আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 61317
ডাউনলোড: 7920

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 61317 / ডাউনলোড: 7920
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

সতেরতম পত্র

৩ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   আলোচকের হৃদয়বান দৃষ্টির প্রশংসা।

২।   আহলে সুন্নাহর নিকট শিয়া রাবীদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি স্বীকার।

৩।   আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহর বাণীর প্রতি আনুগত্য ঘোষণা।

৪।   এ প্রমাণসমূহ এবং মুসলমানদের সার্বিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ।

১। আপনার চক্ষুর কসম,আমার এ চক্ষু আপনার হৃদয়ের মত এরূপ উদ্যোগী কোন হৃদয় ও আপনার ফলের মত এরূপ বাচন ক্ষমতাসম্পন্ন ফল যা দ্রুত গলাধঃকরণযোগ্য তা দেখে নি। এরূপ ভেদ্য কোন তীর আমার হৃদয়পটে বিদ্ধ হয় নি এবং এরূপ শ্রুতিমধুর বাণীও আমার কর্ণ কখনও শোনে নি। আপনার বাচনের কোমলতা ও যুক্তির তীর্যতা আমার কর্ণপটে ধ্বনিত হচ্ছে। আপনার সকল পত্রেই আপনি একজন বিশেষজ্ঞের মত দৃষ্টির সূক্ষ্মতা ও উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টির বিষয়টি মেনে চলেছেন। কথোপকথন ও সংলাপে আপনি অন্যদের চক্ষু,কর্ণ ও হৃদয়ের অধিকারীতে পরিণত হন। আপনার এ পত্রের জন্য আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুন। এটি এমন এক পত্র যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এ পত্র সত্যের মাধ্যমে মিথ্যার আপাদমস্তকে আঘাত হেনেছে ও নিজের দিকে ফিরিয়ে এনেছে।

২। কোন সুন্নী মুসলমানের জন্য এ বিষয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য শিয়া ভাইয়ের হাদীসকে গ্রহণ করে তার মাধ্যমে যুক্তি পেশ করাতে। আপনার এ দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ সঠিক ও স্পষ্ট। এর বিরুদ্ধবাদীদের বিরোধিতা যুক্তিহীন ও গলাবাজী ছাড়া কিছু নয়। যাঁরা এ কথা বলেন,শিয়া রিজালদের হাদীস যুক্তি হিসেবে গ্রহণীয় নয়;তাদের কর্ম ও কথা পরস্পর বৈপরীত্বের সাক্ষ্য প্রদান করে। সুতরাং তাদের কর্ম ও কথা একই পথে নয়,বরং পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করে বিপরীত পথে চলছে। এ মৌলনীতির ভিত্তিতে আপনার যুক্তি অকাট্য ও তাদের যুক্তি ভিত্তিহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। আপনার এ বিষয় সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি একটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ অপরিহার্য। আমি এর নাম রাখলাম আহলে সুন্নাহর সনদে শিয়া সনদসমূহ । অবশেষে এমনটি হবে আশা করি,সত্যান্বেষীদের জন্য এ পথ ব্যতীত কোন পথ ও কোন স্থানই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই আপনি ইসলামী বিশ্বে এরূপ একটি পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে আমি মনে করি।

৩। আমরা সকলেই আল্লাহকে বিশ্বাস করি এবং তিনি হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ও আহলে বাইতের অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে যত আয়াত অবতীর্ণ করেছেন তা আপনার বর্ণিত আয়াত হতে অধিক। কিন্তু কেন অধিকাংশ মুসলমান এ পথ হতে দূরে সরে আছেন ও দীনের মৌল ও শাখাগত কোন বিষয়েই তাঁদের ওপর নির্ভর করছেন না তা বোধগম্য নয়।

৪। তাঁরা (আহলে সুন্নাহর আলেমগণ) বিতর্কিত বিষয়গুলোতে কেন তাঁদের দিকে প্রত্যাবর্তন করছেন না? এমন কি তাঁদের আকীদা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও আলোচনা করছেন না,বরং দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে তাঁদের বিপরীতে অবস্থান করছেন। সাধারণ মুসলমানরাও তেমনি পূর্ববর্তীদের মত দীনের ক্ষেত্রে আহলে বাইতের বাইরের ব্যক্তিদের অনুসরণ করছেন এবং ভাবছেন না এটি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহর পরিপন্থী।

সুতরাং যদি কোরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসের আলোকে বিষয়টি পরিষ্কার হত তাহলে মুসলমানরা আহলে বাইতের ইমাম ও আলেমদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিতেন না ও অন্যদের তাঁদের স্থলাভিষিক্ত করতেন না। তাই বোঝা যায় কোরআন ও সুন্নাহ্ হতে তাঁরা যা বুঝেছেন তা হলো এ বিষয়গুলো আহলে বাইতের প্রশংসার জন্যই শুধু বলা হয়েছে। তাঁরা এ থেকে আহলে বাইতের প্রতি সম্মান ও ভালবাসার বিষয় ব্যতীত আর কিছুই অনুধাবন করেন নি। তাই পূর্ববর্তী সৎ কর্মশীল বান্দাগণ যে পথকে সঠিক বলে মনে করেছেন ও যে পথ সত্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী বলে মনে করেছেন আপনিও তাঁদের পথকে গ্রহণ করুন যেহেতু কোরআন ও হাদীসের গূঢ়তত্ত্ব সম্পর্কে তাঁরাই অধিক অবগত ছিলেন।

ওয়াসসালাম

আঠারতম পত্র

৪ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   তাঁর সহৃদ্যতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন।

২।   সার্বিকভাবে মুসলমানদের বিষয়ে তাঁর ভ্রান্ত ধারণা।

৩।   উম্মতের নেতৃবৃন্দ ও শাসকরা আহলে বাইত হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছেন।

৪।   আহলে বাইতের ইমামগণ যে কোন যুক্তিতেই অন্যদের হতে কম নন।

৫।   কোন্ ন্যায়পরায়ণ বিচারালয় তাঁদের অনুসারীদের গোমরাহ ও বিচ্যুত বলতে পারে?

১। এ অক্ষমের প্রতি আপনার সুদৃষ্টির জন্য ধন্যবাদ। আপনি যেহেতু সুশীল মানুষ তাই অন্যের শুধু ভাল দিকগুলো দেখেন। আমি আপনার এ সহৃদ্যতা ও কোমল অনুভূতির প্রতি বিনীত এবং এ হৃদয়বানতার মধ্যে আপনার মহত্ত্বের প্রমাণ পাচ্ছি।

২। কিন্তু আপনার প্রতি আমার আহবান সার্বিকভাবে মুসলমানদের আহলে বাইত হতে মুখ ফিরিয়ে রাখার বিষয়ে আপনার যে দৃষ্টিভঙ্গি তা পরিবর্তন করুন। কারণ মুসলমানদের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী শিয়া মতাবলম্বী এবং তাঁরা আহলে বাইত হতে মুখ ফিরিয়ে নেন নি। তাঁরা দীনের মৌল ও শাখাগত বিষয়ে কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে আহলে বাইতের অনুসরণকে অপরিহার্য মনে করেন। সুতরাং তাঁরা সকল সময়েই,সকল অবস্থায়ই এর ওপর বিশ্বাসী ছিলেন ও একে আল্লাহর নির্দেশের নিকট আত্মসমর্পণ মনে করতেন। পূর্ববর্তী পুণ্যবান শিয়া ব্যক্তিবর্গ রাসূলের ইন্তেকালের সময় হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ বিশ্বাসের ওপর দৃঢ় ও মজবুত রয়েছেন এবং এ বিশ্বাসের ওপরই মৃত্যুবরণ করেছেন।

৩। মুসলমানদের নেতা ও শাসকবর্গ আহলে বাইত হতে প্রথম মুখ ফিরিয়ে নেন এবং এ প্রবণতা রাসূলের ওফাতের পর খেলাফত নিয়ে শুরু হয়। কারণ তাঁরা খেলাফতকে নিজেদের অধিকার মনে করেছিলেন। যদিও কোরআন ও হাদীসের স্পষ্ট দলিল এক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিবকে মনোনীত করেছিল। যেহেতু আরবরা একই পরিবারে নবুওয়াত ও খেলাফতকে সহ্য করতে পারে নি তাই সুস্পষ্ট প্রমাণকে বিকৃত ও ভুল ব্যাখ্যা করে তা উপেক্ষা করেছে। খেলাফতকে গোত্রসমূহের নেতাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপকরণ ও মাধ্যমে পরিণত করেছে। কখনো ক্ষমতা এখানে,কখনো ওখানে,কখনো বা দূরবর্তী কোন গোত্রের হাতে;এজন্য তারা তাদের সমগ্র শক্তিকে কাজে লাগায়,যারা এর বিরোধিতা করে তাদেরকে নির্মমভাবে দমন করা হয়। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অধিকাংশ মুসলমান আহলে বাইত হতে দূরে সরে যায়। নেতৃস্থানীয়রা এ উদ্দেশ্যকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য কোরআন ও সুন্নাহর দলিল-প্রমাণগুলোকে (আহলে বাইতের অনুসরণ অপরিহার্য হবার পক্ষের দলিল) ভুল ব্যাখ্যা দান করলেন। যদি তাঁরা এ সকল প্রমাণ ও দলিলসমূহের প্রকৃত অর্থকে গ্রহণ করতেন,আহলে বাইতের দিকে প্রত্যাবর্তন করতেন ও দীনের মৌল ও শাখাগত বিষয়ে সাধারণ মুসলমানদের ঐ দিকে পরিচালিত করতেন তাহলে এ পথ তাদের জন্যও রুদ্ধ হত না আবার নিজেরাও আহলে বাইতের প্রতি আহবানকারী ও শ্রেষ্ঠ প্রচারক-এ (মুবাল্লিগ) পরিণত হতেন কিন্তু এটি তাঁদের উদ্দেশ্য ও আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ছিল। তাই সঠিক দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় তাঁরা দেন নি।

যদি কেউ সূক্ষ্মদৃষ্টি দিয়ে এ বিষয়টিকে লক্ষ্য করে তাহলে সে বুঝতে সক্ষম হবে যে,মাজহাব ও মাজহাবী বিষয়াদির ক্ষেত্রে আহলে বাইতের ইমামদের ইমামত হতে ফিরে আসার বিষয়টি রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর আহলে বাইতের সর্বজনীন ইমামত (নেতৃত্ব),বেলায়েত ও খেলাফত হতে ফিরে আসার বিষয়েরই একটি শাখাগত ও গৌণ বিষয় মাত্র। তাই যেসব শারয়ী (ধর্মীয়) দলিল-প্রমাণ রাসূলের ওফাতের পর আহলে বাইতের সর্বজনীন ইমামত,হুকুমত (শাসন কর্তৃত্ব) ও খেলাফত নির্দেশক সেগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদানের পরই যেসব শারয়ী দলিল ধর্মীয় বিষয়াদির ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ নেতৃত্ব নির্দেশ করে সেগুলোরও ভিন্ন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যদি তা করা না হত তাহলে কেউ তাঁদের হতে মুখ ফিরিয়ে নিত না।

৪। কোরআন ও হাদীসে ইমামতের সপক্ষে আসা দলিলগুলো বাদ দিলেও আশা আরী মতবাদের ইমাম ও আহলে সুন্নাহর অন্যান্য ইমামগণ হতে আহলে বাইতের ইমামগণ ইলম,আমল ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে কোন অংশেই কম কি? তাঁদের মধ্যে এ বিষয়ে যখন কোন স্বল্পতা নেই তখন কেন আমরা অন্যদের অনুসরণ করতে যাব? কিরূপে তাঁদের আনুগত্য অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে?

৫। কোন্ ন্যায়পরায়ণ বিচারালয় তাঁদের (আহলে বাইতের) অনুসারীদের গোমরাহ হবার হুকুম জারি করতে পারে? আহলে বাইতের বেলায়েতের রজ্জুধারীদের বিপথগামী বলতে পারে? আহলে সুন্নাহ্ এ বিষয়ে কিভাবে এরূপ হুকুম করতে পারে?

ওয়াসসালাম

উনিশতম পত্র

৫ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   ন্যায়পরায়ণ বিচারালয় আহলে বাইতের অনুসারীদের বিপথগামী হবার হুকুম করে না।

২।   তাঁদের মাজহাব ও মতের অনুসরণ এ মাজহাবের অনুসারীদের আনুগত্যের জিম্মাদারী (দায়িত্ব) হতে মুক্তি দেয়।

৩।   কারো কারো মতে অনুসরণের জন্য তাঁরা অধিকতর যোগ্যতার অধিকারী।

৪।   খেলাফতের বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের দলিল আহবান।

১। ন্যায়পরায়ণ আদালত আহলে বাইতের বেলায়েতকে ধারণকারী ও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসারীদের বিপথগামী হবার হুকুম করে না। আহলে বাইতের ইমামগণের মধ্যে এমন কোন ঘাটতি নেই যার কারণে অন্য মাজহাবের ইমামগণের অনুসরণ করতে হবে।

২। নিঃসন্দেহে এ মাজহাবের অনুসারীদের জন্য আহলে বাইতের ইমামগণের অনুসরণের বিষয়টি তাঁদের আনুগত্যের দায়িত্ব হতে মুক্তি দেয় এবং অন্য চার মাজহাবের ইমামগণের অনুসরণের মত এটিও জায়েয।

৩। কখনো কখনো বলা হয় যে,আপনাদের বার ইমামের অনুসরণ আহলে সুন্নাহর চার ইমামের অনুসরণ অপেক্ষা শ্রেয়তর কারণ এই বার জন একটি মাত্র মাজহাবের অধিকারী এবং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় একক মৌল ভিত্তিতে এ মাজহাবকে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অপর পক্ষে আমাদের চার ইমাম ফিকাহ্গত বিষয়ে পরস্পর বিপরীতে অবস্থান করছেন। ফিকাহর বিভিন্ন অধ্যায়ে তাঁদের মধ্যে পার্থক্য এত অধিক যে,তা বলে শেষ করার মত নয়,তদুপরি একজন ব্যক্তির গবেষণা ও কর্মপ্রচেষ্টা কখনোই বার জনের সমান নয়। এটি যে কোন ন্যায়বান লোকের নিকট সত্য বলে প্রতিভাত এবং এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

এটি অবশ্য ঠিক যে,কখনো কখনো নাসেবীরা আহলে বাইত হতে আপনার মাজহাবের উৎপত্তি এ বিষয়টিতে সন্দেহ সৃষ্টি করে। আমি পরবর্তীতে এর সপক্ষে দলিল পেশ করবো।

৪। এখন আপনার নিকট আমার আহবান কোরআন ও হাদীসের প্রামাণ্য দলিলসমূহকে যা হযরত আলী (রা.)-এর খেলাফতের পক্ষে যুক্তিপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় তা আমার জন্য উপস্থাপন করুন। আহলে সুন্নাহর সহীহ ও সুস্পষ্ট সনদে তা আসতে হবে।

ওয়াসসালাম

দ্বিতীয় আলোচনা

সর্বজনীন নেতৃত্ব

নবী (সা.)-এর খেলাফত

বিশতম পত্র

৯ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১। কোরআন ও সুন্নাহর দলিলসমূহের প্রতি সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত।

২। কোরআনের আয়াত নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শন কর

৩। আহলে সুন্নাহর হাদীসবিদ ও গ্রন্থকারগণের এ আয়াত সম্পর্কে বক্তব্য।

১। যিনি মহানবী (সা.)-এর জীবনেতিহাস অধ্যয়ন ও আল্লাহ্ প্রবর্তিত বিধি-বিধান,ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও তার শরীয়তসম্মত নিয়মবিধি প্রণয়ণ ও ভিত্তি প্রস্তুতের পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন তিনি বুঝতে পারবেন,হযরত আলী (আ.)-ই বিভিন্ন বিষয়ে রাসূলের পরামর্শদাতা,শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সহযোগী,তাঁর জ্ঞানের পাত্র,তাঁর নির্দেশের উত্তরাধিকারী ও খেলাফতের ক্ষেত্রে তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন। যদি কোন ব্যক্তি রাসূলের নবুওয়াতী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে (যুদ্ধ,শান্তি,সফর,হিজরত ও অন্যান্য) তাঁর কথা ও জ্ঞানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও বর্ণনাগুলো লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন তিনি তাঁর প্রচার কার্যক্রম শুরুর সময় হতে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এটিকে স্পষ্ট করেছেন।

২। যখন ইসলাম মক্কায় কোন প্রভাবই রাখত না তখন মহান আল্লাহ্ কোরআনের নিম্নলিখিত আয়াতটি নাযিল করে রাসূলকে নির্দেশ দেনو أنذر عشيرتك الأقربين অর্থাৎ নিজের নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন কর। অতঃপর রাসূল (সা.) তাদের আবু তালিবের ঘরে সমবেত করেন,তাদের সংখ্যা সেদিন ৪০ জন ছিল। তাঁদের মধ্যে আবু তালিব,আবু লাহাব,হামযাহ্,ও আব্বাস ছিলেন।

এ হাদীসের শেষে নবী (সা.) তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানেরা! আমি আল্লাহর শপথ করে বলতে পারি আমি আরবদের মধ্যে এমন কোন যুবকের সন্ধান জানি না যে তার গোত্র ও সম্প্রদায়ের জন্য এরূপ উত্তম কোন বস্তু এনেছে যা আমি এনেছি,যার মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ রয়েছে। আমি তোমাদের সেদিকে দাওয়াত করছি।

فأيّكم يوازرني على أمري هذا على أن يكون أخي و وصيّي و خليفتي فيكم؟

তোমাদের মধ্যে কে আছে যে আমাকে এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে ও আমার পৃষ্ঠপোষক হবে,সে আমার ভাই,খলীফা,প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত হবে।

আলী (আ.) ব্যতীত সেদিন সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যদিও তখন তাঁর বয়স কম ছিল তবু তিনি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,أنا يا نبيّ الله أكون وزيرك হে আল্লাহর নবী! আমি আপনার সহযোগী হব। তখন নবী (সা.) তাঁর হাত আলী (আ.)-এর কাঁধে রেখে বলেছিলেন,

إنّ هذا أخي و وصيّي و خليفتي فيكم فاسمعوا له و أطيعوه নিশ্চয়ই সে তোমাদের মধ্যে আমার ভাই,স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিনিধি (খলীফা) অতএব,তার কথা শ্রবণ কর ও আনুগত্য কর।

তারা একথা শুনে হাসতে হাসতে আবু তালিবকে বলল, তোমাকে বলা হলো তোমার সন্তানের কথা শ্রবণ কর ও তার আনুগত্য কর।

৩। প্রচুর সংখ্যক হাদীসের হাফেজ এই হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করেছেন যেমন ইবনে ইসহাক,ইবনে জারির,ইবনে আবি হাতেম,ইবনে মারদুইয়া,আবু নাঈম ও বায়হাকী তাঁদের সুনান গ্রন্থে এবং সা লাবী ও তাবারী তাঁদের তাফসীরে কাবীর গ্রন্থে সূরা শুআরার তাফসীরে,তাছাড়া তাবারী তাঁর তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক গ্রন্থের ২য় খণ্ডে,ইবনে আসির তাঁর কামিল ২২২ গ্রন্থের ২য় খণ্ডে এ হাদীসটি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন। যে স্থানে রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ্ তাঁর দাওয়াতকে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন সে ঘটনা বর্ণনায় এটি নকল করা হয়েছে। আবুল ফিদা তাঁর ইতিহাস গ্রন্থের২২৩ ১ম খণ্ডে প্রথম মুসলমান কে এ আলোচনায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু জা ফর আসকাফী মু তাযিলী তাঁর নাকজুল উসমানিয়া ২২৪ গ্রন্থে এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করেছেন। হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে আরকামের ঘরে নবী (সা.) ও সাহাবীদের গোপন সভা সম্পর্কিত আলোচনায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।২২৫ একই অর্থে এবং সদৃশ শব্দের ব্যবহারে এ হাদীসটি অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থকার ও রাবী বর্ণনা করেছেন,যেমন তাহাভী,জিয়া মুকাদ্দাসী তাঁর আল মুখতারাহ্ ,সাঈদ ইবনে মানসুর তাঁর সুনানে। এটি জানার জন্য আহমাদ ইবনে হাম্বলের মুসনাদ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১৫৯ পৃষ্ঠা দেখতে পারেন। তাছাড়া ঐ গ্রন্থেরই ১ম খণ্ডের ৩৩১ পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস হতে একটি মূল্যবান হাদীস এনেছেন যাকে এ হাদীসের সারাংশ বলা যেতে পারে। এ হাদীসটিতে ইবনে আব্বাস অন্যদের ওপর আলী (আ.)-এর দশটি শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন।

এ মূল্যবান হাদীসটি নাসায়ী তাঁর খাসায়েসুল আলাভিয়া গ্রন্থের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় ও হাকিম নিশাবুরী তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩২ পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে এই হাদীস বিস্তারিতভাবে এসেছে।২২৬ মুসনাদে আহমাদের পাদটিকায় মুনতাখাব কানযুল উম্মাল রয়েছে,তাতেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ৫ম খণ্ডের ৪১ পৃষ্ঠা হতে ৪৩ পৃষ্ঠার পাদটিকায় তা দেখতে পারেন। যাহাবীও তাঁর তালখিস গ্রন্থে হাদীসটির বিশুদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ওয়াসসালাম

একুশতম পত্র

১০ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

হাদীসটির সনদের বিষয়ে সন্দেহ উত্থাপন।

আপনার শত্রু ও বিরোধীরা এ হাদীসটি সঠিক নয় বলেন ও এটি অস্বীকারের জন্য কঠোর ভাষা ব্যবহার করেন। হাদীসটি যে নির্ভরযোগ্য নয় তার প্রমাণ হলো বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি। সিহাহ সিত্তাহর অন্যান্য গ্রন্থকারও তা নকল করেন নি। আমার মনে হয় না আহলে সুন্নাহর কোন বিশ্বস্ত রাবী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আপনিও এই সনদে হাদীসটি সহীহ মনে করেন না বলে আমার বিশ্বাস।

ওয়াসসালাম

বাইশতম পত্র

১২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   এ হাদীসের সনদের বিশুদ্ধতা।

২।   কেন তাঁরা তা গ্রহণ হতে বিরত ছিলেন?

৩।   যাঁরা তাঁদের পরিচয় জানেন তাঁরা তাঁদের বিরত থাকাকে অসম্ভব মনে করেন না।

১। যদি আমি আহলে সুন্নাহর সূত্রে হাদীসটি নির্ভরযোগ্য না জানতাম তাহলে তা এখানে উল্লেখ করতাম না। তদুপরি ইবনে জারীর ও ইমাম আবু জা ফর আসকাফী হাদীসটি শতভাগ বিশুদ্ধ বলেছেন।২২৭ হাদীস বিশারদদের অনেকেই তা সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।

এ হাদীসটির বিশুদ্ধতা আপনার নিকট প্রমাণ করার জন্য এটিই যথেষ্ট যে,আহলে সুন্নাহর সেই সকল বিশ্বস্ত রাবী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যাঁদের ওপর সিহাহ সিত্তাহর গ্রন্থকারগণ কোন উৎকণ্ঠা ছাড়াই নির্ভর করেন ও তাঁদের হাদীস দলিল হিসেবে পেশ করেন। আপনি মুসনাদে আহমাদের ১ম খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় লক্ষ্য করুন যেখানে আসওয়াদ ইবনে আমের২২৮   শারিক২২৯ হতে,তিনি আ মাশ২৩০ হতে,তিনি মিনহাল২৩১ হতে,তিনি ইবাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ আমাদী২৩২ হতে অবিচ্ছিন্ন সনদে হযরত আলী (আ.) হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এই সনদের সিলসিলার সকল রাবীই প্রামাণ্য ও সিহাহ সিত্তাহর রিজালদের অন্তর্ভুক্ত। কাইসারানী তাঁর জাম বাইনা সহিহাইন গ্রন্থে তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। সুতরাং হাদীসটির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তদুপরি অন্য সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে যা এটিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।

২। কিন্তু মুসলিম ও বুখারীর মত যাঁরা হাদীসটি বর্ণনা করেন নি এ উদ্দেশ্যে যে,এটি খেলাফতের বিষয়ে তাঁদের আকীদার পরিপন্থী এবং এ কারণেই অনেক হাদীসই তাঁদের নিকট গ্রহণীয় হয় নি। তাঁরা ভীত ছিলেন যদি তা বর্ণনা করেন তাহলে তা শিয়াদের হাতের অস্ত্রে পরিণত হবে,তাই সেগুলো গোপন করেছেন। আহলে সুন্নাহর অনেক আলেমই এ পথ অবলম্বন করেছেন ও এরূপ সকল হাদীস গোপন করেছেন। হাদীস গোপন করার বিষয়ে তাঁদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অনেকেই ছিলেন। ইবনে হাজার তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন এবং বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ইলম অধ্যায়েباب من خص بالعلم قوما دون قوم   নামে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় রেখেছেন।২৩৩

৩। আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) ও আহলে বাইতের অন্যান্য ইমামগণের সুন্দর বাণীসমূহের প্রতি বুখারীর কলম স্থবির এবং তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষত্ব বর্ণনায় তাঁর কলমের কালি শুষ্ক,তাই তাঁর এ সকল হাদীস বর্ণনা হতে বিরত থাকার বিষয়টি আশ্চর্যের কিছু নয়।

ولا حول و لا قوّة  إلّا بالله العليّ العظيم

ওয়াসসালাম

তেইশতম পত্র

১৪ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   হাদীসটির অস্তিত্বের বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন।

২।   যদি হাদীসটি মুতাওয়াতির না হয়ে থাকে তবে তা প্রমাণ ও দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

৩।   এই হাদীস বিশেষ প্রতিনিধিত্বের কথা বলে,সর্বজনীন প্রতিনিধিত্ব নয়।

৪।   এই হাদীস মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে।

১। মুসনাদে আহমাদের ১ম খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় হাদীসটি পেয়েছি এবং এর সনদের সকল রাবী বিশ্বস্ত,নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য বলে গৃহীত। এছাড়া অন্যান্য সূত্রগুলোও এর পরিপূরক ও একে দৃঢ়তা দেয় এবং হাদীসটি রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত বলে আমার বিশ্বাস হয়েছে।

২। কিন্তু আপনি ইমামতের বিষয়টি প্রমাণ করতে চাইলে এমন হাদীস বর্ণনা করতে হবে যা একাধারে সহীহ ও মুতাওয়াতির (বহুল বর্ণিত) হবে কিন্তু এ হাদীসটি তাওয়াতুরের (বহুল বর্ণিত) পর্যায়ে পৌঁছে নি বলে আমার মনে হয়। যেহেতু ইমামতের বিষয়টি আপনাদের দৃষ্টিতে দীনের মৌল বিষয়ের (উসূলে দীন) অন্তর্গত তাই এ হাদীসটি প্রামাণ্য নয়।

৩। কেউ কেউ বলেন এ হাদীসটি এটিই প্রমাণ করে যে,রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের মধ্যে আলী (আ.)-ই একজন যিনি খলীফা হবেন (অর্থাৎ আহলে বাইতের জন্য একটি খেলাফত নির্দিষ্ট,তা আলী [রা.]-এর)। তাই এ হাদীস আহলে সুন্নাহর আকীদার পরিপন্থী নয়।

৪। আবার অনেকেই বলেছেন এ হাদী স মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে কারণ রাসূল (সা.) তাঁর মূল বিষয় হতে ফিরে এসেছেন। তাই প্রথম তিন খলীফার হাতে বাইয়াত গ্রহণে সাহাবীদের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন) কোন প্রতিবন্ধকতাই ছিল না।

ওয়াসসালাম

চব্বিশতম পত্র

১৫ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   আমাদের এ হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার কারণ।

২।   বিশেষ খেলাফতের বিষয়টি ইজমা র ভিত্তিতে বাতিল হয়ে যায়।

৩।   নাসখ বা রহিত হবার বিষয়টি এখানে অসম্ভব।

১। আহলে সুন্নাহ্ খেলাফত ও নেতৃত্বের বিষয়টি মুতাওয়াতির হোক বা না হোক যে কোন সহীহ হাদীস হতেই প্রমাণ উপস্থাপন করেন। আমরাও তাঁদের মোকাবিলায় এরূপ করি। যেহেতু তাঁদের বর্ণনামতেও এ হাদীসটি সহীহ সেহেতু হাদীসটি মানতে তাঁদের বাধ্য করাটা আমরা প্রয়োজন মনে করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে ইমামতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুতাওয়াতির হওয়া অপরিহার্য ও আমাদের বর্ণিত সূত্র এক্ষেত্রে তাওয়াতুরের পর্যায়ে রয়েছে।

২। কিন্তু এ হাদীস আহলে বাইতের মধ্যে হযরত আলী (আ.)-এর বিশেষ খেলাফতকে উল্লেখ করছে এ কথাটি সুন্নী ও শিয়া সবার নিকট অগ্রহণযোগ্য। কারণ যে কেউ আহলে বাইতের মধ্যে আলী (আ.)-কে রাসূলের স্থলাভিষিক্ত মনে করে,সে বিশ্বাস করে আলী (আ.) সকল মুসলমানের ওপর রাসূলের খলীফা। যে কেউ এক্ষেত্রে আলীর সর্বজনীন নেতৃত্বকে না মানে সে তাঁর বিশেষ খেলাফতকেও অস্বীকার করে। তাই এ ব্যাখ্যা মুসলমানদের নিকট অগ্রহণযোগ্য। সুতরাং এ বিষয়ে মুসলমানদের ইজমা র বিষয়টি কিরূপে উত্থাপিত হতে পারে?

৩। নাসখের বিষয়টি এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও শরীয়তগতভাবে অসম্ভব তা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি। কারণ নাসখ তখনই হয় যখন ঐ পূর্বের হাদীসের ওপর আমলের উপযোগিতা না থাকে। তদুপরি এ হাদীসের নাসখ বা রহিতকারী কোন হাদীসের অস্তিত্ব নেই যাতে প্রমাণিত হয় রাসূল এ হাদীস হতে প্রত্যাবর্তন করেছেন,বরং রাসূল এ হাদীসটিকে সত্যায়ন ও দৃঢ় করার জন্য একের পর এক সমার্থক হাদীস মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণনা করেছেন যা নাসখের বিষয়টিকে বাতিল বলে প্রতিপন্ন করে,এমন কি যদি অন্যান্য সমর্থনকারী হাদীসের অস্তিত্ব নাও থাকত তদুপরি নাসখ আমরা কোথা থেকে প্রমাণ করতাম? আপনি কোথা হতে এ দাবী করছেন,নবী (সা.) এ হাদীস হতে ফিরে এসেছেন? যাঁরা এরূপ বলেন তাঁদের সম্পর্কেই আল্লাহ্ বলেছেন, তারা কেবল অনুমান ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অথচ তাদের নিকট তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথনির্দেশক এসেছে। (সূরা নাজম : ২৩)

ওয়াসসালাম