ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল 0%

ইনসানে কামেল লেখক:
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ: চরিত্র গঠনমূলক বই

ইনসানে কামেল

লেখক: শহীদ অধ্যাপক মুর্তাজা মুতাহ্হারী
: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 38815
ডাউনলোড: 5737

পাঠকের মতামত:

ইনসানে কামেল
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 83 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 38815 / ডাউনলোড: 5737
সাইজ সাইজ সাইজ
ইনসানে কামেল

ইনসানে কামেল

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

 


আমি

আমরা
য় পরিণত হওয়ার পথ হলো ঈমান

প্রকৃতপক্ষে আমিত্ব তখনই আমরা য় পরিণত হবে যখন তা পূর্বেই সে ধারণায় পরিণত হয়ে থাকবে যেটা আরেফদের ধারণা। আমি সে ধারণায় পরিণত হওয়ার পূর্বে আমরা য় পরিণত হতে পারে না। আমি সে ধারণায় পরিণত হওয়ার অর্থ আল্লাহ্য় বিশ্বাস।

) قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّـهَ وَلَا نُشْرِ‌كَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْ‌بَابًا مِّن دُونِ اللَّـهِ (

এ আয়াতের লক্ষ্য আহলে কিতাব। তাদের উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে- হে আহলে কিতাব! (ইহুদী,নাসারা,মাজুসী,যারথুষ্ট্র) তোমরা একটি সত্য বাণীর দিকে এসো যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে একই,আর তা হলো আল্লাহ্ ব্যতীত কারো ইবাদত করব না এবং তার সঙ্গে কাউকে শরীক করব নাও আল্লাহ্ ব্যতীত নিজেদের মধ্যে একে অপরকে প্রভু বলে গ্রহণ করব না। কোরআনেরسَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ কথাটি কতটা আশ্চর্যজনক! বলা হয়েছে,সে-ই সত্যের দিকে এসো যা আমারও নয়,তোমারও নয়,আমাদেরও নয়,তোমাদেরও নয়। এই আমরা- আমরা এবং তোমরা সকলে মিলে। আমি ইসলামের নবী হয়ে বলতে পারি না যে,এ আল্লাহ্ শুধু আমার- ঈসার অনুসারীদের আল্লাহ্ নয়,ইহুদীদের আল্লাহ্ নয়,যারথুষ্ট্রদের আল্লাহ্ নয়,মূর্তি বা পাথর পূজারীদের আল্লাহ্ নয়,তিনি বায়ু ও পানির আল্লাহ্ নন। বরং তিনি সকলের স্রষ্টা ও প্রভূ। তাই সকল কিছুই তার অধীন। মানুষ যদি তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়,তবে এক অসীমের সংশ্লিষ্টতা লাভ করেছে যা আমিত্ব সীমা র ধারণা সৃষ্টি করেনা। এটা অর্থ (টাকা) নয় যে,তুমি বা আমি তার সঙ্গে সংযুক্ত হলে যুদ্ধ বেধে যাবে। বরং এটা এমন এক মহাসত্য একই মুহর্তে যা সকলকে নিজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাখতে সক্ষম। কিরূপে আমরা ধারণা সৃষ্টি হওয়া সম্ভব? অবশ্যই ঈমান ও আদর্শের ভিত্তিতে,যার উৎস একটি শব্দ,আর তা হলো আল্লাহ্। প্রথমে তাকে ধারণ করার মাধ্যমেই আমরা য় পরিণত হওয়া সম্ভব। যখন সে তে পরিণত হব তখন আমিত্ব বিলীন হয়ে যাবে এবং সকলেই তার এই রংয়ে রঞ্জিত হব। আর এভাবেই আমরা য় পরিণত হতে পারব। সেই সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সমান। ধরি,যদি নবী (সা.) প্রস্তাব করতেন,এসো আমরা সকলে আরবী ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করে এক হয়ে যাই। তবে ফার্সী বা অন্য ভাষার কেউ হয়তো বলবে,কেন আরবী শিক্ষা করব বরং ফার্সী শিক্ষা গ্রহণ করি বা ফ্রেঞ্চ। তাই আরবী ভাষা এমন নয় যাতে সকলেই সমান হতে পারে। আরবী,ফার্সী,তুর্কী ,ফ্রেঞ্চ এ সকল ভাষা কোন বিশেষ জাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ভাষা ব্যতীত অন্যান্য বিষয়গুলোও অনুরূপ।

যে বিষয়টি সকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও বিশেষ কারো নয় তা হলো স্রষ্টা,যিনি সকলকে সৃষ্টি করেছেন এবং সকলের প্রত্যাবর্তন তার দিকেই।تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ এসো আমরা সকলেই তার দিকে ফিরে যাই এবং কেবল তারই উপাসনা করি ও তার সঙ্গে অন্য কাউকেই শরীক না করি। যখন তার দিকে প্রত্যাবর্তন করব তখনই আমরা হতে পারব ও অন্যদের নিজেদের প্রভু বানাব না। অন্যদের প্রভূত্ব ও দাসত্বের ধারণা বিলুপ্ত হবে,শোষক ও শোষিতের ধারণা বিলুপ্ত হবে; উঁচ-নীচুর ব্যবধান ঘুচবে। তবে এ সবের শর্ত হলো :

) تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّـهَ وَلَا نُشْرِ‌كَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْ‌بَابًا مِّن دُونِ اللَّـهِ (

তাই কোরআন আমাদের ধারণার পক্ষে এবং সব সময় এ শ্লোগান দেয়।

নামাযে আল্লাহর প্রশংসার পর তাকে উদ্দেশ্য করে আমরা বলি,( إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ) আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য চাই। যদিও একা নামায পড়ছি,তদুপরি বলছি,আমরা আপনারই ইবাদত করি ও আপনার নিকটই সাহায্য চাই। নামাযের শেষের দিকেও আমরা বলি,السلام علینا و علی عباد الله الصالحین আমাদের এবং আপনার বান্দাদের সৎকর্মশীলদের উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক।

সা দীর কবিতার অর্থের অপূর্ণতা

সা দী বলেছেন,

মানব জাতি পরস্পর যেন অঙ্গ

উৎপত্তির উৎস তাদের একই রত্ন

অনুভূত হয় যদি এক অঙ্গে ব্যথা

অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে সে ব্যথা

যে তুমি অন্যের কষ্টে হও না ব্যথিত

তোমার নামে মনুষ্যত্ব হয়েছে কলঙ্কিত।

সা দীর এ কবিতাটি অত্যন্ত উঁচু মানের বলে উল্লেখ করা হয়েছে,যা নবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত একটি হাদীসের অনুবাদ; অবশ্য অসম্পূর্ণ অনুবাদ। নবীর বাণীটি এরূপ :

مثل المؤمنین فی توادد و تراحمهم کمثل الجسد إذا اشتکی بعض تداعی له سائر أعضاء جسده بالحمّی و السّهر

মুমিনদের নমুনা বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে এক দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ন্যায়। যখন শরীরের কোন অঙ্গ ব্যথায় আক্রান্ত হয় তখন শরীরের অন্য অঙ্গও সে কষ্ট ও ব্যথায় বিনিদ্রতা ও উষ্ণতার মাধ্যমে সাড়া দিয়ে থাকে।

আমাদের দেহের কোন অঙ্গে ব্যথা অনুভূত হলে অন্য অঙ্গ কি চিন্তাহীন ও বিনিদ্র থাকতে পারে? অন্য অঙ্গ তার সমব্যথী না হয়ে বলে না যে,ঐ অঙ্গ যে কষ্ট করছে করুক। বরং সে তার সমব্যথী ও সহমর্মী হয়ে উঠে। নবী (সা.) বলছেন,দু ভাবে এ সহমর্মিতা সে প্রকাশ করে : এক উত্তাপ,দুই নিদ্রাহীনতা। উদাহরণস্বরূপ যদি কারো ক্ষুদ্রান্তে ব্যথা অনুভূত হয় বা যকৃত জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তার হাত,মাথা,হৃদয় কোন অঙ্গই নিদ্রা যায় না,তার শরীর বিশ্রাম নেয় না বরং উত্তাপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

কিন্তু এখানে নবী বিশেষ একটি বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি যখন বলছেন মুমিনদের নমুনা এক দেহের মতো তখন তার আত্মার প্রতিও তার দৃষ্টি রয়েছে। কারণ দেহের জন্য আত্মা প্রয়োজন যা

তাকে সে তে পরিণত করার মাধ্যমে আমরা র জন্ম দান করবে। যদি মৃত্যুর পর দেহকে টুকরো টুকরো করা হয় দেহ কোন ব্যথা অনুভব করে না। কারণ সেখানে আত্মার উপস্থিতি নেই যে,ব্যথা অনুভব করবে। এই আত্মাই সকল মুমিনকে এক সত্তায় পরিণত করে আমরা করেছে যাদের একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা রয়েছে। সে আত্মাটি হলো ঈমান যেখানেكَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ নির্দেশ দান করে আমি কে সে তে পরিণত করে প্রকৃতিগতভাবেই সহমর্মী করেছে। কিন্তুكَلِمَةٍ سَوَاءٍ   বা একই কথায় বিশ্বাসী না হলে এটা সম্ভব নয়। নবী (সা.) বলেছেন, মুমিনরা এক আত্মার অংশীদার যাদের উপর উপরিউক্ত বাণী ক্রিয়াশীল। সা দী ভুল করে বলেছেন,সকল মানুষ এক দেহের ন্যায়। যদি আদম সন্তানরাكَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ বা একই মতে বিশ্বাসী না হয় তাহলে কখনই এক দেহে পরিণত হতে পারে না। মানব জাতি এক দেহের ন্যায় কথাটি অসত্য। আমেরিকান ও ভিয়েতনামীরা এক মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত,নয় কি? যদি বলি,ভিয়েতনামীরা আদম সন্তানের অন্তর্ভুক্ত,কিন্তু আমেরিকানরা নয়,তবে যেরূপ ভুল করব সেরূপ যদি বলি,আমেরিকানরা মানুষ,ভিয়েতনামীরা নয়,তাও ভুল বলা হবে। যদিও তারা উভয়েই আদম সন্তান তদুপরি এক দেহ নয়। যখন মানব জাতির মধ্যে এক আত্মা এবং এক ঈমান ক্রিয়াশীর হবে তখন আমি সে তে পরিণত হবে এবং আমিত্ব আর থাকবে না। তারা পরস্পর সহমর্মী হবে। আর তখনই বলা যাবে-

যদি এক অঙ্গে হয় ব্যথা অনুভূত,

অন্য অঙ্গও হয় চিন্তায় মথিত।

সুতরাং আমরা জানলাম,এ মতবাদে পূর্ণ মানব সম্পর্কে একটি ভুল হলো এতে একটি মূল্যবোধ ব্যতীত অন্য সকল মূল্যবোধ বিস্মৃত হয়েছে এবং একমাত্র মূল্যবোধ আমরা হতে হবে বলে মনে করা হয়েছে। আমরা হওয়ার বিষয়টি অবশ্যই ঠিক অর্থাৎ যদি কোন মানুষের আমি আমরা য় পরিণত না হয় তাহলে সে পূর্ণ মানব নয়। কিন্তু যদি কেউ মনে করে,শুধু মানুষের আমিত্ব আমরা য় পরিণত হয়ে গেলেই সে পূর্ণ মানবে পরিণত হবে,তবে তা নিতান্তই অসত্য। আমরা হওয়া পূর্ণ মানব হওয়ার পথের অন্যতম গন্তব্য রেখা,কিন্তু একমাত্র গন্তব্য রেখা নয়।  তাদের দ্বিতীয় ভুলটি হচ্ছে তারা মনে করেছেন,যে বস্তুটি আমি কে আমরা য় পরিণত করে তাহলো সামষ্টিক মালিকানা অর্থাৎ ব্যক্তি ও বিশেষ মালিকানাকে বিলুপ্ত করে সামষ্টিক মালিকানার রূপ দিলেই আমি আমরা য় পরিণত হয়ে যাবে এবং কেউ আমিত্ব অনুভব করবে না।

উষ্ট্র ও শৃগালের গল্প

কয়েক বছর পূর্বে একটি ম্যাগাজিনে একটি গল্প পড়েছিলাম। গল্পটি এরূপ যে,একদিন এক উষ্ট্র ও শৃগাল পরস্পর বন্ধু হলো। শৃগাল উষ্ট্রকে বলল, এসো আমরা পৃথক জীবন বাদ দিয়ে যৌথ ও সামষ্টিক জীবন শুরু করি। আমরা পরস্পর এক হয়ে একে অপরকে বন্ধু বলে ডাকতে শুরু করি। আমি তোমাকে বলব, বন্ধু উষ্ট্র ,আর তুমি আমাকে বলবে, বন্ধু শৃগাল । এটা শুধু কথায় নয়,আমরা কাজেও পরিণত করব। আমার ও তোমার সব কিছুই আমরা এখন হতে আমাদের বলব,এমনকি আমার বাচ্চা ও তোমার বাচ্চাকে বলব, আমাদের বাচ্চা । এসো আমি কে আমরা য় পরিণত করি। তোমার পৃষ্ঠ ও আমার লেজ সবই আমাদের পৃষ্ঠ ও লেজে পরিণত হোক। উষ্ট্র শৃগালের কথায় বিশ্বাস করে একটি যৌথ জীবন শুরু করল। এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন শৃগাল বাইরে কোন শিকার পেল না,সে প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে তাদের যৌথ ঘরে ফিরে এল। ক্ষুধায় যখন তার বৃহদান্ত্র ক্ষুদ্রান্ত্রকে হজম করে ফেলার উপক্রম করল ঠিক তখন তার চোখ পড়ল উষ্ট্রের বাচ্চার উপর। তৎক্ষণাৎ উষ্ট্রের বাচ্চাকে হত্যা করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করল। এদিকে দিনের শেষে উষ্ট্র ঘরে ফিরে বাচ্চাকে না পেয়ে কাঁদতে শুরু করল ও বলল, কে আমার বাচ্চার এ অবস্থা করল? শৃগাল বলল, তুমি এখনও ঠিক হতে পারনি,এখনও বলছ, আমার বাচ্চা ,বল, আমাদের বাচ্চা

এভাবে আমি আমরা য় পরিণত করার চেষ্টা করা হলে উষ্ট্র আর শৃগালের দশাই হবে।

সুতরাং এ মতবাদ পূর্ণ মানব সম্পর্কিত অপূর্ণ মতবাদ। কারণ এ মতবাদে শুধু কয়েক টি মূল্যবোধের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে,সেগুলোও আবার অসম্পূর্ণ।

অস্তিত্ববাদ বা ব্যক্তিসত্তাবাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

আজকের বৈঠকের শেষে অন্য একটি মতবাদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব। মতবাদটি হচ্ছে অস্তিত্ববাদ।

এ মতবাদটি আজকাল খুবই প্রচার লাভ করেছে। এ মতবাদ মানবিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে পূর্ণমানবের যে রূপরেখা দান করে তা সমাজতান্ত্রিক ধারণার ঠিক বিপরীত। সমাজতন্ত্রে সামাজিক বিষয়ের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে,মানুষ তখনই পূর্ণ মানুষ হবে যখন সকল মানুষ সমান ও এক হয়ে যাবে। তারা যে সামষ্টিক মালিকানার কথা বলেন তাও এ সামাজিকতার দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই।

আর অস্তিত্ববাদের মতবাদে যে মূল্যবোধগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে তা সমাজকেন্দ্রিক নয়,বরং ব্যক্তিকেন্দ্রিক। যেমন ব্যক্তির ইচ্ছার স্বাধীনতা,চিন্তার স্বাধীনতা,সিদ্ধান্ত ও কর্মের ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ের উপর মূলত এজন্য নির্ভর করা হয়েছে। সে-ই পূর্ণ মানব যার সত্তা সকল বাধ্যবাধকতা হতে মুক্ত,সে অন্য কোন শক্তির অধীন হয় না,স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করে,স্বাধীনভাবে চিন্তা করে। অন্যভাবে বলা যায়,এ মতবাদের একমাত্র ভিত্তি হলো স্বাধীনতা । যদিও এর সঙ্গে তারা সচেতনতার কথাও বলেন,কিন্তু তা স্বাধীনতা র প্রাথমিক শর্ত হিসেবে। তারা বলেন, পূর্ণমানব হচ্ছে যে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। তাই যে মানুষ যত স্বাধীন সে তত বেশি পূর্ণ। যদি তার স্বাধীনরতা অন্য কিছুর দ্বারা খর্ব হয়,তবে তার পূর্ণতা অপূর্ণতায় পরিণত হয়। এমনকি এ মতবাদ বিশ্বাস করে যে,আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস এবং আল্লাহর বান্দা হওয়া মনুষ্যত্বকে খর্ব করে তাকে অপূর্ণ মানবে পরিণত করে। কারণ এটা মানুষকে আল্লাহর মোকাবিলায় আত্মসমর্পণে বাধ্য করে মানুষের স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করে। তাই পূর্ণ মানব সে-ই যে সব কিছু হতে স্বাধীন,এমনকি ধর্ম হতেও সে স্বাধীন।

আমাদের কবি হাফেজ বলেছেন,

সেই হিম্মতের অধিকারী স্বাধীন আমি

নীল আকাশের নীচে কারো রং ধারণ করি না যে আমি।

অর্থাৎ এই নীল আকাশের নীচে যদি কাউকে পাওয়া যায়,যে কোন কিছুর অধীন নয়,সে-ই পূর্ণমানব।

অন্যত্র তিনি বলেছেন,

পূর্ণিমার চাঁদের রূপ দেখার মুগ্ধ আশায়

হয় যদি বিদূরিত দুঃখ সকল তার ভালোবাসায়

একটি গোপন কথা তোমাদের নিকট করছি প্রকাশ

আমি প্রেমের গোলাম,তাই পেয়েছি দু বিশ্ব হতে মুক্তির সুবাস।

অস্তিত্ববাদ বলে, আমি ভালোবাসার গোলাম এটাও ভ্রান্ত। বরং বলা উচিত, আমি দু বিশ্ব,প্রেম-ভালবাসা,এমনকি পূর্ণিমার চাঁদের প্রতি আসক্তি হতেও মুক্ত ও স্বাধীন। মনুষ্যত্ব অর্থ স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যা চায় তা হলো সব কিছুকে উপেক্ষা ও অস্বীকার করা এবং কারো আনুগত্য না করা। পরবর্তী বৈঠকে ইনশাল্লাহ্ এ মতবাদ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

و لا حول ولا قوّة إلا بالله العلیّ العظیم