ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব0%

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

লেখক: আলী শীরাযী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 14241
ডাউনলোড: 3022

পাঠকের মতামত:

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 20 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14241 / ডাউনলোড: 3022
সাইজ সাইজ সাইজ
ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

ফকিহ-এর নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্ব জিজ্ঞাসা ও জবাব

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ফকিহ শাসক মাত্র একজন হওয়া জরুরী ?

সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ফকিহ শাসক মাত্র একজন হওয়া জরুরী,নাকি প্রত্যেক জাতির শাসক স্বতন্ত্র হতে পারেন?

জবাবঃ হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ),মরহূম নারাক্বী ,মরহূম মারাগ্বেয়ী১০ জাওয়াহের গ্রন্থের প্রণেতা প্রমুখ বহু মনীষী এবং এমনকি মরহূম নায়ীনী১১ বেলায়াতে ফকীহ্ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এমন সব দলীল উল্লেখ করেছেন যা থেকে প্রমাণিত হয় যে,সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য একজন ফকিহ শাসক থাকা প্রয়োজন।

এ অভিমতের ভিত্তি হচ্ছে এ দৃষ্টিকোণ যে,ফকিহ শাসক আল্লাহ্ তা আলা ও তার খাছ বান্দাহ্দের পক্ষ থেকে মনোনীত হন। হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আত্মগোপনরত থাকার যুগে আল্লাহ্ তা আলা একজন ফকিহ শাসক মনোনীত করেন এবং সকলের জন্যই তার আনুগত্য করা অপরিহার্য।

তাত্ত্বিক দিক থেকে ও আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটাই বাঞ্ছিত যে,সমগ্র ইসলামী জাহানের জন্য একজন মাত্র ফকিহ শাসক থাকবেন। নেতৃত্বের এ ঐক্য ইসলামী ঐক্যকে এবং মুসলমানদের সামাজিক শক্তি ও তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন নিশ্চিত করবে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় ফিক্বহী বিষয়ের মতো নয় যে,জনগণ এ ব্যাপারে তাদের পছন্দ মোতাবেক বিভিন্ন মারজা-এ তাক্বলীদের১২ কাছে যাবে অথবা সতর্কতার মূলনীতির ভিত্তিতে আমল করবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক তথা সামষ্টিক বিষয়াদি এমন যে,শেষ পর্যন্ত জনগণকে একটি রায়ের ভিত্তিতে আমল করতে হবে। আর এ ব্যাপারে আইনগত ও শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ফকিহ শাসকের রায়েরই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে। কারণ,মুজতাহিদ ফকীহ্ পরম দয়াবান আল্লাহ্ তা আলা ও মা ছূম ইমামগণের (আ.) পক্ষ থেকে মনোনীত। সুতরাং সকলের জন্যই তার রায় মেনে চলা অপরিহার্য।

যুদ্ধ ও শান্তির প্রশ্ন এলে এক ব্যক্তিকে আদেশ দিতে হবে যে,আমরা যুদ্ধ করবো,নাকি সন্ধি করবো। এ ব্যাপারে একজন ফকিহ শাসকের পক্ষ থেকে আদেশ আসতে হবে এবং সকলকে তার আদেশ মেনে নিতে ও তদনুযায়ী কাজ করতে হবে। নচেৎ সমস্যার সৃষ্টি হবে; বিভিন্ন মতের উদ্ভব ঘটবে; কতক ব্যক্তি শান্তির সমর্থন করবেন এবং অপর কতক ব্যক্তি যুদ্ধের সমর্থন করবেন। এভাবে বিভিন্ন মতের ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং করণীয় সম্পর্কে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে,আর এর পরিণতি হচ্ছে পরাজয়।

এমনকি ঈদুল ফিতর উদযাপনের মতো বিষয়েও প্রায় সর্বসম্মত সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকিহ ও মারজা-এ তাক্বলীদ্ অভিমত পোষণ করেন যে,এ ব্যাপারে ফকিহ শাসকের রায়ই অনুসৃত হতে হবে। কারণ,এটি একটি সামষ্টিক বিষয় এবং মতামতের বিভিন্নতা জনিত বিশৃঙ্খলা এড়ানো,জনগণকে ঈদের দিনে হারাম রোযা রাখার আশঙ্কা থেকে মুক্ত রাখা ও মাহে রামাযানের শেষ দিবসে রোযা রাখতে সহায়তা করার লক্ষ্যে ইসলাম এ ব্যাপারে ফকিহের রায়কে কার্যকর গণ্য করেছে। এমতাবস্থায় ফকিহ শাসক যদি একজন না হন তাহলে মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এবং,খোদা না করুন,মুসলিম জনগণের একাংশের দ্বারা গুনাহ্ সংঘটিত হয়ে পড়া অসম্ভব কিছু নয়।

সমকালীন বিশ্বে যখন সর্ব প্রথম ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বেলায়াতে ফকীহ্ বা ফকিহের শাসন বাস্তবে কার্যকর হয় তখন প্রায় সর্বসম্মত মতের ভিত্তিতে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-কে ইসলামী জাহানের ফকিহ শাসক রূপে গ্রহণ করা হয়। সারা দুনিয়ার সকল মুসলমানই তার বেলায়াত বা দ্বীনী শাসন-কর্তৃত্বকে মেনে নেয়। ঐ সময় কেউই বলে নি যে,পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী ইসলামী নেতৃত্বের জন্য হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর চেয়ে যোগ্যতর কেউ আছেন। শাসক হিসেবে একমাত্র হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর পক্ষেই সমগ্র ইসলামী জাহানের কল্যাণ নির্ধারণ করা সম্ভব ছিলো এবং এবং একমাত্র তিনিই সমাজকে ইসলামী আইন-কানুন ও বিধি-বিধানের ভিত্তিতে পরিচালনা করতে সক্ষম ছিলেন। সমগ্র ইসলামী জাহানই এ বিষয়টি এবং এ তত্ত্ব ও আদর্শিক অভিমতকে মেনে নেয়।

ইসলামী বিপ্লবের পথিকৃৎ ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর পরেও এমন এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায় যিনি হযরত ইমামের অনুরূপ,যার মধ্যে ইমামের অভিন্ন চিন্তা-চেতনা ও যোগ্যতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি হলেন হযরত আয়াতুল্লাহ্ ওযমা সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী। হযরত ইমামের পরে তিনি ফকিহ শাসকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন এবং সমগ্র ইসলামী জাহান তার একক নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানায়। ইসলামী জাহানে তার এ গ্রহণযোগ্যতায় এখনো কোনো পরিবর্তন ঘটে নি,বরং ইসলামী দুনিয়া তাকে নিরঙ্কুশ শাসন-কর্তৃত্বের এখতিয়ারের অধিকারী ফকিহ শাসক হিসেবে গণ্য করে।

বস্তুতঃ ইসলামী জাহানের ও মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব,শৌর্যবীর্য ও সম্মান এই নেতৃত্বের একত্বের ছায়াতলেই নিহিত। আজকের দুনিয়ায় ইরাকী জনগণ নিজেদেরকে ইসলামী বিপ্লবের রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর অনুসারী রূপে গণ্য করে। লেবাননের বিপ্লবী মুসলিম জনগণের সংগঠন হিযবুল্লাহর নেতা সাইয়েদ হাসান নাছরুল্লাহ্ নিজেকে মুজতাহিদ শাসকের সৈনিক বলে মনে করেন। মুসলিম দেশসমূহ ও ইউরোপ-আমেরিকা সহ বিশ্বের যে কোনো স্থানের মুসলিম জনগণের অধিকাংশই নিজেদেরকে ফকিহ শাসকের অনুগত ও অনুসারী বলে মনে করে।

ফকিহের নেতৃত্বকে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে এ সমঝোতা ও মতৈক্য ইসলামী সমাজের ঐক্যের ও মুসলমানদের মধ্যে সমন্বয়ের এবং ইসলামের বিরাট শক্তির সামনে ইসলামের দুশমনদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

এটা নিঃসন্দেহ যে,ইসলাম এটাই চায় এবং এটাকেই সমর্থন করে ও স্বীকৃতি দেয়। ইসলামে নেতৃত্বের ঐক্য হচ্ছে একটি অনুসরণীয় আদর্শ তত্ত্ব এবং এটা সকলের দ্বারাই স্বীকৃত হয়েছে যে,নেতৃত্বের ঐক্য ইসলামী জাহানের অগ্রগতির এবং বিশ্বের কুফরী শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ইসলামী জাতিসমূহের বিজয়ের কারণ।

আমরাও হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ),মরহূম নারাক্বী,মরহূম মারাগেয়ী, জাওয়াহের গ্রন্থের প্রণেতা ও মরহূম নায়ীনীর অনুসরণে এ মতকেই সমর্থন করি। আর যেহেতু আমাদের আক্বিদাহ্ হচ্ছে এই যে,মুজতাহিদ শাসক স্বয়ং আল্লাহ্ তা আলা ও মা ছূমগণের (আ.) পক্ষ থেকে মনোনীত,সেহেতু আমাদের এ-ও আক্বিদাহ্ যে,সারা বিশ্বের জনগণের,বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য একজন একক মুজতাহিদ শাসকের আনুগত্য ও অনুসরণ করা অপরিহার্য।

হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) তার লেখা হুকুমাতে ইসলামী গ্রন্থে বলেনঃ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা,তার দায়িত্ব গ্রহণ এবং তার সকল সামষ্টিক কাজকর্ম সম্পাদনের ব্যাপারে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা ছূম ইমামগণের (আ.) যে শাসন-কর্তৃত্বের অধিকার ছিলো ফকিহ শাসক সেই একই শাসন-কর্তৃত্বের অধিকারী।

হযরত ইমাম ফকিহ শাসকের জন্য রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা ছূম ইমামগণের (আ.) ন্যায় অভিন্ন ক্ষমতা ও এখতিয়ারের প্রবক্তা ছিলেন,বরং একে অপরিহার্য গণ্য করতেন। তিনি মনে করতেন,ফকিহ শাসক রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হুবহু হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারের অধিকারী।

এমন কথা কেউ বলে না যে,হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মা ছূম ইমামগণের (আ.) হুকুমাত একটি বা কয়েকটি দেশে বা ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। তাই মুজতাহিদ ফকীহ্ হুকুমাতের জন্যও কোনো সীমারেখা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব,ফকিহ শাসক বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য শাসক। সুতরাং সকল মুসলমানেরই উচিৎ তার রায় ও ফতোয়া অনুসরণ করা।

ফকিহ শাসক কি বিশ্বের সকল দেশের সার্বিক পরিচালনায় সক্ষম?

জবাবঃ মানুষের সমাজবদ্ধ জীবনের লক্ষ্য কেবল তাদের বস্তুগত ও পার্থিব কল্যাণ নিশ্চিত করা নয়। বরং প্রকৃত ব্যাপার হলো এই যে,মানুষের জন্য নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করণ এবং তার কল্যাণ ও প্রয়োজন পূরণ নিশ্চিত করার বিষয়টি তার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের ভূমিকা মাত্র। আর এ চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে মানবিক পূর্ণতা ও মহান আল্লাহ্ তা আলার নৈকট্য অর্জন।

মানুষ যাতে তার এ চূড়ান্ত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারে সে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এমন আইন-কানুন বাস্তবায়ন করা মানুষের সত্তার সকল দিক ও তার জীবনের সকল বিভাগ যার আওতাভুক্ত থাকবে - যাতে সে আইন মানুষের সকল দিকের কল্যাণই নিশ্চিত করতে পারে। আর ইসলামের ছায়াতলে ও এর সমুন্নত আইন-কানুন সমূহ বাস্তবায়ন ছাড়া এ লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।

ইসলামী হুকুমাত যাতে মানুষের জন্যে সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় সে লক্ষ্যে এ হুকুমাতের নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই এমন লোকদের হাতে থাকা দরকার যারা দ্বীন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হবেন ও দ্বীন কেন্দ্রিক যিন্দেগী যাপন করবেন,আর তাদের শীর্ষে অবস্থান করবেন পরিপূর্ণ শর্তাবলীর অধিকারী মুজতাহিদ শাসক।

এ যুগে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান হচ্ছে এ দৃষ্টিকোণের বাস্তব আদর্শ। এ বিশ্বাস ও তদনুযায়ী আচরণ এবং হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ) ও হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর অনুসরণই ছিলো ইসলামী হুকুমাতের প্রতি ইরানী জনগণের সমর্থন এবং তাদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ পথে বিপদাপদ,দুঃখকষ্ট,মূল্যস্ফীতি,ঘাটতি,বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক আঘাত এবং অন্য বহু ধরনের কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করে নেয়ার পিছনে নিহিত চালিকা শক্তি।

আমরা যে বর্তমানে বিশ্বের মুসলিম জনগণের মাঝে যালেম-অত্যাচারী ও বলদর্পীদের বিরুদ্ধে এবং দাম্ভিক বৃহৎ শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং সকল ক্ষেত্রে মুসলমানদের বিরাট ও ব্যাপক বিজয়ের আশা লক্ষ্য করছি -এর সবই হচ্ছে উপরোক্ত দৃষ্টিকোণের সাথে সংশ্লিষ্ট মুজতাহিদ শাসক ও দ্বীনী হুকুমাতের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিভিন্ন দিকের বহিঃপ্রকাশ।

বর্তমান যুগে যখন দুনিয়া কেন্দ্রিক জীবনদর্শনে বিশ্বাসী গোষ্ঠী তাদের নিজেদের একটি বা কয়েকটি ভুলের কারণে অনেক সময় তাদের বিশাল আধিপত্যের ভিত্তিসমূহকে ধ্বসে পড়ার মুখোমুখি দেখতে পাচ্ছে,ঠিক এমনই এক যুগে মুজতাহিদ শাসকের শাসন ও কর্তৃত্ব সাধারণ মানুষের অন্তঃকরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত বিধায় তার শাসন-কর্তৃত্বের শক্তি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে যা তার শক্তি ও মর্যাদার সামনে যালেম শাসকবর্গকে নতজানু হতে বাধ্য করছে।

যেহেতু এ দৃষ্টিকোণ খোদায়ী দৃষ্টিভঙ্গি ও মহান আল্লাহ্ তা আলার ওপর নির্ভরতা থেকে গড়ে উঠেছে সেহেতু নিঃসন্দেহে এ দৃষ্টিকোণের প্রতি মহান আল্লাহ্ তা আলার সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে যে সব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং যে সব কাজ সম্পাদিত হয়েছে তা এ বাস্তবতারই সাক্ষ্য বহন করছে। এর অন্যতম দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই যে,মুজতাহিদ শাসকের শাসনাধীন ইরানের ওপর যে দীর্ঘ আট বছর ব্যাপী যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয় সে যুদ্ধে ইরানের এমনকি এক বর্গ সেন্টিমিটার জায়গাও হাতছাড়া করতে হয় নি। ইতিপূর্বে দীর্ঘ রাজতান্ত্রিক যুগে যখনই ইরানের যে কোনো অংশেই যুদ্ধ হয়েছে তখনই ইরানী ভূখণ্ডের কোনো না কোনো অংশ শত্রুকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্ঃ)-এর শাসনামলে এ ধরনের কোনো কিছু ঘটে নি।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের স্থাপত্য পরিকল্পনা এমনভাবে তৈরী করা হয় যে,ইসলাম ও ইরানী জনগণের দুশমনরা আজ পর্যন্তও ফকিহ শাসক কেন্দ্রিক ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় কোনোরূপ ফাটল ধরাতে সক্ষম হয় নি। বরং জ্ঞান-বিজ্ঞান,রাজনীতি,কূটনীতি,অর্থনীতি,সমাজ ও বৈশ্বিক মর্যাদার বিচারে মুজতাহিদ শাসকের মর্যাদা,শৌর্যবীর্য ও কর্তৃত্ব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বস্তুতঃ মুজতাহিদ শাসকের শাসন ও নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের ছায়াতলে বর্তমানে ইসলামী জাহান অসাধারণ গুরুত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের দাম্ভিক বৃহৎ শক্তিবর্গ ও ইসলামী হুকুমাতের অকল্যাণকামীরা লাঞ্ছনা ও অবমাননার মুখোমুখি হয়েছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকারকে উৎখাত করার জন্য যে শত শত শয়তানী ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়া হয় এবং যে সব ভয়ঙ্কর তত্ত্ব ছড়িয়ে দেয়া হয় তার মুখোমুখি হলে অন্য যে কোনো সরকারই ধরাশায়ী হয়ে যেতো। কিন্তু ফকিহ শাসকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার সমস্ত রকমের সমস্যা সত্ত্বেও আগের মতোই জনগণের সমর্থনের অধিকারী রয়েছে। ইরানী জনগণ তাদের জীবনের সকল কঠিন অবস্থা সহ্য করে এবং মূল্যস্ফীতি ও ঘাটতির শিকার হয়েও ইসলামী হুকুমাতের মূল ধারণা ও রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর প্রতি তাদের সমর্থন একইভাবে অব্যাহত রেখেছে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে যে সব ষড়যন্ত্র করা হয় তার মধ্যকার যে কোনো একটি ষড়যন্ত্রই অন্য যে কোনো সরকারের পতন ঘটানোর জন্য যথেষ্ট হতো। এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের টিকে থাকা এবং বিশ্বে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে,ফকিহ শাসক বিশ্বের দেশ সমূহের পরিচালনা ও পথনির্দেশনায় পুরোপুরি সক্ষম।

ইসলামের দুশমনরাও ফকিহ শাসকের এ শক্তি ও সক্ষমতা সম্বন্ধে পুরোপুরি ওয়াকিফহাল। এ কারণেই তারা সব সময়ই বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের আশ্রয় নিয়ে ফকিহ শাসক ও ফকিহের শাসনকে দুর্বল করার এবং তার শক্তিকে বিনষ্ট করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে।