আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 61955
ডাউনলোড: 8028

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 61955 / ডাউনলোড: 8028
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

৩৬৬। নবী (সা.)-এর এ কথাটিو أنا أولى আমি অধিকতর নিকটবর্তী’হতে বোঝা যায় নির্দেশ দানের ক্ষেত্রে তিনি তাদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ যেমন আমার ওপর নির্দেশ দানের ক্ষেত্রে পূর্ণ অধিকারী ও এ বিষয়ে অগ্রাধিকার রাখেন আমিও তোমাদের ওপর তদ্রুপ অগ্রাধিকার রাখি এবং এ সূত্রে আলীও।

৩৬৭। তাবরানী,ইবনে জারির,হাকিম,তিরমিযী সকলেই যাইদ ইবনে আরকাম হতে হাদীসটি ঠিক এভাবেই এনেছেন। ইবনে হাজার ও অন্যান্যরা এভাবেই তাবরানী হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসটি নির্ভুল ও সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন। দেখুন সাওয়ায়েক’,২৫ পৃষ্ঠা।

৩৬৮। মুসনাদে আহমাদ,৪র্থ খণ্ড,৩৭২ পৃষ্ঠা।

৩৬৯। খাসায়েসুল আলাভীয়া,২১ পৃষ্ঠা।

৩৭০। আবু তুফাইলের এ প্রশ্ন থেকে বুঝা যায় এ হাদীসটিতে যেভাবে সুস্পষ্টভাবে গাদীরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তাতে তিনি আশ্চর্যান্বিত হয়েছেন এ উম্মত হতে যারা আলীকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাই সন্দেহের বশবর্তী হয়েই তিনি বলেছেন, আপনি কি নিজে এটি শুনেছেন? যেন ঘটনাটি সকলের অপরিচিত। তাই যাইদ বলেন, এমন কোন ব্যক্তি নেই যে সেখানে উপস্থিত ছিল অথচ তা দেখে নি বা শুনে নি।”কবি বলেছেন,

সেই দিন গাদীরে খুমের বৃক্ষগুলোর নীচে

খেলাফতকে বর্ণনা করেছেন নবী নিজে

যদি আনুগত্য করত সবাই সে কথার

সেদিনের মতই সুখের দিন হত সবার

আধিকার নষ্ট হবার এমন নমুনা আর দেখি নি

এরূপ মূল্যবান সম্পদের বিনিময়ে অস্থায়ী দুনিয়াকেই কিনে নি।

৩৭১। মুসনাদ,২য় খণ্ড,৩২৫ পৃষ্ঠা।

৩৭২। মুসনাদ,৪র্থ খণ্ড,২৮১ পৃষ্ঠা।

৩৭৩। খাসায়েসুল আলাভিয়া,৪ পৃষ্ঠা।

৩৭৪। কবিতাটি ফযল ওয়ালিদ ইবনে উকবা ইবনে আবি মুঈতের কথার জবাবে বলেছিলেন যা মুহাম্মদ মাহমুদ রাফেয়ী তাঁর মুকাদ্দামাতে শারহে হাশিমিয়াহ্’গ্রন্থের ৮ম পৃষ্ঠায় এনেছেন।

৩৭৫। শিয়াদের নিকট বিষয়টি নিশ্চিত যে,এ আয়াতটি গাদীরে খুমে আলী (আ.)-এর বেলায়েত সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে এবং হাদীসটি আহলে বাইতের ইমামদের হতে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। কিন্তু আহলে বাইত ব্যতীত অন্য সূত্রে,যেমন ইমাম ওয়াহেদী তাঁর আসবাবুন নুযূল’গ্রন্থের ১৫০ পৃষ্ঠায় সূরা মায়েদার এই আয়াতের তাফসীরে দু টি নির্ভরযোগ্য সূত্রে আতীয়াহ্ ও আবু সাঈদ খুদরী হতে বলেছেন এই আয়াতটি গাদীরে খুমে আলী ইবনে আবি তালিব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

হাফেজ আবু নাঈম তাঁর নুযূলুল কোরআন’গ্রন্থে এই আয়াতের তাফসীরে দু টি সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন যার একটি আবু সাঈদ খুদরী ও অন্যটি আবু রাফে হতে।

ইমাম ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মদ হামুইয়ানি শাফেয়ী তাঁর আল-ফাওয়ায়েদ’গ্রন্থে আবু হুরাইরা হতে কয়েকটি সূত্রে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু ইসহাক সা লাবী তাঁর কাবীর’গ্রন্থে উপরোক্ত আয়াতের অর্থে দু টি নির্ভরযোগ্য সনদে এটি বর্ণনা করেছেন। এ শানে নুযূলের পক্ষে দলিল হলো উপরোক্ত আয়াত নাযিল হবার পূর্বেই নামায কায়েম হয়েছিল,যাকাত ওয়াজিব হয়েছিল,রোযা ও হজ্ব ফরয বলে ঘোষিত হয়েছিল,এগুলোর বিধি-বিধানসমূহ ও সার্বিকভাবে সকল হারাম ও হালাল রাসূল (সা.) শরীয়ত প্রবক্তা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন ও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। সুতরাং তাঁর স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি ব্যতীত কিছুই অবর্ণিত ছিল না যাতে করে মহান আল্লাহ্ এতটা তাগিদ ও গুরুত্ব দিয়ে তা প্রচারের নির্দেশ দিবেন এবং প্রচার না করাকে ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করে ভীতি প্রদর্শন করবেন। তাই খেলাফত ব্যতীত এমন কোন বিষয় ছিল না যে বিষয়টিতে নবী (সা.) মানুষের মধ্যে ইখতিলাফ ও বিভেদের ভয় পাচ্ছিলেন যে কারণে তা প্রচারে দ্বিধান্বিত ছিলেন এবং সেজন্যই আল্লাহ্ তাঁকে অভয় দিয়ে তা প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন ও বলেছেন তিনি তাঁকে রক্ষা করবেন।

৩৭৬। আহলে বাইতের ইমামদের হতে এ বিষয়ে সহীহ হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত যদিও বুখারী বলেছেন এ আয়াত আরাফাত দিবসে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু ঘরের মানুষ ঘরের বিষয়ে অপর হতে অধিকতর জ্ঞাত।

৩৭৭। আহমাদ যাইনী দাহলান তাঁর আস-সিরাতুন নাবাভীয়া’গ্রন্থে বিদায় হজ্ব’অধ্যায়ে বলেন, নবী (সা.) মদীনা হতে নব্বই হাজার লোক,কোন কোন বর্ণনা মতে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার লোকসহ যাত্রা করেন।”তিনি বলেন, এর বাইরেও অনেকেই মক্কায় বা আরাফায় তাঁর সঙ্গে মিলিত হন।”তাই গাদীরের হাদীসের সাক্ষী এক লক্ষেরও অধিক ব্যক্তি।

৩৭৮। আটচল্লিশ নম্বর পত্রের ১৫ নং হাদীস হিসেবে এটি এনেছি এবং তার টীকায় যে গ্রন্থ হতে নেয়া হয়েছে তা বর্ণনা করেছি। পুনরায় দেখুন।

৩৭৯। ইমাম আলী (আ.) তাঁকে প্রশ্ন করেন, কেন তুমি রাসূলের অন্যান্য সাহাবীদের সঙ্গে যা দেখেছ সে বিষয়ে সাক্ষ্য দিলে না? তিনি বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার বয়স অনেক হয়েছে তাই ভুলে গিয়েছি।”আলী বললেন, যদি মিথ্যা বলে থাক তাহলে আল্লাহ্ তোমাকে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত করুন যাতে তোমার পাগড়ীও তা আবৃত করতে না পারে।”তখনও তিনি ঐ স্থান ত্যাগ করেন নি তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। তিনি এরপর সব সময় বলতেন, আল্লাহর নেক বান্দার অভিশাপে আক্রান্ত হয়েছি।”ইবনে কুতাইবা দাইনূরী হযরত আলীর বিশেষত্ব ও ফজীলত বর্ণনায় এ ঘটনাটি এনেছেন। ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ’গ্রন্থে আনাস অভিশপ্ত হয়ে রোগাক্রান্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলও তাঁর মুসনাদ’গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১১৯ পৃষ্ঠায় বলেছেন সকলেই দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলেও তিন ব্যক্তি তা করে নি। তারা আলীর অভিশাপে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

৩৮০। ইবনে আসির কামিল গ্রন্থে ৩৫২ হিজরীর ঘটনাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, মুইযযুদ্দৌলা ঐ বছরের ১৮ জিলহজ্বে বাগদাদ নগরীকে সুসজ্জিত ও সুশোভিত এবং মজলিস ও সভায় পুলিশ বাহিনীকে আতশবাজী করে আনন্দ প্রকাশ করার নির্দেশ দান করেছিলেন।

তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছিলেন যে,অন্যান্য ঈদের (উৎসবের) রাত্রিগুলোর ন্যায় ১৮ জিলহজ্বের রাতেও যেন বাজার খোলা থাকে। তিনি এ কাজগুলো ঈদে গাদীরে খুমের আনন্দ করার জন্য করেছিলেন। ঐদিন শানাই ও বাঁশি অনবরত বাজছিল যার ফলে উক্ত দিবস একটি উৎসব মুখর অবিস্মরণীয় দিবসে পরিণত হয়েছিল। তারিখে কামিলের ৮ম খণ্ডের ১৮১ পৃষ্ঠার হুবহু ভাষ্য এটি।

৩৮১।

     و يوم الدوح دوح غدير خم

খুমের জলাশয়ের বৃক্ষের পাশে সমবেত হবার দিবসে

أبان له الولاية لو أطيعا .

তিনি (রাসূল) তাঁর (আলীর) বেলায়েতের ঘোষণা দিলেন প্রকাশ্যে,হায় যদি তা মানা হত...

ويوم الغدير استوضح الحق اهله

গাদীর দিবসে সত্যপন্থী সত্যকে স্পষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করেছে

بفيحاء ما فيها حجاب و لاستر

 কোন প্রকার পর্দা ও অন্তরায় ব্যতিরেকেই যেন আলোকিতরূপে ॥

أقام رسول الله يدعوهم بها

রাসূল আহবান জানালেন যাত্রা বিরতি করে

ليقربهم عرف و ينآهم نكر

 যেন তারা কল্যাণের নিকটবর্তী হয় ও অকল্যাণ হতে নিরাপদ থাকে ॥

يمد بضبعيه و يعلم أنّه

তাঁর (আলীর) হাত উঁচিয়ে করলেন ঘোষণা

وليّ و مولاكم فهل لكم خبر؟

সে তোমাদের মাওলা জেনেছ কি তা?

يروح و يغدو بالبيان لمعشر

তিনি (সা.) সকাল-সন্ধ্যায় সর্বদা সকলের কাছে এ সত্যটি ব্যাখ্যা করেছেন ব্যাপক পরিসরে

يروح بهم غمر و يغدوبهم غمر

কিন্তু মূর্খতা তাদের নিয়ে গেছে রসাতলে ॥

فكان له جهر بإثبات حقّه

তিনি (সা.) তাঁর (আলীর) অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ছিলেন কঠোর ও দৃঢ়

وكان لهم في برم حقّه جهر

আর তারা (জবরদখলকারী) তাঁর অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ছিল কঠোর ॥

أثمّ جعلتم حظّه حدّمرهفٍ

অতঃপর সেদিন তোমরা কি তাঁর ন্যায্য অধিকার থেকে তাঁকে কর নি বঞ্চিত

من البيض يوماً حظّ صاحبه القبر

 যেদিন তাঁর বন্ধু (রাসূল) হলেন কবরস্থ ॥

৩৮২। যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন স্তরে কোন রাবী বাদ পড়েন নি অর্থাৎ সকল স্তরের সকল রাবীর নামই যথাস্থানে উল্লেখ রয়েছে।

৩৮৩। যে হাদীসের সনদ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) পর্যন্ত পৌঁছেছে অর্থাৎ যা স্বয়ং রাসূলুল্লাহর হাদীস বলেই সাব্যস্ত হয়েছে।

৩৮৪। গায়াতুল মারাম’গ্রন্থের লেখক তাঁর গ্রন্থের ১৬ অধ্যায়ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। ইবনে জারির তাঁর আল বেলায়াত’গ্রন্থে ৯৫টি সূত্র হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে উকদাও ১০৫টি সূত্র উল্লেখ করে পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সিদ্দীক মাগরেবী তাঁর আল ফাতহুল মুলকুল আলী বি সিহ্হাতি হাদীসি বাবি মাদিনাতিল ইলমে আলী’গ্রন্থে বলেছেন, যাহাবী ও ইবনে উকদা গাদীরের হাদীস নিয়ে পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন।”

৩৮৫। ইবনে হাজার তাঁর আস-সাওয়ায়েক গ্রন্থের ৫ম পাঠের ১ম অধ্যায়ে তা উল্লেখ করেছেন।

৩৮৬। মুসনাদে আহমাদ,৫ম খণ্ড,৪১৯ পৃষ্ঠা।

৩৮৭। সা লাবী আহলে সুন্নাহর কয়েকজন মুহাদ্দিস ও রাবী যেমন আল্লামাহ্ শাবলানজী মিসরী হতে তাঁর নুরুল আবসার’গ্রন্থে হযরত আলীর জীবনীতে হাদীসটি এনেছেন। পৃষ্ঠা ১১।

৩৮৮। হালাবী তাঁর সীরাহ্’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ২১৪ পৃষ্ঠায় বিদায় হজ্বের আলোচনায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৩৮৯। ৩৬ নং পত্রে এ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করেছি,মনোযোগসহ তা অধ্যয়ন করুন।

৩৯০। সূরা আল হাক্কাহ্ : ৪১-৪৩।

৩৯১। দারে কুতনী হতে ইবনে হাজার তাঁর আস-সাওয়ায়েক’গ্রন্থের পঞ্চম পর্বের ১ম অধ্যায়ের শেষে ২৬ পৃষ্ঠায় ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসরাও অন্য সূত্র হতে এটি বর্ণনা করেছেন। আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ’গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের ২৮১ পৃষ্ঠায় বাররা ইবনে আযেব হতে হযরত উমরের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীসটি নকল করেছেন। এ বইয়ের ৫৪ নম্বর পত্রে আমরা তা উল্লেখ করেছি।

৩৯২। সাওয়ায়েক’গ্রন্থের ৩৬ পৃষ্ঠায় দারে কুতনীর সূত্রে এটি বর্ণিত হয়েছে।

৩৯৩। সাওয়ায়েক’গ্রন্থের ১১ পর্বের শেষাংশে এটি বর্ণিত হয়েছে। দারে কুতনীও এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।

৩৯৪। চল্লিশ সংখ্যাকে এ কারণে মনোনীত করলাম যে,হযরত আলী,আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস,আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ,আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর,আবু সাঈদ খুদরী,আবু দারদা,আবু হুরাইরা,আনাস ইবনে মালিক,মায়ায ইবনে জাবাল ও অনেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দীন সম্পর্কে চল্লিশটি হাদীস সংরক্ষণ করবে আল্লাহ্ তাকে কিয়ামতের দিন আলেম ও ফকীহদের সঙ্গে পুনরুত্থিত করবেন।”অন্যত্র বলেছেন, আল্লাহ্ তাকে ফকীহ্ আলেম হিসেবে পুনরুত্থিত করবেন।”আবু দারদার বর্ণনায় এসেছে-আমি কিয়ামতের দিন তাকে শাফায়াত করবো,ইবনে মাসউদের বর্ণনায় এসেছে-তাকে বলা হবে বেহেশতের যে দ্বার দিয়ে ইচ্ছে হয় প্রবেশ কর,ইবনে উমর রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, সে শহীদদের সঙ্গে পুনরুত্থিত হবে এবং আলেমের খাতায়ও তার নাম লেখা হবে।” আমরা আমাদের এই পত্রসহ অন্যান্য কিছু পত্রে রাসূলের নিুোক্ত হাদীস অনুযায়ী আমলের প্রত্যাশী। রাসূল বলেছেন, আল্লাহ্ সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করুন যে আমাদের বাণীসমূহ শ্রবণ করেছে,তা সংরক্ষণ করেছে এবং ঠিক যেমনটি শুনেছে তেমনই অন্যদের নিকট পৌঁছিয়েছে। উপস্থিতরা অনুপস্থিতদের নিকট যেন তা পৌঁছে দেয়।”

৩৯৫। ১-১৬ পর্যন্ত হাদীসসমূহ ইকমালুদ্দীন ওয়া ইতমামুন নিয়ামাহ্’গ্রন্থের ১৪৯-১৬৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

৩৯৬। ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৫ পৃষ্ঠায় আহলে বাইত ও শিয়াদের ওপর আপতিত কষ্টের বিবরণ দিয়েছেন এবং ইমাম বাকির (আ.) হতে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন যা পাঠ করা আপনার জন্য লাভজনক হবে।

৩৯৭। এ হাদীসটি ও এর পর আরো দু টি হাদীস আটচল্লিশ নং পত্রে যথাক্রমে ৯,১০ ও ১১ নং হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছি। ঐখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন।

৩৯৮। বত্রিশ নম্বর পত্রে বর্ণিত হয়েছে।

৩৯৯। বিশ নম্বর পত্রে বর্ণিত হয়েছে।

৪০০। আটষট্টি নম্বর পত্রে দেখুন।

৪০১। হাকিম তাঁর মুসতাদরাক’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৬ পৃষ্ঠায় বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ সূত্রে আলী (আ.) হতে উপরোক্ত বর্ণনা করেছেন।

৪০২। হাদীসটি সাবিত ও মুস্তাফিয। যিয়া মুকাদ্দাসী তাঁর আল মুখতারা’এবং ইবনে জারির তাঁর তাহ্যীবুল আসার’গ্রন্থে হাদীসটি এনেছেন। মুত্তাকী হিন্দী তাঁর কানযুল উম্মাল’গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে ৬১৫৫ নম্বর হাদীস হিসেবে,নাসায়ী তাঁর খাসায়েসুল আলাভীয়া’গ্রন্থের ১৮ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে আবিল হাদীদ তাবারীর সূত্রে তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহর ৩য় খণ্ডের ২৫৫ পৃষ্ঠায় হযরত আলীর কাসিয়াহ্’নামক খুতবার আলোচনায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বলের প্রথম খণ্ডের ১৫৯ পৃষ্ঠায়ও হাদীসটি কাছাকাছি শব্দে বর্ণিত হয়েছে।

৪০৩। ৩য় খণ্ড,পৃষ্ঠা ১২৫;কানযুল উম্মাল ৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃষ্ঠা ৪০০,৬০৮৪ নম্বর হাদীস।

৪০৪। এ হাদীসটি যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল’গ্রন্থে শারিকের পরিচিতি পর্বে এনে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন এবং বলেছেন, মুহাম্মদ ইবনে হামিদ রাযী বিশ্বস্ত নয়।” কিন্তু ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল,আবুল কাসেম বাগাভী,ইবনে জারির তাবারী ও ইবনে মুঈনের মত বিশিষ্ট হাদীসবেত্তাগণ মুহাম্মদ ইবনে হামিদকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন ও তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাহাবী মিযানুল ই তিদাল’গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে হামিদকে এ সকল ব্যক্তির দৃষ্টিতে বিশ্বস্ত বলেছেন ও এ পর্যায়ের অনেককেই তাঁর ছাত্র বলেছেন। তাঁর একমাত্র অপরাধ রাফেযী হওয়া নতুবা তাঁকে অন্য কোন দোষে অভিযুক্ত করা যায় না।

৪০৫। এ হাদীসটি ঠিক এভাবেই কানযুল উম্মাল’গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠার শেষে ২৫৭০ নম্বর হাদীস হিসেবে এসেছে। মুসনাদে আহমাদের ৫ম খণ্ডের ৩২ পৃষ্ঠার প্রান্তে মুদ্রিত মুনতাখাবে কানযুল উম্মালে হাদীসটি দেখতে পারেন।

৪০৬। এই হাদীসটি ঠিক এভাবেই কানযুল উম্মাল’গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় প্রান্ত লেখনিতে (হাশিয়ায়),কানযুল উম্মাল গ্রন্থের নির্বাচিত অংশেও হাদীসটি এসেছে।

৪০৭। এই হাদীসটি কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯১ পৃষ্ঠায় হযরত আলীর মর্যাদা বর্ণনায় ৫৯৯২ নং হাদীস হিসেবে উত্তম সনদে বর্ণিত হয়েছে।

৪০৮। ইবনে আবি হাতেম আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণনা করেছেন যে,হযরত আবু বকর ও উমর রাসূলের নিকট হযরত ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন। রাসূল (সা.) নেতিবাচক জবাব দিলে তাঁরা হযরত আলীকে বিষয়টি অবহিত করে বললেন, আমাদের মনে হয় তুমি ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব করলে তিনি গ্রহণ করবেন।”বেশ কয়েকজন প্রসিদ্ধ আলেম ও হাদীসবেত্তা,যেমন ইবনে হাজার তাঁর আস-সাওয়ায়েক’গ্রন্থের একাদশ অধ্যায়ে ইবনে হাতেম হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ঐ স্থানেই অনুরূপ একটি হাদীস আহমাদ সূত্রে আনাস হতে বর্ণিত হয়েছে। সাওয়ায়েক’গ্রন্থের ১১ অধ্যায়ে ১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার আবু দাউদ সিস্তানী হতে বর্ণনা করেছেন,সর্বপ্রথম হযরত আবু বকর হযরত ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব করলে তিনি রাজী না হলে হযরত উমর নিজের জন্য অনুরূপ প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। রাসূল (সা.) তাতেও সম্মতি দান না করলে তাঁরা রাসূলের অনুভূতি বুঝে হযরত আলীকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আহবান করলেন।

ইবনে জারির বর্ণনা করেছেন,হযরত আলী বর্ণনা করেছেন, হযরত আবু বকর ও উমর হযরত ফাতিমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে রাসূল রাজী না হওয়ায় হযরত উমর আমাকে বলেন : হে আলী! তুমি এ প্রস্তাবের জন্য সর্বাধিক যোগ্য।”দুলাবী তাঁর আয যুররিয়াতুত ত্বাহিরাহ্’গ্রন্থে হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন। হাদীসটি কানযুল উম্মাল’গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯২ পৃষ্ঠায় ৬০০৭ নং হাদীস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

৪০৯। এই হাদীসটি আমাদের উল্লিখিত সনদে ঠিক এভাবেই কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় ২৫৪৩ নম্বর হাদীস হিসেবে এসেছে। মুত্তাকী হিন্দী এ হাদীসটি হাকিমের সূত্রে ইবনে আব্বাস ও আবু হুরাইরা হতে এবং তাবরানী ও খাতীব বাগদাদী সূত্রে শুধু ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। মুনতাখাবে কানয ও খাতীবের মুত্তাফিক’হতে শুধু ইবনে আব্বাসের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যা মুসনাদে আহমাদের ৫ম খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠার প্রথম সারির প্রান্ত লেখনিতে এসেছে। ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহর ২য় খণ্ডের ৪৫১ পৃষ্ঠায় মুসনাদে আহমাদ হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৪১০। এই হাদীসটি বুখারী তাঁর ওয়াসাইয়া’অধ্যায়ে ২য় খণ্ডের ৮৩ পৃষ্ঠায় (নতুন সংকলনের ৪র্থ খণ্ডের ৩য় পৃষ্ঠায়) এবং নবীর অসুস্থতা ও মৃত্যু’অধ্যায়ে ৩য় খণ্ডের ৬৪ পৃষ্ঠায় ও মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১৪ পৃষ্ঠায় (নতুন সংকলনের ৩য় খণ্ডের ১২৫৭ পৃষ্ঠায় তারকুল ওয়াসিয়া লিমান লাইসা লাহু শাইউন’অধ্যায়ে) বর্ণনা করেছেন।

৪১১। লক্ষ্য করুন বুখারী ও মুসলিম নিজেদের অজ্ঞাতসারেই উপরোক্ত হাদীসে রাসূল (সা.) কর্তৃক আলীর স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। কারণ যাঁরা আলীর স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি বর্ণনা করতেন তাঁরা হযরত আয়েশার আশেপাশেই ছিলেন,তাঁরা উম্মতের বাইরের কেউ ছিলেন না,বরং সাহাবী বা তাবেয়ীদের অন্তুর্ভুক্ত ছিলেন। সাহসিকতার সঙ্গে এ বিষয়টির বর্ণনা উম্মুল মুমিনীনের রাজনৈতিক চিন্তার পরিপন্থী হবার কারণে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে এরূপ জবাব দিতেন যা অযৌক্তিক। সুনানে নাসায়ীর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৪১ পৃষ্ঠার (মিশরের আল আযহার হতে প্রকাশিত) প্রান্ত লেখনিতে ইমাম সানাদী বলেছেন, এ কথাটি মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়তের বিষয়টির পরিপন্থী নয়। কারণ এ থেকে বোঝা যায় না যে,তিনি অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ওসিয়ত করার সুযোগ পান নি। এটি কি সম্ভব যে রাসূল (সা.) মৃত্যুর অনেক পূর্বেই নিজ ওফাতের সংবাদ দিয়েছেন অথচ অসুস্থতার সময়ও ওসিয়ত হতে বিরত থাকবেন..?

গ্রন্থটির এ আলোচনা গভীরভাবে অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করুন।

৪১২। হযরত আয়েশার কথা কখনো এভাবে এসেছে- আমার উদর ও চিবুকের মাঝে তিনি ইন্তেকাল করেছেন’,কখনো আমার বুক ও গলার মাঝে মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন’-এ দু টি বর্ণনা সহীহ বুখারীর তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যু’নামক অধ্যায়ে এসেছে। কিন্তু রাসূল (সা.) শেষ কথা কি বলেন’নামক অধ্যায়ে (পূর্বোক্ত অধ্যায়ের পরবর্তী অধ্যায়) বলা হয়েছে নবী (সা.)-এর মাথা আমার ঊরুর ওপর ছিল’।

৪১৩। ২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা ১৪,ওসিয়তের অধ্যায়।

৪১৪। উভয় গ্রন্থের ওয়াসাইয়া’অধ্যায়ে দেখুন।

৪১৫। এ হাদীস ও এর পরবর্তী হাদীসসমূহ সহীহ ও মুস্তাফিয সূত্রে বর্ণিত। উপরোক্ত হাদীসটি ইসতিয়াব’গ্রন্থে হযরত খাদিজাহর জীবনী পর্বে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৬। বুখারী غيرةُ النّساء و وجدهن ’অধ্যায়ে নিকাহ্’পর্বের শেষে হাদীসটি এনেছেন।

৪১৭। এ সংক্রান্ত হাদীসসমূহ কালিমাতুল গাররা’নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছি।

৪১৮। তিরমিযী উম্মুল মুমিনীন সাফিয়ার দাস কানানা হতে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবদুল বার তাঁর ইসতিয়াব’গ্রন্থে হযরত সাফিয়ার জীবনী আলোচনায়,ইবনে হাজার তাঁর ইসাবাহ্’গ্রন্থে ও তাঁর পরিচিতি পর্বে,শেখ রশিদ রেযা তাঁর আল মিনার’গ্রন্থের ১২তম খণ্ডের ৫৮৯ পৃষ্ঠায় এবং অন্যান্য বর্ণনাকারীরাও ঘটনাটি নকল করেছেন।

৪১৯। আহলে সুন্নাহর সিহাহ সিত্তাহর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বুখারীতে নবীর স্ত্রীদের ঘরে কি ঘটেছিল’নামক অধ্যায়ে কিতাবে জিহাদ’পর্বে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

৪২০। জঙ্গে জামালে আসগর ৩২ হিজরীর ২৫ রবিউস্ সানীতে হযরত আলীর বসরায় প্রবেশের পূর্বে সংঘটিত হয়। হযরত আয়েশা,তালহা ও যুবায়েরকে সাথে নিয়ে বসরায় হামলা করেন। তখন হযরত আলীর পক্ষে উসমান ইবনে হুনাইফ আনসারী বসরার প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন। হযরত আলীর চল্লিশজন অনুসারী মসজিদের মধ্যে ও সত্তর জন অন্যত্র শহীদ হন। উসমান ইবনে হুনাইফ যিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন,তারা তাঁর চুল,ভ্রু ও দাড়ি-গোঁফ টেনে উপড়ে ফেলে,তাঁকে বন্দী ও প্রহার করে বসরা হতে বের করে দেয়। যদিও তারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু উসমানের ভ্রাতা সাহল বিন হুনাইফ আনসারদের ভয়ে ভীত হয়ে তা করে নি। কারণ তাদের দ্বারা তাঁর খুনের প্রতিশোধ নেয়ার সম্ভাবনা ছিল। হাকিম ইবনে জাবালা তাঁর গোত্রের অনেককে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং আবদে কাইস ও বনি রাবিয়ার বেশ কিছু ব্যক্তিসহ শাহাদাত বরণ করেন। হাকিম তাঁর গোত্রের প্রধান এবং জ্ঞানী,আত্ম-মর্যাদা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। হাকিমের সাথে তাঁর ভ্রাতা রাআল ও পুত্র আশরাফও শহীদ হন এবং আয়েশার বাহিনীর হাতে বসরা বিজিত হয়। হযরত আলী এটি জানার পর বসরায় পৌঁছলে আয়েশা ও তাঁর বাহিনী আলীর বিরুদ্ধে জঙ্গে জামালে আকবর’-এর প্রস্তুতি নেয়। এ দুই যুদ্ধের ঘটনা ইবনে জারির,ইবনে আসির ও অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।

৪২১। বিশ্বস্ত ঐতিহাসিক ও হাদীসবিদগণ এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। যেমন আবুল ফারাজ ইস্ফাহানী তাঁর মাকাতিলুত তালেবীন’গ্রন্থে হযরত আলীর জীবনী আলোচনায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৪২২। যেরূপ বুখারী তাঁর সহীহ হাদীসগ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৬২ পৃষ্ঠায় নবীর অসুস্থতা ও মুত্যু’অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। 

৪২৩। হযরত আয়েশা আলীকে পছন্দ করতেন না এবং কখনো ভালভাবে তাঁর স্মরণ করতেন না’ইবনে আব্বাসের এ কথাটি বুখারী আনেন নি যেমনটি তিনি অন্যান্য স্থানেও করেছেন। অবশ্য সুনান লেখকদের অনেকেই সহীহ সনদে এটি বর্ণনা করেছেন। যেমন ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত’গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ২য় অংশের ২৯ পৃষ্ঠায় আহমদ ইবনে হাজ্জাজ সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুবারক হতে এবং তিনি ইউনুস ও মুয়াম্মার হতে,তাঁরা যুহরী সূত্রে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ হতে ইবনে আব্বাসের এ কথাটি উদ্ধৃত করেছেন। এ হাদীসের রিজালগণের সকলেই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত।   

৪২৪। মুয়াম্মার কাতাদা হতে বর্ণনা করেছেন,হযরত আলী রাসূলের ইন্তেকালের পর তাঁর ঋণ পরিশোধ করেন যার পরিমাণ পাঁচ লক্ষ দিরহাম। কানযুল উম্মালের চতুর্থ খণ্ডের ৬০ পৃষ্ঠায় ১১৭০ নম্বর হাদীসে এটি বর্ণিত হয়েছে।

৪২৫। বুখারীর ৩য় খণ্ডের ৩৭ পৃষ্ঠায় খায়বারের যুদ্ধের অধ্যায়ের শেষে এ সম্পর্কিত হাদীস রয়েছে। মুসলিমও তাঁরقول النّبيّ لا نورّث ما تركناه فهو صدقة অধ্যায়ে ২য় খণ্ডের ৭২ পৃষ্ঠায় কিতাবে জিহাদ’পর্বে এরূপ হাদীস এনেছেন।

৪২৬। বুখারীর ২য় খণ্ডের ১১৮ পৃষ্ঠায় কিতাবুল জিহাদ ওয়াস্ সেইর’পর্বের জাওয়ায়েযুল ওয়াফাদ’অধ্যায় দেখুন।

৪২৭। যে কেউ তাঁদের ওপর আপতিত এ বিপদের বিবরণ জানতে চান মুসতাদরাকে হাকিমের চতুর্থ খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায় এবং যাহাবীর তালখিসে মুসতাদরাকে হযরত মারিয়ার জীবনী অধ্যয়ন করতে পারেন।

৪২৮। যেমনটি বুখারী তাঁর ৩য় খণ্ডের ১৩৬ পৃষ্ঠায় সূরা তাহরীমের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। সেখানে হযরত উমর হতে কয়েকটি হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে যে দু জন নারী রাসূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন তাঁর হলেন আয়েশা ও হাফসা। কয়েকটি দীর্ঘ হাদীস সেখানে রয়েছে যা পড়লে আপনি আশ্চর্যান্বিত হবেন।

৪২৯। হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের চতৃর্থ খণ্ডের ৩৭ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের ১০৪ পৃষ্ঠায় হযরত আসমার জীবনী পর্বে হাদীসটি এনেছেন। ঘটনাটি বেশ প্রসিদ্ধ বলে ইসতিয়াব,আল ইসাবাহ্ এবং ইবনে জারীরও তাঁর গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৩০। এ ঘটনাটি কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১১৫ অথবা ২৯৪ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে সা’দের তাবাকাত গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের শারাফ বিনতে খালীফার জীবনীতে এসেছে।

৪৩১। কানযুল উম্মাল,৭ম খণ্ড,১১৬ পৃষ্ঠা,১০২০ নং হাদীস। গাজ্জালী তাঁর ইহ্ইয়াউল উলূম গ্রন্থে আদাবুন নিকাহ্’অধ্যায়ে (২য় খণ্ড,৩৫ পৃষ্ঠা) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৪৩২। গাজ্জালী প্রণীত ইহ্ইয়াউল উলূম,২য় খণ্ড,৩য় অধ্যায় ও মুকাশিফাতুল কুলুব’,২৩৮ পৃষ্ঠা।

৪৩৩। তাবাকাত’গ্রন্থের ২য় খণ্ডের দ্বিতীয়াংশের ৫১ পৃষ্ঠায়من قال توفّى رسولُ اللهِ وَ هوَ في حجر عليّ অধ্যায়ে হাদীসটি এসেছে যা কানযুল উম্মালের ৪র্থ খণ্ডের ৫৫ পৃষ্ঠার ১১০৭ নম্বর হাদীস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।

৪৩৪। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯২ পৃষ্ঠার ৬০০৯ নম্বর হাদীস।

৪৩৫। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত’গ্রন্থের ২য় খণ্ডের দ্বিতীয়াংশের ৫১ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। কানযুল উম্মালের ৪র্থ খণ্ডের ৫৫ পৃষ্ঠায় ১১০৬ নম্বর হাদীস। 

৪৩৬। কানযুল উম্মাল,৪র্থ খণ্ড,৫৪ পৃষ্ঠা ১১০৮ নম্বর হাদীস।

৪৩৭। প্রাগুক্ত।

৪৩৮। প্রাগুক্ত।

৪৩৯। নাহজুল বালাগাহ্,১৯৭ নম্বর খুতবা।

৪৪০। নাহজুল বালাগাহ্,হিকমত ২০২।

৪৪১। হাকিম নিশাবুরী তাঁর মুসতাদরাক’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩৯ পৃষ্ঠায় হাদীসটি সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন কিন্তু বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেন নি। যাহাবী তাঁর তালখিসে মুসতাদরাক’গ্রন্থের হাদীসটির বিশুদ্ধতার বিষয় স্বীকার করেছেন। ইবনে আবি শাইবা তাঁর সুনানে হাদীসটি এনেছেন এবং মুত্তাকী হিন্দী তাঁর কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪০০ পৃষ্ঠায় ৯৬ নম্বর হাদীস হিসেবে এটিকে উল্লেখ করেছেন।

৪৪২। এ হাদীসটি আবু ইয়ালী কামিল ইবনে তালহা হতে,তিনি ইবনে লাহিয়া হতে,তিনি হাই ইবনে আবদে মাগফিরী হতে,তিনি আবু আবদুর রহমান হাবলী হতে,তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আবু নাঈম তাঁর হুলইয়া’গ্রন্থে এবং আবু আহমাদ দারমী তাঁর নথিতে হাদীসটি এনেছেন যা কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। তাবরানী তাঁর কাবীর’গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন,তায়েফের যুদ্ধে নবী (সা.)-এর সাথে হযরত আলীর একান্ত সংলাপ দীর্ঘ হলে হযরত আবু বকর রাসূলকে কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি তার সাথে সংলাপ করি নি,বরং আল্লাহ্ তার সাথে গোপন সংলাপ করেছেন।”হাদীসটি কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯৯ পৃষ্ঠায় ৬০৭৫ নম্বর হাদীস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। নবী (সা.) প্রায়ই আলীর সাথে একান্ত ও গোপন সংলাপে বসতেন। এ রকম এক একান্ত সংলাপের মুহূর্তে হযরত আয়েশা উপস্থিত হয়ে আলীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, প্রতি নয় দিনের একদিন আমার জন্য ধার্য,সেদিনটিও তুমি ছাড়বে না? রাসূল (সা.)-এর চেহারা এতে রক্তিম হয়ে উঠল এবং তিনি কঠোর দৃষ্টিতে আয়েশার দিকে তাকালেন। শারহে নাহজুল বালাগাহ্,ইবনে আবিল হাদীদ,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা ৭৮।

৪৪৩।( إنْ تتوبا فقد صغت قلوبكما ) -সূরা তাহরীম।

৪৪৪।( و إنْ تَظاهرا عليه فإن الله هُوَ مولاة و جبريل و صالح المؤمنين و الملائكة بعد ذلك ظهير )

আয়াতটি নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে আয়েশা ও হাফসার মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ্ তাঁকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। নবীর ওয়াসি বা স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে তাঁর ভূমিকা নবীর ওসিয়ত অস্বীকার ও তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রমাণিত।

৪৪৫। এ বিষয়ের প্রতি ইশারা করে আয়াতে বলা হয়েছে,

) عسى ربُّه إنْ طلّقكُنّ أنْ يبدله أزواجاً خيْراً منكنّ مسلماتٍ مؤمناتٍ(

৪৪৬। সূরা তাহরীমের এ আয়াত-( ضَرَ‌بَ اللَّـهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ كَفَرُ‌وا امْرَ‌أَتَ نُوحٍ وَامْرَ‌أَتَ لُوطٍ )

৪৪৭। সূরা তাহরীমের এ আয়াত- ( يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّ‌مُ مَا أَحَلَّ اللَّـهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْ‌ضَاتَ أَزْوَاجِكَ )

৪৪৮। বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১২৫ পৃষ্ঠায়ما جاء في بيوت أزواج النّبيّ পর্বে

كتاب الجهادو السير তে খুমসের আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়ে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমের ২য় খণ্ডের ৫০৩ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এভাবে এসেছে-

خرج رسول الله (ص) من بيت عايشة فقال رأس الكفر من ها هنا حيث يطلع قرن الشّيطان হযরত আয়েশার ঘর হতে বের হয়ে রাসূল (সা.) বললেন, কুফরের শির এখানেই,এখান হতেই শয়তানের শিং উত্থিত হবে।”

৪৪৯। সহীহ বুখারীরما يجوز من العمل في الصّلاة ,১ম খণ্ডের ১০৩ পৃষ্ঠায় দেখুন।

৪৫০। হযরত আয়েশা হযরত উসমানের প্রায় কর্মকাণ্ডেরই সমলোচনা করতেন ও তাঁকে মন্দ ও উপনামে ডাকতেন ও বলতেন,‘‘ এই বৃদ্ধ ইহুদীকে হত্যা কর,সে কাফির হয়ে গেছে। সকল ঐতিহাসিক যাঁরা তৎকালীন ঘটনাপ্রবাহ বণনা করেছেন তাঁরা এ ঘটনাসমূহ উল্লেখ করেছেন। যেমন ইবনে জারির ও ইবনে আসির তাঁদের ইতিহাস গ্রন্থে এটি উল্লেখ করেছেন। সমকালীন ঐতিহাসিকদের অনেকেই এর সমলোচনা করেছেন-

 فمنك البداء و منك الغير

তোমা হতেই শুরু ও পরিবর্তন

و منك الرياح و منك المطر

তোমা হতেই বায়ূ ও বৃষ্টি

و أنت امرتِ بقتل الإمام

তুমিই ইমামকে হত্যার নির্দেশদাত্রী

و قلتِ لنا انه قد كفر

ও তাকে কাফির বলে ঘোষণাকারিণী।

সারকথা সকল বিশৃঙ্খলা ও অসন্তোষের মূলে ছিলেন তিনি।

৪৫১।( وَقَرْ‌نَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّ‌جْنَ تَبَرُّ‌جَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ ) এবং তোমরা তোমাদের নিজ গৃহে অবস্থান কর এবং আদি জাহেলিয়াত যুগে দৈহিক সৌন্দর্য্য প্রদর্শনের ন্যায় স্বীয় সৌন্দর্য্য প্রদর্শন কর না।-(সূরা আহযাব : ৩৩)

৪৫২। হযরত আয়েশা জামালের যুদ্ধের সময় যে উষ্ট্রে আরোহণ করেন তা ইয়ালী ইবনে উমাইয়্যা তাঁর জন্য এনেছিল। উষ্ট্রটি শক্তিশালী,ক্ষিপ্ত ও অসহিষ্ণু প্রকৃতির ছিল। যখন উষ্ট্রটি তাঁর সামনে আনা হলো তখন তিনি তা দেখে আশ্চর্যাম্বিত হলেন। কিন্তু যখন শুনলেন উষ্ট্রটির নাম আসকার’তখন বললেন, এটি ফিরিয়ে নাও কারণ রাসূল (সা.) এ নামের উষ্ট্রের পিঠে আরোহণ করতে আমাকে নিষেধ করেছেন।”কিন্তু যখন তারা উষ্ট্রটির বাহ্যিক চেহারার কিছু পরিবর্তন করে বলল যে,এটি ওর চেয়ে শক্তিশালী অন্য একটি উষ্ট্র তখন এ উষ্ট্রে আরোহণে তিনি রাজী হলেন। বেশকিছু ঐতিহাসিক,যেমন ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’র ২য় খণ্ডের ৮ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন। 

৪৫৩। এ সম্পর্কিত হাদীস প্রসিদ্ধ (মাশহুর) সূত্রে বর্ণিত এবং নবী (সা.)-এর অন্যতম মুজিযা বলে স্বীকৃত। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৫২ ও ৯৭ পৃষ্ঠায় হযরত আয়েশা হতে সংক্ষিপ্ত আকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাকিম তাঁর মুসতাদরাক’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২০ পৃষ্ঠায়ও এটি বর্ণনা করেছেন। যাহাবী তাঁর তালখিস’গ্রন্থে হাদীসটির সত্যতা স্বীকার করেছেন।

৪৫৪। হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম তাঁদের সহীহ গ্রন্থদ্বয়ে আয়েশা হতে প্রতিষ্ঠিত সনদে এনেছেন। বুখারীর ১ম খণ্ডের কিতাবুল ঈদাইন’অধ্যায়ের ১১৬ পৃষ্ঠায় এবং মুসলিমের ১ম খণ্ডের ৩২৭ পৃষ্ঠায় ও মুসনাদে আহমাদের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

৪৫৫। বুখারী,মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদের পূর্বোল্লিখিত আলোচনায় দেখুন।

৪৫৬। আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ’-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায় হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন।

৪৫৭। আহমাদ তাঁর মুসনাদের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায় আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন।

৪৫৮। মুত্তাকী হিন্দী তাঁর কানযুল উম্মাল’-এর ৭ম খণ্ডের ১০১৭ নম্বর হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৫৯। রাসূলের ওফাতের পূর্বে আলীই যে তাঁকে এপাশ ওপাশ করাতেন ও তাঁর সেবায় নিয়োজিত থকতেন এ বিষয়ে ইজমা রয়েছে। তাই রাসূলের ইন্তেকালের মুহূর্তে হযরত আয়েশা ও ফেরেশতা ব্যতীত অন্য কেউ ছিলেন না-এ কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। তাহলে তখন হযরত আলী,ফাতিমা,আব্বাস,সাফিয়া,রাসূলের অন্যান্য স্ত্রী ও বনি হাশিম কোথায় ছিলেন?

 ৪৬০। আবু বকর আহমাদ ইবনে আবদুল আযীয জাওহারী তাঁর আস-সাকীফা’গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবিল হাদীদও তাঁর শারহে নাহাজুল বালাগাহ্’র ১ম খণ্ডের ১৩২ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৬১। সহীহ বুখারীর ৪র্থ খণ্ডের ১১৯ পৃষ্ঠারرجم الحبلى من الزنا اذا احصنت অধ্যায়ে দেখুন। ইবনে জারির তাবারী তাঁর ইতিহাস’গ্রন্থে ১১ হিজরীর ঘটনা বর্ণনায় এবং ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’র ১ম খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৬২। উক্ত ব্যক্তি ছিলেন যুবাইর ইবনুল আওয়াম। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ,যদি হযরত উমর মৃত্যুবরণ করেন তাহলে হযরত আলীর হাতে বাইয়াত করবো। কারণ হযরত আবু বকরের বাইয়াত আকস্মিকভাবে হয়েছিল।”হযরত উমর এ কথা শোনার পর অত্যন্ত রাগান্বিত হন ও উপরোল্লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।

৪৬৩। হাদীসটির অর্থ হলো মানুষের বাইয়াতের অধিকার পরামর্শ ও ঐকমত্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই যদি দুই ব্যক্তি স্বৈরাচারী পন্থায় সকলকে অগ্রাহ্য করে একে অপরের হাতে বাইয়াত করে জনসাধারণকে তার হাতে বাইয়াত করতে বাধ্য করে তাহলে তাদের সামাজিক ঐক্য বিনষ্টের জন্য দায়ী করা যায়,নয় কি? সুতরাং জনসাধারণের উচিত হবে এ দু জনের কারো হাতেই বাইয়াত না করে তৃতীয় কোন ব্যক্তির হাতে বাইয়াত করা ও তাদের প্রত্যাখ্যান করা। কারণ এদের যে কোন এক ব্যক্তির হাতে বাইয়াত করার অর্থ হলো সমাজের ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মতামতকে মূল্যহীন মনে করে ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের অনুবর্তী হওয়া যার ফল তাদের নিহত হবার মাধ্যমে ভোগ করতে হবে।

আমার মতে হযরত উমর যে ন্যায়বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সর্বপ্রথম এ বিধান তাঁর ও তাঁর বন্ধুর ওপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কারণ হযরত উমর তাঁর এ খুতবায় স্বীকার করেছেন হযরত আবু বকরের বাইয়াত কোন চিন্তা ও পরামর্শ ব্যতীত আকস্মিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল কিন্তু আল্লাহ্ এর অপকারিতা হতে সবাইকে রক্ষা করেছেন। সুতরাং এরপর যদি কেউ অনূরূপ কোন ঘটনার জন্মদান করে তাহলে তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। উমরের এ কথাটি মশহুর (বহুল প্রচলিত) সূত্রে বর্ণিত। হাদীসবিদদের মধ্যে ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহর ১ম খণ্ডের ১২৩ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৬৪। নবীর আহলে বাইতের মর্যাদা ষষ্ঠ হতে দ্বাদশ পত্র পর্যন্ত আলোচিত হয়েছে।

৪৬৫। সহীহ বুখারীর ৩য় খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায় খাইবারের যুদ্ধের আলোচনায় এবং সহীহ মুসলিমের ২য় খণ্ডের ৭২ পৃষ্ঠায় কিতাবুল জিহাদ ওয়াসসাইরেقول النّبيّ : لا نورّث ما تركناه فهو صدقة অধ্যায়ে হাদীসটি এসেছে।

৪৬৬। এ পঙ্ক্তিটি নাহাজুল বালাগায় রয়েছে। ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহাজুল বালাগাহ্’র ৪র্থ খণ্ডের ৩১৯ পৃষ্ঠায় এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন- হযরত আলী আবু বকরের উদ্দেশ্যে এ কবিতা পাঠ করেন এ কারণে যে,আবু বকর সাকীফায় আনসারদের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করে বলেছিলেন,“আমরা নবীর নিকটাত্মীয় ও উত্তরাধিকারী বলে খেলাফতের হকদার।”আবার জনসাধারণের সামনে বলেন, যেহেতু লোকেরা আমার হাতে বাইয়াত করেছে সেহেতু আমিই ন্যায়ত খলীফা।”তাই হযরত আলী (আ.) বলেছেন, আপনি আনসারদের মোকাবিলায় বলেছেন যে,আপনি নবী (সা.)-এর সমগোত্রীয় ও আত্মীয় কিন্তু এক্ষেত্রে অন্যরা আপনার হতে নবীর আত্মীয় হিসেবে অধিকতর নিকটে এবং আপনার হাতে জনগণের বাইয়াতের ক্ষেত্রে নবীর প্রথম সারির অনেক সাহাবীই বাইয়াতের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তাহলে এ বাইয়াত কিরূপে প্রতিষ্ঠিত হবে? শাইখ মুহাম্মদ আবদুহুও এ দু টি পঙ্ক্তি তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’য় উল্লেখ করে ইবনে আবিল হাদীদের অনুরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

৪৬৭। ইবনে কুতাইবা তাঁর আল ইমামাহ্ ওয়াস্ সিয়াসাহ্’গ্রন্থের ১৬ পৃষ্ঠায় তা উল্লেখ করেছেন।

৪৬৮। আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে মুসলিম তাঁর সহীহ’গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১১৮ পৃষ্ঠায় এবং সিহাহ ও সুনান লেখকদের অনেকেই তাঁদের গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৬৯। মুসলিম তাঁর সহীহ’গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে এটি বর্ণনা করে মুস্তাফিয বলেছেন।

৪৭০। মুসলিম ও অন্যান্যরা এ হাদীসটি তাঁদের গ্রন্থে এনেছেন।

৪৭১। মুসলিম তাঁর সহীহ’গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এনেছেন এবং অন্যান্য সুনান লেখকগণও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৪৭২। মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এনেছেন। হাদীসটির

 فمن عرف برئ অংশের অর্থ হলো : যে কেউ তাদের অসৎ কর্ম সনাক্ত করতে পারবে সে প্রথমে হস্ত দ্বারা বাধা প্রদান করবে,তা সম্ভব না হলে জিহ্বা দ্বারা,তাও সম্ভব না হলে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে।

৪৭৩। সা দ ইবনে উবাদা (আবু সাবেত) বাইয়াতে আকাবার(*২৫) অন্যতম সদস্য। তিনি বদর যুদ্ধ ছাড়াও অন্যান্য যুদ্ধে রাসূলের সাথে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি খাযরাজ গোত্রের নেতা এবং আনসারদের মধ্যে একজন দানশীল ব্যক্তি বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। সাকীফায় তাঁর বক্তব্য বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে এসেছে,যেমন ইবনে কুতাইবার আল ইমামাহ্ ওয়াসসিয়াসাহ্’গ্রন্থে,ইবনে জারির তাবারীর তারিখ’-এ,ইবনে আসিরের কামিল’গ্রন্থে এবং আবু বকর আহমাদ ইবনে আবদুল আযীয জাওহারীর আসসাকীফা গ্রন্থে।

৪৭৪। হাব্বাব ইবনে মুনযির আনসারদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ও একজন সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বদর,উহুদসহ অন্যান্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনিও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে তাঁর বক্তব্য লিপিবদ্ধ হয়েছে যার মধ্যে ইবনে কুতাইবার আল-ইমামাহ্ ওয়াসসিয়াসাহ্’,ইবনে জাবির তাবারীর তারিখ’,ইবনে আসিরের কামিল’এবং আবু বকর আহমাদ ইবনে আবদুল আযীয জাওহারীর আসসাকিফা’গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা যায়।

৪৭৫। হযরত আলী  (আ.) ও তাঁর গৃহে অবস্থানরতদের আগুন দিয়ে পোড়ানোর ভয় দেখানোর ঘটনাটি মুতাওয়াতির ও সহীহ সূত্রে বর্ণিত। ইবনে কুতাইবা তাঁর‘‘ আল ইমামাহ্ ওয়াসসিয়াসাহ্’গ্রন্থের প্রথমে,তাবারী তাঁর তারিখ’গ্রন্থের একাদশ হিজরীর ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে ইবনে আব্দি রাব্বিহ্ মালিকী তাঁর আকদুল ফারিদ’গ্রন্থের ২য় খণ্ডে সাকীফার হাদীসে ও আবদুল আযীয জাওহারী তাঁর আসসাকিফা’গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’র ১ম খণ্ডের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। মাসউদী তাঁর মরুজুয্যাহাব’গ্রন্থে উরওয়া ইবনে যুবাইর হতে বনি হাশিমের গৃহে আগুন দেয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সেখানে উরওয়া বাইয়াত না করার অপরাধের কথা বলে তার ভাই আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইয়ের কাজকে (বনি হাশিমের গৃহে আগুন দেয়া) ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। শাহরেস্তানী তাঁর মিলাল ওয়ান নিহাল’গ্রন্থের নিজামিয়া ফিরকার’আলোচনায় এবং আবু মেখনাফ তাঁর এক লেখায় সাকীফার ঘটনা বর্ণনায় আমরা যা উল্লেখ করেছি তা বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কিত বর্ণনা এতটা প্রসিদ্ধ ও মুতাওয়াতির যে,বিভিন্ন কবি তাঁদের কবিতায় তা উল্লেখ করেছেন,যেমন হাফিয ইবরাহীম তাঁর কাছিদাতুল উমারিয়া’য় বলেছেন,

قوله لعلي قالها عمر

কথাটি বলা হয়েছে আলীকে এবং বলেছে উমর

أكرم بسامعها أعظم بملقيها

এর শ্রোতাকেও কর সম্মান,সম্বোধনকারীকেও দাও মর্যাদা

حرقت دارك لا أبقي عليك بها

তোমার সে গৃহে অগ্নি সংযোগ করবো,কাউকেই ছাড়ব না

إن لم تبايع و بنت المصطفى فيها

যদি বাইয়াত না কর,সেক্ষেত্রে যদি মুস্তাফার কন্যাও সে হয়ে থাকে

ما كان غير أبي حفص بقائلها

আবু হাফসা (উমর) ব্যতীত আরবের শ্রেষ্ঠ বীর ও

أمام فارس عدنان و حاميها

তাঁর সাহায্যকারীদের সামনে অন্য কেউ তা বলতে পারত না।

ইমাম ও নেতার সাথে তাঁদের আচরণ এরূপই ছিল। আমাদের মতে সেই ইমামের মত ব্যতীত কোন ইজমাই হুজ্জাত বা দলিল হতে পারে না। তাই আপনার মতে কিরূপে এই ইজমা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে? যখন আমরা সম্পূর্ণ পরিস্থিতিকে এভাবে দেখছি।

৪৭৬। কারণ রাসূল (সা.)-কে তাঁরা দুনিয়ার বিষয় সম্পর্কে তাঁদের পর্যায়ের মত অবহিত বলেই বিশ্বাস করতেন।

৪৭৭। খলীফা আবু বকরের সময়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও ফিতনা প্রমাণ করে নিঃসন্দেহে আলী (আ.) খলীফা হলে এমনটি হত না।

৪৭৮। ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’র ৩য় খণ্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আসির তাঁর কামিল’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ২৪ পৃষ্ঠায় হযরত উমরের জীবনী আলোচনায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৭৯। সহীহ বুখারীর ৪র্থ খণ্ডের ৫ম পৃষ্ঠায় কিতাবুল মারযা’অধ্যায়।

৪৮০। মহানবী নিজ হতে কিছুই বলেন না যা বলেন তা আল্লাহর ওহী ব্যতীত কিছু নয়’-সূরা নাজম।

৪৮১। বুখারী,১ম খণ্ডের কিতাবুল ইলম,পৃষ্ঠা ২২।

৪৮২। মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃষ্ঠা ১৪।

৪৮৩। মুসনাদ,১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা ৩২৫।

৪৮৪। ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহ্’র ২য় খণ্ডের ২০ পৃষ্ঠায় সেখান হতে বর্ণনা করেছেন।

৪৮৫। বুখারী,২য় খণ্ড,১১৮ পৃষ্ঠা।

৪৮৬। তৃতীয় যে বিষয়টি রাবী ভূলে গিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তা ঐ সম্পর্কিত বিষয় যে সম্পর্কে রাসূল (সা.) লিখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যাতে তারা গোমরাহী হতে মুক্তি পায়। কিন্তু রাজনীতির ধারা তাদের ভুলে যেতে বাধ্য করেছে।

৪৮৭। মুসনাদ,১ম খণ্ড,৩৫৫ পৃষ্ঠা।

৪৮৮। হাদীসটি বুখারী উবাইদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ সূত্রে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। মুসলিম ও অন্যান্যরা হাদীসটি নকল করেছেন।

৪৮৯। কানযুল উম্মাল,৩য় খণ্ডের ১৩৮ পৃষ্ঠার বর্ণনানুযায়ী।

৪৯০। শারহে নাহজুল বালাগাহ্-ইবনে আবিল হাদীদ,৩য় খণ্ড,১১৪ পৃষ্ঠা।

৪৯১। আল্লাহ্ সত্যানুসন্ধানে আপনাকে সাহায্য করুন। আপনি জানেন নবী (সা.) এ কথা বলেন নি যে,আমি তোমাদের ধর্মীয় বিধান বা আহ্কাম বর্ণনা করবো ফলে এর জবাবে বলা হয়েছে আল্লাহর কিতাব আমাদের জন্য যথেষ্ট। এমন কি যদি  রাসূল (সা.) ধর্মীয় বিধানও লিখতে চাইতেন তবে নবী (সা.) হতে লিখিত দলিল হিসেবে তা পথভ্রষ্টতা হতে রক্ষার কারণ হত। সুতরাং কোন অবস্থায়ই লেখার উপকরণ না আনা সঠিক হত না। যদি এ লেখা অন্য সব কিছু বাদ দিলেও শুধু বিচ্যুতি হতে রক্ষার জন্য হত তদুপরি আল্লাহর কিতাবে সব কিছু রয়েছে মনে করে তা পরিত্যাগ করা উচিত হত না। কারণ আপনি জানেন উম্মত সুন্নাহর প্রতি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। কোরআন পূর্ণ ও সর্বজনীন হওয়া সত্ত্বেও উম্মত সুন্নাহর প্রতি মুখাপেক্ষীহীন নয়। কারণ কোরআন হতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সকলে সক্ষম নয়;যদি সক্ষম হত তবে রাসূলকে তা ব্যাখ্যা দানের জন্য আল্লাহ্ নির্দেশ দিতেন না-( و أنزلنا إليك الذّكر لتبيّن للنّاس ما نزِّل إليهم ) আমরা আপনার ওপর কোরআন এজন্য অবতীর্ণ করেছি যেন আপনি মানুষের জন্য তা বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করে শুনাবেন যা তাদের প্রতি ধাপে ধাপে অবতীর্ণ হয়েছে।

৪৯২। সূরা নূর : ৫৫

৪৯৩। হাদীসবেত্তা ও ঐতিহাসিকগণ এ বিষয়ে একমত যে,হযরত আবু বকর ও উমর উসামার সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তাঁদের সকলেই তাঁদের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়টি এনেছেন এবং এ সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে কোন মতদ্বৈততা নেই। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাতে,তাবারী ও ইবনে আসির তাঁদের ইতিহাস গ্রন্থ তারিখ’-এ,সীরায়ে হালাবী ও যাইনি দাহলানের সীরাত’গ্রন্থে এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হালাবী তাঁর সীরাতের ৩য় খণ্ডে উসামার সেনাদলের আলোচনায় একটি সুন্দর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যখন আব্বাসীয় খলীফা মাহ্দী বসরায় প্রবেশ করেন তখন বুদ্ধিমত্তায় সেখানকার কিংবদন্তী যুবক আয়াস ইবনে মুয়াবিয়ার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। চারশ আলেম ও জ্ঞানী ব্যক্তি এই যুবকের পেছনে পথ চলছিলেন। মাহ্দী বললেন, এই লোকদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ লোকও কি ছিল না যে এই যুবককে সামনে দিয়েছে? অতঃপর তিনি ঐ যুবককে লক্ষ্য করে বললেন, হে যুবক! তোমার বয়স কত? সে বলল, আমার বয়স উসামা ইবনে যাইদের সমান। নবী (সা.) তাঁকে এমন একদল সেনার প্রধান করেন যাঁদের মধ্যে হযরত আবু বকর ও উমরও ছিলেন।”মাহ্দী খুশী হয়ে বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে অভিনন্দিত করুন।”হালাবী বলেছেন যে,সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর।

৪৯৪। হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে ও অন্যান্য হাদীসবেত্তাগণও তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,উমর প্রায়ই উসামাকে বলতেন, নবী (সা.) মৃত্যুবরণ করেন এমন অবস্থায় যে,তুমি আমার নেতা (আমীর) ছিলে।”

৪৯৫। উবনা সিরিয়ার আসকালান ও রামাল্লার মাঝে অবস্থিত। যাইদ ইবনে হারেসা এবং জা ফর ইবনে আবি তালিব (বেহেশতের দুই পাখার অধিকারী) উবনার নিকটবর্তী মুতায় শাহাদাত বরণ করেছিলেন।

৪৯৬। সকল হাদীসবেত্তা ও সীরাত রচয়িতা যাঁরাই এ যুদ্ধাভিযানের ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাঁরা মহানবী (সা.) কর্তৃক উসামাকে সেনাপতির দায়িত্ব প্রদানের ব্যাপারে সাহাবীদের অসন্তোষ ও আপত্তি এবং মহানবী (সা.) যে ক্রুদ্ধ হয়ে তাদেরকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করার জন্য (মসজিদে নববীতে) এসেছিলেন-এ ঘটনাটি আমরা যেভাবে বর্ণনা করেছি ঠিক সেভাবে এবং মহানবী যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা বর্ণনা করেছেন। ইবনে সা’দের তাবাকাত,সীরায়ে হালাবী,যাইনী দাহলানের সীরাত ও অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে বর্ণিত উসামার যুদ্ধাভিযান অধ্যয়ন করুন।

৪৯৭। হালাবী ও যাইনী দাহলান তাঁদের সীরাত গ্রন্থে,ইবনে জারীর তাবারী তাঁর তারিখ’গ্রন্থে একাদশ হিজরীর ঘটনা বর্ণনায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৪৯৮। মিলাল ওয়ান নিহাল’শাহরেস্তানী,চতুর্থ উপক্রমণিকা।

৪৯৯। উসামা বাকি সেনাদল নিয়ে উবনা’য় হামলা করেন। সেখানকার অধিবাসীদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করেন ও খেজুর বৃক্ষসমূহ কর্তন করেন। অশ্বারোহীদের এ আক্রমণে তাদের অনেকেই নিহত ও অনেকেই বন্দী হয়। উসামা সেদিন তাঁর পিতার হত্যাকারীদের হত্যা করেন কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় একজন মুসলমানও নিহত হয় নি। উসামা সেদিন তাঁর পিতার অশ্বের ওপর আরোহণ করেছিলেন। তাঁর রণধ্বনি ছিল হে উম্মতের সাহায্যকারী’। অশ্বারোহী যোদ্ধাকে তিনি দু’ভাগ ও পদাতিকদের এক ভাগ গণীমত দান করেন এবং নিজের জন্যও এক ভাগ রাখেন।

৫০০। প্রথম খলীফার নির্দেশে যাকাত অস্বীকারকারী নামাযীদের হত্যা করা হয়। নবীর মৃত্যুর পর খলীফা খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।

৫০১। ফিরকা’ও শিয়া’একই অর্থে ব্যবহৃত হয় যার বাংলা হলো দল’। এ হাদীসটিকে ব্যবহার করে সকলেই নিজেদেরকে একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল মনে করে।

৫০২। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ’গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায়,সাঈদ ইবনে মানসুর তাঁর সুনানে,ইবনে জারির তাঁর তাহ্যিবুল আসারে এবং মুত্তাকী হিন্দি তাঁর কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে একে সহীহ বলেছেন।

৫০৩। তাবাকাতে ইবনে সাদ’-এ হযরত উমরের জীবনী অধ্যয়ন করুন। খলীফা জো দার ওপর কোন সাক্ষ্য ও প্রমাণ ব্যতীত হাদ্দ’-এর শাস্তি আরোপ করেন। একজন কবি তার কবিতায় তাঁকে অশ্লীল কাজে অভিযুক্ত করেছিল এ অজুহাতে তাঁকে শাস্তি প্রদান করা হয়।

৫০৪। যদি সাবিলুল মুমিনীন’গ্রন্থটি আপনার হাতে না পৌঁছায় তাহলে ফুসূলুল মুহিম্মা’গ্রন্থটি হাতছাড়া করবেন না কারণ এর কিছু উপকারিতা রয়েছে যা অন্য গ্রন্থে নেই। এ গ্রন্থে একটি অধ্যায়ে বিশেষভাবে ঐ সকল ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা করেছি যারা কোরআনকে নিজ মতানুযায়ী ব্যাখ্যা করতেন। বইটির ৮ম অধ্যায়ের ১০৪-১৩০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।

৫০৫। স্বয়ং হযরত আলী (আ.) মালিক আশতার ও মিশরের অধিবাসীদের উদ্দেশ্যে যে পত্র লিখেছিলেন তাতে বলেছেন, মহান আল্লাহ্ মুহাম্মদ (সা.)-কে নবুওয়াতসহ এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন যে তিনি বিশ্ববাসীদের প্রতি ভীতি প্রদর্শক ও অন্যান্য সকল নবীর দীনের সাক্ষী ও সংরক্ষণকারী হবেন। অতঃপর তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন শেষে মহান প্রভুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে মুসলমানরা বিভেদে লিপ্ত হলো। আল্লাহর শপথ,আমি কখনো চিন্তাই করি নি আরবরা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর আহলে বাইত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু লক্ষ্য করলাম লোকেরা বাইয়াতের লক্ষ্যে দলে দলে অমুক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ধাবিত হলো। আমি বাইয়াত হতে বিরত রইলাম। অতঃপর দেখলাম একদল ইসলাম হতে বেরিয়ে গিয়ে রাসূলের দীনকে ধ্বংসের জন্য আহবান করছে। শঙ্কিত হলাম যদি ইসলাম ও মুসলমানদের সাহায্য না করি তাহলে তা ইসলামের বিলুপ্তি ডেকে আনবে। তাই তোমাদের ওপর নেতৃত্ব হাতছাড়া হবার বিপদ অপেক্ষা একে অধিকতর অকল্যাণকর মনে করলাম। কারণ নেতৃত্ব কয়েকদিনের সম্পদ বৈ কিছু নয় যা মরিচিকা ও দ্রুত অপসৃয়মান মেঘের ন্যায়। এ কারণেই মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে গেলাম যাতে বাতিল পরাস্ত ও দীন স্থিরতা লাভ করে।”(নাহজুল বালাগাহ্,৬২ নং পত্র)

৫০৬। হযরত আলীর সংক্ষিপ্ত বাণী- নাহজুল বালাগাহ্’শারহে ইবনে আবিল হাদীদ,চতুর্থ খণ্ড,৩২৪ পৃষ্ঠা।

৫০৭। ৫৬ নং পত্র দ্রষ্টব্য।

৫০৮। বিশতম পত্র দ্রষ্টব্য।

৫০৯। নাহজুল বালাগাহ্,৩ নং পত্র।

৫১০। নাহজুল বালাগাহ্,২য় খণ্ড,১০৩ পৃষ্ঠা,১৬৭ নং খুতবা।

৫১১। নাহজুল বালাগাহ্,১৬৭ নং খুতবা।

৫১২। নাহজুল বালাগাহ্,হযরত আলীর সংক্ষিপ্ত বাণী নং ২। সাইয়্যেদ রাযী ও আবদুহু এ বক্তব্যের যে পাদটীকা লিখেছেন তা লক্ষ্য করুন।

৫১৩। নাহজুল বালাগাহ্,৩৬ নং পত্র।

৫১৪। নাহজুল বালাগাহ্,২৬ নং পত্র।

৫১৫। নাহজুল বালাগাহ্,২য় খণ্ড,৭৯ পৃষ্ঠা,বাণী নং ১৫৭।

৫১৬। নাহজুল বালাগাহ্,২য় খণ্ড,৩৩ পৃষ্ঠা,বাণী নং ১৪০।

৫১৭। নাহজুল বালাগাহ্,২য় খণ্ড,৪৮ পৃষ্ঠা,খুতবা নং ১৪৬।

৫১৮। নাহজুল বালাগাহ্,১ম খণ্ড,২৫ পৃষ্ঠা,২য় খুতবার শেষাংশ।

৫১৯। নাহজুল বালাগাহ্,১ম খণ্ড,১৪৫ পৃষ্ঠা,৮৪ নং খুতবা।

৫২০। আবু বকর আহমাদ ইবনে আবদুল আযীয জাওহারী তাঁর আসসাকিফা’ও ফাদাক গ্রন্থে এই খুতবাটি মুহাম্মদ ইবনে যাকারিয়া হতে,তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান মাহলাবী হতে,তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে হাম্মাদ ইবনে সুলাইমান হতে,তিনি তাঁর পিতার সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে হাসান ইবনে হাসান হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মাতা ফাতিমা বিনতে হুসাইন (পিতা হুসাইন ইবনে আলী সূত্রে) হযরত যাহরা (আ.) হতে খুতবাটি নকল করেছেন। ইমাম আবুল ফযল আহমাদ ইবনে আবু তাহির (মৃত্যু ২৮০ হিজরী) তাঁর বালাগাতুন্ নিসা’গ্রন্থের ২৩ পৃষ্ঠায় হারুন ইবনে মুসলিম ইবনে সা দান হতে,তিনি হাসান ইবনে আলাওয়ান হতে,তিনি আতীয়া আউফী হতে,তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে হাসান ইবনে হাসান হতে তাঁর মাতা ফাতিমা বিনতে হুসাইন সূত্রে দাদী ফাতিমা যাহরা (আ.) হতে খুতাবাটি বর্ণনা করেছেন। শিয়াসূত্রে খুতবাটি সুয়াইদ ইবনে গাফলাত ইবনে আওসাজা জো ফী হযরত ফাতিমা (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন। তাবারী তাঁর ইহ্তিজাজ’ও আল্লামাহ্ মাজলিসী তাঁর বিহারুল আনওয়ার’গ্রন্থে খুতবাটি এনেছেন। এছাড়াও কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনাটি এসেছে।

৫২১। সূরা আহযাব : ৩৩।

৫২২। এ ঘটনাটি ইবনে আসির তাঁর কামিল’গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তিনি এ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ২৪ পৃষ্ঠায় ২৩ হিজরীর ঘটনা বর্ণনা পর্বে এটি এনেছেন। ইবনে আবিল হাদীদ শারহে নাহজুল বালাগাহর ৩য় খণ্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উমরের জীবনী আলোচনায় এটি নকল করেছেন।

৫২৩। আবুল ফযল আহমাদ ইবনে আবু তাহির তাঁর তারিখে বাগদাদ’গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবিল হাদীদ প্রণীত শারহে নাহজুল বালাগাহ্,৩য় খণ্ড,১০৫ পৃষ্ঠা।

৫২৪। শারহে নাহজুল বালাগাহ্-ইবনে আবিল হাদীদ,৩য় খণ্ডের ১০৫ পৃষ্ঠা।

৫২৫। ইবনে হাজার তাঁর সাওয়ায়েক’গ্রন্থের ১০৫ পৃষ্ঠায় ৫ম মাকসাদে এই দুই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি একাদশ অধ্যায়ে আলমুয়াদ্দাহ্ ফিল কুরবা’অর্থাৎ ১৪ নং আয়াতের আলোচনায় এটি নকল করেছেন।

দারে কুতনী ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথে খলীফা আবু বকরের বাক্য বিনিময় পর্বে এটি এনেছেন। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত’-এ উমরের জীবনী আলোচনায় ইমাম হুসাইনের সাথে তাঁর এ কথোপকথন উল্লেখ করেছেন।

৫২৬। সাঈদ ইবনে আস ঐ সকল ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত যাঁরা আবু বকরের খেলাফতকে মেনে নেন নি ও তিন মাস বাইয়াত হতে বিরত থাকেন। আহলে সুন্নাহর আলেমদের অনেকেই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ইবনে সা দের তাবাকাত’গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডের ৭০ পৃষ্ঠায় খালিদের পরিচিত পর্বে এটি আলোচিত হয়েছে। সেখানে বর্ণিত হয়েছে-যখন আবু বকর সিরিয়ায় সেনাদল প্রেরণের উদ্দেশ্যে পতাকা বেঁধে সাঈদ বিন আসের নিকট প্রেরণ করেন তখন উমর আবু বকরকে বলেন, সাঈদ খেলাফতের বিষয়ে যা বলেছে তা জানার পরও আপনি তাকে নেতৃত্ব দিতে চাচ্ছেন? উমরের উপর্যুপরি দাবীর প্রেক্ষিতে খলীফা আবু বকর আবু আরাভী দূসীকে পতাকা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রেরণ করেন। সাঈদ তাকে পতাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, তোমাদের হতে দায়িত্ব গ্রহণও যেমন আমাকে খুশী করে নি তেমনি তা ফিরিয়ে দিতেও আমার আফসোস নেই। আবু বকর সাঈদের গৃহে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তা নিয়ে উমরের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন। সিরিয়ায় সেনাদল প্রেরণের বিষয়টি যে সকল বর্ণনাকারী এনেছেন তাঁরা এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাই এটি মুস্তাফিয সূত্রে বর্ণিত।

৫২৭। হাকিম তাঁর মুসতাদরাক’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৭২ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন। 

৫২৮। শারহে নাহাজুল বালাগাহ্-ইবনে আবিল হাদীদ,৩য় খণ্ডে ২৫৪ পৃষ্ঠায় খুতবাতুল কাসিয়ার শেষাংশ।

৫২৯। বুরাইদাহ্,আবু আইয়ুব আনসারী ও সালমান ফারসী বর্ণিত হাদীসগুলো ৬৭ নম্বর পত্রে উল্লেখ করেছি।

৫৩০। আবুল ফযল আহমাদ ইবনে আবু তাহির বাগদাদী তাঁর বালাগাতুন্ নিসা’র ৪১ পৃষ্ঠায় শা বী হতে এটি বর্ণনা করেছেন।

৫৩১। উপরোক্ত কবিতা,পঙ্ক্তি ও রণধ্বনিসমূহ ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে বিশেষত যে সকল গ্রন্থে জামাল ও সিফ্ফিনের যুদ্ধ বিশেষভাবে এসেছে তাতে এগুলো উল্লিখিত হয়েছে। আল্লামাহ্ ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহর ১ম খণ্ডের ৪৭-৫০ পৃষ্ঠায় (মিশরে মুদ্রিত) আহলে বাইত সম্পর্কে হযরত আলীর নিম্নোক্ত উদ্ধৃতি

 و لهم خصائص حق الولاية و فيهم الوصية و الوراثة (আর তাদেরই [আহলে বাইত] রয়েছে বেলায়েতের অধিকার সংক্রান্ত একান্ত  বৈশিষ্ট্যাবলী ও তাদের মাঝেই রয়েছে মহানবীর প্রতিনিধিত্ব ও উত্তরাধিকার)-এর বর্ণনায় এনেছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াসি’শব্দটি যে সকল কবিতায় এসেছে তার সংখ্যা অনেক। আমরা আবু মিখনাফের ওয়াকিয়াতুল জামাল এবং নাসর ইবনে মুযাহিমের সিফ্ফিন গ্রন্থ হতে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করেছি। যদি আপনার বিরক্তির কারণ না ঘটতো তাহলে এর সবগুলোই এখানে বর্ণনা করতাম।

৫৩২। যুফার,খুযাইমা ও আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু সুফিয়ানের কবিতা আসকাফী তাঁর নাকজুল উসমানিয়া’গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবিল হাদীদ শারহে নাহজুল বালাগাহর ৩য় খণ্ডের ২৫৮ পৃষ্ঠায় খুতবাতুল কাসিয়া’র শেষে এগুলো উল্লেখ করেছেন।

৫৩৩। যুবাইর ইবনে বাক্কার তাঁর মুয়াফ্ফাকিয়াহ্’গ্রন্থে এবং ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর নাহজুল বালাগাহর ৩য় খণ্ডের ১৩ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবদুল বার নোমানের জীবনী আলোচনায় কাসিদাটি এনেছেন কিন্তু কাকে লক্ষ্য করে তিনি এটি বলেছেন তা উল্লেখ করেন নি। হ্যাঁ,তাঁরা এরূপই করে থাকেন।

৫৩৪। ইবনে আসির তাঁর কামিল’গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৭৪ পৃষ্ঠায় হযরত উসমানের জীবনীর শেষেالا انّ خير الناس بعد ثلاثة ...  অর্থাৎ জেনে রাখ,তিনজনের (আবু বকর,উমর ও উসমান) পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব... এভাবে লিখেছেন।

৫৩৫। যুবাইর ইবনে বাক্কার তাঁর মুয়াফ্ফাকিয়াহ্’গ্রন্থে এবং ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শারহে নাহজুল বালাগাহর ২য় খণ্ডের ১৫ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন।

৫৩৬। শেখ মুহাম্মদ আলী হাশিশু হামাদী সাইদাভী তাঁর আসারু যাওয়াতুস্ সাওয়ার’গ্রন্থের ৬৫ পৃষ্ঠায় গানেমাহ্ বিনতে আমেরের সঙ্গে মুয়াবিয়ার সংলাপে এটি এনেছেন।

৫৩৭। আবুল ফযল আহমাদ ইবনে আবু তাহির বাগদাদী তাঁর বালাগাতুন্ নিসা’গ্রন্থের ৬৭ পৃষ্ঠায় উম্মে সিনানের জীবনীতে এটি বর্ণনা করেছেন। শেখ মুহাম্মদ আলী হাশিশু তাঁর আসারু যাওয়াতুস্ সাওয়ার’গ্রন্থের ৭৮ পৃষ্ঠায় উম্মে সিনান হতে এটি নকল করেছেন।

৫৩৮। আল্লামাহ্ শেখ মুহাম্মদ মাহমুদ রাফেয়ী এ কবিতার ব্যাখ্যায় বলেছেন যে,এখানে ওয়াসি’বলতে আলী কারামুল্লাহ্ ওয়াজহাকে বুঝানো হয়েছে। নবী তাঁকে ওয়াসি মনোনীত করেছেন এজন্য তাঁকে ওয়াসি’বলা হয়েছে। যেমন বুরাইদাহ্ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.) বলেছেন :لكلّ نَبِي وصي و انّ غليّاً وصيي و وارثي প্রত্যেক নবীরই স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি (ওয়াসি) ছিল এবং নিশ্চয়ই আলী আমার উত্তরাধিকারী,স্থলাভিষিক্ত ও মনোনীত প্রতিনিধি।”

তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, নবী (সা.) বলেছেন :منْ كنت مولاه فعلي مولاه   আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা।”বুখারী সা দ হতে বর্ণনা করেছেন যে,নবী (সা.) যখন তাবুকের দিকে যাত্রা করেন তখন আলী (আ.)-কে মদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে রেখে যান। আলী বলেন, আপনি কি আমাকে নারী ও শিশুদের মাঝে রেখে যাচ্ছেন? নবী বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে,তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসার সঙ্গে হারূনের সম্পর্কের ন্যায় হোক? শুধু পার্থক্য এই যে,আমার পর কোন নবী নেই।”অতঃপর ইবনে কাইস বাকাইয়াত হতে বর্ণনা করেছেন,

نحن مناّ النبي احمد و الصديق منا التقي الحلما

 “নবী আহমাদ ও সিদ্দীক আমাদের হতে এবং পুণ্যবান ও ধৈর্যশীল ব্যক্তিও আমাদের হতে।

و عليّ و جعفر ذو الجنا

حين هناك  الوصي والشهداء

আলী ও ডানাযুক্ত জাফর এখানে ওয়াসি এবং শহীদ।

৫৩৯। তাঁর কবিতার প্রথম চরণ হলোاطبية حيث استنت الكثب العفر

৫৪০। আল ইসাবাহ্’গ্রন্থের প্রথমাংশে যুবাইর ইবনে হুবাব ইবনে মুনযার আনসারীর পরিচিতি পর্ব।

৫৪১। রিজাল ও হাদীসসূচীর গ্রন্থগুলোর মধ্যে মুনতাহাল মাকাল,নাজ্জাশী এবং শেখ আবু আলীর ফেহরেসত,মির্যা মুহাম্মদের মানহাজুল মাকাল এবং অন্যান্য।

৫৪২। এ শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতগণ যেমন শেখ বাহাঈ ও আরো কতিপয় আলেম এ বিষয়টি স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন।

৫৪৩। তাফসীরে মাজমায়ুল বায়ান’গ্রন্থের সূরা শুরারقل لا أسئلكم عليه أجراً إلّا المودَّة في القربى আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি আবু হামযাহর তাফসীর হতে নকল করেছেন।

৫৪৪। শিয়া হাদীসবিদগণ আবু হামযাহর গ্রন্থসমূহকে তাঁর সূত্র হতেই বর্ণনা করেছেন যা রিজাল গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত হয়েছে। বিশিষ্ট আলেম সদরুদ্দীন মুসাভী রেসালাতুল হুকুক’গ্রন্থটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে মুসলমান কিশোর ও তরুণদের মুখস্থ করার উপযোগী করে আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করেছেন।

৫৪৫। যেখানে শিয়াদের বিভিন্ন দলের বিশেষত বাকিরিয়া ও সাদিকীয়াদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

৫৪৬। আলহামদুলিল্লাহ্,এ গ্রন্থের পাদটীকাও শেষ হয়েছে। যা গ্রন্থটির পূর্ণতা দান করেছে। এ পাদটীকাসমূহের উপকারিতা সকলেই স্বীকার করবেন। এ পাদটীকা ১৩৫৫ হিজরীর ১৫ রজবে গ্রন্থ প্রকাশের দিনই শেষ হয়েছে যা গ্রন্থ প্রণেতা স্বয়ং সংযোজিত করেছেন। এ গ্রন্থ প্রণেতা ইসলাম ও শিয়া মাজহাবের এক ক্ষুদ্র খেদমতকারী আবদুল হুসাইন ইবনে শারিফ ইউসুফ ইবনে শারিফ জাওয়াদ ইবনে শারিফ ইসমাঈল ইবনে শারিফ মুহাম্মদ ইবনে শারিফ মুহাম্মদ ইবনে শারিফ ইবরাহীম। উপনাম শারাফুদ্দীন ইবনে শারিফ যয়নুল আবেদীন ইবনে আলী নুরুদ্দীন ইবনে নুরুদ্দীন আলী ইবনে হুসাইন মুসাভী আমেলী। আল্লাহ্ তাঁর প্রতি করুণা ও রহমতের আচরণ করুন। প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর নবী (সা.) ও আহলে বাইতের প্রতি দরূদ ও সালাম।