আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)0%

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 14541
ডাউনলোড: 3733

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 37 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14541 / ডাউনলোড: 3733
সাইজ সাইজ সাইজ
আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

আকায়েদ শিক্ষা ( প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

১৭তম পাঠ

তাওহীদের অর্থ কী ?

ভূমিকা :

তাওহীদ (توحید ) শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল অদ্বিতীয় বলে স্বীকার করা’বা একত্ববাদ। দর্শন,কালাম,আখ্লাক ও ইরফান বিশেষজ্ঞগণের ভাষায় তাওহীদ”শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে এ অর্থগুলোতে খোদার একত্ববাদকে বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো তাওহীদের প্রকারভেদ’অথবা তাওহীদের স্তরসমূহ শিরোনামে স্মরণ করা হয়ে থাকে। তবে এগুলোর সবকটি সম্পর্কে আলোচনা করা এ প্রবন্ধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অতএব এখানে আমরা অপেক্ষাকৃত প্রসিদ্ধতর ও সাযুজ্যতর পরিভাষাগুলোর আলোচনা করে ইতুষ্ট থাকব।

১। বহুত্বের অস্বীকৃতি :

তাওহীদের সর্বপথম প্রসিদ্ধ পরিভাষাটি হল,খোদার একত্বে বিশ্বাস ও বহুত্বের অস্বীকৃতি। তাওহীদ”প্রকাশ্য অংশীবাদের বিরুদ্ধে বা বিপরীতে অবস্থান নিয়ে থাকে। দুই বা ততোধিক স্বাধীন খোদার প্রতি বিশ্বাস এরূপে যে,তাদের একের প্রতি অপরের কোন নির্ভরশীলতা নেই এ অংশীবাদী বিশ্বাসকেও তাওহীদ অস্বীকার করে।

২। যৌগিকতার অস্বীকৃতি :

তাওহীদের দ্বিতীয় পরিভাষাটি হল একত্বের বিশ্বাসার্থে সত্তার অবিভাজ্যতা বা প্রভুসত্তা,কার্যকরী ও সামর্থ্যগতভাবে অংশের সমষ্টি না হওয়া।

এ অর্থকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে না-বোধক গুণ বা সিফাতুসসালবিয়াহ্ (যৌগিকতার অস্বীকৃতি) রূপে বর্ণনা করা হয়ে থাকে (যেমনটি দশম পাঠে আলোচনা করা হয়েছে)। কারণ আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি যৌগের ধারণা সম্পর্কে এবং প্রাসংগিকভাবে তার অস্বীকৃতির সাথে,অবিভাজ্যতার তাৎপর্য অপেক্ষা অধিকতর পরিচিত ।

৩। প্রভুসত্তার সাথে অতিরিক্ত গুণাবলী সংযোজনের অস্বীকৃতি :

তাওহীদের তৃতীয় পরিভাষাটি প্রভুসত্তার সাথে তাঁর গুণসমূহের একাত্বতা এবং সত্তার সাথে অতিরিক্ত বা অর্জিত গুণাবলী সংযোজনের অস্বীকৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে-যাকে গুণগত একত্ব বলা হয়। তবে রেওয়ায়েতের ভাষায় একে গুণাবলীর পরিবর্জন’নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তাওহীদের এ পরিভাষাটি,যারা (যেমন : আশায়েরী সম্প্রদায়) খোদার গুণাবলীকে তাঁর সত্তাবহির্ভূত অতিরিক্ত বিষয় বলে মনে করেন এবং যারা অষ্টপ্রাচীনত্বের’প্রবক্তা,তাদের বিপরীতে অবস্থান নেয় ।

গুণগত একত্ববাদের স্বপক্ষে যুক্তি হল : যদি আল্লাহর প্রতিটি গুণই স্বতন্ত্র দৃষ্টান্তের (مصداق ) অধিকারী হয়,তবে তা নিম্নলিখিত কয়েকটি অবস্থার ব্যতিক্রম নয় :

হয় ঐ গুণগুলোর দৃষ্টান্ত প্রভুসত্তার অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হবে,যার অপরিহার্য অর্থ হবে,প্রভুসত্তা হল এশাধিক অংশের সমষ্টি এবং ইতিপূর্বে আমরা প্রমাণ করেছি যে,এ ধরণের কোন কিছু অসম্ভব অথবা ঐ গুণগুলোর দৃষ্টান্ত সত্তাবহির্ভূত বলে বিবেচিত হয় এবং এ অবস্থায়,হয় অনিবার্যঅস্তিত্ব’ও সৃষ্টিকর্তার উপর অনির্ভরশীল’বলে পরিগণিত হবে অথবা সম্ভাব্য অস্তিত্ব’ও সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল’বলে পরিগণিত হবে।

কিন্ত গুণগুলোর অনিবার্য অস্তিত্ব হওয়ার অর্থ হবে,সত্তার একাধিকত্ব ও সুস্পষ্ট অংশীবাদ এবং কোন মুসলমানই এর দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। অপরদিকে গুণগুলোর সম্ভাব্য অস্তিত্ব হওয়ার অপরিহার্য অর্থ হল প্রভুসত্তা’ঐ গুণগুলোর ঘাটতিতে থাকার ফলে ঐগুলোকে সৃষ্টি করতঃ সংশ্লিষ্ট গুণসমূহে গুণান্বিত হয়েছেন । যেমন : যদিও মহান আল্লাহ জীবনহীন তথাপি জীবন নামক এক অস্তিত্বকে সৃষ্টি করেন এবং তার মাধ্যমেই জীবন লাভ করেন। অনুরূপ জ্ঞান,ক্ষামতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও একই ধারণা রূপ পরিগ্রহ করে । অথচ অস্তিত্বদাতা কারণ’ সত্তাগতভাবে সৃষ্ট বিষয়ের পূর্ণতাসমূহের ঘাটতিতে থাকবে,এটা অসম্ভব।

সর্বাপেক্ষা লজ্জাজনক ব্যাপার হল এটা যে,স্বীয় সৃষ্ট বিষয়সমূহের ছায়ায় জীবন,জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী হওয়া এবং অন্যান্য উৎকর্ষ গুণে গুণান্বিত হওয়া।

উপরোক্ত ধারণাগুলোর বর্জনের মাধ্যমে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,প্রভুর গুণসমূহ প্রভুসত্তা ভিন্ন,পরস্পর স্বতন্ত্র অন্য কোন দৃষ্টান্তের (مصداق ) অধিকারী নয়। বরং তাদের সকলেই এমন এক ভাবার্থ যে,(শুধুমাত্র) বুদ্ধিবৃত্তিই,প্রভুর একক,অবিভাজ্য,পবিত্র সত্তা থেকে পৃথক রূপে উপস্থাপন করে থাকে (কিন্তু বাস্তব জগতে তাদেরকে আলাদা করে ভাবা অসম্ভব)।

৪। ক্রিয়াগত একত্ববাদ :

তাওহীদের চতুর্থ পরিভাষাটি,দার্শনিক ও কালামশাস্ত্রবিদগণের নিকট ক্রিয়াগত একত্ববাদ বলে পরিচিত। আর এর অর্থ হল : মহান আল্লাহ স্বীয় কর্ম সম্পাদনের জন্যে কারো উপর ও কোনকিছুর উপরই নির্ভরশীল নন এবং তিনি কোন ভাবেই কোন অস্তিত্বের সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন।

এ বিষয়টি অস্তিত্বদাতা কারণের’বিশেষত্বের আলোকে প্রমাণ করা যায়,যা সকল কার্যের (معلول )প্রতিষ্ঠাতা। কেননা এ ধরনের কারণের (অস্তিত্বদাতা কারণ) কার্যগুলো সমস্ত অস্তিত্বের জন্যে উক্ত কারণের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দর্শনের ভাষায়,এ কার্যগুলো খোদার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সস্পর্কযুক্ত’এবং ঐ গুলোর কোন প্রকার স্বনির্ভরতা নেই ।

অন্যকথায় : যে কেউ যা কিছুরই অধিকারী হোক না কেন,তা তাঁরই নিকট থেকে এবং তাঁরই ক্ষমতার অধীন। তাঁরই রাজত্বের পরিমণ্ডলে,তাঁরই সুনির্ধারিত ও প্রকৃত মালিকানাধীন। অন্য সবার ক্ষমতা ও মালিকানা তাঁর ক্ষমতা ও মালিকানার উলম্বে ও নিম্নস্তরে অবস্থান করে এবং তারা খোদার ক্ষমতার পথে কোন প্রকার ক্লেশ সৃষ্টি করে না। যেমন : বান্দা উপার্জিত সস্পদের উপর যে বৈধ মালিকানা লাভ করে তা প্রভুর বৈধ মালিকানার উলম্বে অবস্থান করে।

العبد و ما فی یده کان لمولاه

বান্দা ও যা কিছু তার নিকট আছে,সকলই প্রভুর জন্যে’।

অতএব মহান আল্লাহ এমন কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবেন,যারা তাদের সমগ্র অস্তিত্বের জন্যে তাঁর উপর নির্ভর করে,তা কীরূপে সম্ভব ?

৫। স্বাধীন প্রভাব :

তাওহীদের পঞ্চম পরিভাষাটি হল স্বাধীন প্রভাব’১৭ অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্ট বিষয়াদি স্বীয় কর্মের ক্ষেত্রেও আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। সৃষ্ট বিষয়াদির পরস্পরের মধ্যে যে প্রভাব ও কর্মতৎপরতা বিদ্যমান,তা আল্লাহরই অনুমতিক্রমে,আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও ক্ষমতায় সস্পন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র যিনি অনির্ভরশীল ও স্বাধীনভাবে সর্বত্র ও সর্বাবস্থায় এবং সকল কিছুর উপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম,তিনি হলেন পবিত্র সত্তার অধিকারী মহান আল্লাহ। সকল কর্মতৎপরতা ও প্রভাব তাঁর কর্মতৎপরতা ও প্রভাবের উলমে^ অবস্থান করে এবং তাঁরই প্রভাবের প্রতিফলনে স্বীয় কর্মসম্পাদন করে।

আর এর ভিত্তিতেই পবিত্র কোরান প্রাকৃতিক নির্বাহকসমূহ এবং অপ্রাকৃতিক নির্বাহকসমূহের (যেমন : ফেরেস্তা,জ্বীন ও মানুষ) সকল র্কীতিকে খোদার প্রতি আরোপ করে থাকে । যেমন : বৃষ্টিবর্ষণ,বৃক্ষের উদ্গমন ও ফলদান ইত্যাদি খোদায়ী কীর্তি বলে আখ্যায়িত হয়। এ জন্যে সুপারিশ করা হয় যে,মানুষ যেন এ খোদায়ী কীর্তিকে খোদার উলমে^ নিকটবর্তী যে নির্বাহকসমূহ বিদ্যমান সেগুলোতে উপলব্ধি ও স্বীকার করে এবং সর্বদা এ সম্পর্কে চিন্তা করে।

অনুধাবনের জন্যে দৈনন্দিন জীবন থেকে একটি উদাহরণ উল্লেখ করব : যদি কোন কার্যালয়ের প্রধান কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে কোন কর্ম সম্পাদনের জন্যে আদেশ প্রদান করে,তবে কর্মটি আদিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক সম্পাদিত হলেও উচ্চ পর্যায়ে এর দায়-দায়িত্ব ঐ কার্যালয়ের প্রধানের উপরই বর্তায়। এমনকি জ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।

সুনির্ধারিত কর্তৃত্বের (فاعلیت التکوینی ) ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রম বিদ্যমান। সকল নির্বাহকের অস্তিত্বই মহান আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ,এ দৃষ্টিকোণ থেকে তা মস্তিষ্কগত কল্পিত বিষয়ের মতই,যা কল্পনাকারীর উপর নির্ভরশীল।

و لله المثل الاعلی

ফলে যে কোন কর্ম,যে কোন কর্তার মাধ্যমেই সস্পন্ন হোক না কেন,উচ্চতর পর্যায়ে তা মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে,তাঁরই সুনির্ধারিত ইচ্ছায় (الارادة التکوینیة ) সম্পাদিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।

و لا حول و لا قوت الا بالله العلی العظیم

দু টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত :

ক্রিয়াগত একত্ববাদের মোদ্দাকথা হল, মানুষ মহান আল্লাহ ব্যতীত কাউকে এবং কোন কিছুকেই উপাসনার জন্যে যোগ্য বলে মনে করবে না’। কারণ ইতিপূর্বে যেমনটি আমরা ইঙ্গিত করেছিলাম যে,বান্দার নিকট তার সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা ব্যতীত কেউই উপাসনার যোগ্য হতে পারেনা। অন্যকথায় : প্রভুত্ব হল সৃজন ও পালন কতৃত্বের অবিয়োজ্য ভাষ্য ।

অপরদিকে তাওহীদের শেষোক্ত অর্থটি (স্বাধীন প্রভাব) থেকে প্রাপ্ত উপসংহারটি হল : মহান আল্লাহর উপর মানুষের পূর্ণ আস্থা থাকা,সকল কর্মের জন্যেই তাঁর উপর নির্ভর করা ও একমাত্র তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা,একমাত্র তাঁরই নিকট আশা করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় না করা;এমন কি প্রত্যাশা ও চাহিদাসমূহ পূরণের স্বাভাবিক ক্ষেত্রসমূহ প্রস্তুত না থাকলেও নিরাশ না হওয়া। কারণ মহান আল্লাহ স্বাভাবিক পথ ভিন্ন অন্য কোন পথেও তাঁর বান্দার চাহিদা ও প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম।

আর (উপরোক্ত অর্থদ্বয়ের অনুসারী) এমন কোন মানুষই প্রভুর বিশেষ অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত এবং অভূতপূর্ব মানসিক ও আত্মিক তুষ্টিতে পরিপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়ে থাকেন।

) أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ(

জেনে রাখ ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ইউনুস -৬২)

উপরোক্ত সিদ্ধান্তদ্বয় নিম্নলিখিত আয়াতশরীফে সন্নিহিত রয়েছে -যে আয়াতটি প্রত্যেক মুসলমান প্রত্যহ কমপক্ষে দশবার আবৃতি করে থাকে।

) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ(

( প্রভু হে! ) আমরা আপনারই উপাসনা করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।(সূরা ফাতিহা- ৫ )

একটি ভুল ধারণার অপনোদন :

এখানে সম্ভবতঃ একটি ভুল ধারণার অবকাশ থাকতে পারে। যথা : যদি পরিপূর্ণ তাওহীদের দাবি এটা হয়ে থাকে যে,মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে না। তবে আল্লাহর মনোনীত বান্দা ও ওলীগণেরتوسل করা বা শরণাপন্ন হওয়াও সঠিক হতে পারে না।

প্রতিউত্তরে বলতে হয় : আল্লাহর ওলীগণের শরণাপন্ন হওয়া যদি এ অর্থে হয় যে,তারা স্বাধীনভাবে ও আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীতই শরণার্থীর কোন কর্ম সম্পাদন করবেন,তবে এ ধরনের তাওয়াসসুল তাওহীদের সাযুজ্য হতে পারে না। কিন্তু যদি এ অর্থে হয় যে,মহান আল্লাহ ওলীগণকে স্বীয় অনুগহের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং মানুষকেও তাদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্যে আদেশ দিয়েছেন,তবে এ ধরনের তাওয়াসসুল একত্ববাদের সাথে কোন বিরোধ তো সৃষ্টি করেই না,বরং উপাসনা ও আজ্ঞাবহতার ক্ষেত্রে একত্ববাদের মর্যাদায় পরিগণিত হবে। কারণ তাঁরই (আল্লাহর) আদেশে সস্পন্ন হয়ে থাকে।

কিন্তু কেন মহান আল্লাহ এ ধরনের মাধ্যমসমূহকে স্থান দিয়েছেন এবং কেনই বা মানব সম্প্রদায়কে তাঁদের শরণাপন্ন হতে বলেছেন ? এর উত্তরে বলা যায় যে,এ ঐশ্বরিক বিষয়টির পশ্চাতে একাধিক উদ্দেশ্য লুক্বায়িত। এগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে : আল্লাহর উপযুক্ত বান্দাগণের উচ্চ মর্যাদার পরিচয় প্রদান,উপাসনা ও আনুগত্যের পথে অন্যদেরকে উৎসাহ প্রদান -যা তাঁদের এ সম্মানিত স্থানে পৌঁছার কারণ মানুষকে তাদের ইবাদত ও আনুগত্যের জন্যে অহংকার করা থেকে বিরত রাখা এবং যারা নিজেদেরকে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী ও পূর্ণতম মানব হিসেবে মনে করেন তাদেরকে সে ভ্রান্তি থেকে মুক্তি প্রদান। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে,সর্বশেষে বর্ণিত ব্যাপারটি যারা আহলে বাইতগণের (আঃ) বিলায়াতকে অস্বীকার করে এবং যারা তাঁদের শরণাপন্ন হওয়া থেকে বঞ্চিত,তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে ।

১৮তম পাঠ

জাবর ও এখতিয়ার

ভূমিকা :

যেমনটি পূর্ববর্তী পাঠসমূহে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, স্বাধীন কীর্তিতে তাওহীদ’হল একটি অমূল্য শিক্ষা,যা মানুষের আত্মপরিশুদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এ জন্যেই পবিত্র কোরানে এ বিষয়টির উপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে তার সঠিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন : সকল বিষয়কে প্রভুর অনুমোদন,ইচ্ছা,ক্বাজা ও ক্বাদারের সাথে সস্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা ।

তবে এ বিষয়টির সঠিক অনুধাবনের জন্যে একদিকে যেমন : বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তাগত বিকাশের প্রয়োজন,অপরদিকে তেমনি সঠিক ব্যাখ্যা ও শিক্ষার প্রয়োজন। যারা যথেষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ঘাটতিতে আছেন অথবা কোরানের প্রকৃত ব্যাখ্যাকারী ও পবিত্র পথপ্রদর্শকগণের শিক্ষা-দীক্ষা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন,তারা নিজেদেরকে বিচ্যুতি ও ভ্রান্তির পথে ঠেলে দিয়েছেন। তারা এ বিষয়টিকে,যে কোন প্রকারের প্রভাব ও কারণত্ব একান্তই মহান আল্লাহ থেকে -এ অর্থে ব্যবহার করেছেন এবং কোরানের সুস্পষ্ট আয়াতের ব্যতিক্রমে যে কোন প্রকার প্রভাব ও কারণত্বকে মাধ্যম ও(উলম্বিক) কারণসমূহ থেকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে আল্লাহর প্রকৃতি এরূপ যে,তিনি আগুনের উপস্থিতিতে তাপ সৃষ্টি করেন অথবা আহার গ্রহণ ও পানি পানের সময় ক্ষুধা নিবারণ ও তৃপ্তিকে অস্তিত্বে আনেন,নতুবা তাপ,ক্ষুধা নিবারণ ও তৃপ্তির জন্যে আগুন,আহার ও পানির কোন ভূমিকা নেই।

এ চিন্তাগত বিচ্যুতির কুফলগুলোকে আমরা মানুষের স্বাধীন কর্মকাণ্ড ও তার দায়িত্ব সস্পর্কিত বিষয়ের আলোচনায় স্থান দিব। অর্থাৎ এ ধরনের চিন্তার ফল হল : মানুষের কর্মকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব প্রত্যক্ষভাবে মহান আল্লাহর উপর বর্তায় এবং ঐ সকল কর্মকান্ডের ব্যাপারে মানুষের কর্তৃত্ব সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃত হয়। ফলে কেউই তার কর্মের জন্যে দায়ী হবে না।

অন্যকথায়: এ ধরনের বক্রচিন্তার একটি ধ্বংসাত্বক প্রভাব হল,জাবরিয়াত ও মানুষের কর্তব্যপরায়ণতার অস্বীকৃতি তথা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্বের অস্বীকৃতি,নিস্ফলতা এবং মানসিক,চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যা তথা ইসলামী বিধি-ব্যবস্থার অন্ত:সারশূন্যতা। কারণ যেখানে মানুষ তার কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে স্বাধীন নির্বাচনের অধিকার রাখে না,সেখানে দায়িত্ব,কর্তব্য,আদেশ-নিষেধ এবং পুরস্কার-তিরস্কারের কোন প্রশ্নই আসে না। বরং সুনির্ধারিত বিন্যাস ব্যবস্থার নিরর্থকতা ও অসারতা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ পবিত্র আয়াত,১৮ রেওয়ায়াত ও বৃদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির মাধ্যমে যাপাওয়া যায়,তার ভিত্তিতে বলা যায়,এ বিশ্বপ্রকৃতিকে সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল,মানব সৃষ্টির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা,যাতে মনুষ্য সম্প্রদায় স্বীয় নির্বাচন ক্ষমতার মাধ্যমে সুকর্ম সম্পাদন,উপাসনা ও আনুগত্যের মাধ্যমে উৎকর্ষের সর্বোচ্চ স্তরে আরোহণ করতঃ মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয় এবং মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভের জন্যে উপযুক্ত হয়। যদি মানুষের স্বীয় কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে নির্বাচনাধিকার না থাকে এবং কোন দায়িত্বও না থাকে তবে পুরস্কার,অনন্ত অনুগহ ও প্রভুর সন্তুষ্টির জন্যে তার কোন উপযুক্ততাও থাকবে না। ফলে সৃষ্টির উদ্দেশ্যও ব্যাহত হবে। এবং সৃষ্টি জগৎ নিশীথের নাট্যশালায় পর্যবশিত হবে,যেন মানুষ আপন হাতে মূর্তি গড়ল ও অন্যের ইচ্ছাধীন তাদের মধ্যে গতির সঞ্চার হল,অতঃপর কেউ কেউ পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হল,কেউবা আবার তিরস্কৃত ও শাস্তি প্রাপ্ত হল !

এ ভয়ংকর অপচিন্তার প্রচার ও প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিলাষ। কারণ এর মাধ্যমে তারা তাদের আপন কুকর্মের ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছে এবং নিরীহ ও অসচেতন জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দুঃশাসন ও নেতৃত্বের আজ্ঞাবহ হতে বাধ্য করতে পেরেছে;একইসাথে সক্ষম হয়েছে যে কোন প্রকার প্রতিবাদ,প্রতিরোধ ও আন্দোলন থেকে জনগণকে দূরে রাখতে। সত্যিকার অর্থে জাতিসমূহের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার জন্যে জাবরিয়াতকেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে গণনা করা উচিৎ।

অপরদিকে যারা কিছুটা হলেও এ বক্রচিন্তার দুর্বলতাগুলোকে অনুধাবন করতে পেরেছেন,কিন্ত না তারা পরিপূর্ণ তাওহীদ ও জাবরের অস্বীকৃতির মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয়েছেন,না তারা পবিত্রও নিস্পাপ আহলে বাইতগণের (আঃ) জ্ঞানভাণ্ডার থেকে লাভবান হতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে তারা সমর্পণবাদে (تفویض ) বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং মানুষের নির্বাচনাধীন কর্মকাণ্ডকে মহান আল্লাহর প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত বলে মনে করেছেন । প্রকৃতপক্ষে তারাও অন্য এক প্রকার বিচ্যুতি ও বক্রচিন্তার জালে আটকা পড়েছেন এবং ইসলামের মহামহিম শিক্ষা-দীক্ষা ও তার সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

কিন্তু যারা এর স্বরূপ অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন এবং একই সাথে কোরানের প্রকৃত ব্যাখ্যাকারী ও শিক্ষকগণকে শনাক্ত করতে পেরেছেন,তারা এ বক্রচিন্তা থেকে পবিত্র থেকেছেন। তারা একদিকে যেমন স্বীয় নির্বাচনাধীন কর্মকাণ্ডকে প্রভু প্রদত্ত ক্ষমতার আলোকে সস্পন্ন হয় বলে মনে করেছেন ও এতদসংশ্লিষ্ট সকল দায়-দায়িত্বকে গ্রহণ করেছেন,অপরদিকে তেমনি প্রভুর মহিমান্বিত স্বাধীন কীর্তিসমূহকে উচ্চ পর্যায়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। যার ফলশ্রুতিতে এ অমূল্য পরিচিতির স্বরূপকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।

মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর পবিত্র আহলে বাইতগণের (আঃ) নিকট থেকে যে রেওয়ায়েত আমাদের কাছে পৌঁছেছে,তাতে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনার সন্ধান মিলে,যেগুলো ক্ষমতা (استطاعت ),জাবরের অস্বীকৃতি (نفی الجبر ),সমর্পণবাদ (تفویض ) ইত্যাদি শিরোনামে এবং অনুমতি (اذن ),ইচ্ছা (مشیت و اراده ),আল্লাহর ক্বাজা ও ক্বাদর ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত হয়ে হাদীস শরীফে সংরক্ষিত আছে। অনুরূপ এমনও হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে,অক্ষম ব্যক্তিরা যেন এ সূক্ষ্ম বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামায়। কারণ এতে তারা বিচ্যুত ও পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে।

যাহোক জাবর ও এখ্তিয়ারের আলোচনার বিভিন্ন দিক রয়েছে,যার সবগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। তবে বিষয়বস্তুর গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে সেগুলির কোন কোন দিকের উপর সরল ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করব। অনুরূপ যারা এ বিষয়ের উপর অধিকতর গবেষণায় আগ্রহী,তাদেরকে পরামর্শ দিব যাতে বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক ভিত্তির উপর জ্ঞানার্জনের জন্যে যথেষ্ট ধৈর্য ও স্থৈর্য অর্জন করেন।

এখতিয়ারের ব্যাখ্যা :

সিদ্ধান্ত নেয়ার ও নির্বাচনের ক্ষমতা মানুষের পরিচিতির ক্ষেত্রে একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় বলে পরিগণিত। কারণ প্রত্যেকেই নির্ভুল প্রত্যক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে স্বীয় অভ্যন্তরে একে খুজে পায়;যেমনিকরে অন্যান্য মানসিক অবস্থা সম্পর্কে এ জ্ঞানের মাধ্যমে অবগত হয়। এমনকি যখন কোন ব্যাপারে কেউ সন্দেহ করে তখন ঐ সন্দেহের উপস্থিতিকেও প্রত্যক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে অনুধাবন করে থাকে এবং এ ব্যাপারে কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে নিজের মধ্যে স্থান দিতে পারে না ।

অনুরূপ যে কেউ স্বীয় অভ্যন্তরে কিঞ্চিৎ মনোযোগ দিলেই অনুধাবন করতে পারে যে,কোন কথা বলবে ? না,বলবে না ? হাত নাড়বে ? না,নাড়বে না? আহার গ্রহণ করবে? না,করবে না? ইত্যাদি।

কোন কাজের সিদ্ধান্ত কখনো কখনো প্রবৃত্তিগত পাশবিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে নেয়া হয়। যেমন : ক্ষুধার্থ আহার গ্রহণের ইচ্ছা করে,তৃষ্ণার্ত পানি পানের ইচ্ছা করে ইত্যাদি। আবার কখনো কখনো বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদাকে তুষ্ট করার জন্যে এবং সুউচ্চ মানবিক মূল্যবোধকে বাস্তবায়নের জন্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেমন : কোন অসুস্থ স্বীয় রোগ নিরাময়ের জন্যে তিক্ত ঔষধ সেবন করে এবং লোভনীয় খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে অথবা কোন বিদ্যা অর্জনকারী জ্ঞানার্জন ও সত্য উদঘাটনের পথে স্বীয় বস্তুগত কামনা থেকে নিজেকে দূরে রাখে এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝে নিজেকে মুহ্যমান রাখে অথবা আত্মোৎসর্গকারী সৈনিক মর্যাদাপূর্ণ মূল্যবোধে পৌঁছার জন্যে এমনকি আপন প্রিয় জীবনকে পর্যন্ত উৎসর্গ করে।

প্রকৃতপক্ষে মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ তখনই ঘটে যখন বিভিন্ন প্রকারের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ব্যক্তি চারিত্রিক প্রকৃষ্টতা,আত্মিক উৎকর্ষ,আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে স্বীয় কুপ্রবৃত্তি ও পাশবিক কামনা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। যতোধিক কোন মানুষ স্বাধীনভাবে ও সচেতনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে কোন কর্ম সম্পাদন করবে,আত্মিক ও মানবিক উৎকর্ষ বা পশ্চাৎপদতার ক্ষেত্রে ততোধিক প্রভাব থাকবে এবং পরকালীন পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে উপযুক্ততর হবে।

তবে পাশবিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষমতা সকল মানুষের মধ্যে সব বিষয়ে এক রকম নয়। কিন্তু প্রত্যেক মানুষই কম-বেশী এ আল্লাহ প্রদত্ত বৈভব (স্বাধীন নির্বাচনাধিকার) থেকে লাভবান হতে পারে এবং (প্রতিরোধের জন্যে) যতবেশী অনুশীলন করবে প্রতিরোধ ক্ষমতা ততবেশী দৃঢ়তর হবে ।

অতএব স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতার অস্তিত্ব সম্পর্কে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কোন সুযোগ নেই এবং এ বিবেকপ্রসূত ও স্বতঃসিদ্ধ বিষয়টি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার সন্দেহ,দ্বিধার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সন্ধিগ্ধ করে ফেলা অনুচিৎ। যেমনটি আমরা ইঙ্গিত করেছিলাম যে,স্বাধীন নির্বাচন ক্ষমতা একটি স্বতঃসিদ্ধ মূলনীতি হিসেবে সকল চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যার প্রতিষ্ঠানে,বিভিন্ন ধর্মে এবং ঐশী বিধানে গৃহীত হয়েছে। এ মূলনীতি ব্যতিরেকে দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য,প্রশংসা বা ভর্ৎসনা,শাস্তি বা পুরষ্কারের কোনস্থান নেই ।

তবে যা এ স্বতঃসিদ্ধ সত্য থেকে বিচ্যুতির ও জাবরিয়াতের কারণ হয়েছে,তা কতগুলো ভ্রান্তধারণা বৈ কিছুই নয়। ফলে এ গুলোর জবাব দিতে হবে,যাতে কোন প্রকার কুমন্ত্রণা ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সুযোগ না থাকে । আর তাই এখানে আমরা অতিশয় ভ্রান্ত ধারণাগুলোর অপনোদনে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মনোনিবেশ করব।