আক্বায়েদ শিক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)0%

আক্বায়েদ শিক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: নবুয়্যত

আক্বায়েদ শিক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 14829
ডাউনলোড: 3102

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 32 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14829 / ডাউনলোড: 3102
সাইজ সাইজ সাইজ
আক্বায়েদ শিক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

৪র্থ পাঠ

নবীগণের পবিত্রতা

ওহী যেকোন প্রকার বিচ্যুতি থেকে সংরক্ষিত থাকার অপরিহার্যতা :

প্রয়োজনীয় পরিচিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধ তার ঘাটতি পূরণের জন্যে ওহীর অপরিহার্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর,অন্য একটি বিষয়ের অবতারণা হয়ে থাকে। আর তা নিম্নরূপ :

যেহেতু সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে প্রতাক্ষভাবে পরিচিতির এ মাধ্যম থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব নয় বা প্রভুর পক্ষ থেকে ওহী লাভ করার কোন যোগ্যতা ও ক্ষমতা তাদের নেই,পবিত্র কোরাণ এ প্রসঙ্গে বলে :

) وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ(

অদৃশ্য সম্পর্কে আল্লাহ্ তোমাদেরকে অবহিত করবেন না;তবে আল্লাহ্ তার রাসূরগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। (সূরা আলে ইমরান - ১৭৯)

সেহেতু আল্লাহর বাণী বিশেষ ব্যক্তিবর্গের (নবীগণ) মাধ্যমে মানুষের নিকট পৌছানো অনিবার্য। কিন্তু এ ধরণের বাণীর সত্যতার কী নিশ্চয়তা রয়েছে কোথা থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে,স্বয়ং পয়গাম্বর (আ.) সঠিকভাবে উক্ত ওহী গ্রহণ ও মানুষের নিকট পৌছিয়েছেন? অনুরূপ যদি আল্লাহ এবং নবীর মধ্যে কোন মাধ্যমের অস্তিত্ব থাকে তিনি ও সঠিকরূপে এ ওহী বহন করেছেন,তার কী নিশ্চয়তা রয়েছে? কারণ ওহীর মাধ্যম তখই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে ও মানুষের জ্ঞানের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে যখন তা প্রেরণের পর্যায় থেকে শুরু করে মানুষের নিকট পৌছা পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত যে কোন প্রকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে সংরক্ষিত থাকবে। নতুবা মাধ্যমের ভুল-ভ্রান্তি ও অসারতার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয় এবং এর বিশ্বস্ততা হারানোর কারণ হয়। অতএব কোন পথে এ নিশ্চয়তা পাওয়া যেতে পারে যে,আল্লাহর বাণী সম্পূর্ণ নির্ভুল ও সঠিক রূপে মানুষের নিকট পৌছেছে?

ওহীর স্বরূপ যখন মানুষের নিকট অজ্ঞাত থাকে এবং ওহী লাভের জন্যে যখন কোন যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তার না থাকে,নিঃসন্দেহে তখন কাজকর্মের সঠিকতার জন্যে নিয়ন্ত্রন ও তত্ত্বাবধানের কোন পন্থা থাকে না। শুধুমাত্র ঐ অবস্থায়ই বুঝতে পারবে যে বিষয়বস্তুতে কোন ব্যতিক্রম রয়েছে যখন তা নিশ্চিত বুদ্ধিবৃত্তিক নিয়মের পরিপন্থী হবে। যেমন : কেউ দাবি করল যে,আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট বাণী এসেছে যে,বিপ্রতী পদ্বয়ের সমষ্টি বৈধ বা অনিবার্য কিংবা (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন) আল্লাহর পবিত্র সত্তার এশধিকত,যৌগিকত ও বিলুপ্তি সম্ভব ইত্যাদি। তবে বুদ্ধিবৃত্তি নিশ্চিত রূপে এগুলোর বাতুলতা প্রমাণ করতঃ তার দাবির অসারতা প্রতিপন্ন করতে সক্ষম। কিন্তু ওহীর প্রয়োজনীয়তা ঐ সকল বিষরের ক্ষেত্রেই ব্যক্ত হয়,যেখানে বুদ্ধিবৃত্তি ঐ বিষয়গুলোকে প্রমাণ করার কোন পথ খুঁজে না পায় এবং বিষয়বস্তুর মূল্যায়ণের মাধ্যমে ঐ গুলোর সত্যতা বা অসত্যতা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়। আর এ সকল ক্ষেত্রে কোন পথে ওহীর বিষয়বস্তুর সত্য প্রমান এবং ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সকল প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে সংরক্ষিত বলে প্রতিপাদন করা যেতে পারে ?

জবাব : যেমনিকরে প্রভুর প্রজ্ঞাকে বিবেচনা করে বুদ্ধিবৃত্তি (দ্বিতীয় খণ্ডের ২ নং পাঠে উপস্থাপিত দলিল অনুসারে) অনুধাবন করতে পারে যে,বাস্তবতা সম্পর্কে পরিচিত লাভ ও কর্তব্য নির্ধারণ করার জন্যে অন্য কোন পন্থা থাকতে হবে -যদিও এর স্বরূপ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জ্ঞাতব্য না হয়। আর এ ভাবেই বুদ্ধিবৃত্তি উপলব্ধি করে যে,আল্লাহর বাণী নির্ভুল ও অবিচ্যুত অবস্থায় মানুষের নিকট পৌছবে -এটাই হল মহান প্রভুর প্রজ্ঞা বা হিকমাতের দাবি। নতুবা উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

অন্যভাবে বলা যায় : আল্লাহর বানী এক বা একাধিক মাধ্যমে মানুষের নিকট পৌছানো উচিৎ যাতে স্বাধীন ভাবে উৎকর্ষ লাভের ক্ষেত্র প্রস্তত হয় ও মান সৃষ্টির পশ্চাতে বিদ্যমান প্রভুর উদ্দেশ্য বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে -এ বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর প্রভুর পূর্ণতম গুণের আলোকে প্রমাণিত হয় যে,তার ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সকল প্রকার বিচ্যুতি থেকে সংরক্ষিত থাকবে। কারণ যদি মহান আল্লাহর কামনা এই না হয় যে,তার বাণীসমূহ নির্ভুল ও সঠিকভাবে বান্দাদের নিকট পৌছবে,তবে তা তারই প্রজ্ঞার পরিপন্থী হবে। আর প্রভুর প্রজ্ঞাময় ইরাদা এটাকে অস্বীকার করে। আবার যদি মহান আল্লাহ অবগত না থাকেন যে,স্বীয় বাণীকে কোন পথে ও কার মাধ্যমে প্রেরণ করবেন যাতে নির্ভুল ও অবিচ্যুত অবস্থায় মানুষের নিকট পৌছবে,তবে তা তার অশেষ জ্ঞানের পরিপন্থী হবে। অনুরূপ যদি কোন উপযুক্ত মাধ্যম নির্বাচন করতে ও তাকে শয়তানী আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন,তবে তা তার অসীম ক্ষমতার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ হবে না।

অতএব মহান আল্লাহ যেহেতু সব কিছুর উপর জ্ঞান রাখেন,সেহেতু এটা অসম্ভব যে,এমন কোন মাধ্যম নির্বাচন করেছেন যে,তার ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। পবিত্র কোরানে এ সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে যে,

) اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ(

আল্লাহ তার রিসালাতের ভার কার উপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।(সূরা      আন্আম -১২৪)

অনুরূপ প্রভুর অসীম পরাক্রমের কথা বিবেচনা করলে এ সম্ভাবণা ও থাকে না যে,তিনি তার বাণীকে শয়তানের প্রভাব থেকে সংরক্ষণ করতে অপারগ ছিলেন। পবিত্র কোরান এ সম্পর্কে বলে :

) عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا لِيَعْلَمَ أَنْ قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَى كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا(

তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা,তিনি তার অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেন না,তার মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসূলের অগ্রে এবং পশ্চাতে প্রহরী নিয়োজিত করেন রাসূলগণ তাদের প্রতিপালকের বাণী পৌছে দিয়েছেন কিনা তা জানার জন্য;রাসূলগণের নিকট যা আছে তা তার জ্ঞানগোচরে এবং তিনি সমস্ত কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন। (সূরা জিন্ন ২৬ - ২৮)

তাদনুরূপ প্রভুর প্রজ্ঞার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে,তিনি চাননি,তার বাণীকে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে সংরক্ষণ করতে,এ কথাটি গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কোরাণের বাণী এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য :

) لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْ بَيِّنَةٍ وَيَحْيَى مَنْ حَيَّ عَنْ بَيِّنَةٍ(

যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সত্যসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর জীবিত থাকে। (সূরা আনফাল -৪২)

অতএব প্রভুর জ্ঞান,ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার দাবি এই যে,মহান আল্লাহ স্বীয় বাণীকে সঠিক ও অবিচ্যুত অবস্থায় মানুষের নিকট পৌছে দিবেন। আর এভাবে ওহীর অবিচ্যুত ও সংরক্ষিত থাকা,বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণের মাধ্যমে প্রতিপন্ন হল।

উল্লেখিত যুক্তির মাধ্যমে ফেরেস্তাগণ অথবা ওহী বহনকারী ফেরেস্তাগণ পবিত্র ওহীর গ্রাহক হিসেবে নবীগণের পবিত্রতা প্রমাণিত হয়। তদনূরূপ ওহী প্রচারের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত যে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি থেকে তাদের সংরক্ষিত থাকার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। অপরদিকে ওহী বহণকারী ফেরেস্তার বিশ্বস্ততা,আল্লাহর আমানত রক্ষায় তার পারংগমতা,শয়তানদের প্রভাবকে প্রতিহত করা,নবীগণের বিশ্বস্ততা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে এবং সর্বোপরি মানুষের নিকট পৌছানো পর্যন্ত ওহীর পবিত্রতার সংরক্ষণের ব্যাপারে কোরানের গুরুত্বারোপের বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় ।১০

অন্যান্য ক্ষেত্রে পবিত্রতা :

উল্লেখিত যুক্তির ভিত্তিতে ফেরেস্তাগণ ও নবীগণের (আ.) যে পবিত্রতা প্রতিপন্ন হয়েছে তা ওহীর প্রাপ্তি ও প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু পবিত্রতা প্রমানের জন্যে আরো কিছু বিষয় রয়েছে,যেগুলো এ বিভক্ত করা যায় :

১। ফেরেস্তাগণের পবিত্রতা সংক্রান্ত বিষয়

২। নবীগণের পবিত্রতা সংক্রান্ত বিষয়

৩। অন্যান্য কিছু ব্যক্তিবর্গের পবিত্রতা সংক্রান্ত বিষয়,যেমন : পবিত্র ইমামগণ(আ.) ফাতিমা যাহরা সালামুল্লাহ আলাইহা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের পবিত্রতা।

ওহী গ্রহণ ও বহনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে ফেরেস্তাগণের পবিত্রতার ব্যাপারে দু টি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে : একটি হল ঐ সকল ক্ষেত্রে ওহীর ফেরেস্তাগণের পবিত্রতা,যা ওহীর গ্রহণ ও পৌছানোর সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এবং আপরটি হল অন্যান্য ফেরেস্তাগণ,যাদের ওহী সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে কোন প্রকারের সংশ্লিষ্টতা নেই। যেমন : রিয্ক সংশ্লিষ্ট আ যল লিপিবদ্ধ করণ সংশ্লিষ্ট,রূহ পুণঃগ্রহণ সংশ্লিষ্ট ইত্যাদি ফেরেস্তাগণ।

রিসালাত সংশ্লিষ্ট নয় এমন সকল বিষয়ে নবীগণের পবিত্রতার ক্ষেত্রে ও দু টি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য : একটি হল সকল প্রকার ইচ্ছাকৃত গুনাহ থেকে নবীগণের পবিত্রতা সংক্রান্ত ব্যাপার অপরটি হল যে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি থেকে তাদের পবিত্র সংক্রান্ত ব্যাপার। ঠিক এ দু টি বিষয়কেই নবী নন এমন কারও ক্ষেত্রেও আলোচনা করা যেতে পারে।

যা হোক ওহীর গ্রহণ ও বহণের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে ফেরেস্তাগণের পবিত্রতার বিষয়টি তখই বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের মাধ্যমে প্রতিপাদনযোগ্য হবে যখন ফেরেস্তাগণের স্বরূপ সম্পর্কে জানা যাবে। কিন্তু তাদের স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করা যেমন সহজসাধ্য নয়;তেমনি তা এ আলোচ্য বিষয়ের সংশ্লিষ্ট ও নয়। এ দৃষ্টিকোন থেকে শুধুমাত্র ফেরেস্তাগণের পবিত্রতার স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শনকারী পবিত্র কোরানের দু টি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েই তুষ্ট থাকব। যথা :

) بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ(

তারা তো তার সম্মানিত বান্দা। তারা আগে ভাগে কথা বলে না;তারা তো তার আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। (সূরা আম্বিয়া-২৬,২৭)

) لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ(

(ফেরেস্তাগণ) যারা অমান্য করে না,আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে। (সূরা তাহরীম -৬)

উক্ত আয়াতদ্বয় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করে যে,ফেরেস্তাগণ আল্লাহর সম্মানিত বান্দা যারা শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশেই তাদের কর্ম সম্পাদন করেন এবং কখনোই তার আদেশ লংঘন করেন না। যদিও সকল ফেরেস্তার ক্ষেত্রে উক্ত আয়াতদ্বয়ের সার্বজনীন তার ব্যাপারটি আলোচনা ও পর্যালোচনার দাবি রাখে,তবু ঐগুলো ফেরাস্তাগণের পবিত্রতাকে প্রতিপাদন করে।

নবীগণ ব্যতীত অন্য মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিবর্গের পবিত্রতার ব্যাপারটি ইমামতের আলোচনার সাথে অধিকতর সাযুজ্যপূর্ণ। এ দৃষ্টিকোন থেকে এখানে আমরা নবীগনের পবিত্রতার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের আলোচনায় মনোনিবেশ করব। যদি ও এ বিষয়গুলোর কোন কোন টিকে শুধুমাত্র উদ্ধৃতিগত ও বিশ্বাসগত দলিলের মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিতাব ও সুন্নাহর প্রমাণিত হওয়ার পরই এর অবতারণা করা উচিৎ কিন্তু আলোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে সঙ্গতি বজায় রাখার জন্যে ঐগুলোকে এখানেই আলোচনা করব। তবে কিতাব ও সুন্নাহর বৈধতাকে মূল বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে যথাস্থানে তা প্রতিপান করব।

নবীগণের পবিত্রতা :

গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে নবীগণ কতটা পবিত্র সে সম্পর্কে মুসলমানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিশ্বাস যে,নবীগন। দ্বাদশ ইমামিয়া শিয়াদের বিশ্বাস যে,নবীগণ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ছোট বড় সকল গুনাহ থেকে পবিত্র এবং এমনকি ভুলক্রমেও তাদের দ্বারা কোন প্রকার গুনাহ সংঘটিত হয় না। কিন্তু কোন কোন গোষ্ঠীর মতে নবীগণ শুধুমাত্র বড় গুণাহসমূহ থেকে পবিত্র,আবার কেউ কেউ বয়ঃপ্রাপ্তি (بلوغ ) থেকে পবিত্র মনে করেন,কেউবা আবার নবুয়্যত লাভ থেকে। সুন্নী সম্প্রদায়ের (হাশভিয়্যাহ ও কোন কোন আহলে হাদীস) কোন কোন গোষ্ঠী মূলত : নবীগণের পবিত্রতাকেই অস্বীকার করেছেন এবং যে কোন প্রকারের গুনাহে লিপ্ত হওয়াকে এমনকি নবুয়্যতের সময় ও ইচ্ছাকৃতভাবেও সম্ভব বলে মনে করেছেন।

নবীগণের পবিত্রতাকে প্রমান করার পূর্বে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি ইংগিত করা প্রয়োজন মনে করি:

প্রথমত : নবীগণের এবং কোন কোন ব্যক্তিবর্গের পবিত্র থাকার অর্থ শুধুমাত্র গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা নয়। কারণ হতে পারে কোন সাধারণ মানুষও গুনাহ লিপ্ত হয় না,বিশেষ করে যদি আয়ুষ্কাল ক্ষুদ্র হয়। বরং এর অর্থ হল : ব্যক্তি দৃঢ় আত্মিক শক্তিতে বলীয়ান যে,কঠিন সংকটময় মুহূর্তেও তা তাকে গুনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে আর এ আত্মিক দৃঢ়তা গুনাহের কুৎসিত রূপ সম্পর্কে সার্বক্ষণিক পূর্ণ সচেতনতা ও কুমন্ত্রণাযুক্ত প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করার দৃঢ় সংকল্প থেকে অজির্ত হয়। যেহেতু এ ধরণের আত্মিক দৃঢ়তা একমাত্র মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে বাস্তব রূপ লাভ করে,সেহেতু এর কর্তৃত্ব মহান আল্লাহরই। নতুবা এমনটি নয় যে,মহান আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিগণকে বাধ্যতামূলকভাবে গুনাহ থেকে বিরত রাখেন এবং তার স্বাধীনতাকে হরণ করেন।

যারা আল্লাহর মনোনীত বান্দা অর্থাৎ নুবয়্যত বা ইমামতের অধিকারী তাদের পবিত্রতাকে অন্য এক অর্থে মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্কিত করা হয়। আর তা এই যে,মহান আল্লাহ তাদের পবিত্রতার নিশ্চয়তা বিধান করেছেন।

দ্বিতীয়ত : কোন ব্যক্তির পবিত্রতার অপরিহার্য অর্থ হল,যে সকল কর্ম তার জন্যে নিষিদ্ধ সেগুলোকে বর্জন করা। যেমনঃ যে সকল গুনাহ সকল শরীয়তে নিষিদ্ধ ও যে সকল কর্ম সম্পাদনের সময় স্বীয় সংশ্লিষ্ট শরীয়তে নিষিদ্ধ সেগুলোকে ত্যাগ করা। অতএব যে সকল কর্ম স্বীয় শরীয়তে এবং তার নিজের জন্যে বৈধ এবং তার পূর্ববর্তী শরীয়তে নিষিদ্ধ ছিল এবং পরবর্তীতে নিষিদ্ধ হবে,সে সকল কর্ম সম্পাদনে কোন নবীর পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয় না।

তৃতীয়ত : গুনাহ যা থেকে স্বয়ং মা চুম পবিত্র,তা এমন কর্ম যে,তাকে হারাম (حرام ) বলে প্রকাশ করা হয়। তদনূরূপ এমন কর্ম যাকে ওয়াজেব (واجب ) বলে প্রকাশ করা হয় তাকে ত্যাগ করার অর্থও গুনাহ। কিন্তু গুনাহ শব্দটি ও তার সমার্থক শব্দসমূহের যেমন : জাম্ব (ذنب ) ই সিয়ান (عصیان ) ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিস্তৃততর অর্থে ব্যবহৃত হয়,যা তারকে আউলাকেও (ترک الاولی ) অন্তর্ভুক্ত করে । আর এ ধরনের গুণাহে লিপ্ত হওয়া ই সমাত (عصمة ) বা পবিত্রতা বহির্ভূত নয়।

৫ম পাঠ

নবীগণের পবিত্রতার স্বপক্ষে দলিলসমূহ

ভূমিকা :

ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত যে কোন প্রকার গুনাহ থেকে নবীগণের পবিত্রতার বিশ্বাস হল,শিয়া সম্প্রদায়ের দৃঢ় ও প্রসিদ্ধতম বিশ্বাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যা পবিত্র ইমামগণ (আ.) তাদের অনুসারীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে এর বিরোধীদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। এ বিষয়ের উপর তাদের বিতর্কের মধ্যে প্রসিদ্ধতম একটি হল,ইমাম রেজার (আ.) বিতর্ক যা হাদীস গ্রন্থসমূহ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে সংরক্ষিত আছে।

তবে মোবাহের (مباح ) (অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে যে সকল কাজ করলে ছওয়াব বা গুনাহ কোনটিই নেই) ক্ষেত্রে ইমামগণের ভুল-ত্রুটি সংঘটিত হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কম-বেশী মতপার্থক্য বিদ্যমান এবং এ প্রসঙ্গে আহলে বাইতের (আ.) নিকট থেকে বিবৃত রেওয়ায়েত ও মতবিরোধ বিবর্জিত নয়। আর এগুলোর উপর গবেষণার জন্যে বিস্তৃত সময়ের প্রয়োজন। তাই যে কোন ভাবেই হোক না কেন একে (মোবাহের ক্ষেত্রে ত্রুটিহীন) অপরিহার্য বিশ্বাসসমূহের অন্তর্ভূক্ত করা যায় না।

নবীগণের (আ.) পবিত্রতার (عصمت ) স্বপক্ষে যে সকল দলিলের অবতারণা করা হয়,সেগুলোকে দু শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় : একটি হল বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলসমূহ এবং অপরটি হল উদ্ধৃতিগত (نقلی ) দলিলসমূহ। যদিও উদ্ধৃতিগত দলিলসমূহের আস্থাশীলতা অধিকতর,তবু আমরা এখানে দু টি বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল উপস্থাপনে প্রয়াসী হব। অতঃপর কোরান থেকে কিছু দলিল উপস্থাপন করব।

নবীগণের পবিত্রতার স্বপক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলসমূহ :

গুনাহ থেকে নবীগণের (আ.) অনিবার্য পবিত্রতার স্বপক্ষে প্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলটি হল : নবীগণের নবুয়্যত লাভের মূল উদ্দেশ্যই হল,মানুষের জন্যে প্রভু কর্তৃক নির্ধারিত দায়িত্ব পালন ও সত্যের পথে মানুষকে পরিচালিত করা। প্রকৃতপক্ষে তারাই হলেন মানুষকে সঠিক পথে হিদায়াতের জন্যে প্রভুর প্রতিনিধি। এখন এ ধরনের প্রতিনিধি ও দূতগণই যদি আল্লাহর অনুগত ও আজ্ঞাবহু না হন এবং স্বয়ং তারাই যদি স্বীয় রিসালাতের ব্যতিক্রম কাজ করেন,তবে জনগণ তাদের এহেন আচরণকে কথা ও কাজের অসামঞ্জস্যতা বলে বিবেচনা করবে। ফলে তাদের কথার উপর জনগণের আর কোন প্রয়োজনীয় আস্থা থাকবে না। আর তখন তাদের নবূয়্যত লাভের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে না।

অতএব আল্লাহর প্রজ্ঞা ও অনুগ্রহের দাবি হল এই যে,নবীগণ হবেন পবিত্র ও নিষ্পাপ ব্যক্তিত্ব এবং এমনকি ভূলবশতঃও কোন অযথা কর্ম তাদের দ্বারা সংঘটিত হবে না,যাতে জনগণ ভাবতে না পারে যে,ভুল-ভ্রান্তির অজুহাত তুলে তারা গুনাহে লিপ্ত হতে পারেন।

নবীগণের ( আ.) পবিত্রতার স্বপক্ষে দ্বিতীয় দলিলটি হল :

নবীগণ ওহীর বিষয়বস্তু ও স্বীয় রিসালাতকে মানুষের নিকট বর্ণনা এবং মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করার দায়িত্ব ছাড়াও মানুষকে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ,পরিশুদ্ধকরণ ও যোগ্য ব্যক্তিদেরকে চূড়ান্ত উৎকর্ষে পৌছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত। অন্যকথায়ঃ তারা প্রশিক্ষণ ও পথনির্দেশনার দায়িত্ব ছাড়া ও (আধ্যাত্মিক) প্রশিক্ষণের দায়িত্বেও নিয়োজিত,যা সার্বজনীন এবং যা সমাজের যোগ্যতম ও প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গকেও সমন্বিত করে। আর এ ধরনের দায়িত্বের অধিকারী কেবলমাত্র তারাই হতে পারেন,যারা মানবীয় উৎকর্ষের চূড়ান্ত স্তরে পৌছেছেন এবং যারা পূর্ণতম আত্মিক দৃঢ়তার (পবিত্রতার দৃঢ়তা) অধিকারী।

তাছাড়া প্রশিক্ষকের আচার-ব্যবহার,প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তার বক্তব্য অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি কারও আচরণগত দিক থেকে দুর্বলতা থাকে তবে তার বক্তব্যও আশানুরূপ প্রভাব ফেলে না ।

অতএব কেবলমাত্র তখনই সমাজের প্রশিক্ষক হিসেবে নবীগণকে নবুয়্যত প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর উদ্দেশ্য পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে,যখন তারা তাদের কথায় ও কর্মে যে কোন প্রকারের ভূল- ত্রুটির উর্ধ্বে থাকবেন।

নবীগণের পবিত্রতার স্বপক্ষে উদ্ধৃতিগত দলিলসমূহ :

১। পবিত্র কোরান মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গকে মোখলাস (مخلص ) অর্থাৎ আল্লাহর জন্যে পরিশুদ্ধ হয়েছেন১১ বলে নামকরণ করেছে যাদেরকে বিপথগামী করার দূরাশা স্বয়ং ইবলিসেরও ছিলনা বা নেই। ইবলিস যখন সকল আদমসন্তানকে বিপথগামী করার সংকল্প করেছিল তখনও মোখলাসিনকে (مخلصین ) তার এ সংকল্প বহির্ভূত ধরে নিয়েছিল। যেমনটি পবিত্র কোরানে এসেছে :

) قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ(

সে (ইবলিস) বলল আপনার ক্ষমতার শপথ,আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব,তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাগণকে নহে। (সূরা সাদ- ৮২,৮৩)

নিঃসন্দেহে বিপথগামিতা থেকে সংরক্ষিত থাকার কারণেই ইবলিস তাদেরকে বিপথগামী করার দুরাশা করেনি;নতুবা তারাও তার শত্রুতার আওতায় রয়েছেন। সুতরাং যদি সম্ভব হত তবে কখনোই তাদেরকে বিপথগামী করা থেকে বিরত হত না।

অতএব মোখলাস (مخلص ) অভিধাটি মা সুমের (معصوم ) সমান হবে। যদিও এ গুণটিকে নবীগণের (আ.) জন্যে নির্ধারণ করার কোন দলিল আমাদের কাছে নেই,তবু নিঃসন্দেহে তারাও এ গুণের অন্তর্ভুক্ত। যেমন : পবিত্র কোরান কিছু সংখ্যক নবীকে মোখলাসিন বলে পরিগণনা করেছে। উদাহরণতঃ উল্লেখযোগ্য যে,

) وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ أُولِي الْأَيْدِي وَالْأَبْصَارِ إِنَّا أَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ(

স্মরণ কর আমার বান্দা ইব্রাহীম,ইসহাক ও ইয়াকুবের কথা,তারা ছিল শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী। আমি তাদেরকে এক বিশেষ গুণের অধিকারী করেছিলাম এবং তা ছিল পরলোকের স্মরণ । (সূরা সাদ্ -৪৫,৪৬ )

অনুরূপ,

) وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَى إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا(

স্মরণ কর এই কিতাবে উল্লিখিত মুসার কথা,সে বিশুদ্ধচিত্ত রাসূল ও নবী ছিল। (সূরা মারিয়াম

-৫১)

তদনুরূপ কঠিন সংকটময় মুহূর্তেও হযরত ইউসূফের (আ.) নিশ্চত বিচ্যুতি থেকে সংরক্ষিত থাকার কারণ হিসেবে তার মোখলাস হওয়াকে দলিল রূপে উল্লেখ করে পবিত্র কোরানে বলা হয় :

) كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ(

তাকে মন্দ কর্ম ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্যে এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাগণের অন্তর্ভূক্ত। (ইউসুফ-২৪)

২। পবিত্র কোরান নবীগণের (আ.) আনূগত্যকে নিঃশর্তে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে। উদাহরণতঃ উল্লেখযোগ্য যে,

) وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ(

শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি যে,আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে। (সূরা নিসা-৬৪)

আর নিঃশর্তভাবে তাদের আনুগত্য একমাত্র তখনই সঠিক হবে,যখন তারা সম্পূর্ণরূপে প্রভুর অনুগত হবেন এবং তাদের অনুসরণ আল্লাহর আজ্ঞাবহতার বিরোধী হবে না। নতুবা নিঃশর্তভাবে মহান আল্লাহর অনুগত হওয়া,নিঃশর্তভাবে তাদের অনুগত হওয়ার সাথে বিরোধ সৃষ্টি করবে,যারা ভুল-ভ্রান্তির উর্দ্ধে নন।

৩। পবিত্র কোরান,আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত মর্যাদা তাদের জন্যেই নির্ধারণ করেছে যারা জুলমু দ্বারা কলুষিত নন। যেমনঃ স্বীয় সন্তানদের জন্যে ইমামতের মর্যাদা প্রার্থনা করলে ইব্রাহীমকে (আ.) জবাবে বলা হয় :

) قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ(

আল্লাহ বললেন আমার প্রতিশ্রুতি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। (সূরা বাকারা -১২৪ )

এ ছাড়া আমরা জানি যে,প্রতিটি গুনাহের অর্থই হল কমপক্ষে নিজের উপর জুলম করা এবং কোরানের মতে সকল গুনাহগারই জালিম (ظالم ) বলে পরিচিত।

অতএব নবীগণ অর্থাৎ মহান আল্লাহ কর্তৃক যারা রিসালাত ও নবুয়্যতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন,তারা যে কোন প্রকার গুনাহ ও জুলম থেকে পবিত্র হবেন।

উল্লেখ্য অন্যান্য আয়াত এবং অসংখ্য রেওয়ায়েত থেকেও নবীগণের (আ.) নিষ্পাপত্ব (عصمت ) প্রমাণ করা সম্ভব। তবে এখানে আমরা সেগুলোর আলোচনা থেকে বিরত থাকব।