আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)0%

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড) লেখক:
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ: কিয়ামত

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

লেখক: আয়াতুল্লাহ্ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্ ইয়াযদী
: মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 11739
ডাউনলোড: 2718

পাঠকের মতামত:

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 33 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 11739 / ডাউনলোড: 2718
সাইজ সাইজ সাইজ
আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

আক্বায়েদ শিক্ষা (তৃতীয় খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থা,কোম,ইরান
বাংলা

পুনরুত্থানকে অস্বীকার করা অযৌক্তিক :

কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোরানের যুক্তি প্রদর্শনের একটি পদ্ধতি হল,তাদেরকে তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শনের আহ্বান জানানো। যাতে প্রমাণিত হয় যে,তাদের বিশ্বাসের কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। যেমন : কয়েকটি আয়াতে এসেছে :

 ) قُلْ هَاتُوا بُرْ‌هَانَكُمْ(

(হে নবী) বল,তোমাদের দলিল উপস্থাপন কর। (সূরা বাকারা-১১১,সূরা আম্বিয়া-২৪,নামল-৬৪)

এ ধরনেরই অপর কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে এ ভাবে বলা হয়েছে যে,এ ভ্রান্ত ধারণা পোষণকারীদের কোন বাস্তব জ্ঞান ও বিশ্বাস বা যুক্তি নেই। বরং তারা অযৌক্তিক ও অবাস্তব ধারণা ও কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করেছে।১২

পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে পবিত্র কোরানের বক্তব্য :

) وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ‌ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ(

তারা বলে, একমাত্র পার্থিব জীবন ব্যতীত আমাদেরকে এমন কোন জীবন নেই যে,আমরা মৃত্যুবরণ করব ও জীবিত হব এবং কাল ব্যতীত কিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করে না। বস্তুতঃ এই ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই,তারা তো কেবলমাত্র মনগড়া কথা বলে। (জাসিয়া-২৪)

অনুরূপ অপর কিছু আয়াতে এ বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে,পুনরুত্থানের অস্বীকৃতি অযৌক্তিক ও অনর্থক ধারণা বৈ কিছুই নয়।১৩ তবে অযৌক্তিক ধারণাসমূহ যখন কুমন্ত্রণার অনুগামী হয়,তখন সম্ভবতঃ কুপ্রবৃত্তিরর অনুসারীদের নিকট তা সমাদৃত হয়ে থাকে১৪ এবং এর ফলশ্রুতিতে পাপাচারে লিপ্ত হওয়া তাদের জন্যে নিশ্চিত রূপ লাভ করে।১৫ এমনকি তখন ব্যক্তি এ ধরনের বিশ্বাসের উপর দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।১৬

পবিত্র কোরানে,পুনরুত্থানকে প্রত্যাখ্যানকারীদের বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। এ গুলোর অধিকাংশেরই মূলবক্তব্য,পুনরুত্থানকে অসম্ভব বলে মনেকরণ ব্যতীত কিছুই নেই। কিছু কিছু আবার তাদের দূর্বল ধারণার প্রতি ইঙ্গিত করেছে,যেগুলো পুনরুত্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কে সন্দেহ ও এর অসম্ভাব্যতার ধারণার উৎস ।১৭ ফলে একদিকে যেমন পুনরুত্থানের সদৃশ ঘটনাসমূহকে স্মরণ করা হয়েছে,যাতে অসম্ভাব্যতার ধারণা বিদূরিত হয়।১৮ অপরদিকে তেমনি ভ্রান্ত ধারণাগুলোর জবাব দেয়া হয়েছে,যাতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ না থাকে এবং পুনরুত্থান সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা পরিপূর্ণরূপে প্রতিপাদিত হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বরং প্রভুর এ প্রতিশ্রুতি অবশ্যম্ভাবী এ কথা প্রমাণের পাশাপাশি,মানুষের জন্যে চূড়ান্ত দলিল উপস্থাপনের জন্যে ওহীর মাধ্যমে পুনরুত্থানের আবশ্যকতার উপর বুদ্ধিবৃত্তিক দলিলের প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে। পরবর্তী পাঠে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ।

পুনরুত্থানের সদৃশ ঘটনাবলী :

ক) উদ্ভিদের উদগতিঃ মৃত্যুর পর মানুষের জীবন লাভের ঘটনা,মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীতে শুষ্ক ও মৃত উদ্ভিদের উদগতির মত। ফলে মৃত্যুর পরে নিজেদের জীবন লাভের সম্ভাবনা অনুধাবনের জন্যে এ ঘটনার উপর চিন্তা করাই যথেষ্ট,যা সকল মানুষের চোখের সম্মুখে অহরহ ঘটে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনাটিকে একটি স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করা এবং এর গুরুত্বকে বিস্মৃত হওয়ার যে কারণ তা হল,এ ঘটনাগুলোর পর্যবেক্ষণে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। নতুবা নতুন জীবন লাভের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের সাথে মৃত্যুর পরে মানুষের জীবনলাভের কোন পার্থক্য নেই।

পবিত্র কোরানে এ নিত্য ঘটমান ঘটনাটির পর্যবেক্ষণের জন্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ও মানুষের পুনরুত্থানকে এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।১৯ যেমন বলা হয়েছে :

) فَانظُرْ‌ إِلَىٰ آثَارِ‌ رَ‌حْمَتِ اللَّـهِ كَيْفَ يُحْيِي الْأَرْ‌ضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ ذَٰلِكَ لَمُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (

আল্লাহর অনুগ্রহের ফলশ্রুতি সম্পর্কে চিন্তা কর,কিভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর এটাকে

পূনর্জীবিত করেন;এ ভাবেই আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন,কারণ তিনি সর্ববিষয়ে

সর্বশক্তিমান। (রূম-৫০)

খ) আসহাবে কাহফের নিদ্রা : পবিত্র কোরান অসংখ্য শিক্ষণীয় বিষয়সম্বলিত আসহাবে কাহফের বিস্ময়কর কাহিনী বর্ণনা করার পর বলে :

) وَكَذَٰلِكَ أَعْثَرْ‌نَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّـهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَ‌يْبَ فِيهَا (

এবং এভাবে আমি মানুষকে তাদের (আসহাবে কাহ্ফ) বিষয় জানিয়ে দিলাম যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে,আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামত যে সংঘটিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। (কাহ্ফ-২১)

এ ধরনের বিস্ময়কর সংবাদ যে,মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি কয়েকশতাব্দী (তিনশত সৌর বর্ষ বা তিনশত চন্দ্র বর্ষ) ধরে নিদ্রিত ছিলেন;অতঃপর জাগ্রত হয়েছেন,নিঃসন্দেহে তা পুনরুত্থানের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও এর অসম্ভাব্যতাকে দূরীভূত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কারণ প্রতিটি নিদ্রায়ই মৃত্যুসম (নিদ্রা মৃত্যুর ভাই) প্রতিটি জাগরনই মৃত্যু পরবর্তী জীবন সমতুল্য হলেও সাধারণ নিদ্রায় শরীরের জৈবিক (Biologic ) প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহত থাকে;ফলে রূহের প্রত্যাবর্তন কোন আকস্মিক ঘটনা বলে মনে হয় না। কিন্তু যে শরীর তিনশত বছর ধরে কোন প্রকার খাদ্যোপাদান গ্রহণ করেনি প্রকৃতির প্রচলিত নিয়মানুসারে সে শরীর মৃত্যু বরণ করতঃ বিনষ্ট হতে বাধ্য এবং রূহের প্রত্যাবর্তনের জন্যে স্বীয় যোগ্যতা ও প্রস্তুতি হারাতে বাধ্য। অতএব এ ধরনের অলৌকিক ঘটনাই এ স্বাভাবিক নিয়মের উর্ধ্বে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। ফলে মানুষ অনুধাবন করতে পারবে যে,দেহে রূহের প্রত্যাবর্তন সর্বদা এ সাধারণ ও প্রাকৃতিক নিয়মাধীন কারণ ও শর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

অতএব মানুষের নব জীবনও যতই এ পৃথিবীর জীবন-মৃত্যুর ব্যতিক্রম হোক না কেন,তা কোন ভাবেই পরিত্যাজ্য নয়। বরং প্রভুর প্রতিশ্রুতি অনুসারে তা সংঘটিত হবেই।

গ) প্রাণীদের জীবন লাভ : পবিত্র কোরানে একইভাবে কয়েকটি প্রাণীর অসাধারণ ভাবে জীবন লাভের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে কয়েকটি পাখীর জীবন লাভ২০ এবং কোন এক নবীকে বহনকারী পশুর কাহিনী,(যার সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হবে) ইত্যাদির কথা উল্লেখযোগ্য। অতএব কোন প্রাণীর জীবিত হওয়া যদি সম্ভব হয় তবে মানুষের পক্ষেও জীবিত হওয়া অসম্ভব নয়।

ঘ) এ পৃথিবীতেই কোন কোন মানুষের পুনর্জীবন লাভ : এ প্রসঙ্গে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল,এ পৃথিবীতেই কোন কোন মানুষের পুনর্জীবন লাভ করা। পবিত্র কোরানে এ ধরনের কিছু উদাহরণ উল্লেখ হয়েছে। যেমন : বনী ইসরাঈলের একজন নবীর ঘটনা যে,তার যাত্রাপথে কিছু মৃত মানুষের গলিত লাশ তার চোখে পড়ে। হঠাৎ তার ধারণা হল যে,কিরূপে এ মানুষগুলো পুনরায় জীবিত হবে। মহান আল্লাহ তার আত্মা ফিরিয়ে নিলেন এবং একশত বছর পর তাকে জীবিত করলেন। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন : এ স্থানে তুমি কত সময় যাবৎ অবস্থান করছো ? তিনি যেন নিদ্রা থেকে জেগে উঠে ছিলেন ও বললেন : একদিন অথবা একদিনের কোন এক অংশ। প্রতি উত্তরে বলা হল : বরং তুমি একশত বছর এখানে অবস্থান করছো। অতএব লক্ষ্য কর একদিকে তোমার রুটি ও পানি সঠিকভাবে রক্ষিত,অপরদিকে তোমাকে বহনকারী পশু পঁচে গলে গিয়েছে! এখন দেখ যে,আমরা কিরূপে এ পশুর হাড়গুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করছি;পুনরায় এগুলোকে মাংস দ্বারা আবৃত করছি এবং একে জীবিত করছি।২১

অপর একটি কাহিনী হল এই যে,বনী ইসরাঈলের একদল লোক হযরত মূসাকে (আ.) বললঃ আমরা খোদাকে প্রকাশ্যে না দর্শন করা ব্যতীত কখনোই বিশ্বাস স্থাপন করব না। ফলে মহান আল্লাহ তাদেরকে বজ্রপাত দ্বারা ধ্বংস করলেন। অতঃপর হযরত মূসা (আ.)-এর অনুরোধে পুনরায় তাদেরকে জীবন দিলেন।২২

অনুরূপ বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির (যে মূসা (আ.)-এর সময় নিহত হয়েছিল) একটি জবাইকৃত গরুর দেহের কোন এক অংশের আঘাতে জীবিত হওয়ার কাহিনী উল্লেখযোগ্য,যা সূরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে এবং এর উপর ভিত্তি করেই সূরা বাকারার নামকরণ করা হয়েছে। এ কাহিনীর বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে :

) كَذَٰلِكَ يُحْيِي اللَّـهُ الْمَوْتَىٰ وَيُرِ‌يكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ (

এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তার নিদর্শন তোমাদেরকে দেখিয়ে থাকেন,যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। (বাকারা-৭৩)

এছাড়া ঈসা (আ.)২৩ এর মু জিযাহর ফলে কিছু মৃত ব্যক্তির জীবিত হওয়ার ঘটনাকেও পুনরুত্থানের সম্ভাবনার নিদর্শন বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।

৬ষ্ঠ পাঠ

পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকারকারীদের প্রশ্নের জবাব

পবিত্র কোরান পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছে এবং যে ভাষায় তাদেরকে জবাব দিয়েছে,তা থেকে আমরা দেখতে পাই যে,তাদের অন্তরে কিছু সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। জবাবের উপর ভিত্তি করে ঐগুলোকে আমরা নিম্নরূপে উল্লেখ করব। যথা :

বিলুপ্তির অস্তিত্ব লাভের ক্ষেত্রে অনুপপত্তি :

ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে,যারা বলত :   মানুষ তার দেহের বিগলনের পর পুনরায় কিরূপে জীবিত হতে সক্ষম? তাদের মোকাবিলায় পবিত্র কোরান যে জবাব দেয়,তার বিষয়বস্তু হল : তোমাদের স্বরূপের ভিত্তি হল তোমাদের রূহ,তোমাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়,যেগুলো ভূপষ্ঠে বিচ্ছিন্ন ও ছড়িয়ে পড়ে।২৪

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা উদঘাটন করতে পারি যে,কাফেরদের এ অস্বীকৃতির উৎস হল তা,যা দর্শনের পরিভাষায় বিলুপ্তের প্রত্যাবর্তন অসম্ভব বলে পরিচিত। অর্থাৎ তারা দাবী করত যে,(রক্ত-মাংসে গড়া) এ দেহই হল মানুষ,যা মৃত্যুর মাধ্যমে ছিন্নভিন্ন ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং যদি নতুন করে জীবতও হয় তবে সে হবে অন্য এক মানুষ। কারণ যে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গিয়েছে,তাকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব এবং সত্তাগতভাবে তা সম্ভব নয়।

এ অনুপপত্তির জবাব : কোরানের উপরোল্লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,প্রত্যেক মানুষেরই স্বরূপ তার আত্মা বা রূহের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ পুনরুত্থানের অর্থ বিলুপ্তের প্রত্যাবর্তন নয়;বরং অস্তিত্বশীল রূহের প্রত্যাবর্তন।

নবজীবন লাভে দেহের অযোগ্যতা সম্পর্কিত অনুপপত্তি :

পুর্ববর্তী অনুপপত্তিটি ছিল পুনরুত্থানের সত্তাগত সম্ভাবনা ভিত্তিক। আর এ অনুপপত্তিটি প্রাগুক্ত সম্ভাবনাকে স্বীকার করে। অর্থাৎ বলে যে,যদিও দেহে রূহের প্রত্যাবর্তন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসম্ভব নয় এবং তা কল্পনা করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বিরোধ নেই;কিন্তু তা সংঘটনের ব্যাপারটি দেহের যোগ্যতার শর্তাধীন এবং আমরা দেখতে পাই যে,জীবনের অস্তিত্বলাভ,বিভিন্ন কারণ ও শর্তের সাথে সম্পর্ক যুক্ত যেগুলো সংগত কারণেই পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হয়। যেমন : শুক্রাণুর জরায়ুতে অবস্থান গ্রহণ করা,এর বিকাশের জন্যে উপযুক্ত অবস্থার সমাহার,যাতে উত্তর উত্তর পূর্ণ ভ্রুণে পরিণত হয়ে পূর্ণ মানুষের রূপ লাভ করে। কিন্তু যে দেহ ছিন্ন-ভিন্ন ও ছড়িয়ে পড়েছে সে দেহের আর জীবন লাভের যোগ্যতা ও উপযুক্ততা থাকে না।

এর জবাব হল : এ দৃষ্ট পার্থিব নিয়মই,কেবলমাত্র সম্ভব নিয়ম নয় এবং অভিজ্ঞতার আলোকে যে সকল কারণ শনাক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যেই সকল কারণ সীমাবদ্ধ নয়। যার প্রমাণ এই যে,এ পৃথিবীতেই প্রাণী ও মানুষের জীবন লাভ সম্পর্কিত অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল।

এ জবাবটিকে আমরা পবিত্র কোরানে বর্ণিত এ ধরনের অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা থেকে পেতে পারি ।

কর্তার ক্ষমতা সম্পর্কিত অনুপপত্তি :

অপর একটি অনুপপত্তি হল : কোন ঘটনার সংঘটনে সত্তাগত সম্ভাবনা ছাড়াও কর্তার যোগ্যতাকেও বিবেচনা করতে হবে। সুতরাং কোথা থেকে আমরা জানতে পারব যে,মহান আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন ?

এ ভিত্তিহীন ও উদ্ভট প্রশ্নটি তাদের পক্ষ থেকেই এসেছিল যারা মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতাকে অনুধাবন করতে পারেননি। এর জবাব হল : আল্লাহর ক্ষমতার কোন সীমা বা গণ্ডি নেই এবং তার ক্ষমতা সকল সম্ভাব্য ঘটনাকেই সমন্বিত করে। যেমন : কোন এক সময় অস্তিত্বহীন এ বিশ্বকে এ সমস্ত মহান কল্যাণের সমাহারে সৃষ্টি করেছেন।

) أَوَلَمْ يَرَ‌وْا أَنَّ اللَّـهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْ‌ضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ‌ عَلَىٰ أَن يُحْيِيَ الْمَوْتَىٰ بَلَىٰ إِنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ‌ (

তারা কি অনুধাবন করে না যে,আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এ সকলের সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তিবোধ করেননি,তিনি মৃতের জীবন দান করতেও সক্ষম। বস্তুতঃ তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। ( আহকাফ-৩৩)২৫

তাছাড়া নতুন করে সৃষ্টি করা,প্রথমবার সৃষ্টি করার চেয়ে জটিলতর নয় এবং এর জন্যে অধিকতর শক্তি ও ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না। বরং বলা যেতে পারে অপেক্ষাকৃত সহজ। কারণ তাতো বিদ্যমান রূহের প্রত্যাবর্তন বৈ কিছুই নয়। তারা বলবে,কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে? বল,তিনিই যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তারা তোমার সম্মুখে মাথা নাড়াবে (এবং এ উত্তরে তারা বিস্মিত হবে)। ( ইসরা-৫১)২৬

) وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ (

তিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন,অতঃপর তিনিই এটাকে সৃষ্টি করবেন পুর্নবার এবং ইহা তার জন্যে অতি সহজ। (রূম-২৭)

কর্তার জ্ঞান সম্পর্কিত অনুপপত্তি :

অপর একটি প্রশ্ন হল এই যে,যদি মহান আল্লাহ মানুষকে জীবন দিতে এবং তাদের কর্মের পুরস্কার ও শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন তবে একদিকে যেমন তাকে অসংখ্য দেহসমষ্টির প্রত্যেকটি থেকে স্বতন্ত্ররূপে শনাক্ত করতে হবে,যাতে প্রতিটি আত্মাকে এর নিজস্ব দেহে প্রত্যাবর্তন করাতে পারেন;অপরদিকে তেমনি সকল ভাল ও মন্দ কর্মের হিসাব তার স্মরণে থাকতে হবে,যাতে নির্দিষ্ট কর্মের জন্যে নির্দিষ্ট পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান করতে পারেন। তাহলে যে সকল দেহ মৃত্তিকায় পরিণত হয়েছে এবং যেগুলোর অনুসমূহ পরস্পর বিগলিত হয়েছে সেগুলোকে কিরূপে পুনঃশনাক্তকরণ সম্ভব ? আর কিরূপেই বা শত-সহস্র,এমনকি লক্ষ-কোটি বছর ধরে সকল মানুষের আচার-আচরণকে সুচারুরূপে ধারণ ও সংরক্ষণ করা সম্ভব ?

এ প্রশ্নটিও তাদের পক্ষ থেকেই বর্ণনা করা হয়েছে,যারা প্রভুর অসীম জ্ঞানকে উপলব্ধি করতে পারেনি এবং একে তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধ ও অপূর্ণ জ্ঞানের সাথে তুলনা করেছেন।

আর এর জবাব হল : মহান আল্লাহর জ্ঞানের কোন সীমা নেই এবং সব কিছুই তার জ্ঞানের অধীন। আর মহান আল্লাহ কখনোই কোন কিছুকে বিস্মৃত হন না।

পবিত্র কোরানে ফেরাউনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে,সে মুসাকে (আ.) বলেছিল :

) فَمَا بَالُ الْقُرُ‌ونِ الْأُولَىٰ (

তা হলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী হবে? (যদি মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে জীবিত করে থাকবেন ও আমাদের হিসাব নিয়ে থাকবেন ) (তোহা-৫১)

হযরত : মুসা (আ.) বললেন :

) قَالَ عِلْمُهَا عِندَ رَ‌بِّي فِي كِتَابٍ لَّا يَضِلُّ رَ‌بِّي وَلَا يَنسَى (

বললেন : এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট লিপিবদ্ধ আছে,আমার প্রতিপালক ভুল করেন না এবং বিস্মৃতও হন না। (তোহা-৫২)

অপর একটি আয়াতে শেষোক্ত দু টি অনুপপত্তির জবাব এভাবে বর্ণিত হয়েছে : বল,তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই,যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত। (ইয়াসীন-৭৯)