আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 61814
ডাউনলোড: 8010

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 61814 / ডাউনলোড: 8010
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

৮০। মুহাম্মদ ইবনে ফুযাইল ইবনে গাযওয়ান (আবু আবদুর রহমান কুফী)

ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৭১ পৃষ্ঠায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত এবং প্রচুর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি শিয়া মতাবলম্বী। সা দ তাঁর কোন কোন হাদীস দলিল হিসাবে গ্রহণ করতেন না।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থের শেষে যে সকল রাবী তাঁদের পিতার মাধ্যমে পরিচিত তাঁদের পরিচয় দান করতে গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি শিয়া ও সত্যবাদী। মুহাম্মদ নামধারীদের তালিকায় তাঁর নাম স্মরণ করে বলেছেন,আহমাদ তাঁকে শিয়া বলেছেন,তিনি সত্যবাদী এবং সুন্দর ও সঠিক হাদীস বর্ণনাকারী। আবু দাউদ তাঁকে উগ্র ও কট্টর শিয়া বলে অভিহিত করে বলেছেন,তিনি প্রসিদ্ধ হাদীসবিদদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হামযাহর জন্য কোরআন পাঠ করতেন।

যাহাবী সংকলিত গ্রন্থের কথা বলতে গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ইবনে মুঈন তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আহমাদ তাঁকে ভাল বলেছেন। নাসায়ী বলেছেন : কোন সমস্যা নেই।

সিহাহ সিত্তাহর হাদীসবিদগণ তাঁর হাদীস দলিল হিসাবে গ্রহণ ও পেশ করেছেন। যে সকল হাদীস তিনি তাঁর পিতা ফুযাইল,আ মাশ,ইসমাঈল ইবনে আবি খালিদ ও অন্যান্যদের হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। বুখারীর বর্ণনানুসারে মুহাম্মদ ইবনে নুমাইর,ইসহাক হানযালী,ইবনে আবি শাইবা,মুহাম্মদ ইবনে সালাম,কুতাইবা,ইমরান ইবনে মাইসারাহ্ এবং আমর ইবনে আলী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

মুসলিমের মতানুসারে আবদুল্লাহ্ ইবনে আমের,আবু কুরাইব,মুহাম্মদ ইবনে তারিফ,ওয়াসেল ইবনে আবদুল আলা,যুহাইর,আবু সাঈদ আশাজ,মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ,মুহাম্মদ ইবনে মুসান্না,আহমাদ ওয়াকিয়ী এবং আবদুল আযীয ইবনে উমর ইবনে আবান তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তিনি ১৯৫ হিজরীতে মতান্তরে ১৯৪ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।

৮১। মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম তায়েফী

ইমাম সাদিক (আ.)-এর প্রসিদ্ধ সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। শাইখুত তায়েফাহ্ আবু জা ফর তুসী তাঁকে শিয়া রিজাল বলেছেন। হাসান ইবনে আলী ইবনে দাউদ১১৯ বিশ্বস্ত রাবীদের তালিকায় তাঁকে স্মরণ করেছেন।

যাহাবী তাঁর পরিচিতি পর্বে ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন ও অন্যদের হতে তাঁর নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এবং বলেছেন, কাছনী,ইয়াহিয়া ইবনে ইয়াহিয়া ও কুতাইবা তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবদুর রহমান ইবনে মাহ্দী মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম সম্পর্কে বলেছেন, তাঁর লিখিত গ্রন্থসমূহ সঠিক ও নির্ভরযোগ্য (সহীহ)। মা রুফ ইবনে ওয়াসেল বলেছেন, সুফিয়ান সাওরীকে তাঁর নিকট হাঁটু গেঁড়ে বসে হাদীস লিখতে দেখেছি।

আমার মতে যাঁরা তাঁকে দুর্বল বলে উপেক্ষা করেছেন তাঁদের এ উপেক্ষার কারণ তাঁর শিয়া হওয়া। কিন্তু তাঁকে দুর্বল বলার এ প্রচেষ্টা তাঁর কোনই ক্ষতি করে নি। ওযু সম্পর্কে আমর ইবনে দিনার হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে রয়েছে।

তাবাকাতে ইবনে সাদ -এ যেভাবে উদ্ধৃত হয়েছে তাতে ওয়াকী ইবনে জাররাহ্,আবু নাঈম,মুঈন ইবনে ঈসা ও অন্যান্যরা তাঁর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন। তিনি ১৭৭ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর সমনামী মুসলিম ইবনে জাম্মাযও একই বছর ইন্তেকাল করেন বলে ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৫ম খণ্ডে তাঁর পরিচিতি পর্বে উল্লেখ করেছেন।

৮২। মুহাম্মদ ইবনে মূসা ইবনে আবদুল্লাহ্ ফিতরী (মদীনার অধিবাসী)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর শিয়া হবার বিষয়টি আবু হাতেম হতে এবং বিশ্বস্ততার বিষয়টি তিরমিযী হতে উল্লেখ করেছেন। তাঁর নামের পাশে সাংকেতিক চিহ্নে মুসলিম ও সুনানে আরবাআহ্ লিখেছেন এটি বোঝানোর জন্য যে,তাঁরা তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু তালহা হতে যে হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিমের আত্ ইমাহ্ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

তিনি মাকবারী ও তাঁর পর্যায়ের কয়েকজন হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবি ফাদিক,ইবনে মাহদী,কুতাইবা ও সমপর্যায়ের অনেকেই তাঁর হতে হাদীস নকল করেছেন।

৮৩। মুয়াবিয়া ইবনে আম্মার দোহনী বাজালী কুফী

শিয়াদের মধ্যে তিনি পরিচিত ও উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং বিশ্বস্ত। তাঁর পিতা আম্মার সেসব ব্যক্তিত্বের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা দৃঢ়তা ও সত্যের পথে অটল থাকার আদর্শ হিসেবে প্রবাদ পুরুষে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি আল্লাহর পথে অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করে ধৈর্যশীলদের নমুনা হয়েছিলেন। অত্যাচারী শাসকরা শিয়া হবার কারণে তাঁর পা কেটে দিয়েছিল। তাতেও তিনি কখনও কোন দুর্বলতা প্রদর্শন করেন নি বা পিছিয়ে আসেন নি,বরং ধৈর্য ও সহনশীলতা দেখিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত অবিচল ছিলেন। তাঁর পুত্র মুয়াবিয়াও পিতার পথকে আঁকড়ে ধরে রাখেন। সন্তান পিতার প্রতিকৃতি(الولد سرّ أبيه)

যে ব্যক্তি এরূপ পিতার সদৃশ,তিনি ভুল পথে যেতে পারেন না,তিনি ইমাম সাদিক ও ইমাম কাযেম (আ.)-এর সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত ও তাঁদের জ্ঞানের ধারক ও বাহক।

তিনি কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। আমরা সনদসহ তাঁর হতে বর্ণিত হাদীসগুলো উল্লেখ করেছি। ইবনে আবি উমাইর ও অন্যান্য শিয়া রাবী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসলিম ও নাসায়ী তাঁর বর্ণিত হাদীস প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যুবাইর হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে রয়েছে। মুসলিমের বর্ণনানুসারে ইয়াহিয়া ইবনে ইয়াহিয়া ও কুতাইবা তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুয়াবিয়া তাঁর পিতা আম্মার এবং তাঁর পর্যায়ের অনেকের হতেই হাদীস নকল করেছেন। আহলে সুন্নাহর হাদীস গ্রন্থসমূহে এ রেওয়ায়েতগুলো রয়েছে।

তিনি ১৭৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

৮৪। মা রুফ ইবনে খারবুয কারখী (ইবনে ফিরুজ ও ইবনে আলী নামেও পরিচিত)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি সত্যবাদী ও শিয়া। তিনি তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে বুখারী,মুসলিম ও আবু দাউদ লিখেছেন,কারণ তাঁরা তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর মতে তিনি আবু তুফাইল হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং রাবী হিসেবে কম হাদীস বর্ণনাকারী। আবু আছেম,আবু দাউদ,উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা ও অন্যান্যরা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু হাতেম বলেছেন, তাঁর হাদীস সহীহ তাই অবশ্যই তা লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত।

ইবনে খাল্লেকান তাঁর ওয়াফায়াতুল আ য়ান গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি দাসশ্রেণীর এবং আলী ইবনে মূসা রেযা (আ.)-এর ভক্তদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাঁর উপদেশবাণীর একটিতে বলেছেন, আমি আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছি ও আমার যা কিছু ছিল তা আমার মাওলা আলী ইবনে মূসা রেযা (আ.)-এর খেদমতে নিয়োজিত করেছি।

ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।

মুসলিম তাঁর হাদীস প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁর সহীহতে হজ্ব অধ্যায়ে আবু তুফাইল হতে তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ২০০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

৮৫। মানসুর ইবনে মো তামার ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে রাবীয়া সালামী কুফী

তিনি ইমাম বাকির ও সাদিক (আ.)-এর সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত এবং তিনি তাঁদের নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন। মুনতাহাল মাকাল ফি আহওয়ালির রিজাল গ্রন্থে তা উদ্ধৃত হয়েছে।

ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং জাওযাজানী তাঁকে সে সকল মুহাদ্দিসের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন যাঁদের মাজহাবগত আকীদার (ধর্মের মৌল ও শাখাগত বিষয়ে) কারণে লোকেরা তাঁদের পছন্দ করত না। এজন্যই তিনি বলেছেন, কুফার লোকদের মধ্যে একদল ছিলেন যাঁদের মাজহাবের কারণে জনসাধারণ তাঁদের পছন্দ করত না,তাঁরা কুফার মুহাদ্দিসদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন,যেমন আবু ইসহাক,মানসুর,যুবাইদ ইয়ামী,আ মাশ এবং তাঁদের নিকটবর্তী ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাঁদের মুখের বিশ্বস্ততার কারণে তাঁদেরকে গ্রহণ করত।

আমার প্রশ্ন হলো কি বিষয়ে এই সত্যপরায়ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাদের শত্রুতার কারণ ঘটেছিল? তাঁরা নবীর আহলে বাইত হতে যা এসেছে তার প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন বলে? নাকি যে মূল্যবান ভারী বস্তুকে আঁকড়ে ধরার জন্য রাসূল (সা.) বলেছিলেন তা আঁকড়ে ধরার কারণে? যেহেতু তাঁরা মুক্তির তরণিতে আরোহণ করেছিলেন,নবীর জ্ঞানের শহরের দ্বার দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন এবং তাঁরা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে সব সময় ক্রন্দন করতেন ও নবীর সুন্নাহকে তাঁর বংশধরদের অনুসরণের মাধ্যমে জীবিত রেখেছিলেন এরূপ বিষয়গুলোই তাঁদের প্রতি শত্রুতার আগুন জ্বালিয়েছিল। তাঁদের জীবনী অধ্যয়নে আমাদের নিকট তাই প্রমাণিত হয়।

ইবনে সা দ মানসুরের পরিচিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, আল্লাহর ভয়ে অধিক ক্রন্দনের কারণে তাঁর চোখগুলো প্রায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সব সময় তাঁর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রুপাত হত বলে তিনি হাতে সর্বক্ষণ রুমাল রাখতেন ও চোখের পানি তা দিয়ে বার বার মুছতেন। তিনি ষাট বছর রোযা রেখেছেন এবং অধিকাংশ সময় নামাযে মশগুল থাকতেন। ২২০

প্রশ্ন হলো এমন আমলকারী ব্যক্তি মানুষের অপছন্দ ও তিরস্কারের পাত্র হওয়া কি বাঞ্ছনীয়? অবশ্যই না। কিন্তু তদুপরি আমরা এমন উম্মতের মুখোমুখি যারা ইনসাফ করে না। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

ইবনে সা দ মানসুর সম্পর্কে হাম্মাদ ইবনে যাঈদ হতে উদ্ধৃত করেছেন, মানসুরকে মক্কায় দেখেছিলাম। আমি তাঁকে খাশাবিয়া ভেবেছিলাম কিন্তু তাঁকে দেখে আমার বিশ্বাস হয় নি যে,তিনি মিথ্যা বলতে পারেন।

আপনার প্রতি আমার আহবান গায়ের জোরে অন্যদের হীন বলা,ছোট করে দেখা ও তাঁদের প্রতি শত্রুতাভাব পোষণ করার যে প্রবণতা এসব কথার মধ্যে রয়েছে তার মূল্যায়ন করুন। দেখুন,কতটা ভয়ঙ্কর একজন মুমিনের ব্যাপারে এরূপ মন্তব্য যিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি তিনি মিথ্যা কথা বলেন।

আফসোস! আফসোস! মিথ্যা বলা যেন রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের বন্ধু ও তাঁদের প্রতি ভালবাসা পোষণকারীদের মজ্জাগত। সম্ভবত মানসুর সত্যবাদিতার বিপরীত পথে চলেছেন তাই নাসেবীরা (আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষীরা) তাঁর মত আহলে বাইতপন্থীদের জন্য মিথ্যাবাদী হতে উত্তম কোন বিশেষণ খুঁজে পায় নি। তাই তারা তাঁদের জন্য খাশাবিয়া,তুরাবিয়া,রাফেযা এবং এরূপ বিশেষণগুলো নির্বাচন করেছেন। সম্ভবত তাঁরা আল্লাহর এ বাণীটি শ্রবণ করেন নি :

) ولا تنابزوا بالألقاب بئس الاسم الفسوق بعد الإيْمان(

তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না,কত নিকৃষ্ট (জাহেলিয়াতের) এ মন্দ উপনাম ঈমান আনয়নের পর। (সূরা হুজরাত : ১১)

ইবনে কুতাইবা তাঁর মাআরিফ গ্রন্থে খাশাবিয়া উপনাম শিয়াদের জন্য ব্যবহার করে বলেছেন তাঁরা রাফেযী। তাঁদের এ নামকরণের কারণ হলো ইবরাহীম আশতার উবাইদুল্লাহ্ যিয়াদের মুখোমুখি হবার মুহূর্তে ইবরাহীমের সকল সঙ্গীদের হাতে কাষ্ঠ ছিল। খাশাবিয়া অর্থ কাষ্ঠধারীগণ।

আমার মতে তারা এ সকল ব্যক্তিবর্গের জন্য এরূপ নাম এজন্য নির্বাচন করেছিল যাতে করে তিরস্কারের মাধ্যমে তাঁদের অপরাজেয় মানসিকতাকে দুর্বল করা যায়। কিন্তু এ কাষ্ঠধারীগণ (খাশাবিয়া) নাসেবীদের নেতা ইবনে মারজানাকে (উবাইদুল্লাহকে) হত্যা করে এ বিষবৃক্ষকে উৎপাটন করেছেন। যারা রাসূলের বংশধরদের কারবালায় শহীদ করেছিল। সেই জালেম ও অত্যাচারীদের লেজ কেটেছিলেন (সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর)। সুতরাং তারা যে উপনামের মাধ্যমে আমাদের ছোট করতে চেয়েছিল তা আমাদের সম্মানের বস্তু। তেমনি হযরত আলীর আবু তুরাব উপাধির কারণে শিয়াদের যে তুরাবিয়া বলা হয় তাও আমাদের নিকট ত্রুটি বলে গণ্য নয়,বরং তা আমাদের গর্বিত ও সম্মানিত করে।

মূল আলোচনা থেকে অন্যদিকে সরে গিয়েছিলাম,সুতরাং ফিরে আসি আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনায়। মানসুরের হাদীসের বিষয়ে সিহাহ সিত্তাহরও অন্যান্য হাদীসবেত্তাগণ একমত পোষণ করেন যে,তিনি শিয়া হওয়া সত্ত্বেও তাঁর হাদীস ও কথা প্রমাণ উপস্থাপনে কোন সমস্যা নেই। এজন্য তাঁরা তা দলিল হিসেবে ব্যবহার করতেন। আপনি আবু ওয়ায়েল,আবু যুহা,ইবরাহীম নাখয়ী ও তাঁদের পর্যায়ের অন্যান্য রাবীগণ তাঁর হতে যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে দেখতে পারেন। বুখারী ও মুসলিমে শো বা,সুফিয়ান সাওরী,ইবনে উয়াইনা,হাম্মাদ ইবনে যাইদ এবং এরূপ প্রসিদ্ধ অনেক রাবীই তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইবনে সা দ বলেছেন, মানসুর ১৩২ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি নিরাপদ,বিশ্বস্ত,অনেক হাদীস বর্ণনাকারী,উঁচু পর্যায়ের মুহাদ্দিস ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।

৮৬। মিনহাল ইবনে আমর তাবেয়ী (কুফার অধিবাসী)

কুফার প্রসিদ্ধ শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণেই জাওযাজানী তাঁকে দুর্বল ও মন্দ মাজহাবের অনুসারী বলেছেন।

ইবনে হাযমও তাঁর সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করেছেন। ইয়াহিয়া ইবনে সাইদও তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেছেন, মিনহালের প্রতি আমার আকর্ষণ আবু বিশর হতে অধিক এবং তিনি অধিকতর বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য।

মুখতারের শাসনামলে তিনি নিজেকে শিয়া বলে প্রচার করতেন। তাই এ বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত হওয়া সত্ত্বেও মুহাদ্দিসরা তাঁর হাদীসের বিশুদ্ধতার বিষয়ে সন্দেহ করতেন না। তাই মাসউদী,শো বা,হাজ্জাজ ইবনে আরতাত এবং তাঁদের পর্যায়ের অনেকেই তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন। ইবনে মুঈন,আহমাদ আজালী ও অন্যরাও তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে বুখারী ও মুসলিম লিখেছেন যেহেতু তাঁরা তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সাঈদ ইবনে জুবাইর হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ সহীহ বুখারীতে রয়েছে। যাইদ ইবনে আবি আনিসা সহীহ বুখারীর তাফসীর অধ্যায়ে তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মানসুর ইবনে মো তামার নবীদের সম্পর্কে তাঁর হতে হাদীস নকল করেছেন।

৮৭। মূসা ইবনে কাইস হাযরামী (তাঁর কুনিয়াত হলো আবু মুহাম্মদ)

আকিলী তাঁকে বাড়াবাড়ি আকীদা পোষণকারী রাফেযীদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। সুফিয়ান হযরত আবু বকর ও আলী সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আলী আমার নিকট অধিকতর প্রিয়।

মূসা সালামাহ্ ইবনে কুহাইল হতে,তিনি আয়ায ইবনে আয়ায হতে,আয়ায মালিক ইবনে জাউনা হতে বর্ণনা করেছেন, উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমাহ্ বলেছেন : আলী সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কেউ তাঁর অনুসরণ করলে সেও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আর কেউ আলীকে ত্যাগ করলে প্রকৃতপক্ষে সে সত্যকেই ত্যাগ করেছে। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের প্রতি আরোপিত প্রতিশ্রুতি। আবু নাঈম,ফযল ইবনে দাকিন হতে এবং তিনি মূসা ইবনে কায়িস হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

মূসা আহলে বাইতের ফজীলত ও মর্যাদা বর্ণনা করে কিছু সহীহ হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আকিলীর মনোকষ্টের কারণ। তাই মূসা সম্পর্কে কটু মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ইবনে মুঈন তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন।

আবু দাউদ এবং সাঈদ ইবনে মানসুর তাঁদের সুনান গ্রন্থে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে দলিল পেশ করেছেন।

উপরোক্ত বিষয়গুলো যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে এনেছেন। যেসব হাদীস তিনি সালামাহ্ ইবনে কুহাইল ও হাজর ইবনে আনবাসাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন তা সুনান গ্রন্থসমূহে রয়েছে।

ফযল ইবনে দাকিন,উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ রিজাল তাঁর হতে হাদীস নকল করেছেন। তিনি আব্বাসীয় খলীফা মানসুরের শাসনামলে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁর ওপর রহমত বর্ষণ করুন।

ن

৮৮। নাফিই ইবনে হারিস হামাদানী সাবিয়ী (আবু দাউদ নাখয়ী কুফী)

আকিলী বলেছেন, তিনি রাফেযী মতবাদে বাড়াবাড়ি করতেন। বুখারী তাঁর শিয়া হওয়াকে ত্রুটি বলে মনে করতেন।

সুফিয়ান,হাম্মাম (হুমাম),শারীক এবং তাঁদের পর্যায়ের অনেকেই তাঁর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন। তিরমিযী তাঁর সহীহতে তাঁর হাদীস প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। হাদীস গ্রন্থের লেখকগণ তাঁর হাদীস গ্রহণ করতেন। আপনি আনাস ইবনে মালিক,ইবনে আব্বাস,ইমরান ইবনে হুসাইন এবং যাইদ ইবনে আরকাম হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ তিরমিযীতে দেখতে পারেন।

উপরোক্ত কথাগুলো যাহাবী তাঁর মিযান গ্রন্থে এনেছেন।

৮৯। নূহ ইবনে কাইস ইবনে রাবাহ হাদানী ওয়াতাহী (তাঁকে বাসরী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে)

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে সালিহুল হাদীস বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন। তাঁর মতে আহমাদ এবং ইবনে মুঈনও তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আবু দাউদ তাঁকে শিয়া বলেছেন এবং নাসায়ী বলেছেন, তাঁর কোন সমস্যা নেই।

যাহাবী মুসলিম ও সুনানের গ্রন্থকারদের নাম সাংকেতিকভাবে তাঁর নামের পাশে লিখেছেন কারণ তিনি তাঁদের মতে সত্যপরায়ণ রিজালদের অন্তর্ভুক্ত। ইবনে আউন হতে পানীয় সম্পর্কিত তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ সহীহ মুসলিমে রয়েছে। তাছাড়া পোষাক সম্পর্কিত একটি হাদীস যা তিনি তাঁর ভ্রাতা খালিদ ইবনে কাইস সূত্রে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিমে দেখতে পারেন। মুসলিমের নিকট নাসর ইবনে আলী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুনানে আরবাআহ্য় আবুল আশআস ও তাঁর পর্যায়ের অনেকেই তাঁর নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আইয়ুব,আমর ইবনে মালিক এবং আরো কয়েকজন হতে হাদীস নকল করেছেন।