আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 61813
ডাউনলোড: 8010

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 61813 / ডাউনলোড: 8010
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

পাদটিকা

১।    রাসূল (সা.) আলী (আ.)-এর জন্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গিয়েছেন। ৬৬ নম্বর পত্রে তা লক্ষ্য করুন।

২।    ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ২য় খণ্ডের তৃতীয়াংশে ৬১ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেছেন, নবী (সা.) ওসিয়ত করেছেন আমি ছাড়া অন্য কেউ যেন তাঁকে গোসল না দেয়। কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় আবু শাইখ ও ইবনে নাজ্জার হতে বর্ণিত হয়েছে,হযরত আলী বলেছেন, নবী (সা.) আমাকে ওসিয়ত করেছেন : যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো তখন আমাকে সাত মশক পানি দিয়ে গোসল দিও। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২য় অংশে ৬৩ পৃষ্ঠায় রাসূল (সা.)-এর গোসলের আলোচনায় আবদুল ওয়াহেদ ইবনে আওয়ানা হতে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) যে অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেন তার পূর্বে হযরত আলীকে বলেন, হে আলী! যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো,আমাকে গোসল দিও। এবং আলী বলেন, আমি তাঁকে গোসল দিলাম। যে অঙ্গই আমি গোসল দিতে মনস্থ করতাম তাঁর সে অঙ্গ স্বেচ্ছায় আমার দিকে ঘুরে যেত। হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৫৯ পৃষ্ঠায় এবং যাহাবী মুসতাদরাকের তালখিসে হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন, আমি নবীকে মৃত্যুর পর গোসল দেই। কিন্তু অন্যান্য মৃতদেহের ক্ষেত্রে যা দেখা যায় নবী (সা.)-এর ক্ষেত্রে তা দেখি নি,বরং তাঁর দেহ সম্পূর্ণ পাক ও পবিত্র যেমন তিনি জীবিতাবস্থায় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ছিলেন। তাঁরা উভয়েই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এ হাদীসটি সাঈদ ইবনে মানসুর,ইবনে মানিই এবং ইবনে আবি শাইবা তাঁদের সুনানে,মারওয়াজী তাঁর জানাঈর এবং আবু দাউদ তাঁর মারাসিলে বর্ণনা করেছেন। কানযুল উম্মালের ৪র্থ খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় ১০৯৪ নম্বর হাদীস হিসেবে এটি বর্ণিত হয়েছে। বায়হাকী তাঁর সুনান গ্রন্থে আবদুল্লাহ্ ইবনে হারেস হতে বর্ণনা করেছেন, আলী নবী (সা.)-কে পোষাক পড়া অবস্থায় গোসল দিয়েছেন। হাদীসটি কানযুল উম্মালের ৪র্থ খণ্ডের ৫৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ১১০৪ নম্বর হাদীস। বায়হাকী ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন, আলী এমন চারটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অন্য কেউ যার অধিকারী নয় : তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূলের সঙ্গে নামায আদায় করেছেন। তিনি সকল স্থানেই রাসূলের পক্ষ হতে পতাকা বহন করেছেন,তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি তাঁর সমগ্র প্রতিরোধশক্তি নবীর পক্ষে ব্যয় করেছেন যেদিন সকলেই তাঁকে ত্যাগ করে পালিয়েছিল। তিনি নবীকে গোসল দেয়ার অধিকারী ও নবীকে কবরে স্থাপনকারী (সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর কবরে অবস্থানকারী)। ইবনে আবদুল বার তাঁর ইসতিয়াব গ্রন্থে হযরত আলীর জীবনীতে এবং হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,নবী (সা.) বলেছেন, হে আলী! তুমি আমাকে গোসল দেবে,আমার ঋণ পরিশোধ করবে ও আমাকে কবরে আবৃত করবে। দায়লামী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় ২৫৮৩ নম্বর হাদীস হিসেবে এসেছে। এ সম্পর্কিত উমর ইবনে খাত্তাব হতে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে,নবী (সা.) হযরত আলীকে বলেন, তুমি আমাকে গোসল দানকারী ও দাফনকারী। হাদীসটি কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে এবং মুসনাদে আহমাদের ৫ম খণ্ডের ৪৫ পৃষ্ঠায় প্রান্ত লেখনিতেও এসেছে।

হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি : আলীকে আমার জন্য আল্লাহ্ পাঁচটি বিশেষত্ব দিয়েছেন যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয় নি। প্রথমত সে আমার ঋণ পরিশোধ করবে,দ্বিতীয়ত সে আমাকে কবরে শায়িত করাবে.। - কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,৪০৩ পৃষ্ঠা।

যখন নবী (সা.)-এর পবিত্র দেহকে খাটিয়ায় স্থাপন করা হলো তখন সকলে তাঁর জানাযার নামায পড়ার জন্য সমবেত হলে হযরত আলী (আ.) বললেন, রাসূল (সা.) জীবিত ও মৃত সকল অবস্থায় তোমাদের ইমাম তাই কেউ তাঁর নামাযে ইমামতি করবে না। লোকেরা দলে দলে এসে সারিবদ্ধভাবে নামায পড়ছিল কোন ব্যক্তির ইমামতি ছাড়াই। তারা সম্মিলিতভাবে তাকবীর বলছিল এবং আলী (আ.) রাসূলের পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। হে আল্লাহ্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আপনার নবীর ওপর যা অবতীর্ণ করেছেন তিনি তা যথাযথভাবে পালন করেছেন,তাঁর উম্মতের কাছে তা পৌঁছিয়ে উপদেশ দিয়েছেন,আপনার পথে জিহাদ করেছেন এবং আপনি আপনার দীনকে সম্মানিত ও শক্তিশালী করেছেন,তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ বিধানের অনুসারী করুন ও এ পথে দৃঢ় রাখুন,আমাদের কিয়ামত দিবসে তাঁর সহগামী করুন। সকলেই সমস্বরে আমীন বললেন। পুরুষদের নামায শেষ হলে নারীরা নামায পড়লেন। অতঃপর বালক ও শিশুরা।

উপরোক্ত বর্ণনাটি ইবনে সা দের তাবাকাত গ্রন্থের নবীর গোসলের অধ্যায়ের আলোচনায় এসেছে। সেদিন সর্বপ্রথম বনি হাশিম,অতঃপর মুহাজিরগণ,তারপর আনসার,তারপর অন্যান্যরা নামায আদায় করেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আলী (আ.) ও হযরত আব্বাস পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পাঁচ তাকবীরের মাধ্যমে নামায আদায় করেন।

৩।    এ সম্পর্কিত হাদীস আহলে বাইত হতে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আপনার জন্য এখানে তাবরানীর আল কাবীর -এ ইবনে উমর হতে ও আবু ইয়ালীর মুসনাদে হযরত আলী হতে যে বর্ণনা এসেছে তা উল্লেখ করছি। প্রথম সূত্র মতে নবী (সা.) বলেছেন, হে আলী! তুমি আমার ভ্রাতা ও সহযোগী,আমার ঋণ পরিশোধকারী,আমার প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণকারী ও আমার দায়িত্বের বোঝা অপসারণকারী। এ হাদীসটি কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৬ পৃষ্ঠায় ইবনে উমর হতে এবং ৪০৪ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বুসাইরী(بوصيري) সূত্রে বলা হয়েছে যে,এ হাদীসটির রাবীরা সকলেই বিশ্বস্ত। একই গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠাতেই দাইলামী ও ইবনে মারদুইয়া সূত্রে হযরত সালমান ফারসী হতে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সা.) বলেছেন, আলী ইবনে আবি তালিব আমার প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণ করবে ও আমার ঋণ পরিশোধ করবে। কানযুল উম্মালের উপরোক্ত খণ্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় বাযযারের সূত্রে আনাস ইবনে মালিক হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় হুবশী ইবনে যুনাদাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি : আমার ঋণ আমি ও আলী ব্যতীত অন্য কেউ পরিশোধ করবে না। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪০১ পৃষ্ঠায় ইবনে মারদুইয়া সূত্রে আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে, যখনو أنذر عشيرتك الأقربين তোমার নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন কর আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল (সা.) বললেন : আলী আমার ঋণ পরিশোধ ও আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে। একই স্থানে সা দ হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) জুহফার দিনে আলীর হাত ধারণ করে খুতবা দান করলেন। প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর বললেন : হে লোকসকল! আমি কি তোমাদের নেতা ও অভিভাবক নই? তারা বলল : হে রাসূলে খোদা! আপনি সত্যই বলেছেন। তখন নবী (সা.) আলী (আ.)-এর হাত উঁচু করে ধরে বললেন : সে আমার প্রতিনিধি ও আমার ঋণ পরিশোধকারী। চুয়ান্নতম পত্রের শেষে হাদীসটি দেখুন। আবদুর রাজ্জাক তাঁর জামে গ্রন্থে মুয়াম্মার সূত্রে হযরত কাতাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে,আলী (আ.) রাসূলের পুরো ঋণ পরিশোধ করেন যার পরিমাণ পাঁচ লক্ষ দিরহাম ছিল। আবদুর রাজ্জাককে প্রশ্ন করা হলো : নবী (সা.) কি তাঁকে এজন্য ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন? তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে নবী (সা.) এ বিষয়ে তাঁকে ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন নতুবা তাঁকে এটি পরিশোধের সুযোগ দেয়া হত না। এটি কানযুল উম্মালের ৪র্থ খণ্ডের ৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ১১৭০ নম্বর হাদীস।

৪।    নবী (সা.) হতে বহু সূত্রে সুস্পষ্ট হাদীস এসেছে যে,তিনি হযরত আলীকে তাঁর উম্মতের মতপার্থক্য ও বিভ্রান্তির বিষয়গুলোতে ব্যাখ্যা প্রদানের ওসিয়ত করে গিয়েছেন। আটচল্লিশতম পত্রের একাদশ ও দ্বাদশ নম্বর হাদীস দু টি দেখুন। হাদীসগুলো বেশ প্রসিদ্ধ।

৫।    ৩৬,৪০,৫৪ ও ৫৬ নম্বর পত্রে এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছি।

৬।    নবী (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কটি মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত যা আমরা ৩২ ও ৩৪ নম্বর পত্রে উল্লেখ করেছি।

৭।   বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেই আমাদের নিকট এটি পরিষ্কার কিরূপে আলী (আ.) নবী (সা.)-এর সন্তানদের পিতা হন। তদুপরি নবী (সা.) আলীকে বলেছেন, তুমি আমার ভাই,আমার সন্তানদের পিতা এবং আমার দীনের পথে জিহাদকারী। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪০৪ পৃষ্ঠায় হাদীসটি মুসনাদে আবু ইয়ালীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। বুসাইরী এ হাদীসের রাবীদের বিশ্বস্ত বলেছেন। আহমাদ তাঁর মানাকিব গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন,ইবনে হাজার তাঁর সাওয়ায়েকুল মুহরাকাহ্ র ৯ম অধ্যায়ের দ্বিতীয়াংশে ৭৫ পৃষ্ঠায় তা উল্লেখ করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ্ সকল নবীর বংশধরদের তাঁদের ঔরষে রেখেছেন কিন্তু আমার বংশধরদের আলীর ঔরষে স্থাপন করেছেন। এ হাদীসটি তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন। খাতীব বাগদাদী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,নবী (সা.) বলেছেন, সকল নারীর সন্তানদের তাদের পুরুষদের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় শুধু ফাতিমা ব্যতীত। ফাতিমার সন্তানদের আমার প্রতি সম্পর্কিত করা হয়েছে (অর্থাৎ তারা আমার সন্তান)। হাদীসটি কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫২ পৃষ্ঠার ২৫১০ নম্বর হাদীস। এছাড়া তাবরানীর সূত্রে হাদীসটি হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যা ইবনে হাজার তাঁর সাওয়ায়েক গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ের দ্বিতীয়াংশে ১১২ পৃষ্ঠায় ২২ নম্বর হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাওয়ায়েক গ্রন্থের একই পৃষ্ঠায় তাবরানী সূত্রে ইবনে উমর হতেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। হাকিম নিশাবুরী তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করে বলেছেন যে,হাদীসটি সহীহ কিন্তু বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি।

অপর একটি হাদীস যা হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থে এবং যাহাবী তাঁর তালখিসুল মুসতাদরাকে উল্লেখ করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ বলেছেন তা হলো নবী (সা.) বলেছেন, হে আলী! তুমি আমার ভ্রাতা এবং আমার সন্তানদের পিতা যারা আমার সঙ্গে সম্পর্কিত হবে। এ সম্পর্কিত অসংখ্য হাদীস রয়েছে।

৮।   আলী (আ.)-এর প্রতিনিধিত্ব ও স্থলাভিষিক্তের পক্ষে দলিল হিসেবে এ হাদীসটি আপনার জন্য পূর্বেই ২৬ নম্বর পত্রে উল্লেখ করেছি-أنت منّي بِمنْزلة هارون من موسى إلّا أنه لا نبِيّ بعدي তোমার অবস্থান আমার নিকট মূসার নিকট হারুনের অবস্থানের ন্যায় শুধু পার্থক্য এই যে,আমার পরে কোন নবী নেই। তাছাড়া নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শনের দিনের হাদীস যেখানে রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কে রাজী আছ আমার সহযোগী হতে? আলী (আ.) বলেছিলেন, হে নবী! আমি রাজী আছি। তখন রাসূল (সা.) বলেছিলেন, তুমি আমার ভাই,সহযোগী,খলীফা ও স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি.। ইমাম আবু সাইরী তাঁর হামযাহ্ ছন্দ -এর কবিতায় বলেছেন,

و وزير بن عمّه في المعالى

তাঁর (নবীর) সহযোগী তাঁর চাচাতো ভাই যাঁর মর্যাদা সমুচ্চ,

و من الأهل تسعد الوزراء

তাঁর বংশ হতেই উজীররা সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষে উঠতে পারে।

لم يزده كشف الغطاء يقينا

পর্দা অপসারণের মাধ্যমে তাঁর (আলী) দৃঢ় বিশ্বাস বৃদ্ধির সুযোগ নেই,

بل هو الشمس ما عليه غطاء

কারণ তিনি এক সূর্য যাঁর সামনে কোন পর্দাই নেই।

৯।    মুসলিম উম্মাহ্ এ বিষয়ে একমত যে,কোরআনে এমন একটি আয়াত রয়েছে যার ওপর আলী (আ.) ব্যতীত অন্য কেউ আমল করেন নি এবং কিয়ামত পর্যন্ত কারো এর ওপর আমল করার সুযোগ নেই। আয়াতটি সূরা মুজাদালার نجوى র আয়াত। তাঁর শত্রু-মিত্র সবাই এটি স্বীকার করে। এ সম্পর্কিত হাদীস ও রেওয়ায়েতসমূহ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ। এটি জানার জন্য মুসতাদরাকে হাকিমের ২য় খণ্ডের ৪৮২ পৃষ্ঠায় এবং যাহাবীর তালখিসুল মুসতাদরাকের একই পৃষ্ঠায় দেখুন। উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে জানার জন্য সা লাবী,তাবারী,সুয়ূতী,যামাখশারী ও ফাখরে রাযী প্রমুখের তাফসীর গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করুন। চুয়াত্তর নম্বর পত্রে আমরা উম্মে সালামাহ্ ও আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর সূত্রে তায়েফের দিন ও মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে আলী (আ.)-এর গোপন কথনের বর্ণনা দান করেছি। সেখানে রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেছেন, আমি আলীকে গোপনে কথা বলার জন্য আহবান করি নি,বরং আল্লাহ্ তাকে এজন্য মনোনীত করেছেন। হযরত আয়েশার বিষয়েও রাসূল (সা.) আলী (আ.)-এর সঙ্গে গোপনে কথোপকথন করেছেন।

১০।   ৩৬ নম্বর পত্রে আমরা আলীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে রাসূলের হাদীস ইবনে আরকাম সূত্রে বর্ণনা করেছি যে,তিনি আলীকে বলেছেন,أنت وليّي في الدنيا و الآخرة তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার পক্ষ হতে প্রতিনিধি ও উম্মতের অভিভাবক।

১১।   আটষট্টি নম্বর পত্রে স্থলাভিষিক্তের হাদীসগুলো দেখুন।

১২। আটচল্লিশ নম্বর পত্রের ৯ নম্বর হাদীস ও এর ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করুন।

১৩। আটচল্লিশ নম্বর পত্রের ১০ নম্বর হাদীস দেখতে পারেন।

১৪। আটচল্লিশ নম্বর পত্রের ১৪ নম্বর হাদীস দেখুন।

১৫। আট নম্বর পত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ অধ্যয়ন করুন।

১৬। আটচল্লিশ নম্বর পত্রের ১৬ নম্বর হাদীস দেখুন।

১৭। আটচল্লিশ নম্বর পত্রের ১৭ নম্বর হাদীস দেখুন।

১৮। ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৪৪২ পৃষ্ঠায় আবু হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.) হযরত আলী,ফাতিমা,ইমাম হাসান ও হুসাইনের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন : যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমিও তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি ও যারা তোমাদের সাথে সন্ধি স্থাপন করে আমিও তাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করি এবং তোমাদের শত্রু আমারই শত্রু। তাছাড়া সহীহ হাদীস মতে যেদিন তাঁদেরকে চাদর দ্বারা আবৃত করে সম্মানিত করেন সেদিনও তিনি এ কথা বলেছেন।

এ হাদীসটি ইবনে হাজার তাঁর সাওয়ায়েক গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ের প্রথম অংশে আয়াতের তাফসীরে তাঁদের প্রশংসায় বর্ণনা করেছেন। আলীর সঙ্গে যুদ্ধ আমার সঙ্গেই যুদ্ধ ও তার সঙ্গে সন্ধি আমার সঙ্গেই সন্ধি রাসূলের এ হাদীস মুস্তাফিয সূত্রে বর্ণিত।

১৯। আটচল্লিশতম পত্রের ২০ নম্বর হাদীসে দেখুন। হাদীসটির এ বাক্যটিاللهم وال من والاه و عاد من عاداه মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। ছত্রিশতম পত্রে বুরাইদাহর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,রাসূল (সা.) বলেছেন,

من أبغض عليا فقد أبغضني و من فارق عليا فارقني যে আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল এবং যে আলী হতে বিচ্ছিন্ন হলো সে আমা হতেই বিচ্ছিন্ন হলো। হে আলী! তোমাকে মুমিন ব্যতীত কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত তোমার প্রতি কেউ বিদ্বেষ পোষণ করবে না। - হাদীসটি মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। এ সবগুলোই উম্মী নবী (সা.)-এর ওসিয়ত নয় কি?

২০। আটচল্লিশতম পত্রের ১৯,২০ ও ২১ নম্বর হাদীস দেখুন।

২১। আটচল্লিশতম পত্রের ২৩ নম্বর হাদীস যেখানে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে-

 اللهم وال من والاه و عاد من عاداه । তাছাড়া পূর্বোল্লিখিত ছত্রিশ নম্বর পত্রের বুরাইদাহর হাদীসও মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। এ হাদীসটি যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন,لا يحبه إلّا مؤمن و لا يبغضه إلّا منافق তাকে মুমিন ব্যতীত কেউ ভালবাসবে না আর মুনাফিক ব্যতীত কেউ ঘৃণা করবে না। আল্লাহর শপথ,এগুলো নবীর ওসিয়ত।

২২। আমর ইবনে শাশ বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন, যে আলীকে কষ্ট দিল সে আমাকে কষ্ট দিল। আহমাদ তাঁর মুসনাদের ৩য় খণ্ডের ৪৮৩ পৃষ্ঠায়,হাকিম তাঁর মুসতাদরাক -এর ৩য় খণ্ডের ১২৩ পৃষ্ঠায়,যাহাবী তাঁর তালখিসে মুসতাদরাকের একই পৃষ্ঠায় হাদীসটি উল্লেখ করে সহীহ বলেছেন। বুখারী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে,ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাতে,ইবনে আবি শাইবা তাঁর মুসনাদে,তাবরানী তাঁর আল কাবীর গ্রন্থে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪০০ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এসেছে।

২৩। আটচল্লিশতম পত্রের ১৮ নম্বর হাদীস অনুযায়ী।

২৪। আটচল্লিশতম পত্রের ১৮ নম্বর হাদীসের বর্ণনানুসারে।

২৫। প্রাগুক্ত।

২৬। আটচল্লিশতম পত্রের ২,৩,৪ ও ৫ নম্বর হাদীস অনুসারে।

২৭। একই পত্রের ৬ নম্বর হাদীস অনুসারে।

২৮। একই পত্রের ৭ নম্বর হাদীস অনুসারে।

২৯। এ বিষয়ে অষ্টম পত্রের সাকালাইন সম্পর্কিত সহীহ বর্ণনাসমূহ ও পঞ্চাশতম পত্রের

إِنَّ عَلَيّاً مع القرآن و  القرآن مع عليّ لا يفترقان

৩০। ছাব্বিশ,আটাশ,ত্রিশ,বত্রিশ ও চৌত্রিশতম পত্রগুলো বিষয়টি পরিষ্কার করে।

৩১। আটচল্লিশতম পত্রের ১৩ নম্বর হাদীস ও অন্যান্য হাদীস।

৩২। পঞ্চাশতম পত্রের বর্ণনানুসারে।

৩৩। মুবাহিলার আয়াত ও ইবনে আওফের বর্ণিত হাদীস যা পঞ্চাশতম পত্রে এসেছে।

৩৪। আটষট্টিতম পত্রে বর্ণিত সুস্পষ্ট রেওয়ায়েতসমূহ।

৩৫। আটচল্লিশতম পত্রের ১৫ নম্বর হাদীস ও তার ব্যাখ্যানুসারে।

৩৬। আমাদের বিবেক নবীর জন্য এ কর্মটি অসম্ভব মনে করে যে,তিনি অন্যদের ওসিয়ত করার জন্য নির্দেশ দিবেন ও এজন্য কঠোরতা আরোপ করবেন অথচ যে মুহূর্তে তাঁর উম্মত তাঁর ওসিয়তের চরম মুখাপেক্ষী তখন তাদের ত্যাগ করবেন। যখন তারা নেতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে তখন তাদের অভিভাবকহীন ইয়াতীমের ন্যায় অসহায় রেখে যাবেন। এটি আরো অযৌক্তিক যে,তিনি মহামূল্যবান শরীয়তের আহকামসমূহ যা সর্বোত্তম উত্তরাধিকার সেটিকে পরিত্যক্ত রেখে যাবেন যার ফলে পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত জগতের অধিবাসীরা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে এবং আল্লাহর নিদর্শন ও হুজ্জাত (প্রমাণ) যাঁরা খোদায়ী নিয়ামতের পূর্ণতাদানকারী তাঁদের ছাড়াই এ জনগোষ্ঠী কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।

তদুপরি আমাদের যুক্তি বলে নবী (সা.) আলী (আ.)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রশাসনিক প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন,তাঁকে নিজ মৃত্যুর পর গোসল,হুনুত,দাফন,দায়বদ্ধতা হতে মুক্তি দান ও দীনের ব্যাখ্যা দানের দায়িত্ব পালনের ওসিয়ত করে গিয়েছেন এবং যে সকল বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ হবে তাতে আলী (আ.)-কে সঠিক পথ প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ ও তাঁর নির্দেশ পালনের জন্য উম্মতকে ওসিয়ত করেছেন। এ পত্রে তার প্রতি ইশারা করেছি।

একাত্তরতম পত্র

১০ সফর ১৩৩০ হিঃ

আপনি কেন উম্মুল মুমিনীন ও নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে সর্বোত্তম হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন? এর কারণ কি?

আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি কেন উম্মুল মুমিনীন ও নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে সর্বোত্তম নারীর বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়ে তাঁর কথার প্রতিবাদ করছেন? তাঁর হাদীস তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন? আপনি কেন তাঁর হাদীসকে ভুলে যাচ্ছেন? অথচ তাঁর কথা সিদ্ধান্ত-নির্ধারক ও তাঁর ফয়সালাই ন্যায়। তদুপরি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসের প্রতি আমি অসম্মান করি না। তাই আপনার কথার সপক্ষে যুক্তি পেশ করুন যাতে করে আমি চিন্তা করতে পারি।

ওয়াসসালাম