শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস

শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস0%

শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস

লেখক: আল্লামা মুহাম্মাদ রেজা আল -মুজাফফর
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 16705
ডাউনলোড: 3580

পাঠকের মতামত:

শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 51 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16705 / ডাউনলোড: 3580
সাইজ সাইজ সাইজ
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস

শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

34। দোয়া সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :

মহানবী (সা.) বলেন-

দোয়া হলো বিশ্বাসীদের অস্ত্র ,দ্বীনের খুঁটি এবং আকাশ ও পৃথিবীর জন্য নূর।

আর এটি শিয়াদের বিশেষত্বে পরিণত হয়েছে যার দ্বারা এ গোষ্ঠীকে স্বতন্ত্রভাবে সনাক্ত করা যায়। তারা এ দোয়ার গুরুত্ব ,আদব এবং এগুলোর মধ্যে কোনগুলো আহলে বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে সে সম্পর্কে শত শত পুস্তক ও পুস্তিকা লিখেছেন। এ সকল পুস্তক-পুস্তিকায় মহানবীর (সা.) ও তার আইলে বাইতের (আ.) লক্ষ্য সম্পর্কে এসেছে। আর সেই সাথে তাদের অনুসারীদেরকে দোয়া পাঠের ব্যাপারে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয়া হয়েছে। এমনকি তাদের নিকট থেকে বর্ণিত হয়েছে-

  “ সর্বোত্তম প্রার্থনা হলো দোয়া।

  “ মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো দোয়া।

  “ নিশ্চয়ই দোয়ার মাধ্যমে চরম দূর্দশা ও শাস্তি অপসারিত হয়। ’’

  “ দোয়া সকল শারীরিক ও মানসিক পীড়া থেকে মানুষকে মুক্তি দান করে।

দোয়ার সম্রাট হযরত আমীরুল মূমিনীন আলী (আ.) থেকে অসংখ্য দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এর কারণ সুষ্পষ্ট ,তিনি হলেন একত্ববাদীদের সর্দার এবং বিশ্বাসীদের শিরোমণি। তার বক্তৃতার মত তার দোয়াও আরবী সাহিত্যের শ্রেষ্ট অবদান হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। যেমন-বিখ্যাত দোয়ায়ে কোমাইল ইবনে যিয়াদ। এ দোয়াগুলোতে সন্নিবেশিত আছে খোদা পরিচিতি ,দ্বীনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যা একজন সঠিক ও সমুন্নত মুসলমান হওয়ার পথে সহায়ক।

প্রকৃতপক্ষে ,মহানবী (সা.) ও তার আহলে বাইতের (আ.) নিকট থেকে বর্ণিত দোয়াগুলো মুসলমানদের জন্য উত্তম পন্থাস্বরূপ। যদি কেউ এগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে তাহলে এগুলো তাকে ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা প্রদান করবে এবং আল্লাহর পথে পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী করবে। আর সেই সাথে তাকে এবাদতের রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান দিবে ,এবাদতের মাধুর্য আস্বাদন করাবে এবং আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুকেই সে তুচ্ছ জ্ঞান করবে। দ্বীনের যা কিছু শেখা মানুষের জন্য আবশ্যক সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করবে। এভাবে তাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে। আর সেই সাথে অনাচার ,কুমন্ত্রণা ও বাতিল থেকে দূরে রাখবে। মোট কথা ,একদিকে এ দোয়াগুলোতে নৈতিকতা ,আদর্শ ও আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং ইসলামী আকীদার দৃষ্টিকোণ থেকে রয়েছে গভীর জ্ঞান। অন্যদিকে এমনকি এ দোয়াগুলো খোদাতত্ত্ব ও নৈতিকতার সম্পর্কে দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

এ সকল দোয়ার অন্তনির্হিত সমুন্নত তাৎপর্যে যে হেদায়াত বা পথ নির্দেশনা বিদ্যমান তা অনুসরণ করতে যদি মানুষ সচেষ্ট হত (দুঃখের বিষয় তারা সচেষ্ট নয়) তবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা অনাচারের নামমাত্রও শ্রুত হত না। কিংবা যে আত্মাগুলো পাপাচারে সিক্ত হয়ে নরকাগ্নিতে পতিত হয়েছে ,তারা সত্যের ঝর্ণাধারায় স্নাত হয়ে মুক্ত জীবন লাভ করত। কিন্ত এ ধরনের কোন সংস্কারক যিনি মানবতাকে সত্যের প্রতি আহবান করেন তার কথায় কর্ণপাত করা প্রায়ই মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। সুতরাং মহান আল্লাহ মানব প্রকৃতি সম্পর্কে বলেন-

নিশ্চয়ই নফসে আম্মারা মানুষকে অসৎকাজের প্রতি আহবান করে। (সুরা ইউসূফ - 53)

অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করবে না যদিও তোমার আন্তরিক কামনা তাই। (সুরা ইউসূফ -103)

অসৎকর্মের উৎস হলো মানুষের আত্মপ্রবঞ্চনা ,স্বীয় ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা যার ফলে স্বীয় অসৎকর্মকে সুকর্ম ভেবে মিথ্যা তুষ্টি লাভ করে। সুতরাং সে অন্যের উপর অত্যাচার করে ,অন্যের সম্পত্তি দখল করে ,মিথ্যাচার করে ,তোষামোদ করে ,স্বীয় কামনার বশবর্তী হয় ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অথচ নিজেকে প্রবঞ্চিত করে এভাবে যে ,সে বস্ততঃ তার কামনার বশবর্তী নয়। বরং এগুলো করার প্রয়োজন ছিল কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে স্বীয় চক্ষুকে তার কুৎসিত কর্ম থেকে ঢেকে রাখে। আর এভাবে সে স্বীয় ভুল-ভ্রান্তিকে ছোট করে দেখে। নিম্নের বর্ণিত মর্মস্পশী দোয়াগুলো ওহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত। এ দোয়াগুলো মানুষকে একাগ্রচিত্তে মহান আল্লাহকে ডাকতে ও তার নৈকট্য লাভের পথে প্রভাবিত করে। অনুরূপ স্বীয় পাপ কর্মের স্বীকারোক্তি করতে ,আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নিজেকে নিমগ্ন রাখতে এবং স্বীয় অহমিকা ও দম্ভকে অবদমন করতে সহায়তা করে। যেমন-দোয়াকারী দোয়ায়ে কোমাইল ইবনে যিয়াদ পাঠ করার সময় বলে-

হে আমার প্রভু ,হে আমার মালিক ,তুমি আদেশ দিয়েছ কিন্তু আমি আমার কামনার বশবর্তী হয়েছি। আমি শত্রুর পাতা ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি যে পাপকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে এবং মানুষকে ঐ গুলোতে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। আমার শত্রু আমার সাথে প্রতারণা করেছে এবং আমার হতভাগ্য তাকে সাহায্য করেছে যার জন্য আমি সীমা লংঘন করেছি এবং তোমার কিছু কিছু আদেশ অমান্য করেছি।

নিঃসন্দেহে গোপনে লোকচক্ষুর আড়ালে স্বীয় অপরাধের স্বীকারোক্তি ধীরে ধীরে তাকে জন সমক্ষে অপরাধ স্বীকার করা তার জন্য সহজ করে যদিও এ ধরনের স্বীকারোক্তি তার উপর হৃদয় বিদারক প্রভাব ফেলে। এ ধরনের অনুশোচনা মানুষের অন্তরের কলুষতা হ্রাসে এবং কল্যাণ কামনার ক্ষেত্রে মহান ভূমিকা পালন করে। যদি কেউ স্বীয় আত্মশুদ্ধি কামনা করে তবে তাকে এ ধরনের একাগ্রতা ও নির্জনতা সৃষ্টি করে মুক্তভাবে স্বীয় কৃতকর্মের পর্যালোচনা করতে হবে। আর এ একাগ্রতা ,আত্মসমালোচনার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো এ মর্মস্পশী দোয়াগুলো পাঠ করা যেগুলোর গুরুগম্ভীর ভাব গভীর ভাবে অন্তরাত্মাকে নাড়া দেয়। যেমন- আমরা দোয়ায়ে আবি হামজা সামালীতে (রেজওয়ানুল্লাহ তায়ালা আলাইহি) পড়ে থাকি যে দোয়া ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।

প্রভু হে! আমার সমস্ত দোষ-ত্রুটি ঢেকে রেখে আমাকে মহান কর এবং তোমার দয়া দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আমাকে মহান কর কথাটির উপর চিন্তা করলে আমরা জানতে পারি যে স্বীয় দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে মানুষের নিজস্ব কৌতুহল আছে। এ কথাটি আমাদেরকে অবহিত করে যে ,মানুষ স্বয়ং কুৎসিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত হয়ে পরবর্তীতে দোয়ায় বলে-

যদি আমি জানতাম অদ্য তুমি ভিন্ন অন্য কেউ আমার গুনাহ সম্পর্কে জ্ঞাত হবে তবে আমি তা করতাম না। আর আমি যদি জানতাম যে খুব শ্রীঘ্রই আমি আমার পাপের জন্য শাস্তি পাব ,তবে নিজেকে ঐগুলো থেকে দূরে রাখতাম।

এ ধরনের স্বীকারোক্তি করার মত মন মানসিকতা এবং স্বীয় পংকিলতাকে ঢেকে রাখার উৎকন্ঠা মানুষকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে যাতে মানুষের সম্মুখে স্বীয় পাপাচারের জন্যে মহান আল্লাহ তাকে ইহ এবং পরকালে অপমানিত না করেন।

এমতাবস্থায় নির্জনে মিনতি প্রকাশকালে মানুষ এক বিশেষ পুলক অনুভব করে ,আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্তে মগ্নতা আসে। তার প্রশংসা করে ,তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং জন সম্মুখে অপমানিত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার পাশাপাশি মহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়। এরপর ইমাম (আ.) এ দোয়ায় আরও বলেন-

হে আল্লাহ! (আমার গুনাহের ব্যাপারে) তোমার জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তোমার ধৈর্যশীলতা ও সহিষ্ণুতার প্রশংসা করি এবং প্রশংসা করি তোমার ক্ষমার যদিও তুমি (শাস্তি প্রদানে সক্ষম ও) মহাপরাক্রমশালী।

অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর ধৈর্যশীলতা ও বদান্যতার ভিত্তিতে মানুষ যে সুযোগ লাভ করে তা যাতে প্রভু ও দাসের মধ্যকার সম্পর্কে কোন ফাটল ধরাতে না পারে তাই বলা হচ্ছে-

প্রভু হে! তোমার সহনশীলতা আমাকে পাপের পথে পরিচালিত করেছে এবং তা করতে আমাকে প্রবৃত্ত করেছে। আর আমাকে নির্লজ্জতার দিকে আহবান করেছে। তোমার অপরিসীম ক্ষমা ও রহমত আমাকে তোমার শাস্তির ভয় থেকে নিবৃত্ত করেছে।

এ ধরনের অনেক মোনাজাত বর্ণিত হয়েছে যেগুলো মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে ,আল্লাহর আনুগত্য করতে এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকতে মানুষকে সাহায্য করে। আর আমাদের এ ক্ষুদ্র পুস্তিকায় এর বেশী বর্ণনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু কিছু দোয়ার বিষয়বস্তু খুবই বিস্ময়কর। খোদার নিকট ক্ষমা ও মাগফেরাত কামনার সাথে সাথে যে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তা কতইনা বিস্ময়কর। যেমন-দোয়ায়ে কোমাইলে আমরা দেখতে পাই-

হে আমার প্রভু! হে আমার মালিক! যদি তোমাকে অনুভব করতে পারতাম! তোমার আগুন কি তাদেরকে স্পর্শ করবে যারা তোমার মহিমায় সিজদাবনত হয়েছে! তাদেরকে কি আগুনে নিক্ষেপ করবে যারা সত্যিই তোমার একত্ববাদ সম্পর্কে চিন্তা করত এবং কৃতজ্ঞচিত্তে তোমার প্রশংসা করত ,তোমার প্রভুত্বে সত্যিকারার্থে বিশ্বাসী ছিল ?তুমি কি তাদেরকে নরকাগ্নিতে ভস্মীভূত করবে যাদের প্রজ্ঞা তোমার বিরাটত্ব সম্পর্কে জানত অথবা তাদেরকে যারা তোমার আনুগত্যপূর্ণ এবাদতের জন্য এবং অনুতপ্ত চিত্তে তোমার ক্ষমা কামনার্থে এবাদতের স্থানগুলোতে ধাবিত হত ?না এমনটি তোমার সম্পর্কে কেউই ধারণা করতে পারে না। আমাদের কাছে তোমার নিকট হতে কল্যাণ ব্যতীত কোন সংবাদ নেই।

আমরা যদি সুষ্পষ্টভাবে এর সুগভীর অর্থ ও সুনিপুণ বর্ণনার দিকে তাকাই তবে দেখতে পাব যে ,স্বীয় দোষ-ত্রুটি এবং খোদার দাসত্ব স্বীকার করার পাশাপাশি এ দোয়াটি আমাদেরকে শেখায় খোদার দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ না হতে।

যেহেতু এ দোয়াগুলো স্বীয় বিবেক হতে উৎসারিত সেহেতু সমস্ত ওয়াজীবগুলো সম্পাদিত হয়। কারণ উপরোক্ত দোয়ায় আমরা দেখতে পেয়েছি ,ধরে নেয়া হয়েছে যে ,সে সমস্ত ওয়াজীবগুলোকে পূর্ণরূপে সম্পাদন করেছে। সুতরাং সে খোদার দয়া ও করুণা পাবার যোগ্য। দোয়ার এ শিক্ষাই মানুষকে স্বীয় অন্তরাত্মার প্রতি ফিরে তাকাতে উৎসাহ প্রদান করে যাতে ওয়াজীব কর্মগুলো ইতিপূর্বে সম্পাদন না করলেও এখন সম্পাদন করে নেয়। আর তখন মহান আল্লাহর দরবারে তার উপস্থাপিত যুক্তি সত্য ও সঠিক হবে।

উপরোল্লিখিত এ যুক্তির পর পরই দোয়ায়ে কোমাইলে আমরা দেখি-

হে মা বুদ ,হে আমার মালিক! হে আমার প্রভু! মেনে নিলাম যে তোমার শাস্তির মাঝে আমি ধৈর্য ধারণ করব ,কিন্তু কি করে তোমার বিরহ সহ্য করব ? (কারণ আযাবের সময় মানুষ মহান আল্লাহর নৈকট্য থেকে দুরে থাকে) হে আমার আল্লাহ ,ধরে নিলাম যে অগ্নিদাহে তোমার শাস্তি আমি সহ্য করতে পারব কিন্তু তোমার করুণার দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়া কি করে সহ্য করব ?

হ্যাঁ এগুলো হলো সেই কথাসমষ্টি যা মহান আল্লাহর নৈকট্যের স্বাদ আস্বাদনের আবশ্যকতা সম্পর্কে মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়। অনুরূপ আল্লাহর করুণা ,পরাক্রম ও বন্ধুত্বকে অনুধাবনের স্বাদ সম্পর্কে বর্ণনা করে থাকে এ দোয়াগুলো। আর তাকে বুঝায় যে ,এ আকর্ষণ ও নৈকট্য এমন এক পর্যায়ে পৌছে যে ,এর অন্যথা হলে তা তার কাছে নরকাগ্নির তাপদাহ অপেক্ষা শাস্তিদায়ক মনে হয়। ফলে মানুষ অগ্নিদাহ সহ্য করতে পারে কিন্তু মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও নৈকট্যের আকর্ষণকে ত্যাগ করতে পারে না। এ বাক্যগুলো আমাদেরকে আরও শিখায় যে ,মহান আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব এবং প্রিয়তম প্রভুর নৈকট্যের স্বাদ আস্বাদনই আমাদের পাপ মোচনের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম শাফাআতকারী যার ফলে মহান আল্লাহ আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। প্রজ্ঞাময় ,তওবা গ্রহনকারী ,পাপ ক্ষমাকারী মহান আল্লাহর প্রতি প্রেমের সৌন্দর্য ও তার দয়ার কথা কারো অজানা নয়।

এখানে মাকারেমূল আখলাক থেকে কিছুটা আলোকপাত করতে আমাদের কোন বাধা নেই। কারণ ,উক্ত দোয়ায় উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য গুলো বিশ্বমানবতার প্রত্যেক সদস্য এবং দলেরই থাকা আবশ্যক। দোয়াটির বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ-

প্রভু হে! আমাদেরকে তোমার আনুগত্যে ও পাপ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান কর। আমাদেরকে সত্য নিয়্যাত ও অন্যের সম্মান সনাক্তকরণের যোগ্যতা দান কর। আমাদেরকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত কর। সত্যপথে দৃঢ় রাখ ,সত্য বলা ও হিকমাত বলার জন্য আমাদের জিহ্বাকে প্রস্তুত করে দাও। আমাদের অন্তরগুলোকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা পূর্ণ করে দাও। আমাদের উদরগুলোকে নিষিদ্ধ বস্তু ও সন্দেহজনক বস্তু থেকে পবিত্র করে দাও। আমাদের হস্তগুলোকে জুলুম ,অত্যাচার ও চৌর্যবৃত্তি থেকে বিরত রাখ। অশ্লীলতা ও খিয়ানত থেকে আমাদের চক্ষুগুলোকে আবৃত কর এবং আমাদের কর্ণগুলোকে অনর্থক কথাবার্তা ও পরনিন্দা (গিবাত) শ্রবণ থেকে দূরে রাখ। আমাদের আলেমগণকে সংযম ও নসিহত দান কর। আমাদের বিদ্যানুসন্ধানকারীদের জ্ঞানার্জনের প্রতি আকর্ষণ দান কর ও পরিশ্রমী কর। আমাদের শ্রোতাদেরকে নসীহত গ্রহণ করার মত শ্রবণ শক্তি দান কর। মুসলমানদের মধ্যে যারা অসুস্থ তাদেরকে মুক্তি ও সস্তি দান কর। আমাদের মৃতজনকে দয়া ও করুণা কর। আমাদের অনুসারীদেরকে সম্মান ও মাহাত্ত্ব দান কর। আমাদের যুবকদেরকে প্রকৃত ঈমানদান কর এবং অনুশোচনা দাও। আমাদের মহিলাদেরকে বিনয় ও পবিত্রতা দান কর। ধনী ও সম্পদশালীদেরকে বিনয় ও উদার হৃদয় দান কর। আমাদের দরিদ্রজনকে ধৈর্য্য ও তুষ্টি প্রদান কর। আমাদের সৈন্যদেরকে সহযোগিতা ও বিজয় দান কর। আমাদের যুদ্ধবন্দীদেরকে মুক্তি ও সস্তি দান কর। আমাদের শাসকদেরকে ন্যায়পরায়ণতা দান কর ও জনগণের প্রতি বন্ধুপরায়ণ কর। আমাদের নাগরিকদেরকে ইনসাফ ও সুন্দর চরিত্র দান কর। আমাদের হাজী ও যিয়ারতকারীদেরকে উপায় ও উপকরণ দ্বারা ধন্য কর। আর তাদের উপর যে হজ্জ ও উমরাহ্ আবশ্যক করেছ তা সম্পাদন করিয়ে দাও। দয়া ও করুণার দ্বারা আমাদের এ দোয়াগুলোকে কবুল কর ,হে দয়াশীলদের শ্রেষ্ঠ।

আমি পাঠক ভাইদেরকে এ দোয়াটি সর্বদা পাঠ করার জন্যে পরামর্শ দিব। আর সেই সাথে বলব তারা যেন এর ভিত্তি ও উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে মনোযোগী ও একাগ্রচিত্তে এ দোয়াটি পাঠ করেন। অর্থাৎ ঐগুলোকে আন্তরিকতার সাথে এমনভাবে পাঠ করেন যেন তারা স্বয়ং এ বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে এ ক্ষেত্রে আহলে বাইত (আ.) থেকে আপনাদের জন্য যে আদব পদ্ধতি বর্ণিত করেছে তা অনুসরণীয়। কারণ এ দোয়াগুলো মনোযোগ ও আন্তরিকতা ব্যতীত বকবকানী ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তা মানুষের জন্য কখনোই খোদা পরিচিতি ,জ্ঞান ,নৈকট্য ,মুক্তি ও সফলতা বয়ে আনে না। কিংবা মানুষের কোন কষ্ট-ক্লেশই লাঘব করে না এবং তার দোয়াও কবুল  হয় না। কারণ ,যে দোয়া ভাবাবেগ ও মনোযোগের সাথে পড়া হয় না মহান আল্লাহ তা গ্রহণ করেন না। কিন্তু যখন কোন দোয়া মনোযোগ ,আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের সাথে পড়া হয় নিশ্চিতরূপে তা মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।