আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 66350
ডাউনলোড: 8756

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 66350 / ডাউনলোড: 8756
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

একশতম পত্র

৮ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

১।   আলোচনার কেন্দ্র পরিত্যাগ।

২।   আহবান গ্রহণ।

১। আপনি স্বীকার করেছেন যে সকল বিষয়ের উল্লেখ আমরা করেছি তাতে তাঁরা হস্তক্ষেপ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্,আমাদের কথাকে সত্যায়ন করেছেন। এখন তাঁদের এ কর্মের পেছনে সৎ উদ্দেশ্য,সাধারণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দান,উম্মতের জন্য সর্বোত্তম পথ গ্রহণ,ইসলামের শক্তি ও সম্মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা প্রভৃতি বিষয় ছিল কি না তা আমাদের আলোচনার বহির্ভূত বিষয়। আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় তাঁরা এ সকল বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করেছেন কি করেন নি? কিন্তু কেন তা করেন নি তা আমাদের আলোচনার কেন্দ্র বহির্ভূত।

২। আপনার সর্বশেষ পত্রে হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে যে সকল সহীহ হাদীস আহলে সুন্নাহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সাহাবীগণ তদনুযায়ী আমল করেন নি বা সেগুলোকে উপেক্ষা করেছেন তা আলোচনা করার আহবান জানিয়েছেন। আপনি স্বয়ং সুন্নাহ্ ও হাদীসের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের বিশেষজ্ঞদের নেতা এবং হাদীস সংকলন অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর শ্রম দিয়ে আসছেন। তাই আমি কি করে ভাবতে পারি যে সকল বিষয় আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করেছি আপনি সে সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত নন? কে আমাদের ইশারাকৃত ঐ সকল বিষয়ে নিজকে আপনার হতে অধিকতর জ্ঞানী মনে করতে পারে? আহলে সুন্নাহর আলেমদের মধ্যে আপনার সমপর্যায়ের অন্য কেউ রয়েছেন কি? অবশ্যই নেই।

তাই বিস্তারিত আলোচনার জন্য আপনার যে আহবান তাকে আমরা এ বাক্যটির নমুনা মনে করছি যে, কত অধিক প্রশ্নকারী রয়েছে যারা এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত

আপনি নিশ্চয়ই জানেন,অনেক সাহাবীই হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। তাঁরা আলী (আ.)-কে কষ্ট ও অপবাদ দিতেন,তাঁর প্রতি অবিচার করতেন,তাঁকে মন্দ বলা ও গালি দেয়াকে নিজেদের জন্য অপরিহার্য কর্ম মনে করতেন,এমন কি কেউ কেউ আলী (আ.),তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের বিরুদ্ধে অস্ত্রও ধারণ করেছেন। হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহ এর সাক্ষী।

অথচ নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করেছে সে আল্লাহর আনুগত্য করেছে,আর যে আমার নির্দেশ অমান্য করেছে সে আল্লাহরই নির্দেশ অমান্য করেছে। যে ব্যক্তি আলীর আনুগত্য করেছে সে আমারই আনুগত্য করেছে। আর যে আলীর নির্দেশ অমান্য করেছে সে আমার নির্দেশই অমান্য করেছে।

অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেছেন, যদি কেউ আমা হতে বিচ্ছিন্ন হয় সে আল্লাহ্ হতে বিচ্ছিন্ন হয় আর যে আলী হতে বিচ্ছিন্ন হয় সে আমা হতেই বিচ্ছিন্ন হয়।

রাসূল আরো বলেছেন, হে আলী! তুমি পৃথিবীতেও যেমনি নেতা আখেরাতেও তেমনি নেতা। তোমার বন্ধু আমারই বন্ধু এবং আমার বন্ধু আল্লাহরই বন্ধু। তোমার শত্রু আমারই শত্রু এবং আমার শত্রু আল্লাহর শত্রু। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যে আমার পর তোমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি আলীকে মন্দ বলল (গালি দিল) সে আমাকেই মন্দ বলল,আর যে আমাকে মন্দ বলল সে আল্লাহকেই যেন মন্দ বলল।

রাসূল (সা.) বলেছেন, যে আলীকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকেই কষ্ট দিল।

অন্যত্র নবী বলেছেন, যে আলীকে ভালবাসল সে আমাকেই ভালবাসল,আর যে তাকে অপছন্দ করল সে আমাকেই অপছন্দ করল।

রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে বলেছেন, হে আলী! মুমিন ব্যতীত কেউ তোমাকে ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তোমার প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করবে না।

রাসূল (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ্! যে আলীকে ভালবাসে আপনি তাকে ভালবাসুন এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে আপনি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ করুন। তার সাহায্যকারীকে আপনি সাহায্য করুন। যে তাকে অপমানিত করতে চায় তাকে আপনি অপমানিত করুন।

একদিন রাসূল (সা.) হযরত আলী,ফাতিমা,ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের সঙ্গে যে যুদ্ধ করে আমিও তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি এবং তোমাদের সঙ্গে যে সন্ধি করে আমিও তাদের সঙ্গে সন্ধি করি।

যেদিন রাসূল (সা.) তাঁদের (আহলে বাইত) ওপর আবা (এক প্রকার বস্ত্র) বিছিয়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন সেদিন তিনি বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে যারা যুদ্ধে লিপ্ত হয় আমি তাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হই,যারা তাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করে আমিও তাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করি। তাদের সঙ্গে আমি শত্রুতা পোষণ করি যারা তাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।

এরূপ অধিকাংশ হাদীসই এই সকল সাহাবী গ্রহণ করেন নি,বরং এর বিপরীত আচরণ করেছেন। এক্ষেত্রে নিজ প্রবৃত্তি ও উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে তাঁরা এগুলোকে উপেক্ষা করেছেন। চিন্তাশীল সচেতন ব্যক্তিরা সুনান গ্রন্থসমূহে হযরত আলী (আ.)-এর ফজীলত ও মর্যাদা বর্ণনাকারী হাদীসসমূহ সম্পর্কে অবগত যার সংখ্যা শতাধিক। এ সকল হাদীসে তাঁর আনুগত্যের অপরিহার্যতা ও তাঁর সঙ্গে শত্রুতা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে সুস্পষ্টরূপে। এর প্রতিটিতে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নিকট তাঁর বিশেষ সম্মান,মর্যাদা ও স্থান বর্ণিত হয়েছে। পূর্ববর্তী পত্রসমূহে এর অনেকাংশই আমরা উল্লেখ করেছি তদুপরি অবর্ণিত অংশ এর কয়েক গুণ। আলহামদুলিল্লাহ্,আপনি সুনান গ্রন্থসমূহের ওপর পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী ও এগুলোর ওপর আপনার পূর্ণ দখল রয়েছে। আপনার নিকট প্রশ্ন এর কোনটিতে আলীর প্রতি কটুক্তি ও যুদ্ধ করা বৈধ ঘোষিত হয়েছে কি? এর কোনটিতে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করার কথা বলা হয়েছে কি? এগুলোতে তাঁর অধিকার হরণ,তাঁকে কষ্টে আপতিত করা,তাঁর প্রতি অবিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি? কখনোই নয়। তবে কেন মুসলমানদের মিম্বারে জুমআ ও ঈদের দিনে তাঁর প্রতি লানত ও অভিশাপ বর্ষণ তাঁদের সুন্নাহ্য় পরিণত হয়েছিল? কেন তাঁরা এ সকল হাদীসের বিশুদ্ধতা ও আধিক্যের প্রতি গুরুত্ব দিতেন না? কারণ তাঁরা এ সকল হাদীসকে তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী মনে করতেন। তাঁরা উত্তমরূপে জানতেন আলী (আ.) নবীর ভ্রাতা,স্থলাভিষিক্ত,উত্তরাধিকারী,রক্ত সম্পর্কীয়দের নেতা,পরম বন্ধু,তাঁর উম্মতের হারুন (আ.),তাঁর নয়নের মনির জীবনসঙ্গী (ও সমমর্যাদার ব্যক্তি),তাঁর সন্তানদের পিতা,তাঁর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী,ইখলাস (নিষ্ঠা)-এর ক্ষেত্রে সকলের ঊর্ধ্বে,সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী,সর্বাধিক আমলকারী,ধৈর্যের ক্ষেত্রে সকলের আদর্শ,ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস)-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে দৃঢ়,দীনের পথে সর্বাধিক কষ্ট সহ্যকারী,ঐশী পরীক্ষায় সর্বোত্তমরূপে উত্তীর্ণ,মর্যাদার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ,দীনের ক্ষেত্রে সকল হতে অগ্রগামী ও প্রথম,ইসলামের ওপর সর্বাধিক দক্ষ,রাসূলের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী,চরিত্র ও আচরণে রাসূলের সদৃশ,বাণী ও নীরবতার ক্ষেত্রে অনন্য এবং হেদায়েতের নমুনা। তদুপরি তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে নিজ ইচ্ছা ও প্রবৃত্তিকে এর ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সুতরাং এখানে আশ্চর্যের কিছু নেই যে,তাঁরা ইমামতের ক্ষেত্রে গাদীরের হাদীসকে দূরে ঠেলে দেবেন এবং এরূপ অন্যান্য শত হাদীসের ন্যায় গাদীরের হাদীসটিকেও নিজ ইচ্ছানুযায়ী ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা করবেন। এটিই স্বাভাবিক,তাঁরা রাসূলের এ বাণী শুনে থাকবেন যে,তিনি (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দু টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তা তোমরা আঁকড়ে ধর কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না,আল্লাহর কিতাব ও আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত। রাসূল (সা.) তাঁদের বলেন, আমার আহলে বাইতের উদাহরণ হলো নূহের তরণির ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে আর যে আরোহণ করবে না সে নিমজ্জিত হবে এবং আমার আহলে বাইত বনি ইসরাঈলের তওবা ও মুক্তির তোরণের ন্যায়। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে

রাসূল (সা.) বলেন, আকাশের তারকারা পৃথিবীবাসীদের নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষার উপায়। আমার আহলে বাইতও তদ্রুপ বিভেদ হতে মুক্তির উপায়। তাই আরবদের কোন গোত্র তাদের বিরোধিতা করলে বা তাদের বিষয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে শয়তানের দলে পরিণত হবে।

পরিশেষে বলা যায় এরূপ সকল সহীহ হাদীসের প্রতি তাঁরা অনুগত ছিলেন না।

ওয়াসসালাম

একশত একতম পত্র

১০ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

কেন হযরত আলী (আ.) সাকীফার দিন তাঁর খেলাফত ও স্থলাভিষিক্তের বিষয়ে উল্লিখিত হাদীসগুলো হতে যুক্তি উপস্থাপন করেন নি?

সত্য সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর প্রশংসা যে,এখন শুধু একটি বিষয় অজ্ঞাত রয়ে গেছে,তাঁর চি হ্ন ও নিদর্শন প্রকাশিত হয় নি। বিষয়টি আপনার নিকট উপস্থাপন করছি এ উদ্দেশ্যে যেন অস্পষ্টতা ও গোপনীয়তার পর্দা উন্মোচিত হয়। প্রশ্ন হলো কেন ইমাম আলী (আ.) হযরত আবু বকর ও তাঁর হাতে বাইয়াতকারীদের বিপক্ষে খেলাফত সম্পর্কিত যে সকল হাদীস আপনি উল্লেখ করেছেন তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন নি? আপনি কি ইমাম হতে উপরোক্ত হাদীসের অর্থ সম্পর্কে অধিকতর অবহিত?

ওয়াসসালাম

একশত দুইতম পত্র

১১ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

১।   সাকীফায় হযরত আলী (আ.)-এর উপরোক্ত দলিল উপস্থাপনে যে প্রতিবন্ধকতাসমূহ ছিল।

২।   ইমাম আলী ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা ঐ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও এতদ্সংক্রান্ত দলিলসমূহ বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন।

১। সকলেই এ বিষয়ে অবগত আছেন,হযরত আলী (আ.),বনি হাশিম ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা কেউই সাকীফায় উপস্থিত ছিলেন না। সেদিন তাঁরা সেখানে যান নি এবং সেদিনের সংঘটিত সকল কিছু হতে তাঁরা দূরে ছিলেন (অনবহিত ছিলেন)। নবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি ছিল তা হলো নবীর গোসল ও দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা। তাই ওয়াজিব এ দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ব্যস্ত ছিলেন। নবীর পবিত্র দেহ দাফনের পূর্বেই সাকীফার কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তারা তাঁদের কর্ম সম্পাদন করে আবু বকরের বাইয়াতের বিষয়টি পাকাপোক্ত করে ফেলেছিলেন। তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে,যে কোন কথা ও কর্ম যা সাকীফার বাইয়াতকে দুর্বল,সন্দেহযুক্ত ও আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিতে পারে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এজন্য তাঁরা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন।

হযরত আলী (আ.) যেহেতু সেখানে উপস্থিতই ছিলেন না সুতরাং কিরূপে তাঁদের বিরুদ্ধে এতদ্সংক্রান্ত দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করবেন? এমন কি সাকীফা ও মসজিদে নববীতে বাইয়াতের পরও তাঁকে সে সযোগ দেয়া হয় নি। কিরূপে সম্ভব তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করবেন যখন ক্ষমতাধিকারীরা সুপরিকল্পিত ও সতর্কতামূলকভাবে পূর্ব হতেই শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করেছিলেন।

বর্তমান সময়েও কোন ব্যক্তির পক্ষে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সম্ভব কি? যদি এরূপ কোন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় তবে সে ব্যক্তি রক্ষা পাবে কি? কখনোই নয়। বর্তমানের সঙ্গে সে সময়ের তুলনা করে দেখুন। কারণ বর্তমান ও সে সময়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। (আর বিশেষ ব্যক্তিরাও পরিস্থিতি তাঁদের অনুকূলে না থাকলে এরূপ পদক্ষেপে কখনোই আগ্রহী নন) তবে যদি সকল মুসলমান এ বিষয়ে পূর্ণ সচেতনতার সঙ্গে তাদের নেতার আনুগত্য করে তখনই কেবল ক্ষমতার এ প্রভাববলয় ছিন্ন করা সম্ভব,নতুবা নয়।(*২৮)

উপরন্তু হযরত আলী (আ.) সে সময় ও সেদিন এরূপ যুক্তি প্রদর্শনকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নিজ অধিকার চিরতরে বিলুপ্ত হবার উপায় ভিন্ন অন্য কিছু মনে করেন নি। কারণ তিনি খোদ ইসলাম ও তাওহীদের বিষয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি তিনি সে সময় এমন দুই সমস্যার মুখোমুখি ছিলেন যা অন্য কেউ ছিলেন না। একদিকে খেলাফতের বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট হাদীসসমূহ তাঁকে করুণস্বরে আহবান করছিল যা তাঁর হৃদয়কে রক্তাক্ত করছিল ও অন্তর দগ্ধ হচ্ছিল। অন্যদিকে তিনি আশঙ্কা করছিলেন বিদ্রোহীদের বিশৃঙ্খলার কারণে সমগ্র আরব উপদ্বীপ ধ্বংসের সম্মুখীন হবে,আরবরা দলে দলে মুরতাদ হয়ে ইসলামের প্রসার চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে যা ইসলামের বিলুপ্তিই ডেকে আনবে।

মদীনার মুনাফিকরা তাঁকে শঙ্কিত করছিল কারণ তারা নিফাকে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকার সেই সব আরব যাদের কোরআনই মুনাফিক বলে ঘোষণা করেছে তারাও তাঁর শঙ্কার কারণ ছিল। যেহেতু তারা রাসূলের ওপর অবতীর্ণ বিধানাবলী সম্পর্কে অবহিত ছিল না তাই নিফাকের ক্ষেত্রে কঠোর ছিল। তারা রাসূলের মৃত্যুর ফলে শক্তি ও মনোবল অর্জন করেছিল। অপর পক্ষে মুসলমানরা অন্ধকার ঝড়ের রাত্রিতে একদল হিংস্র নেকড়ের মুখে রাখালহীন মেষপালের মত হয়ে পড়েছিল।

ভণ্ড নবী মুসাইলামা কায্যাব,কুৎসা রটনাকারী তালহা ইবনে খুওয়াইলিদ,প্রতারক সাজাহ বিনতে হারিস ও তাদের সহযোগীরা যেমন ইসলামকে ধ্বংস এবং মুসলমানদের চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। রোম,পারস্য ও অন্যান্য সম্রাজ্যের শাসকবর্গও তেমনি ওত পেতে বসেছিল। এছাড়াও যে সকল বিদ্রোহী নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত ও তাঁদের প্রেমিকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করত তারা ইসলামের চরম বিরোধিতা করত এবং ইসলামের মূলোৎপাটনের জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিল। এ শক্তিশালী প্রতিপক্ষসমূহ রাসূলের ওফাতের বিষয়টিকে তাদের জন্য সুযোগ ও লক্ষ্যে পৌঁছা চূড়ান্ত মনে করে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা এ সুযোগের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে চেয়েছিল নির্যাতিতদের সহায় ও ন্যায়ের ধ্বজাধারী এ মুসলমানদের পৃথিবী থেকে নিশ্চি হ্ন করতে।

তখন যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা ততটা মজবুত ও দৃঢ় হয়ে ওঠে নি সেহেতু সে মুহূর্তকেই এ আক্রমণের প্রকৃত সময় বলে তারা মনে করেছে।

হযরত আলী (আ.) এ দুই ভিন্নমুখী সমস্যার মধ্যে ছিলেন। সুতরাং তিনি নিজ ন্যায্য অধিকারকে মুসলমানদের জীবনের বিপরীতে বিসর্জন দেবেন এটিই তো স্বাভাবিক।৫০৫ অবশ্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর খেলাফতের অধিকারকে ভিন্নভাবে সংরক্ষণ করবেন এবং এজন্য যারা তাঁর এ অধিকার হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে যুক্তি উপস্থাপন করেন যাতে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট না হয় আর শত্রুরাও সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিতে না পারে। এজন্যই তিনি গৃহে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন যতক্ষণ না তাঁকে জোরপূর্বক গৃহ হতে বের করা হয় (বাইয়াতের উদ্দেশ্যে)। তিনি যদি স্বেচ্ছায় বাইয়াত করতেন তবে তাঁর অনুসারীরা তাঁর খেলাফতের পক্ষে কোন দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে সক্ষম হতেন না। এভাবে হযরত আলী (আ.) কোন রক্তপাত ছাড়াই তাঁর খেলাফতের অধিকার ও দীনের হেফাজতের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন।

ইমাম যখন দেখলেন ইসলামের শত্রুদের প্রচেষ্টা নস্যাতের সঙ্গে ইসলামের টিকে থাকা নির্ভর করছে তখন তিনি অভ্যন্তরীণ ঐক্য রক্ষার স্বার্থে খলীফাদের সঙ্গে সহাবস্থানের নীতি অবলম্বন করেন। তিনি উম্মতের ঐক্য ও দীনের নিরাপত্তাকে নিজ অধিকারের ওপর অগ্রাধিকার দান করেন। আখেরাতকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দান এবং দু টি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিবের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে অধিকতর গুরুত্বের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার লক্ষ্যে তিনি তাঁদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। সুতরাং সুস্পষ্ট যে,তৎকালীন অবস্থা ও পরিবেশ তাঁকে তাঁর খেলাফতের অধিকারের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বা এজন্য বিদ্রোহের সুযোগ দেয় নি।

২। এতদ্সত্ত্বেও বিভিন্ন অবস্থা ও পরিপ্রেক্ষিতে তিনি,তাঁর সন্তানগণ ও তাঁর অনুরাগী মনীষীগণ নবী (সা.)-এর ওসিয়ত সম্পর্কিত ঐ আলোচনা ও সুস্পষ্ট হাদীসসমূহ উল্লেখ করতেন। বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে অবগত।

ওয়াসসালাম

একশত তিনতম পত্র

১২ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

ইমাম ও তাঁর বন্ধু-অনুরাগীদের যুক্তিসমূহ বর্ণনার আহবান।

ইমাম (আলী) কোথায় এরূপ কথা বলেছেন? তাঁর বংশধর ও বন্ধুরাই বা কখন এ বিষয়ে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন? তার কিছু উদাহরণ পেশ করুন।

ওয়াসসালাম