আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 61926
ডাউনলোড: 8025

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 61926 / ডাউনলোড: 8025
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

একশত আটতম পত্র

২২ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

ওসিয়ত সম্পর্কিত উপস্থাপিত প্রমাণসমূহ

হ্যাঁ,আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) ওসিয়তের বিষয়টি মিম্বারে আলোচনা করেছেন যা আমরা হুবহু ১৪৪ নম্বর পত্রে উল্লেখ করেছি। যে সকল বর্ণনাকারী হাদীসে ইয়াওমুদ্ধার বা ইয়াওমুল ইনযার (সূরা শুআরার ২১৪ নম্বর আয়াত অবতীর্ণের পটভূমি) বর্ণনা করেছেন তাঁদের অনেকেই হযরত আলীর সনদে তা নকল করেছেন। হযরত আলীর খেলাফত ও ওসিয়তের বিষয়টি তাতে সুস্পষ্টরূপে উল্লিখিত হয়েছে। আমরা ২০ নম্বর পত্রে হাদীসটি এনেছি। তদুপরি হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হাসান মুজতবা অতীব মূল্যবান যে বক্তব্যটি রাখেন তাতে তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) ও তাঁর স্থলাভিষিক্ত ও মনোনীত প্রতিনিধির (ওয়াসি) সন্তান। ৫২৭

ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেছেন, ইমাম আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতের পূর্বেও তাঁর সাথে ছিলেন এবং ফেরেশতাদের আহবান শুনতে পেতেন ও রেসালতের নূর প্রত্যক্ষ করতেন। ৫২৮ তিনি আরো বলেন, নবী (সা.) আলীকে লক্ষ্য করে বলেন : আমি যদি শেষ নবী না হতাম তবে তুমি নবুওয়াতের ক্ষেত্রে আমার অংশীদার হতে। কিন্তু তুমি নবী নও কারণ নবীর ওয়াসি (মনোনীত প্রতিনিধি) ও উত্তরসূরী। আহলে বাইতের সকল ইমাম হতে এ ভাবার্থ মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আহলে বাইতের ইমামগণ ও তাঁদের অনুসারীরা সাহাবীদের সময়কাল হতে এখন পর্যন্ত বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্বাস করেন।

সালমান ফারসী বর্ণনা করেছেন,নবী (সা.) সব সময়ই বলতেন, আমার মনোনীত প্রতিনিধি (ওয়াসি) আমার রহস্যের কেন্দ্র,আমি যে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে আমার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে রেখে যাব সে আলী ইবনে আবি তালিব। সে আমার দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ রক্ষা ও আমার ঋণসমূহ পরিশোধ করবে।

আবু আইয়ুব আনসারী বলেছেন, আমি শুনেছি রাসূল (সা.) ফাতিমাকে বলেছেন : তুমি কি জান মহান আল্লাহ্ পৃথিবীর অধিবাসীদের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার মধ্য হতে তোমার পিতাকে মনোনীত করে নবী ঘোষণা করেন। অতঃপর এর অধিবাসীদের মধ্য হতে তোমার স্বামীকে মনোনীত করে আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন যেন তোমাকে তার সাথে বিবাহ দিই ও আমার স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করি।

বুরাইদাহ্ বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি,সকল নবীরই উত্তরাধিকারী ও ওয়াসি ছিল। আমার উত্তরাধিকারী ও ওয়াসি আলী ইবনে আবি তালিব। ৫২৯

জাবির ইবনে ইয়াযীদ জো ফী যখনই ইমাম বাকির (আ.) হতে হাদীস বর্ণনা করতেন তখন বলতেনحدّثني وَصيّ الأوصياء অর্থাৎ এ হাদীসটি (নবীর) মনোনীত নির্বাহী প্রতিনিধিদের অন্যতম হতে শুনেছি।

(হারিশ বারিকীর কন্যা) উম্মুল খাইর সিফ্ফিনের যুদ্ধে কুফাবাসীদের মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে যে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন তাতে তিনি বলেন:-

هلمُّوا رَحِمكُمُ الله إلىَ الإمام العادل الوَصِيّ الوفيّ الصّدّيق الأكبر আল্লাহ্ তোমাদের ওপর দয়া করুন;তোমরা ন্যায়পরায়ণ নেতা,মনোনীত প্রতিনিধি (ওয়াসি),প্রতিশ্রুতিবান ও সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী শাসকের দিকে অগ্রসর হও। ৫৩০

পূর্ববর্তী ব্যক্তিবর্গের বর্ণিত হাদীস ও বক্তব্য হতে ওসিয়ত সম্পর্কিত উপরোক্ত অংশটুকু আপনার জন্য যথেষ্ট মনে করছি। যদি কেউ পূর্ববর্তীদের জীবনী অধ্যয়ন করেন তাহলে লক্ষ্য করবেন যেমনভাবে কোন ব্যক্তির নির্দিষ্ট নাম থাকে তেমনি ওয়াসি বলতে তাঁরা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কেই বুঝতেন ও শুধু তাঁর জন্যই এটি ব্যবহার করতেন,এমন কি আরবী ভাষার প্রসিদ্ধ অভিধান তাজুল আরুস গ্রন্থের লেখক দশম খণ্ডের ৩৯২ পৃষ্ঠায়وصي (ওয়াসি) শব্দের আলোচনায় উল্লেখ করেছেন যে,তাغني   (গাণী) শব্দের ন্যায় আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর)-এর উপাধি ছিল। কবিতাসমূহের মধ্যে আলী (আ.)-এর ওসিয়তের বিষয় এত অধিক ব্যবহৃত হয়েছে যা গণনা করা সম্ভব নয়। আমরা তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি :

আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব বলেছেন,

وصيّ رسول الله منْ دون أهله

و فارسه إِنْ قيل هل من منازل

 “ তিনি রাসূলের পরিবারের মধ্যে তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি এবং তিনি রাসূলের অশ্বারোহী বীর যখন শত্রুরা প্রতিদ্বন্দ্বী আহ্বায়ক।

মুগীরাহ্ ইবনে হারেস ইবনে আবদুল মুত্তালিব সিফ্ফিনে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ইরাকীদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে বলেন,

هذا وصي رسول الله قائدكم

وصهره وكتاب الله قد نشرا

 “ আল্লাহর কিতাবের শপথ,যা প্রচারিত হয়েছে ইনিই রাসূলে খোদার ওয়াসি,জামাতা ও তোমাদের নেতা।

আবদুল্লাহ্ ইবনে হারিস ইবনে আবু সুফিয়ান ইবনে আবদুল মুত্তালিব বলেছেন,

و مناّ عليّ ذاك صاحب خيبر

وصاحب بدر يوم سالت كتائبه

 “ খায়বার ও বদরের অধিপতি (বিজয়ী) আলী আমাদের সাথে রয়েছেন। সেদিন সেনাদল যুদ্ধের জন্য যাত্রা করেছে।

وصيّ نبيّ المصطفى و ابن عمه

فمن ذا يدانيه و من ذا يقاربه

তিনি আমাদের নবী মুস্তাফার ওয়াসি (প্রতিনিধি) ও চাচাত ভাই। কে তাঁর সমকক্ষ ও নিকটবর্তী হতে পারে?

আবুল হাইসাম ইবনে তাইহান যিনি বদরের যুদ্ধের একজন যোদ্ধা ও সহযোগী ছিলেন তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধের দিন নিম্নোক্ত কবিতা পড়েন-

إنّ الوَصِي إمامُنا و وليّنا

برح الخفا و باحت الاسرار

নবীর ওয়াসি আমাদের ইমাম ও অভিভাবক। গোপন প্রকাশিত হয়েছে,রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।

খুজাইমা ইবনে সাবিত যুশ্ শাহাদাতাইন যিনি একজন বদরী সাহাবী তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধে এ কবিতা পাঠ করেন-

يا وصي النبِي قد أجلت الحر

ب الأعادي و سارت الاظعان

হে নবীর ওয়াসি (স্থলাভিষিক্ত-প্রতিনিধি)! শত্রুদের যুদ্ধে করেছেন ছত্রভঙ্গ উষ্ট্রসমূহ দিয়েছে তাই রণভঙ্গ।

أعائش خلى عن علي و عيبه

بما ليس فيه إنّما انت والده

হে আয়েশা! আলীর কুৎসা রটনা ও নিন্দা হতে বিরত হও। কারণ কোরআনের ভাষায় তুমি মা হও।

وصي رسول الله من دون أهله

أنت علي ما كان من ذاك شاهده

তিনি (আলী) রাসূলের পরিবারের মধ্য হতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ওয়াসি তুমি নিজেও এর বাস্তব সাক্ষী (প্রত্যক্ষদর্শী)।

আবদুল্লাহ্ ইবনে বুদাইল ওয়ারাকা খাজামী যিনি হযরত আলীর সাথে সিফ্ফিনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে নিজ ভ্রাতাসহ শহীদ হন তিনি সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম সাহসী সাহাবী বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধে নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করেন-

يا قوم للخطة العظمى التي حدثت

حرب الوصي و ما للحرب من آلى

হে লোকসকল! নবীর ওয়াসির পথে যুদ্ধ এক সুর্বণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে (তা হাতছাড়া কর না) এবং যখন যুদ্ধ ব্যতীত আরোগ্যের পথ নেই।

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) সিফ্ফিনে বলেন,

ما كانَ يرضى أحمد لَوْ اخْبرا

أَنْ يقرنوا وصيه و الابترا

যদি নবী আহমাদকে খবর দেয়া হয় তাঁর ওয়াসি নির্বংশদের (মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস) সহাবস্থান করছে,কখনোই সন্তুষ্ট হবেন না।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ বাজালী,শারাহ বিন সামাতের নিকট পত্রে যে সকল পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করেন তাতে হযরত আলী সম্পর্কে বলেন,

وصي رسول الله من دون أهله

وفارسه الحامي به يضرب المثل

তিনি রাসূলের পরিবার হতে মনোনীত ওয়াসি এবং তাঁর শক্তিমান সহযোগী বলে হয়েছেন প্রবাদবাক্যে পরিণত।

উমর ইবনে হারিশা আনসারী মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়া সম্পর্কে যে কবিতা রচনা করেছেন তাতে বলেছেন,

سمى النّبي و شبه الوصي

ورايته لونها العندم

তিনি নবীর সমনামের ও তাঁর মনোনীত ওয়াসির সদৃশ এবং তাঁর পতাকা রক্তিম।

আবদুর রহমান ইবনে জাঈল হযরত ওসমানের হত্যার পর যখন মানুষ হযরত আলীর হাতে বাইয়াত করে তখন নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করেন-

لعمري لقد بايعتم ذا حفيظة

على الدين معروف العفاف موفقاً

আমার জীবনের শপথ,তোমরা এমন ব্যক্তির বাইয়াত করেছ যিনি দীনের সংরক্ষণকারী,আত্মিক পবিত্রতায় প্রসিদ্ধ ও সফলকাম।

عليّاً وَصيّ المصطفى وابن عمّه

و أوّل من صلّى اخا الدّين والتّقى

আলী নবীর মনোনীত প্রতিনিধি,তাঁর চাচাত ভাই,সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী এবং দীন ও তাকওয়ার ভ্রাতা।

আয্দ গোত্রের এক ব্যক্তি জামালের যুদ্ধে বলেন,

هذا علي وهو الوصيّ

اخاه يوم النجوة النّبيّ

এ ব্যক্তি আলী যিনি রাসূলের মনোনীত প্রতিনিধি যাকে রাসূল মুক্তির দিন ভ্রাতা বলে ঘোষণা দিয়েছেন

و قال هذا بعدي الولي

وعاه واع و نسى الشقي

এবং বলেছেন এই আলী আমার পর অভিভাবক। এ কথাকে সংরক্ষণকারীরা সংরক্ষণ করেছে ও বিপদগামীরা ভুলে গিয়েছে।

জামালের যুদ্ধে বনি দাব্বাহ্ গোত্রের এক যুবক যুদ্ধের ময়দানে এসে ঘোষণা করল, আমি আয়েশার সৈন্য। অতঃপর বলল,

نحن بنوضبة أعداء عليّ

ذاك الذى يعرف قدما بالوصي

আমরা বনি দাব্বাহ্ গোত্র সেই আলীর শত্রু,যে পূর্বকাল হতেই ওয়াসি বলে প্রসিদ্ধ

وفارس الخيل على عهد النبي

ما أنا عَنْ فضل علي بالعمى

এবং নবীর সময় শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী যোদ্ধা ছিল,তার মর্যাদা সম্পর্কে আমি অনবহিত নই।

لكنني انعى ابن عفان التقى

কিন্তু পবিত্র উসমান ইবনে আফফানের রক্তের বদলা তার হতে গ্রহণ করতে চাই।

সাঈদ ইবনে কাইস হামাদানী উষ্ট্রের যুদ্ধে হযরত আলীর সেনাদলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি যুদ্ধের দিন এ কবিতা পড়েন-

اَيّة حرب اضرمت نيرانها

كسرت يوم الوعى مرانها

হে যুদ্ধ! যার লেলিহান শিখা প্রজ্জ্বলিত হয়েছে ও যার কাঠিন্যে দৃঢ়তা ভেঙ্গে পড়েছে

قل للوصي اقبلت قحطانها

فادع بها تكفيكها همدانها

ওয়াসিকে বল বনি কাহতান তাঁর সাহায্যে এবং তাদের আহবান করে বল শুধু হামাদান গোত্রই তাঁকে চিন্তামুক্ত করবে।

هم بنوها و هم إخوانها

তারা যুদ্ধের সন্তান ও ভ্রাতা।

হযরত আলীর অন্যতম সহযোগী যিয়াদ ইবনে লুবাইদ আনসারী উষ্ট্রের যুদ্ধে বলেন,

كيف ترى الأنصار في يوم الكلب

إنّا اناس لا نبالي من عطب

 “ যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে আনসারদের কিরূপ দেখেছ? আমরা এমন একদল ব্যক্তি যারা সংকটে ভয়হীন।

ولا نبالي في الوصي من غضب

و إنّما الأنصار جدلا لعب

নবীর মনোনীত প্রতিনিধির পথে আমরা কোন ক্রোধকেই পরোয়া করি না এবং আনসাররা এ বিষয়কে খেল-তামাশা মনে করে নি,বরং গুরুত্বসহকারে নিয়েছে।

هذا علي وابن عبدالمطلب

ننصره اليوم على من قد كذب

এই আলী,আবদুল মুত্তালিবের সন্তান,তাই মিথ্যাবাদীদের বিরুদ্ধে আমরা তাঁকে সাহায্য করবো।

من يكسب البغي   فبئس ما أكتسب

যে বিদ্রোহ ও অন্যায়ের পথ অবলম্বন করে সে কত নিকৃষ্ট বস্তু আহরণ করছে!

হাজর ইবনে আদী কিন্দী ঐ দিন বলেন,

يا ربنا سلم لنا عليّا

سلم لنا المبارك لمضيا

 “ হে প্রভু! আলীকে আমাদের জন্য সুস্থ রাখুন এবং এই বরকতময় ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিকে আমাদের জন্য নিরাপদ রাখুন।

المؤمن الموحد التّقيّا

لاخطل الرأى و لا غويا

সেই ঈমানদার ও একত্ববাদী ব্যক্তি যার না মতে দুর্বলতা রয়েছে,না পথে বিচ্যুতি রয়েছে।

بل هاديا موفقا مهديا

و احْفظه ربيّ و احفظ النبيا

তিনি হেদায়েতকারী,সফল ও হেদায়েতপ্রাপ্ত। হে প্রভু! তাঁকে সংরক্ষণ কর এবং তাঁর মধ্যে তোমার নবীর অস্তিত্বকে সংরক্ষণ কর।

فيه فقد كانَ له وليّا

ثمّ ارتضاه بعده وصيا

তিনি তাঁর সহযোগী ছিলেন। আল্লাহ্ তাঁর ওয়াসির (মনোনীত প্রতিনিধি) ওপর সন্তুষ্ট হন।

আমর ইবনে আহ্জিয়া উষ্ট্রের যুদ্ধের দিনে আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইরের বক্তব্যের পর ইমাম হাসান যে বক্তব্য রাখেন সে সম্পর্কে বলেন,

حسن الخير يا شبيه ابيه

قمت فيِنا مقام خير خطيب

 “ হে উত্তম হাসান! যে পিতার সদৃশ,তুমি আমাদের মাঝে সর্বোত্তম বক্তার স্থান লাভ করেছ।

قمت بالخطبة الّتي صدع اللا

ه بِهاعن أبيك أهل العيوب

এমন বক্তব্যের জন্য দাঁড়িয়েছিলে যার মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তিদের তোমার পিতা হতে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছ।

لسْتَ كابن الزبير لجلج في القو

ل وطأطأ عنان فسل مريب

তুমি যুবাইয়ের পুত্রের মত নও যে,কথা জিহ্বায় জড়িয়ে যায় ও কথার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

وأبى الله أنْ يقوم بماقا

م به ابن الوصي و ابن النجيب

এবং আল্লাহ্ চান না সে নবীর ওয়াসি ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির পুত্রের ন্যায় কথা বলুক।

إن شخصا بين النبيّ لك الخي

ر وبين الوصي غير مشوب

যিনি নবী ও তাঁর ওয়াসি হতে জন্ম লাভ করেছেন তাঁর মধ্যে কোন ত্রুটি থাকতে পারে না।

যাজর ইবনে কাইস জো ফী উষ্ট্রের যুদ্ধে বলেন,

أضربكم حتّى تقروا لعلي

خير قريش كلها بعد النّبي

 “ তোমাদের ওপর এতটা আঘাত হানব যেন আলীর অধিকারের স্বীকৃতি দান কর যিনি নবীর পর কুরাইশদের সর্বোত্তম।

من زانه الله وسماّه الوصي

তাঁকে আল্লাহ্ সুসজ্জিত করেছেন ও ওয়াসি বলে ঘোষণা করেছেন।

যাজর ইবনে কাইস সিফ্ফিনের যুদ্ধে বলেন,

فصلى الإله على أحمد

رسول المليك تمام النعم

 “ ইলাহ্ (উপাস্য) আহমাদের ওপর দরূদ প্রেরণ করুন যিনি সকল নিয়ামতের অধিকারীর দূত,

رسول المليك و من بعده

خليفتنا القائم المدعم

 (সকল নিয়ামতের) অধিকারীর দূত ও যিনি তাঁর পর আমাদের সমর্থিত দায়িত্বপালনকারী খলীফা তাঁর ওপর দরূদ

عليا عنيت وصي النبي

يجالد عنه غواة الأمم

আমার উদ্দেশ্য নবীর মনোনীত প্রতিনিধি আলী যিনি উম্মতের বিপথগামীদের তাঁর হতে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।

আশআস ইবনে কায়েস কিন্দী এ যুদ্ধে পাঠ করেন-

اتانا الرسول، رسول الامام

فسر بمقْدَمه المسلمونا

বার্তাবাহক এসেছে,মুসলমানদের নেতার প্রেরিত ব্যক্তির আগমনে সকলে আনন্দিত।

رسول الوصي,وصي النبي

له السبق و الفضل في المؤمنِينا

প্রেরিতের মনোনীত প্রতিনিধি,নবীর ওয়াসি,যিনি মুমিনদের মধ্যে মর্যাদা ও সম্মানে সকলের অগ্রগামী।

اتانا الرسول، رسول الوصي

علي المهذب من هاشم

বার্তাবাহক এসেছে,প্রেরিতের মনোনীত প্রতিনিধি,আলী যিনি বনি হাশিমের পরিশুদ্ধ ব্যক্তি

وزير النبي وذى صهره

وخير البريه والعالم

নবীর পরামর্শদাতা ও জামাতা,যিনি সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

নোমান ইবনে আজলান যারকী আনসারী সিফ্ফিনের যুদ্ধে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃতি করেন-

كيف التفرق و الوصي إمامنا

لاكيف إلّا حيرة و تخاذلا

কেন বিভেদ কর যখন আমাদের ইমাম রাসূলের ওয়াসি। কেন নয়? কেন তোমরা দিশেহারা ও অপমানিত হওয়া ব্যতীত কিছুই চাও না?৫৩১

فذروا معاوية الغوى وتابعوا

دين الوصي لتحمدوه آجلا

বিচ্যুতদের ত্যাগ করে দীনের মনোনীত প্রতিনিধির অনুসরণ কর,হে মুয়াবিয়া! তবে কিয়ামতে প্রশংসিত হবে।

আবদুর রহমান ইবনে যুআইব আসলামী যে কবিতার মাধ্যমে মুয়াবিয়াকে ইরাকের (কুফার) সেনাদল সম্পর্কে সন্ত্রস্ত করতে চেয়েছেন তার অংশবিশেষ নিম্নরূপ-

يقودهم الوصي إليك حتّى

يردك عن ضلال و ارتياب

নবীর ওয়াসি তাদের (ইরাকের সেনাদলকে) তোমার প্রতি পরিচালিত করবেন যাতে করে তিনি তোমাকে পথভ্রষ্টতা ও সন্দেহ হতে ফিরিয়ে আনেন।

আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস ইবনে আবদুল মুত্তালিব বলেন,

إِنّ وليّ الأمر بعد محمد

علي وفي كل المواطن صاحبه

নিশ্চয়ই রাসূলের পর ওয়াসি ও নির্দেশদাতা হলেন আলী যিনি সকল ক্ষেত্রে তাঁর সহযোগী ছিলেন।

وصي رسول الله حقا و صنوه

و أول من صلى و من لان جانبه

আসলেই তিনি রাসূলের ওয়াসি ও ভ্রাতা এবং সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী ও তাঁর পক্ষাবলম্বনকারী (ইসলাম আনয়নকারী)।

খুযাইমা ইবনে সাবেত যুশ শাহাদাতাইন আবৃত্তি করেন-

وصي رسول الله من دون أهله

و فارسه مذكان في سلف الزمن

তিনি রাসূলের পরিবার হতে মনোনীত প্রতিনিধি এবং পূর্বকাল হতেই তিনি বীর যোদ্ধা।

و أول من صلّى من الناس كلّهم

سوى خيرة النسوان و الله ذو المنن

তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রমনীর (খাদিজাহ্) পর সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী পুরুষ। এ সত্যকে মহান আল্লাহর শপথ করে বলতে পারি।

কুফার ইবনে হুযাইফা আসাদী পাঠ করেন-

فحوطوا عليا و انصروه فإنّه

وصي في الإسلام أول أول

আলীকে ঘিরে থাক,তাঁকে সাহায্য কর কারণ তিনি নবীর মনোনীত প্রতিনিধি (ওয়াসি) এবং ইসলামের প্রথম ব্যক্তি।৫৩২

আবুল আসওয়াদ দুআলী আবৃত্তি করেন-

أٌحب محمداً حبا شديداً

و عبّاسا وحمزة و الوصيا

আমি মুহাম্মদকে প্রচণ্ড ভালবাসি সেই সাথে আব্বাস,হামযাহ্ এবং ওয়াসিকেও (আলী)।

আনসারদের বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও কবি নোমান ইবনে আজলান আমর ইবনে আসকে লক্ষ্য করে যে কাসিদা৫৩৩ পাঠ করেন তাতে বলেন,

و كان هواناً في عليّ و أنه

لا هل لها من حيث تدري و لا تدري

 “ আমরা আলীর প্রতি অনুরক্ত কারণ তিনি তার উপযুক্ত,সে দিকটি সম্পর্কে তুমি জান বা না-ই জান।

فذاك بعون الله يدعو إلى الهدى

وينهى عن الفحشاء والبغي والنكر

তিনি আল্লাহর সাহায্যে হেদায়েতের দিকে আহবান করেন এবং অন্যায়,অশ্লীল ও মন্দ কর্ম হতে বিরত রাখেন (নিষেধ করেন)।

وصيّ النبيّ المصطفى و ابن عمّه

وقاتل فرسان الضلالة و الكفر

তিনি নবীর ওয়াসি ও চাচাতো ভ্রাতা এবং কুফর ও বিপথ অবলম্বনকারী যোদ্ধাদের হত্যাকারী।

ফযল ইবনে আব্বাস তাঁর কবিতায় বলেছেন৫৩৪ ,

اَلا إنَّ خير النّاس بعد نبيهم

وصي النبيّ المصطفى عند ذى الذكر

 “ জেনে রাখ,আল্লাহর নিকট নবীর পর শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী মুস্তাফার ওয়াসি।

و أول من صلى وصنو نبيه

و أول من اردى الغواة لدى بدر

তিনি সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী ও নবীর ভ্রাতা এবং বদর দিবসে প্রথম ব্যক্তি যিনি পথভ্রষ্টদের হত্যা ও ধরাশায়ী করেছেন।

হাসসান ইবনে সাবেত তাঁর এক কবিতায়৫৩৫ সকল আনসারের পক্ষ থেকে হযরত আলীর প্রশংসা করে বলেছেন,

حفظتَ رسول الله فينا و عهده

إليك و من أولى به منك مَن و مَن

আমাদের মাঝে আপনি রাসূলুল্লাহকে সংরক্ষণ করেছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতিও আপনার নিকট। তাই আপনার হতে কে তাঁর অধিক নৈকট্যের অধিকারী?

ألست أخاه  في الهدى و وصيه

و أعلم منهم بالكتاب و بالسنن

আপনি কি হেদায়েতের পথে তাঁর ভ্রাতা ও ওয়াসি এবং কোরআন ও সুন্নাহর ক্ষেত্রে সকলের হতে জ্ঞানী নন?

অনেক কবি ইমাম হাসানকে লক্ষ্য করে বলেছেন৫৩৬ ,

يا أجل الأنام يابن الوصي

أنت سبط النّبيّ و ابن عليّ

 “ হে সর্বোত্তম মানুষ! আপনি নবীর ওয়াসির পুত্র ও তাঁর দৌহিত্র,আলীর সন্তান।

উম্মে সিনান বিনতে খাইসামা ইবনে খারশা মাযহাজী৫৩৭ আলী (আ.)-কে লক্ষ্য করে যে স্তুতিবাক্য পাঠ করেছেন তাতে বলেছেন,

قَد كنتَ بعد محمد خلفا لنا

أوصى إليك بناَ فكنتَ وفيا

 “ আপনি মুহাম্মদের পর আমাদের জন্য খলীফা ও তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন এবং আমাদের ব্যাপারে নবী আপনাকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা যথার্থরূপে পালন করেছেন।

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর সময়কালে যে সকল কবিতা তাঁর শানে পাঠ করা হয়েছে সেগুলো হতে তড়িঘড়ি কিছু কবিতা যা এই পত্রের কলেবরে ধারণযোগ্য তা আপনার জন্য উপস্থাপন করলাম। হযরত আলীর পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রশংসায় যত কবিতা রচিত হয়েছে তা সংগ্রহ ও সংকলনে আমি অক্ষম। সেগুলোর উল্লেখ আপনার ক্লান্তি আনতে পারে এবং সে কারণে আমাদের মূল আলোচনা হতে দূরে সরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের কবিতার প্রতিই শুধু ইশারা করেছি। এগুলো এ বিষয়ে নমুনা হিসেবে গ্রহণ করুন।

কুমাইত ইবনে যাইদ মীমী কাসিদা য় (যে কবিতায় পঙ্ক্তি মীম দ্বারা শেষ হয়েছে) এরূপ বলেছেন,

و الوصيّ الذي آمال التجوبى

به عرش امة لا نهدام

 “ ওয়াসি আশা-ভরসার আশ্রয়স্থল ও উম্মতের মর্যাদার সংরক্ষণকারী (পতন হতে রক্ষাকারী)।৫৩৮

كانَ أهل العفاف و المجد و الخي

ر و نقض الأمور و الابرام

তিনি পবিত্রতা,সম্মান ও কল্যাণের অধিকারী এবং কর্মে দৃঢ়তা অবলম্বনকারী।

و الوصيّ الولي و الفارس المعر

لم تحت العجاج غير الكهام

নবীর ওয়াসি,ওয়ালী এবং পতাকাধারী যোদ্ধা ধুলা-ধূসরিত ক্ষেত্রে শত্রুকে পরাস্ত করেন এবং কোন দুর্বলতা প্রদর্শন করেন না।

وصيّ الوصيّ ذى الخطة الفصر

ل ومردى الخصوم يوم الخصام

মনোনীতের মনোনীত প্রতিনিধি ফয়সালার সীমা নির্ধারণকারী এবং যুদ্ধের দিনে শত্রুদের

পর্যুদস্তকারী।

কাসির ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আসওয়াদ ইবনে আমের খাযায়ী যিনি কাসির ইয্যা বলে প্রসিদ্ধ,তিনি বলেন,

وصيّ النّبيّ المصطفى و ابن عمّه

وفكاك اعناق وقاضي مغارم

 “ নবী মুস্তাফার মনোনীত প্রতিনিধি (ওয়াসি) এবং চাচাত ভ্রাতা মানুষের মুক্তিদাতা ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধকারী।

আবু তামাম তাঈ তার কাসীদে রাই (যে কাসিদার পঙ্ক্তিসমূহ অক্ষর দিয়ে পরিসমাপ্ত হয়)-তে বলেছেন৫৩৯ ,

ومن قبله احلَفتم لوصيه

بداهية دهياء ليس لها قَدر

 “ পূর্বে তোমরা তাঁর ওয়াসির জন্য কসম করে বলেছিলে সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তেও সীমাহীনভাবে তাঁর সহযোগিতা করবে।

فجئتم بها بكراً عوانا و لم يكن

لها قبلها مثلا عوان ولابكر

তোমরা উপর্যুপরি আক্রমণের মাধ্যমে যে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছ যার নজির পূর্বে ছিল না।

اخوه إذا عد الفخار و صهره

فلا مثله أخ ولا مثله صهر

তাঁর (নবীর) ভ্রাতা ও জামাতা তিনি,যা গর্বের বিষয় বলে তখন মনে করা হত,তাঁর মত ভ্রাতাও নেই,জামাতাও নেই।

وشدّ به ازر النبيّ محمّد

كما شدّ من موسى بها رونه الازر

তাঁর মাধ্যমেই নবী মুহাম্মদের কোমর শক্তিশালী হয়েছে যেমনভাবে হারুনের মাধ্যমে মূসার কোমর শক্তিশালী হয়েছিল।

দে বাল ইবনে আলী খুযাঈ শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর উদ্দেশ্যে যে মর্সিয়া পড়েন তা এরূপ-

رأس ابن بنت محمد و وصيه

يا للرجال على قناة يرفع

হে লোকসকল! মুহাম্মদের কন্যা ও ওয়াসির সন্তানের মস্তক বর্শার অগ্রভাগে স্থান লাভ করেছে।

আবু তাইয়েব মুতানাব্বীকে আহলে বাইতের প্রশংসাগীতি হতে বিরত থাকতে দেখে যখন তিরস্কার করা হয় তখন তিনি বলেন,

و تركتُ مدحى للوصي تعمدا

إذ كان نوراً مستطيلاً شاملاً

আমি ওয়াসির প্রশংসা ইচ্ছাপূর্বক এজন্য ত্যাগ করেছি যে,তিনি সর্বব্যাপী সুউচ্চ নূরের অধিকারী।

و إذا استطال الشّيء قام بنفسه

وصفات ضوء الشمس تذهب باطلاً

যখন কোন বস্তু শক্তি লাভ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে (তখন সাহায্যের প্রয়োজন নেই) কারণ সূর্যের আলোর বৈশিষ্ট্য হলো অন্ধকার ও বাতিলকে দূরীভূত করা।

আবুল কাসেম তাহির ইবনে হুসাইন ইবনে তাহির আলাভী তাঁর কবিতায় ইমাম হুসাইনের প্রশংসা করে বলেছেন,

هو ابن رسول الله و ابن وصيه

و شبههما شبهت بعد التجارب

 “ তিনি রাসূলুল্লাহ্ ও তাঁর ওয়াসির সন্তান,তাঁদের অনুরূপ,এ সাদৃশ্য অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বোঝা যায়।

ওয়াসসালাম