আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)0%

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 14448
ডাউনলোড: 3690

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14448 / ডাউনলোড: 3690
সাইজ সাইজ সাইজ
আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

আক্বায়েদ শিক্ষা

প্রথম খণ্ড

মূলঃ আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী

অনুবাদঃ মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন

প্রকাশনায়ঃ

আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা

الحمد لله رب العالمین، و الصلاة و السلام علی خیر خلقه محمد و اله الطاهرین. لاسیما بقیة الله فی الارضین عجل الله تعالی فرجه و جعلنا من اعوانه و انصاره.

মৌলিক বিশ্বাস ও চিন্তা সকল মূল্যবোধ ও সুশৃংখল মতাদর্শের ভিত্তি রচনা করে এবং সচেতন অথবা প্রায় সচেতনভাবে মানুষের আচার-ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী মূল্যবোধ ও রীতি-নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসসমূহকে মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত করতে হবে,যেগুলো এ বিশালদেহী বৃক্ষের মূল বলে পরিগণিত। আর এর মাধ্যমে সুমিষ্ট ও মনোমুগ্ধকর ফল ধারণ করতঃ দু জগতের সৌভাগ্য ও সম্মৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধিত হয় ।

এ কারণেই ইসলামী চিন্তাবিদগণ,ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম শতাব্দীতেই বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে ইসলামী বিশ্বাস সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। যেমনঃ কালামশাস্ত্রবিদগণ বিভিন্ন পর্যায়ের কালামশাস্ত্র রচনা করেছিলেন। সাম্প্রতিক কালেও নব নব বিভিন্ন অনুপপত্তির উপর ভিত্তি করে( ঐগুলোর জবাব দানের জন্যে ) একাধিক পুস্তক লেখা হয়েছে ও সকলের হাতের নাগালে রাখা—হয়েছে । কিন্তু প্রায়শঃই এ সকল পুস্তক দু টি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র স্তরের জন্যে প্রণয়ন করা হয় । এর একটি হলঃ সাধারণ স্তরের জন্যে যা অপেক্ষাকৃত সহজ-সরল ভাষায় ও অধিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে রচিত হয়;আর অপরটি হলঃ বিশেষজ্ঞ শ্রেণীর জন্যে,যা জটিল ও তত্ত্বীয় পরিভাষায় বর্ণিত হয়। তবে মধ্যবর্তী স্তরের পাঠকশ্রেণীর জন্যে উপযুক্ত পুস্তকের স্থান শূন্য পড়ে আছে। আর এজন্যে বর্ষ পরস্পরায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ এধরনের পুস্তকের অভাব অনুভব করছে।

ফলে ইসলামী প্রচার সংস্থার’দায়িত্বশীলদের পরামর্শক্রমে এবং দার রাহে হাক’ নামক প্রতিষ্ঠানের একদল বিশেষজ্ঞের সহযোগীতায় এ পুস্তকটি প্রণয়নের উদ্ধোগ নিই । এ পুস্তকটির——বিশেষত্ব হল নিম্নরূপঃ

১। পুস্তকের বিষয়-বস্তু যৌক্তিক বিন্যাস ব্যবস্থার আলোকে শৃংখলিত করার এবং যথাসম্ভব কোন বিষয়ের আলোচনা পরবর্তী পাঠের উপর ন্যস্ত না করার চেষ্টা করা হয়েছে।

২। পারতপক্ষে সুস্পষ্ট ও সরল ভাষা ব্যবহার করার এবং জটিল ও সংকটময় পরিভাষাগুলো পরিহার করার চেষ্টা করেছি। আর সেই সাথে চেষ্টা করেছি সহজবোধ্য অর্থসমূহকে সাহিত্যালংকারের জন্যে উৎসর্গ না করার ।

৩। কোন বিষয়ের প্রতিপাদনের জন্য নিশ্চিত ও অপেক্ষাকৃত সুস্পষ্ট দলিলসমূহ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি । আর একাধিক দলিলের সমাহারকরণ ও দুর্বল দলিলের আকস্মিক উপস্থিতি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি ।

৪। অনুরূপ অতিরিক্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা থেকে যথাসম্ভব দূরে থেকেছি,যাবি দ্যানুরাগীদের ধৈর্যচ্যুতির কারণ হয়। অতএব আশানুরূপ সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি ।

৫। যেহেতু এ পুস্তকটি মধ্যম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই—জটিল ও সুকঠিন দলিল,যেগুলোর জন্যে দর্শন,তাফসির অথবা হাদীস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকার প্রয়োজন হয়,সেগুলোর উপস্থাপনা থেকে বিরত থেকেছি। জরুরী ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হয়েছি এবং ঐ বিষয়ের অন্যান্য সম্পূরক অংশের জন্যে অপর পুস্তকসমূহে অনুসন্ধানের—পরামর্শ দিয়েছি,যাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধান ও গবেষণার মানসিকতা সৃষ্টি হয়।

৬। পুস্তকের বিষয় বস্তু স্বতন্ত্র পাঠে বিভক্ত করা হয়েছে এবং মোটামুটি প্রত্যেকটি পাঠে সংশ্লিষ্ট বিষয় বস্তকে স্থান দেয়া হয়েছে।

৭। কোন কোন পাঠের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে পরবর্তী পাঠে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। কখনোবা পুনব্যক্ত করা হয়েছে,যাতে শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে বিষয়টি উত্তমরূপে স্থান লাভ করে।

৮। প্রতিটি পাঠের শেষে প্রশ্নমালা উদ্ধৃত করা হয়েছে,যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান লাভের পথে সহায়ক হবে। (অনুবাদের সময় ঐগুলো উল্লেখ করা হয় নি)। নিসন্দেহে এ বইটিও ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয় এবং আশা করি সম্মানিত শিক্ষমন্ডলীর পরামর্শ ও সমালোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সংস্করণে ঐগুলোকে পরিহার করা হবে ।

পবিত্র ওয়ালী আসরের দরবারে ( আমাদের জীবন তাঁর নিমিত্ত উৎসর্গকৃত ,আল্লাহ তাঁর আবির্ভাব তরান্বিত করুন ) এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাটুকু গ্রহণযোগ্য হবে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মহিমান্বিত শহীদগণের নিকট আমাদের ঋণের বোঝা হয়ত কিছুটা লাঘব হবে এ প্রত্যাশা রইল ।

কোম-মোহাম্মদ তাকী মিসবাহ ইয়াযদী

শাহরিয়ার ১৩৬৫ সৌর বর্ষ

প্রথম খণ্ড

খোদা পরিচিতি

১ম পাঠ

দ্বীন অর্থ কী

দ্বীনের ধারণাঃ

এ বইয়ের উদ্দেশ্য হল ,ইসলামী মতবিশ্বাসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যাকে পারিভাষিক অর্থে  দ্বীনের মূলনীতি’বলা হয়ে থাকে । ফলে দ্বীন’(دین )শব্দটি ও এতদসস্পর্কিত অন্যান্য পরিভাষাসমূহের উপর সর্বাগ্রে সংক্ষিপ্তরূপে আলোকপাত করার চেষ্টা করব । কারণ,যুক্তিশাস্ত্রের মতে কোন বিষয়ের সংজ্ঞাসমূহের স্থান সর্বশীর্ষে।

  দ্বীন’একটি আরবী শব্দ,যার শাব্দিক অর্থ হল অনুসরণ,প্রতিদান ইত্যাদি। পরিভাষাগত অর্থে,মানুষ ও বিশ্বের জন্যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে বিশ্বাস এবং এ বিশ্বাস সস্পর্কিত যাবতীয় বিধি-নিষেধ হল দ্বীন’। দ্বীনের এ সংজ্ঞানুসারে,যারা সম্পূর্ণরূপে সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বার্সী এবং সৃষ্টসমূহের সৃষ্টিকে সাংঘর্ষিক অথবা শুধুমাত্র প্রকৃতি ও পদার্থসমূহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল বলে মনে করেন,তারা বিধর্মী বলে পরিচিত । আর যারা বিশ্বের সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন,তাদের মতাদর্শ ও ধর্মানুষ্ঠানগুলো যতই সবিচ্যুতি ও কুসংস্কারাচ্ছন্নই হোক না কেন,তারা সধর্মী বলে পরিগণিত। এ মূলনীতির ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধর্মসমূহকে সত্যধর্ম ও মিথ্যাধর্মে বিভক্ত করা যায় ।

অতএব সত্যধর্ম বলতে বুঝায়ঃ যে ধর্ম সত্যানুসারে ও সঠিক মত বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিতএবং যে সকল আচার-ব্যবহার পর্যাপ্ত যুক্তি- প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক ও আস্থাশীল বলে পরিগণিত সে সকল আচার-ব্যবহারের ব্যাপারে সুপারিশ ও গুরুত্ব প্রদান করে ।

দ্বীনের মৌলাংশ ও গৌণাংশ

দ্বীনের পারিভাষিক ধারণার ভিত্তিতে স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে,প্রতিটি দ্বীনই কমপক্ষে দু টি অংশ নিয়ে গঠিতঃ-

১। যে সকল বিশ্বাসের উপর দ্বীনের মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠিত

২। ঐ মূলভিত্তিসমূহের ভিত্তিতে প্রণীত কর্মসূচী ।

অতএব,যথার্থই বলা যায় যে, মতবিশ্বাস হল,দ্বীনের মূল অংশ এবং বিধি-নিষেধ হল দ্বীনের গৌণ অংশ। যেমনঃ ইসলামী পন্ডিতগণ এ দু টি পরিভাষাকে ইসলামী মতবিশ্বাস ও বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন ।

বিশ্বদৃষ্টি এবং মতাদর্শঃ-

বিশ্বদৃষ্টি এবং মতাদর্শ এ পরিভাষাগুলো প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থকে সাধারণতঃ বিশ্বদৃষ্টি বলতে বুঝায় : বিশ্ব ও মানুষ সস্পর্কিত এক শ্রেণীর সামগ্রিক বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি,অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অস্তিত্ব সম্পর্কে এক শ্রেণীর সামগ্রিক বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি। আর মতাদর্শ বলতে বুঝায় : মানুষের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে এক শ্রেণীর সামগ্রিক মতামত ।

উপরোল্লিখিত অর্থানুসারে কোন দ্বীনের মৌলিক ও বিশ্বাসগত বিষয়গুলোকে ঐ দ্বীনের বিশ্বদৃষ্টি এবং দ্বীনের সামগ্রিক বিধি-নিষেধগত বিষয়গুলোকে ঐ দ্বীনের মতাদর্শ বলে মনে করা যেতে পারে। অনুরূপ তাদেরকে দ্বীনের মৌলাংশ ও গৌনাংশ রূপে বর্ণনা করা যেতে পারে । কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে,মতাদর্শ পরিভাষাটি আংশিক বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সেরূপ বিশ্বদৃষ্টিও আংশিক বিশ্বাসসমূহকে সমন্বয় করেনা ।

উল্লেখ্য, মতাদর্শ’শব্দটি কখনো কখনো সাধারণ অর্থে ব্যবহার করা হয় । তখন বিশ্বদৃষ্টিও এর অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হয় ।

ঐশ্বরিক বিশ্বদৃষ্টি ও বস্তুগত বিশ্বদৃষ্টি

মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের বিশ্বদৃষ্টি বিদ্যমান ছিল এবং এখনও বর্তমান। তবে অতি প্রাকৃতিক বিষয়কে গ্রহণ ও বর্জনের উপর ভিত্তি করে এগুলোকে দু ভাগে বিভক্ত করা যায় :

ঐশ্বরিক বিশ্বদৃষ্টি এবং বস্তুবাদী বিশ্বদৃষ্টি।

পূর্বে বস্তুবাদী বিশ্বদৃষ্টির অনুসারীদেরকে প্রকৃতিবাদী,এ্যাথিষ্ট (Atheist) কখনো কখনো দ্বৈতবাদী (Dualist) ও নাস্তিক বলা হত। বর্তমানে তাদেরকে বস্তুবাদী বা Materialist নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

বস্তুবাদের বিভিন্ন শাখা - প্রশাখা রয়েছে। তবে , অধুনা এগুলোর মধ্যে দান্দ্বিক বস্তুবাদ (Dialectic Materialism)সর্বাধিক পরিচিত , যা মার্কসিজমের দর্শনকে রূপদান করেছে। ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে যে,বিশ্বদৃষ্টির পরিধি দ্বীনের বিশ্বাসগত অংশ অর্থাৎ আক্বায়েদ অপেক্ষা বিস্তৃততর। কারণ,তা নাস্তিক্যবাদী ও বস্তুবাদী বিশ্বাসকেও সমন্বিত করে থাকে। অনুরূপ,মতাদর্শ পরিভাষাটিও শুধুমাত্র দ্বীনের সমগ্র বিধি-নিষেধের জন্যেই ব্যবহৃত হয়না ।

ঐশী ধর্মসমূহ এবং তাদের মূলনীতিসমূহ

বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তির স্বরূপ সম্পর্কে ঐতিহাসিক,সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান । তবে,ইসলামী উৎস থেকে যতটুকু জানা সম্ভব,তার ভিত্তিতে বলা যায় : মানুষের আবির্ভাবের সাথে সাথেই ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল এবং মানব জাতির প্রথম সদস্য হযরত আদম (আঃ) স্বয়ং আল্লাহর নবী ,তাওহীদের প্রবক্তা এবং একেশ্বরবাদী ছিলেন। আর অংশীবাদী ধর্মসমূহ সর্বদা বিচ্যুতি এবং সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ফলে উৎপত্তি লাভ করেছিল ।

একেশ্বরবাদী ধর্মসমূহ, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে ঐশ্বরিক ধর্মসমূহও বটে, সেগুলো সত্যধর্ম বলে পরিগণিত। এ ধর্মগুলো তিনটি সামগ্রিক মূলে অভিন্ন । যথাঃ

(১) একক প্রভুর প্রতি বিশ্বাস।

(২)প্রতিটি মানুষের জন্যে পরকালীন অনন্ত জীবন আছে বলে বিশ্বাস ও পার্থিব কর্মের জন্যে অর্জিত কর্মফল গ্রহণের (দিবসের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।

(৩) পরম উৎকর্ষ সাধন এবং ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের পথে মানুষকে পরিচালনার জন্যে মহান প্রভুর নিকট থেকে নবীগণ প্রেরিত হয়েছেন বলে বিশ্বাস স্থাপন।

এ মূলত্রয় প্রকৃতপক্ষে তিনটি মৌলিক প্রশ্ন, যা প্রত্যেক বিবেক সম্পন্ন মানুষের বিবেকেই বিদ্যমান তারই জবাব মাত্র। প্রশ্নত্রয় নিম্নরূপ :

(১) অস্তিত্ব দান করেন কে ?

(২)জীবনের শেষে কী রয়েছে ?

(৩) কিরূপে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট কর্মসূচীর পরিচয় পাওয়া যেতে পারে ?

প্রসঙ্গতঃ ওহীর মাধ্যমে জীবন-কর্মসূচীর যে বিষয়-বস্তু নিশ্চিতরূপ লাভ করেছে,সত্যিকার অর্থে তা-ই হল সে ধর্মীয় মতাদর্শ যা ঐশ্বরিক বিশ্বদৃষ্টির উপর প্রতিষ্ঠিত ।

অপরিহার্য বিষয়সমূহ ,অবিচ্ছেদ্য বিষয়সমূহ ,নির্ভরশীল বিষয়সমূহ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসমূহ, যেগুলি সামগ্রিকভাবে দ্বীনের বিশ্বাস সমষ্টিকে রূপায়িত করে সেগুলির সমন্বয়ে মৌলিক মতবিশ্বাস গঠিত। আর বিশ্বাসসমূহের বৈসাদৃশ্যই হল একাধিক ধর্ম,ধর্মীয় দল-উপদল ও মাযহাবের উৎপত্তির কারণ। যেমন : কোন কোন নবীগণের (আঃ) নবুয়্যতের ব্যাপারে মতানৈক্যের কারণেই ইহুদি,খ্রীষ্টান ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে এবং তাদের মতবিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি কোন কোন বিষয়,মৌলিক মতবিশ্বাসের (প্রকৃত) সাথেও অসঙ্গতি সৃষ্টি করেছে। যেমন : খ্রীষ্টানদের ত্রিত্ববাদ,একেশ্বরবাদের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিহীন;যদিও তারা এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। অনুরূপ রাসুল (সঃ) -এর উত্তরসূরী নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হবেন,না জনগণ নির্বাচন করবে? এ বিষয়ের উপর মতবিরোধের ফলেই শিয়া ও সুন্নী মাযহাবের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে ।

উপসংহারে বলা যায়,তাওহীদ,নবুয়্যত এবং পুনরুত্থান দিবস,এ তিনটি হচ্ছে প্রত্যেক ঐশ্বরিক ধর্মেরই মৌলিকতম বিশ্বাস। তবে এ মূলত্রয়ের বিশ্লেষণের ফলে অর্জিত অথবা তাদের অধীনস্থ অন্যান্য বিশ্বাসসমূহকেও বিশেষ পারিভাষিক অর্থে মৌলিক বিশ্বাসরূপে গণনা করা যেতে পারে । যেমন : খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাসকে একটি মৌলিক বিশ্বাস এবং তাঁর একত্বকে অপর একটি মৌলিক বিশ্বাস হিসাবে মনে করা যেতে পারে । অথবা নবুয়্যতের বিশ্বাসকে সকল ধর্মেরই মৌলাংশ এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর নবুয়্যতের প্রতি বিশ্বাসকে ইসলামের অপর একটি মৌলিক বিশ্বাসরূপে গণনা করা যেতে পারে । যেমন : কোন কোন শিয়া পন্ডিত ন্যায়পরায়ণতাকে (العدل ) একটি স্বতন্ত্র মূল হিসাবে মনে করেন, যদিও এটা তাওহীদেরইএকটি শাখা । অনুরূপ, নবুয়্যতের অধীন হওয়া সত্বেও ইমামতকে আলাদা একটি মৌলিক বিশ্বাসরূপে গণনা করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এধরনের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মৌলিক শব্দটির ব্যবহার একান্তই পারিভাষিক ও পারস্পরিক সম্মতিভিত্তিক। ফলে,এ ব্যাপারে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই ।

অতএব, দ্বীনের মৌলাংশ’ শব্দটিকে সাধারণ ও বিশেষ এ দু টি অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। মৌলাংশ’পরিভাষাটির সাধারণ অর্থ দ্বীনের গৌণাংশ’অর্থাৎ বিধি-নিষেধ অংশের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং নির্ভরযোগ্য সকল মতবিশ্বাসকে সমন্বয় করে থাকে। আর তার বিশেষ অর্থটি দ্বীনের মৌলিকতম বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়ে থাকে। অনুরূপ,মৌলিক বিশ্বাসত্রয়ের মত সকল ঐশী ধর্মের অভিন্ন বিশ্বাসকে (তাওহীদ,নবুয়্যত,পুনরুত্থন দিবস) দ্বীনের মৌলাংশ (নিরঙ্কুশভাবে) এবং তাদের সাথে অপর এক বা একাধিক মৌলিক বিশ্বাসের সমন্বয়ে দ্বীনের বিশেষ মৌলাংশ’অথবা এক বা একাধিক বিশ্বাস ,যেগুলো মাযহাব বা ফিরকার বিশেষত্ব, সেগুলোর সংযোজনের মাধ্যমে কোন মাযহাবের মৌলিক বিশ্বাসরূপে গণনা করা হয়।

২য় পাঠ

দ্বীনের অনুসন্ধানের