিচ্যুত,তদুপরি তিনি শারিকের প্রশংসা করেছেন।

মিযানুল ই তিদাল -এর সূত্রে শারীক ঐ সকল ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাঁরা আলী (আ.)-এর খেলাফতের সপক্ষে সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি আবু রাবীয়া আইয়াদীর সূত্রে ইবনে বুরাইদা হতে এবং তিনি তাঁর পিতা হতে অবিচ্ছিন্ন সূত্রে (সহীহ ও মারফু হাদীস) রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন-

لكلّ نبيّ وصيّ و وارث و إن عليّا وصيّي و وارثي অর্থাৎ সকল নবীরই প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী রয়েছে,আলী আমার স্থলাভিষিক্ত ও উত্তরাধিকারী।

শারিক আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর গুণ ও ফাজায়েল বর্ণনা করতেন ও এর মাধ্যমে বনি উমাইয়্যার সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করতেন।

ইবনে খাল্লেকানের ওয়াফায়াতুল আ য়ান গ্রন্থে শারিকের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে দুররাতুল গাউছ গ্রন্থের লেখক হারিরীর সূত্রে (ঐ গ্রন্থ হতে) বর্ণনা করেছেন। শারিকের একজন উমাইয়্যা বন্ধু ছিল। একদিন শারিক আলীর ফজীলত বর্ণনা করে একটি হাদীস বর্ণনা করলে উমাইয়্যা বন্ধুটি বলল,نعم الرجل عليّ অর্থাৎ আলী কত ভাল মানুষ! এ কথা শুনে শারিক রাগান্বিত হয়ে বললেন, আলী (আ.)-কে শুধু একজন ভাল মানুষ বলেই শেষ করলে,এর সঙ্গে উত্তম কিছু যোগ না করেই। ১০৫  

মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে ইবনে আবি শাইবা আলী ইবনে হাকীম হতে এবং তিনি আলী ইবনে কাদিম হতে বর্ণনা করেছেন, ইতাব ও আরেকজন ব্যক্তি শারিকের নিকট আগমন করলে ইতাব শারিককে বললেন : লোকেরা বলে আপনি খেলাফতের বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে আছেন। শারিক এর জবাবে তাঁকে বললেন : হে মূর্খ! কিরূপে আমি খেলাফতের বিষয়ে সন্দেহে থাকব যখন আমি সব সময় ইচ্ছা করি যদি সম্ভব হত আলী (আ.)-এর সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করে তাঁর শত্রুদের রক্তে আমার তরবারী রঞ্জিত করতে পারতাম!

যদি কেউ শারিকের জীবনপদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে,তিনি আহলে বাইতকে ভালবাসতেন এবং তাঁদের বন্ধুদের নিকট হতে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছেন।

মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে শারিকের পুত্র আবদুর রহমান হতে বর্ণনা করা হয়েছে,তিনি বলেন, আমার পিতা জাবির জো ফী হতে দশ হাজার মাসআলা এবং বিভিন্ন আশ্চর্যজনক ও কঠিন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন।

মিযানুল ই তিদাল -এ আবদুল্লাহ্ ইবনে মুবারক হতে বলা হয়েছে, শারিক কুফার আলেম ও হাদীসবিদদের মধ্যে সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা হতে অধিকতর জ্ঞানী ছিলেন। তিনি আলী বিদ্বেষীদের প্রতি চরম শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন ও তাদের প্রতি কটু কথা বলতেন।

আবদুস্ সালাম ইবনে হারব তাঁকে বললেন, আপনি কি আপনার এক ভ্রাতাকে দেখতে যাবেন? তিনি বললেন, কে তিনি? বলা হলো, মালিক ইবনে মুগুল। শারিক বললেন, যে ব্যক্তি আলী (আ.) ও আম্মারের দোষ ধরে ও তাঁদেরকে ছোট মনে করে সে আমার ভাই নয়।

একবার তাঁর সামনে মুয়াবিয়া সম্পর্কে কথা উঠলে কেউ একজন মুয়াবিয়াকে সহনশীল বলে প্রশংসা করলে শারিক বললেন, যে ব্যক্তি সত্যকে চিনে না ও সত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় (আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে) সে ব্যক্তি সহনশীল হতে পারে না।

শারিক সেই ব্যক্তি যে আসেম ইবনে যার হতে এবং তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে সহীহ সনদে (হাদীসে মারফু) মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, যখন মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বারে দেখবে তখন তাকে হত্যা কর। ১০৬

উপরোক্ত ঘটনাসমূহ যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন (শারিকের পরিচিতি অধ্যায়ে)।

ওয়াফায়াতুল আ য়ান গ্রন্থে শারিকের পরিচিতি অধ্যায়ে এসেছে,একবার আব্বাসীয় খলীফা মাহ্দীর সামনে শারিক ও মুসআব ইবনে আবদুল্লাহর মধ্যে বাক্য বিনিময় হয়। মুসআব তাঁকে বলে, তুমি তো সেই ব্যক্তি যে হযরত আবু বকর ও উমরের ভুল ধরে সমালোচনা কর...।

শিয়া বিষয়ে এতটা কঠোর হওয়া সত্ত্বেও যাহাবী তাঁকে সত্যবাদী ও হাদীস সংরক্ষণকারীদের শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম বলেছেন এবং ইবনে মুঈন হতে নকল করেছেন, তিনি সত্যবাদী ও নির্ভরযোগ্য। শারিকের পরিচিতি পর্বের শেষ অংশে বলেছেন, শারিক জ্ঞানের একজন উত্তম সংরক্ষক ও ধারক ছিলেন। ইসহাক আযরাক তাঁর হতে ৯ হাজার হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন। আবু তওবা হালাবী বলেছেন, আমরা রামাল্লায় থাকাকালীন আলোচনা উঠেছিল বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ রাবী কে? কেউ বললেন,ইবনে লাহিয়াহ্,কেউ বললেন,আনাস ইবনে মালিক। এ বিষয়ে ঈসা ইবনে ইউনুসকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন : মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ রাবী বর্তমানে শারিক,যতদিন তিনি জীবিত আছেন।

মুসলিম ও সুনানে আরবাআহর হাদীস সংকলকগণ শারিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এজন্য যেসকল হাদীস তিনি যিয়াদ ইবনে আলাকা,আম্মার দাহনী,হিশাম ইবনে উরওয়াহ্,ইয়ালী ইবনে আতা,আবদুল মালিক ইবনে উমাইর,আম্মারাহ্ ইবনে ক্বাক্বা,আবদুল্লাহ্ ইবনে শাবরামাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন ও ইবনে আবী শাইবাহ্,আলী ইবনে হাকীম,ইউনুস ইবনে মুহাম্মদ,ফযল ইবনে মূসা,মুহাম্মদ ইবনে সাব্বাহ্ এবং আলী ইবনে হাজার তাঁর হতে বর্ণনা করেছেন তা অধ্যয়ন করুন।

তিনি খোরাসান অথবা বুখারায় ৯৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৭৭ বা ১৭৮ হিজরীর জিলক্বদের প্রথম শনিবার কুফায় ইন্তেকাল করেন।

৪১ শো বাহ্ ইবনে হাজ্জাজ, আবুল ওয়ারদ্ আতকী ( ওয়াসিতের অধিবাসী কিন্তু বসরায় জীবন কাটান, তাঁর বংশগত নাম আবু বুসতাম) (*২০)

তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইরাকে হাদীসবিদদের অবস্থার মূল্যায়নের কাজ শুরু করেন এবং দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী ও তাঁদের বর্ণিত হাদীস হতে দূরে সরে আসেন।

আহলে সুন্নাহর কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত আলেম ও ব্যক্তিত্ব যেমন ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে এবং শাহরেস্তানী তাঁর মিলাল ওয়ান নিহাল -এ তাঁকে শিয়া রিজালের (হাদীসবিদ) অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।

সিহাহ সিত্তাহ্ ও অন্যান্য হাদীস লেখকগণ তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে তাঁর বর্ণিত হাদীস রয়েছে। এ দুই হাদীসগ্রন্থে তিনি আবু ইসহাক সাবিয়ী,ইসমাঈল ইবনে আবি খালিদ,মানসুর,আ মাশ ও অনেকের থেকেই হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং মুহাম্মদ ইবনে জা ফর,ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ কাত্তান,উসমান ইবনে জাবালাহ্ ও অন্যান্যরা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তিনি ৮৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ ও ১৬০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করুন।

ص

৪২। সা সাআহ্ ইবনে সাউহান ইবনে হাজার ইবনে হারিস আবদী

ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থের ২০৬ পৃষ্ঠায় তাঁকে প্রসিদ্ধ রাবীদের সারিতে ফেলেছেন। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন, তিনি হযরত আলী (আ.)-এর সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন ও যুদ্ধে তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। তিনি একজন বাগ্মী ও আলীর বিশেষ সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ও তাঁর দু ভাই জাহিদ ও সাইহান উষ্ট্রের যুদ্ধে হযরত আলীর পক্ষে যুদ্ধ করেন। সাইহান সা সাআহ্ হতে অধিকতর বাগ্মী ছিলেন,তাই বক্তব্য দানের বিশেষ দায়িত্বও তাঁর ওপর ছিল ও উষ্ট্রের যুদ্ধের (জঙ্গে জামাল) পতাকা তাঁর হাতেই ছিল এবং এ যুদ্ধেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন।১০৭ তাঁর অন্যতম ভ্রাতা যাইদও এ যুদ্ধে শহীদ হন এবং তাঁর মৃত্যুর পর পতাকা ধারণ করেন সা সাআহ্ ইবনে সাউহান।

ইবনে সা দ আরো বলেছেন, সা সাআহ্ হযরত আলী (আ.) ও আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যদিও তিনি একজন নির্ভরযোগ্য রাবী তদুপরি কম হাদীস নকল করেছেন।

ইবনে আবদুল বার তাঁর ইসতিয়াব গ্রন্থে বলেছেন, সা সাআহ্ রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই ইসলাম গ্রহণ করেন কিন্তু সে সময়ে তাঁর বয়স কম থাকায় রাসূলের সান্নিধ্যে আসতে পারেন নি।

তিনি তাঁর গোত্র আবদ কাইসের নেতা ছিলেন এবং বাগ্মী,ভাষার অলঙ্কারশাস্ত্রে পণ্ডিত,বুদ্ধিমান,মিষ্টভাষী,ধর্মপরায়ণ ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হযরত আলীর বিশেষ সাহাবীদের মধ্যে পরিগণিত হতেন।

ইবনে আবদুল বার ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন হতে বর্ণনা করেছেন যে,সা সাআহ্,যাইদ ও সাইহান সাউহানের এ তিন পুত্রই ভাল বক্তা ছিলেন এবং যাইদ ও সাইহান উষ্ট্রের যুদ্ধে নিহত হন।

তিনি আরো বলেছেন, হযরত উমরের খেলাফতকালে একবার একটি সমস্যা দেখা দিলে তিনি সকলের নিকট পরামর্শ চাইলেন। সকলেই যখন নিশ্চুপ রইলেন যুবক সা সাআহ্ নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে সঠিক পরামর্শ দান করলেন। খলীফাসহ সবাই তাতে সন্তুষ্ট হলেন।

সুতরাং এটি আশ্চর্যের কোন বিষয় নয় যে,সাউহানের পুত্ররা সবাই আরবের মর্যাদাপূর্ণ ও শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁদেরকে প্রসিদ্ধ ও বিশেষ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তিনি আরো বলেন, সাউহানের সন্তানরা হলেন যাইদ ইবনে সাউহান,সা সাআহ্ ইবনে সাউহান ও সাইহান ইবনে সাউহান এবং তিনি বনি আবদে কাইসের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে যাইদ ভাল হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন : যাইদ এক উত্তম ব্যক্তি যার হাত কাটা যাবে এবং জুনদুবও এক উত্তম ব্যক্তি। রাসূলকে বলা হলো : কেন দু ব্যক্তির কথা বলছেন? রাসূল বললেন : তাদের একজনের হাত তার হতে ত্রিশ বছর পূর্বে বেহেশতে প্রবেশ করবে ও অপরজন তরবারীর মাধ্যমে সত্য থেকে মিথ্যাকে পৃথক করবে।

তিনি এও বলেছেন, তাদের একজন হলো যাইদ ইবনে সাউহান,জালূলার যুদ্ধে তাঁর হাত কর্তিত হয় এবং জঙ্গে জামালে তিনি আলী (আ.)-এর সঙ্গে ছিলেন এবং আলীকে বললেন : হে আমীরুল মুমিনীন! আমি এবার নিজেকে নিহত হতে দেখতে পাচ্ছি। ইমাম তাঁকে বললেন : কিরূপে তুমি তা জান,হে আবু সুলাইমান? তিনি বললেন : স্বপ্নে দেখেছি আমার কর্তিত হাত আসমান হতে নেমে এসেছে ও আমাকে টেনে ওপরে নিতে চাচ্ছে। আমর ইবনে ইয়াসরেবী এ যুদ্ধে তাঁকে শহীদ করে ও তাঁর ভ্রাতা সাইহানকেও সেদিন হত্যা করে।

এ বিষয়টি কারো অজানা নয় যে, যাইদের হাত তাঁর অনেক পূর্বেই বেহেশতে প্রবেশ করবে রাসূলের এ ভবিষ্যদ্বাণী সকল মুসলমানের দৃষ্টিতেই নবুওয়াতের প্রমাণ,ইসলামের অন্যতম মু জিযা ও সত্যপন্থীদের পক্ষে দলিল। যেসকল ব্যক্তি যাইদ সম্পর্কে লিখেছেন তাঁদের সকলেই তাঁর বিষয়ে রাসূলের এ কথাটি বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসগণ তাঁর সূত্রে এ হাদীসটি রাসূল হতে বর্ণনা করেছেন। এজন্য হাদীসগ্রন্থসমূহ ও অন্যান্য গ্রন্থ যেখানে যাইদের পরিচিতি বর্ণনা করা হয়েছে যেমন ইসতিআব আল ইসাবাহ্ গ্রন্থের শরণাপন্ন হতে পারেন।

সুতরাং শিয়া হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (সা.) তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সকল প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের জন্য।

আসকালানী তাঁর আল ইসাবাহ্ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে সা সাআহ্ সম্পর্কে বলেছেন, তিনি হযরত আলী ও উসমান হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সিফ্ফিনের যুদ্ধে তিনি হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি একজন মিষ্টভাষী ও বাগ্মী ব্যক্তি ছিলেন এবং মুয়াবিয়ার সঙ্গে তাঁর শত্রুতা ছিল।

আসকালানী আরো বলেছেন, শা বী বলেছেন : আমি সা সাআহ্ হতে বক্তব্য দান পদ্ধতি শিক্ষা গ্রহণ করেছি। ১০৮

আবু ইসহাক সাবিয়ী,মিনহাল ইবনে আমর,আবদুল্লাহ্ ইবনে বুরাইদা ও অন্যান্যরা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আলাঈ কয়েকটি সূত্রে উল্লেখ করেছেন, মুগীরাহ্ ইবনে শো বা মুয়াবিয়ার নির্দেশে তাঁকে কুফা হতে আল জাজিরাহ্ বা বাহরাইনে নির্বাসন দেয় এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। যেরূপ উসমান আবু যার গিফারীকে বাবযায় নির্বাসন দেন এবং তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।

যাহাবী সা সাআহ্ সম্পর্কে বলেছেন, তিনি হাদীস বর্ণনায় প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। ইবনে সা দ ও নাসায়ী তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যাহাবী তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে নাসায়ী কর্তৃক তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

আমার মতে যাঁরা তাঁর হাদীস ব্যবহার হতে বিরত থেকেছেন তাঁরা নিজেদেরই ক্ষতি করেছেন ও নিজেদের প্রতি অবিচার করেছেন,তাঁর প্রতি নয়।