ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল 0%

ইনসানে কামেল লেখক:
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

ইনসানে কামেল

লেখক: শহীদ অধ্যাপক মুর্তাজা মুতাহ্হারী
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 38807
ডাউনলোড: 5734

পাঠকের মতামত:

ইনসানে কামেল
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 83 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 38807 / ডাউনলোড: 5734
সাইজ সাইজ সাইজ
ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

দার্শনিক বেকনের দৃষ্টিভঙ্গি ও তার প্রভাব

এখানে একটি ভূমিকা দান প্রয়োজন মনে করছি। আপনারা জানেন,চারশ বছর পূর্বে ষোড়শ শতাব্দীতে যুক্তি ও বিজ্ঞানের জগতে এক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। দু জন বড় দার্শনিক- একজন ইংরেজ দার্শনিক বেকন এবং অপরজন ফরাসী দার্শনিক ডেকার্ট নববিজ্ঞানের অগ্রদূত বলে পরিচিতি লাভ করেন। বিশেষত বেকনের জ্ঞান বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি পূর্ববর্তী সকল ধ্যান-ধারণাকে সম্পূর্ণ রূপে পাল্টে দেয়। তার ধারণা ও মতবাদ বিজ্ঞানের উন্নয়ন এবং প্রকৃতির উপর মানুষের আধিপত্যের কারণস্বরূপ। আমার মতে সে সাথে মানুষের অধঃপতনের কারণ হয়েছে। অর্থাৎ এই মতবাদ যেমন প্রকৃতিকে মানুষের জন্য বাসোপযোগী করেছে তেমনি আবার মানুষের হাতেই মানুষকে অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তার এ ধারণাটি কি?

বেকনের পূর্বে দার্শনিক ও অন্যান্য মহাপুরুষরা (বিশেষত ধর্মীয়) জ্ঞানকে সত্য অনুধাবন ও উদ্ঘাটনের উপকরণ মনে করতেন (ক্ষমতার হাতের উপকরণ হিসেবে নয়)। অর্থাৎ যখন তারা মানুষকে জ্ঞান অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করতেন তাদের উদ্দেশ্য হিসেবে বলতেন, হে মানব! জ্ঞানী ও সচেতন হও। কারণ জ্ঞানই পারে তোমাকে সত্যে পৌছে দিতে। জ্ঞান সত্যে পৌছার মাধ্যম। এ কারণেই জ্ঞান পবিত্র বলে গণ্য হতো। অর্থাৎ তাদের নিকট জ্ঞান বস্তুগত কল্যাণের ঊর্ধ্বে একটি পবিত্র বিষয় ছিল। সব সময় তারা জ্ঞানকে সম্পদের মোকাবিলায় বর্ণনা করে বলতেন, জ্ঞান উত্তম নাকি অর্থ? আমাদের সাহিত্যে (ফার্সি,আরবী যা-ই হোক) জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে তুলনা করে জ্ঞানকে সম্পদের উপর প্রাধান্য দেয়া হতো। যেমন-

জ্ঞান দিলেন খোদা ইদরিসকে,কারুনকে মাল

একজন করেছে ঊর্ধ্বে গমন,অন্যজন লাঞ্ছিত বেসামাল।

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর কয়েকটি বাণী যা নাহজুল বালাগাতে এসেছে,সেখানে তিনি জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে তুলনা করে জ্ঞানকে সম্পদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ধর্মে সব সময়ই জ্ঞানকে একটি পবিত্র বস্তু ও সকল বস্তুগত বিষয়ের ঊর্ধ্বে মনে করা হয়। এ জন্য শিক্ষকের মর্যাদাকেও পবিত্র হিসেবে ধরা হয়। আলী (আ.) বলেন, যে আমাকে একটি বাক্য শিক্ষা দান করেছে,সে আমাকে তার দাসে পরিণত করেছে। (তার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং রাসূল [সা.])

আপনারা দেখুন,কোরআন জ্ঞানের মর্যাদা ও পবিত্রতাকে কত বড় করে দেখে- যেখানে হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি ও আদম কতৃক ফেরেশতাদের নামসমূহ শিক্ষাদানের বিষয়টি বর্ণনা করে বলছে,হে ফেরেশতাগণ! তোমরা আদমকে সিজদা কর। কারণ আদম এমন কিছু জানে যা তোমরাজান না। (ভাবার্থ নেয়া হয়েছে)

বেকন তার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে বললেন,মানুষ সত্যকে উদ্ঘাটনের জন্য জ্ঞানের (একে পবিত্র মনে করে) পেছনে ছুটবে- এ কথাটির কোন অর্থ নেই। বরং মানুষের উচিত জ্ঞানকে নিজের জীবনের প্রয়োজনে কাজে লাগানো,জ্ঞানের মধ্যে ঐ জ্ঞানই উত্তম যা মানুষের জীবনে অধিক কাজে লাগে এবং এর মাধ্যমে প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করা যায়। সুতরাং সে জ্ঞানই ঐশী পবিত্রতার পর্যায় থেকে নেমে এসে বস্তুগত লাভের উপকরণে পরিণত হলো। অর্থাৎ জ্ঞানের লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়ে প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে তার উপর আধিপত্য লাভ ও উন্নত (বস্তুগত) জীবন লাভের উদ্দেশ্যে পর্যবসিত হলো।

অবশ্য এক দৃষ্টিকোণ থেকে এ মতবাদ মানবতার কল্যাণে এক বিরাট ভূমিকা রেখেছে। কারণ জ্ঞান প্রকৃতিকে জানা,ব্যবহার ও প্রয়োজন পূরণের কর্মে নিয়োজিত হয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি তার মর্যাদা,পবিত্রতা ও সম্মান হারাতে শুরু করেছে। তবে এখনও দীনি ছাত্ররা ধর্মীয় মাদ্রাসায় পূর্বের সেই উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধ নিয়ে জ্ঞান অর্জন করছে। শহীদ সানী প্রণীত আদাবুল মুতাআল্লেমীন বা মুনিয়াতুল মুরীদ গ্রন্থে বর্ণিত মূল্যবোধকে তারা ধারণ করে রয়েছে। এ গ্রন্থগুলোতে জ্ঞানের মর্যাদা বর্ণনা করে প্রচুর হাদীস ও রেওয়ায়েত আনা হয়েছে। এজন্যই জ্ঞান তাদের নিকট সম্মানিত ও পবিত্র বলে গণ্য। যেমন সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে,যখন কোন দীনি ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে চাও উত্তম হচ্ছে ওযূ করে পবিত্রভাবে যাওয়া। একজন দীনি ছাত্রের জন্য শিক্ষকের মর্যাদা,সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীনি ছাত্র তার হৃদয়ের অভ্যন্তরে তার শিক্ষকের জন্য আনুগত্যের এক অনুভূতি জাগরিত দেখে। যদি কখনও তার মনে আসে যে,জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করবে তবে সে লজ্জা পায়। কারণ জ্ঞান অর্থ উপার্জনের জন্য নয়। তেমনি একজন শিক্ষকও শিক্ষাদানের বিনিময়ে অর্থ লাভের উদ্দেশ্যকে জ্ঞানের অবমাননা বলে মনে করেন।

কিন্তু বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থায় বেকনের চিন্তার প্রতিফলন লক্ষণীয়। শিক্ষাদান ও জ্ঞানার্জন পূর্বের সেই সম্মান ও মর্যাদাকে সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেছে। এখন একজন ছাত্র শিক্ষা লাভ করে তার জীবনের জন্য একটি প্রস্তুতি হিসেবে। তাই বর্তমানে একজন ছাত্রের পড়াশোনা করে ডাক্তার বা প্রকৌশলী হিসেবে সচ্ছল জীবন লাভ করা আর একজন ব্যবসায়ী বা মুদির দোকান মালিকের লক্ষ্যের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এরা উভয়েই এখন অর্থের পেছনে ধাবমান। একজন ছাত্র বর্তমানে তার শিক্ষকের ব্যাপারে চিন্তা করে- এ ভদ্রলোক মাসে কি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে। তাই হয়তো দেখা যাবে,একজন ছাত্র তার শিক্ষকের অগোচরে তাকে শতবার গালি দেয়,অথচ নিজের মধ্যে লজ্জা অনুভব করে না। এটি তার জন্য মামুলী বিষয় মাত্র।

বেকন বলতেন,জ্ঞান ক্ষমতার জন্য ও ক্ষমতার সেবাই এর ধর্ম। এ মতবাদ প্রথমদিকে কোন খারাপ প্রতিফল প্রদর্শন করেনি। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যখন মানুষ জ্ঞানকে শুধু ক্ষমতা লাভ ও অর্জনের জন্য ব্যবহার শুরু করল তখন জ্ঞান ক্ষমতার সেবায় নিয়োজিত হলো।

বর্তমানের পৃথিবী জ্ঞান ক্ষমতার সেবায় -এ ভিত্তিতে আবর্তমান। কোন সময়েই জ্ঞান বর্তমানের মতো শক্তিমান ও ক্ষমতাধারীদের হাতে বন্দি ছিল না। প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ সবচেয়ে বেশি পরাধীন। উদাহরণস্বরূপ আইনস্টাইনের কথাই ধরুন। তার জ্ঞান আজ কার সেবায় নিয়োজিত? রুজভেল্ট বা তার মতো অন্য কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেবায়। কারণ রুজভেল্টের দাস হওয়া ছাড়া আইনস্টাইনের গতি নেই। জ্ঞান আজ সাম্রাজ্যবাদের ছাউনিতে- হোক তা পুজিবাদ বা সমাজতন্ত্র-তাতে কোন পার্থক্য নেই। সকল স্থানেই জ্ঞান ক্ষমতার সেবায় লিপ্ত। বর্তমানে জ্ঞান নয় বরং ক্ষমতাই দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেকে যে বলেন, বর্তমানের পৃথিবী জ্ঞানের পৃথিবী - কথাটিকে সংশোধন করে বলা উচিত, বর্তমানের পৃথিবী ক্ষমতার পৃথিবী । কথাটি এ অর্থে যে,বর্তমানে জ্ঞান রয়েছে কিন্তু স্বাধীন নয়; সে ক্ষমতার হাতে বন্দি। বর্তমানে জ্ঞান পরাধীন এবং শক্তি ও ক্ষমতার সেবায় নিয়োজিত। এ জন্যই যে কোন উদ্ভাবন বা আবিষ্কারই পৃথিবীতে হোক,তা ক্ষমতাবানদের সেবায় নিয়োজিত। যেমন তাদের নির্দেশেই মানুষ হত্যার জন্য ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র নির্মিত হচ্ছে। আবিষ্কারসমূহ প্রথমে ক্ষমতাসীনদের ব্যবহারের পর অন্যদের ব্যবহারের জন্য দেয়া হয় (যখন তা তাদের আর কোন কাজে না লাগে)। প্রথমদিকে ক্ষমতাবানরা আবিষ্কারসমূহকে প্রকাশ না করে গোপনীয়তা রক্ষা করে। কারণ তাদের এর প্রয়োজন রয়েছে।

বেকন যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তার অজান্তেই তা নী চে ও ম্যাকিয়াভ্যালির কথায় পরিসমাপ্তি ঘটে।

নী চে ডারউইনের মৌলনীতির ব্যবহার করেছেন

অন্য যে মৌলনীতিটি নী চের চিন্তার ভিত্তি হয়েছে তা ডারউইনের একটি নীতি। যদিও ডারউইন একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান ছিলেন এবং কখনও স্রষ্টাবিরোধী ছিলেন না (কারণ তার কথায় আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস ও হযরত ঈসার প্রতি সম্মান ও আনুগত্য লক্ষ্য করা যায়),তদুপরি তার মতবাদ পৃথিবীতে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপব্যবহারের স্বীকার হয়েছে। বিশেষত বস্তুবাদীরা ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বকে স্রষ্টাকে অস্বীকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

ডারউইনের দর্শন ও মতবাদের অন্য যে অপব্যবহারটি হয়েছে তা নৈতিকতার ক্ষেত্রে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ও পূর্ণ মানব কে- সে আলোচনায় ডারউইনের বেঁচে থাকার সংগ্রামে যোগ্যতমের বিজয়তত্ত্বটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। ডারউইন যে চারটি মৌলনীতি বর্ণনা করেছেন তার একটি হলো আত্মপ্রেম অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীই নিজের সত্তাকে ভালোবাসে এবং নিজের সত্তাকে রক্ষার জন্য চেষ্টা চালায়। তার অন্য একটি তত্ত্ব হলো বেঁচে থাকার সংগ্রাম অর্থাৎ জীবজগতে প্রণীসমূহ পরস্পরের সাথে যুদ্ধ ও সংগ্রামে লিপ্ত এবং শক্তিশালীরাই অবশেষে বেঁচে থাকবে। প্রকৃতি তার চালুনীতে প্রাণীদের চালে আর প্রকৃতির চালুনী হচ্ছে যুদ্ধ ও সংগ্রাম। সার্বক্ষণিক এ যুদ্ধ ও সংগ্রামে যোগ্যতমদের সে নির্বাচন করে। যোগ্যতম হলো সে যে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে এবং সর্বোত্তম উপায়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে পেরেছে।

বর্তমানে ডারউইনের এ তত্ত্বগুলোর উপর বিভিন্ন পর্যালোচনা আসছে। কোন কোন জীব শক্তিমত্তার কারণে নয় বরং অন্য কোন কারণে টিকে রয়েছে। শক্তি ও যোগ্যতা এক বিষয় নয় বরং দু টি ভিন্ন বিষয়।

যা হোক নী চে এ মৌলনীতি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে,সব প্রাণীর জীবনেই (এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও) এ নীতিটি প্রযোজ্য। যুদ্ধ,সংগ্রাম ও দ্বন্দ্ব সব মানুষের জীবনেই রয়েছে এবং যে মানুষ শক্তিশালী সে-ই টিকে থাকবে। যে টিকে থাকে সত্যও তার পক্ষে। তারপর বলেছেন,প্রকৃতি উন্নত মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই পূর্ণ ও উন্নততম মানুষের আবির্ভাব ভবিষ্যতে ঘটবে। পূর্ণ মানুষও সে-ই যার শক্তি ও ক্ষমতা সমধিক। তার মধ্যে দুর্বলদের জন্য করুণার লেশমাত্র থাকবে না। দুর্বলদের প্রতি করুণার উৎস,যেমন ভালোবাসা,অনুগ্রহ,সেবাদান,সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কে তারা বলেন,এগুলো মানব জাতির ক্ষতি করছে। এগুলো মানুষের পূর্ণতার পথে বাঁধাস্বরূপএবং উন্নত ও শক্তিশালী মানুষ তৈরির অন্তরায়। পূর্ণ মানব সেই ব্যক্তি যার মধ্যে এ সকল দুর্বল দিকের (ভালোবাসা,সেবা,কল্যাণ,অনুগ্রহ ইত্যাদি যেগুলোকে আমরা পূর্ণতা মনে করি) অস্তিত্ব থাকবে না। তাই নী চে হযরত ঈসা (আ.) ও সক্রেটিস দু জনেরই শত্রু। তিনি বলছেন,সক্রেটিস তার মতবাদে নৈতিকতার বিষয়ে পবিত্রতা,আত্মসংযম,ন্যায়বিচার,ভালোবাসা ও সেবার যে উপদেশ দিয়েছেন তা মানবতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। ঈসা (আ.) সক্রেটিস থেকেও মন্দ। কারণ তিনি ভালোবাসা,প্রেম,সেবা প্রভৃতি বিষয়ে তার থেকেও অধিক কথা বলেছেন। নী চের মতে এগুলো মানুষের দুর্বলতার বৈশিষ্ট্য। মানুষের মধ্যে এ সব বৈশিষ্ট্য যত কম থাকবে সে পূর্ণ মানবের তত বেশী নিকটবর্তী। যেহেতু তার মতে পূর্ণতা হলো শক্তিমত্তা আর অপূর্ণতা বা ত্রুটি হলো দুর্বলতা।

নী চের মতবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়িয়েছে তা পরিষ্কার হওয়ার জন্য নী চের কিছু কথা দর্শন সম্পর্কিত ইতিহাসের গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করছি। যে সকল গ্রন্থ নী চের কথাগুলো বর্ণনা করেছে তার মধ্যে ফুরুগী অন্যদের হতে উত্তমরূপে নী চের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছেন। তাই ফুরুগী নী চের যে কথাগুলো উদ্ধৃত করেছেন আমি তার কিছু অংশ আপনাদের জন্য পড়ব। তিনি নী চে সম্পর্কে বলেছেন, যখন পৃথিবীর সব দার্শনিক স্বার্থপরতাকে অপছন্দনীয় এবং পরোপকার ও আত্মত্যাগকে পছন্দনীয় মনে করেছেন তখন নী চে তার বিপরীতে স্বার্থপরতাকে সত্য ও পছন্দনীয় এবং আত্মত্যাগকে দুর্বলতা ও ত্রুটি মনে করেছেন। আমরা পরবর্তীতে আত্মত্যাগ কি দুর্বলতার লক্ষণ এ বিষয়ে আলোচনা করবর্।

ডারউইনের দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করে নী চে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামকে দ্বন্দের অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং অন্যরা ডারউইনের যে তত্ত্বকে ভুল মনে করেছেন তাকে তিনি সঠিক বলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন,নিজে বিজয়ী হওয়ার জন্য সব ব্যক্তি ও সত্তাই একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। বিশ্বের সকল শুভাকাঙ্ক্ষীই অধিকাংশের কল্যাণকে দৃষ্টিতে রাখার পক্ষপাতি এবং সংখ্যালঘিষ্ঠ গোষ্ঠীকে অধিকার লাভের উপযোগী বলে বিশ্বাস করেন। নী চের চিন্তার ভিত্তি হলো ব্যক্তির ক্ষমতা তার সৌভাগ্যের হাতিয়ার । পূর্ণ সত্তা সেই যার প্রবৃত্তি শক্তিমান ও বিকশিত এবং এ প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণের শক্তিরও সে অধিকারী।

এ পর্যন্ত সবাই বলতেন,যদি এরূপ কাজ কর তা অনৈতিক কর্ম বলে গণ্য হবে। কিন্তু তিনি বলেন,না,বরং যে কাজগুলো তোমার প্রবৃত্তি চায় তা-ই কর এবং নৈতিকতাও এটাই। তোমার প্রবৃত্তি যা বলে তা-ই ভালো কাজ বলে গণ্য।

নী চের ভাষায়- অনেকেই বলেন,ভালো হতো যদি পৃথিবীতে না আসতাম। সম্ভবত তা-ই। কিন্তু ভালো-মন্দ যা-ই হোক যখন পৃথিবীতে এসেছি অবশ্যই আমাকে এটা ভোগ করতে হবে। যত বেশি ভোগ করব তত উত্তম।

তিনি বলছেন, আমার লক্ষ্য হওয়া উচিত যত বেশি পারা যায় পৃথিবীকে ভোগ করা ও এ থেকে লাভবান হওয়া। যা কিছুই আমার এ লক্ষ্যে পৌছার জন্য সহায়ক হবে তা ভালো এবং নৈতিক। মুয়াবিয়াও এ ধরনের চিন্তা করত এবং সব সময় বলত, পৃথিবীর নেয়ামতের মধ্যে আমরা নিজেদের ভাসিয়ে দেব।

অন্য স্থানে নী চে বলেছেন, এ লক্ষ্যের জন্য যা সহায়ক,যেমন নিষ্ঠুরতা, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র,যুদ্ধ,দ্বন্দ্ব-সংঘাত সবই ভালো। আর এর বিরোধী ও প্রতিবন্ধক যা কিছু আছে যদিও তা সততা,ভালোবাসা,অনুগ্রহ,আত্মসংযম হয় তা মন্দ... সব মানুষ,গোত্র ও জাতি সমানাধিকারপ্রাপ্ত- এ কথা বর্জনীয় এবং এ ধরনের বক্তব্য মানব জাতির উন্নয়নের পথে অন্তরায়।

এ ছাড়াও তিনি বলেছেন,“‘ সকল মানুষের অধিকার সমান -এটা ভ্রান্ত চিন্তা। কারণ এর ফলে দুর্বলরা শক্তিশালীদের সারিতে চলে আসে এবং উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়। বরং উচিত দুর্বলদের অধিকারকে পদদলিত হতে দেয়া যাতে করে সবলদের জন্য পথ প্রশস্ত হয়। যখন সবলদের জন্য পথ উন্মোচিত হবে তখন উন্নত মানুষ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, মানুষকে অবশ্যই দু ভাগে ভাগ করতে হবে। একদল কর্তৃত্বশীল ও ক্ষমতাবান। অন্যদল আনুগত্যপরায়ণ ও দাস। সম্মান ও মর্যাদা কর্তৃত্বশীলদের ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার। সামাজিক ও নগর কাঠামো উচ্চ শ্রেণীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা ঠিক নয় যে,কর্তৃত্বশালীরা অনুগতদের সংরক্ষণ করবে।

তিনি বলছেন, সমাজ শুধু এজন্য যে,শক্তিমানরা যাতে আরামপ্রিয়তা ও বিলাসিতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছতে পারে এবং এ সমাজে দুর্বলরা তাদের বোঝা বহনকারী। সাদীর ভাষায়-

ভেড়ার পাল রাখালের জন্য নয়

বরং রাখাল ভেড়ার পালের জন্য।

শক্তিমান ও ক্ষমতাবান প্রভু শ্রেণী হিসেবে বিশেষ পরিচর্যা ও যত্নের অধিকারী যাতে করে উন্নত মানুষ তৈরি হতে পারে এবং মানবতা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

পাশ্চাত্যে মানুষের উন্নত প্রজন্ম সৃষ্টি এবং প্রজাতির সংস্কারের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। আলেক্সিস ক্যারল মানুষ এক অপরিচিত জীব গ্রন্থের শেষে এ দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বলেছেন,প্রজাতিগুলোকে সংস্কার করতে হবে এবং দুর্বল মানবগোষ্ঠীকে প্রজন্ম সৃষ্টির অনুমতি দেয়া যাবে না।

নী চের ভাষায়- নৈতিকতার ক্ষেত্রে যে মৌলনীতিটি এতদিন অনুসৃত হয়েছে তা সাধারণের কল্যাণে এবং সংখাগরিষ্ঠ দুর্বল শ্রেণীর পক্ষে,প্রভু ও উচ্চ শ্রেণীর পক্ষে নয়। এ মৌলনীতিকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে এবং এমন মৌলনীতি গ্রহণ করতে হবে যা উচ্চ শ্রেণীর কল্যাণের জন্য হয়।

এ কথাটির অর্থ হলো নী চের দৃষ্টিতে কল্যাণ,সত্যপ্রিয়তা ও সৌন্দর্যের মতো বিষয়গুলো (যা যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য লক্ষণীয় বিষয়) আপেক্ষিক ও বাস্তব নয় এবং যা বাস্তব তা হলো সকলেই ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষী।

অতঃপর নী চে ধর্মগুলোর প্রতি আক্রমণ করে বলেছেন, ধর্মগুলো মানবতার প্রতি খেয়ানত করেছে যেহেতু মানুষকে ন্যায়বিচার এবং দুর্বল ও বঞ্চিতদের সাহায্যের আহবান জানিয়েছে।

যখন ধর্ম ছিল না তখন যে জঙ্গলী বিধান চালু ছিল তা-ই ভালো ছিল। কারণ শক্তিশালীরা দুর্বলদের খেয়ে ফেলত এবং এভাবে দুর্বলরা নিশ্চিহ্ন হতো। তিনি আরো বলেছেন, প্রথমদিকে পৃথিবী শক্তিশালী মানুষদের ইচ্ছা ও মর্জিমাফিক পরিচালিত হতো এবং দুর্বল ও অনুগতরা তাদের দাস ছিল। কিন্তু শক্তিশালীরা সংখ্যায় স্বল্প এবং দুর্বলরা সংখ্যায় অধিক। তখন এ দুর্বলরা তাদের সংখ্যাধিক্যকে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করল এবং চক্রান্তের আদলে দয়া,অনুগ্রহ,নিঃস্বার্থতা,ন্যায়বিচার,সম্মান প্রভৃতিকে সুন্দর ও সত্য বলে প্রচার চালানো শুরু করল যাতে করে ক্ষমতাবানদের প্রভাবকে কমানো যায় এবং নিজরা দাসত্ব থেকে মুক্তি পায়। এ লক্ষ্য ধর্মের মাধ্যমে সর্বত্তোমরূপে অর্জিত হয়েছে এবং আল্লাহ্ ও সত্যের আবরণে তারা নিজেদের রক্ষা করেছে।

এ দৃষ্টিভঙ্গি কার্ল মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গির ঠিক বিপরীত। নী চে ও মার্কস দু জনই ধর্মের বিরোধী। কিন্তু নী চের দাবি অনুযায়ী দুর্বলরা শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে ধর্মকে উদ্ভাবন করেছে যেহেতু তিনি নিজেকে ক্ষমতাবানদের সমর্থক বলে মনে করেন। আর কার্ল মার্কস যিনি নিজেকে দুর্বল ও শোষিত-বঞ্চিত শ্রেণীপন্থী বলে প্রচার করেন তার মতে ধর্মকে ক্ষমতাবানরা দুর্বলদের বিদ্রোহ প্রতিরোধের লক্ষ্যে তৈরি করেছে

নী চে অতঃপর সক্রেটিস,গৌতম বুদ্ধ ও ঈসা (আ.)-কে আক্রমণ করে বলেন, ঈসা মাসীহর চরিত্র দাসের চরিত্র এবং তা প্রভুদের চরিত্র ও নীতিকে ধ্বংস করেছে। বর্তমানে পৃথিবীতে ভ্রাতৃত,সাম্য,সন্ধি,শ্রমিক,নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার যে সংলাপসমূহ প্রচলন লাভ করেছে তা ধর্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং এগুলো এক রকম ষড়যন্ত্র,প্রতারণা ও ধোঁকা বৈ কিছু নয়। এগুলো দারিদ্র্য,দুর্বলতা ও পতনের কারণ। এজন্যই এ সকল নীতিকে অপসারিত করে প্রভূত্বের উপযোগী নীতিমালা চালু করতে হবে। প্রভুসুলভ জীবনের নীতি কি? স্রষ্টা,পরকাল প্রভৃতিকে দূরে ছুড়ে ফেলতে হবে।...হৃদয়ের কোমলতা ও দুর্বলতাকে দূর করতে হবে। দয়া ও অনুগ্রহ মানুষের অক্ষমতার প্রকাশ; বিনয় ও নম্রতা ব্যক্তির নতজানুতার লক্ষণ; ধৈর্য,সহিষ্ণুতা,ক্ষমা ও করুণা হলো ভীরুতা ও কাপুরুষতা।আমাদের পৌরুষত্বকে গ্রহণ করতে হবে। শ্রেষ্ঠ মানব ভালো-মন্দের ঊর্ধ্বে এবং শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তির অধিকারী।

পাশ্চাত্যে এ ধরনের বহু মতবাদের উৎপত্তি হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মধ্যে এরূপ কোন মতবাদের সৃষ্টি হয়নি যা তাদের মধ্যে হয়েছে।

পাশ্চাত্যমনা প্রাণ এটাই। মানবাধিকারের যে সনদ তারা ঘোষণা করেন তা অন্যদের প্রতারণার জন্যই। পাশ্চাত্যের নৈতিকতা ও সভ্যতা নী চে আর ম্যাকিয়াভেলীর চিন্তাভুক্ত নৈতিকতা। সাম্রাজ্যবাদ পৃথিবীতে যা করছে তা এ চিন্তাধারার ভিত্তিতেই। পাশ্চাত্য চরিত্র- হোক তা আমেরিকান বা ইউরোপীয়- সে চরিত্র সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র এবং নী চের নৈতিকতা। যদিও কখনো কখনো তাদের কেউ আমাদের সামনে মানবাধিকারের কথা বললে আমরা দুর্ভাগারা ঢোক গিলে তাদের কথার পুনরাবৃত্তি করে থাকি,তবুও কসম করে বলতে পারি এটা ভুল। উদাহরণস্বরূপ আমেরিকা ভিয়েতনামে যে কাজটি করেছে তা নী চের দর্শনের প্রয়োগ বৈ অন্য কিছু? এটা যথার্থই নী চের দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ। পাশ্চাত্য যে এত অধিক মানবতা ও মানবসেবার শ্লোগান দেয় ও বলে,বারট্রান্ড রাসেল এরূপ বলেছেন,সারটার এরূপ বলেছেন,অথচ তার সকল চিন্তার ভিত্তি নী চের দর্শন। সম্ভবত দু একজন ব্যতিক্রমী দার্শনিকের সন্ধান পাওয়া যাবে যাদের চিন্তার ভিত্তি এটা নয় এবং খুব সম্ভব তাদের রক্তের সাথে প্রাচ্যের মিশ্রণ ঘটে থাকবে। হয়তো তাদের মাতৃকুল প্রাচ্য থেকে গিয়েছিলেন,নতুবা পাশ্চাত্য জাতি এরূপ নয়।

নী চে বলেন, আত্মনিয়ন্ত্রণ আবার কেন? বরং প্রবৃত্তিকে শক্তিশালী করতে হবে। পরোপকারই বা কেন? বরং নিজের উপাসনা কর এবং নিজের চাওয়াকে অর্জন কর। দুর্বল ও অক্ষমকে ত্যাগ কর যাতে তারা বিলুপ্ত হয় এবং পৃথিবীর সকল দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত হবে... পুরুষকে অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে এবং শক্তিমত্তার সাথে জীবন যাপন করতে হবে যাতে নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করা যায়।

পুরুষের শক্তিমত্তার মধ্যেই পূর্ণতার সমাপ্তি- সৃষ্টি এবং অস্তিত্বের সকল প্রস্তুতি তার জন্যই। এখন দেখুন,নী চের এ কথা থেকে কি বোঝা যায়। এর অর্থ হচ্ছে,কোন কিছুই এর প্রতিবন্ধক হওয়া উচিত নয়। তাই নৈতিকতা,দয়া,অনুগ্রহ,মানবতা,ন্যায় বিচার,উৎসর্গ ও বিসর্জন প্রভৃতি মূল্যবোধকে দূরে ছুড়ে ফেলতে হবে এবং নিজেকে এ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করতে হবে। এজন্য তিনি বলেছেন, নিজের প্রবৃত্তির ইচ্ছা পূরণ করুন। সুখী হোন,নিজেকে প্রভু ও কর্তা জানুন এবং নিজের প্রভূত্বের প্রতিবন্ধক সকল বস্তুকে সামনে থেকে অপসারিত করুন,কোন বিপদ ও যুদ্ধকে ভয় করবেন না।

অতঃপর নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, পুরুষ ও নারীর সাম্যের বিষয়টি অযৌক্তিক এবং নারীর অধিকার রক্ষার বিষয়টিও অগ্রহণযোগ্য। পুরুষই সব কিছু। পুরুষ যুদ্ধংদেহী এবং নারী শৈল্পিক। তাই সে পুরুষকে আনন্দ দেবে এবং সন্তান আনয়ন করবে।

তাই নী চের দৃষ্টিতে নারী আনন্দের উপকরণ,বাচ্চা উৎপাদনের যন্ত্র এবং পুরুষের ইচ্ছার দাস বৈ কিছু নয়। পূর্ণ মানবের পরিচয় লাভের জন্য এ পদ্ধতিটিও একটি মানদণ্ড হিসেবে পাশ্চাত্যে প্রচলিত। আদর্শ ও সর্বোত্তম মানব (তাদের ভাষায় সুপারম্যান) কে তা যাচাইয়ের মানদণ্ড হলো শক্তি ও ক্ষমতা।

এ মতবাদের বিপরীত যে মতবাদ- যা দুর্বলতার পক্ষে প্রচারণা চালায় এবং সকল কল্যাণকে দুর্বলতার মধ্যে বলে জানে- তা খ্রিষ্ট মতবাদ। খ্রিষ্টবাদ নৈতিকতার ক্ষেত্রে দুর্বলতার প্রচারণা চালায় । প্রচলিত একটি কথা কেউ তোমার ডান গালে চড় বসিয়ে দিলে বাম গালটিকেও তার দিকে বাড়িয়ে দাও -এটা খ্রিষ্টবাদ হতে এসেছে।