আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)0%

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: কিয়ামত

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 11736
ডাউনলোড: 2718

পাঠকের মতামত:

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 33 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11736 / ডাউনলোড: 2718
সাইজ সাইজ সাইজ
আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

৩য় পাঠ

আত্মার বিমূর্তনতা

ভূমিক :

ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে,মাআদ বা পুনরুত্থানের বিষয়টি আত্মার সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ কেবলমাত্র তখনই বলা যাবে যে, মৃত্যুর পর যিনি (পুনরায়) জীবিত হয়ে থাকবেন,তিনি সেই পূর্বের ব্যক্তিই যখন তার আত্মা,তার দেহ বিনষ্ট হয়ে যাবার পরও অবশিষ্ট থাকবে। অন্যভাবে বলা যায় : সকল মানুষই,বস্তুগতদেহ ছাড়া ও এক অবস্তুগত সত্বার অধিকারী,যা দেহ থেকে স্বাধীন হওয়ার যোগ্যতা রাখে এবং তার মনুষ্যত্ব ও ব্যক্তিত্বও এর উপর নির্ভরশীল। নতুবা ঐ ব্যক্তির জন্যে নতুন কোন জীবনের ধারণা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

অতএব পুনরুত্থান ও এতদসম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ের উপর আলোচনা করার পূর্বে এ বিষয়টিকে প্রতিপাদন করতে হবে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই এ পাঠে আমরা কেবলমাত্র এ বিষয়টির উপরই আলোকপাত করব এবং একে প্রমাণের জন্যে দু ধরনের যুক্তির অবতারণা করব : একটি হল বুদ্ধিবৃত্তিক এবং অপরটি হল ওহীর মাধ্যমে

আত্মার বিমূর্তনতার স্বপক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলসমূহ :

প্রাচীনকাল থেকেই দার্শনিক ও চিন্তাবিদগণ রূহ (روح ) বা আত্মা (দর্শনের পরিভাষায় যাকে নাফ্স বলা হয়১০ )সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে ইসলামী দার্শনিকগণ বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন এবং তাদের দর্শন সম্পর্কিত পুস্তকসমূহের বিশেষ অংশ জুড়ে এ বিষয়টি স্থান পেলেও, তারা এ বিষয়টির শিরোনামে পৃথক পৃথক পুস্তক-পুস্তিকাও লিখেছিলেন। আর সেই সাথে যারা রূহকে দৈহিক সংঘটনসমূহের ( Accidents ) মধ্যে একটি সংঘটন (Accident ) বলে মনে করেন অথবা বস্তুগত গঠন (দৈহিক উপাদানের অনুসারী) বলে গণনা করেন,তাদের বক্তব্যকে একাধিক যুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

স্পষ্টতঃই এ ধরনের বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা এ পুস্তক সংশ্লিষ্ট নয়। ফলে এ বিষয়টির উপর কিছুটা আলোকপাত করেই তুষ্ট থাকব। আর চেষ্টা করব এ বিষয়ের উপর সুস্পষ্ট ও একই সাথে সুদঢ় বক্তব্য উপস্থাপন করতে। একাধিক বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের সমন্বয়ে এ বক্তব্যটির উপস্থাপন নিম্নলিখিত ভূমিকার মাধ্যমে সূচনা করব :

আমরা আমাদের নিজ নিজ চর্মের রং ও দেহের গঠনকে সচক্ষে পর্যবেক্ষণ করি এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোমলতা ও কর্কশতাকে স্পর্শেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করতে পারি। আমাদের দেহাভ্যন্তরস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে পরোক্ষভাবে অবহিত হতে পারি। কিন্তু ভয়-ভীতি,অনুগ্রহ ক্রোধ,ইচ্ছা ও আমাদের চিন্তাকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতীতই অনুধাবন করে থাকি। অনুরূপ যে আমা হতে এ অনুভব,অনুভূতির মত মানসিক অবস্থা প্রকাশ পায়,তাকেও কোন প্রকার ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতিরেকেই উপলব্ধি করতে পারি।

সুতরাং মানুষ দু প্রকার অনুভূতির অধিকারী : এক প্রকারের অনুভূতি হল,যার জন্যে ইন্দ্রিয়ের উপর নির্ভর করতে হয় এবং অপর শ্রেণী হল,যার জন্যে ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন হয় না।

অপর একটি বিষয় হল : ইন্দ্রিয়ানুভূতি যে,বিভিন্ন প্রকার ভুল-ভ্রান্তিতে পতিত হয় তার আলোকে বলা যায়,প্রাগুক্ত প্রথম শ্রেণীর অনুভূতি,দ্বিতীয় শ্রেণীর অনুভূতির ব্যতিক্রমে ত্রুটি-বিচ্যুতিতে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণীর অনুভূতিতে ভুল-ত্রুটি ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কোন অবকাশ থাকে না। যেমন : কেউ হয়ত সন্দেহ করতে পারে যে,তার চামড়ার রং যে রকম দেখছে ঠিক সেরকমটি কি না। কিন্তু কেউই সন্দেহ করতে পারে না যে,সে কোন চিন্তা করে কি না,সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না,সন্দেহ করছে কি না ।

আর এ বিষয়টিই দর্শনে এ ভাবে বর্ণিত হয় যে,স্বজ্ঞাত সতঃলব্ধ জ্ঞান(Intuitive Knowledge) প্রত্যক্ষভাবে স্বয়ং বাস্তবতার সাথে সমন্ধ স্থাপন করে। ফলে ত্রুটি- বিচ্যুতির কোন সুযোগ থাকে না। কিন্তু অভিজ্ঞতালব্ধ বা অর্জিত জ্ঞান (Empirical Knowledge ) অনুভূতিক গঠনের (Form ) মাধ্যমে অর্জিত হয়। ফলে স্বভাবতঃই সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ থাকে।

অর্থাৎ মানুষের সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য জ্ঞান হল স্বজ্ঞাত ও প্রত্যক্ষ জ্ঞান,যা নাফ্স বা আত্মার জ্ঞান,আবেগ,অনুভূতি ও অন্যান্য সকল মানসিক অবস্থাকে সমন্বিত করে । অতএব উপলব্ধি ও চিন্তার ধারক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এ আমা র অস্তিত্বে কখনোই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না -যেমনিকরে ভয়,অনুগ্রহ,ক্রোধ,চিন্তা ও ইচ্ছার অস্তিত্বে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ থাকে না।

এখন প্রশ্ন হল : এই আমা কি সেই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও বস্তুগত দেহ এবং মানসিক অবস্থা কি দেহ সংঘটিত;নাকি তাদের অস্তিত্ব দেহ ভিন্ন অন্য কিছু -যদিও আমা দেহের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত এবং নিজের অনেক কর্মই দেহের মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকে;এছাড়া দেহ কর্তৃক প্রভাবিত হয় ও দেহকে প্রভাবিত করে ?

উল্লেখিত ভূমিকাটির আলোকে এর জবাব খুব সহজেই আমরা পেতে পারি। কারণ :

প্রথমত : আমা কে স্বজ্ঞাত জ্ঞানে উপলব্ধি করব;কিন্তু দেহকে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে চিনতে হবে। অতএব আমা (নাফস ও রূহ) দেহ ভিন্ন অন্য বিষয়।

দ্বিতীয়ত : আমা এমন এক অস্তিত্ব,যা যুগযুগান্তরে একত্বতার বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃত ব্যক্তিত্বসহ অবশিষ্ট থাকে এবং এ একত্বতা ও ব্যক্তিত্বকে আমরা ভুল-ত্রুটি বিবর্জিত স্বজ্ঞাত জ্ঞানের মাধ্যমে খুজে পাই। অথচ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ অসংখ্যবার পরিবর্তিত হয় এবং পূর্ববর্তী ও উত্তরবর্তী অংশের একত্ব ও অভিন্নতার (এটা তা-ই) জন্যে কোন প্রকার প্রকৃত ভিত্তিরই অস্তিত্ব নেই।

তৃতীয়ত : আমা এক সরল (بسیط ) ও অবিভাজ্য অস্তিত্ব।

উদাহরণতঃ একে দু অর্ধ আমা তে বিভক্ত করা সম্ভব নয়। অথচ দেহের অঙ্গসমূহ বিবিধ এবং বিভাজনোপযোগী।

চতুর্থত : কোন মানসিক অবস্থাই যেমন : অনুভূতি ইচ্ছা ইত্যাদি বস্তুগত বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ বিস্তৃতি ও বিভাজন ইত্যাদির অধিকারী নয়। আর এ ধরনের কোন অবস্তুগত বিষয়কে বস্তু (দেহ) সংঘটন বলে গণনা করা যায় না। অতএব এ সংঘটনের বিষয় (موضوع ) হল অবস্তুগত সত্তা (مجرد )।

রূহের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা এবং মৃত্যুর পরও এর অবশিষ্ট থাকার স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য ও মনোহর যুক্তিসমূহের মধ্যে একটি হল সত্য স্বপ্নসমূহ,যার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের মৃত্যুর পর সঠিক সংবাদসমূহ স্বপ্নদর্শনকারীর নিকট পৌঁছিয়েছেন। অনুরূপ আত্মাসমূহকে ডেকে পাঠানো,যা চূড়ান্ত ও উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্তসমূহ সহকারে একথার স্বপক্ষেই দলিল উপস্থাপন করে। এছাড়া আল্লাহর ওলীগণের কেরামত,এমনকি যোগীদের কোন কোন কর্মের কথাও আত্মা ও এর বিমূততার প্রমাণসরূ উল্লেখ করা যেতে পারে। এ বিষয়ের উপর লিখিত পৃথক পৃথক পুস্তক রয়েছে।

কোরান থেকে দলিলাদি :

কোরানের ভাষায় মানুষের আত্মা সম্পর্কে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই যে,রূহ অসীম মর্যাদার প্রান্ত থেকে মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত হয়। যেমনটি মানব সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে :

) وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّ‌وحِهِ (

এবং তাতে রূহ ফুকে দিয়েছেন তার নিকট হতে। (সূরা সেজদা-৯)

অর্থাৎ দেহ গঠন করার পর নিজের (আল্লাহর) সাথে সম্পর্কিত রূহ তাতে প্রদান করলেন,খোদার জাত (ذات ) থেকে নয়,যার ফলে খোদা মানুষে স্থান্তরিত হবেন (মহান আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরনের চিন্তা থেকে রক্ষা করুন)।

অনুরূপ হযরত আদমের (আ.) সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে :

( وَنَفَخت فِيهِ مِن رُّ‌وحِهِ)

এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করলাম। (হিজর -২৯) এবং (সাদ-৭২)

এছাড়া অপর কিছু আয়াত থেকে আমরা দেখতে পাই যে,রূহ দেহ বা দৈহিক বৈশিষ্ট্য ও সংঘটন ব্যতীত অন্য বিষয় এবং তা দেহ ব্যতীতই অবশিষ্ট থাকার যোগ্যতা রাখে। যেমন : কাফেরদের বক্তব্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলাহয় যে,তারা বলত :

) إِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْ‌ضِ أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ(

আমরা (মৃত্যু বরণ এবং) মৃত্তিকায় পর্যবসিত হলেও এবং আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ মৃত্তিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেও কি আমাদেরকে আবার নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? (সেজদা-১০)

মহান আল্লাহ জবাব দিলেন :

) قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَ‌بِّكُمْ تُرْ‌جَعُونَ(

বল,(তোমরা নিখোঁজ হবে না বরং) তোমাদের জন্যে নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেস্তা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। (সোজদা-১১)

অতএব মানুষের স্বরূপের ভিত্তি মূলে রয়েছে তার আত্মা বা রূহ,যা মৃত্যুর ফেরেস্তা কর্তৃক হরণ করা ও সংরক্ষিত হয়ে থাকে;দেহের বিভিন্ন অংশ,যেগুলো বিধ্বস্ত ও মৃত্তিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে,তা নয়।

অপর এক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে :

 ) اللَّـهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْ‌سِلُ الْأُخْرَ‌ىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى(

আল্লাহই জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর যার জন্যে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অপরগুলি এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ফিরিয়ে দেন। (সূরা যুমার -৪২)

অত্যাচারীদের মৃত্যুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হযেছে :

 ) إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَ‌اتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِ‌جُوا أَنفُسَكُمُ(

যখন জালিমরা মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকবে এবং ফেরেস্তাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে,তোমাদের প্রাণ বের কর । (আনআম-৯৩)

এ আয়াতসমূহ এবং অপর আয়াতসমূহ থেকে (সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখার জন্যে,এ গুলোর উল্লেখ থেকে বিরত থাকছি) আমরা দেখতে পাই যে,প্রত্যেকেরই ব্যক্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য এমন কিছুতে বিদ্যমান যা মহান আল্লাহ ও মৃত্যুর ফেরেস্তাগণ বা রূহ কব্জাকারী ফেরেস্তাগণ হরণ করে থাকেন এবং দেহের বিনাশের ফলে মানুষের ব্যক্তিত্বের একত্বতার ও রূহের বিদ্যমানতার কোন ক্ষতি করে না।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রিক্ষিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে,প্রথমতঃ মানুষে রূহ (روح ) ও আত্মা নামক কিছু বিদ্যমান। দ্বিতীয়তঃ মানুষের আত্মা অবশিষ্ট থাকার ও দেহ থেকে স্বাধীন হওয়ার যোগ্যতা রাখে,বস্তুসংঘটন ও বস্তুগত গঠনের (صور مادّی ) মত অবস্থানের বিলুপ্তির সাথে সাথে বিনাশ হয়ে যায় না। তৃতীয়তঃ সকলের স্বরূপ ও স্বাতন্ত্রিকতা তার আত্মার উপর নির্ভরশীল। অন্যকথায় : প্রত্যেক মানুষেরই বাস্তবতা বা প্রকৃত অবস্থা হল,তার আত্মায় এবং দেহ সেখানে আত্মার অধীনে সরঞ্জামের ভূমিকা রাখে মাত্র।

৪র্থ পাঠ

মাআদ বা পুনরুত্থানের প্রতিপাদন

ভূমিকা :

এ পুস্তকের প্রারম্ভেই আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে,পুনরুত্থানে বিশ্বাস ও পরকালীন জগতে প্রত্যেক মানুষের জীবনলাভের বিশ্বাস,প্রতিটি ঐশী ধর্মেরই মৌলিকতম বিশ্বাসসমূহের অন্যতম। আল্লাহ্ প্রেরিত পুরুষগণ এ বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন এবং মানুষের হৃদয়ে এর বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার জন্যে অপরিসীম শ্রম ব্যয় করেছিলেন।

পবিত্র কোরানে পুনরুত্থান (معاد ) ন্যায়পরায়ণতা (عدل ) ও একক খোদার প্রতি বিশ্বাস সমান গুরুত্ব পেয়েছে এবং বিশটিরও অধিক সংখ্যক আয়াতে (আল্লাহ) ওالیوم الاخر   (ওয়াল ইয়াওমূল আখির) একইসাথে ব্যবহার করা হয়েছে (পরকালীন জীবন সম্পর্কে বর্ণিত যে দু সহস্রাধিক আয়াত এসেছে তা ব্যতীত)।

এ খণ্ডের শুরুতেই বিচার দিবসের পরিচিতির উপর গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম এবং ব্যাখ্যা করেছিলাম যে,পুনরুত্থানের সঠিক ধারণা,আত্মা বা রূহকে স্বীকার করার উপর নির্ভরশীল,যা প্রত্যেক মানুষেরই স্বরূপের ভিত্তি এবং যা মৃত্যুর পরও অবশিষ্ট থাকে,যার ফলে বলা যায় : যে ব্যক্তি পরলোকগমণ করে,ঠিক সে ব্যক্তিই পুনরায় পরকালে জীবন লাভ করবে। অতঃপর এ ধরনের রূহ বা আত্মার অস্তিত্বকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও ওহীভিত্তিক দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি,যাতে মানুষের অনন্ত জীবন শীর্ষক মূল আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তত হয়। এখন এ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়টির প্রতিপাদনের পালা এসেছে।

রূহ বা আত্মার বিষয়টি যেরূপ দু ভাবে (বুদ্ধি বৃত্তিক ও ওহী) প্রমাণিত হয়েছে সেরূপ এ বিষয়টিও দু ভাবেই প্রতিপাদনযোগ্য। আমরা এখানে পুনরুত্থানের প্রয়োজনীয়তার উপর দু টি বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল উপস্থাপন করব। অতঃপর পুনরুত্থানের সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তার উপর পবিত্র কোরানের বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরব।

প্রজ্ঞাভিত্তিক দলিল :

খোদা পরিচিতি খণ্ডে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে,প্রভুর সৃষ্টি উদ্দেশ্যহীন ও অনর্থক নয়,বরং কল্যাণ ও পূর্ণতার প্রতি যে অনুরাগ প্রভুর সত্তায় (ذات ) বিদ্যমান। মূলতঃ স্বয়ং সত্তায় এবং অনুবর্তনক্রমে এর প্রভাব,যা কল্যাণ ও পূর্ণতার একাধিক স্তরবিশিষ্ট,তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে তিনি এ বিশ্বকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে,যথাসম্ভব সর্বাধিক পূর্ণতা ও কল্যাণ তাতে অর্জিত হয়। আর এ কারণেই আমরা মহান প্রভুর প্রজ্ঞা বা হিকমত নামক গুণটি প্রমাণ করেছি,যার দাবী হল সৃষ্ট বিষয়সমূহকে তাদের চূড়ান্ত ও যথোপযুক্ত উৎকর্ষে পৌঁছানো। কিন্তু বস্তুগত বিশ্বে রয়েছে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা এবং বস্তুগত অস্তিত্বসমূহের কল্যাণ ও পূর্ণতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পারস্পরিক বিরোধ। প্রজ্ঞাময় প্রভুর পরিচালনায় সৃষ্ট বিষয়াদি এরূপে বিন্যাসিত হয়েছে যে,সামগ্রিকভাবে ঐগুলো সর্বাধিক কল্যাণ ও পূর্ণতার অধিকারী হতে পারে। অন্যকথায় : বিশ্ব সুশৃংখলিত বিন্যাস ব্যবস্থার অধিকারী হতে পারে। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিভিন্ন উপাদান ও এগুলোর সংখ্যা,গুণ,ক্রিয়া,প্রতিক্রিয়া ও গতি এমনভাবে বিন্যাস করা হয়েছে যে,প্রাণী ও উদ্ভিদরাজি সৃষ্টির ক্ষেত্র এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মানুষ (যা এ বিশ্বের পূর্ণতম অস্তিত্ব) সৃষ্টির ক্ষেত্র প্রস্তত হয়। অপরদিকে যদি এ বিশ্বকে এরূপে সৃজন করা হত যে,জীবিত অস্তিত্বসমূহের সৃষ্টি ও উৎকর্ষ অসম্ভব হয়ে পড়ত,তবে তা প্রভুর প্রজ্ঞার পরিপন্থী হত।

এখন আমরা বলব : মানুষ অমর আত্মার অধিকারী এবং সে এমন অনন্ত ও চিরন্তন পূর্ণতা বা কামালতের অধিকারী হতে সক্ষম যে,তা অস্তিত্বগত মর্যাদা ও মূল্যবোধের দিক থেকে বস্তুগত পূর্ণতার সাথে অতুলনীয়। যদি মানুষের জীবন কেবলমাত্র এ পার্থিব জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়,তবে তা স্রষ্টার প্রজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। বিশেষকরে তা এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে,পার্থিব জীবন অপরিসীম শ্রান্তি,দুর্ভোগ ও দুর্যোগপূর্ণ এবং অধিকাংশ সময়ই দুর্ভোগ ও দুঃখ-দুর্দশা ভোগ ব্যতীত কোন কিছুর সাধ ও আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয় না;যেমনিকরে হিসাবী ব্যক্তিদেরকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে,এ সীমাবদ্ধ সুখের বিনিময়ে এ সমস্ত কষ্ট ও ক্লেশ ভোগের মূল্যায়ন হয় না। আর এ ধরনের হিসাবের ফলেই জীবনের ব্যর্থতা ও নিরর্থকতা অনুভূত হয়। এমনকি কেউ কেউ পার্থিব জীবনের প্রতি স্বভাবজাত আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রকৃতই যদি মানুষের জীবনে অনবরত কষ্ট ও শ্রম ব্যতীত কিছুই না থাকত এবং প্রাকৃতিক ও সামাজিক সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়,যাতে এক মুহুর্ত আনন্দ ও সম্ভোগ পেতে পারে;অতঃপর সীমাহীন শ্রান্তিতে নিদ্রায় ঢলে পড়বে,যাতে নবোদ্যমে কর্ম সম্পাদনের জন্যে শরীর প্রস্তত হতে পারে;আর এ ভাবে নিত্য নতুন কর্ম সম্পাদন করবে,যাতে এক চিলতে রুটি উপার্জন করতে পারে এবং কিঞ্চিৎকাল সে রুটির স্বাদ আসস্বাদন করতে পারে এবং অতঃপর কিছুই না ! তবে এ ধরনের ক্ষতিকর ও বিষাদময় ধারাবাহিকতাকে বুদ্ধিবৃত্তি গ্রহণ করত না বা মনোনীত করত না। এ ধরনের জীবনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল : সেই গাড়ী চালকের মত,যে তার গাড়ীকে পেট্রোল পাম্পের নিকট পৌঁছাতে ও পেট্রোল ভর্তি করতে চেষ্টারত,অতঃপর এ পেট্রোল খরচ করে অন্য এক পেট্রোল পাম্পের নিকট পৌঁছাবে এবং এ প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার গাড়ীটি অক্ষম ও বিনষ্ট হবে অথবা অন্য কোন গাড়ী বা প্রতিবন্ধকের সাথে সংঘর্ষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে !

স্পষ্টতঃই এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির যুক্তিগত ফল মানুষের জীবনের অন্তঃসার শুন্যতা বৈ কিছু নয়।

অপরদিকে মানুষের একটি সহজাত প্রবণতা হল অমর ও চিরস্থায়ী থাকার বাসনা। যা মহান প্রভুর উদারহস্ত তার প্রকৃতিতে (فطرت ) গচ্ছিত রেখেছে এবং যা সেই বর্ধিত গতিশক্তির অধিকারী,যে গতিশক্তি তাকে অনন্তের দিকে ধাবিত করে ও সর্বদা এ গতির ক্ষিপ্রতা প্রদান করে। এখন যদি মনে করা হয় যে,এ ধরনের গতির শেষফল ক্ষিপ্রতার চূড়ান্ত পর্যায়ে কোন এক প্রস্তর খণ্ডের সাথে সংঘর্ষ ঘটা ও বিধ্বস্ত হওয়া ব্যতীত কিছু নয়,তবে কি এ ধরনের বর্ধিত শক্তির অস্তিত্ব,প্রাগুক্ত ফলশ্রুতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে ?

অতএব বর্ণিত সহজাত প্রবণতা একমাত্র তখনই প্রভুর প্রজ্ঞার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে,যখন এ জীবন ছাড়াও মরণোত্তর অপর এক জীবন তার অপেক্ষায় থাকবে।

উপরোল্লিখিত দু টি ভূমিকার সমন্বয়ে (অর্থাৎ প্রভুর প্রজ্ঞা এবং মানুষের জন্যে অনন্ত জীবনের সম্ভাবনা ) আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে,পার্থিব এ সীমাবদ্ধ জীবনের পরে,অপর এক জীবনের অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক,যাতে প্রভুর প্রজ্ঞার পরিপন্থী না হয়।

অনুরূপ অমরত্ব লাভের প্রবণতাকে অপর একটি ভূমিকারূপে গ্রহণ করতঃ প্রভুর প্রজ্ঞার সমন্বয়ে,একে অপর একটি দলিলরূপে বিবেচনা করা যেতে পারে।

প্রসঙ্গক্রমে এটাও সুস্পষ্ট হয়েছে যে,মানুষের অনন্ত জীবন অপর এমন এক নিয়মের অধীন হতে হবে। যেখানে পার্থিব জীবনের মত (সুখ-শান্তি) কষ্ট ও শ্রান্তি মিশ্রিত হবে না। নতুবা পার্থিব এ জীবনের পরিধি যদি অসীম পর্যন্তও বিস্তৃত হওয়া সম্ভব হয়,তবে তা প্রভুর প্রজ্ঞার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।

ন্যায়পরায়ণতাভিত্তিক দলিল :

এ পৃথিবীতে মানুষ সুকর্ম ও কুকর্ম নির্বাচন ও সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্বাধীন : একদিকে এমন কিছু মানুষ আছে,যারা সর্বদা আল্লাহর উপাসনায় ও তার সৃষ্টির কল্যাণে নিজ জীবন উৎসর্গ করেন। অপরদিকে এমন কিছু দুস্কৃতকারী আছে,যারা তাদের শয়তানী কুপ্রবৃত্তিরর চাহিদা মিটাতে নিকৃষ্টতম ও জঘন্যতম অপরাধে লিপ্ত হয়। মূলতঃ এ বিশ্বে মানুষের সৃষ্টি,একাধিক প্রবৃত্তি ও প্রবণতায় এবং ইচ্ছাশক্তি ও নির্বাচনে তাকে সুসজ্জিতকরণ,বুদ্ধিবৃত্তিক ও উদ্ধৃতিগত জ্ঞানের আলোকে তাকে সন্নিবেশিতকরণ,তার জন্যে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুতকরণ এবং তাকে সত্য ও মিথ্যা বা কল্যাণ ও অকল্যাণের দ্বিধাবিভক্ত পথে স্থাপনের উদ্দেশ্য হল,তাকে অসংখ্য পরীক্ষার সম্মুখীন করা। আর এ ভাবে সে স্বীয় উৎকর্ষের পথকে নিজ ইচ্ছায় নির্বাচন করতঃ নিজ ইচ্ছাধীন কর্মের ফল বা পুরস্কার ও শাস্তি প্রাপ্ত হবে। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে মানুষের জন্যে সর্বদাই রয়েছে পরীক্ষা এবং পৃথিবী হল তার স্বরূপের প্রস্ফুটন ও আত্মগঠনের সময়। এমনকি (এ পার্থিব) জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত সে এ পরীক্ষা ও দায়িত্ব পালন থেকে মুক্ত নয়।

কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে,এ বিশ্বে সুকর্ম ও দুষ্কর্ম সম্পাদনকারী নিজ নিজ কর্মের পুরস্কার ও শাস্তি ভোগ করে না। বরং দুস্কৃতকারী অধিক বৈভবের অধিকারী ছিল এবং আছে। মূলতঃ পার্থিব জীবন অধিকাংশ কর্মেরই পুরস্কার বা শাস্তি লাভের অযোগ্য,যেমনঃ যে ব্যক্তি শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে,তার উপর একাধিকবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সম্ভব নয় এবং নিঃসন্দেহে অপরসংখ্যক অত্যাচারের শাস্তি তাকে প্রদান করা সম্ভব হয়নি। অথচ প্রভুর ন্যায়পরায়ণতার১১ দাবী হল,যে কেউ ন্যূনতম পরিমাণ সুকর্ম ও কুকর্ম সম্পাদন করবে,তাকে অবশ্যই এর ফল ভোগ করতে হবে।

অতএব এ ধরিত্রী যেমন মানুষের জন্যে কর্ম ও পরীক্ষাস্থল তেমনি অপর এক জীবনেরও অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক। যেখানে সে তার কৃতকর্মের জন্যে পুরস্কার বা শাস্তি ভোগ করবে এবং প্রত্যেকেই তার যথোপযুক্ত প্রাপ্তি লাভ করবে। আর কেবল তখনই প্রভুর ন্যায়পরায়ণতা বাস্তব রূপ লাভ করবে।

প্রসঙ্গক্রমে উপরোক্ত আলোচনার আলোকে এটাও সুস্পষ্ট হয়েছে যে,পরকাল লক্ষ্যনির্বাচন ও কর্ম সম্পাদনের স্থান নয়। পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে অনেক বিষয়েরই আলোচনা আসবে।

৫ম পাঠ

পবিত্র কোরানে পুনরুত্থান দিবস

ভূমিকা :

পুনরুত্থানের স্বপক্ষে এবং একে প্রত্যাখ্যানকারীদের বিরুদ্ধে প্রমাণস্বরূপ পবিত্র কোরানের উপস্থাপিত আয়াতসমূহকে পাঁচ শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা :

১। ঐ সকল আয়াত যেগুলোতে উল্লেখ করা যায় যে,মাআদ বা পুনরুত্থানের অস্বীকার করণের স্বপক্ষে কোন দলিল নেই। এ আয়াতসমূহ পুনরুত্থানের বিরুদ্ধবাদীদের নিরমস্রীকরণ করে থাকে।

২। ঐ সকল আয়াত,যেগুলো পুনরুত্থানের অনুরূপ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে থাকে,যার ফলে এর অসম্ভাব্যতার ধারণা অপনোদিত হয়।

৩। ঐ সকল আয়াত,যেগুলো পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারীদের ভ্রান্ত ধারণাকে বর্জন করে এবং এর সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করে।

৪। ঐ সকল আয়াত,যেগুলো পুনরুত্থানকে প্রভুর এক আবশ্যকীয় ও অনিবার্য প্রতিশ্রুতিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে পুনরুত্থানের সংঘটনকে সত্য সংবাদবাহকের সংবাদের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়ে থাকে।

৫। ঐ সকল আয়াত,যেগুলোতে পুনরত্থানের আবশ্যকতার স্বপক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মূলত : প্রথম তিন শ্রেণী হল পূনরুত্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কিত এবং অবশিষ্ট দু'শ্রেণী হল এর সংঘটনের আবশ্যকীয়তা সম্পর্কিত।