আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 62108
ডাউনলোড: 8042

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 62108 / ডাউনলোড: 8042
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

ত্রিশতম পত্র

২২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   আরব ভাষাভাষীরা এ হাদীস হতে সর্বজনীনতাই বুঝেন।

২।   হাদীসটি বিশেষ সময় ও প্রেক্ষাপটের জন্য প্রযোজ্য কথাটির অসারতা।

৩।   হাদীসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের যোগ্য নয় কথাটি অযৌক্তিক।

১। হাদীসটি সর্বজনীন নয় এ কথাটির জবাব দানের দায়িত্ব আমরা আরব ভাষাভাষী ও হাদীসটির সাধারণ ও বাহ্যিক অর্থের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনিও আরব হিসেবে এর সাক্ষী। আপনি কি মনে করেন আপনার স্বভাষীরা এ হাদীসের সর্বজনীনতার বিষয়ে সন্দেহ করেন? কখনোই নয়। আমি বিশ্বাস করি না আপনার মত কেউ হাদীসটিতে যে ইসমে জিনস্ মুদ্বাফ (সম্বন্ধবোধক জাতিবাচক বিশেষ্য) রয়েছে তা থেকে এ সংশ্লিষ্ট সকল বাস্তব ক্ষেত্র যে এর অন্তর্ভুক্ত তা বোঝেন না।

উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি বলেন,منحتكم انصافي অর্থাৎ আমার ইনসাফকে আপনাদেরকে দিলাম,এ বাক্যে ইনসাফের বিষয়টি কি কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে নাকি সকল বিষয়ে? ইনসাফের সকল প্রেক্ষাপট এর অন্তর্ভুক্ত নয় কি? আল্লাহ্ না করুন আপনি এ থেকে বাহ্যিক অর্থে সর্বজনীনতা ও সর্বঅন্তর্ভুক্তি ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন।

প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের কোন খলীফা যদি তাঁর কোন বন্ধুকে বলেন,

جعلت لك ولايتي على الناس অর্থাৎ আমি জনগণের ওপর নিজ বেলায়েত ও অভিভাবকত্বের বিষয়টি তোমার ওপর অর্পণ করলাম অথবা বলেন তোমাকে আমার সাম্রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে আমার স্থলাভিষিক্ত করলাম কথা দু টি হতে সর্বজনীনতা ভিন্ন অন্য কিছু আপনার চিন্তায় প্রথমেই আসে কি? কেউ যদি এ দাবী করে,বিষয়টি কোন কোন বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য তবে তাকে কি বিদ্রোহী বলা হবে না? যদি তিনি তাঁর কোন উপদেষ্টাকে বলেন, তোমার অবস্থান আমার শাসন কার্যে হযরত আবু বকরের খেলাফতে উমরের ন্যায় শুধু পার্থক্য এটি যে,তুমি রাসূল (সা.)-এর সাহাবা নও। তবে তাঁর এ মর্যাদা কি বিশেষ কিছু বিষয়ে হবে নাকি সকল বিষয়ে অর্থাৎ সর্বজনীন বলে পরিগণিত হবে। নিঃসন্দেহে আপনি এটিকে সর্বজনীন বলবেন। আমার বিশ্বাস আপনি রাসূলের এ হাদীস انت مني بمنزلة هارون من موسى   যে সর্বজনীনতার প্রতি ইঙ্গিত করে তাই মনে করেন কারণ বাক্যটির শাব্দিক ও সাধারণ অর্থ এটিই। বিশেষত যখন হাদীসটিতে নবুওয়াতের বিষয়টিকে ব্যতিক্রম ধরেই সর্বজনীনতার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল আরবকেই প্রশ্ন করতে পারেন।

২। কিন্তু বিরোধীদের এ দাবী হাদীসটি শুধু ঐ প্রেক্ষাপটের জন্যই প্রযোজ্য তা দু টি কারণে অগ্রহণীয়।

প্রথমত হাদীসটি নিজে থেকেই সর্বজনীন তাই বিশেষ প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে বলে তার সর্বজনীনতা ক্ষুন্ন হয় না কারণ প্রেক্ষাপট বিষয়টিকে বিশেষায়িত করে না আর উসূলশাস্ত্রের ভাষায় বললে প্রেক্ষাপট বিশেষায়ক নয়। যেমন কোন অপবিত্র ব্যক্তি (জুনুব) আয়াতুল কুরসী স্পর্শ করলে আপনি যদি তাকে বলেন অপবিত্র ব্যক্তি বা মুহদেস (যার ওজু বা গোসল নেই) কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না কথাটি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,বরং এরূপ ব্যক্তি কোরআনের যে কোন স্থান স্পর্শ করলেই হারাম কাজ করেছে কেননা মুহদেস ব্যক্তি কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না কথাটি আয়াতুল কুরসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কেউই এ থেকে ভিন্ন কিছু বুঝবে না।

তদ্রুপ কোন চিকিৎসক যদি তার কোন রোগীকে খেজুর খেতে দেখে বলেন, আপনি মিষ্টি খাবেন না সাধারণভাবে এটি থেকে কি খেজুর না খাওয়া বুঝায় নাকি যত ধরনের মিষ্টি আছে তা বুঝায়? আল্লাহর শপথ করে বলতে পারি আমার মনে হয় না এরূপ বিষয়ে কেউ বিশেষত্ব বুঝবে যদি না সে উসূল,ব্যাকরণশাস্ত্র ও সাধারণ বাক্যজ্ঞান বিবর্জিত হয়। তেমনি যে ব্যক্তি মানযিলাত -এর হাদীসটিকে শুধু তাবুকের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বলে মনে করেন তিনিও এরূপ ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয়ত যে প্রেক্ষাপটে এ হাদীসটি মহানবী (সা.)-এর মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে তা আলী (আ.)-এর খেলাফতকে (প্রতিনিধিত্বকে) শুধু তাবুক যুদ্ধের জন্য নির্দিষ্ট করে না কারণ আহলে বাইতের ইমামদের হতে প্রচুর সহীহ হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে বিভিন্ন সময় রাসূল (সা.) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলোচক ও গবেষকরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন। আহলে সুন্নাহর রেওয়ায়েতগুলোও এ সত্যের সপক্ষে প্রমাণ।

সুতরাং হাদীসটির প্রেক্ষাপট হতে বিষয়টি বিশেষভাবে তাবুকের যুদ্ধের জন্য প্রযোজ্য কথাটি নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক।

৩। কিন্তু সর্বজনীনতা বিশেষায়িত বা পৃথককৃত হবার কারণে বাকী অংশ দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় কথাটি যে ভুল তা সুস্পষ্ট। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে কি কেউ এরূপ কথা বলেছেন? যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে বল প্রয়োগ ও গায়ের জোরে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায় ও এক ধরনের মস্তিষ্ক বিকৃতির স্বীকার হয়েছেন তিনিই কেবল এরূপ কথা বলতে পারেন। এমন ব্যক্তির উদাহরণ হলো ঐ ব্যক্তির মত যে অন্ধকার রাত্রিতে কোন অন্ধ প্রাণীর পৃষ্ঠে আরোহণ করে তার লক্ষ্যের দিকে রওয়ানা হয়েছে। মূর্খতা ও অজ্ঞতা হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই এবং এগুলো হতে মুক্তি লাভের জন্য তাঁর প্রশংসা করছি। সর্বজনীন বিষয় যে বাক্যের দ্বারা বিশেষায়িত হয় তা যদি অস্পষ্ট না হয় তবে মূল বাক্যটি প্রামাণিকতা হারায় না। বিশেষভাবে যদি বিশেষায়ক অংশটি যুক্ত-বিশেষায়ক২৫৪ হয়। বিষয়টি বোঝার জন্য উদাহরণ পেশ করছি। ধরি,কোন মনিব তার গোলামকে বলল, আজ যাইদ ব্যতীত যে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে তাকে সম্মান কর। এখন যদি গোলাম যাইদ ব্যতীত অন্য ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে তবে সাধারণভাবে সবাই বলবে সে অন্যায় ও ভুল করেছে কারণ তার মনিবের কথামত কাজ করে নি। তাই এ থেকে বিজ্ঞ ব্যক্তি মত দেবেন গোলাম নির্দেশ অমান্যের কারণে অপরাধী ও নিন্দার যোগ্য এবং তার নির্দেশ অমান্যের মাত্রানুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত। শরীয়ত ও বুদ্ধিবৃত্তি দু টিই তাই নির্দেশ করে। সাধারণভাবে কেউ এ কথা মানবেন না যে,যেহেতু সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হয়েছে সেহেতু বাকী অংশ প্রামাণিকতা রাখে না,বরং এরূপ কথা কঠিন অপরাধ বলে পরিগণিত। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হলে তার প্রামাণিকতা হারায় না। আর এ বিষয়টি সকলের নিকট সুস্পষ্ট।

তাছাড়া আপনি জানেন,মুসলমান এবং অমুসলমানদের মধ্যে এ রীতি প্রচলিত যে,তারা শর্তযুক্ত সর্বজনীনতাকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। সাহাবী,তাবেয়ীন,পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের সকলেই এ পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছেন। আহলে বাইতের ইমামগণ এবং মুসলমানদের ধর্মীয় নেতারা এ পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। তাই এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এগুলো সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হবার পরও দলিল হবার সপক্ষে প্রমাণ। যদি এটি দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য না হতো তাহলে চার মাজহাবের ইমামগণ ও মুজতাহিদদের জন্য শরীয়ত ও শরীয়ত বহির্ভূত সকল বিষয়ে ব্যাখ্যার পথ বন্ধ হয়ে যেতো। কারণ ইজতিহাদী বিষয়ে শরীয়তের বিধানসমূহ সর্বজনীন নিয়মকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এবং এমন কোন সর্বজনীন নিয়ম নেই যা শর্তযুক্ত বা বিশেষায়িত হয় নি। এজন্যই সর্বজনীনতার প্রামাণিকতার পথ রুদ্ধ হলে জ্ঞানের পথই রুদ্ধ হবে। এরূপ অবস্থা হতে আল্লাহর পানাহ্ চাই।

ওয়াসসালাম

একত্রিশতম পত্র

২২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

অন্যান্য প্রেক্ষাপটে এরূপ হাদীসের অস্তিত্বের নমুনা আহবান

তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য সময়েও যে এরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা আপনি বর্ণনা করেন নি। এরূপ হাদীস শোনার জন্য আমি উদগ্রীব। আমাকে এমন উৎসের সন্ধান দেবেন কি?

ওয়াসসালাম

বত্রিশতম পত্র

২৪ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   উম্মে সালিমের সাক্ষাতে এরূপ বর্ণনার অস্তিত্ব।

২।   হযরত হামযাহর কন্যার উপস্থিতিতে।

৩।   নবী (সা.) যখন আলী (আ.)-এর ওপর ভর করে বসেছিলেন।

৪।   প্রথম ভ্রাতৃবন্ধনের দিন।

৫।   দ্বিতীয় ভ্রাতৃবন্ধনের ঘটনা।

৬।   মসজিদের দিকে অবস্থিত সকল দ্বার বন্ধ করার দিন।

৭।  নবী আলী ও হারুন (আ.)-কে দু টি নক্ষত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন যারা একসঙ্গে থাকে।

১। একদিন নবী (সা.) উম্মে সালিমের২৫৫ নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর পবিত্র মুখ দিয়ে এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

উম্মে সালিম ইসলামের অগ্রগামীদের অন্তর্ভুক্ত ও তীক্ষ্ণ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। ইসলামের ক্ষেত্রে অগ্রগামিতা,ইখলাস,ধৈর্যশীলতা ও ত্যাগের কারণে রাসূলের নিকট তাঁর বিশেষ মর্যাদা ছিল।

নবী (সা.) তাঁদের ঘরে যেতেন ও তাঁর জন্য হাদীস বর্ণনা করতেন। একদিন তিনি তাঁকে বলেন, হে উম্মে সালিম! আলীর রক্ত ও মাংস আমার রক্ত ও মাংস হতে। সে আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত। এ হাদীসটি কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় ২৫৫৪ নং হাদীস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। মুনতাখাবে কানয গ্রন্থেও হাদীসটি এসেছে। এজন্য মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠার পাদটীকায় দেখতে পারেন। আমাদের বর্ণিত সূত্রের হুবহু সেখানে এসেছে।

আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এ হাদীসটি নবী (সা.) কোন বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন নি,বরং আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত দায়িত্ব পালন এবং তাঁর বাণীর প্রচার ও উপদেশ দানের লক্ষ্যেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তির শান ও মর্যাদা এভাবে বর্ণনা করেছেন। এটি তাই তাবুক যুদ্ধের সঙ্গেই শুধু সংশ্লিষ্ট নয়।

২। হযরত হামযাহর কন্যা সম্পর্কে হযরত আলী,জা ফর ও যাইদের মধ্যে যে আলোচনা হচ্ছিল সে সর্ম্পকিত বর্ণনায় অনুরূপ হাদীস এসেছে যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন, হে আলী! তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত। ২৫৬

৩। তদ্রুপ একদিন হযরত আবু বকর,উমর ও আবু উবাইদা জাররাহ্ রাসূলের সামনে বসেছিলেন। হযরত রাসূল (সা.) আলীর ওপর ভর করে বসেছিলেন এমতাবস্থায় নিজের হাত আলী (আ.)-এর কাঁধে রেখে বললেন, হে আলী! তুমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যে আমার প্রতি ঈমান এনেছ ও ইসলাম গ্রহণ করেছ,তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত। ২৫৭

৪। প্রথম ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপনের দিন যা মক্কায় সংঘটিত হয়েছিল সেদিন রাসূল এরূপ কথা বলেছেন। হিজরতের পূর্বে রাসূল (সা.) বিশেষত মক্কার মুহাজিরদের মধ্যে দু জন দু জন করে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন সৃষ্টি করেন (আকদের মাধ্যমে) সেখানে তিনি এরূপ কথা বলেন।

৫। ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের দ্বিতীয় চুক্তির দিন যা হিজরতের পঞ্চম মাসে মদীনায় অনুষ্ঠিত হয় এবং রাসূল (সা.) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়ে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) আলীকে নিজের ভাই হিসেবে মনোনীত করেন ও অন্যদের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্য কাউকে নিজের ভাই হিসেবে ঘোষণা করেন নি২৫৮ এবং আলীর প্রতি নির্দেশ করে বলেন, তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত তবে আমার পর কোন নবী নেই।

নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র বংশধরদের হতে এ বিষয়ে মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। আহলে বাইতের বাইরে প্রথম ভ্রাতৃবন্ধন সম্পর্কে যায়েদ ইবনে আবি আওফী যা বলেছেন আপনার জন্য সেটিই যথেষ্ট বলে মনে করছি। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মানাকিবে আলী ,ইবনে আসাকির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে,বাগাভী ও তাবরানী তাঁদের মাজমায়,বারুদী তাঁর কিতাবুল মারেফাত গ্রন্থে এবং ইবনে আদী২৫৯ ও অন্যরাও বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীসটি বেশ দীর্ঘ। এতে ভ্রাতৃত্বের আকদ পাঠের প্রক্রিয়াও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটির শেষে এভাবে এসেছে- আলী (আ.) রাসূলকে বললেন, হে রাসূল (সা.)! আমার যেন মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে,আত্মা বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে,আমাকে ছাড়াই আপনি সাহাবীদের নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন। যদি আপনি কোন বিষয়ে আমার ওপর রাগান্বিত হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আপনি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ দ্বারা তা ক্ষমা করে দিন। রাসূল (সা.) বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ,যিনি আমাকে সত্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন,আমার প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোন কারণে তোমাকে বাদ দেই নি এবং তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই। তুমি আমার ভাই ও আমার উত্তরাধিকারী। আলী বললেন, আপনার নিকট হতে আমি উত্তরাধিকার সূত্রে কি লাভ করব? তিনি বললেন, পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণ যা ইতোপূর্বে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যেতেন আর তা ছিল তাঁদের প্রভুর গ্রন্থ ও তাঁদের নবীর সুন্নাহ্। তুমি আমার কন্যা ফাতিমাসহ বেহেশতে আমার প্রাসাদে থাকবে। তুমি আমার ভাই ও বন্ধু। অতঃপর রাসূল (সা.) নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেনاخوانا على سرر متقابلين  সেখানে তারা পরস্পর ভাই হিসেবে মুখোমুখি বসে থাকবে।২৬০ অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালবাসার কারণে বেহেশতে অবস্থান করবেন এবং পরস্পরকে লক্ষ্য করবেন।

এছাড়া দ্বিতীয় ভ্রাতৃত্ববন্ধনের দিন সম্পর্কিত হাদীসটি তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে এভাবে এনেছেন- নবী (সা.) আলীকে বললেন, যখন তুমি লক্ষ্য করলে আমি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিলাম কিন্তু তোমাকে কারো ভাই হিসেবে ঘোষণা করলাম না তখন কি তুমি আমার প্রতি অভিমান করেছ? তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও,তোমার অবস্থান আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের অবস্থানের ন্যায় হোক এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পরে কোন নবী আসবে না? ২৬১

    ৬। যেদিন রাসূল আলী (আ.)-এর দ্বার ব্যতীত মসজিদে নববীর দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বারকে বন্ধ করার ঘোষণা দেন সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে জাবের বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী২৬২ হতে বর্ণিত হাদীসটি লক্ষণীয়। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : হে আলী! মসজিদে আমার জন্য যা কিছু হালাল তোমার জন্যও তদ্রুপ। তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই।

হুজাইফা ইবনে উসাইদ গাফফারী২৬৩ বলেন, যেদিন রাসূল মসজিদের দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বার বন্ধ করে দেন সেদিন দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে খুতবা পাঠ করে বলেন : কোন কোন ব্যক্তির মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আমি আলীকে মসজিদে স্থান দিয়ে অন্য সকলকে বের করে দিয়েছি,না বরং খোদার শপথ,তিনিই আলীকে মসজিদে স্থান দিয়ে অন্যদের মসজিদ হতে বের করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ ওহী প্রেরণ করে মূসাকে তাঁর ও তাঁর ভ্রাতার জন্য মিশরে গৃহ নির্বাচন,ঐ গৃহকে কেবলা হিসেবে গ্রহণ এবং সেখানে নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন। হাদীসটির শেষে রাসূল (সা.) বললেন, আলীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত। সে আমার ভ্রাতা। সে ব্যতীত কারো জন্য জায়েয নেই মসজিদে জুনুব (যৌন কারণে অপবিত্র) অবস্থায় প্রবেশ করবে।

এরূপ অসংখ্য নমুনা রয়েছে যা এ সংক্ষিপ্ত সময়ে এখানে উপস্থাপন সম্ভব নয়। অবশ্য হাদীসে মানযিলাত যে শুধু তাবুকের যুদ্ধের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয় তা প্রমাণের জন্য আমরা যতটুকু আলোচনা করেছি ততটুকুই যথেষ্ট মনে করছি। তাই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে হাদীসটির বর্ণনা এর গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে।

৭। যে কেউ নবী (সা.)-এর জীবনী ও ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করলে দেখতে পাবেন তিনি আলী ও হারুন (আ.)-কে উত্তর আকাশের (বিশেষ) নক্ষত্রদ্বয়ের মত একই ধাঁচের বলে মনে করতেন এবং কোন বিষয়ে তাঁদের একজনকে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতেন না যা হাদীসটির সর্বজনীনতার সপক্ষে দলিল। পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করলেও শুধু হাদীসের শাব্দিক অর্থ থেকেও এই সর্বজনীনতা সুস্পষ্ট।

ওয়াসসালাম

তেত্রিশতম পত্র

২৫ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

কখন ও কোথায় আলী (আ.) ও হারুন (আ.) দু টি উজ্জ্বল নক্ষত্র বলে পরিচিত হয়েছেন?

আপনার পত্রের শেষ অংশে আপনি বলেছেন যে,রাসূল (সা.) আলী ও হারুনকে সম আলোকের দু টি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। কোথায় ও কখন করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।

ওয়াসসালাম

 স